মিখাইল বুলগাকভ'এর গল্প : নকশি তোয়ালে

অনুবাদ: মোস্তাক শরীফ 

গ্রামের রাস্তায় গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা কারো না থাকলে সে ব্যাপারে তাকে বলা-না বলা সমান কথা; কিছুই বুঝবে না। আর চালিয়ে থাকলে তাকে বরং সেটা মনে না করিয়ে দেয়াই ভালো। 

যদি অল্প কথায় বলতে হয়, আমার গাড়িচালক আর আমি গ্রাচিওভকা থেকে মারিয়োভো হাসপাতালের মাঝখানের বত্রিশ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছিলাম ঠিক চব্বিশ ঘণ্টায়। চব্বিশ ঘণ্টাটা এত টায়-টায় ছিল যে ভাবতেই কেমন যেন লাগে। ১৯১৬-র ১৬ সেপ্টেম্বর বেলা দুটোয় গ্রাচিওভকা নামের অসাধারণ সেই শহরের এক প্রান্তে শস্যের শেষ দোকানটির সামনে ছিলাম আমরা, আর অবিস্মরণীয় সেই ১৯১৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ঠিক দুটো পাঁচে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মারিয়োভো হাসপাতালের প্রাঙ্গনে--সেপ্টেম্বরের ঝুম বৃষ্টিতে দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে মিশে যাওয়া ঘাসের উপর।
ঠাণ্ডায় পা দুটো যেন জমে শক্ত হয়ে গিয়েছিল; এতটাই যে, হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর মনে মনে পাঠ্যবইয়ের পাতা উল্টে বোঝার চেষ্টা করছিলাম মাংশপেশি জমাট বেঁধে হাড়ের মতো শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো কোনো কিছু সত্যিই আছে, নাকি তার আগের রাতে গ্র্যাভিলোভকা গ্রামে ঘুমানোর সময় স্বপ্নে এ রোগটা আবিষ্কার করেছি আমি। ত্যাঁদড় এই সমস্যাটার ল্যাটিন নাম কী কে জানে! শরীরের প্রতিটি মাংসপেশি ব্যাথা করছিল--ঠিক দাঁতে ব্যাথার মতো। পায়ের আঙ্গুল সম্বন্ধে কী বলব, জুতোর মধ্যে অসাড় হয়ে ছিল সেগুলো, যেন কাঠের গুঁড়ি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, চিকিৎসা পেশা এবং পাঁচ বছর আগের ভার্সিটির রেক্টর বরাবর পাঠানো আবেদনপত্র দুটোরই নিকুচি করলাম ফিসফিসিয়ে--কাপুরুষের মতো। পুরোটা সময় ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল, যেন একটা ছাঁকনির মধ্য দিয়ে। স্পঞ্জের মতো ফুলে উঠেছিল আমার কোট। ডান হাতের আঙ্গুলে স্যুটকেসটা আঁকড়ে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, না পেরে বিরক্তিতে থুথু ফেললাম ভেজা ঘাসের উপর। কিছুই আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা ছিল না আঙ্গুলগুলোর। আর ঠিক তখনই, চিকিৎসাশাস্ত্রের তাক লাগানো সব বইয়ের জ্ঞানে গিজগিজ করা মাথার ভেতর থেকে রোগটির নাম আলগোছে ভেসে উঠল মনের মধ্যে--প্যালসি। ‘প্যারালাইসিস’--হতাশাভরে নিজের উদ্দেশে বললাম, খোদাই জানেন কেন। 

‘তোমার এসব রাস্তা চিনে উঠতে সময় লাগে,’ বিরক্তিভরে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে পাথরের মতো শক্ত, নীলচে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বিড়বিড় করলাম আমি, যদিও বিলক্ষণ জানি যে রাস্তার এই দশার জন্য বেচারা মোটেও দায়ী নয়। 

‘আহ, কমরেড ডাক্তার,’ সাদাটে গোঁফের নিচে আমার মতোই অসাড় ঠোঁটে জবাব দিল সে, ‘পনের বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি, কিন্তু এখনও এ রাস্তাটাকে সমঝে উঠতে পারিনি।’ 

ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জরিপ করলাম অমসৃণ দেয়ালের সাদা দোতলা হাসপাতাল, আমার সহকারীর বাড়ির কাঠের দেয়াল আর আমার নিজের ভবিষ্যৎ আবাসকে--ছিমছাম দোতলা একটা বাড়ি, যার জানালাগুলো সমাধিফলকের মতো রহস্যময় শূন্যতায় ভরা। লম্বা একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিরে। হঠাৎ করেই, ল্যাটিন শব্দের বদলে বহু পুরনো একটা স্মৃতি মাথার মধ্যে ঘা মারল। নীল স্টকিং পরা কেউ একজন দারুণ গলায় মিষ্টি কথাগুলো বলেছিল--বিদায়, বিদায়। অনেক অনেকদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হবে আবার, আহা, সোনালী-লাল বলশয় থিয়েটার, মস্কো, দোকানের জানালা ... আহা, বিদায়। 

‘এর পরেরবার ভেড়ার চামড়ার কোট পরব,’ অসাড় হাতে ফিতে ধরে স্যুটকেসটাকে টানতে টানতে তীব্র রাগে নিজেকেই বললাম আমি। ‘যদিও জানি, এর পরেরবার মানে অক্টোবরের মাঝামাঝি, কাজেই একটা নয়, পরতে হবে দুটো কোট। অবশ্য পরের একমাসের মধ্যে গ্রাচিওভকায় যাওয়ার দরকারও পড়বে না। তবু, চলার পথে আমাকে সত্যি সত্যি এক রাতের জন্য থামতে হয়েছিল, ভাবনাটাই কেমনধারা যেন ... 

মাইলপাঁচেক যেতে না যেতেই চারপাশটা যেন কবরখানার মতো অন্ধকার হয়ে এল ... রাত ... গ্রাবিলোভকায় থামতে হলো, এক স্কুলশিক্ষক আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। সকাল সাতটায় যাত্রা শুরু করলাম ফের, অথচ আসতে পারলাম মাত্র এটুকু। খোদা! হেঁটে এলেও এর চেয়ে আগে আসতে পারতাম এখানে। গাড়ির একটা চাকা আটকে গেল গর্তের মধ্যে, আরেকটা উঠে গেল উপরে, আমার স্যুটকেসটা দুম করে পড়ল পায়ের উপর। এদিক-ওদিক দুলতে লাগলাম আমরা দুজন, একবার সামনে হেলছি তো পরক্ষণে পেছনে। পুরোটা সময় ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল আর আমার হাড়গুলো যেন জমে বরফ হয়ে যাচ্ছিল। কেউ বিশ্বাস করবে, ধূসর আর জঘন্য এই সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিও ঠিক শীতকালের মতোই জমে যেতে পারে কেউ? অথচ এটাই সত্যি। 

