মূলঃ নেলিদা পিনওন
অনুবাদঃ ফজল হাসান
আমার স্বামীকে আমি ভালোবাসি । সকাল থেকে রাত অবধি তাকে ভালোবাসি । ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমার দিনের প্রথম কাজ হলো তার জন্য গরম কফি বানানো । রাতে বেচারার ভালো ঘুম হয় না । তাই সে সাত-সকালে দাঁড়ি কামানোর সময় ক্লান্তিতে হাই তোলে । গরম কফি ঠান্ডা হওয়ার আগে আমি বাথরুমের দরোজায় তিন বার টোকা দিই । ভেতর থেকে কোনো জবাব না পেলে আমি যখন চিৎকার করে ডাকাডাকি করি, তখন সে চরম বিরক্ত হয়ে রীতিমতো তর্জন-গর্জন করে । আমি চাই না আমার তৈরি করা কফি নিয়ে সে কোনোধরনের শংকায় থাকুক এবং ঠান্ডা কফি পান করুক, যেমন একই ভাবে উত্তপ্ত অবস্থায় সে আমাকে সপ্তাহে দু’বার উপভোগ করে, বিশেষ করে শনিবারগুলোতে ।
তারপর আমি স্বামীর টাইয়ের গিঁট লাগিয়ে দিই । সে বাঁধা দেয় । কেননা সে মনে করে আমি তার জীবনের ছিঁটেফোঁটা বিষয়ে নজরদারি করি । তাকে শান্ত করার জন্য আমি মিষ্টি করে হাসি । তার কারণ হলো, আমি চাই সে যেন বাইরে গিয়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজের ভেতর ডুবে যেতে পারে এবং বাড়ি ফেরার সময় যেন ভালো খাদ্য-খাবার নিয়ে আসে ।
আমার স্বামী বলে, আমার চাহিদা নাকি অত্যধিক । সারাদিন আমি ঘরে থেকে থালা-বাসন ধুই, দোকানে যাই এবং তার কাছে জীবনযাত্রা নিয়ে অনুযোগ করি । অন্যদিকে সে টুকরো ইটের গাঁথুনি দিয়ে তার আপন ভূবন গড়ে তুলেছে । যদিও মাঝে মধ্যে তার সেই জগৎ থেকে দু’একটা দেওয়াল খসে পড়ে, তবুও বন্ধু-বান্ধবেরা তার পাকাপোক্ত এবং দৃশ্যমান জগতকে সাধুবাদ জানায় ।
এছাড়া সেসব বন্ধু-বান্ধবেরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে, যেই লোক বিশাল স্বপ্ন দেখে এবং নিজস্ব বাগাড়ম্বরপূর্ণ ও উদ্ভট উপায়ে দেশকে সুন্দর আর সমৃদ্ধ করার কাজে সদা ব্যস্ত, আমি সেই লোকটির দেখভাল করি । সেই কারণে আমি তার ছায়া হয়ে আছি । সবাই বলে, আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি । ঘরের ভেতর রোদ ঢোকার ব্যবস্থা করেছি এবং প্রতিদিন ঘরের আসবাবপত্র পরিস্কার করে ঝকঝকে রাখি । এসব আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য টাকা-পয়সা যোগাতে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি । আমার এই গেরস্থালী কাজের কোনো প্রশংসা সে করে না, কিন্তু আমি কাজ করি । বাঘের মতো হিংস্র নখের আঘাতে আমি ক্ষত-বিক্ষত হই । স্বামীর এই হিংস্রতা আমার স্বকীয়তাকে আরোও বেশি মজবুত করে তোলে এবং আমি শিৎকার করে তার সত্যতা জানিয়ে দিই । আমার শরীর খুবলে খাওয়ার সময় আমি ভাবি, শুধু এই দীর্ঘ নখের আঁচড়ের জন্যই আমি একজন নারী । তার সেই আঁচড়গুলোকে আমি মহামূল্যবান অনুভূতি দিয়ে ঢেকে রাখি ।
আমাকে সুন্দর এবং পরিপাটি করে সাজিয়ে তোলার জন্য আমার স্বামী একটা আয়না কিনে দিয়েছিল । হঠাৎ আয়নাটা আমার কাছে পরাজয়ের প্রতীক হিসেবে ধরা দেয় । হে আমার স্বামী, এটা কি সত্যি না, আমি তোমাকে ভালোবাসি ? সে তখন খবরের কাগজ পড়ছিল এবং পড়া পৃষ্ঠাগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রেখেছিল । আমি মেঝের ওপর ছড়ানো খবরের কাগজ একপাশে সরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি । আমার প্রশ্ন আত্মস্থ করার সময় সে মেঝেতে এক দলা থুতু ছুড়ে ফেলে । আমাকে ভাবতে দাও, সে বললো । কেমন করে আমি ভালোবাসার কথা বলবো, যখন দেশের অর্থনৈতিক সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য দাসদের মতো পুরুষদের অক্লান্ত কাজ করতে হয় এবং স্ত্রী ও সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়।
সুতরাং আমি তাকে বলেছি, তুমি যদি ভালোবাসা নিয়ে আলাপ করতে না চাও (যতটুকু আমরা জানি, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ দূরস্থ অথবা ঘরের আসবাবপত্রের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধূলোবালি, যা আমি মাঝে মাঝে ঝাড়ু দেওয়ার পর ফেলে রাখি), এতগুলো বছর ঘর-সংসার করার পর আমাকে কেন আগামি দিনের কথা বলতে হবে ?
