অলাত এহ্সান'এর গল্প : ইছহাক নামের পারিবারিক ভূত

আমার জন্মের আগে বাবাও নাকি কিসব আজেবাজে স্বপ্ন দেখে আঁতকে উঠতেন। মা’কেও বলেননি। আমার জানার মধ্যে কেবল দাদাজান এর উত্তর দিতে পারতেন। তা আজ আর সম্ভব নয়। তাই এপাশ-ওপাশ ভেবে বাবাকেই ফোন দিলাম। তাঁর কণ্ঠ ম্রিয়মান। বাবা বললেন, ‘তুই কি একবার তোর দাদার মিলটা ঘুরে আসবি? সেই যে মিশনারি স্কুলে ভর্তি হলি, তারপর তো আর যাসনি কোনো দিন।’


‘পুরনো পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ছাড়া আর কী আছে সেখানে।’ যুক্তি টেনে বললাম আমি। ওপাশে সুনসান। কথা নেই। নৈঃশব্দে ডুবে যাচ্ছে সব।

ঈশ্বরদী। ঢাকা থেকে ২৩০ কিলোমিটার। আগে ছিল শুধু রেলপথ, এখন দিনমান বাস। তার ওপর গ্রীষ্মের শুরু। দিন বড়। সকাল সকাল রওয়ানা দিলে দিনাদিনে ঘুরে আসা সম্ভব। চট করে হিসেব কষে নিলাম। ‘ঠিক আছে’—সাত-পাঁচ ভেবে বললাম আমি।

সমস্যা আসলে ওই শব্দটাই—‘ইছহাক’। ওটা মানুষেরই নাম, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি। একটু সেকেলে ধাঁচের, এই যা। রাখিকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে ভুলে যেতে চাচ্ছিলাম বিষয়টা। ভুলে গিয়ে ছিলামও। সপ্তাহখানেক আগে রাখির ফোন পেলাম। ওর প্রসবের দিন ঘনিয়ে আসছে। আঙুলের কর গণনার মধ্যেই। এরপর সমস্যাটা পূর্ণোদ্দমে ফিরে এলো।

কাউকে না বলে এক ভোরে রওনা হয়ে গেলাম। পঁচিশ বছর পর বাপ-দাদার কর্মস্থলে ফিরছি। ব্যাপারটা উত্তেজনাকর। আবার শীতল। আবার ধূসরও। ওখানে আমাদের পরিচিত কেউ আর থাকে না। তার চেয়ে বড় কথা, আমাকে ‘ইছহাক’ ভূতের সুরাহা করতে হবে।


গাড়িতে ওঠার আগ মুহূর্তে বাবার ফোন পেয়ে ভীষণ আশ্চর্য হলাম, তিনি জানলেন কী করে আমি ঈশ্বরদী যাচ্ছি? টেলিপ্যাথিও বা। এজন্যই ভোরে উঠেছেন! আমি ঠিকঠাক রওনা দিলাম কি না জানলেন মাত্র। মনে হলো, আমার মতো বাবা কাছেও এটা এক অভিযান হয়তো।

গরমের দিন। আলো ফুটেনি তখনও। চারপাশে ধোঁয়ার মতো কুয়াশা। তারে ঝুলানো দাদিমার ফিনফিনে সাদা কাপড় যেন বাতাসে উড়ছে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে গাড়ির কাচ। ভোরের বাস ধরতে গিয়ে রাতের ঘুম শেষ হয়নি। গাড়িতে ঝিম মেরে তা পুষিয়ে নেয়া। দাদাজান থাকলে আমাকে এতদূর দৌড়াতে হতো না।

দাদাজান কাজ করতেন পাবনা ঈশ্বরদীর দাশরিয়া সুগার মিলে। এ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারভাইজার। সাধারণ শ্রমিক থেকে পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে তিনি ওই পদে গিয়েছিলেন। সরকারি চাকরি। তাই দাদাজান চাকরি ছাড়ার পর পোষ্য কোঠায় বাবা হিসাব বিভাগে নিয়োগ পান।

ঝিমঝিম ভাবটা ভাঙলো ‘ফুড ভিলেজ’ রেস্টুরেন্টে পৌঁছানোর পর। অর্ধেকটা পথ চলে এসেছি— গাড়ির ভেতরে স্পিকার ঘোষণা করলো। ২০ মিনিটের যাত্রা বিরতি। কন্ট্রাক্টর ছোকড়াটা এসে জাগিয়ে দিল আমাকে। চোখ মেলতেই দেখলাম বাইরে ভীষণ রোদ। এসি বাস। জানালার পর্দাগুলো টানা ছিল। তাই টের পাইনি।

