
অনুবাদঃ
ফজল হাসান
তার উরোজ ছিল ঢাউস আকারের, পা ছিল সরু এবং চোখের মনি ছিল নীল । এভাবেই আমি তাকে মনে রাখতে চাই । জানি না, আমি কেন পাগলের মতো তার প্রেমে মজেছিলাম । কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম এবং সেই প্রথম দিন থেকেই । আমি আসলে বলতে চাচ্ছি, প্রথম দিনের প্রথম ঘন্টা থেকে আমাদের সবকিছু ভাল ভাবে কাটছিল । তারপর ক্ল্যারা যে শহরে বাস করতো, একদিন সেই শহরে সে ফিরে যায় । শহরটা ছিল স্পেনের দক্ষিণে (ছুটি কাটাতে সে বার্সেলোনাতে এসেছিল) । ওর চলে যাওয়ার পর থেকে আমার সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু করে ।
এক রাতে স্বপ্নে আমি একটা দেবদূত দেখেছিলাম । বিশাল বড় এবং ফাঁকা পানশালার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমি তাকে দেখেছি । তিনি পানশালার এক কোণায় একটা টেবিলের ওপর কনুই ভর দিয়ে বসেছিলেন এবং তার সম্মুখে ছিল ফেনায়িত দুধের কফির ভরা কাপ । মেয়েটি তোমার জীবনের আকাঙ্খিত ভালোবাসা, আমাকে উদ্দেশ্য করে দেবদূত বললেন । তার দৃষ্টিতে ছিল রুক্ষতা এবং চোখের তারায় ছিল আগুণের স্ফূর্লিঙ্গ । তার সেই অগ্নিমূর্তি দেখে আমি ভয়ে এক পাশে সরে দাঁড়াই এবং চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে ডাকতে থাকি, ওয়েটার, ওয়েটার । আর তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে আমি চোখের পাতা খুলি । অবশেষে দুঃস্বপ্নের কঠিন নিগঢ় থেকে নিস্কৃতি লাভ করি । অন্যান্য রাতে আমি কাউকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখিনি । কিন্তু সকালবেলা কান্নাভেজা চোখ নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠতাম । ইতিমধ্যে ক্ল্যারা এবং আমার মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে । ওর চিঠি খুবই সংক্ষিপ্ত । হাই, তুমি কেমন আছো, বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে, তোমাকে ভালোবাসি, বিদায় । প্রথম দিকে চিঠির এসব শব্দগুলো আমাকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল । আমি ভেবেছিলাম, আমাদের সম্পর্ক হয়তো শেষ হয়ে গেছে । যাহোক, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিঠিগুলো বারবার পড়ে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষন করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ওর সেই সব সংক্ষিপ্ত চিঠিগুলো আসলে ব্যাকরণগত ভুল করা থেকে পালিয়ে যাওয়ার একধরনের কৌশল । তবে ক্ল্যারা গর্বিত । কেননা সে ভালো লিখতে পারতো না । তার সেই দূর্বলতা সে কারোর কাছে প্রকাশ করতে চাইতো না, এমনকি সংক্ষিপ্ত চিঠি পেয়ে আমি যদি কষ্ট পাই, তারপরেও সে কখনো আমাকে দীর্ঘ চিঠি লেখেনি ।
সেই সময় ক্ল্যারা ছিল আঠারো বছরের তরুণী । উচ্চ বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সে একটা বেসরকারি সঙ্গীত বিদ্যানিকেতনে গান শেখা শুরু করেছিল । এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত একজন চিত্রশিল্পীর কাছে ছবি আঁকার কলা-কৌশল শিখতো । কিন্তু সঙ্গীত শিক্ষায় তার কোনো উৎসাহ ছিল না এবং চিত্রাঙ্কণের বেলায়ও তথৈবচ । যদিও সে ছবি আঁকা পছন্দ করতো, কিন্তু ছবি আঁকার মতো তার ধৈর্য্য ছিল না । একদিন আমি তার একটা চিঠি পেয়েছি । চিঠির ধরণ সেই একই – অল্প কথার । চিঠিতে লিখেছে, সে একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছে । তার সেই চিঠির জবাব আমি দিয়েছিলাম তিন পৃষ্ঠায়, অর্থাৎ উভয় দিকে মিলে ছয় পাতায় । সেই চিঠিতে আমি তার রূপের ভূয়সী প্রশংসা করেছি, বিশেষ করে তার শান্ত এবং গভীর চোখের সৌন্দর্য্য, নিখাদ অঙ্গ-সৌষ্ঠব্য, ভঙ্গিমা ইত্যাদি । কেন জানি আমার কাছে মনে হয়েছে, চিঠিতে আমার নিচু মনের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে । তাই লেখা শেষ করে আমি চিঠি পাঠাবো, কি পাঠাবো না - এই দোলাচলে দুলেছি । যাহোক, শেষ পর্য্যন্ত আমি চিঠি পাঠিয়েছি ।
