ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা'র গল্প : জল

অনুবাদঃ কল্যাণী রমা

মেয়েটি মানুষটিকে বিয়ে করবার জন্য জন্মভূমি ছেড়ে আসামাত্র, তাকে মাঞ্চুরিয়ায় চিং-এ্যান পর্বতশ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দপ্তরে বদলি করে দেওয়া হ’ল। মেয়েটিকে সবচেয়ে যা অবাক করে দিল তা হ’ল এখানে এক তেলের বোতল ভর্তি করে জল নিতে দাম দিতে হচ্ছে সাত সেন – ঘোলা, নোংরা সেই জল।এই জল দিয়ে মুখ ধুতে হবে কিংবা চাল ধুতে হবে মনে করলেই মেয়েটির পেটের ভিতর গুলিয়ে বমি পেত। ছয় মাসের ভিতর বিছানার চাদর, সব অন্তর্বাস হলদে হয়ে গেল। আর সবকিছুকে ছাপিয়ে ডিসেম্বরে কুয়াটা একদম নীচ পর্যন্ত জমে শক্ত বরফ হয়ে গেল।
একজন কুলি কোথাও একটা থেকে বরফের একটা চাঙর নিয়ে এল। মেয়েটি মাঝে মাঝে তা স্নানের জন্য ব্যবহার করত। প্রাচুর্যের কথা বলবার মত কোন জায়গা এটা নয়। তবু অবশ হয়ে যাওয়া হাড্ডি একটু গরম করতে পারলে তা কী আশীর্বাদই যে হত! দূরের স্বপ্নের মত মনে পড়ল নিজের গ্রামে ফেলে আসা স্নানাগারের কথাঃ কাঁধ পর্যন্ত গরম জলে নিজেকে নামিয়ে যখন সাদা তোয়ালেটা মেলে ধরত, তার হাত পাগুলোকে কী সুন্দরই না লাগত।

“যদি কিছু মনে না করেন, আপনার একটু জল বেচে থাকলে, আমি অল্প নিতে পারি কি?” এক প্রতিবেশী মহিলা একটা মাটির বোতল নিয়ে এসে বলল। অনেক দিন পর প্রথমবারের মত পাত্রগুলো পালিশ করতে গিয়ে সব জল শেষ করে ফেলেছি।”

কোন জল অবশিষ্ট ছিল না। কিন্তু সে প্রতিবেশীকে একটু বেচে যাওয়া চা দিল।

“আমি বসন্ত আসা পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কাপড়চোপড়গুলো গলতে থাকা বরফের মধ্যে যত খুশি ধুতে পারব। কি ভালোই যে লাগবে যদি কিছু জল ছিটাতে পারতাম,” প্রতিবেশী মেয়েটি বলল। এ সেই মেয়ের স্বপ্ন যে কিনা এসেছে জাপান থেকে, ওখানে পরিষ্কার জল পর্যাপ্ত। সে আর অপেক্ষা করতে পারছে না, কবে বরফ গলে গলে আবার জল হবে। যখন সে গামলা থেকে জল ঢেলে দিতেই মাটি কিভাবে তা শুষে নিচ্ছে দেখবে, কী ভালোই যে লাগবে। ড্যান্ডিলাইনই প্রথম মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে।

মেয়েটি নিজের স্নানের জলে স্নান করবার জন্য প্রতিবেশী মহিলাটিকে আমন্ত্রণ জানাল। তখন হঠাত্‌ উত্তরের সীমানার দিকে ধেয়ে যাওয়া ট্রেনটি উপত্যকার মাঝ দিয়ে এসে হাজির হল। দক্ষিণের যুদ্ধক্ষেত্রের খবর জানবার এটাই সময়।

“কি বিশাল বিস্তার এর,” বাথটাবের গরম জলের ভিতর থেকে প্রতিবেশী মেয়েটি বলে উঠল। সত্যিই। বহুদূর উত্তরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ দপ্তরে যেখানে মেয়েটির স্বামী কাজ করত সেখান থেকে বহুনীচে দক্ষিণের আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃতি তার। এই হচ্ছে আজকের জাপান।


মেয়েটি যখন তার বাড়ির সামনে বের হয়ে এল, লার্চ গাছের ছোট ছোট ডালে জমে ওঠা তুষারের ফুল চেরী ফুলের পাপড়ির মত চারপাশে ঝরে পড়তে থাকল। মেয়েটি চোখ মেলে তাকাতেই, নিখুঁত নীল আকাশ মেয়েটিকে মনে করিয়ে দিল নিজ জন্মভূমির সমুদ্রের কথা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