‘ফুড ভিলেজ’ থেকে নান রুটি, সবজি আর লটপটি দিয়ে আহার শেষ করে আবার বাসে উঠলাম। তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। বাবা খোঁজ নিলেন আমি খেয়েছি কিনা। বরাবরই তিনি এমন। খাবার সময় হলে নিয়ম করে সবার খোঁজ নেন। বিশেষ করে দাদার। দাদাজানের প্রতি তার বিশেষ যত্ন। মনে হতো, একটা সিন্দুক আগলে রাখছেন। কিন্তু কী এক সমীহে কখনো তা খুলে দেখছেন না।

বাবা বললেন, ‘তুই একটু ঘুরে দেখিস তো। সম্ভব হলে তোর পর-দাদার ভিটেটাও একবার দেখে আসিস।’

বাবা আরো কি কথা শুরু করেও চুপ মেরে গেলেন। কোনো উত্তেজনায় ভূগছেন, অথচ আমাকে বুঝতে দিচ্ছেন না! হয়তো এমন সত্যের মুখোমুখি হতে চান তিনি, নিজে যা উন্মোচন করেননি। হয়তো চানওনি। গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। প্রজাপতির নকশা কাটা জানালার পর্দাগুলো দুলতে থাকে। তার ফাঁক দিয়ে রশ্মি পরে শরীরে।

একটা ছোট ঝাঁকুনিতে চোখ খুললাম। দূরের পথ। বন্ধ থাকতে থাকতেই চোখ জড়িয়েই যায়। আধো জড়ানো চোখ।

হঠাৎ অনুভব করলাম এই দীর্ঘ যাত্রায়ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজটা দেখা হবে না। ওটা ছিল আমাদের বাড়ি থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে। ঢাকা থেকে আসতে পড়বে না। মেরুনরঙা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ঠিক জমাট বাঁধা রক্তের রঙ। স্কুল বেলায় প্রায় যেতাম ব্রিজটা দেখতে। কিন্ত দাদিমা বারণ করতেন যেতে। ‘ওখানে যাস না ভাই, ওটা মানুষের রক্ত দিয়ে রঙ করে। তুই গেলও...’—তিনি বলতেন। আসলে সেখানে প্রায়ই রেলে কাটা শরীর পাওয়া যেত। কতক দুর্ঘটনা, কতক আত্মহত্যা, কতক হত্যা করে ফেলা রাখা। দুর্ভাবনা এড়াতেই দাদিমা এই সত্যটা আড়াল করতেন।


বিপ্ করে বেজে উঠেই থেমে গেল ফোনটা। কোথায় যেন দ্বিধার স্বর। বাবা...!

‘বাবা ফোন দিয়ে ছিলেন?’—কল লিস্ট থেকে ফিরতি কল দিলাম।

‘না, এমনিতেই। তুই কি পৌঁছে গেছিস কিনা, কোথায় আছিস, তাই।’ বাবা সর্বক্ষণ দেখভাল করছেন। অথচ অফিসের কাজে এর থেকে কত দূর দূর যাই, কখনো এমনটা হয় না।

‘না’—আমি বললাম। কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে জানলাম প্রায় কাছাকাছি।

বাবা কথা বাড়ালেন না।


ঈশ্বরদী পৌঁছানোর পর শেষবারের মতো গাড়ির ভিতরে স্পিকারটা বেজে উঠলো। সম্বিৎ ফিরলো আমার। স্টেশন থেকে রিকশায় সুগার মিলে পৌঁছলাম। দুপুর গড়িয়ে গেছে। গাছপালায় ছাওয়া রাস্তা। চারপাশে ছায়া ছায়া অন্ধকার। বিশাল এক লোহার গেটের সামনে থামলো রিকশাটা। শ্যাওলা আর জং ধরা। লতাপাতা ঘিরে ধরেছে। জীর্ণ ও পরিত্যাক্ত। নীচের কিছু অংশ খসে পড়েছে। ভৌতিকও বটে। মাটিতে পা ফেলতেই টের পেলাম ইট বিছানো পথটুকু ঘাসে তলিয়ে গেছে। তার ওপর মোটা টায়ারের দাগ। কিছুদিন আগে হয়তো লরিগুলো এসেছিল।

দরজায় আঘাত করে চিৎকার করলাম—‘কেউ আছেন?’