ধীরে, একটু একটু করে মরে যাওয়ার সময় সেই একই, আদিঅন্তহীন একঘেয়েমি ছাড়া আর কী আছে দেখার! ডানদিকে ন্যাড়া, অসমান মাঠ আর ডানে খাটো ঝোঁপজঙ্গল, তার সামনে পাঁচ-ছ’টা ভাঙাচোরা বাড়ি। কোনোটাতে প্রাণের চিহ্ন নেই, নেই কোনো সাড়াশব্দও। 

শেষমেষ আলগা হলো স্যুটকেসটা, খসে পড়তে শুরু করল। উপুড় হয়ে থাকা ড্রাইভার সেটিকে ঠেলে আমার গায়ের উপর ফেলল। ফিতা ধরে সেটাকে সামলানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু হাতদুটো বেইমানি করল এবং বই আর নানা ধরনের আবর্জনায় পূর্ণ নচ্ছার জিনিসটা আমার পা দুটোর বারোটা বাজিয়ে দিয়ে হুড়মুড় করে পড়ল ঘাসের উপর। 

‘হায় খো...’ ভয়চকিত গলায় শুরু করতে যাচ্ছিল ড্রাইভার, যদিও আমি কোনো অভিযোগ করলাম না। আমার পা-তো ততক্ষণে কাঠের গুঁড়ি, কাঠের গুঁড়ির কি ব্যথা লাগে! 

‘এই যে, বাড়িতে কেউ আছেন? এই যে!’ রাতা মোরগ যেমন করে ডানা ঝাপটায় সেভাবে দু’হাত দু’দিকে নেড়ে গলা ফাটিয়ে ডাকল ড্রাইভার। ‘ডাক্তার সাহেবকে নিয়ে এসেছি আমি!’ 

সাথে সাথেই সহকারীর বাড়ির অন্ধকার জানালায় উঁকি দিল কয়েকটা মুখ। দুম করে একটা দরজা বন্ধ হল কোথাও এবং জরাজীর্ণ কোট আর বহু ব্যবহারে পুরনো বুট পরা একটা লোককে কেঁপে কেঁপে আসতে দেখা গেল আমাদের দিকে। তাড়াহুড়ো করে, সমীহের সাথে টুপিটা খুলল সে, তারপর ত্বরিৎ পায়ে এসে দাঁড়াল আমার সামান্য দূরে। খানিকটা সলজ্জ ভঙ্গিতে হেসে ফাটা গলায় আমাকে স্বাগত জানাল লোকটা: 

‘শুভদিন, কমরেড ডক্টর।’ 

‘কে ভায়া তুমি?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম। 

‘আমি ইয়েগোরিচ,’ নিজের পরিচয় দিল লোকটা। ‘এখানকার পাহারাদার। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমরা।’ এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে খপ করে আমার স্যুটকেসটা ধরল সে, এক টানে তুলে ফেলল কাঁধের উপর। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওর পেছনে চললাম--মানিব্যাগের খোঁজে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢোকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে। 

মানুষের জরুরি চাহিদা কিন্তু খুবই কম। প্রথম চাহিদা হচ্ছে আগুন। মস্কোতে থাকতে, যখন জেনেছিলাম আমাকে মারিয়োভো নামের সেই ধ্যাদ্দেড়ে গোবিন্দপুরে যেতে হবে--ঠিক করেছিলাম, ভদ্র-সভ্য লোকের মতো আচরণ করব। আমার ছেলেমানুষি চেহারা জীবনটাকে রীতিমতো অসহ্য করে তুলেছিল শুরুর দিকে। এ কারণেই নিজের পরিচয় দেয়ার সময় কখনোই বলতে ভুলতাম না যে আমি ডাক্তার অমুক। প্রত্যাশিতভাবেই, মানুষ চোখ বড় বড় করে বলত, ‘সত্যি? আমি ভেবেছিলাম আপনি এখনও ছাত্র।’ 

‘না, আমি পাস করে ফেলেছি,’ নিরস গলায় বলতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, এখনই চশমা পরা শুরু করতে হবে, করতেই হবে। কিন্তু আদতে চশমা পরার কোনো কারণ ছিল না, কারণ আমার দৃষ্টিশক্তি ছিল চমৎকার, চোখদুটো তখনও অভিজ্ঞতার মেঘে ঘোলাটে হয়ে যায়নি। মানুষের স্নেহ আর প্রশ্রয় মেশানো হাসিকে ঠেকানোর জন্য চশমা পরতে না পেরে সমীহ অর্জনের নতুন পথ ধরলাম। কথা বলতে শুরু করলাম গুরুগম্ভীরভাবে, চেষ্টা করলাম হুটহাট হাত-পা নাড়ানোর অভ্যাসকে এড়াতে, মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করা চব্বিশ বছরের যুবকের মতো দৌড়াতে নয়, চেষ্টা করলাম হাঁটতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি এতে--এখন বুঝতে পারি। 

এ কারণেই, নিজের সেই অলিখিত আচরণবিধি আর মানলাম না এ মুহূর্তে। জুতো খুলে জবুথবু হয়ে বসলাম আগুনের সামনে--পড়ার ঘরে নয়, সরাসরি রান্নাঘরে--যেন আমি এক অগ্নিউপাসক, চুলায় ফুটফাট জ্বলতে থাকা বার্চের ডালগুলো যেন তীব্র এক আকর্ষণে টানছিল আমাকে। 

বাম পাশে, ওল্টানো একটা গামলার উপর আমার বুটজোড়া রাখা, পাশেই রক্তাক্ত গর্দান নিয়ে পড়ে আছে চামড়া ছাড়ানো একটা মোরগ। তার নানারঙের পালকগুলো স্তূপ করে রাখা পাশেই। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া শরীর নিয়ে এরই মধ্যেই কীভাবে যেন জরুরি কয়েকটা কাজ সেরে নিয়েছি আমি। সাব্যস্ত হয়েছে যে, ইয়েগোরিচের বৌ--আকসিনিয়া নামের খাড়া নাকঅলা একটা মেয়ে--আমার রান্নাবান্না করবে। সে অনুসারে মোরগটাকে জবাই করে ফেলেছে সে এবং ওটাই হতে যাচ্ছে আমার খাবার। একে একে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে। আমার সহকারীর নাম দামিয়ান লুকিচ, আর দুই ধাত্রী প্যালাজিয়া ইভানোভনা আর আনা নিকোলায়েভনা। হাসপাতালটা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে আমাকে, যা থেকে নিশ্চিত হয়েছি, প্রয়োজনীয় সব জিনিসই এখানে আছে। ঝকঝকে, নিপাট এসব যন্ত্রপাতির অনেকগুলোরই কাজ যে কী সে সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণা না থাকার বিষয়টিও নিজের কাছে কবুল করতে হয়েছে। এগুলো যে কখনও হাতে ধরে দেখিনি তা-ই শুধু নয়, সত্যি বলতে কী, এর অনেকগুলো জীবনে কখনো দেখিনিও। 

