ইন্তিজার হুসেইনের গল্প: ঘুম

 
মূলগল্প: ইন্তিজার হুসেইন 
ভাষান্তর: নাহার তৃণা



জাফর খুব অবাক হয়ে গেল সালমানকে দেখে। 'আরে, সালমান! তুমি? সত্যিই তুমি ফিরে এসেছ? কীভাবে এলে?''কীভাবে ফিরেছি সেটা জানতে চেও না। ফিরে এসেছি- সেটাই আসল কথা।'
 
এরপর জাফর কোনো কথা খুঁজে পেল না কী বলবে। 'ওখান থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারা...একটা অলৌকিক ব্যাপার!'
 
'সত্যি অলৌকিক ব্যাপার। আমার হয়তো আরো দীর্ঘসময় বেঁচে থাকার কথা, তাই ফিরে এসেছি।'
 
জাফর একাই শুধু অবাক হয়নি তার ফিরে আসাতে। সালমান নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না সে ফিরে এসেছে। 'আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওই জায়গা থেকে আমি পালিয়ে আসতে পেরেছি।'
 
জাফর কিছুতেই সালমানের ওপর থেকে নজর সরাতে পারে না। একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে সালমানকেই সে জানে, যে ওখান থেকে জীবিত ফিরতে পেরেছে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সে সালমানের আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর জানতে চাইলো, 'সত্যি করে বলো তো সালমান, কীভাবে তুমি ওখান থেকে পালাতে পারলে?'
 
'কীভাবে পালাতে পারলাম?' সালমান বিড়বিড় করল। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো সে তার সব কথা এক নিশ্বাসে বলে ফেলবে। তারপর চারদিকে নজর বুলিয়ে বলল- 'আমি তোমাকে অল্প কথায় বোঝাতে পারবো না। পুরোটা শুনতে হলে অনেক লম্বা সময় লাগবে। সবটা শুনলে তোমার মাথা বিগড়ে যাবে।'
 
'তুমি ঠিক বলেছো দোস্ত। আমরা এখানে নানাজনের মুখে অল্পস্বল্প যেটুকু শুনেছি তাতেই এমন ভয়ানক লেগেছিল। আর তুমি তো সবটা নিজের চোখে দেখে এসেছো।'
 
সে বড় একটা নিশ্বাস নিল তারপর শ্রাগ করে বলল, 'হ্যাঁ, হ্যাঁ সে তো বটেই, আমি সব নিজের চোখেই দেখে এসেছি।'
 
তার চোখের সামনে অসংখ্য ভয়ানক হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য ভেসে বেড়াতে লাগলো, 'আমি এত বেশি দেখেছি যে...আমার মনে হয় আমি সব দেখে ফেলেছি।'
 
'আমি শুনতে চাই, বলো।'
 
সালমান আবারো চেষ্টা করল পেটের ভেতর জমে থাকা সব কথা ঝেড়ে ফেলতে। কিন্তু চারদিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিল। বলল, 'তোমাকে অনেক কথা বলার আছে। কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো এসব আলাপ করা যায় না।'
 
জাফর একটু থেমে ভাবলো, তারপর জানতে চাইল, 'আজ সন্ধ্যায় তুমি কী করছো?'
 
'সকাল বা সন্ধ্যা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। এখন সবই সমান।'
 
'তাহলে সন্ধ্যায় তুমি আমার বাড়িতে চলে এসো।'
 
'সেটাই ভালো হবে। ঠিক আছে, আমি তোমার বাড়িতেই আসবো।'
 
'আমি আসলামকে ডেকে নেবো। সেও থাকবে আমাদের সাথে।'
 
'ওই তর্কবাগীশ আসলাম। সে কি এখনো এখানে?'
 
'তার মতো লোকদের কিছু হয় না, সেটা বাঁচা হোক কিংবা মরা। এখানে না থেকে যাবে কোন চুলোয়?'

'জায়দীর খবর কী?'
 