কোনো উত্তর এলো না। ঘন সবুজ গাছপালা প্রতিধ্বনিও শুষে নিচ্ছে। বারকয়েক আঘাত আর চিৎকার করার পর একজন লোক আমার পেছনে দাঁড়ালেন।

‘ইট্টু দুর-দ্বারে গেছিলাম।’ বিনয়ের সঙ্গে তিনি কৈফিয়াত দিলেন। তখন পর্যন্ত যা তার আছে আশা করিনি। চল্লিশোর্ধ্ব বয়স বা তারও বেশি। মিলের পাশেই তার বাড়ি। ক্লিন সেভ। তেল দিয়ে আঁচড়ে সিঁথি করা চুল। ভাঁজ পড়া বেপারি জামা দেখে মনে হয়, কাঁপড়ের ভাঁজ কেবলই খুলে এনেছেন। তার নাম আকেল উদ্দিন। সবাই ডাকে ‘আকু’—তিনিই জানালেন।

‘এই মিলের দারোয়ান ছিলাম আগে। এ্যাহন পাহাড়াদার। কন কারে চান?’—আকেল উদ্দিন বললেন।

আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, চল্লিশোর্ধ বয়সী মানুষ। কী করে সাত দশক আগের সবকিছু চিনবেন। দাদাজান তো আগেই চাকুরি ছেড়ে ছিলেন। বাবাও বেশিদিন চাকুরি করেন নি। ’৭০ সালে পাকশিতে নর্থবেঙ্গল পেপার মিল হয়। এটা ছিল সুগার মিল থেকে ৬ মাইল দূরে। প্রথমে বাবা সেখানে ব্যাগাসের (আখের ছোবড়া) ছোট ছোট লট দিতেন। ধীরে ধীরে বাবা সুগার মিলের চাকুরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন।

লোকটা আমার আমতা আমতা বুঝতে পারেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন, তিনি এই গাঁয়েরই মানুষ। চাকরি করার আগে থেকেই অনেক চেনেন। আর চেনেন বড়দের মুখে শুনে। কিন্তু চিলনেই বা কি, আমার বাবার বয়সই তো তার চেয়ে বেশি। অবশ্য তার কথা বলার আগ্রহের কমতি নেই।

আমি নিজের পরিচয় দিয়েই শুরু করলাম। বাবার নাম বলতেই তিনি লুফে নিলেন। ‘আরে তুমি তো আমার ভাতিজার ছেলে। তাইলে তো নাতিভাই।’ আমাকে অবাক করে উচ্ছ্বাসে দুলছিলেন তিনি। সমাজ সংসারে কত রকম সম্পর্কই থাকে। সেখানে চাচার চেয়ে ভাতিজা বড়, ভাগ্নের চেয়ে মামু ছোট হতেই পারে। তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকে না।

‘তা তোমার বাপ তো গাজীপুরের একটা গার্মেন্টসে মার্চেন্ডাইজার হুনছি। সেখানেই বাড়ি করছেন।’ আমার গা ছুঁয়ে যায় তার শিরা ওঠা হাত।

পেপার মিলে ব্যাগাস দেয়া থেকে ব্যবসা শুরু। তারপর নানা পেশা ঘুরে সেখানে গিয়েছিলেন। এখন তিনি গার্মেন্টসে মার্চেন্ডাইজার। ‘হ্যাঁ, সেখানেই আছেন’ ছোট্ট করে আমি স্বীকারোক্তি করলাম।

তারপর তিনিই আমাকে পুরো মিলটা ঘুরিয়ে দেখাতে শুরু করলেন। মনে হলো তিনি আগে থেকেই জেনে বসে আছেন সব। সেই সাথে মিলের গোড়াপত্তনের ইতিহাস, কোথা থেকে মিলে আখ আসতো, স্টাফ মেস কিভাবে চলতো, কলনি কেমন ছিল, মিলের ছোবড়া বিক্রি নিয়ে কেমন দাঙ্গা হতো ইত্যাদি বললেন। এসব বাবার মুখে কম-বেশি শুনেছি, অবসর প্রাপ্ত চাকুরে যেমন বলেন। মিলের অফিসাররা শ্রমিকদের সাথে কেমন আচরণ করতো, দুর্ভিক্ষে তারা কি করেছেন—যোগ করলেন আকেল উদ্দিন। সবিস্তারে বললেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সামিল শ্রমিকদের কীভাবে গোপনে মেরে ফেলা হতো, দেশভাগের সময় শ্রমিকদের কি হাল হয়েছিল, তার কথা। এ নিয়ে ভীষণ আক্ষেপ তার। আমি কেবল ‘জ্বি-হ্যাঁ, জ্বি-হ্যাঁ’ করে যাচ্ছিলাম। আমাকে নানাভাই বা ভাই বলতে অনুরোধ করলেন।

অনেকটা সময় কেটে গেল। তবু ঘড়ি দেখা আর ‘হু-হাঁ’ শব্দে কেবল সায় দেয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না।


বয়সে ছোট হয়েও দাদাজানকে চিনলেন তিনি। তাঁর মূক-কালা-অন্ধ জীবনের কথাও জানেন। আঙুল তুলে একটা বাড়ি দেখালেন। বাড়ি বলতে ঘরের একটা পাশ দেখা যাচ্ছিল কেবল। ইট দিয়ে গাঁথা টিনে দো-চালা ঘর। আগেকার দিনে মিলের কাছের ডর্মেন্ডরি বা অফিসার্স কোয়ার্টারের মতো। তিনি বললে, ওই বাড়িটাই আমার পূর্বপুরুষের ভিটা। মানে পর-দাদার বাড়ি।