একসময় আমার স্বামী হাতের খবরের কাগজ নিচে রাখে এবং আমি যা বলেছি, তা পুনরায় বলার জন্য আমার ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে । এই ভেবে আমি সামান্য চিন্তিত হই যে, কথাটা পুনরাবৃত্তি করলে হয়তো সে মনে কষ্ট পাবে । আসলে আমি তাকে কষ্ট দিতে চাই না । কিন্তু তাই বলে আমি আফ্রিকার জঙ্গলে যে অভিযান একটু আগে শুরু করেছি, তা থেকে পিছু হটতে পারি না । বরং আমি পথের মাঝে জন্তু-জানোয়ারদের হত্যা করতে কোনো দ্বিধাবোধ করি না । সেই সময় ক্লার্ক গ্যাবল আমার উত্তেজিত এবং ঘর্মাক্ত অবস্থা দেখে আমার ভালোবাসা পাবার জন্য সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে । সার্বিক ঘটনার জন্য আমি ভীষণ পিপাসা অনুভব করি এবং আমার মনে হয়েছে যে, আমি বুঝি নদীর সবটুকু পানি নিঃশেষিত করেছি । হয়তো তখন আমার শরীরে সামান্য জ্বর ছিল । আমার ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে কথা বেরিয়ে আসার সময় এই প্রথম আমার শরীরের চামড়া যেন জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল । যখন ঔষধের লোকটি তার স্বভাব সিদ্ধ নিয়মে এবং লোমশ বুকে চেপে আমার জীবন রক্ষা করে, তখন একধরনের আনন্দে এবং লজ্জায় আমি আরক্তিম হই । ক্লার্ক গ্যাবলকে পিঁপড়ায় খুঁটিয়ে খাওয়ার জন্যে আমি তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখি । তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জীবনকে উপলব্ধি করি । বিস্ময়কর বন্য রমণীর মতো আমি জলপ্রপাত উপেক্ষা করে নদীর কাছে যাই । এই নদী আমার সমস্ত শক্তিকে হরণ করে নিয়েছে । আমি মুক্তির জন্য চিৎকার করি, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি ।
খবরের কাগজ নিচে ছুড়ে ফেলার মুহূর্তে আমার স্বামী ঠোঁটের কাছে এসে থমকে থাকা কথাগুলো আমি লক্ষ্য করছিলাম । সে জিজ্ঞেস করে, কেমন করে আমি ভালোবাসার ঘরবাড়ি, নিরাপত্তা, মনের শান্তি, এমনকি আমাদের দাম্পত্য জীবনের সুন্দর সময়কে অস্বীকার করবো ? হে আমার স্বামী, আমার স্পষ্ট কথার জন্য, যা তোমাকে দুঃখিত করে তোলে, তুমি মনে করেছ আমাদের দাম্পত্য জীবনকে বড়শির আংটায় শেকলের মতো বেঁধে রাখবে ? এটা খুবই অনুতাপের বিষয় । ওহ্ আমার স্বামী, আমার কথায় দুঃখ পাওয়ার আগে আমাকে তুমি অন্ধ করে দিও । তোমার ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন হলে আমি আগামি দিনগুলোকে আমার জীবন থেকে মুছে দেব ।
সেই মুহূর্তে আমার স্বামীর চোখের গর্ত উষ্ণ নোনা পানিতে ভরে যায় । একসময় পরম শান্তিতে সে বুকের ভেতর সিগারেটের ধোঁয়া টেনে নিয়ে পড়ার ঘরে চলে যায় । আমি জানি, আমাদের এই আঠারো তলা বাসভবনে তার মতো আরেকজন খুঁজে পাওয়া যাবে না । আমি যখন তার সঙ্গে কোনো উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যাই, তখন সে-ই হলো একমাত্র ব্যক্তি যে জানে কেমন করে সমম্ত বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয় । এছাড়া সেসব অনুষ্ঠানে যারা তাকে অপমান এবং অপদস্ত করে, তাদেরকে সহজে ক্ষমা করে দেয় । সত্যি আমি ভীষণ স্বার্থপর । অপরাহ্নে তার সামনে গিয়ে পুনরায় বিরক্ত করা উচিত না । কেননা পরদিন কাজ শুরু আগে অবশ্যই তার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন ।
আমি আমার লজ্জা ভাবকে লুকাতে গিয়ে স্বামীর জন্য ভালো কফি এবং চকোলেট কেক কিনে আনি। সে সাদরে তা গ্রহণ করে । তারপর সে আমার সঙ্গে সংসারের মাসিক খরচাপাতি নিয়ে বিশদ আলাপ করে । এছাড়া সে তার কোম্পানীর অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কথা বলে (তবে ব্যয় নিয়ে সবার কিন্তু সতর্ক থাকা আবশ্যক) । যাহোক, আমার স্বামী যদি আমার বুদ্ধি-পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতো, তাহলে এক বছরের মধ্যে অংশিদারকে সে হটাতে পারতো । আমি একটা প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম এবং সেখানে এক বছরে আমরা ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছিলাম । আমার প্রতিশ্রুতি এবং আন্তরিক দায়িত্ব পালন ব্যতীত আমার স্বামীর কখনই বিশাল স্বপ্ন দেখতে পারতো না । তাকে স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি আলাদা দায়িত্ব নিয়েছি । তার প্রতিটি স্বপ্ন আমাকে বদলে দিয়েছে । এই কাজের জন্য আমাকে আমার জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে, যা হয়তো কোনোদিনই কোনো কিতাবে লেখা হবে না ।
যাহোক, আমার এই উৎসর্গের জন্য আমার স্বামীকে কৃতজ্ঞ হতে হবে না । তবে তাকে এমন হতে হবে যে, তার কথাবার্তা এবং ব্যবহারে স্পষ্ট বোঝা যায় সে আমার সঙ্গে আছে এবং আমাকে দারুণ ভালোবাসে । আমাদের শোবার ঘরের মাঝখানে আমি ছিলাম সেই দূর্ভেদ্য ফলের গাছ, যা শুধু এই মাটি বহন করতে পারে । সেই গাছে সে আরোহণ করে, পাকা ফল ছিঁড়ে খায় এবং আলতো করে বাড়তি বল্কল পরিস্কার করে ।
সপ্তাহে আমি মাত্র একবার গোছলখানার দরজায় টোকা দিতাম । আগের বানানো কফি যদি ঠান্ডা হয়ে যায়, তাই আগেভাগেই নতুন করে পুনরায় কফি বানিয়েছি । হয়তো আমার স্বামী গোছলখানার ভেতর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গভীর মগ্নতায় সবকিছু বেমালুম ভুলে গেছে, যেভাবে শৈশবে আমি আয়নার সামনে স্থির দাঁড়িয়ে ভাবতাম একটা মেয়ের কথা এবং সেই মেয়েটি ছিলাম আমি । আমার মা মনে করতেন মেয়েদের কাজ হলো সময়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা । আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, নারীদের মাঝে কে এমন সাহসী যে সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হবে ? মায়ের এই কথার সঙ্গে বাবা সম্পূর্ণ একমত ছিলেন এবং তিনি আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন, সময় কখনই নারীদের বয়স বাড়াতে পারে না, বরং তার রহস্য উন্মোচন করার পরিবর্তে তাবত দুনিয়ার কাছে গোপন করে রাখে ।
প্রিয়তমা, তুমি কি অবলোকন করতে পারছো না যে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস, একটা জীবন যা অন্য কেউ দেখতে পারে না, কিন্তু তা শুধু তোমার স্বামী, তোমার সন্তানদের বাবা দেখতে পারে ? আমার বাবার কথাবার্তা ছিল প্রগাঢ় এবং তিনি সব সময় কথাকে বার্ধক্যের গভীর অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতেন । আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম যে, যদি কোনো নারীর জীবনের গল্প পরিপূর্ণ না হয় এবং তাকে তার আত্মকাহিনী লেখার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সে তার শৈশবের দিনগুলোকে চিরদিনের জন্য ধরে রাখতে পারবে ।