'ওই হামবাগটাকেও ডেকে নেবো। তাহলে আমরা সন্ধ্যায় বসছি।'
 
'ঠিক আছে।'
 
জাফর বাড়িতে পৌঁছে দ্রুত একটা নাম্বারে ফোন করে বলল - 'হ্যালো আসলাম। আমি জাফর বলছি দোস্ত। একটা চমকানোর মতো খবর শোনো, আমাদের বন্ধু সালমান ফিরে এসেছে।'
 
'সালমান? বলো কী দোস্ত!’
 
'হ্যাঁ, সে সত্যি ফিরে এসেছে।’
 
'তুমি বলতে চাইছো সে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছে? কিন্তু কীভাবে?’
 
'সেটা শোনার জন্য আজ সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে চলে এসো। নিজেই তাকে জিজ্ঞেস করো।’
 
'ঠিক আছে আমি আসবো।'
 
তারপর সে জায়দীকে তার অফিসে ফোন করল।
 
‘হ্যালো… জায়দী আছে?....প্লিজ জায়দীকে ডেকে দিন।….হ্যালো জায়দী, আমি জাফর বলছি। শোনো, তোমাকে অবাক হওয়ার মতো একটা খবর দেই।’
 
'কী খবর, বলতো শুনি।'
 
' সালমান ফিরে এসেছে।'
 
'সালমান? কী অসম্ভব কথা শোনাচ্ছো!'
 
‘দোস্ত সত্যি বলছি। সে পালিয়ে আসতে পেরেছে।’
 
'বলো কী। হাঁদারামটা কেমন করে পালাতে পারলো? এখন সে আছে কোথায়?'
 
'আজ সন্ধ্যায় সোজা আমার বাড়িতে চলে এসো। সেও আসবে। এসে শুনবে কীভাবে পালালো।’
 
'ঠিক আছে আমি চলে আসবো।’
 
চার বন্ধু সেই সন্ধ্যায় মিলিত হলো জাফরের বাড়িতে। তিনজনই আশ্চর্য দৃষ্টিতে সালমানকে এবং সালমানও একইভাবে তাদের দেখল। আসলাম তার এই পালিয়ে আসার ঘটনায় তাদের যুথবদ্ধ বিস্ময় যেন একাই প্রকাশ করে ফেলতে চাইলো এবং তারপর ওখানকার পরিস্থিতি নিয়ে সে দুঃখপ্রকাশ করলো।

কথা বলতে বলতে তার ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে। 'তারা ওখানে ছেলেবুড়ো নারী পুরুষ সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, কাউকে কাউকে পঙ্গু করে দিয়েছে। অসভ্য… পশুরদল… আমি যদি সুযোগ পেতাম তাহলে...' দাঁতে দাঁত পিষে আসলাম।
 
'কিন্তু তাদের আচরণ ওরকমই তো হবার কথা ছিল' জায়দী ঘোষণা করল।
 
'ওরকম হবার কথা ছিল মানে?' জায়দীর কথায় যুগপৎ রাগ ও অবিশ্বাসে ফেটে পড়ল আসলাম।
 
'আমরা পঁচিশ বছর ধরে ওদের সাথে যা করেছি তার প্রতিক্রিয়ায় তাদের এমন আচরণই করার কথা।' জায়দী বলল।
 
'আচ্ছা, আমরা কী করেছি এতদিন? কী করেছি আমরা তাদের সাথে?’ আসলাম উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল। তারপর তাদের নিষ্ঠুরতার একটা দীর্ঘ বিবরণ খুলে বসলো। তার যাবতীয় জ্ঞান আহরিত হয়েছে এখানকার বেশ কিছু চালু পত্রিকার গরম গরম রিপোর্ট থেকে।
 
জায়দীর কাছে আসলামের করা সবগুলো অভিযোগের জবাব তৈরি ছিল। পাল্টা হিসেবে সে আসলামের আনা প্রতিটা অভিযোগের জবাব দিলো। শুধু তাই না সে তাদের বিরুদ্ধে করা নিষ্ঠুরতার একটা বিশাল ফিরিস্তি দিলো।
 
শুনতে শুনতে সালমান হাই তুলল। জাফর তার দিকে তাকিয়ে বলল, 'তোমার কী মতামত সালমান?'
 