ঘরের দেয়ালে পলেস্তার করা হয়নি আগে থেকেই। ছোট্ট একটা ফুটো ঘিরে কালচে বলয়। একটা কালো শীষ উঠে গেছে ওপর দিকে। হয়তো রান্না ঘরের ধোঁয়া নির্গমণের জায়গা। পুরো দেয়াল শ্যাওলা ধরে গেছে। তার ওপর বিভিন্ন পরগাছায় ছাওয়া। তেলাকুচ, পিপল লতা, নানান জংলা লতায় তলিয়ে গেছে। এর ভেতর মানুষ বাস করতে পারে বলে আমার মনে হলো না। অথচ তার দাবি, তিনি সেখানেই থাকেন। একবার জোরও করলেন যাওয়া জন্য। আমার ইচ্ছে হলো না।

‘কী যে হইলো আপনের দাদাজানের, পানির দরে বাড়িটা বেইচা এখন থিকা আরেক থানায় বাড়ি করেলেন।’—তিনি আক্ষেপ করলেন।

দাদাজান সুগার মিলের শব্দ সহ্য করতে পারতেন না। তাই বাবার আমলে জমি অধিগ্রহণের সময় বদলি পাওয়া বাড়িটা বিক্রি করে দেন। এক থানা পেরিয়ে নগরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে জায়গা কিনে বাড়ি করেন তিনি। দাদাজান নাকি বলতেন, মিলের রোলারের শব্দ তার কাছে আটকেপড়া মানুষের চিৎকারের মতো মনে হয়। কি অদ্ভুত অনুভূতি।

কিন্তু দাদার বাড়ি বেচে দেয়া সাথে আমার স্বপ্নের কি যোগ? ‘ইছহাক’ নামটাই বা কার? গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। ভেতরে ভেতরে সূত্র খুঁছিলাম। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আর কখনো আসা হবে কি না জানি না। তাকে আমার উদ্দেশ্য খানিকটা খোলাসা করলাম।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তিনি। ‘আপনার পর-দাদাজান ছিলেন একজন সাচ্ছা কৃষক’, তিনি দম নিয়ে শুরু করেন। পর-দাদার বেশ কিছু আবাদি জমি ছিল। তা-ই তিনি আবাদ করে চলতেন। সেটা আরো আগের কথা। দাশরিয়া গ্রামের আদিবাসীদের একজন তিনি। ব্রিটিশ পিরিয়ডে এখানে সুগার মিল হয়। নাম, ‘দাশরিয়া সুগার মিল’। ‘প্রথম তো মুনে করছিল গ্রামের নামেই নাম, তাইলে বুঝি আমাগোই। পরে দ্যাহে বিটিশগো।’—আকেল উদ্দিন বলেন। পর-দাদার আবাদি জমিও মিলের আওয়তায় পড়ে যায়। এর বদলে তিনি একটা ইট গাঁথা বাড়ি আর মিলে শ্রমিকের চাকুরি পান। তার কয়েক বছর পর তো তিনি...।

‘হয়, এই রকম হয়।’ তার কথায় খানিকটা হেঁয়ালির সুর।

‘হয় কি’ তিনি বলে যান, ‘এই যে, লোহার বড় বড় যন্ত্রপাতি, দালান-কোঠা—এসবেরও আত্মা আছে। অনেকদিন পড়ে থাকলে তারা আছর হয়ে যায়। তখন একটা নড়াচড়া পড়লে মানুষকে নানানভাবে জানান দেয়।’ এটুকু বলেই থামেন আকেল উদ্দিন।

ভৌতিক কিছুতে আমার বিশ্বাস নেই। অতিপ্রাকৃতে দৈবাৎ ঘটনা বলেই মনে হয়। কিন্তু লোকটার বলায় আন্তরিকতা আছে। যে কাউকে তা আকর্ষণ করবে।

‘এই যে দেখেন তাজা ঘাসে টায়ারের দাগ। মিলের মেশিনপত্র সরাই ফেলা অইব্যা লাগছে। এইখানে বিদেশি একটা মিল বসবো। আগে ছিল ব্রিটিশগো এখন অইবো আম্রিকান। এই মেশিন সরানো শুরু করা পর থিকাই এইড্যা শুরু অইছে। গত ত্রিশ বছরে জাগো খবর ছিল না, তারা আসপ্যা লাগছে মিল দ্যাহার নিগ্যা। কতদূরথ্যা আইস্যা আমার এরুম দ্যাহা করুন লাগে।’ একটু থেমেন তিনি। ‘আপনার কেসটা তো দেখি একটু অন্য।’ চেহারায় চিন্তা ঝুলিয়ে রেখেই তিনি বললেন।

