এলিস মুনরোর গল্প : একটা লাল জামা

অনুবাদ : নাসরীন সুলতানা 

আমার মা আমার জন্য একটা জামা বানাচ্ছিলেন। পুরো নভেম্বর মাসটাতেই আমি স্কুল থেকে ফিরে দেখতাম তিনি রান্নাঘরে আর তার চারিদিকে ছড়ানো-ছিটানো কাটা লাল মখমল কাপড় এবং জামার ডিজাইন আঁকা দুমড়ানো মুচড়ানো টিসু কাগজ। মা একটা পুরনো পায়ে চালানো সেলাই মেশিনে সেলাই করতেন যেটাকে জানালার কাছে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছিল-যথেষ্ট আলো পাওয়ার জন্য এবং জানালা গলিয়ে মুড়ানো ফসলের মাঠ এবং বিরান সব্জি বাগানের ওপারের রাস্তা দিয়ে কারা যায় তা দেখতে পাওয়ার জন্য। কদাচিৎ কাউকে দেখা যেতো।
লাল মখমল কাপড় দিয়ে জামা বানানো কঠিন। সেলাইয়ের সময় তাতে টান পড়তো এবং আমার মা যে ডিজাইনটা পছন্দ করেছিলেন সেটাও সহজ ছিল না। তিনি আসলে খুব ভাল সেলাই পারতেন না। তিনি সেলাই করতে পছন্দ করতেন--সেটা ভিন্ন কথা।


সেলাইয়ের সুক্ষ্ম বিষয়ে তার তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না, যখনই পারতেন কাপড়ে টাক দেয়া এবং পলিশ করা বাদ দেয়ার চেষ্টা করতেন--যেমন, নিখুঁতভাবে বোতামঘর বানানো এবং কাপড়ের জোড়ায় মুড়ি মারাতে তিনি আমার নানী এবং খালাদের মত দক্ষ ছিলেন না। তাদের মত না করে--ভীষণ উদ্দীপনা ও সাহসের সঙ্গে চমৎকার একটা ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করতেন-পরমুহুর্ত থেকেই তার উৎসাহে ভাটা পড়তে শুরু করতো। প্রথমতঃ কখনোই তিনি কোন মনঃপুত ডিজাইন খুঁজে পেতেন না। এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না--দুনিয়াতে এমন কোন ডিজাইন ছিল না যা তার মাথার ভিতর উদ্ভাবিত ডিজাইনের সঙ্গে মিলবে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বিভিন্ন সময় মা আমাকে জামা বানিয়ে দিতেন। একবার একটা ফুলেল মখমল কাপড়ের জামা বানিয়ে দিয়েছিলেন। জামাটির ভিক্টোরিয়ান হাই-নেকের ধার ধরে শক্ত খসখসে লেস লাগিয়ে দিয়েছিলেন এবং সঙ্গে মিলিয়ে একটা বনেট টুপি। আর একবার বানালেন স্কটিশ চেক কাপড়ের ড্রেসের সঙ্গে মখমলের জ্যাকেট এবং ট্যাম টুপি; এম্ব্রয়ডারী করা একটা সাদা পিজান্ট ব্লাউজের সঙ্গে লাল লম্বা স্কার্ট এবং কালো লেসের বডিসও বানিয়ে দিয়েছিলেন আরেকবার। সেই দিনগুলোতে, যখন আমার বাইরে জগতের ফ্যাশান সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না, তখন আমি বাধ্য মেয়ের মত সেগুলো পরতাম--হয়তবা খুশীও হতাম। এখন, বুদ্ধি বেড়েছে, এখন বুঝতে পারি সে সময় বান্ধবী লনির মত বীল-এর দোকান থেকে কেনা জামা পরতে ইচ্ছে করতো।

জামা আমাকে ট্রায়াল দিয়ে দেখতেই হতো। কখনো কখনো স্কুলের পর লনি আমাদের বাসায় আসতো এবং সোফায় বসে এ সব দেখতো। আমার মা যেভাবে আমার চারপাশে হাটুতে মটমট শব্দ করে ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলে ঘুর ঘুর করতেন তাতে আমি লজ্জা পেতাম। মা নিজে নিজে বিড়বিড় করে কথা বলতেন। তিনি বাড়িতে অন্তর্বাস এবং হাঁটু মোজা পরতেন না--মোটা হীলের জুতা এবং গোড়ালি ঢাকা ছোট মোজা পরতেন। তার পায়ে নীলচে শিরা দলা বেঁধে ফুলে থাকতো। তার উবু হয়ে বসা আমার কাছে খুবই নির্লজ্জ--এমনকি অশ্লিলও মনে হতো। আমি লনির সঙ্গে কথা বলতে থাকতাম যাতে যত দূর সম্ভব তার মনযোগ আমার মা’য়ের থেকে দূরে থাকে। লনি বড়দের সামনে থাকতো শান্ত হয়ে, ভদ্র এবং অমায়িক হয়ে-সেটা ছিল তার ছদ্মবেশে। সে বড়দেরকে দুর্দান্ত অনুকরণ এবং উপহাস করতো--আর তারা তা জনতেও পেতেন না!

ট্রায়ালের জন্য মা আমাকে টেনে নিতেন, সেগুলো পরানোর সময় আমার গায়ে পিন ফুটতো। আমাকে ঘু্রিয়ে দাঁড় করাতেন, আমাকে হাঁটাতেন এবং স্থির হয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। মুখে পিন নিয়ে লনিকে জিজ্ঞেস করতেন, “লনি তোমার এটা কেমন লাগছে?”

“সুন্দর”, লনি মোলায়েম এবং আন্তরিক গলায় বলতো। লনির নিজের মা মারা গেছেন। ও বাবার সঙ্গে থাকতো যিনি কখনোই লনির দিকে খেয়াল করতেন না। এবং এতে লনিকে নিরাপত্তাহীন এবং স্বাধীন--উভয়ই মনে হতো।

“এটা হবে, যদি আমি ঠিক মাপ মত বানাতে পারি”--মা বললেন। তিনি নাটকীয় ভাবে পা দিয়ে একটা অদ্ভুত ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ওহ ভাল, আমি সন্দিহান, ও কি আদৌ এটার মুল্যায়ান করবে”। মা আমাকে রাগিয়ে দিলেন--এটা লনিকে এমন ভাবে বললেন যেন লনি একটা বড় মানুষ এবং আমি একটা বাচ্চা মেয়ে।

“স্থির হয়ে দাঁড়াও” পিন দিয়ে আটকানো জামা আমার মাথার উপর দিয়ে টেনে নিতে নিতে বললেন। আমার মাথা মখমলের কাপড়ের মধ্যে আটকানো, আমার শরীরে একটুকরো স্কুলের সুতি সেমিজ। আমার নিজেকে একটা কদাকার রোমশ মাংশপিন্ড মনে হচ্ছিলো। আমার লনির মত হতে খুব ইচ্ছে করছিলো--হালকা গড়ন, ফ্যাকাশে এবং পাতলা--সে ছিল এক নীল শিশু।