‘হুম। আপনাদের যন্ত্রপাতিগুলো চমৎকার, সন্দেহ নেই,’ বিড়বিড় করে বিজ্ঞের মতো আওড়ালাম আমি। 

‘স্যার,’ মিষ্টি করে বলল দামিয়ান লুকিচ, ‘এ সবকিছুর কৃতিত্ব আপনার আগে যিনি ছিলেন সেই লিওপোল্ড লিওপোল্ডভিচ-এর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপারেশন করতেন তিনি।’ 

মনে হল যেন গা বেয়ে ঘামের শীতল একটা ধারা বয়ে গেল। বিষন্ন চোখে ঝকঝকে কাবার্ডগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। হাসপাতালের খালি ওয়ার্ডগুলোর ঘুরে ঘুরে দেখলাম, কমপক্ষে চল্লিশজন রোগী রাখা যাবে এখানে। 

‘লিওপোল্ড লিওপোল্ডভিচ কখনো কখনো পঞ্চাশজনকেও রাখতেন,’ স্বান্ত¦নার সুরে বলল দামিয়ান লুকিচ। আনা নিকোলায়েভনা নামের মাথাভর্তি ধূসর চুলের মহিলাটি বলে উঠল, ‘ডাক্তার সাহেব, আপনি দেখতে খুব অল্পবয়স্ক। আশ্চর্য, মনে হয় যেন একজন ছাত্র।’ 

ধুত্তোর ছাই - নিজেকে বললাম আমি--মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই কাজটা করছে তারা! দাঁতে দাঁত চেপে মুখে বললাম, ‘উম... মানে ... হুম ... আসলে আমাকে কিছুটা অল্পবয়স্ক দেখায়...’ 

এরপর ফার্মেসিতে চলে গেলাম সবাই। একনজর তাকিয়ে বুঝলাম, হেন ওষুধ নেই যা এখানে নেই। ফার্মাসির প্রায়ান্ধকার দুটো কক্ষ ম-ম করছে ভেষজ গাছগাছড়ার গন্ধে। তাকভর্তি নানারকমের ওষুধ সাজানো; বাদ যায়নি বিদেশি ওষুধও--যেগুলোর নাম, বলাই বাহুল্য, জীবনেও শুনিনি। 

‘লিওপোল্ড লিওপোল্ডভিচ আনিয়েছিলেন এগুলো,’ পেলাজিয়া ইভানোভনা গর্বভরে জানান দিলেন। 

এই লিওপোল্ড লোকটা এককথায় জিনিয়াস, ভাবলাম আমি। মারিয়োভো নামের শান্ত-সুন্দর এই গ্রামটাকে ফেলে চলে যাওয়া লিওপোল্ড নামের রহস্যময় মানুষটির প্রতি প্রবল ভক্তি অনুভব করলাম। 

কেবল আগুন নয়, নিজের অবস্থান খুঁজে নিতে হয় মানুষকে। মুরগির মাংস সাবাড় করেছি অনেকক্ষণ হলো। আমার বিছানায় খড় বিছিয়ে তার উপর চাদর পেতে দিয়েছে ইয়েগোরিচ। পড়ার ঘরে বাতি জ্বলছে। স্তব্ধ চোখে কিংবদন্তীর লিওপোল্ডের তিন নম্বর অর্জনটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি, সেটা হলো বইভর্তি এক শেলফ। কেবল সার্জারির ম্যানুয়ালই গুনলাম ত্রিশটির উপর--সব রুশ আর জার্মান ভাষায়। নিরাময়বিদ্যার এত্তো বই! আর চামড়ায় বাঁধানো অ্যানাটমির এতগুলো অ্যাটলাস! সত্যিই, চোখ সরানো দায়। 

বিকেল ক্রমশ গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে চলল আর আমি নিজের অবস্থান খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু করলাম। 

‘এ আমার দোষ নয়,’ বিষন্ন মনে একগুঁয়েভাবে নিজেকে বলতে থাকলাম বারবার, ‘আমার ডিগ্রি আছে এবং সেটা নিঃসন্দেহে খুব উঁচুমানের। শহরে সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলিনি, জুনিয়র পার্টনার হিসেবে কোথাও প্র্যাকটিস শুরু করতে চাই আমি? কিন্তু তারা সবাই হেসে বলেছে, ‘নিজের জায়গা ঠিকই খুঁজে পাবে তুমি।’ 

কাজেই আমার এখন কাজ হচ্ছে নিজের পথ খুঁজে নেয়া। ধরুন একটা হার্নিয়ার রোগী নিয়ে এল ওরা আমার কাছে! সেক্ষেত্রে নিজের পথ ঠিক কীভাবে খুঁজে নেব আমি? আরো জরুরি ব্যাপার হলো, আমি চিকিৎসা শুরু করলে ঐ হার্নিয়া রোগীর মানসিক অবস্থা কেমন হবে? সে কি পরকালে নিজের পথ খুঁজে পাবে? 

মনে হলো শরীরের সব রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে আমার। 

‘আর যদি কারো পেরিটোনাইটিস হয়? না, না! অথবা যদি হয় ক্রুপ নামের সেই বিদঘুটে রোগ, যা গ্রামের বাচ্চাদের হয়? কখন রোগীদের ট্র্যাকিওটোমি করতে হয়? এমনকি ট্র্যাকিওটোমি করতে না হলেও, আমি তো ঠিকই অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাব। আর .. আর ... সেউ যদি সন্তানসম্ভবা হয়? বাচ্চা প্রসব করানোর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম! বাচ্চা যদি সঠিক অবস্থায় না থাকে? কী করব আমি, কী করব? কত বড় একটা গর্দভ আমি! অবশ্যই চাকরিটা প্রত্যাখ্যান করা উচিত ছিল। কোনো সন্দেহ নেই এতে। তাদের উচিত ছিল আরেকজন লিওপোল্ডকে খুঁজে বের করা। 

সন্ধ্যার বিষন্ন আলোয় পড়ার ঘরের ভেতর পায়চারি শুরু করলাম। কী যে খারাপ লাগছিল। বাতির কাছাকাছি যেতে জানালার শার্সিতে নিজের মলিন চেহারা আর বাতির আলোর প্রতিফলন দেখলাম--তার ওপাশে খা খা করছে দিগন্তজোড়া নিঃসীম অন্ধকার। 