চিন্তায় ঝুলে পড়া চোয়াল ওপর দিকে তুললে মনে হয়, পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশ খোঁজার চেষ্টা করছেন। কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা আসন্ন। গাছপালার কারণে তা আরো ঘন হয়ে আসছে। তিনি কথার বিস্তার ঘটাতে চান। আমি তাকে মনে করিয়ে দেই, রাতের বাসে আমাকে ঢাকা ফিরতে হবে। তিনি চুপ করে থাকেন, যেন স্মৃতিতে কিছু খুঁজছেন। অজস্র কথা থেকে কথা গোছাচ্ছেন। ‘সমস্যা কি নাতিভাই’, উচ্ছ্বাসে দুলে ওঠেন তিনি, ‘রাইত্রে আমার বাসায় থাকবেন। এড্যা আপনেগোই বাসা। পূর্বপুরুষের ভিটা বইল্যা কথা।’

আমার ঘরি দেখার তোড় দেখে কথায় ফেরেন। ‘আগামীকাল সকালে আমার অফিস আছে।’—আমি বলি।

খানিকটা থিতিয়ে গেলেন তিনি। ‘আইচ্ছ্যা, আপনার পর-দাদা তো এই মেলে কাম করতো?’

‘হুম’

‘আপনের দাদাও তো মিলে শ্রমিক আছিল?’

‘হুম’

‘আপনের বাপেও তো মিলে চাকুরি করতো?’

‘হুম। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হওয়ার আগেই মিল বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমি একটা বিদেশি সুগার মিলে চাকুরি করি’—আগ বাড়িয়ে বলে ফেলি আমি যেন তার কথা একঘেঁয়ে না হয়ে উঠে ।

‘আইচ্ছ্যা, আপনার পর-দাদার বদিলতে অইলো আপনার দাদা, তাই না?’

‘হ্যাঁ’

‘ক্যান বদলি পাইলো, কিছু জানেন?’

‘না’

‘আপনার দাদার বদলিতে পাইলো আপনার বাপে?’

‘হ্যাঁ’

‘ক্যান পাইলো কিছু জানেন?’

‘না’

‘মিলের অনেক কিছুই তাইলে আপনে জানেন না।’—দয়ার্দ্র স্বরে বলেন আকু মিয়া।

‘তেমন কিছু না। আসলে...’ অস্বস্তি এড়াতে আমি বলি, ‘ছোটবেলায় এসেছিলাম এক-দুইবার। মিশনারী স্কুলে ভর্তির পর আর এদিকে আসা হয়নি।’

‘এনে একটা গোমর আছে’—ঠোঁটের ওপর তর্জনী ছোঁয়ালেন কয়েকবার। মাথার ওপর ডান হাতের আঙুলগুলো অনির্ণিতভাবে নাচালেন। হয়তো তার কালচে দাঁতে পানের নেশা চেপেছে।

‘তাইলে তো একজন মানুষ রোলে আটকা পড়ছিলো তাও জানেন না।’

‘তয় হুনেন’ আমার কয়েক মুহূর্তে নিরবতা দেখে পুনরায় নিজেই শুরু করলেন আকেল উদ্দিন।

‘বিটিশ আমলের শ্যাষ শ্যাষ, তহন দুর্ঘটনাটা ঘটছিল। একজন মানুষ রোলে আখ দিব্যা যাইয়্যা আটকা পড়ছিলো। সেই আখ আস্তে আস্তে রোলার দিকে আয়গ্যায়, আর লোকটা চিক্কার পারে। রোলারের দিকে যায় আর লোকটা চিক্কার করে। অন্যরাও চিল্লাইব্যা লাগছে—মানুষ মরলো বাঁচাও, মানুষ মরলো বাঁচাও...।’ আকেল উদ্দিনের বাঁচাও বাঁচাও শব্দগুলো বাতাসে দ্যোতনা তৈরি করে।

‘তহন নতুন মেল চালু হইছে। এক-দুইজন ছাড়া জানে না, কোনটা করলে কোনডা হয়। একবার এই সুইচ বন্ধ করে তো একবার ওই সুইচ বন্ধ করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। ওই দিক লোকটা চিল্লাইব্যা লাগছে, বাঁচাও বাঁচাও...।’

আমি রোমন্থন হয়ে শুনি।

‘লোকরা বাঁচাইব্যার আইগিয়্যা আসে। কিন্তু কিছু করব্যার পারে না। এরুম করতে করতে লোকটা রোলারের ভিতের ঢুইকা যাইতে লাগলো’—একটা হাঁফ ছাড়েন আকেল উদ্দিন। ‘আনা পাছি কইরা লোকটা কেমনে যানি শরীলডা ঘুরাই ফালাইছিল। তখন মেলের ভিতর আস্তে আস্তে তাঁর পাও যায়, গিরা যায়। লোকটা আরু জোরে চিল্ল্যান পারে। সে কি চিল্ল্যানরে ভাই—মরা চাইতে ডলা বেশি কষ্টের। শেষে তার কোমর তুরি গ্যাছে মতন, কেমনে কইরা যানি মেল থামছে।’—থামেন আকেল উদ্দিনও।