অন্যান্য বুড়ি মহিলারা আমার বিয়ের দিন বাবাকে এসব কথা বলেছে । যেহেতু একজন নারী বিয়ের পরে একা থাকে না, তাকে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে হয়, তাই এ কথা নিশ্চিন্ত বলা যায় সে সারা জীবন তারুণ্যের উচ্ছ্বলতায় থাকবে । আমি জানতাম না আমার ভেতরের আনন্দকে কিভাবে বহন করবো এবং সে-টা আমার কাছে ভারী পাথরের লাগতো । আমি জানতাম না কেমন করে তার হৃদয়ের গোপন গভীরে প্রবেশ করবো, যেখানে চমকপ্রদ পবিত্রতা জমা আছে । নতুবা কেমন করে তাকে আমি ধন্যবাদ জানাবো, যা হয়তো আমার বিক্ষিপ্ত মনের জন্য আমি কখনই ব্যকুলভাবে বাসনা করিনি । এবং এভাবেই আমি সেই রজনীতে একজন পরিপূর্ণ রমণী হিসেবে নিজেকে উপহার দিয়েছি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আগ পর্যন্ত চারপাশের ফিসফাস শুনতে পেয়েছিলাম যে, আমি মহামূল্যবান একটা কিছু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম – ঠিক আমার ভাইয়ের মতো । আমার ভাই ব্যাপ্টিজম্ করার পরে যেমন পৌরুষত্ব অর্জণ করেছিল, যা কোনো নারীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের অনেক আগেই, আমিও সেরকম একজন পরিপূর্ণ রমণীর মর্যাদা অর্জণ করেছি ।
আমাকে সব সময় বলা হয়েছে যে, একজন রমণী পূর্ণতা অর্জণ করে একমাত্র বিছানায়, যখন তার প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে একজন পুরুষ আত্মতৃপ্তি লাভ করে । সেই বিশেষ রাতের আগে মা অনেক সময় বোঝাতে চাইতেন, নারী এবং পুরুষের সম্ভোগ হলো ঝিনুকের মতো, যা লবন-পানিতে পুষ্টি লাভ করে এবং জীবনের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে থাকে । আমার মা কবিতা পছন্দ করতেন এবং তার উপস্থিতি ছিল সব সময়ই তরতাজা এবং উষ্ণতায় ভরা ।
বিয়ের রাতে আমার হৃদয় পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল । আমি আমার আগের জীবনের খোলস পাল্টিয়ে সেই নতুন শরীরের জন্য, যা আমার কাছে প্রতীজ্ঞা করা হয়েছিল, উৎকন্ঠায় অপেক্ষা করেছি। আমার জীবন অবসানের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে আমার স্বামীর হাত । তার এই মহানুভবতার জন্য আমি কেমন করে তাকে ধন্যবাদ জানাবো ? হয়তো এ জন্যই আমরা দু’জন দাম্পত্য জীবনে এত বেশি সুখী, আনন্দ সাগরে ভাসি । আমাদের মধ্যে শুধু একজন খাদ্য-খাবার, আশা-আকাঙ্খা, বিশ্বাস নিয়ে বাড়িতে আসে এবং পরিবারের ভবিষ্যত কাহিনী রচনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
যদিও আমি অনেক সময় এক সপ্তাহ পরে নিজেকে গুটিয়ে নিই, কিন্তু একমাত্র সে-ই আমার কাছে নতুন জীবন নিয়ে আসে । তাতে কোনো পার্থক্য ধরা পড়ে না । আসলে সেভাবেই ভালো । কেননা আমার কাছে তার সবটুকুই দৃশ্যমান । আমাকে কোনো কিছু বোঝাতে হয় না এবং ভুল করতে হয় না, এমনকি কথা বলা নিয়ে ভাবতে হয় না, যার জন্য আমার দম বন্ধ হয়ে আসে । লোকটির কথা আমার বাকী জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন । আমার এমন কোনো নতুন শব্দ শেখার দরকার নেই, যা আমার ভাগ্যের সঙ্গে খাপ খাবে না এবং হয়তো আমার বিবাহিত জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে ।
সুতরাং আমি বুঝতে পেরেছি, আমার সচেনতাও, যা আমাকে সুখী করে, আমার স্বামীর মর্জিমাফিক নিয়ন্ত্রিত হয় । আমার বাড়তি অনুভূতিগুলো সে কেটেছেঁটে সুন্দর করে রাখে । মনে হয় আমি যেন যখন-তখন সমুদ্রের অতলে গিয়ে শ্যাঁওলা খোঁজার মতো ভাঙা জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হই । সেই অনুভূতিগুলো কি আমার স্বপ্নকে ধারন করে ? আমি এমন স্বপ্ন চাই, যা হয়তো একসময় উত্তপ্ত চুল্লির প্রচন্ড তাপে চকোলেট কেক তৈরি করবে । সেই কেক সে চোখের পাতায় আনন্দের ঝিলিক তুলে মহানন্দে খাবে এবং আমাদের দু’জনের মুখমন্ডলে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠবে ।
ওহ্, একটা নতুন মুখ জয় করার জন্য আমি যখন নিজেকে একজন যোদ্ধা হিসেবে অনুভব করি এবং হাতে অস্ত্র তুলে নিতে প্রস্তুত হই, তখন আমি প্রশংসায় ঝাপ দিই এবং নতুন জায়গা, নতুন ভাষা দখল করি, এমনকি জীবন নিংড়ে নেওয়ার মতো একটা শরীরও জয় করি । আশেপাশে লোকজনের চলাচলের সময় আমার ভেতর জগতের সব কিছু দুলে ওঠে এবং ক্ষুধা জাগিয়ে তোলে । পরবর্তীতে এই ক্ষুধার জন্য আমার কোনো লজ্জাবোধ হবে না । সৌভাগ্য যে এটা ছিল একধরনের ভাসমান আনন্দ এবং আমি আমার জীবনের চেনা পথে সবার সহযোগিতা পেয়েছি । আমার বাড়িঘর সম্পর্কে বন্ধুসুলভ লোকজন এবং অন্য সবকিছুই আমাকে গৌরবান্বিত করে তুলেছে ।
আমার এসব ছেলেমানুষী কার্যকলাপ অবশ্যই নোংরা মানসিকতার পরিচয় বহন করে । এগুলো আমার স্বামীর আত্মসম্মানে আঘাত করে । অনুতপ্ত হয়ে আমি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি । এছাড়া এসব হেয় কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখারও অঙ্গীকার করি । দূর থেকে দেখে আমার মনে হয় সে আমাকে ক্ষমা করেছে । আমার এই স্বীকারোক্তির জন্য প্রতিদিন সে আমাকে আরোও বেশি ভালোবাসে এবং এভাবেই প্রতি বছর আমরা উত্তরোত্তর সংসারের শ্রীবৃদ্ধি করে চলেছি । আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, আমার দুশ্চিন্তা আমাকে বেকাদায় ফেলে । আমি জানি না কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখতে হয় । নিজেকে ছাড়া আমি এসব কথা কাউকে বলি না । আমি প্রায় সব সময়ই স্বপ্নের ভেতর আমি আমাকে বলি । বিবাহিত জীবনের অঙ্গীকারও আমাকে দমন করতে পারে না । তবে সেই অঙ্গীকারের জন্য আমার চোখমুখ আরক্তিম হয়ে ওঠে, কিন্তু আমার শরীরে কোথাও কোনো স্থায়ী চিহ্ন রাখে না, যা আমি পরে দেখিয়ে বলতে পারি কোন কাজের জন্য কোন চিহ্ন হয়েছে ।