আমি আসলে ভণ্ড দিমিত্রির মতো, একটা ধোঁকাবাজ ছাড়া কিছুই না--নির্বোধের মতো ভাবলাম, তারপর ধপ করে বসে পড়লাম টেবিলের পাশে। 

এভাবে ঘণ্টাদুয়েক নিজেই নিজেকে তিরস্কার করে কাটালাম। স্নায়ু যখন নিজের তৈরি করা আতঙ্কটা আর সহ্য করতে পারছিল না তখন ক্ষান্ত দিলাম। আস্তে আস্তে শান্ত হতে শুরু করলাম এবং, এমনকি একটা কর্মপন্থাও ভাবতে শুরু করলাম। 

‘আচ্ছা, দেখা যাক ... ওরা বলেছে এ মুহূর্তে রোগী প্রায় ভর্তি হচ্ছেই না। গ্রামে সবাই এখন তিসির আঁশ ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। রাস্তার অবস্থা এমন, গাড়িঘোড়া চলাই অসম্ভব। 

ঠিক এমন মুহূর্তেই একটা হার্নিয়ার রোগীকে এনে তোমার কোলের উপর ফেলবে তারা! কে যেন গর্জন করে উঠল আমার মাথার মধ্যে। ‘কোনো ঠাণ্ডার রোগী রাস্তার এ অবস্থায় তোমার কাছে আসবে না, কিন্তু নিশ্চিত থাকো যে হার্নিয়ার একটা রোগীকে ঠিকই তোমার কাছে নিয়ে আসবে ওরা, ডাক্তার সাহেব!’ কণ্ঠস্বরটার মধ্যে বিতিকিচ্ছিরি কী যেন একটা ছিল, রীতিমতো কেঁপে উঠলাম আমি। 

‘চোপরাও,’ কণ্ঠস্বরটাকে বললাম, ‘হার্নিয়ার কেস তো না-ও হতে পারে। পাগলের মতো আচরণ কোরো না। একবার শুরু করলে যে আর পেছানো যায় না সেটা তোমার ভাবা উচিত ছিল।’ 

‘তুমি বলছো একথা!’ জঘন্যভাবে বলল কণ্ঠস্বরটি। 

‘ঠিক আছে ঠিক আছে ... রেফারেন্স বই ছাড়া এক পা-ও এগোবো না আমি। যদি প্রেসক্রিপশন লিখতে হয় তাহলে হাত ধুতে ধুতে চিন্তা করব ... আর আমার রেফারেন্স বইতো রোগীদের রেজিস্টার খাতার উপরেই রাখা আছে। সহজসরল কিন্তু নজরকাড়া সব প্রেসক্রিপশন লিখব। যেমন ধরো, ০.৫ গ্রাম সোডিয়াম স্যালিসাইলেট পাউডার দিনে তিনবার।’

‘তার চাইতে বেকিং সোডার কথা লিখে দাও না কেন! বা স্রেফ সোডাই খেতে বলো,’ কণ্ঠস্বরটা রীতিমতো মজা করতে শুরু করল আমার সঙ্গে। 

‘এর সঙ্গে সোডার সম্পর্ক কী? এর সঙ্গে ১৮০ সিসি বা ২০০ সিসি আইপেকাকুয়ানহাও মিশিয়ে দিতে বলতে পারি, যদি তোমার আপত্তি না থাকে।’ 

কেউ আইপেকাকুয়ানহার কথা বলেনি আমাকে, তবু বাতির পাশে বসে বসে ত্রস্ত হাতে ফার্মাকোপিয়ার পাতা উল্টে আইপেকাকুয়ানহার অংশটা খুঁজে বের করলাম। ওখানে যেতে যেতে ইনসিপিন নামে আরেকটি উপাদানের কথা পড়ে ফেললাম যেটি আসলে কুইনাইন-ডিগলাইকোলিক এসিডের এথারিয়েল সালফেট ছাড়া আর কিছুই নয়। মনে হল এর স্বাদ কুইনাইনের মতো নয়। তাহলে এর কাজ কী? এটার ব্যবস্থাপত্রই বা কীভাবে দেয়া হয়? আর জিনিসটা দেখতেই বা কেমন, পাউডারের মতো? দুত্তোর ছাই! 

‘সবই তো বুঝলাম, কিন্তু হার্নিয়ার ব্যাপারে কী করতে যাচ্ছ?’ ভয়ের কণ্ঠস্বরটি জ্বালাতন করতেই থাকল। 

‘তাদেরকে গোসল করাব,’ তিতিবিরক্ত হয়ে বললাম আমি, ‘চেষ্টা করব হার্নিয়ার মাত্রা কমানোর।’ 

‘কিন্তু যদি স্ট্র্যাংগুলেটেড হার্নিয়া হয়, বাছা? গোসল করালে সেক্ষেত্রে খুব একটা লাভ হবে না। স্ট্র্যাংগুলেটেড হার্নিয়া!’ শয়তানের মতো খলবল করে উঠল ভেতরের ভয়, ‘ওটাকে কেটে ফেলে দিতে হবে ...!’ 

অবশেষে হাল ছাড়তে হল। মনে হলো পা ছড়িয়ে বসে কাঁদি। জানালার ওপাশের অন্ধকারের কাছে একটা প্রার্থনা পাঠালাম: দয়া করো। আর যাই দাও, স্ট্র্যাংগুলেটেড হার্নিয়া দিও না। 

ক্লান্তি তখন টেনে টেনে বলল--‘বিছানায় যাও, অসুখী ডাক্তার। ঘুমাও। শান্ত হও, নাকিকান্না বন্ধ কর। দেখ জানালার ওপাশে পৃথিবীটা কীরকম অন্ধকার। মাঠঘাট সব হিম ঠাণ্ডায় গা ঢেকে ঘুমাচ্ছে। কোথাও হার্নিয়ার লেশমাত্রও নেই। সকালে ওটা নিয়ে ভাবা যাবে। এখন গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ো। ঘুমাও। নকশায় ভরা ঐ বইটা রেখে দাও, ওর আগামাথা কিছুই তুমি বুঝবে না ... হার্নিয়াল অরিফিস ...’ 

কখন যে সে এল মনে নেই। কেবল দরজায় কড়া নাড়ার খটখট শব্দ, আলেক্সিয়ার চিৎকার আর বাইরের উঠানে ঘোড়াগাড়ির ক্যাঁচকোচের কথাই আবছা মনে আছে। 

মাথায় টুপি ছিল না তার, ভেড়ার চামড়ার কোটের বোতামগুলো ছিল খোলা, দাড়িগুলো ছিল উস্কোখুস্কো আর চোখে পাগলাটে দৃষ্টি। বুকে ক্রুশচিহ্ন আঁকল সে, তারপর হাঁটু গেড়ে বসে কপাল ঠুকল মেঝেতে--আমাকে লক্ষ্য করে! 