ক্ল্যারার কাছ থেকে জবাব পেতে আমার কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে । সেই অপেক্ষার সময়ে ওকে আমি টেলিফোন করতে পারতাম । কিন্তু ক্ল্যারা অযথা বিরক্ত হোক, আমি তা চাইনি । এছাড়া তখন টেলিফোন করার মতো আমার কাছে বাড়তি কোনো অর্থকড়িও ছিল না । সুন্দরী প্রতিযোগীতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করার জন্য ক্ল্যারা প্রায় এক সপ্তাহ প্রচন্ড মন খারাপ করেছিল । যাহোক, আমাকে রীতিমতো ভড়কে দিয়ে সে একটা টেলিগ্রাম পাঠিয়েছে । তাতে লিখেছেঃ ‘দ্বিতীয় স্থান । চিঠি পেয়েছি । এসে আমাকে দেখে যাও ।’
এক সপ্তাহ পরে আমি শহরের উদ্দেশ্যে, যেখানে ক্ল্যারা থাকে, দিনের প্রথম ট্রেনে চেপে বসি । তার আগে, অবশ্যই টেলিগ্রাম পাওয়ার পরে, আমরা টেলিফোনে কথা বলেছি । সুন্দরী প্রতিযোগিতার কাহিনী অনেকবার আমাকে শুনতে হয়েছে । নিঃসন্দেহে এই প্রতিযোগিতা ক্ল্যারার জীবনে ভীষণ চাপ সৃষ্টি করেছে । সুতরাং ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে পরদিন খুব ভোরের ট্রেনে চড়ে এক অচেনা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হই । আমি সকাল সাড়ে নয়টায় ক্ল্যারার অ্যাপার্টমেন্টে এসে পৌঁছি । অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছানোর আগে খানিকটা বাড়তি সময় কাটানোর জন্য আমি স্টেশনে বসে এক কাপ কফির সঙ্গে গোটা কয়েক সিগারেট পুড়িয়ে ছাই করি ।
আলুথালু চুলের এক স্থূলকায় মহিলা দরোজা খুলে দেয় । আমি যখন বললাম যে, ক্ল্যারার সঙ্গে দেখা করতে চাই, তখন মহিলা জবেহ্ করার আগে লোকেরা যেমন ভেড়াকে খুঁটিয়ে দেখে, সেই রকম অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে আমার আপাদমস্তক পরখ করে । কয়েক মিনিটের জন্য (সেই কয়েক মিনিট ছিল অস্বাভাবিক ভাবে দীর্ঘ এবং আমার মনে হয়েছিল, ঘটনা শেষ হয়ে গেছে এবং পরে আমি বুঝতে পেরেছি, তাই হয়েছে) আমি বসার ঘরে বসে ক্ল্যারার জন্য অপেক্ষা করি । সেই সময় হয়তো কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বসার ঘরে আলো-বাতাসের ছড়াছড়ি ছিল । ক্ল্যারা যখন বসার ঘরে প্রবেশ করে, তখন ওকে দেখে আমার মনে হলো কোনো উর্বশী দেবীর আবির্ভাব ঘটেছে । আমি জানি, এরকম ভাবা আমার মোটেও উচিত নয় এবং কথা বলে আমি রীতিমতো নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছি । কিন্তু বিষয়টা সেই রকম ছিল ।
পরবর্তী দিনগুলো ভালো-মন্দ মিশিয়ে ছিল । আমরা দু’জনে মিলে কয়েকটা সিনেমা দেখেছি, গড়ে প্রায় প্রতিদিন একটা করে । আমরা ভালোবাসার নীল যমুনায় ডুব-সাঁতার খেলেছি (বলা বাহূল্য, ক্ল্যারার জীবনে আমিই প্রথম পুরুষ যে ওর সঙ্গে একই বিছানায় শুয়েছে – হয়তো আকস্মিক ভাবে, নতুবা নিয়ম অনুযায়ী । তবে পরবর্তীতে এর জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে) । এছাড়া আমরা বিভিন্ন স্থানে হাঁটাহাঁটি করেছি, আমি ক্ল্যারার এক বান্ধবীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, এমনকি দু’টো ভয়ংকর অনুষ্ঠানে গিয়েছি । আমি তাকে বার্সেলোনায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং প্রস্তাব দিয়েছি যে, ইচ্ছে করলে সে আমার সঙ্গে একত্রে থাকতে পারে । অবশ্য সেই মুহূর্তে আমি জানতাম আমার প্রস্তাবের জবাব সে কি দিবে । যাহোক, এক মাস পরে আমি এক রাতে বার্সেলোনার ট্রেনে উঠে বসি । আমার মনে আছে, সে রাতের ট্রেনের ভ্রমণ ছিল অত্যন্ত বাজে এবং রীতিমতো জঘন্য ।
তার কিছু দিন পরে ক্ল্যারা এক চিঠিতে বিশদ জানিয়েছে । সেই চিঠি ছিল আমাকে লেখা ওর সবচেয়ে দীর্ঘ চিঠি । আমি ভেবে পাই না, কেন সে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়নি । হয়তো আমি ওকে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে ফেলেছিলাম (আমি বলেছিলাম, আমরা না হয় একসঙ্গে থাকবো) । তবে যা হবার, ইতিমধ্যে তা হয়ে গেছে । তারপর আমরা তিন থেকে চার বার টেলিফোনে কথা বলেছি । আমরা মনে হয় সেই সময়ে আমি ওকে একটা চিঠি লিখেছিলাম । সেই চিঠির পরতে পরতে একদিকে ছিল ক্ষোভ আর অপমান এবং অন্যদিকে ছিল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ । একবার আমি যখন মরক্কো গিয়েছিলাম, তখন আলজিয়ার্স্ শহরের হোটেল থেকে, যেখানে আমি অবস্থান করেছিলাম, ওকে টেলিফোন করেছিলাম । সেই সময় আমরা ভদ্রতার সঙ্গে কথা বলেছি । ক্ল্যারার মতে নিদেন হলেও সেদিনের আলাপ ছিল শালীনতার মধ্যে সীমাবদ্ধ । নাকি এ ধারণা আমার ?