‘তয় মিশিন থামলে কী অইবো, মানুষও তো আটকা পড়ছে। তহনো সে চিল্ল্যাইব্যা লাগছে।

আর সে বাঁচাও কয় না। খালি তার নাম কয়। তাতেও নি কেউ তারে ছাড়ায়। ছাড়ায়বো কেমনে, বিটিশরা তো খালি মেশিনে উটা শিকায়ছে, নামব্যার তো শিকায় নাই। এ্যাহন মিশিন চালায়লে মানুষ ভাঙ্গান হইয়া যায়, বন্ধ থাকলেও আটকা থাকে। কী করবো কন?’—রুদ্ধশ্বাসে তিনি থামেন। তার গলাটা ধরে আসে।

‘হুঁম, তাই।’—বিহ্বল শ্বাস ফেলি আমি।

‘এইডাই তো কতা’—এ বলে লুঙ্গির উল্টা কোছা থেকে এক খিলি পান মুখে পুরে দেন। পানের রস গলা দিয়ে এক প্রস্থ নেমে যাওয়ার পর তার মুখ খুলে। ‘ওই দিকে মিলের ইঞ্জিনিয়ার, চিপ অপারেটর নিয়া ম্যানেজার গেছে কোলকাতায়। ওই বছর কি পরিমাণ চিনি অইবো তা নিয়া মিটিং।’ স্বরটা একটা খাট করে বলেন,‘আসলে তাগো বিদায়ের সময় অইয়া গেছে। এই মিল কি করতো তাই ঠিক করব্যার গ্যাছে। তাতে কি...’ স্বর বাড়ে তার ‘এ্যাহন ইঞ্জিয়ার আইবো, মেশিন খুলবো, তারপরে না মানুষটা বাইর করবো। নাইলে উদ্ধার নাই। তাগোর কাছে খবর পৌঁছাইতেও একদিন। তারা ফিরা আইতেও একদিন। একদিনেরই মামলা।’ একবার পিক ফেলে তৃপ্তির হাসিতে তাকান। আমি তার দিকে বিহ্বলভাবে তাকাই। নিষ্ঠুর গল্পকার তিনি। গল্পের ফাঁদে ফেলে শ্রোতা নিয়ে খেলতে ভালবাসেন।

একটু দম নেন আকেল উদ্দিন। ‘এ্যারেই কয় বিটিশ ইঞ্জিন। চালাইলেও মরণ, বন্ধ রাখলেও মরণ। ’৪৭-এ তো এ-ই অইছে।’

বুঝলাম গল্প আর রাজনীতির প্রতি তার বিশেষ ঝোঁক। ওই পানের মধ্যেই যত গণ্ডগোল। গলা দিয়ে দুইফোঁটা রস গড়ালেই আর হুঁশ থাকে না। কিন্তু আমার যে ঝেড়ে না কাশলেই নয়। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরে আশে-পাশে কোথাও কিছু পাওয়া যাবে না বাসস্ট্যান্ড-এ যাওয়ার। ‘ভাই আসল কথায় আসেন। ওই লোকটার কথা বলেন। তার কি হল? আমাকে এই গল্প শোনাচ্ছেন কেন?’

দাঁত দিয়ে জিভ কাটেন তিনি। ‘গল্প না ভাই গল্প না। কতায় আছে—

এ্যাতগাছ টান দিলে

ব্যাতগাছ নড়ে

বাইলা পাখি ডাক দিলে

কুরুক কুরুক করে।

আপনেরা জ্ঞানী মানুষ। ঠিক সুমায় ঠিক প্রশ্নডা করছেন। আমি ইট্টু ওই দিকে যাইব্যা লাগছিলাম। ঠিক সুমায় ঠিক প্রশ্ন করা উত্তরের পাউনে থ্যা দামি।

বিটিশ কী খালি দ্যাশ

বিটিশ অইলো প্যাচ

ঠিক প্রশ্নডা করি নাই বইলাইতো বিটিশরা এতো গল্প হুনছি। অথচ দ্যাখেন অগো কতা কইতে কইতে নিজেগো কথা ভুইল্যা গেছি। আমাগো একটা মানুষ যে রোলে আটকাইয়্যা রইছে, হেই দিকে খিয়াল নাই।’

‘হ্যাঁ, তাই বলেন’—আমি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলি।

‘কিন্তু এরুম অবস্থায় কাউরে না কাউরে জান দিওনই লাগবো।’ নিরুপায় আর্তি নিয়ে বলেন তিনি। ‘এত বড় যন্ত্রর বসাইবেন। হ্যার ও তো চাওয়া আছে। হ্যা তো ওই কোম্পানির ব্যাটারা বুঝবো না। তাই না?’