আমি কখনই স্বামীকে এসব বিপদজনক এবং ছোটখাটো, কিন্তু ভয়ংকর, কর্মকান্ডের কথা বলি না । তবে আমার স্বীকারোক্তি কিংবা নিজের হাত খরচের জন্য চাকুরী করার কথা বলার পরে সে অনায়াসে আমার ভেতরর সবকিছু বুঝে যায় । এই ধরনের বোকামি করলে স্বভাবতঃই আমি আমার নিজের সময়টুকু ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারি । সে অনেকবার আমাকে বলেছে, আমি সংসারে একজন রাজকুমারী এবং তার এই কথার পুরোটাই সত্যি । সংতরাং আমি যে চিরদিন আনন্দ-সুখের সরোবরে অবগাহন করছি, তা থেকে কেউ আমাকে ডাঙায় তুলে বঞ্চিত করতে পারবে না ।
সত্যি কথা বলতে কি, আমি কোনো অজুহাত দাঁড় করতে পারবো না । আয়নার সম্মুখে দাঁড়ালে আমি আমাকে যেভাবে দেখি, প্রতিদিন সেই প্রতিবিম্বের সঙ্গে আমার স্বামী বিরোধিতা করে । আয়নায় আমি নিজেকে দেখি এবং আমার স্বামী বলে, ওটা নাকি আমার প্রতিবিম্ব না । প্রতিবিম্বে যে আমাকে এবং আমার চেহারায় ভাঁজ দেখা যায়, আসলে তা আমার নয় । বাবার মতো সে আমার চিরন্তন যৌবনের দায়িত্বে আছে । তবে আমার স্বামী খুবই চালাক । সে কখনো আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি । কেননা সে মনে করে, আনুষ্ঠানিক ভাবে জন্মদিন পালন করলে হয়তো আমি আমার বয়সের কথা ভুলে যাবো না । এছাড়া সে ভাবে, আমি এসব ঠুনকো অজুহাত বুঝি না । সত্যি বলতে কি, দিন শেষে আমার বয়সের হিসেব আমি জানি না ।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমার দৈহিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য স্বামী আমার শরীর এড়িয়ে থাকে । আমি পুরোনো কাপড়চোপড় পড়তে পারি না । সেগুলো আলমারীতে ঝুলিয়ে রেখেছি । তবে কোনো অবসর মুহূর্তে মাঝে মাঝে সেই পোশাক বের করে আপনমনে নাড়াচাড়া করি এবং একধরনের সুখ-আনন্দ অনুভব করি । প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় সে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে । তখন আমি হয়তো ঘরের উল্টোদিকে তার আগমনের অপেক্ষায় থাকি । টেলিভিশনে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সে খবরের কাগজে ডুবে যায় । অথচ ঘরের ভিতর সেই সময় আমরা মাত্র দু’টো প্রাণী ।
আমার প্রতি স্বামীর গভীর ভালোবাসা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি । যদিও অনেক সময় আমি নিজের ভিতর তেমন কোনো গরজ অনুভব করি না, তবে তার ভালোবাসা পাবার বিনিময়ে তাকে খুশি করতে আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করি । কিন্তু আমি এমন মুখভঙ্গি করি না, যা দেখলে সে হয়তো মনঃক্ষুণ্ণ হবে এবং মুখ গোমড়া করবে । তবে স্বাভাবিক ভাবে এসব অভিনয় করা তার মধ্যে নেই, হয়তো অন্য কারোর মধ্যে থাকতে পারে । আমি তার গোমড়া মুখ দেখতে চাই না । প্রতিদিন পুরোনো রুটির মতো গন্ধের কথা মনে হলেই আমার মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে যায় । অথচ সেই রুটির গন্ধ আমাকে সারাদিন পরিপুষ্ট রাখে । আমার স্বামী এবং আমি কোনো অভিযোগ ছাড়াই এতগুলো বছর ধরে তা নিয়মিত খাচ্ছি । বিয়ে নামক অনুষ্ঠানে আমাদের দু’জনকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সেই রুটির পরতে পরতে ভালোবাসার নিবীড় স্পর্শ লেগে আছে ।
ওহ্ হ্যাঁ, আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি ।
লেখক পরিচিতিঃ
অনুবাদঃ ফজল হাসান

তারপর আমি স্বামীর টাইয়ের গিঁট লাগিয়ে দিই । সে বাঁধা দেয় । কেননা সে মনে করে আমি তার জীবনের ছিঁটেফোঁটা বিষয়ে নজরদারি করি । তাকে শান্ত করার জন্য আমি মিষ্টি করে হাসি । তার কারণ হলো, আমি চাই সে যেন বাইরে গিয়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজের ভেতর ডুবে যেতে পারে এবং বাড়ি ফেরার সময় যেন ভালো খাদ্য-খাবার নিয়ে আসে ।
আমার স্বামী বলে, আমার চাহিদা নাকি অত্যধিক । সারাদিন আমি ঘরে থেকে থালা-বাসন ধুই, দোকানে যাই এবং তার কাছে জীবনযাত্রা নিয়ে অনুযোগ করি । অন্যদিকে সে টুকরো ইটের গাঁথুনি দিয়ে তার আপন ভূবন গড়ে তুলেছে । যদিও মাঝে মধ্যে তার সেই জগৎ থেকে দু’একটা দেওয়াল খসে পড়ে, তবুও বন্ধু-বান্ধবেরা তার পাকাপোক্ত এবং দৃশ্যমান জগতকে সাধুবাদ জানায় ।
এছাড়া সেসব বন্ধু-বান্ধবেরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে, যেই লোক বিশাল স্বপ্ন দেখে এবং নিজস্ব বাগাড়ম্বরপূর্ণ ও উদ্ভট উপায়ে দেশকে সুন্দর আর সমৃদ্ধ করার কাজে সদা ব্যস্ত, আমি সেই লোকটির দেখভাল করি । সেই কারণে আমি তার ছায়া হয়ে আছি । সবাই বলে, আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি । ঘরের ভেতর রোদ ঢোকার ব্যবস্থা করেছি এবং প্রতিদিন ঘরের আসবাবপত্র পরিস্কার করে ঝকঝকে রাখি । এসব আসবাবপত্র ক্রয় করার জন্য টাকা-পয়সা যোগাতে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি । আমার এই গেরস্থালী কাজের কোনো প্রশংসা সে করে না, কিন্তু আমি কাজ করি । বাঘের মতো হিংস্র নখের আঘাতে আমি ক্ষত-বিক্ষত হই । স্বামীর এই হিংস্রতা আমার স্বকীয়তাকে আরোও বেশি মজবুত করে তোলে এবং আমি শিৎকার করে তার সত্যতা জানিয়ে দিই । আমার শরীর খুবলে খাওয়ার সময় আমি ভাবি, শুধু এই দীর্ঘ নখের আঁচড়ের জন্যই আমি একজন নারী । তার সেই আঁচড়গুলোকে আমি মহামূল্যবান অনুভূতি দিয়ে ঢেকে রাখি ।
আমাকে সুন্দর এবং পরিপাটি করে সাজিয়ে তোলার জন্য আমার স্বামী একটা আয়না কিনে দিয়েছিল । হঠাৎ আয়নাটা আমার কাছে পরাজয়ের প্রতীক হিসেবে ধরা দেয় । হে আমার স্বামী, এটা কি সত্যি না, আমি তোমাকে ভালোবাসি ? সে তখন খবরের কাগজ পড়ছিল এবং পড়া পৃষ্ঠাগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রেখেছিল । আমি মেঝের ওপর ছড়ানো খবরের কাগজ একপাশে সরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি । আমার প্রশ্ন আত্মস্থ করার সময় সে মেঝেতে এক দলা থুতু ছুড়ে ফেলে । আমাকে ভাবতে দাও, সে বললো । কেমন করে আমি ভালোবাসার কথা বলবো, যখন দেশের অর্থনৈতিক সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য দাসদের মতো পুরুষদের অক্লান্ত কাজ করতে হয় এবং স্ত্রী ও সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়।
সুতরাং আমি তাকে বলেছি, তুমি যদি ভালোবাসা নিয়ে আলাপ করতে না চাও (যতটুকু আমরা জানি, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ দূরস্থ অথবা ঘরের আসবাবপত্রের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধূলোবালি, যা আমি মাঝে মাঝে ঝাড়ু দেওয়ার পর ফেলে রাখি), এতগুলো বছর ঘর-সংসার করার পর আমাকে কেন আগামি দিনের কথা বলতে হবে ?