এবার আমি গেছি! বিষন্ন মনে ভাবলাম। 

‘দাঁড়াও দাঁড়াও, ব্যাপারটা কী বলতো?’ ওর কোটের ধূসর হাতা ধরে টান দিয়ে বিড়বিড় করে বললাম। 

চোখমুখ কুঁচকে রুদ্ধশ্বাসে, অসংলগ্ন ভঙ্গিতে সে বলল--‘ওহ্ ডাক্তার সাহেব ... ডাক্তার সাহেব ... সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই, কেউ নেই!’ হঠাৎ বাচ্চাদের মতো এমন তেঁড়েফুড়ে সে কথা বলতে শুরু করল যে বাতির ঢাকনা পর্যন্ত কেঁপে উঠল। ‘স্যার ... স্যার ...’ প্রচণ্ড মনঃকষ্ট নিয়ে হাতদুটো মোচড়াতে লাগল সে আর এমনভাবে মেঝেতে কপালটা ঠুকতে লাগল যে মনে হল ওটা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। ‘কেন, কেন এভাবে শাস্তি পেতে হবে আমাকে? এমন কী করেছি যে খোদর গজব নেমে এসেছে আমার উপর?’ 

‘আহা হয়েছে কী বলবে তো! কী হয়েছে?’ গলা চড়িয়ে বললাম আমি। টের পেলাম, উত্তেজনায় মুখ থেকে রক্ত সরে যাচ্ছে। লাফ দিয়ে উঠে বসল সে, রীতিমতো ছুটে এল আমার দিকে, তারপর ফিসফিসিয়ে বলল, ‘যা চান আপনি ডাক্তার সাহেব ... টাকা দেব আপনাকে, যত টাকা চান। যত চান! যদি চান টাকা নয়, খাবার নেবেন, নিতে পারেন। কেবল তাকে মরতে দেবেন না। মরতে দেবেন না কিছুতেই। যদি সে খোঁড়া হয়েও বেঁচে থাকে, আমার আপত্তি নেই। আপত্তি নেই এক ফোঁটাও!’ ছাদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল সে। ‘তাকে খাওয়ানোর মুরদ আমার ষোলোআনা আছে, কোনো সমস্যা হবে না।’ 

দরজার কালো ফ্রেমের মধ্যে আকসিনিয়ার মলিন চেহারাটা চোখে পড়ল আমার। যন্ত্রণাটা সহ্য করা আর সম্ভব হল না। ‘সমস্যাটা কী? দয়া করে সমস্যাটার কথা বলো!’ মেজাজ খারাপ করে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। 

চুপ মেরে গেল সে। ভাবলেশহীন হয়ে গেল চোখদুটো, তারপর, যেন গোপন কোনো রহস্য জানাচ্ছে আমাকে এমনভাবে ফিসফিস করে বলল, ‘ব্রেকের মধ্যে পড়ে গেছে সে।’ 

‘ব্রেক ... ব্রেক? এটা আবার কী?’ 

‘তিসি, তিসির আঁশ ছাড়াচ্ছিল ওরা, ডাক্তার,’ ফিসফিসিয়ে ব্যাখ্যা করল আকসিনিয়া, ‘আঁশ ছাড়াতে একটা যন্ত্র ব্যবহার করে তারা ...’ 

‘কী চমৎকার শুরু, তাই না! কেন যে মরতে এসেছিলাম এখানে!’ তীব্র আতঙ্কে নিজেকে প্রশ্ন করলাম। 

‘কে?’ 

‘আমার মেয়ে,’ ধরা গলায় জবাব দিল সে, তারপরই চিৎকার--‘সাহায্য করুন!’ এ বলেই ফের ঝাঁপিয়ে পড়ল মেঝেতে। কৃষকদের ধরনে কাটা তার ঝাড়–র মতো চুলগুলো পুরোপুরি ঢেকে দিল চোখদুটো। 

কাত হয়ে থাকা টিনের শেডঅলা হ্যাজাক বাতিটা গরম রশ্মি ছড়াচ্ছিল অবিরল। মেয়েটা শুয়ে ছিল অপারেশন টেবিলে, গায়ে তার ধোপদুরস্ত সাদা অয়েলক্লথ। তার দিকে চোখ পড়ামাত্রই হার্নিয়ার সব চিন্তা দূর হয়ে গেল আমার মন থেকে। তার সুন্দর লালচে চুলগুলো দলা বেঁধে ঝুলে ছিল টেবিল থেকে। চুলে বিরাট একটা বেণি বাঁধা, যেটি প্রায় মেঝে ছুঁয়ে আছে। সুতির কাপড়ের স্কার্টটা এখানে সেখানে ছেঁড়া আর বাদামি থেকে তেলতেলে লালসহ রক্তের নানা ধরনের দাগে ভর্তি। তার কাগজের মতো সাদা মুখের পাশে কেরোসিনের বাতির আলোকে বড় বেশি হলদেটে দেখাচ্ছিল। নাকটা সবে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। প্লাস্টারের আবরণের মতো অনড় আর ধবধবে মুখটিতে অভূতপূর্ব এক সৌন্দর্য ক্রমশ ম্লান থেকে আরো ম্লান হয়ে আসছিল। জীবনে এরকম একটি চেহারা দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। 

অপারেশন থিয়েটারটি প্রায় দশ সেকেন্ডের মতো পুরোপুরি নিস্তব্ধ হয়ে রইল। তবে বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজনের চিৎকার ও বারবার মাথা ঠোকার মৃদু শব্দ ভেসে আসছিল। 

‘পুরোই পাগল হয়ে গেছে,’ ভাবলাম আমি। ‘নার্সদের উচিত লোকটার ব্যাপারে কিছু করা। মেয়েটা এত সুন্দরী কেন? লোকটার হাড়ের গড়ন খারাপ না, তবে মা-টা নিশ্চিতভাবেই রূপসী। লোকটা বিপত্নীক ...’ 