কয়েক বছর পরে ক্ল্যারা ওর বিগত জীবনের অনেক ঘটনা আমাকে বলেছে । সেসব ঘটনা আমি আগে কখনো শুনিনি বা জানিনি । তারপর আরো কয়েক বছর পরে সে এবং তার বান্ধবী মিলে আমাকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছে । এতে আমাদের ছাড়াছাড়ির ঘটনাও বাদ যায়নি । যেহেতু ছাড়াছাড়ির ব্যাপারে আমার ভূমিকা ছিল গৌণ, তাই সেসব ঘটনা তাদের কাছে, এমনকি আমার কাছেও কোনো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেনি । অবশ্য এ ধরনের মন্তব্য করাটা খুব সহজ নয় । কেননা আমাদের বাগদান ভেঙে যাওয়ার খুব বেশি পরে নয় (আমি জানি, বাগদান শব্দটা হয়তো অতিশয়োক্তি, কিন্তু এই মুহূর্তে এর চেয়ে ভালো এবং মোক্ষম শব্দ আমার মনে আসছে না), ক্ল্যারা অন্য একজনের গলায় মালা পড়িয়েছিল । পরবর্তীতে যখন আমি ক্ল্যারার শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তখন সেই সৌভাগ্যবান লোকটির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল ।
কিন্তু সেই ঘটনার আগে ক্ল্যারার মানসিক সমস্যা ছিল । তখন সে ঘুমের ভেতর স্বপ্নে ইঁদুর দেখতো, এমনকি রাতের বেলা শোবার ঘরে ইঁদুরের চলাফেরার শব্দ শুনতো । বিয়ের আগে ইঁদুরের ভয়ে কয়েক মাস সে শোবার ঘরের বিছানা ছেড়ে বসার ঘরের সোফায় ঘুমিয়েছে । আমার ধারনা হয়েছিল, বিয়ের পরে ইঁদুরগুলো পালিয়ে গিয়েছে ।
যাহোক, ক্ল্যারা বিয়ে করেছে এবং স্বামী তার কাছে বড্ড প্রিয় এবং আদরের । ভদ্রলোক সবাইকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এবং সেই তালিকায় ক্ল্যারার নামও ছিল । এক বা দু’বছর পরে, আমার সঠিক মনে নেই, ক্ল্যারা বলেছিল যে, ওদের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে । কিন্তু আশ্চর্য্য, এই কথাটা আমি বেমালুম ভুলে গেছি । তবে বিচ্ছেদটা আপোসের মাধ্যমে হয়নি । লোকটি একদিন চিৎকার-চেঁচামেচি করেছিল এবং তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ক্ল্যারাও কন্ঠস্বর সপ্তমে তুলেছিল । একসময় উত্তেজিত হয়ে ক্ল্যারা তার স্বামীকে সজোরে চড় মেরেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে লোকটিও প্রচন্ড এক ঘুষিতে ক্ল্যারার চোয়াল ভেঙেছিল । মাঝে মাঝে আমি যখন একাকী থাকি এবং অনিদ্রায় সময় কাটাই, সেই সময় বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে আমি বাতি জ্বালাতে আলসেমী করি এবং তার বদলে ক্ল্যারার কথা ভাবতে থাকি । সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল । তখন আমার কাছে ক্ল্যারার ঝুলন্ত চোয়ালের মলিন মুখটা, যা সে নিজের হাতে পুনরায় প্রতিস্থাপন করতে পারেনি, ভেসে ওঠে । তাই সে এক হাতে চোয়াল ধরে এবং অন্য হাতে গাড়ি চালিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে ছুটে গিয়েছে । সেই দৃশ্যটা আমি হাস্যকর ভাবতে চাই, কিন্তু পারি না ।
তবে আমার কাছে ক্ল্যারার বিয়ে রাত ছিল হাস্যকর । বিয়ের আগের দিন ওর জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল । আমার ধারনা, বিয়ের দিনও সে অস্ত্রোপচারের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি । এমনও হতে পারে, সে তেমন অসুস্থতা অনুভব করেনি । আমি কখনই তাকে জিজ্ঞেস করিনি, বাসর রাতে স্বামীকে সে আদৌ খুশি করতে পেরেছিল কি না । আমার মনে হয় বিয়ের আগেই তারা সেই কাজ সেরে ফেলেছে । কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না । এসব কথাবার্তা শুধু আমাকে ঘিয়ে, ক্ল্যারাকে নিয়ে নয় ।
যাই হোক না কেন, বিয়ের এক বা দু’বছর পরেই স্বামীর সঙ্গে ক্ল্যারার বিচ্ছেদ ঘটে । বিচ্ছেদের পরে ক্ল্যারা পুনরায় লেখাপড়া শুরু করে । তবে সে ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারেনি । তাই সে অন্য অনেক বিষয়ই চেষ্টা করেছে, যেমন ফটোগ্রাফি, আবারও অংকন বিদ্যা (আমি জানি নান কেন, তবে তার মন বলতো সে একজন ভালো অংকন শিল্পী), সঙ্গীত, টাইপিং, আই-টি এবং অন্য বিষয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা করেছে । এসব বিষয়ে ডিপ্লোমা থাকলে হয়তো তার জন্য চাকুরী পাওয়া সহজ হবে । তখন ছেলেমেয়েদের চাকুরি পাওয়া অনেকটা সোনার হরিণ পাওয়ার মতো দূর্লভ ছিল । যেহেতু স্বামীর দৈহিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে, তাই সে চাকুরির মধ্যে ডুবে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ।
ক্ল্যারার জীবনে পুনরায় ইঁদুর ফিরে আসে এবং সেই সঙ্গে আসে বিষণ্নতা ও অলৌকিক অসুস্থতা । প্রথম দুই থেকে তিন বছর আলস্যারের চিকিৎসা করা হয়েছিল । একসময় ডাক্তার বুঝতে পারে যে, আসলে পাকস্থলীতে তেমন কোনো অসুখ হয়নি । সেই দুঃসময়ে ল্যুইয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয় । ল্যুই ছিল একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা । পরিচয়ের পর থেকে তারা একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করে। ল্যুই একসময় ক্ল্যারাকে ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য তাগিদ দেয় ।