“আসলে আমি যখন হাইস্কুলে যেতাম তখন কেউ আমাকে কোন জামা বানিয়ে দেয়নি”, আমার মা বললেন। আমি নিজে নিজেরটা বানাতাম--না হলে নাই”।
আমি ভয় পাচ্ছিলাম, তিনি হয়ত আবার তার সেই হাই স্কুলে পড়ার খরচ জোগানোর জন্য সাত মাইল হেঁটে শহরে গিয়ে কাজ খোঁজার জন্য বোর্ডিং হাউজের ওয়েট্রেসের কাজের গল্প শুরু করবেন। আমার মায়ের জীবনের সব গল্প যেগুলোতে এক সময় আমি আগ্রহী ছিলাম তা অতিনাটকীয়, অপ্রাসংগিক এবং ক্লান্তিকর মনে হতে শুরু করলো।

“এক সময় আমি একট জামা পেয়েছিলাম”, তিনি বললেন। “ঘিয়ে রংযের কাশ্মিরী উলের জামাটির সামনের দিক থেকে গাঢ় নীল রংয়ের পাইপিং এবং খুব সুন্দর ঝিনুকের বোতাম ছিল। সেই জামাটা যে কি হয়েছে!

মায়ের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে আমি আর লনি উপরে আমার ঘরে যেতাম। ঘরটা ঠাণ্ডা হলেও আমরা ওখানেই থাকতাম। আমরা আমাদের ক্লাসের ছেলেদের নিয়ে কথা বলতাম, এক এক করে সারি ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করতাম, “তুই ওকে পছন্দ করিস? আচ্ছা, তুই কি ওকে অল্প-অল্প পছন্দ করিস? অপছন্দ করিস? যদি বলে, তাহলে কি ওর সঙ্গে প্রেম করবি?”

এখন পর্যন্ত কেউই আমাদেরকে বলেনি। আমাদের বয়স ছিল মাত্র তের এবং মাত্র দুই মাস ধরে হাই স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম। আমরা ম্যাগাজিনের প্রশ্নবালীর উত্তর দিয়ে নিজেদের ব্যাক্তিত্ব এবং জনপ্রিয়তার মাত্রা যাচাই করতাম। কিভাবে মুখে প্রসাধনী ব্যাবহার করলে আমাদের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো আরো ফুটিয়ে তোলা যাবে, কি ভাবে প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম দিন কথা চালিয়ে যেতে হবে আর যদি কেউ বেশি দূর আগাতে চায় তখন কি করতে হবে--এগুলোর উপরও পত্রিকাতে নিবন্ধ পড়তাম। এ ছাড়াও আমরা রজঃনিবৃতির পরের অবসাদ, গর্ভপাত এবং কেন স্বামীরা ঘরের বাইরে শান্তি খুঁজে বেড়ায় এগুলোর উপর লেখাগুলোও পড়তাম। যখন আমদের বাড়ির কাজ থাকতো না তখন আমরা যৌনতা বিষায়ক আলোচনা করতাম, এ ব্যাপারে জ্ঞান বাড়াতাম। আমরা একে অন্যকে সব কথা জানাবো বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু হাইস্কুলে বড়দিনের নাচ, যেটার জন্য মা এই জামাটা বানাচ্ছিলেন, সেটা সম্পর্কে একটা কথা আমি ওকে বলিনি। কথাটা হলো, আমি নাচে যেতে চাচ্ছিলাম না।

আমি হাইস্কুলে কখনো এক মুহুর্তের জন্যও স্বস্তি বোধ করতাম না। লনির ব্যাপারটা বলতে পারবো না-পরীক্ষার আগে ওর বুক ধড়ফড় করে হাত বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে যেতো। কিন্তু আমি প্রায় সব সময়ের জন্যই হতাশায় ভুগতাম। ক্লাসে আমাকে কোন প্রশ্ন করা হলে--যত সহজ-ছোটই হোক না কেন, আমার গলা থেকে চিঁচিঁ করে অথবা কাঁপা-কাঁপা কর্কশ শব্দ বের হত। মাসের যেই সময়ে যখন এটা অসম্ভব--তখনো আমাকে ব্ল্যাকবোর্ডের ডাকা হলে আমার মনে হত নিশ্চিত আমার স্কার্টে রক্ত লেগে আছে। ব্ল্যাকবোর্ডে কম্পাস দিয়ে আঁকতে বললে আমার হাতগুলো ঘামে পিচ্ছিল হয়ে যেত। ভলিবলের বলটাকে ঠিক করে মারতে পারতাম না। অন্যদের সামনে কোন কিছু করতে বলা হলে আমি সব কিছু গুলিয়ে ফেলতাম। আমি ব্যাবহারিক ব্যাবসা বিষয়টা অপছন্দ করতাম কারণ এতে হিসাব বইয়ে কলম দিয়ে সোজা দাগ কাটতে হত। আর শিক্ষক যখন আমার ঘাড়ের উপর দিয়ে তা দেখতেন তখন আমার সব সরল রেখা আঁকা বাঁকা হয়ে এক হয়ে যেতো। আমি বিজ্ঞান অপছন্দ করতাম, কারন আমরা অপরিচিত ভঙ্গুর যন্ত্রপাতি রাখা টেবিলের পিছনে তীব্র আলোর নীচে টুলের উপর দাড়ের পাখীর মত বসতাম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের পড়াতেন--তিনি ছিলেন স্ব-স্বরে মোহিত শীতল কন্ঠের এক মানুষ। তিনি প্রতি সকালে বাইবেল পড়তেন এবং তার মানুষকে অপমান করতে পারার বিশেষ ক্ষমতা ছিল। আমি ইংরেজি অপছন্দ করতাম কারণ যখন আমাদের মোটা, ভদ্র সামান্য ট্যারা শিক্ষিকা শ্রেণী কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়ার্ডসওয়ার্থ পড়াতেন তখন ছেলেরা ক্লাসের পিছনে বিংগো খেলতো। তিনি তাদের ধমক দিতেন, অনুনয়ও করতেন--তার মুখ লাল হয়ে যেতো এবং তার কণ্ঠও আমার মতই অনির্ভরশীল হয়ে উঠতো। ছেলেরা তার কাছে হাস্যকর ভাবে ক্ষমা চাইতো, এবং যখন তিনি আবার পড়াতে শুরু করতেন আবার তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বুকের উপর হাত রেখে চোখ ট্যারা করে মুর্চ্ছা যাওয়ার ভঙ্গি করতো। কখনো কখনো তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। তখন তার ক্লাসরুম ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকতো না। তারপর ছেলেরা গরুর মতো হাম্বা হাম্বা রবে উচ্চ স্বরে শোরগোল তুলতো; আমাদের সর্বগ্রাসি আট্টহাসি--হ্যাঁ, আমারটাও-তাকে তাড়া করতো। সেই সময়গুলোতে শ্রেণী কক্ষে যেন নিষ্ঠুরতারতা মেলা বসত-আমাদের মত হীনবল এবং সন্দেহভাজন মানুষদেরকে আতঙ্কিত করতো।