‘ওর বউ বেঁচে নেই?’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশ্নটা বেরিয়ে এল আমার মুখ দিয়ে। 

‘না,’ পেলাজিয়া ইভানোভনা শান্তগলায় উত্তর দিল। 

আর তখনই দামিয়ান লুকিচ, যেন রাগের চোটে, টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল মেয়েটার স্কার্ট। তার কোমর থেকে নিচের অংশ মুহূর্তেই উন্মুক্ত হয়ে গেল। তাকিয়ে যা দেখলাম সেটা আমার ধারণার চেয়েও খারাপ। সত্যি বলতে কী, বাম পা বলে কিছুই ছিল না মেয়েটার। ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া হাঁটুর নিচে থেঁতলে যাওয়া ফালি ফালি রক্তমাখা মাংস আর ঠেলে বেরিয়ে আসা সাদা হাড়। ডান হাঁটুর ঠিক নিচের অংশটা ভাঙ্গা, ওখানকার দুটো হাড়ের মাথা চামড়া ফুড়ে বেরিয়ে আছে--আর পা’টা নির্জীবভাবে কাত হয়ে আছে - যেন শরীরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ওটার। 

‘হ্যাঁ,’ নরম গলায় কেবল এটুকুই বলল লুকিচ, আর কিছু নয়। 

কোনোমতে নিজেকে সামলে মেয়েটার নাড়ি দেখলাম। তার হিমশীতল কব্জি কোনো বার্তা দিল না। এভাবে কয়েক সেকেন্ড কেটে যাওয়ার পর বোঝা যায় কি যায় না এমন হালকা এবং অনিয়মিত একটা স্পন্দন টের পেলাম। এল, আবার যেন চলেও গেল সেটা, তারপর সব যে-কে সেই। এ ফাঁকে তার সাদা দুই ঠোঁট আর নাসারন্ধ্রের দিকে চোখ গেল আমার, দেখলাম, ক্রমশ নীল হয়ে আসছে ওগুলো। আমার মুখ ফুটে প্রায় বেরিয়েই আসছিল, ‘সব শেষ’; ভাগ্যিস, শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম নিজেকে, কারণ হালকাভাবে টের পেলাম মেয়েটির হৃদস্পন্দন। 

‘দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া এক মানবসন্তানের শেষ মুহূর্ত,’ নিজেকে বললাম আমি। ‘ওর জন্য আসলে আর কিছু করার নেই।’ 

কিন্তু, আকস্মিকভাবেই, নিজের কানেও অচেনা ঠেকল এমন এক গলায় বলে উঠলাম, ‘কর্পুর।’ 

আনা নিকোলায়েভনা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, ‘কী লাভ ডাক্তার, মেয়েটার উপর আর অত্যাচার করে! ওর শরীরটাকে আর ভাংচুর না করলেই নয়? যেকোনো মুহূর্তে মরে যাবে সে। তাকে বাঁচানোর সাধ্য আপনার নেই।’ 

রাগী চোখে তাকালাম তার দিকে, ‘কর্পুর চেয়েছি আমি!’ 

মুখটা লাল হয়ে গেল তার। গটগট করে গিয়ে ছোট টেবিল থেকে একটা শিশি তুলে নিয়ে সেটা খুলল। কর্পুরের ব্যাপারটা লুকিচও বোধহয় খুব একটা পছন্দ করেনি। তবে আসোয়াস্তিটা লুকিয়ে দ্রুত, দক্ষ হাতে একটা সিরিঞ্জ তুলে নিল সে, মেয়েটার কাঁধের কাছে চামড়ার নিচে চলে গেল হলদেটে তরলটা। 

‘মরো। তাড়াতাড়ি মরো,’ নিজের উদ্দেশেই বললাম আমি। ‘মরে যাও। নাহলে তোমাকে নিয়ে কী করব আমি?’ 

‘এক্ষুনি শেষ হয়ে যাবে সব,’ যেন আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই ফিসফিস করে বলল লুকিচ। অর্থবোধক চোখে চাদরটির দিকে তাকাল সে, তারপরই, মনে হল, পাল্টে ফেলল মনের ভাব। রক্তের দাগ ফেলে চাদরটা নষ্ট করাটা দুঃখজনক, সন্দেহ নেই। কিন্তু খানিক পর ওটা দিয়েই তো মেয়েটাকে ঢাকতে হবে। লাশের মতো পড়ে থাকল মেয়েটা, তবে মরল না। আচম্বিতেই মাথাটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেল আমার, যেন বহুদূরের সেই মেডিক্যাল কলেজের দেহব্যবচ্ছেদ-কক্ষের কাচের ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। 

‘কর্পুর, আবার!’ ভাঙা গলায় বলে উঠলাম আমি। সাথেসাথেই আবারও মেয়েটার শরীরের ইনজেকশন ফুটালো আমার সহকারী। 

‘ও কি আসলেই মরবে না?’ হতাশাভরে ভাবলাম আমি। ‘আমাকে কি সত্যিসত্যিই .....’ 

আলোর এক ঝলকানি লেগে মনের মধ্যে সবকিছু যেন পরিষ্কার হয়ে গেল এবং, আকস্মিকভাবেই, কোনো পাঠ্যবই বা কারও পরামর্শ কিংবা সাহায্য ছাড়াই নিশ্চিতভাবে বুঝে গেলাম, জীবনে এই প্রথমবারের মতো মরণাপন্ন একজন মানুষের শরীরের একটি প্রত্যঙ্গ কেটে বাদ দিতে হবে আমাকে। এও বুঝে গেলাম, আমার ছুরির নিচেই সে মানুষটির প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে। ছুরির নিচে মরা ছাড়া তার গত্যন্তর নেই, আসলে তার শরীরে আর একবিন্দু রক্তও অবশিষ্ট নেই। ছয় মাইল দূর থেকে এখানে আনতে আনতেই তার ছেঁড়াখোড়া পা দিয়ে সব রক্ত বেরিয়ে গেছে এবং এ মুহূর্তে যে তার যে চেতনা আছে, সে লক্ষণও নেই। একেবারেই নিথর। ওহ, কেন মরেনি মেয়েটা! ওর খ্যাপাটে বাবা কী বলবে আমাকে? 

‘অঙ্গচ্ছেদনের জন্য প্রস্তুত হও,’ যেন নিজের নয় এমন এক গলায় সহকারীর উদ্দেশে বললাম আমি। 

আমার দিকে তীব্র একটা চাহনি হানল ধাত্রী, তবে সহকারীর চোখে সহানুভূতির একটা ঝলক লক্ষ করলাম। যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। 

শব্দ করে জ্বলে উঠল একটা স্টোভ। মিনিট-পনের কাটল। তার ঠাণ্ডা চোখের পাতা সরিয়ে সংস্কারমাখা ভীরু দৃষ্টিতে তাকালাম ক্রমশ আলো নিভে আসতে থাকা মেয়েটির চোখের দিকে। কোনো বার্তা পেলাম না সেখান থেকে। বলতে গেলে একটা লাশই তো সে--অথচ কী আশ্চর্য, বেঁচে আছে এখনও! সাদা টুপির তলা থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম আমার কপাল বেয়ে নামছে, আর পেলাজিয়া ব্যান্ডেজের একটা টুকরো দিয়ে মুছে দিচ্ছে সেটি। মেয়েটার শিরায় আর যেটুকু রক্ত বাকি ছিল ক্যাফেইনের প্রভাবে পাতলা হয়ে গেছে তা। রক্ত কি দেয়া উচিত ছিল, নাকি না? স্যালাইনের কারণে ফুলে যাওয়া জায়গাগুলোতে আলতো হাতে মালিশ করছে আনা নিকোলায়েভনা। বেঁচে আছে মেয়েটা; এখনও। 

ছুরিটা তুলে নিলাম হাতে। জীবনে যে একবার--বিশ্ববিদ্যালয়ে--কাউকে কারও অঙ্গচ্ছেদ করতে দেখেছিলাম সেটাই অনুকরণ করার চেষ্টা করলাম। মনে মনে নিয়তির কাছে মিনতি করলাম অন্তত আগামি আধঘণ্টায় মেয়েটা যেন না মরে। ‘অপারেশন শেষ হওয়ার পর মরুক সে, ওয়ার্ডে...’ 