ক্ল্যারার বান্ধবীদের ভাষ্য মতে জানা যায় যে, অবশেষে ক্ল্যারা তার ভালোবাসার আসল মানুষটির সন্ধান পেয়েছে । তারা বেশ দীর্ঘ সময় একসঙ্গে বসবাস করে । ক্ল্যারা একটা অফিসে চাকুরী পেয়েছে। অফিসটা ছিল লিগ্যাল ফার্ম, কিংবা এ জাতীয় কোনো এজেন্সি । তার কাজ ছিল চমকপ্রদ । ক্ল্যারা নিজেই বলেছে, শেষপর্যন্ত সে মনের মতো চাকুরি পেয়েছে এবং সুন্দর পথে জীবন চলছে ।
ল্যুই ছিল খুবই ভদ্র (সে কখনো ক্ল্যারাকে মারধর করেনি), সংস্কৃতিমনা (আমার মনে হয় সে ছিল কুড়ি লক্ষ স্পেনিয়ার্ডের একজন, যারা ক্রমান্বয়ে মোৎজার্টের সমস্ত সঙ্গীতের সুর ক্রয় করেছিল) এবং ধৈর্য্যশীল (দিন ও রাত, এমনকি বন্ধের সময়েও কান পেতে সে মনোযোগের সঙ্গে ক্ল্যারার সব কথা শুনতো) । নিজের সম্পর্কে বলার মতো ক্ল্যারার মুখে কোনো কথা ছিল না । কিন্তু ল্যুইয়ের প্রশংসা করতে সে কখনো একঘেঁয়েমী অনুভব করেনি । এছাড়া সুন্দরী প্রতিযোগিতায় পুনরায় অংশ নেওয়ার জন্য অস্থির হয়নি । তবে সে মাঝে মাঝে প্রতিযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প করতে পছন্দ করতো। কিন্তু এখন তার কথাবার্তার মূল বিষয় হলো বিষণ্নতা এবং মানসিক অস্থিরতা । একসময় সে মনের ভেতর যে ছবি আঁকতে চেয়েছিল, শেষপর্যন্ত তা আঁকা হয়নি ।
আমি জানি না, কেন ক্ল্যারা এবং ল্যুইয়ের কোনো সন্তান হয়নি । হয়তো সন্তান নেওয়ার মতো তাদের অফুরন্ত সময় এবং মানসিকতা ছিল না । অথচ ক্ল্যারার মতে, সন্তানের জন্য ল্যুই রীতিমতো পাগলামি করতো । ক্ল্যারা পড়াশুনা করে, গান শুনে (মোৎজার্ট এবং পরবর্তীতে অন্যান্য সঙ্গীত শিল্পীদের) এবং ছবি তুলে সময় কাটাতো । তার তোলা ছবি সে কখনই কাউকে দেখাতো না । নিজস্ব ভঙ্গিতে সে তার স্বাধীনতাকে উপভোগ করা এবং নতুন কিছু শেখার জন্য চেষ্টা করতো ।
একত্রিশ বছর বয়সে ক্ল্যারা অফিসের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে রাত্রি যাপন করেছিল । এটা স্বাভাবিক ঘটনা, যা হরহামেশা ঘটে থাকে এবং এটা কোনো বড় ধরনের সমস্যা নয়, বিশেষ করে দু’জনের জীবনে । কিন্তু ক্ল্যারা একটা মস্ত বড় ভুল করেছে । সেই রাতের ঘটনা সে ল্যুইকে বলেছে এবং উভয়ের মধ্যে রণক্ষেত্র তৈরি হয় । রাগে-ক্রোধে ল্যুই চেয়ার এবং দেওয়ালে ঝুলানো একটা সুন্দর পেইন্টিং, যা সে সখ করে কিনেছিল, ভেঙে ফেলে । যখন-তখন প্রচুর পরিমানে সুরা পান করে মাতাল হতো এক মাস সে ক্ল্যারার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি । পরবর্তীতে যদিও তারা নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির সুরাহা করে মিলমিশ করেছিল, তবে ক্ল্যারার মতে সেদিন থেকে তাদের দাম্পত্য জীবনে স্বাভাবিকতা ছিল না । তাই তাদের সংসারে আগের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সমুদ্রের ধারে ছোট এক শহরে বেড়াতে গয়েছিল । কিন্তু সেই বেড়ানোটা ছিল গতানুগতিক এবং রীতিমতো হতাশাব্যঞ্জক ।
ক্ল্যারার বয়স যখন বত্রিশ বছর, তখন থেকেই তার জৈবিক ক্ষুধা শূণ্যের কোঠায় নেমে যায় । তেত্রিশ বছর বয়সের অল্প কিছুদিন আগে ল্যুই তাকে বলেছে যে, সে তাকে অত্যন্ত গভীর ভাবে ভালোবাসে, সম্মান করে এবং কোনোদিনই তার কথা ভুলবে না । কিন্তু গত কয়েক মাস থেকে অফিসের এক মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । মহিলা তালাকপ্রাপ্তা এবং তার সন্তান আছে । সে খুবই ভালো এবং বোঝাপড়ার মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই । তাই সে অই মহিলার কাছে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছে এবং তার সঙ্গে বাস করবে ।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে ক্ল্যারা এবং ল্যুয়ের বিচ্ছেদটা ভালো ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে (এই প্রথম কেউ একজন ক্ল্যারাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে) । ছাড়াছড়ির কয়েক মাস পর আবার বিষণ্নতা এসে তাকে গ্রাস করে এবং অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মানসিক চিকিৎসা করিয়েছে । কিন্তু সেই চিকিৎসা তাকে খুব বেশি সুস্থ করে তুলতে পারেনি । যদিও সে অন্য কোনো পুরুষ, এমনকি আমার সঙ্গে কোনো দৈহিক সম্পর্ক রাখতে অনিচ্ছুক ছিল, তবে যেসব ঔষধ তাকে দিয়েছিল, সেগুলো তার জৈবিক চাহিদাকে আরোও বেশি নির্বাণ করে দিয়েছিল । সে পুনরায় ইঁদুরের কাহিনী বলা শুরু করে । ইঁদুরগুলো তাকে কোনো মতেই একা থাকতে দেয়নি । সে যখন ঘাবড়ে যেত, তখন বারবার বাথরুমে ঢুকতো (আমাদের প্রথম রাতে সে নিদেন হলেও দশ বার বাথরুমে গিয়েছিল) । সে তৃতীয় পুরুষে কথা বলা শুরু করে । সত্যি বলতে কি, একবার ক্ল্যারা আমাকে বলেছিল যে, তার মধ্যে তিনজন ক্ল্যারা বসবাস করে । একজন ছোট্ট একটা মেয়ে, দ্বিতীয় জন পরিবারের চাপে পড়ে বুড়ো দাসী এবং তৃতীয় জন সে