তবে স্কুলে আসলে শুধু মাত্র বিজ্ঞান, ইংরেজী এবং ব্যাবহারিক ব্যাবসা বিষয়ই ছিল না। সেখানে আরো অন্য কিছু ছিল যা জীবনকে উজ্জ্বলতা এবং গতি দান করতো। সেই পুরনো ভবন--তার ঠাণ্ডা পাথুরে দেয়াল, স্যাতস্যেতে বেইজমেন্ট, অন্ধকার ক্লোকরুম, মৃত রাজন্যবর্গ এবং হারানো অভিযাত্রীদের ছবি, কে কার সঙ্গে প্রেম করবে এ নিয়ে উত্তেজনাময় প্রতিযোগিতা, এবং তাতে বড় ধরনের সফলতার দিবা স্বপ্ন সত্বেও আমার নিজের মধ্যে সম্পূর্ণ পরাজয়ের পূর্বাশংকা ছিল। মনে হত আমাকে নাচ থেকে বাঁচার জন্য একটা কিছু ঘ্টাতেই হবে।

ডিসেম্বরের সঙ্গে তুষার এলো আর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ইতঃপুর্বে সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে গোড়ালি মচকানোর বিষয়টা বিবেচনায় এনেছিলাম এবং গাড়ীর চাকায় এবড়ো-থেবড়ো শক্ত বরফ জমা গ্রামের পথে সাইকেলে তা করার চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু করাটা খুব কঠিন ছিল। আবার, যেহেতু আমার গলা এবং শ্বাসনালী খুব নাজুক, তাই ভাবলাম, ঠাণ্ডা লাগাই না কেন? আমি রাতে বিছানা থেকে নেমে জানালা অল্প একটু খুলে রাখতে শুরু করলাম। আমি হাঁটু গেড়ে বসে বাতাস এবং কখনো কখনো তীব্র বাতাসের সঙ্গে বেগে তুষার কণাকে তীক্ষ্ম ফলার মত আমার খোলা গলার দিকে তেড়ে আসতে দিতাম। আমি গা থেকে ঘুমানোর পোষাকের উপরের অংশটা খুলে ফেলতাম। আমি নিজে নিজেকে বলতাম-- “ঠাণ্ডায় নীল হয়ে যাও” এবং সেখানে হাঁটু গেড়ে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতাম আমার গলা এবং বুক নীল হয়ে যাচ্ছে--ঠাণ্ডায়-চামড়ার নীচে ধুসর নীল শিরা জেগে উঠছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয় ততক্ষন পর্যন্ত আমি সে ভাবে থাকতাম এবং তারপর জানালার কার্নিশ থেকে এক মুঠো বরফ নিয়ে ঘুমানোর পোষাকের বোতাম লাগানোর আগে আমার বুকে ঘসে-ঘসে লাগাতাম। বরফ গলে ফ্লানেলের কাপড় ভিজে যেতো এবং আমি ভেজা কাপড়ে ঘুমাতাম-যেটা ছিল সব চেয়ে মারাত্মক। সকালে যে মুহুর্তে আমি জাগতাম, গলাব্যাথা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য আমি গলায় খাঁরি দিয়ে দেখতাম, কাশি দিয়ে পরীক্ষা করতাম, আশা নিয়ে কপাল ছুঁয়ে দেখতাম জ্বর এসেছে কিনা। সবই বৃথা। প্রতি সকালে এমনকি যে দিন আমার নাচ ছিল সেদিন সকালেও আমি পরাজিত হয়ে টিকে গেলাম--সুস্থ সবল শরীরেই উঠলাম।

নাচের দিন সকালে আমি স্টিল কার্লার দিয়ে চুল কোঁকড়া করলাম। আমি আগে কখনোই এটা করিনি কারণ আমার চু্ল এমনিতেই কোঁকড়া কিন্তু আমি আজ দৈবভাবে রক্ষা পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য নারী সুলভ সব আচার পালন করতে চাইলাম। আমি রান্নাঘরের শোফায় শুয়ে দ্যা লাষ্ট ডে অব পম্পেই পড়তে পড়তে মনে মনে খুব করে চাচ্ছিলাম--যদি আমি পম্পেই নগরীতে থাকতাম! আমার মা, যিনি কখনোই কোন কিছুতে সন্তুষ্ট হতে পারতেন না, আমার জামাটি দেখে সাব্যস্ত করলেন যে এটা খুব বড় মানুষের জামার মত লাগছে। তাই জামায় একটা সাদা লেসের কলার লাগাতে শুরু করলেন। আমি ঘড়ি দেখছিলাম। সেদিনটা ছিল বছরের সবচেয়ে ছোট দিনগুলোর একটি। আমাদের সোফার উপরে দিকে দেয়ালে পুরনো কাটাকুটি খেলারঘর, পুরনো ড্রয়িং এবং আঁকা বাঁকা হাতের লেখায় ভরা ছিল। এগুলো আমার ভাই ও আমি ব্রংকাইটিসে অসুস্থ অবস্থায় করেছিলাম। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার সেই ছোট্টবেলার পিছনে ফেলে আসা নিরাপদ দিনগুলোতে খুব বেশী ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল।

আমি যখন চুল থেকে চুল কোকড়ানো করার মেশিনটি সরিয়ে নিলাম তখন প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিমভাবে করা চুল সব এক সঙ্গে চকচকে ঝোঁপের মত ছড়িয়ে পড়লো। আমি চুলগুলো ভেজালাম, আঁচড়ালাম, ব্রাশ দিয়ে বাড়ি মারলাম এবং গাল বরাবর টেনে আনলাম। মুখে ফেইস পাউডার দিলাম--যেটা শেষমেষ আমার উষ্ণ মুখে চকের গুড়োর মত দেখাচ্ছিল। আমার মা তার অ্যাশ অব রোজেজ পারফিউম খুঁজে বের করলেন যা তিনি নিজে কখনোই ব্যাবহার করেন না এবং তা আমার বাহুতে ছিটিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমার জামার চেইন বন্ধ করে আমাকে আয়নার সামনে নিয়ে এলেন। জামাটা ছিল রাজকন্যাদের ড্রেসের স্টাইলে পেটের দিকটা চিকন এবং খুব আটোসাটো। আমি দেখছিলাম ড্রেসের কলারের শিশুসুলভ ঝালরের ভিতর দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কের সনদের মত নতুন শক্ত ব্রেসিয়ারের ভেতরে দিয়ে আমার উতক্ষিপ্ত স্তন।

“ইশ, যদি একটা ছবি তুলতে পারতাম”, মা বললেন। “আসলেই, সত্যি সত্যি এত ভাল ফিট হওয়ার জন্য আমি গর্ব বোধ করছি, আমাকে তোমার ধন্যবাদ দেয়া উচিত”।

“ধন্যবাদ”, আমি বললাম।

আমি দরজা খোলার পর লনি প্রথম যে কথাটি বলল, তাহলো, “জিসাস, তোর চুলে কি করেছিস”?