একসময় আমার স্বামী হাতের খবরের কাগজ নিচে রাখে এবং আমি যা বলেছি, তা পুনরায় বলার জন্য আমার ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে । এই ভেবে আমি সামান্য চিন্তিত হই যে, কথাটা পুনরাবৃত্তি করলে হয়তো সে মনে কষ্ট পাবে । আসলে আমি তাকে কষ্ট দিতে চাই না । কিন্তু তাই বলে আমি আফ্রিকার জঙ্গলে যে অভিযান একটু আগে শুরু করেছি, তা থেকে পিছু হটতে পারি না । বরং আমি পথের মাঝে জন্তু-জানোয়ারদের হত্যা করতে কোনো দ্বিধাবোধ করি না । সেই সময় ক্লার্ক গ্যাবল আমার উত্তেজিত এবং ঘর্মাক্ত অবস্থা দেখে আমার ভালোবাসা পাবার জন্য সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে । সার্বিক ঘটনার জন্য আমি ভীষণ পিপাসা অনুভব করি এবং আমার মনে হয়েছে যে, আমি বুঝি নদীর সবটুকু পানি নিঃশেষিত করেছি । হয়তো তখন আমার শরীরে সামান্য জ্বর ছিল । আমার ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে কথা বেরিয়ে আসার সময় এই প্রথম আমার শরীরের চামড়া যেন জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিল । যখন ঔষধের লোকটি তার স্বভাব সিদ্ধ নিয়মে এবং লোমশ বুকে চেপে আমার জীবন রক্ষা করে, তখন একধরনের আনন্দে এবং লজ্জায় আমি আরক্তিম হই । ক্লার্ক গ্যাবলকে পিঁপড়ায় খুঁটিয়ে খাওয়ার জন্যে আমি তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখি । তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জীবনকে উপলব্ধি করি । বিস্ময়কর বন্য রমণীর মতো আমি জলপ্রপাত উপেক্ষা করে নদীর কাছে যাই । এই নদী আমার সমস্ত শক্তিকে হরণ করে নিয়েছে । আমি মুক্তির জন্য চিৎকার করি, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি ।
খবরের কাগজ নিচে ছুড়ে ফেলার মুহূর্তে আমার স্বামী ঠোঁটের কাছে এসে থমকে থাকা কথাগুলো আমি লক্ষ্য করছিলাম । সে জিজ্ঞেস করে, কেমন করে আমি ভালোবাসার ঘরবাড়ি, নিরাপত্তা, মনের শান্তি, এমনকি আমাদের দাম্পত্য জীবনের সুন্দর সময়কে অস্বীকার করবো ? হে আমার স্বামী, আমার স্পষ্ট কথার জন্য, যা তোমাকে দুঃখিত করে তোলে, তুমি মনে করেছ আমাদের দাম্পত্য জীবনকে বড়শির আংটায় শেকলের মতো বেঁধে রাখবে ? এটা খুবই অনুতাপের বিষয় । ওহ্ আমার স্বামী, আমার কথায় দুঃখ পাওয়ার আগে আমাকে তুমি অন্ধ করে দিও । তোমার ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন হলে আমি আগামি দিনগুলোকে আমার জীবন থেকে মুছে দেব ।
সেই মুহূর্তে আমার স্বামীর চোখের গর্ত উষ্ণ নোনা পানিতে ভরে যায় । একসময় পরম শান্তিতে সে বুকের ভেতর সিগারেটের ধোঁয়া টেনে নিয়ে পড়ার ঘরে চলে যায় । আমি জানি, আমাদের এই আঠারো তলা বাসভবনে তার মতো আরেকজন খুঁজে পাওয়া যাবে না । আমি যখন তার সঙ্গে কোনো উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যাই, তখন সে-ই হলো একমাত্র ব্যক্তি যে জানে কেমন করে সমম্ত বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয় । এছাড়া সেসব অনুষ্ঠানে যারা তাকে অপমান এবং অপদস্ত করে, তাদেরকে সহজে ক্ষমা করে দেয় । সত্যি আমি ভীষণ স্বার্থপর । অপরাহ্নে তার সামনে গিয়ে পুনরায় বিরক্ত করা উচিত না । কেননা পরদিন কাজ শুরু আগে অবশ্যই তার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন ।
আমি আমার লজ্জা ভাবকে লুকাতে গিয়ে স্বামীর জন্য ভালো কফি এবং চকোলেট কেক কিনে আনি। সে সাদরে তা গ্রহণ করে । তারপর সে আমার সঙ্গে সংসারের মাসিক খরচাপাতি নিয়ে বিশদ আলাপ করে । এছাড়া সে তার কোম্পানীর অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কথা বলে (তবে ব্যয় নিয়ে সবার কিন্তু সতর্ক থাকা আবশ্যক) । যাহোক, আমার স্বামী যদি আমার বুদ্ধি-পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতো, তাহলে এক বছরের মধ্যে অংশিদারকে সে হটাতে পারতো । আমি একটা প্রজেক্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম এবং সেখানে এক বছরে আমরা ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছিলাম । আমার প্রতিশ্রুতি এবং আন্তরিক দায়িত্ব পালন ব্যতীত আমার স্বামীর কখনই বিশাল স্বপ্ন দেখতে পারতো না । তাকে স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি আলাদা দায়িত্ব নিয়েছি । তার প্রতিটি স্বপ্ন আমাকে বদলে দিয়েছে । এই কাজের জন্য আমাকে আমার জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে, যা হয়তো কোনোদিনই কোনো কিতাবে লেখা হবে না ।
যাহোক, আমার এই উৎসর্গের জন্য আমার স্বামীকে কৃতজ্ঞ হতে হবে না । তবে তাকে এমন হতে হবে যে, তার কথাবার্তা এবং ব্যবহারে স্পষ্ট বোঝা যায় সে আমার সঙ্গে আছে এবং আমাকে দারুণ ভালোবাসে । আমাদের শোবার ঘরের মাঝখানে আমি ছিলাম সেই দূর্ভেদ্য ফলের গাছ, যা শুধু এই মাটি বহন করতে পারে । সেই গাছে সে আরোহণ করে, পাকা ফল ছিঁড়ে খায় এবং আলতো করে বাড়তি বল্কল পরিস্কার করে ।