নিজে, যুবতী এবং বাস্তবের ক্ল্যারা । বাস্তবের এই ক্ল্যারা শহর থেকে পালিয়ে অনেক দূরে কোথাও যেতে চায় । তর ইচ্ছে সে মনের মতো চিত্রাঙ্কণ করবে, ছবি আঁকবে, ঘুরে বেড়াবে এবং এসব করেই সে বেঁচে থাকতে চায় । আমাদে রএক সঙ্গে থাকার কয়েকদিন পরে আমি ওর জীবন নিয়ে ভীত হয়ে পড়ি । মাঝে মাঝে আমি ওকে একা রেখে বাজারে যেতাম না । কেন জানি আমার ভয় হতো, বাজার থেকে ফিরে এসে হয়তো ওকে জীবিত পাবো না । যাহোক, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমার মন থেকে ভয়টা হ্রাস পেতে শুরু করে । একসময় আমি বুঝতে পেরেছি (অথবা নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি), ক্ল্যারা আত্মঘাতী হবে না । সে অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে স্বেচ্ছায় ঝাপ দিবে না । আসলে সে এসব কিছুই করবে না ।
আমি অল্প কিছুদিন পরে ক্ল্যারাকে ছেড়ে চলে আসি । তবে এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ক্ল্যারাকে ঘনঘন টেলিফোন করে ওর খোঁজখবর নেব । এছাড়া ওর একজন ঘনিষ্ট বান্ধবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবো, যাতে সে মাঝে মাঝে ক্ল্যারার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাকে ধারনা দিতে পারে । এই যোগাযোগের ফলে আমি ক্ল্যারা সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় জানতে পারি । তা নাহলে হয়তো কোনোদিনই আমি জানতে পারতাম না । যদিও আমার মানসিক শান্তির জন্য সেসব বিষয়গুলো কোনো ভূমিকা রাখেনি, তবে এমন ধরনের খবর ছিল, যা অহংকারীরা সব সময় এড়িয়ে যেতে চায় ।
একসময় ক্ল্যারা কাজে ফিরে যায় (নতুন যেসব ঔষধ সে শুরু করেছিল, সেগুলো তার চেহারার জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে) এবং অল্প কিছুদিন পরে দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য পুরস্কার হিসেবে অফিস তাকে আন্দালুসিয়ার আরেকটা শহরে বদলি করে । তবে সেই শহর খুব বেশি দূরে ছিল না । সেখানে যাওয়ার পরে সে ব্যায়ামাগারে যাওয়া আরম্ভ করে (সতের বছর বয়সে আমি সুন্দর বলতে যা বুঝতাম, চৌত্রিশ বছর বয়সী ক্ল্যারার চেহারায় তেমন সৌন্দর্যতা নেই) এবং সেখানে সে কয়েকজন নতুন বন্ধু-বান্ধব খুঁজে পেয়েছে । এভাবে সে প্যাকোর সঙ্গে পরিচিত হয় । প্যাকো ছিল তার মতো ডিভোর্সী ।
অবশেষে একদিন ক্ল্যারা এবং প্যাকো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । শুরুতে প্যাকো ক্ল্যারার ছবি এবং চিত্রাঙ্কণ সম্পর্কিত মতামত জানার জন্য সবাইকে বলে বেড়াত । তবে যারা তার কথা শুনতে আগ্রহী ছিল, সে শুধু তাদের বলতো । ক্ল্যারা ভাবতো, প্যাকো একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এবং তার দৃষ্টি ভঙ্গি অন্যদের থেকে আলাদা । যাহোক, ধীরে ধীরে ক্ল্যারার চিত্রকর্মের প্রতি ল্যুইয়ের আকর্ষণ কমতে থাকে এবং একসময় সে একটা সন্তানের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে । তখন ক্ল্যারার বয়স পঁয়ত্রিশ বছর । স্বামীর ইচ্ছের কথা শোনার পর প্রথমে সে কোনো উৎসাহ প্রকাশ করেনি । কিন্তু পরবর্তীতে সে রণে ভঙ্গ দয়ে স্বামীর চাওয়াটাকে মূল্য দিয়েছে । তাদের সংসারে একজন নবাগতের আগমন ঘটে । ক্ল্যারার কথা অনুযায়ী, সেই বাচ্চার জন্য সে আকুল আকাঙ্খা অনুভব করে । অথচ তার বান্ধবীদের ভাষ্য মতে, সে আরোও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, তা যা-ই হোক না কেন ।
কোনো এক অনুষ্ঠানে, যা এই গল্পের খাতিরে নিষ্প্রয়োজন, আমি একবার ক্ল্যারার শহরে রাত্রিযাপন করেছি । হোটেল থেকে আমি ওকে ফোন করেছিলাম । পরদিন আমাদের দেখা করার কথা হয়েছিল । যদিও আমার সে রাতেই ওর সঙ্গে দেখা করতে প্রবল ইচ্ছে করেছিল, কিন্তু আমাদের বিগত দিনের ঘটনার জন্য আমি জোড়াজুড়ি করিনি । কেননা হয়তো কোনো কারণে সেই ঘটনা পর থেকে সে আমাকে শত্রু ভাবতে শুরু করেছে ।
ক্ল্যারাকে দেখে কিছুতেই চেনা যাচ্ছিল না । শরীরে মেদ জমেছে এবং অত্যধিক রূপচর্চ্চা করার পরও তাকে কেমন যেন ভাঙাচোরা দেখাচ্ছিল । ওর বিধ্বস্ত চেহারার জন্য সময় দায়ী নয়, বরং হতাশা দায়ী, যা আমাকে রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছিল । আমি কখনই ভাবিনি যে, কোনো কিছুর জন্য ক্ল্যারার উচ্চাকাঙ্খা থাকতে পারে । কেউ যদি উচ্চাকাঙ্খা না করে, তাহলে কেন সে হতাশ হবে ? ক্ল্যারার হাসি আগের মতো নেই, বদলে গেছে । আগে তার হাসি ছিল উষ্ণ, কিন্তু স্নিগ্ধ । সেই বিশেষ ধরনের হাসি সাধারণতঃ মফস্বল শহরের মেয়েদের চোখেমুখে লেগে থাকে । কিন্তু এখন তার হাসির আড়ালে রুক্ষতা এবং দূর্বার ক্রোধের ছায়া লুকিয়ে আছে । যাহোক, বোকাদের মতো আমরা একে অপরকে গালে চুমু দিয়েছি । কয়েক মুহূর্ত আমাদের মাঝে নীরবতার অদৃশ্য দেওয়াল ছিল । তখন আমাদের ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে কোনো শব্দ বের হয়নি । একসময় আমি নীরবতার দেওয়াল ভাঙি । আমি