লোকটা খুব ধুরন্দর—আমি মনে মনে বলি। ‘আসল কথা আসেন’—আমার স্বর চড়ে যায়।

‘আসল কতাই তো। ভারতবাসীর জন্য প্রায়শ্চিত্ব করুন লাগতো সুভাষ বোসের। শ্যাষম্যাষ তার অন্তর্ধান না হইলে কিন্তু দ্যাশে ফিরা দুই দ্যাশ আবার এক কইর্যা ফালাইতেও পারতো। এই মেলেও কইলাম তিনার আসার কথা ছিল।’—আমার দিকের তার কাতর চাহনি।

লোকটা সুভাষ ভক্ত। বেশি কথা বলেন। এখানে সুভাষ বসুর আগমনের সম্ভাবনাই তার মাথা বিগড়েছে। সেখানেই পড়ে আছেন। কে জানতো সুভাষ বসু দেশে ফিরলে এখনকার রাজনীতিতে টিকতে পারতো কি না। ‘হুম, তখন ধান ভানতে শিবের গীতও শুনতে হতো না।’ মিলের চাকায় আটকে পড়া মানুষের প্রতি মনোযোগ রেখেই আমি বললাম।

‘হ, হাচাই’—আকেল উদ্দিন এবার বলেন, ‘তহন রাইত অইয়্যা গেল। মেল বন্ধ অওয়ার সুমায়। লোকটারে খুলান গ্যাল না। তার দম খাটো অইব্যা লাগছে। পরদিন সকাল ব্যালাও লোকটার ধিকধিক্যা দম দেহা গ্যাছে। মুখের কাছে কান নিয়া হুনছে, কথা বুঝুন যায় না। ভূতের মতো আর ফ্যাশফ্যাশা গলা।’—থামেন আকু মিয়া।

হৃদয় বিদারক কাহিনী। কিন্তু এতে আমার সমস্যা সমাধান হলো না। ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার সমস্যার যোগাযোগ কোথায়?’ হতাশ হয়েই বলি।

‘আছেরে ভাই, আছে।’ তিনি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। ‘তহন মানুষ না মরলে পুষ্য কোটায় চাকুরি অয় না। বুচ্ছেন নি?’ ভর দিয়ে থামেন তিনি। ‘বাঙালিরা কইলাম সুভাষ বোসের নাম ঠিকই জানছে। হুনেন মশায়—’ আকেল উদ্দিন স্বর চড়িয়ে ওঠেন।

‘এইবার আপনের পর দাদার নামটা কম দেহি। মনে কইর্যা দেহি তার কিছু জানা আছে কি না।’

আমার মাথায় হঠাৎ বিদ্যুৎ খেলে গেল। আমি পর-দাদার নাম মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তারপর মনে হলো, সত্যি আমি পর-দাদা নাম জানি না। অনেকক্ষণ বাবাও ফোন দিচ্ছেন না—ভেবে আশ্চর্য হলাম। মোবাইলের দিকে চোখ ফেরাই। নেটওয়ার্ক নেই।

হঠাৎ করে তার কণ্ঠে বেজায় তাড়া। ‘আপনের অনেকটা সুমায় নষ্ট কইর্যা ফালাইলাম। থাবেনই না যহ ন। তাইলে আপনেরে আইগিয়া দিয়া আহি। হ্যাশে আবার গাড়ি পাইবেন না।’ অনুসূচনার মতো করে তিনি বলেন।

তারপর তার সংসারের কথা, এইকথা-সেইকথা—অনেক কথাই বললেন। হরহর করে তার ছয় পুরুষের নাম বলে দিলেন।

বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি এসে একটু সিগন্যাল পেয়ে বাবাকে ফোন দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। ফোন বেজেই চলেছে। কেউ তুলছেন না। একসময় শুরু হলো বন্ধ দেখানো। তখনও আকেল উদ্দিন সঙ্গে ছিলেন। ব্যর্থ হয়ে তাকে বিদায় দিতে হলো।

আকেল উদ্দিন ফিরে যাওয়ার পরও বাবাকে ফোনে চেষ্টা করলাম। তখনো ফোনটা বন্ধ ছিল। ভীষণ অভিমান হলো বাবার প্রতি, নিজের প্রতিও। ভেতরে খেদ চেপে গেল।

পরদিন বাবার অফিসের ল্যান্ড ফোনে কল দিলাম। আমার রাগ তখনো পড়ে নি।

‘তাহলে বুঝে ফেলেছিস, মোবাইলটা কয়েকদিন ধরে বিকল হয়েগেছে।’—বাবা এক গাল হেসে বললেন।