“আমি উঁচু করে বেধেছি”।

“তোকে জুলুদের মত দেখাচ্ছে। ঠিক আছে, চিন্তা করিস না, একটা চিরুনী দে, সামনের চুলগুলো একটু রোল করে দেই। সুন্দর দেখাবে। এমন কি তোকে আর একটু বড়ও মনে হবে”।

আমি আয়নার সামনে বসলাম এবং লনি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল। মা আমাদের ছেড়ে যেতে পারছিলেন না। আমি চাচ্ছিলাম তিনি আমার সামনে থেকে চলে যান। চুলের রোলের আকার হওয়া দেখতে দেখতে মা বললেন, “শাবাশ লনি, তোমার হেয়ারড্রেসারের কোর্স করা উচিত”।

লনি বলল, তাই তো, চিন্তা করা যায়। লনি পরেছে একটা হাল্কা নীল ক্রেপ ড্রেস যেটা কোমর থেকে এক ধাপ কুঁচি এবং বোঁ দেয়া। কলার ছাড়াও ওটা আমারটার চেয়ে অনেক বেশী বড়দের মত ছিল। ববি-পিন কার্ডের মেয়েদের চুলের মত ওর চুল ছিল মসৃণ এবং ঝলমলে। আমি সব সময় গোপনে ভাবতাম--লনি ওর আঁকাবাঁকা দাঁতের জন্য সুন্দরী হতে পারে না। কিন্তু আজ আমি দেখলাম বাঁকা দাঁতে কিছু যায় আসে না--ওর স্টাইলিস্ট ড্রেস এবং মসৃণ চুলের জন্য ওর পাশে আমাকে লাল মখমলে মোড়ানো বিস্ফোরিত চোখ আর বুনো ঝোপালো চুলে কিছুটা বিকারগ্রস্থ একটা কাকতাড়ুয়া মত লাগছিল।

মা আমাদের পিছু পিছু দরজা পর্যন্ত এসে অন্ধকারে ডাক দিল, “ও রিজারভোওয়ার। এটা ছিল লনি এবং আমার নিয়মিত বিদায় সম্ভাসন। তার গলায় এটা ছেলেমানুষীর মত শোনালো এবং সেখান থেকে একাকিত্ব ফুটে বের হচ্ছিল। এটা বলাতে আমি তার প্রতি এতটা রেগে গেলাম যে কোন উত্তর দিলাম না। শুধু লনি পিছন ফিরে উৎসাহ ভরে আনন্দিত হয়ে বলল-- “শুভ রাত্রি”।

জিমনিশিয়্যামে পাইন এবং সেডারের গন্ধ ছিল। বাস্কেটবল খেলার হুপ থেকে লাল আর সবুজ ভাজ করা কাগজের ঘণ্টা ঝুলছিল, উঁচুতে, কাঠ দিয়ে আটকানো জানালাগুলো সবুজ ডাল দিয়ে ঢাকা ছিল। উপরের ক্লাশের সবাই মনে হয় জোড়ায় জোড়ায় এসেছে। দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শ্রেণীর কিছু মেয়েরা বয়ফ্রেন্ড এনেছে। এই বয় ফ্রেন্ড্ররা ইতোমধ্যেও পাশ করে চলে গেছে এবং এর মধ্যেই শহরে তরুণ ব্যাবসায়ী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। সেই সব তরুণেরা জিমনেসিয়ামের ভেতর ধুমপান করছিল। তাদেরকে থামানোর কেউ ছিল না। তারা ছিল স্বাধীন। তাদের পাশে সুন্দরী মেয়েরা উদাস এবং নির্লিপ্ত মুখে তাদের জামার হাতায় হাত রাখছিল। তাদের মত হতে আমারও খুব ইচ্ছে করছিল। তাদের ভাবটা এমন ছিল যেন আসলে শুধু তারাই-বড়রাই নাচবে। তারা আমাদের মধ্যে ঘুরছে ফিরছে এবং চোরা চোখে তাকাচ্ছে। তাদের ভাবখানা এমন যে আমরা একেবারে অদৃশ্য না হলেও যেন জড় পদার্থ। প্রথম নাচের জন্য পল জোন্সের গানের ঘোষণা এলো। তখন তারা নির্জীব পায়ে এগিয়ে গেলো। তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে মুচকি হাসল যেন তাদের ছেলেবেলার ভুলে যাওয়া খেলা করতে বলা হচ্ছে। হাত ধরাধরি করে লনি, আমি এবং নবম শ্রেণীর অন্যান্য ছাত্রীরা কাঁপতে কাঁপতে একসঙ্গে জড়ো হয়ে তাদের অনুসরণ করলাম।

আমার পাশ দিয়ে পার হয়ে যাওয়ার সময় আমি বাইরের সার্কেলের দিকে তাকাতে সাহস করিনি--পাছে ভয়ে নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া করে ফেলি। বাজনা থামলে আমি আগে যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে গেলাম, এবং অর্ধেক চোখ তুলতেই দেখলাম আমার দিকে একটা ছেলে অনীহা নিয়ে এগিয়ে আসছে। ওর নাম ম্যাসন উইলিয়ামস। কোন রকমে আমার কোমর এবং আঙ্গুল ছুঁয়ে সে আমার সঙ্গে নাচতে শুরু করলো। আমার পা অসাড় হয়ে গেল। আমার হাত কাঁধ থেকে কাঁপছিল। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। এই ম্যাসন উইলিয়ামস হল স্কুলের নায়কদের একজন। সে বাস্কেটবল এবং হকি খেলতো এবং সে রাজকীয় অহমিকা আর বেপরোয়া ঔদ্ধত্য নিয়ে স্কুলের করিডোর দিয়ে হেঁটে যেতো। তার কাছে শেক্সপিয়ার মুখস্থ করা আর আমার মত নগন্য মানুষের সঙ্গে নাচা একই ধরনের অপমানজনক। সেটা সে যতটুকু অনুভব করেছে আমিও ঠিক ততটুকুই বুঝতে পেরেছিলাম। আমার মনে হল সে তার বন্ধুদের সঙ্গে নিস্পৃহ দৃষ্টি বিনিময় করলো। অচমকা নাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অপ্রত্যাশিত কৌশলে সে আমাকে নাচ রুমের কিনা্রায় নিয়ে গিয়ে আমার কোমর থেকে তার হাত সরালো এবং আমার হাত ছেড়ে দিল।