তার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করি । ক্ল্যারা বললো, তার ছেলে ডে কেয়ারে আছে । তারপর আমার ছেলের কুশলাদি জিজ্ঞেস করে । আমি বললাম, সে ভালো আছে । একসময় আমরা উভয়েই বুঝতে পারি যে, আলাপের প্রসঙ্গ না পাল্টালে বেশি দূর এগোনো যাবে না এবং আলাপের সময়টুকুতে একঘেঁয়েমী এসে গ্রাস করবে । আমাকে দেখতে কেমন লাগছে ? হঠাৎ ক্ল্যারা জিজ্ঞেস করে । তার কন্ঠস্বর আমার কানে এমন শোনালো যেন সে আমাকে বলছে, আমি যেন তাকে চড় দিই । কিন্তু আমি যন্ত্রের মতো সাবলীল ভঙ্গিতে বললাম, আগের মতো । আমার মনে আছে, সেদিন আমরা কফি পান করেছিলাম । তারপর দু’জনে হেঁটে বড় রাস্তায় গিয়েছিলাম । রাস্তার দু’পাশে ছিল সারিবদ্ধ গাছ । সেই রাস্তা স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছে । আমরা যখন স্টেশনে পৌঁছি, তখন আমার ট্রেন প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল । আমরা স্টেশনের দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় নিয়েছিলাম এবং সে-টাই ছিল আমাদের শেষ দেখা ।
যাহোক, ক্ল্যারার মৃত্যুর আগে আমরা কয়েকবার টেলিফোনে কথা বলেছি । তখন আমি নিয়ম করে তিন থেকে চার মাস অন্তর ফোন করতাম । আমি শিখেছিলাম যে, অযথা কারোর ব্যাক্তিগত অথবা গোপন বিষয়ে অতি উৎসাহিত হওয়া মোটেও উচিৎ না (অনেকটা পানশালায় বসে আগুন্তুকের সঙ্গে আলাপ করার সময় খেলায় মশগুল থাকার মতো) । তাই আমরা আমাদের পরিবার, ছেলেদের স্কুল, অথবা তার চাকুরী নিয়ে আলাপ করতাম । তখনও সে আগের অফিসে কাজ করতো । দীর্ঘ সময় একই অফিসে কাজ করার সুবাদে ক্ল্যারা তার অন্যান্য সহকর্মীদের ব্যাক্তিগত অনেক কথা জানতো । এছাড়া বড় সাহেবদের নানা কিসিমের গোপন সমস্যা সম্পর্কে সে রীতিমতো ওয়াকিবহাল ছিল । এসব গোপন তথ্য জানার জন্য ক্ল্যারা নিজের ভেতর একধরনের আনন্দ অনুভব করতো । একবার আমি তার স্বামীর প্রসঙ্গে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু সে আমাকে বলার সুযোগ দেয়নি । আমি বলেছি, অবশ্যই ভালোটা তোমার প্রাপ্য । সে-টা আশ্চর্য্যজনক, জবাবে ক্ল্যারা বলেছে । আশ্চর্য্যজনক কি ? সঙ্গে সঙ্গে আমি জিজ্ঞেস করি । এ-টা আশ্চর্য্যজনক যে, তোমার এবং সবারই তা বলা উচিৎ । তাড়াতাড়ি আমি বিষয় বদলাতে চাইলাম এবং বললাম, আমার কাছে আর কোনো খুচরো নেই । বলার পরপরই আমি রিসিভার যথাস্থানে রেখে টেলিফোনের সংযোগ কেটে দিই । আমি বুঝতে পেরেছিলাম, অযথা ক্ল্যারার সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়াতে যাচ্ছি । সেই সময় আরেকটা দীর্ঘ অজুহাত শোনার মতো ধৈর্য্য আমার ছিল না ।
খুব বেশি দিন আগে নয়, এক রাতে ক্ল্যারা আমাকে বলেছে যে, তার মরণব্যধি ক্যানসার হয়েছে । কথা বলার সময়ে তার কন্ঠস্বর ছিল হিমশীতল । মনে আছে, ক্ল্যারাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ইতিমধ্যে সে ডাক্তার দেখিয়েছে কি না । আমার গলার স্বর এমন অদ্ভুত শোনাচ্ছিল যেন নিজে অথবা প্যাকোর সাহায্য নিয়ে সে তার ক্যানসার সনাক্ত করেছে । অবশ্য ডাক্তার দেখিয়েছি । ক্ল্যারা জোর দিয়ে বললো। টেলিফোনের অপর প্রান্তে আমি একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, যা অনেকটা কাকের অমঙ্গলের ডাকের মতো । অথচ ক্ল্যারা হাসছিল । আমাদের সন্তানদের নিয়ে আমরা কিছু সময় আলাপ করি । একসময় আমার মনে হয়েছে, ক্ল্যারা হয়তো একা আছে অথবা সে একঘেঁয়েমীর শূন্যতা তাকে ঘিরে ধরেছে । তাই সে আমার জীবন সম্পর্কে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করে । তৎক্ষণাৎ আমি আমার জীবন নিয়ে কাল্পনিক গল্প তৈরি করি । আগামি সপ্তাহে আবার টেলিফোন করার অঙ্গীকার করে আমি সংযোগ কেটে দিই । সেই রাতে আমি কিছুতেই ভালো করে ঘুমোতে পারিনি । একের এক এক দুঃস্বপ্ন এসে আমাকে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে । একবার হঠাৎ আমি আর্তচিৎকার করে জেগে উঠি । ক্ল্যারা আমাকে মিথ্যা বলেছে । তার কোনো ক্যানসার হয়নি । তবে নির্ঘাত অন্য কিছু হয়েছে । বিগত কুড়ি বছর ধরে যেভাবে ভালো-মন্দ মিলিয়ে ঘটনাগুলো ঘটছে, ঠিক সেই রকম । কিন্তু কিছুতেই তার ক্যানসার হয়নি । তখন ভোর পাঁচটা বাজে । আমি ঘুম থেকে উঠে প্যাসিও ম্যারিতিমো হেঁটে যাই । বাতাস আমার পেছন থেকে অনুসরণ করেছে, যা বিরল ঘটনা । কেননা বাতাস সমুদ্রের দিক থেকে আসার কথা । তবে কদাচিৎ সমুদ্রের বিপরীত দিক থেকে বাতাস আসে । প্যাসিওর একটা বিশাল ক্যাফের পাশে টেলিফোন বুথের কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি হেঁটে যাই । চত্বরটা ফাঁকা ছিল । চেয়ারগুলো টেবিলের সঙ্গে শিকল দিয়ে বাঁধা । একটু দূরে সমুদ্রের কাছে বেঞ্চের ওপর গৃহহীন কেউ একজন ঘুমিয়ে ছিল । লোকটি ক্ষণে ক্ষণে পা নাড়ছিল এবং তার সারা শরীর কাঁপছিল, যেন সে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে ।