ভরসা কেবল কা-জ্ঞান, অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে সেটিই কাজে নেমে পড়ল। অভিজ্ঞ কসাইয়ের মতো তীক্ষèধার ছুরি দিয়ে মেয়েটার উরু-বরাবর নিখুঁত একটা বৃত্তের মতো করে কাটলাম। এক ফোঁটাও রক্ত না ঝরিয়ে আলগোছে সরে গেল চামড়া। ‘রক্তনালীগুলো থেকে ফের রক্ত বের হতে শুরু করলে কী করব?’ ভাবনাটা মনে আসতেই মাথা না ঘুরিয়েই আড়চোখে তাকালাম সারি সারি ফোরসেপের দিকে তাকালাম। রক্তনালীসহ নারীমাংসের বড়সড় একটা টুকরো কাটলাম--দেখতে ছোট সাদাটে একটা পাইপের মতো--এক ফোঁটাও রক্ত বের হল না। একজোড়া ফোরসেপ দিয়ে কাটা জায়গাটা বুঁজে দিয়ে কাজ চালিয়ে গেলাম। যেখানেই রক্তনালীর অস্তিত্ব আছে বলে সন্দেহ হল, সেখানেই চাপ বাড়ালাম ফোরসেপের। ‘আর্টেরিয়া ... আর্টেরিয়া ...’ কী যেন নাম নচ্ছার জিনিসটার?’ 

ততক্ষণে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরটা পুরোপুরি কেজো চেহারা নিয়েছে। ফোরসেপগুলো থোকা বেঁধে ঝুলছে। আমার সহকারীরা গজ-ব্যান্ডেজে চেপে সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছে, মাংসগুলো আবার ফিরে আসছে আগের জায়গায়, আর আমি সূক্ষ্ম একটি করাত দিয়ে কাটতে শুরু করেছি গোল হাড়। ‘এখনও মরছে না কেন মেয়েটা? অবিশ্বাস্য ব্যাপার .. খোদা, মানুষ কীভাবে নাছোড়বান্দার মতো ঝুলে থাকে!’ 

হাড়টা খসে পড়ল। একসময় যেটা মেয়েটার পা ছিল সেটা এখন দামিয়ান লুকিচের হাতে--স্রেফ মাংস আর হাড়ের কিছু ছেঁড়া টুকরো। সরিয়ে নেয়া হলো সেগুলো--টেবিলে যা পড়ে থাকল তা হচ্ছে এক তরুণী--শরীরের এক তৃতীয়াংশ ছাড়া। পায়ের গুঁড়িটা বেকায়দাভাবে কাত হয়ে আছে একপাশে। ‘আর অল্প একটু ... দয়া করে এখনই মরে যেও না,’ সকাতরে প্রার্থনা করলাম, ‘তোমাকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকো কষ্ট করে, যাতে এই ভয়ঙ্কর অধ্যায় থেকে অন্তত কিছুটা কৃতিত্ব নিয়ে বের হতে পারি আমি!’ 

সুতো দিয়ে ধমনীর প্রান্তগুলো বাঁধল তারা। বড় বড় ফাঁক রেখে মেয়েটার চামড়া সেলাই করতে শুরু করলাম, আমার হাঁটুদুটো কাঁপছিল রীতিমতো। থামলাম হঠাৎ, একটা বুদ্ধি এল মাথায়। কিছু যাতে বেরিয়ে যেতে পারে সেজন্য একটা ফাঁক রাখলাম, তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম ব্যান্ডেজের একটা সলতে। ঘামের জন্য চোখে ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলাম না-- যেন বাষ্প-স্নান করছি। 

বুক থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল। প্রথমে তার পায়ের গুঁড়ির দিকে, তারপর মোমের মতো সাদা চেহারার দিকে বিষন্ন চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বেঁচে আছে?’ 

‘হ্যাঁ, বেঁচে আছে,’ সমস্বরে এবং প্রায় শব্দহীনভাবে জবাব দিল লুকিচ আর আনা নিকোলায়েভনা। 

‘সর্বোচ্চ আর মিনিটখানেক বাঁচতে পারে সে,’ শোনা যায় কি যায় না এমনভাবে আমার কানে কানে বলল লুকিচ। একটু দ্বিধা করল সে, তারপর অনিশ্চিত ভঙ্গিতে পরামর্শ দিল--‘বাকি পা’টা মনে হয় ধরার দরকার নেই, ডাক্তার। স্রেফ ব্যান্ডেজ করে ফেলে রাখতে পারি আমরা ওটাকে। অন্য কিছু করলে, মনে হয় না ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বাঁচবে। অপারেশন থিয়েটারে মরে যাওয়াটা ঠিক হবে না।’ 

‘প্লাস্টারটা দাও,’ রুক্ষ গলায় বলাম আমি, যেন কোনো অজানা শক্তি আমাকে দিয়ে বলিয়ে নিল কথাটা। 

গোটা মেঝে জিপসামের ছোপ ছোপ দাগে ভরা। ঘেমে নেয়ে গেছি সবাই। শরীরটা পড়ে আছে মৃতদেহের মতো। ডান পা-টা প্লাস্টারে ঢাকা, তবে হাঁটুর নিচের অংশটি দেখা যাচ্ছে, কারণ, হাড় যেখানে ভেঙে গেছে সে জায়গাটিতে--ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ইশারাতেই--আরেকটা খোপর রেখে দিয়েছি আমি। 

‘বেঁচে আছে সে,’ বিস্ময়ভরে বলল সহকারী। 

এবার তাকে তুলে ধরতে শুরু করলাম আমরা। চাদরের উপর থেকে তার শরীরের বিশাল ফাঁকা জায়গাটা চোখে পড়ল--শরীরের এক তৃতীয়াংশই অপারেটিং টেবিলে রেখে দিতে হয়েছে। 

প্যাসেজজুড়ে মানুষের ছায়ার আনাগোনা, নার্সরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে, আর এর মধ্যেই উস্কোখুস্কো এক লোককে দেখলাম দেয়ালের পাশ ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে চাপা গলায় কঁকিয়ে উঠতে। অবশ্য দ্রুতই সরিয়ে নেয়া হল তাকে ওখান থেকে। নীরবতা নেমে এল তারপর। 