“আচ্ছা, আবার দেখ হবে” বলে সে হেঁটে দূরে সরে গেল।

কি হচ্ছে তা বুঝতে আমার দু’এক মিনিট সময় লেগে গেল এবং বুঝলাম ও আর ফিরে আসছে না। আমি গিয়ে দেয়ালের ধারে একলা দাঁড়িয়ে রইলাম। শরীর চর্চার শিক্ষিকা দশম শ্রেণীর এক ছাত্রের হাত ধরে উত্তাল নাচতে নাচতে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালেন। আমাদের পুরো স্কুলে তিনিই একমাত্র শিক্ষিক যিনি সামাজিক সমন্বয় শব্দটি ব্যাবহার করতেন এবং আমার ভয় হচ্ছিল যে যদি তিনি দেখে থাকেন অথবা জেনে যান তাহলে ম্যাসনকে ডেকে এনে আমার সঙ্গে নাচ শেষ করানোর জন্য সবার সামনে ভয়ংকর কাণ্ড করবেন। ব্যাক্তিগতভাবে ম্যাসনের ব্যাবহারে আমি অবাক হইনি বা আমার কোন রাগও হয়নি। স্কুলের এই ভুবনে আমি তার এবং আমার অবস্থান মেনে নিয়েছিলাম এবং আমি বুঝতে পারলাম ও যা করেছে সেটা করাই ছিল ওর জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। সে স্কুলের একজন নায়ক। সে স্কুলের ছাত্র পরিষদের সেরা ছাত্রদের মত নয় যারা মনে করে যে স্কু্লের গন্ডির বাইরে তাদের জীবনে সাফল্য অর্জন করতেই হবে। এ রকম কেউ একজন যদি ভদ্রতার খাতিরে অথবা করুণা করেও আমার সঙ্গে নাচতো, তাতেও আমার এর চেয়ে ভাল লাগতো না। তারপরও আমি আশা করছিলাম যেন এই ঘটনাটি যেন কারো চোখে না পড়ে। কেউ দেখে ফেললে আমার খারাপ লাগবে। আমি বুড়ো আঙ্গুলের চামড়া দাঁত দিয়ে কাটা শুরু করলাম।

গান থেমে গেলে জিমনেশিয়্যামের অন্য প্রান্তের যাওয়া মেয়েদের স্রোতে আমি যোগ দিলাম। নিজে নিজেকে বললাম, ভেবে নাও কিছু হয়নি, ভেবে নাও এটাই শুরু—এখনই শুরু হয়েছে।

ব্যান্ড আবার বেজে উঠল। নাচঘরের আমাদের দিকের ঠাসা ভীড়টার মধ্যে একটা নড়াচড়া শুরু হল, এবং দ্রুত ভীড় পাতলা হয়ে গেল। ছেলেরা এলো, মেয়েরা নাচতে গেল। লনিও গেল। আমার পাশের মেয়েরাও গেল। আমাকে কেউ ডাকল না। লনির কাছ থেকে পড়া ম্যাগাজিনের একটা নিবন্ধের কথা মনে পড়ল, তাতে বলেছিল-- উচ্ছ্বল হও! তোমার চোখের ঝিকিমিকি ছেলেদের দেখতে দাও, তোমার গলার হাসি তাদের শুনতে দাও! সে হাসি যেন হয় সহজ এবং স্পষ্ট। কিন্তু অনেক মেয়েরাই এই হাসিটা দিতে ভুলে যায়! সে রকম আমিও ভুলে গেছিলাম। টেনশনে আমার ভ্রু দু’টো কুচকে এক হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে নিশ্চয় ভীত এবং কুৎসিত দেখাচ্ছিল। আমি একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে মুখকে শিথিল করার চেষ্টা করলাম। আমি হাসলাম। কিন্তু একা একা কারো দিকে না তাকিয়ে হাসি আ্মার কাছে বোকার মত মনে হল। আমি দেখলাম নাচের জায়গায় মেয়েরা এমন কি জনপ্রিয় মেয়েরাও হাসছে না, তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল ঘুমে নত, গোমড়া মুখো এবং একেবারেই হাসেনি।

তখনও নাচের জন্য মেয়েরা যাচ্ছিলো। কিছু কিছু মেয়েরা হতাশ হয়ে একে অন্যের সঙ্গে গেল। কিন্তু অধিকাংশই ছেলেদের সঙ্গে গেল। মোটা মেয়ে, মুখে ব্রণওয়ালা মেয়ে, একটা গরীব মেয়ে--যে মেয়েটি কোন ভাল নতুন জামা কিনতে পারেনি এবং সেজন্য সে পুরনো স্কার্ট এবং সোয়েটার পরে এসেছিল, এই সব মেয়েদের সবাইকেই নাচের জন্য ডাকল। তারা নাচলো। কেন তাদেরকে নাচতে নিলো--আমাকে নিলো না? কেন আমি ছাড়া সবাই নাচতে পারলো? আমি মখমলের লাল জামা পরেছি, আমি আমার চুল কোঁকড়া করেছি, আমি ডিওডোরেন্ট এবং কোলোন ব্যাবহার করেছি। আমি নিজেকে বললাম-- প্রার্থনা করো। আমি আমার চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না কিন্তু মনে মনে বার বার বললাম, অনুগ্রহ করো, আমাকে অনুগ্রহ করো। আমি দুহাত আমার পিছনে নিলাম। দুহাতের আঙ্গুলগুলো গিট দিয়ে ধরলাম। এটা একটা গোপন সঙ্কেত। অঙ্কের ক্লাশে ব্লাক বোর্ডে যাওয়ার জন্য যাতে শিক্ষক না ডাকেন সেজন্য আমি এবং লনি এই সঙ্কেতটি ব্যবহার করি।

কোন কাজ হয়নি। আমি যা ভয় করছিলাম তা-ই সত্যি হল। আমি বাদ পড়ছিলাম। আমার কোন একটা অদ্ভূত সমস্যা আছে যেটাকে ঠিক করা যায় না--যেমন মুখের দুর্গন্ধ অথবা ব্রণকে লুকনো যায় না। যেন সবাই আমার সমস্যাটি জানে, আর আমিও জানি। আমি বরাবরই জানি। তবু আমি মনে মনে আশা করছিলাম –সবার এই জানাটা যেন নিশ্চিতভাবে ভুল হয়। নিশ্চয়তা আমার ভিতরে রোগের মত মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। বাদ পড়া আরো দু’একজন মেয়েকে পাশ কাটিয়ে আমি মেয়েদের বাথরুমে গেলাম। আমি একটা কিউবিকলে লুকালাম।