আমার ঠিকানার বইয়ে ক্ল্যারার শহরের মাত্র একজনের নাম্বার আছে । আমি তাকে ফোন করি । অনেকক্ষণ পরে অপর প্রান্ত থেকে একজন মহিলার কন্ঠ ভেসে আসে । আমি তাকে আমার পরিচয় বলার পর হঠাৎ আমার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হয়নি । আমি ভেবেছি, মহিলা হয়তো রিসিভার রেখে দিয়েছে । কিন্তু একসময় আমি টেলিফোনের অপর প্রান্তে লাইটারের ক্লিক শব্দ শুনতে পাই এবং আমার মনে হলো কারোর মুখের ভেতর থেকে ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে একরাশ ধোঁয়া বেরিয়ে এলো । আপনি কি এখনো আছেন ? মহিলা জিজ্ঞেস করে । হ্যাঁ, আমি বললাম । আপনি কি ক্ল্যারার সঙ্গে কথা বলেছেন ? হ্যাঁ, আমি পুনরায় বললাম । সে কি আপনাকে বলেছে যে, তার ক্যানসার ধরা পড়েছে ? হ্যাঁ, আমি আবারো বললাম । তাহলে, কথাটা সত্যি ।
ক্ল্যারার সঙ্গে এত বছরের চেনাশুনা এবং আমার জীবনের সব ঘটনা, তবে বেশির ভাগ ঘটনা ওকে কেন্দ্র করে নয়, যেন আচমকা মাথার ওপর ভেঙে পড়ে । আমি জানি না, হাজার মাইল দূর থেকে সে টেলিফোনে আর কি বলেছে । আমার মনে হয়, নিজের মনের সঙ্গে বোঝাপড়া না করতে পেরে আমি হয়তো রুবেন দারিওর কবিতার মতো কেঁদে ফেলবো । পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমি হন্য হয় সিগারেট খুঁজতে থাকি । সেই সময় বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা, যেমন ডাক্তার, অপারেশন, ম্যাসেকটমি, আলাপ-আলোচনা, নানা লোকের নানা মত, বিচারবুদ্ধি এবং ক্ল্যারার কার্যকলাপ, যা আমি জানি না অথবা অনুভব করতে পারি না বা সাহায্য করতে অপারগ, আমার কানে এসে পৌঁছুতে থাকে ।
আমি যখন টেলিফোন রেখে দিই, তখন তাকিয়ে দেখি গৃহহীন লোকটি মাত্র পাঁচ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে আছে । তার উপস্থিতি আমি টের পাইনি । লোকটি দীর্ঘাঙ্গী, বাইরের আবহাওয়ার তুলনায় সে বেশি পরিমানে গরমের মোটা কাপড় পড়েছে । লোকটি কটমট করে আমার দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে, যেন সে সামনের জিনিস ভালো করে দেখতে পায় না অথবা হঠাৎ করে আমার সরে যাওয়ার জন্য সে আতংকিত । আমি এতই দুঃখিত যে, কোনো ধরনের ভয় আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি । যাহোক, পরবর্তীতে আমি শহরের আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটেছি । হাঁটার সময় আমি ক্ষণিকের জন্য ক্ল্যারার প্রসঙ্গ বেমালুম ভুলে যাই । এই ভুলে যাওয়াটা আমার জীবনে প্রথম এবং একমাত্র ঘটনা ।
তারপর আমরা টেলিফোনে প্রায়শই কথা বলেছি । এমন অনেক সপ্তাহ গেছে, যখন আমি দিনে দু’বার ফোন করেছি । আমাদের কথাবার্তা ছিল সংক্ষিপ্ত এবং বাল্যসুলভ । আমি কি বলতে চাইতাম, তা বুঝতে পারতাম না । তাই মনে যা হতো এবং মুখে যা আসতো, তাই বলতাম । আমার মস্তিস্কে যে জিনিসটা জ্বলে উঠতো, তা আমার কাছে মনে হতো অর্থহীন এবং সে কথা শুনলে ক্ল্যারা নির্ঘাত হাসবে । একবার আমি খুব ভাবপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম এবং হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো নিয়ে রীতিমতো অংক কষেছিলাম । কিন্তু ক্ল্যারা সেখানে হস্তক্ষেপ করেছিল । আমি ওর অভিসন্ধি বুঝতে পেরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম । যেই না অপারেশনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছিল, আমার ফোন করার মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল । একবার আমি ওর ছেলের সঙ্গে আলাপ করেছি । অন্য আরেক বার প্যাকোর সঙ্গে কথা হয়েছে । কন্ঠস্বর শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা দু’জনেই ভালো ছিল এবং আমার মতো হতচকিত অবস্থায় ছিল না । হয়তো আমার ধারণা ভুল ছিল । সত্যি কথা বলতে কি, আমার ধারণা আসলেই ভুল ছিল । এক বিকেলে ক্ল্যারা আমাকে বলেছে, আমার জন্য সবাই উৎকন্ঠায় ছিল । আমি ভেবেছিলাম আমাকে নিয়ে হয়তো ওর স্বামী এবং ছেলে চিন্তিত ছিল । আসলে অনেকে, যাদের সংখ্যা আমার ধারণার বাইরে । হাসপাতালে যাওয়ার আগের দিন আমি বিকেল বেলা ক্ল্যারকে ফোন করেছিলাম । প্যাকো ফোন ধরেছিল । তখন ক্ল্যারা ওখানে ছিল না । গত দু’দিন ধরে কেউ তাকে দেখেনি, কিংবা তার সঙ্গে কথাও বলেনি । তবে প্যাকোর কথাবার্তা এবং কন্ঠস্বরে মনে হয়েছে, ক্ল্যারা আমার সঙ্গে আছে । আমি সরাসরি তাকে বলেছি । ক্ল্যারা আমার সঙ্গে নেই । কিন্তু সারা রাত আমি অন্তরের গভীর থেকে আশা করেছি যে, ও যেন আমার অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসে । ঘরের বাতি জ্বালিয়ে আমি ওর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি । অবশেষে একসময় আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছি । স্বপ্নে একজন অপ্সরী এসে আমার সম্মুখে হাজির হয়েছে, কিন্তু সে ক্ল্যারা নয় । এই অনিন্দ্য সুন্দরীর গড়ন হালকা-পাতলা, দীর্ঘাঙ্গী, উরোজ দু’টো ছোট, লম্বা পা এবং গাঢ় বাদামী রঙের চোখ । এই রমনী কিছুতেই এবং কখনই ক্ল্যারা হতে পারে না । এই অপ্সরীর উপস্থিতি ক্ল্যারার স্মৃতিকে বিলোপ করা যাবে না, বরং ক্ল্যারাকে চল্লিশ বছর বয়সী কোনো ব্যর্থ এবং পরাজিত নারীতে রূপান্তরিত করা যাবে ।