আসলাম এবার সালমানের দিকে ঝুঁকলো। ‘হ্যাঁ সালমানকে জিজ্ঞেস করো। সে ওখানে অনেক বছর বাস করেছে। সে নিজের চোখে সবকিছু দেখেছে। তুমি কী ভাবছো সেটা বলো সালমান?'
 
'আমার মনে হয়….' সালমান এটুকু বলে গভীর ভাবনায় ডুবে গিয়ে নীরব হয়ে গেল।
 
জাফর অধৈর্য হয়ে উঠেছিল। সে তার দিকে আঙুল তুলে বলল, আরে দোস্ত চুপ করে গেলে কেন? তুমি বলো, সবটা খুলে বলো আমাদের।'
 
'আসলে কী বলার আছে আমার?'
 
জায়দী খোঁচা দিয়ে বলল, 'কেন ওই ব্যাপারে কোনো কিছু না বলার পণ করেছো নাকি?'
 
'কিসের পণ?' সালমান কথাটাকে হেঁয়ালীর সাথে উড়িয়ে দিলো।
 
আসলাম এবার জোর দিয়ে বলল, ' ওখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।'
 
সালমান অনেকটা অনিশ্চিত সুরে বলল, 'ইয়ার, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কীভাবে ব্যাপারটা বলবো।'
 
জাফর তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, 'কেন? গতবার যখন ওখান থেকে এসেছিলে, তখন তো ওখানকার গল্প করতে করতে আমার মাথা খেয়ে ফেলেছিলে। আর এবার তোমার মুখে কোন কথা নাই। ব্যাপারটা কি?'
 
সালমান জাফরের দিকে তাকিয়ে চাপাস্বরে বলল, 'তখন ভেবেছিলাম আমি ওদিকের অবস্থা সম্পর্কে সবকিছু জানি।'
 
'হেঁয়ালী বাদ দিয়ে আসল কথা বলো। ওখানে কী ঘটেছিল আসলে?'
 
'হ্যাঁ ওটা আমি তোমাদের বলতে পারি।' এবার সে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানালো। 'আমি সেখানে অনেক কিছু দেখেছি। আমি যা দেখেছি সব যদি বলতে শুরু করি তাহলে তোমরা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।'
 
সে আবারো চুপ হয়ে গেল। মনে হলো সে যেন একটা কিংবদন্তির গল্প বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তিন বন্ধু নিবিষ্ট আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে। তার মুখ থেকে গল্পটা শোনার জন্য তারা উদগ্রীব। কিন্তু সে কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকে।
 
দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকার পরও যখন সালমান কোনো কথা বলল না তখন জাফর তাড়া দিয়ে বলল, 'আরে তুমি তো এখনো আমাদের কিছুই বললে না।'
 
'হ্যাঁ দোস্ত'। সে বিড়বিড় করল। 'আসলে দোস্ত আমি জানি না কী বলবো। আমার কিছুই মনে পড়ছে না।'
 
আসলাম, জায়দী আর জাফর তার দিকে তীব্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর তারা নিজেদের মধ্যে এমনভাবে আলাপ শুরু করল যেন ওরা কেউ তাকে চেনেই না। তারা নিজেদের মধ্যে তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল। তর্কে তর্কে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠল। সবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ ছোড়াছুড়ি শুরু হলো পরস্পরের বিরুদ্ধে। জাফর তার মধ্যে গালিগালাজও শুরু করল। কিছুক্ষণ এপারের লোকদের উদ্দেশ্যে, কখনো আবার ওপারের লোকদের উদ্দেশ্যে।
 