কনুই পর্যন্ত আমার গোটা বাহুতে লেপটে থাকা রক্তের দাগ ধুলাম অপারেশন থিয়েটারে। 

‘মনে হয় এর আগেও অঙ্গচ্ছেদের অনেক অপারেশন করেছেন আপনি, ডাক্তার?’ হঠাৎ জিজ্ঞেস করল আনা নিকোলায়েভনা। ‘অসাধারণ ছিল আপনার কাজ, লিওপোল্ডের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’ 

বরাবরের মতোই, ‘লিওপোল্ড’ শব্দটি সে এমনভাবে উচ্চারণ করল যেন মেডিক্যাল স্কুলের ডিনের কথা বলছে। সন্দেহভরা চোখে তাদের মুখের দিকে তাকালাম। দামিয়ান লুকিচ এবং পেলাজিয়া ইভানোভনাসহ সবার চোখেই সমীহ আর বিস্ময়। 

‘হুম, আমি আসলে মাত্র দুটো অঙ্গচ্ছেদের অপারেশন করেছি...’ 

মিথ্যে কথাটা কেন বললাম? আজ অব্দি এ প্রশ্নের উত্তর পাইনি। 

হাসপাতালজুড়ে মৃতপুরীর মতো নীরবতা। ‘মেয়েটা মরে গেলে আমাকে জানাতে ভুলো না,’ নিচুগলায় সহকারীকে বললাম। কেন কে জানে, স্রেফ ‘ঠিক আছে,’ বলার বদলে সমীহভরা গলায় সে বলল, ‘নিশ্চয়ই, স্যার।’ 

মিনিটকয়েক পরের কথা। ডাক্তারের বাসার পড়ার ঘরে সবুজ ঢাকনা দেয়া বাতিটার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সামান্য কোনো শব্দও নেই কোথাও। পিচকালো জানালার শার্সিতে মলিন একটা চেহারা ভেসে আছে। 

না, ভণ্ড দিমিত্রির মতো মনে দেখাচ্ছিল না আমাকে। তবে মনে হচ্ছিল হঠাৎই যেন বয়স বেড়ে গেছে; দুই ভ্রুর মাঝে একটা ভাঁজ। জানতাম, এখনই দরজায় টোকা দেবে কেউ, তারপর বলবে, ‘মারা গেছে মেয়েটা।’ 

‘হ্যাঁ, আমি যাব এবং শেষবারের মতো একবার দেখব তাকে। যেকোনো মুহূর্তে শোনা যাবে টোকাটা ...’ 

টোকা ঠিকই পড়ল দরজায়। তবে আড়াই মাস পর। শীতের প্রথম উজ্জ্বল দিনগুলোর একটি জানালা দিয়ে ঝলমল করছিল। ভেতরে ঢুকল সে, আর তখনই তাকে সত্যিকারভাবে খেয়াল করলাম। হ্যাঁ, চেহারাটা আসলেই ভালো, বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ। জ্বলজ্বল করছে চোখদুটো। তারপরই খসখসে একটা শব্দ। অদ্ভুত সুন্দর এক তরুণী ক্রাচে ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এসে ঢুকল। একটিমাত্র পা তার, পরেছে লাল পাড়ের ঢোলাঢালা একটা স্কার্ট। 

আমার দিকে তাকাল সে, গোলাপি আভা ফুটল গালে। 

‘মস্কো ... মস্কোতে ...,’ বলেই একটা ঠিকানা লিখতে শুরু করলাম আমি। ‘ওরা তোমাকে একটা আলগা পা লাগিয়ে দেবে, কৃত্রিম পা।’ 

‘চুমু খাও ওনার হাতে,’ হঠাৎ মেয়েটাকে ফরমাশ করল বাবা। আমার মাথা এতটাই জট পাকিয়ে গিয়েছিল যে আমার চুমুটা তার ঠোঁটে নয়, পড়ল নাকের উপর। 

ক্রাচে ভর দিয়ে একটা বান্ডিল খুলল সে। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল তুষার ধবল একটা তোয়ালে--যাতে কাঁচা হাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লাল মোরগের একটা নকশা। তাহলে এ জিনিসটাই বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখত সে, যখন ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেতাম আমি! তার বিছানার পাশের টেবিলে কিছু সুঁতা দেখার কথাও মনে পড়ল। 

‘এটা আমি নিতে পারি না,’ কঠিন গলায় বললাম, মাথাও নাড়লাম, কিন্তু আমার দিকে এমন এক দৃষ্টিতে তাকাল সে, না নিয়ে উপায় থাকল না। 

মারিয়োভোতে আমার শোবার ঘরে ঝোলানো থাকত তোয়ালেটা। কোথাও যাবার সময়ও সঙ্গে নিতাম। শেষের দিকে জীর্ণ, পুরনো আর মলিন হতে হতে একদিন হারিয়েই গেল সেটি, স্মৃতিরা যেভাবে মলিন হয় আর হারিয়ে যায়।


লেখক পরিচিতি
মিখাইল বুলগাকভ
জন্ম ১৮৯১, কিয়েব। মৃত্যু ১৯৪০. মস্কো।
তিনি প্রখ্যাত রুশ লেখক, ডাক্তার ও নাট্যকার। 
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস--দি মাস্টার এন্ড মারগারিতা। এই উপন্যাসটিকে বিশ শতকের মাস্টারপিস বলা হয়।  
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রেডক্রসের ডাক্তার হিসেবে যুদ্ধের ফ্রন্টে কাজ করেন। এবং দুবার আহত হন। স্ট্যালিন বুলগাকভের নাটক পছন্দ করলেও ১৯২৯ সালে তার লেখা সেন্সর করা শুরু হয়েছিল। স্ট্যালিনের অনুগ্রহেই তাঁকে পুলিশ আটক করেনি। তবে তার বই প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল।


অনুবাদক পরিচিতি
মোস্তাক শরীফ
জন্ম ১৯৭৪ সালে ফেনীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ২০০৩ থেকে। বর্তমানে অধ্যাপক। পিএইচডি করেছেন ২০১১ সালে, ‘পল্লী উন্নয়নে তথ্যসেবার ভূমিকা’ বিষয়ে। লেখালেখির ভুবনে জড়িত প্রায় তিন দশক ধরে। গবেষণামূলক ও সৃজনশীল দুই ধারাতেই সক্রিয়। উপন্যাস, অনুবাদ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি সম্পৃক্ত আছেন তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতায়ও। মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সতেরোটি। ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যার জনক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অসাধারণ লেখনী। অনুবাদক প্রশংসার দাবীদার । বাংলা ভাষায় এমন আরো অনুবাদ জরুরী !

    উত্তরমুছুন