আমি সেখানেই থেকে গেলাম। নাচের মাঝে মাঝে মেয়েরা এসে চটজলদি চলে যাচ্ছিল। সেখানে অনেকগুলো কিউবকল ছিল; কেউই খেয়াল করেনি যে আমি অস্থায়ী দখলদারি নই। নাচের সময়ের গানগুলো শুনতে ভাল লাগছিল কিন্তু সেখানে আমার আর কোন অংশগ্রহণ ছিলনা। কারণ আমি আর নাচের জন্য চেষ্টাই করবো না। আমি শুধুমাত্র লুকাতে চেয়েছিলাম। কেউকে না দেখিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলাম-বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম।

এক সময় বাজনা শুরু হওয়ার পরও কেউ একজন থেকে গেল। অনেকক্ষণ পানি ছেড়ে রেখে সে তার হাত ধুচ্ছিল, চুল আচড়াচ্ছিল। আমি যে অনেকক্ষণ ধরে একটা কিউবিকল বন্ধ করে রেখেছি এটা তার কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে। আমার বরং বের হয়ে হাত ধোঁয়া উচিত। খুব সম্ভবত আমি যতক্ষণ হাত ধোবো ততোক্ষনে সে চলে যাবে।

তার নাম ম্যারি ফরচুন। আমি তাকে নামে চিনতাম কারণ বালিকা ক্রীড়া সঙ্ঘে তার একটা পদ ছিল। ক্লাসের মেধা তালিকায় তার নাম ছিল এবং সে সব সময়েই এটা ওটা আয়োজন করতো। এই নাচের আয়োজনেও তার কিছু কাজ ছিলো। সে সবগুলো শ্রেণী কক্ষে গিয়ে গিয়ে এই অনুষ্ঠানের স্থান সাজানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করছিল। সে একাদশ অথবা দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো।

“জায়গাটা বেশ চমৎকার এবং ঠাণ্ডা-- সে বলল। “আমি এখানে ঠাণ্ডা হতে এসেছি, আমার খুব গরাম লাগছিল”।

আমি যখন হাত ধোঁয়া শেষ করলাম তখনও সে তার চুল আচড়াচ্ছিল।
“তোমার কি এই নাচের গান পছন্দ হচ্ছে?” সে জিজ্ঞেস করলো।

--চলে। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি বলা উচিত। একজন বড় মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে এত সময় দিচ্ছে এতে আমি বিস্মিত হচ্ছিলাম।
“--আমি করি না। আমার সহ্য হয় না। নাচের গান পছন্দ না হলে আমি নাচতে পছন্দ করি না। শোনো, কি রকম ক্যাটক্যাটা! এ ধরনের গানে নাচার চেয়ে না নাচাই ভালো”।

আমি চুল আঁচড়াচ্ছিলাম এবং সে পাশে একটা বেসিনে হেলান দিয়ে আমাকে দেখছিল।

“আমি নাচতে চাই না এবং এখানে থাকারও তেমন একটা ইচ্ছেও নেই”, সে বললো। “চলো কোথাও গিয়ে একটা সিগারেট খাই”।

“--কোথায়?”
“--আস দেখাচ্ছি”।
ওয়াশরুমের শেষ প্রান্তে একটা দরজা ছিল। সেটার তালা খোলা ছিল এবং সেটা দিয়ে একটা অন্ধকার ক্লজেটে যাওয়া যেতো-যেটা ঝাড়ু ও বালতীতে ভরা ছিল। ওয়াশরুমে আলো পাওয়ার জন্য ম্যারি আমাকে দিয়ে দরজা খুলে রাখালো যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অন্য আর একটা দরজার হাতল খুঁজে পায়। এই দরজা দিয়ে অন্ধকারময় আরও একটা জায়গায় উন্মুক্ত হল।

সে বলল, “আমি আলো জ্বালালে কেউ আমাকে দেখে ফেলবে। এটা জেনিটরের কক্ষ। আমি অনুধাবন করলাম যে, যারা খেলা ধুলা করে তারা সবসময় অন্যান্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে স্কুল ভবনের খুঁটিনাটি বেশী জানে। তারা জানে কোথায় জিনিষপত্র রাখা হয় এবং সবসময়েই ব্যাস্ত এবং দ্বিধাহীনভাবে অননুমোদিত দরজা দিয়ে যাওয়া আসা করে।

“--পায়ের দিকে খেয়াল করে যাও”, সে বলল, “ঐখানে, শেষ প্রান্তে একটা সিঁড়ি আছে। ওটা দিয়ে দোতলায় একটা ছোট্ট ক্লোজেটে যাওয়া যায়। দরজাটা উপরের দিকে তালা বন্ধ কিন্ত ক্লোজেট ও সিঁড়ির মাঝখানে একটা দেয়ালের মত জিনিষ আছে। আমরা যদি সিড়ির ধাপে বসি এবং যদি হঠাৎ কেউ এসেও পড়ে তাহলেও আমাদের দেখতে পাবে না”।

“--তারা কি সিগারেটের গন্ধ পাবে না?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“--ওহ! ধুর, জীবনে সব সময়েই ঝুঁকি থাকে”।

সিঁড়ি ঘরের উপরের দিকে অনেক উঁচুতে একটা জানালা ছিল--সেখান থেকে আমরা একটু আলো পাচ্ছিলাম। ম্যারি ফরচুনের হাতব্যাগে সিগারেট আর ম্যাচ ছিল। আমি এর আগে কোন সিগারেট খাইনি--শুধুমাত্র লনির বাবার কাছ থেকে চুরি করা তামাক আর কাগজ দিয়ে নিজেদের বানানো সিগারেট ছাড়া। সেগুলো মাঝখান দিয়ে খুলে যেতো। এগুলো অনেক বেশী ভাল।

“--আমার আজ রাতে এখানে আসার একমাত্র কারণ”, ম্যারি ফরচুন বলল, “আমি নাচ ঘর সাজানোর দায়িত্বে ছিলা্ম আর আসলে লোকজন ভরার পর সবকিছু মিলিয়ে কেমন লাগে তা দেখতে ইচ্ছে করছিল। না হলে এই ঝামেলার মধ্যে কে আসতো? আমি ছেলে-পাগলা নই”।

উঁচু জানালার আলো থেকে আমি তার পাতলা, বিরক্ত, ব্রনের ছোট ছোট গর্তযুক্ত ঘর্মাক্ত মুখ, সামনে দিকে ঠেলে বের হওয়া দাঁত দেখতে পাছিলাম। এ সব কিছুতে তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং নেতা বলে মনে হচ্ছিল।