যন্ত্রের প্রতি বাবার এ এক ‘মহান উদারতা’, ভীষণ নস্টালজিক। একটা কিছু নষ্ট হলে সহজে সারাতে চান না। বদলানও না। দুইদিন ব্যবহার করলেই তার মায়া ধরে যায়। আরেক অভ্যাস তার শৈশবের ছুরি চিকিৎসা। কিছু নষ্ট হলে প্রথমে নিজে খুঁটিয়ে দেখা। তাতে ভালোর চেয়ে মন্দটাই বেশি হয়।

কিন্তু কালকের ব্যাপারটা ভীষণ ধোঁয়াচ্ছন্ন।

‘আচ্ছা বাবা, আপনাদের সময় দাশরিয়া সুগার মিলে আকেল উদ্দিন নামে একজন দাড়োয়ান ছিল না?’ ধন্দ এড়িয়ে কোনো ভূমিকা ছাড়াই আমি বললাম।

ধন্দে পড়ে যান বাবা। বারবার উচ্চারণ করে মনে করা চেষ্টা করেন।

‘আপনারা আকু চাচা বলতেন।’—সহজ করার জন্য আমি বলি।

‘ওহ্ হো, আকু চাচা’ অন্ধকারে দিয়াশলাই পাওয়ার মতো স্বর করে ওঠেন তিনি। ‘নেতাজি সুভাষ ভক্ত মানুষ। কিন্তু তিনি তো আমাদের সময়ের না। তোর দাদার আমলের। শুনেছি বিয়ে-সাদিও করেন চাই। নেতাজির অন্তর্ধানের পর তাঁকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

‘খুঁজে পাওয়া যায়নি! নাকি...’

আবার ধন্দে পড়েন বাবা। ‘শুনেছি তিনি নাকি মিলে নেতাজিকে আনতে চেয়েছিনে। অফিসাররা তাঁর কাজ-কাম ভালভাবে নেয়নি। কিন্তু তার কথা তুমি জানলে কি করে?’

‘না, এমনিতে।’ আমি লুকানোর চেষ্টা করি। এত পুরনো কথা আর এমনিতে হয় না। সবকিছু গুলিয়ে উঠতে থাকে—বাবা বুঝেন। এ নিয়ে বাবার সাথে আর কখনোই কথা হয়নি। তিনিও তুলেন নি।


ঢাকা ।।জুন, ২০১৬
লেখক পরিচিতি
অলাত এহ্সান

মূলত গল্পকার। জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী গ্রামে। ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতক(সম্মান)ও স্নাতকোত্তর। ছাত্র জীবন থেকেই বাম দর্শনের সঙ্গে স্পৃক্ততা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেন। একটি দৈনিকে কর্মরত।
প্রকাশিত বই ‘হেঁটে যাতায়াত ও আমরা’ (অনুবাদ)।

প্রকাশিতব্য গল্প সংকলন ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ত ছিল’।
প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকারের বইয়ের কাজ চলছে।
alatehasan@yahoo.com



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. নি:শ্বাস আটকে যাবার উপক্রম। আকেল উদ্দিনের উপস্থিতি থেকেই যদিও বোঝা গিয়েছে আকু চাচা আসলে কোন চরিত্র। সুভাষ বসু আসার পর্যায়ে মোটামুটি নিশ্চিত। মিলে আটকা পড়া মানুষের যে বর্ণনা তা ভয় ধরিয়ে দিল এমন নিখুঁত চিত্রকল্পে। ব্রিটিশদের শাষণের কী চমতকার উদাহরণ দিলেন। সব বুঝেও, গল্পের পরণতি জেনেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত না যেয়ে উপায় নেই পাঠকের। একটা ইতিহাস বলার প্রয়োজনে পাঠককে কতকিছু জানিয়েছেন অলাত অথচ কোথাও এতটুকু ছন্দপতন হয়নি। স্থানীয় ভাষাটাও দারুণ তুলেছেন। একটা কথা যেহেতু উত্তম পুরুষ বলছে, পরদিন অফিসের ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন দিয়েছে বাবাকে সেখানে বাবার মোবাইল কয়েকদিন ধরে না বলে শুধু নষ্ট বা অকেজো বললেই হয়ত চলে। আর আকু চাচার হয়ত কন কারে চান বলার কথা নয় কারণ এটা পুরো বন্ধ। বরং কী খুঁজেন বলতে পারে। বাবার টেলিপ্যাথির বিষয়টি শেষে যেয়ে আরেকবার সম্পর্কিত হলে কেমন হতো? অলাত মুগ্ধ হলাম আপনার গল্পে। / সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

    উত্তরমুছুন
  2. দারুণ গল্প। ঘোর লাগা

    উত্তরমুছুন