সপ্তাহে আমি মাত্র একবার গোছলখানার দরজায় টোকা দিতাম । আগের বানানো কফি যদি ঠান্ডা হয়ে যায়, তাই আগেভাগেই নতুন করে পুনরায় কফি বানিয়েছি । হয়তো আমার স্বামী গোছলখানার ভেতর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গভীর মগ্নতায় সবকিছু বেমালুম ভুলে গেছে, যেভাবে শৈশবে আমি আয়নার সামনে স্থির দাঁড়িয়ে ভাবতাম একটা মেয়ের কথা এবং সেই মেয়েটি ছিলাম আমি । আমার মা মনে করতেন মেয়েদের কাজ হলো সময়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা । আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, নারীদের মাঝে কে এমন সাহসী যে সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হবে ? মায়ের এই কথার সঙ্গে বাবা সম্পূর্ণ একমত ছিলেন এবং তিনি আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন, সময় কখনই নারীদের বয়স বাড়াতে পারে না, বরং তার রহস্য উন্মোচন করার পরিবর্তে তাবত দুনিয়ার কাছে গোপন করে রাখে ।
প্রিয়তমা, তুমি কি অবলোকন করতে পারছো না যে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস, একটা জীবন যা অন্য কেউ দেখতে পারে না, কিন্তু তা শুধু তোমার স্বামী, তোমার সন্তানদের বাবা দেখতে পারে ? আমার বাবার কথাবার্তা ছিল প্রগাঢ় এবং তিনি সব সময় কথাকে বার্ধক্যের গভীর অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতেন । আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম যে, যদি কোনো নারীর জীবনের গল্প পরিপূর্ণ না হয় এবং তাকে তার আত্মকাহিনী লেখার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সে তার শৈশবের দিনগুলোকে চিরদিনের জন্য ধরে রাখতে পারবে ।
অন্যান্য বুড়ি মহিলারা আমার বিয়ের দিন বাবাকে এসব কথা বলেছে । যেহেতু একজন নারী বিয়ের পরে একা থাকে না, তাকে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে হয়, তাই এ কথা নিশ্চিন্ত বলা যায় সে সারা জীবন তারুণ্যের উচ্ছ্বলতায় থাকবে । আমি জানতাম না আমার ভেতরের আনন্দকে কিভাবে বহন করবো এবং সে-টা আমার কাছে ভারী পাথরের লাগতো । আমি জানতাম না কেমন করে তার হৃদয়ের গোপন গভীরে প্রবেশ করবো, যেখানে চমকপ্রদ পবিত্রতা জমা আছে । নতুবা কেমন করে তাকে আমি ধন্যবাদ জানাবো, যা হয়তো আমার বিক্ষিপ্ত মনের জন্য আমি কখনই ব্যকুলভাবে বাসনা করিনি । এবং এভাবেই আমি সেই রজনীতে একজন পরিপূর্ণ রমণী হিসেবে নিজেকে উপহার দিয়েছি। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আগ পর্যন্ত চারপাশের ফিসফাস শুনতে পেয়েছিলাম যে, আমি মহামূল্যবান একটা কিছু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম – ঠিক আমার ভাইয়ের মতো । আমার ভাই ব্যাপ্টিজম্ করার পরে যেমন পৌরুষত্ব অর্জণ করেছিল, যা কোনো নারীর সঙ্গে রাত্রি যাপনের অনেক আগেই, আমিও সেরকম একজন পরিপূর্ণ রমণীর মর্যাদা অর্জণ করেছি ।
আমাকে সব সময় বলা হয়েছে যে, একজন রমণী পূর্ণতা অর্জণ করে একমাত্র বিছানায়, যখন তার প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে একজন পুরুষ আত্মতৃপ্তি লাভ করে । সেই বিশেষ রাতের আগে মা অনেক সময় বোঝাতে চাইতেন, নারী এবং পুরুষের সম্ভোগ হলো ঝিনুকের মতো, যা লবন-পানিতে পুষ্টি লাভ করে এবং জীবনের বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে থাকে । আমার মা কবিতা পছন্দ করতেন এবং তার উপস্থিতি ছিল সব সময়ই তরতাজা এবং উষ্ণতায় ভরা ।
বিয়ের রাতে আমার হৃদয় পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল । আমি আমার আগের জীবনের খোলস পাল্টিয়ে সেই নতুন শরীরের জন্য, যা আমার কাছে প্রতীজ্ঞা করা হয়েছিল, উৎকন্ঠায় অপেক্ষা করেছি। আমার জীবন অবসানের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে আমার স্বামীর হাত । তার এই মহানুভবতার জন্য আমি কেমন করে তাকে ধন্যবাদ জানাবো ? হয়তো এ জন্যই আমরা দু’জন দাম্পত্য জীবনে এত বেশি সুখী, আনন্দ সাগরে ভাসি । আমাদের মধ্যে শুধু একজন খাদ্য-খাবার, আশা-আকাঙ্খা, বিশ্বাস নিয়ে বাড়িতে আসে এবং পরিবারের ভবিষ্যত কাহিনী রচনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে ।
যদিও আমি অনেক সময় এক সপ্তাহ পরে নিজেকে গুটিয়ে নিই, কিন্তু একমাত্র সে-ই আমার কাছে নতুন জীবন নিয়ে আসে । তাতে কোনো পার্থক্য ধরা পড়ে না । আসলে সেভাবেই ভালো । কেননা আমার কাছে তার সবটুকুই দৃশ্যমান । আমাকে কোনো কিছু বোঝাতে হয় না এবং ভুল করতে হয় না, এমনকি কথা বলা নিয়ে ভাবতে হয় না, যার জন্য আমার দম বন্ধ হয়ে আসে । লোকটির কথা আমার বাকী জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন । আমার এমন কোনো নতুন শব্দ শেখার দরকার নেই, যা আমার ভাগ্যের সঙ্গে খাপ খাবে না এবং হয়তো আমার বিবাহিত জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে ।
সুতরাং আমি বুঝতে পেরেছি, আমার সচেনতাও, যা আমাকে সুখী করে, আমার স্বামীর মর্জিমাফিক নিয়ন্ত্রিত হয় । আমার বাড়তি অনুভূতিগুলো সে কেটেছেঁটে সুন্দর করে রাখে । মনে হয় আমি যেন যখন-তখন সমুদ্রের অতলে গিয়ে শ্যাঁওলা খোঁজার মতো ভাঙা জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হই । সেই অনুভূতিগুলো কি আমার স্বপ্নকে ধারন করে ? আমি এমন স্বপ্ন চাই, যা হয়তো একসময় উত্তপ্ত চুল্লির প্রচন্ড তাপে চকোলেট কেক তৈরি করবে । সেই কেক সে চোখের পাতায় আনন্দের ঝিলিক তুলে মহানন্দে খাবে এবং আমাদের দু’জনের মুখমন্ডলে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠবে ।