“--অধিকাংশই সে রকম, দেখোনি? ছেলে-পাগল মেয়েদের কল্পনাতীত বড় একটা সমারোহ এই স্কুলে ঠিক এখানেই আছে”।

আমার প্রতি তার মনোযোগ, তার সঙ্গ এবং তার সিগারেটের জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম। আমি বলল, “আমিও তাই ভাবছি”।

“যেমন ধরো আজকের বিকাল। আজ বিকেলে আমি তাদেরকে দিয়ে ঘণ্টা এবং এটা ওটা ঝুলাতে চেয়েছিলাম। তারা কোন রকমে মইয়ের উপর উঠেই ছেলেদের সঙ্গে রঙ্গ ঢঙ্গ শুরু করেছে। আদৌ সাজানো হলো কি না হল এ নিয়ে ওদের কোন চিন্তা নেই। শুধু লোক দেখানো। ওদের জীবনে একমাত্র লক্ষ্য ছেলেদের সঙ্গে ঢলাঢলি করা। আমি বলবো এগুলো সব আহাম্মক”।

আমরা শিক্ষকদের নিয়ে এবং স্কুলের বিষয়ে কথা বলছিলাম। সে বলল সে শরীর চর্চার শিক্ষক হতে চায় এবং সে জন্য তাকে কলেজে যেতে হবে কিন্তু তার বাবা-মার পর্যাপ্ত টাকা পয়সা নেই। সে বলল, সে নিজে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে চায়। সে যে ভাবেই হোক স্বনির্ভর হতে চায়, এ জন্য তাকে স্কুলের ক্যাফেটেরিয়াতে কাজ করতে হতে পারে এবং গ্রীষ্মের সময় খামারে কাজ করতে হতে পারে যেমন, তামাক তোলার কাজ। তার কথা শুনতে শুনতে আমার তীব্র মন খারাপের অবস্থা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আমি দেখলাম এখানে কেউ একজন আছে যে ঠিক আমার মতোই ব্যার্থতার ভার বইছে--তবে সে ছিল উদ্যামী এবং আত্মসন্মানে ভরপুর। সে আরো অনেক কিছু করার কথা এরই মধ্যে চিন্তা করে ফেলেছে। ভেবে নিয়েছে তাকে তামাক তুলতে হতে পারে।

বাজনার লম্বা একটা বিরতির সময় আমরা যখন সেখানে বসে ধুমপান করছিলাম এবং কথা বলছিলাম, তখন বাইরের দিকে ওরা কফি আর ডোনাট খাচ্ছিল। আবার যখন বাজনা শুরু হল তখন ম্যারি ফরচুন বলল, “দেখো, আমাদের কি এখানে আর বেশী সময় থাকা দরকার আছে? চলো, আমরা কোট নিয়ে এখান থেকে চলে যাই। আমরা তো লী-তে গিয়ে হট চকলেট খেতে পারি এবং আরাম করে কথা বলতে পারি, তাই না”?

আমরা হাতড়াতে হাতড়াতে জেনিটরের ঘর থেকে হাতে করে সিগারেটের গোড়া এবং ছাই নিয়ে বের হলাম। বের হওয়ার আগে আমরা থেমে শুনে নিশ্চিত হলাম যে ওয়াশরুমে কেউ নেই। আমরা অন্ধকার থেকে আলোতে বেরিয়ে এলাম এবং সিগারেটের ছাই টয়লেটের মধ্যে ফেললাম। বাইরের দিকের দরজার পাশে ক্লোকরুমে যেতে হলে আমাদের নাচের রুম আড়াআড়ি ভাবে পার হয়ে যেতে হবে।

একটা নাচ কেবলমাত্র শুরু হয়েছে, ম্যারি বলল, “নাচের ফ্লোরের কিনারা ধরে যাও। কেউই আমাদের লক্ষ্য করবে না”।

আমি তাকে অনুসরণ করলাম। আমি কারো দিকে তাকালাম না। আমি লনিকে খুঁজলাম না। সম্ভবত এরপর থেকে লনি আর আমার বন্ধু থাকবে না, কোন ভাবেই আগের মত ঘনিষ্ট তো নয়-ই। লনি ম্যারির কথা মত ছেলে-পাগলা।

আমি দেখলাম যে আমি অতটা ভয় পাইনি, এখন আমি আমার মনকে নাচ ঘর ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করলাম। কেউ আমাকে পছন্দ করবে এই জন্য আর অপেক্ষা করবো না। আমার নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। আমাকে হাসতেও হবে না বা সৌভাগ্যের জন্য প্রতীকও তৈরী করতে হবে না। আমার কাছে ওগুলোর কোন মুল্য নেই। আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে এক কাপ হট চকলেট খাওয়ার জন্য যাচ্ছি।

একটা ছেলে আমাকে কিছু একটা বলল। সে আমাদের রাস্তা বন্ধ করে ছিল। আমার ধারণা হল সে আমাকে বলছে যে আমি কিছু ফেলে গেছি কিম্বা আমরা ওপথে যেতে পারবো না অথবা ক্লোকরুম বন্ধ আছে। সে আবার না বলা পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারিনি যে সে আমার সঙ্গে নাচতে চাচ্ছে। সে ছিল আমার ক্লাশে রেইমন্ড বোল্টিং, যার সঙ্গে আমি জীবনে কখনোই কথা বলিনি। সে ভেবে নিয়েছিলো যে আমি হ্যা বলেছি। সে তার হাত আমার কোমরে রাখল এবং কোন কিছু না ভেবেই আমি নাচ শুরু করলাম।

আমরা নাচঘরের মাঝখানে চলে গেলাম। আমি নাচছিলাম। আমার পা কাঁপতে ভুলে গিয়েছিল-- আমার হাত ঘামতে ভুলে গিয়েছিলো। আমি একটা ছেলের সঙ্গে নাচছি যে আমাকে নাচার কথা জিজ্ঞেস করেছে। কেউ তাকে বলেনি, সে বাধ্যও ছিল না, এমনিতেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছে। এও কি সম্ভব? আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? আমার কি আসলেই কোথাও কোন সমস্যা নেই?