ক্ল্যারা আমার অ্যাপার্টমেন্টে আসেনি ।
পরদিন আমি প্যাকোকে টেলিফোন করি এবং দু’দিন পরেও তাকে পুনরায় ফোন করি । ক্ল্যারার কোনো হদিশ নেই । তৃতীর বারের মতো আমি প্যাকোকে টেলিফোন করি । সে তার ছেলের গল্প করে এবং ক্ল্যারার আচার-আচরণ নিয়ে অভিযোগ করে । সে আরও বলেছে, প্রতি রাতেই ক্ল্যারার অনুপস্থিতির কারণে রীতিমতো উৎকন্ঠায় আছে । তার কন্ঠস্বর এবং আমাদের আলাপ যেদিকে যাচ্ছে, তা দেখে আমি অনায়াসে বলে দিতে পারি, সে আমার কাছ থেকে, অথবা অন্য কারোর কাছ থেকে, এমনকি যে কোনো অপরিচিত লোকের কাছ থেকে সামান্য বন্ধুত্বের প্রসারিত হাত কামনা করে । কিন্তু আমার মানসিক অবস্থা এমন নয় যে, আমি তাকে সেই ধরনের সান্ত্বনা, সহানুভূতি বা বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি ।
লেখক পরিচিতিঃ
দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক এবং কবি রোবের্তো বোলান্যিও ১৯৫৩ সালের ২৮ এপ্রিল চিলির সান্টিয়াগোতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা ছিলেন একজন ট্রাকচালক এবং মা ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা । জীবনের তাগিদে ১৯৬৮ সালে তাঁদের পরিবার মেক্সিকো সিটিতে বসতি গড়ে তোলেন । শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ভবঘুরে । কখনও ছিলেন চিলিতে, আবার কখনও ছিলেন মেক্সিকো, এল সালভাদর, ফ্রান্স কিংবা স্পেনে । তবে শেষপর্য্যন্ত স্পেনের বার্সেলানাতে বিয়ে করে তিনি সেখানেই থিতু হন । তবে সত্তর দশকের শুরুতে তিনি স্বদেশী বিপ্লবী কর্মান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের হাতে বন্দি হয়ে কারাগারে যান । সেখানে দু’জন কারারক্ষী ছিলেন তাঁর স্কুল জীবনের বন্ধু এবং তাদের সুবাদে তিনি মুক্তি লাভ করেন ।
বোলান্যিও কবিতা দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করেছিলেন । তবে চল্লিশ পেরিয়ে তিনি উপন্যাস এবং ছোটগল্প রচনা শুরু করেন । অল্প সময়ের মধ্যে তার সুখ্যাতি চারপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি বেশ কিছু পাঠক নন্দিত গ্রন্থ রচনা করেন । এগুলোর মধ্যে ‘দ্য শ্যাভেজ ডিটেক্টিভ’, ‘বাই নাইট ইন চিলি’ এবং মৃত্যু পরবর্তী প্রকাশিত উপন্যাস ‘২৬৬৬’ উল্লেখযোগ্য । এছাড়াও তার অন্যান্য খ্যাতনামা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অ্যামিউলেট’, ‘দ্য থার্ড রীচ’, ‘দ্য স্কেটিং রিঙ্ক’ এবং ‘ডিস্ট্যান্ট স্টার’ ইত্যাদি । ‘লাস্ট ইভিনিংস্ অন আর্থ’, ‘দ্য ইনসাফারেবল গ্যুচো’ এবং ‘দ্য সিক্রেট অফ ঈভিল’ তার ছোটগল্প সংকলন । ইংরেজিতে তার ছোটগল্প সংকলন ‘দ্য রিটার্ণ’ ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় । ‘রোমান্টিক ডগস্’ তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ । তিনি ‘দ্য শ্যাভেজ ডিটেক্টিভ’ উপন্যাসের জন্য দক্ষিণ আমেরিকার নোবেল প্রাইজ খ্যাত ‘রোমুলো গালিগাস’ পুরস্কার অর্জণ করেন । এছাড়া তিনি ‘২৬৬৬’ উপন্যাসের জন্য মরনোত্তর ‘ন্যাশনাল বুক ক্রিটিকস্ সার্কেল’ পুরস্কার লাভ করেন । তার লেখায় বারবার উঠে এসেছে ভালোবাসা এবং সুখ লাভের জন্য মানুষের চিরন্তন আকাঙ্খা এবং যৌবনের টালমাটাল জীবনকাহিনী । বিশ্ব বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস্’ তাকে তার যুগের সবচেয়ে বলিষ্ঠ এবং উল্লেখযোগ্য কন্ঠস্বর আখ্যায়িত করে । মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি লিভার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ২০০৩ সালের ১৫ জুলাই দেহত্যাগ করেন । মৃত্যুর পরে তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য ভুবনে ‘সুপার ষ্টার’ খেতাবে ভূষিত হন ।
‘ক্ল্যারা’ গল্পটি রোবের্তো বোলান্যিওর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প । গল্পটি একজন নারীর জীবন কাহিনী, যা একজন পুরুষ অধিবক্তার মাধ্যমে বলা হয়েছে । গল্পের নারী চরিত্র ‘ক্ল্যারা’ সারা জীবন মনের মতো ভালোবাসা খুঁজে ফিরেছে । কিন্তু শেষপর্যন্ত আসল ভালোবাসা তার কাছে অধরাই থেকে যায় । পাঠকমহলে তুমুল আলোড়িত এবং সমাদৃত এই গল্পটি হৃদয়বিদারক, হতাশার কালো চাদরে আবৃত এবং হারানোর বেদনায় সিক্ত ।
গল্পসূত্রঃ
‘ক্ল্যারা’ রোবের্তো বোলান্যিওর ইংরেজিতে একই শিরোনাম ‘ক্ল্যারা’ গল্পের অনুবাদ । স্পেনীশ ভাষা থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ক্রিস অ্যান্ড্রুস । ইংরেজিতে গল্পটি বিখ্যাত ‘নিউইয়র্কার’ ম্যাগাজিনে ২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং সেখান থেকে নেওয়া হয়েছে । পরবর্তীতে গল্পটি লেখকের ‘দ্য রিটার্ণ’ ছোটগল্প সংকলনে সন্নিবেশিত করা হয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