ওহ্, একটা নতুন মুখ জয় করার জন্য আমি যখন নিজেকে একজন যোদ্ধা হিসেবে অনুভব করি এবং হাতে অস্ত্র তুলে নিতে প্রস্তুত হই, তখন আমি প্রশংসায় ঝাপ দিই এবং নতুন জায়গা, নতুন ভাষা দখল করি, এমনকি জীবন নিংড়ে নেওয়ার মতো একটা শরীরও জয় করি । আশেপাশে লোকজনের চলাচলের সময় আমার ভেতর জগতের সব কিছু দুলে ওঠে এবং ক্ষুধা জাগিয়ে তোলে । পরবর্তীতে এই ক্ষুধার জন্য আমার কোনো লজ্জাবোধ হবে না । সৌভাগ্য যে এটা ছিল একধরনের ভাসমান আনন্দ এবং আমি আমার জীবনের চেনা পথে সবার সহযোগিতা পেয়েছি । আমার বাড়িঘর সম্পর্কে বন্ধুসুলভ লোকজন এবং অন্য সবকিছুই আমাকে গৌরবান্বিত করে তুলেছে ।
আমার এসব ছেলেমানুষী কার্যকলাপ অবশ্যই নোংরা মানসিকতার পরিচয় বহন করে । এগুলো আমার স্বামীর আত্মসম্মানে আঘাত করে । অনুতপ্ত হয়ে আমি তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি । এছাড়া এসব হেয় কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখারও অঙ্গীকার করি । দূর থেকে দেখে আমার মনে হয় সে আমাকে ক্ষমা করেছে । আমার এই স্বীকারোক্তির জন্য প্রতিদিন সে আমাকে আরোও বেশি ভালোবাসে এবং এভাবেই প্রতি বছর আমরা উত্তরোত্তর সংসারের শ্রীবৃদ্ধি করে চলেছি । আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, আমার দুশ্চিন্তা আমাকে বেকাদায় ফেলে । আমি জানি না কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখতে হয় । নিজেকে ছাড়া আমি এসব কথা কাউকে বলি না । আমি প্রায় সব সময়ই স্বপ্নের ভেতর আমি আমাকে বলি । বিবাহিত জীবনের অঙ্গীকারও আমাকে দমন করতে পারে না । তবে সেই অঙ্গীকারের জন্য আমার চোখমুখ আরক্তিম হয়ে ওঠে, কিন্তু আমার শরীরে কোথাও কোনো স্থায়ী চিহ্ন রাখে না, যা আমি পরে দেখিয়ে বলতে পারি কোন কাজের জন্য কোন চিহ্ন হয়েছে ।
আমি কখনই স্বামীকে এসব বিপদজনক এবং ছোটখাটো, কিন্তু ভয়ংকর, কর্মকান্ডের কথা বলি না । তবে আমার স্বীকারোক্তি কিংবা নিজের হাত খরচের জন্য চাকুরী করার কথা বলার পরে সে অনায়াসে আমার ভেতরর সবকিছু বুঝে যায় । এই ধরনের বোকামি করলে স্বভাবতঃই আমি আমার নিজের সময়টুকু ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারি । সে অনেকবার আমাকে বলেছে, আমি সংসারে একজন রাজকুমারী এবং তার এই কথার পুরোটাই সত্যি । সংতরাং আমি যে চিরদিন আনন্দ-সুখের সরোবরে অবগাহন করছি, তা থেকে কেউ আমাকে ডাঙায় তুলে বঞ্চিত করতে পারবে না ।
সত্যি কথা বলতে কি, আমি কোনো অজুহাত দাঁড় করতে পারবো না । আয়নার সম্মুখে দাঁড়ালে আমি আমাকে যেভাবে দেখি, প্রতিদিন সেই প্রতিবিম্বের সঙ্গে আমার স্বামী বিরোধিতা করে । আয়নায় আমি নিজেকে দেখি এবং আমার স্বামী বলে, ওটা নাকি আমার প্রতিবিম্ব না । প্রতিবিম্বে যে আমাকে এবং আমার চেহারায় ভাঁজ দেখা যায়, আসলে তা আমার নয় । বাবার মতো সে আমার চিরন্তন যৌবনের দায়িত্বে আছে । তবে আমার স্বামী খুবই চালাক । সে কখনো আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি । কেননা সে মনে করে, আনুষ্ঠানিক ভাবে জন্মদিন পালন করলে হয়তো আমি আমার বয়সের কথা ভুলে যাবো না । এছাড়া সে ভাবে, আমি এসব ঠুনকো অজুহাত বুঝি না । সত্যি বলতে কি, দিন শেষে আমার বয়সের হিসেব আমি জানি না ।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমার দৈহিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য স্বামী আমার শরীর এড়িয়ে থাকে । আমি পুরোনো কাপড়চোপড় পড়তে পারি না । সেগুলো আলমারীতে ঝুলিয়ে রেখেছি । তবে কোনো অবসর মুহূর্তে মাঝে মাঝে সেই পোশাক বের করে আপনমনে নাড়াচাড়া করি এবং একধরনের সুখ-আনন্দ অনুভব করি । প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় সে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে । তখন আমি হয়তো ঘরের উল্টোদিকে তার আগমনের অপেক্ষায় থাকি । টেলিভিশনে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সে খবরের কাগজে ডুবে যায় । অথচ ঘরের ভিতর সেই সময় আমরা মাত্র দু’টো প্রাণী ।
আমার প্রতি স্বামীর গভীর ভালোবাসা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি । যদিও অনেক সময় আমি নিজের ভিতর তেমন কোনো গরজ অনুভব করি না, তবে তার ভালোবাসা পাবার বিনিময়ে তাকে খুশি করতে আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করি । কিন্তু আমি এমন মুখভঙ্গি করি না, যা দেখলে সে হয়তো মনঃক্ষুণ্ণ হবে এবং মুখ গোমড়া করবে । তবে স্বাভাবিক ভাবে এসব অভিনয় করা তার মধ্যে নেই, হয়তো অন্য কারোর মধ্যে থাকতে পারে । আমি তার গোমড়া মুখ দেখতে চাই না । প্রতিদিন পুরোনো রুটির মতো গন্ধের কথা মনে হলেই আমার মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে যায় । অথচ সেই রুটির গন্ধ আমাকে সারাদিন পরিপুষ্ট রাখে । আমার স্বামী এবং আমি কোনো অভিযোগ ছাড়াই এতগুলো বছর ধরে তা নিয়মিত খাচ্ছি । বিয়ে নামক অনুষ্ঠানে আমাদের দু’জনকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সেই রুটির পরতে পরতে ভালোবাসার নিবীড় স্পর্শ লেগে আছে ।
ওহ্ হ্যাঁ, আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি ।
লেখক পরিচিতিঃ
দক্ষিণ আমেরিকার সমকালীন কথাসাহিত্যের সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘দ্য রিপাবলিক অফ ড্রিমস্’-এর লেখিকা নেলিদা পিনওন (পুরো নাম নেলিদা কুইনাস্ পিনওন) । স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক ছাড়াও তিনি একজন চমৎকার গল্প লেখক । তার লেখার মূল বিষয়বস্তু ব্রাজিলীয় সমাজের সাধারণ মানুষের আটপৌড়ে জীবন, তাদের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না এবং চাওয়া-পাওয়া । তবে ঐতিহাসিক আন্দোলনের মতো বড় বিষয়ও উঠে এসেছে তার লেখায় । এছাড়া তিনি তার উপন্যাসে ধর্ম, আধ্যাত্বিকতা এবং দর্শণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করেন । মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি নিজেকে একজন লেখক হিসাবে ঘোষনা করেন ।