আমি ভেবেছিলাম যে তাকে আমার বলা উচিত যে একটা ভুল হয়েছে--আমি তক্ষুণি চলে যাচ্ছিলাম। আমি আমার বান্ধবীর সঙ্গে হট চকলেট খেতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। আমার অবয়বে নিজে থেকেই কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন চলে এলো--আনমোনা, নির্লিপ্ত যা নির্বাচিতা নৃত্যরতা মেয়েদের মুখে থাকে, যা আমি কোন চেষ্টা ছাড়াই অর্জন করে ফেলেছি। ক্লোকরুমের দরজা দিয়ে ম্যারি ফরচুন এই মুখটাই দেখেছিলো, এর মধ্যেই তার মাথায় স্কার্ফ বাঁধা হয়ে গেছে। ছেলেটার কাঁধে রাখা হাত দিয়ে নির্জীব ভাবে ইশারায় ক্ষমা চাইলাম, কিভাবে এটা যেটা ঘটে গেছে তা আমার ধারণার মধ্যে নেই এবং আমার জন্য অপেক্ষা করা আর ঠিক হবে না। তারপর আমি আমার মাথা ঘুড়িয়ে নিলাম। আবার যখন ফিরলাম তখন সে চলে গেছে।

রেইমন্ড বোল্টিং আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিল এবং হ্যারল্ড সাইমন্স লনিকে। লনির বাড়ির রাস্তার কোনা পর্যন্ত আমরা এক সঙ্গে হাঁটলাম। ছেলেরা একটা হকি খেলা্র উপর তর্ক করছিল যার আগামাথা আমি বা লনি বুঝতে পারছিলাম না। যখন আমরা সবাই জোড়ায় জোড়ায় আলাদা হয়ে গেলাম তখনও রেইমন্ড হ্যারল্ডের সাথে বলা কথা আমার সাথে চালিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল সে খেয়াল করেনি যে সে এখন আমার সাথে কথা বলছে।। দু’একবার আমি বলার চেষ্টা করেছি-- আমি তো খেলাটা দেখিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ‘হু হা’ বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবং মনে হচ্ছিলো তখন সেটারই দরকার ছিল।

আর যে একটা কথা সে বলেছিল তা হল, “আমি জানতাম না যে তুমি এত দূরে থাকো”, তারপর নাক টানলো। ঠাণ্ডায় আমার নাক থেকেও একটু পানি ঝরছিল। আমি কোটের পকেটে হাত দিয়ে চকলেটের মোড়কের মধ্যে রাখা একটা ক্লিনেক্স না পাওয়া পর্যন্ত হাতড়ালাম। বুঝতে পারছিলাম না সেটা ওকে দেয়া উচিৎ হবে কিনা, কিন্তু ও এতো জোরে নাক টানছিল যে শেষ পর্যন্ত আমি ওকে বললাম, ”আমার কাছে মাত্র এই ক্লিনেক্সটা আছে, এবং এটা সম্ভবত তেমন পরিস্কারও না, সম্ভবত কালির দাগ লেগে আছে। কিন্তু যদি দু’ভাগ করি তাহলে আমরা দু’জনই কাজ চালাতে পারবো”।

“--ধন্যবাদ। অবশ্যই, আমার কাজে লাগবে”।


আমি ভালই করেছি, কারণ বাড়ির দরজায় এসে যখন আমি বললাম, “আচ্ছা, শুভ রাত্রি” তারপরই সে “ওহ হ্যা, শুভ রাত্রি” বলে আমার দিকে ঝুকে ছোট্ট করে এমন ভাবে আমার ঠোঁটের কোণায় চুমু দিল যেন সে ভালভাবেই জানে সে কি করছে। তারপর সে শহরের দিকে ফিরে গেল। কখনোই জানল না যে সে ছিল আমার উদ্ধারকারী, আমাকে সে ম্যারি ফরচুনের কবল থেকে এক স্বাভাবিক পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে!


আমি ঘুরে গিয়ে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম--এই চিন্তা করতে করতে যে, আমি একটা নাচের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, একটা ছেলে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে এবং চুমু খেয়েছে। এ সবই সত্যি। স্বাভাবিক একটা জীবন আমার হতেই পারে! আমি রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে জানালা দিয়ে আমার মাকে দেখলাম। খোলা ওভেনের দরজায় পা রেখে বসে পিরিচ ছাড়া কাপে চা পান করছেন। তিনি আমার বাড়ি ফেরা এবং যা কিছু ঘটেছে তা সব তাকে বলার অপেক্ষায় বসেছিলেন। এবং আমি তা বলবো না--কখনোই বলবো না। কিন্তু আমি যখন দেখলাম অপেক্ষারত রান্নাঘর এবং আমার মা--তার রংচটা ছাপার কিমোনো, তার তন্দ্রালু উৎসুক মায়াময় মুখে অনেক প্রত্যাশা জেগে আছে। আমি বুঝলাম সুখী হওয়ার কি একটা রহস্যময় পীড়নের দায়াবদ্ধতায় আবদ্ধ আমি! এবং আমি কি ভাবে প্রায় ব্যর্থ হতে যাচ্ছিলাম, আর ভবিষ্যতেও প্রতি ধাপেই ব্যর্থতার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে, আর তিনি তা জানতেই পারবেন না।




অনুবাদক পরিচিতি
নাসরীন সুলতানা

কবি। অনুবাদক।
ব্লগার।
পেশায় কৃষিবিদ।
সহযোগী প্রফেসর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববদ্যালয়
কানাডা প্রবাসী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

7 মন্তব্যসমূহ

  1. অনুবাদক ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত। তাঁর অনেক লিখা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মুল গল্পটি যেহেতু পড়া নেই সেজন্য অনুবাদটি মুল গল্পের নির্যাস কতটুকু নিতে পেরেছে সেটা জানিনা। আমি বিশ্বাস করি, সরাসরি অনুবাদ না করে মুল গল্পের ভাবধারায় লেখক নিজেই একটি নূতন গল্প লিখতে পারতেন। এবং সেটা আমাদের জন্য আরো আনন্দদায়ক হতে পারতো। আশা করি লেখক সেদিকে নজর দেয়ার প্রয়াস নেবেন।

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. চমৎকার। বেশ লেগেছে। নিয়মিত অনুবাদ আসুক!

    উত্তরমুছুন
  4. গল্পের মধ্যে গল্প থাকতে হবে তা মনে হয় এখন আর জরুরি নয়। দেশ বিদেশের বিখ্যাত সব লেখকরা এ বিষয়টি স্বযত্নে এড়িয়ে চলেন। পরিবেশ পরিস্থিতির সাবলিল বর্ণনা উপমার মধ্যদিয়ে গল্প এগিয়ে চলে। যারা কাহিনী নির্ভর গল্প পড়তে ভালবাসেন তারা এলিস মুনরোর এ গল্প পড়ে নিরাশ হবেন। তবে আমি মুগ্ধ হয়েছি ছোট ছোট বাকে্য সহজ ভাষায় গল্পের সাবলিল বর্ণনায়। মুল গল্প পড়া নেই তাই আমার মুগ্ধতা অনুবাদক নাসরীন সুলতানার প্রতি। ধন্যবাদ আপনাকে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ মোমিনুল আজম আপনাকে। আপনার মতামত পেয়ে আম অনুপ্রাণিত। শুভেচ্ছা :)

      মুছুন