সালমান একবার এক বন্ধুর দিকে তাকায়, আবার অন্য বন্ধুর দিকে তাকায়। সে একটা শব্দও উচ্চারণ না করে চুপচাপ শুনতে লাগল। তার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছিল। দুয়েকবার সে ঢুলে পড়ে যাচ্ছিল। তারপর সে নিজেকে সোজা করে শক্ত হয়ে বসে আবারো বন্ধুদের কথা শুনতে চেষ্টা করল। কিন্তু আবারো সে ঘুমে ঢলে পড়তে লাগল। তখনই জায়দীর ক্রুদ্ধ চিৎকার।
 
'সব জারজের বাচ্চা জারজ! গণতন্ত্রেরভেকধারী সারমেয়ের দল।' বলেই জায়দী মুঠি পাকিয়ে দুম করে ঘুষি বসালো টেবিলের ওপর।
 
'ওরা সব বিশ্বাসঘাতক বেজন্মা। সব শালা ভারতের দালাল ওদিকে!' আসলাম হিসহিসিয়ে বলে উঠল। সালমান নিদ্রালু চোখে বন্ধুদের দিকে তাকালো। তারপর সে আবারো ঘুমে ঢলে পড়ল।
 
সে যখন চোখ খুলল তখন তাদের সামনে চা পরিবেশন করা হয়েছে। জাফর তাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, 'সালমান, তোমার চা এসেছে। চা খেয়ে চাঙ্গা হও।'
 
সালমান আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল। বন্ধুদের দিকে লজ্জিত চাহনি দিয়ে হাতের তালু দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা করল। তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিলো। চা খেতে খেতে সে অনুভব করল তার চোখ থেকে ঘুম কেটে যাচ্ছে। তার ইন্দ্রিয় যেন এখন ধীরে ধীরে সজাগ হয়ে উঠছে। তার মনের বন্ধ দরোজা জানালাগুলো খুলে যাচ্ছে।
 
সে বলল, ' তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্হায় সেইসব দিনের একটি ঘটনা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। ওই রাতে আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।' যখন সে কথাটা বলছিল তখন তার চোখের সামনে অসংখ্য প্রাণঘাতী দৃশ্য নেচে বেড়াচ্ছিল। সেই সাথে একটা অমানবিক জান্তব চিৎকার তার মগজ ভেদ করে চলে যাচ্ছিল।
 
‘কোন রাতের কথা বলছো তুমি? ওটা কী পরাজয়ের আগের কথা?' আসলাম জানতে চাইল।
 
সালমান এক মুহূর্তের জন্য ভাবলো। তারপর বলল, 'আমি ঠিক মনে করতে পারছি না ওটা কোন রাত ছিল। ওইসব রাতগুলো তো সব একরকমই ছিল। শুধু একদিনের ঘটনা বাদে….' এটুকু বলে সে চুপ হয়ে গেল।
 
আসলাম, জায়দী এবং জাফর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল তার কথা। তাদের চোখেমুখে গভীর আগ্রহ দেখে সালমান বিরক্ত হয়ে কথা ঘুরিয়ে ফেলল।
 
বলল, ' আসলে আমি যে কথা বলতে চাইছি সেটা মনে করতে পারছি না। সে যাই হোক, এটুকু মনে আছে সে রাতে আমি এক ফোঁটা ঘুমোতে পারিনি।' একটু বিরতি নিয়ে বলল, ‘তারপর থেকে আমার চোখের ঘুম পালিয়ে গেছে। দু এক রাত বাদে আমি আর কখনো ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনি।'
 
আসলাম, জায়দী আর জাফর নিস্পৃহভাবে তার কথাগুলো শুনছিল। তারপর তারা নিজেদের মধ্যে আলাপে ডুবে গেল। সেই পুরোনো তর্কগুলো ঘুরে ফিরে আবারো চলতে লাগল। আমাদের লোকগুলো নিজেরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে নাকি অন্য পক্ষ থেকে তাদেরকে প্ররোচিত করা হয়েছিল এসব নিয়ে তর্ক চলতে লাগল। সালমান কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকল। তার কিছুই মনে পড়ছে না। সে ওখান থেকে আসার পর কী ঘটল, সেসব কিছুই মনে করতে পারছে না সে।
 
সালমান তার নিজের ভাবনা চিন্তার কোনো কিনারা করতে না পেরে জাফর, জায়দী আর আসলামের তর্কবিতর্কের দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করল। সে শুধু শুনে যাচ্ছিল। তারপর সে জাফরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দোস্ত আমার ঘুম পাচ্ছে।'
 
জাফর তার দিকে বিরস চোখে তাকাল, তারপর বলল, 'তাহলে ঘুমিয়ে পড়ছো না কেন?'
 