নেলিদা ১৯৩৭ সালের ৩ মে রিও ডি জেনিরোর ভিলা ইসাবেল শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ছিলেন স্প্যানিশ এবং মা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান । তিনি রিও ডি জেনিরোর পন্টিফিসিয়া ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় ডিগ্রী অর্জণ করেন । পরবর্তীতে তিনি ১৯৭০ সালে ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ রিও ডি জেনিরোতে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কোর্স চালু করেন । কর্মজীবনে তিনি মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন । তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গাইডবুক অফ গাব্রিয়েল আরকানহো’ ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় । তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ফাউন্ডার্স্’ (১৯৬৯), ‘দ্য হাউজ অফ প্যাশন্’ (১৯৭২), ‘দ্য ফোর্স্ অফ ডেসটিনি’ (১৯৭৭) এবং ‘দ্য সুইট্ সঙ অফ ক্যাটানা’ (১৯৮৭) । ‘দ্য ফেঞ্চিং রুম’ (১৯৭৩) এবং ‘দ্য হীট অফ থিঙ্কস্’ (১৯৮০) তার ছোটগল্প সংকলন । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অসংখ্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন । এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ালম্যাপ প্রাইজ’ (১৯৭০), ‘ব্রাজিলিয়ান রাইটার্স্’ ইউনিয়ন প্রাইজ’ (১৯৮৭) এবং ম্যানেন্দেজ প্যালায়ো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ’ (২০০৩) । বিশ্বের প্রায় কুড়িটি দেশে তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে । তিনি ‘ব্রাজিলিয়ান একাডেমী অব লেটার্স’-এর সভাপতি ছিলেন ।
গল্পসূত্রঃ ‘ভালোবাসি স্বামীকে’ নেলিদা পিনওনের ইংরেজিতে অনূদিত ‘আই লাভ মাই হাজব্যান্ড’ গল্পের অনুবাদ । স্প্যানিশ ভাষা থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন এলবিয়েতা সোকা এবং শানা লরেঞ্জ । গল্পটি এলবিয়েতা সোকা সম্পাদিত ‘ফর্টিন ফিমেল ভয়েসেজ ফ্রম ব্রাজিলঃ ইন্টারভিউজ্ এন্ড ওয়ার্কস্’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । তবে পাঠক নন্দিত এই গল্পটির একাধিক ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে এবং বিভিন্ন ছোটগল্প সংকলনে (‘দ্য হীট অফ থিঙ্কস’ এবং ‘দ্য হান্ড্রেড বেষ্ট ব্রাজিলিয়ার টেইলস্ অফ দ্য সেঞ্চুরী’) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ।
নেলিদা ১৯৩৭ সালের ৩ মে রিও ডি জেনিরোর ভিলা ইসাবেল শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ছিলেন স্প্যানিশ এবং মা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান । তিনি রিও ডি জেনিরোর পন্টিফিসিয়া ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় ডিগ্রী অর্জণ করেন । পরবর্তীতে তিনি ১৯৭০ সালে ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ রিও ডি জেনিরোতে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কোর্স চালু করেন । কর্মজীবনে তিনি মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন । তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গাইডবুক অফ গাব্রিয়েল আরকানহো’ ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় । তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ফাউন্ডার্স্’ (১৯৬৯), ‘দ্য হাউজ অফ প্যাশন্’ (১৯৭২), ‘দ্য ফোর্স্ অফ ডেসটিনি’ (১৯৭৭) এবং ‘দ্য সুইট্ সঙ অফ ক্যাটানা’ (১৯৮৭) । ‘দ্য ফেঞ্চিং রুম’ (১৯৭৩) এবং ‘দ্য হীট অফ থিঙ্কস্’ (১৯৮০) তার ছোটগল্প সংকলন । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অসংখ্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন । এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ালম্যাপ প্রাইজ’ (১৯৭০), ‘ব্রাজিলিয়ান রাইটার্স্’ ইউনিয়ন প্রাইজ’ (১৯৮৭) এবং ম্যানেন্দেজ প্যালায়ো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ’ (২০০৩) । বিশ্বের প্রায় কুড়িটি দেশে তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে । তিনি ‘ব্রাজিলিয়ান একাডেমী অব লেটার্স’-এর সভাপতি ছিলেন ।
গল্পসূত্রঃ ‘ভালোবাসি স্বামীকে’ নেলিদা পিনওনের ইংরেজিতে অনূদিত ‘আই লাভ মাই হাজব্যান্ড’ গল্পের অনুবাদ । স্প্যানিশ ভাষা থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন এলবিয়েতা সোকা এবং শানা লরেঞ্জ । গল্পটি এলবিয়েতা সোকা সম্পাদিত ‘ফর্টিন ফিমেল ভয়েসেজ ফ্রম ব্রাজিলঃ ইন্টারভিউজ্ এন্ড ওয়ার্কস্’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে । তবে পাঠক নন্দিত এই গল্পটির একাধিক ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে এবং বিভিন্ন ছোটগল্প সংকলনে (‘দ্য হীট অফ থিঙ্কস’ এবং ‘দ্য হান্ড্রেড বেষ্ট ব্রাজিলিয়ার টেইলস্ অফ দ্য সেঞ্চুরী’) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