'হ্যাঁ আমি একটু ঘুমিয়ে নেই।' নির্জীব স্বরে কথাটা বলতে বলতে তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। সে সোফায় এলিয়ে পড়ল। মাথাটা পেছনে রেখে পা দুটো টেবিলের ওপর তুলে দিলো। তার ছেঁড়া চপ্পলজোড়ার এক পাটি আসলামের পাশে, উল্টে থাকা অন্য পাটিটা জায়দীর দিকে পড়ে রইল। খানিক পর তার নাক ডাকার শব্দ শোনা গেল। 

------------
লেখক পরিচিতি:

প্রখ্যাত পাকিস্তানি সাংবাদিক, ছোট গল্প লেখক এবং ঔপন্যাসিক ইন্তিজার হুসেইন উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী গল্পকারদের একজন। জন্মে ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতের বুলান্দশহরের দিবাইতে। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর পাকিস্তানের লাহোর-এ চলে যান। মান্টোপরবর্তী উর্দু ছোটগল্পের সবচেয়ে শক্তিমান লেখক হিসেবে ইন্তিজার হুসেইনকে বিবেচনা করা হয়।উর্দু ছাড়াও তিনি ইংরেজিতে লেখালিখি করেছেন। লিখেছেন ‘বস্তি’, ‘নয়া ঘর’ এবং ‘আগে সমুন্দর হ্যায়’ নামের তিনটি উপন্যাস। ‘লীভ্স’, ‘দি সেভেন্থ ডোর’. ‘এ ক্রনিকল অফ দি পীককস’ এবং ‘অ্যান আনরিটন এপিক’ তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গল্প সংকলন। তাঁর লেখায় দেশভাগ পূর্ব জীবনের স্মৃতি যেমন ঘুরে ফিরে এসেছে তেমনি ধরা রয়েছে তাঁর জীবন-পাঠ যা একই সাথে সমকালীন এবং কালোত্তীর্ণ।

নিজের দেশে নানা সম্মানে ভূষিত ইন্তিজার হুসেইনকে ২০০৭ সালে ভারতীয় সাহিত্য আকাদেমি প্রেমচাঁদ ফেলোশিপে সম্মানিত করে। ২০১৩-তে ‘বস্তি’ উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার পর তাঁর নাম ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কারের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ বিবেচিত নামের তালিকায় সংযুক্ত হয়। ২০১৪-তে পান ফরাসী সরকার-এর ‘অর্ডে ডেস আর্টস এট ডেস লেটার্স ‘-এর সম্মান।

পেশাগত জীবনে তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ডন-এ কাজ করেছেন।অনুবাদ করেছেন চেখভসহ বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ নানা লেখা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে ছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন একাধিক ছোটগল্প। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত দুটি ছোটগল্প হচ্ছে, ‘স্লিপ’ এবং ‘সিটি অব সরো’। এ ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস বাস্তি'র একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সাতচল্লিশ, উনসত্তর এবং একাত্তরের দিল্লি, ঢাকা এবং লাহোর। উর্দু সাহিত্যের এই শক্তিমান লেখক ২০১৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মারা যান।
 
ইন্তিজার হুসেইন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু গল্প লিখেছেন। 'ঘুম(Sleep)' গল্পটি তার একটি। গল্পটি উর্দু থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন রক্ষণদা জলিল।


অনুবাদক পরিচিতি:
নাহার তৃণা
গল্পকার। অনুবাদক। প্রাবন্ধিক
শিকাগোতে থাকেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