অনুবাদ : আন্দালিব রাশদী
তপ্ত ও বৃষ্টিহীন সোমবার সকাল। ডেন্টিস্ট অরেলিয় এস্কোবার ডিগ্রিছাড়া ডাক্তার। সকাল সকাল জেগে ওঠা তার নিত্যকার অভ্যাস, সকাল ছটা বাজতেই দোকান খুলে বসলো। প্লাস্টার ছাঁচে ঢাকা কতগুলো নকল দাঁত কাচের বাক্সের বাইরে নিয়ে এলো, একমুঠো যন্ত্রপাতি টেবিলের উপর আকার অনুযায়ী সাজিয়ে রাখলো— যেন এসবের প্রদর্শনী হচ্ছে। তার পরনে ডোরাকাটা কলারহীন শার্ট, সোনালি আংটাতে গলার কাছে আটকানো, ঘাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া ফিতে পরনের প্যান্ট ঝুলিয়ে রেখেছে। তার খাড়া হাড্ডিসার শরীর। চারপাশের সঙ্গে তার চাহনির বলতে গেলে কোন সঙ্গতিই নেই— অনেকটা বধির মানুষের মতো।
টেবিলের উপর জিনিসপত্র সাজিয়ে নেবার পর ড্রিলমেশিনটা তার দাঁত মেরামতি চেয়ারের কাছে নিয়ে নকল দাঁত পালিশ করতে বসে গেলে দেখে মনে হয় লোকটি কি নড়ছে? একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছে, এমনকি প্রয়োজন না হলেও পা চেপে ড্রিলমেশিন পাঞ্চ করছে।
সকাল আটটার পর খানিকক্ষণ কাজ থামিয়ে জানালা পথে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলো পাশের বাড়ির শীর্ষদেশে খুঁটির উপর বসে গা শুকোচ্ছে একজোড়া বিষণ্ন শকুন। মনে হলো দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি হবে। এমন একটি ধারণা নিয়ে আবার কাজে লেগে গেল। এগার বছর বয়সী ছেলের তীক্ষ্ণ ডাক, তার অভিনিবেশ নষ্ট করে দিল।
‘বাবা’।
কী?...
মেয়র চাচ্ছেন তুমি তার দাঁত তুলে দাও।’
তাকে বলে দে আমি এখানে নেই।’
ডেন্টিস্ট একটি সোনার দাঁত পালিশ করছিল। নিজের কাছ থেকে হাতখানেক দূরে সরিয়ে আধবোজা চোখে জিনিসটা পরীক্ষা করলো। ছোট্ট ওয়েটিংরুম থেকে ছেলে আবার চেঁচিয়ে বললো, মেয়র জানেন তুমি আছো কারণ তিনি তোমার কথা শুনতে পেয়েছেন।
ডেন্টিস্ট দাঁত পরীক্ষা করে চলেছে। কাজটা শেষ করে দাঁতটা যখন টেবিলে রাখলো কেবল তখনই বললো, বেশ ভালোই তো হয়েছে। আবার ড্রিলের কাজ শুরু করলো। যে কাঠবোর্ডের বাক্সে তার জিনিসপত্র রাখা সেখান থেকে আরো কতগুলো টুকরো বের করে পালিশের কাজে লেগে গেল।
‘বাবা’,
‘কী?...
ডেন্টিস্টের কথার ধরনে এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি।
ছেলে বলল, তুমি যদি মেয়রের দাঁত তুলে না দাও তোমাকে গুলি করবে।’
কোনোরকম তড়িঘড়ি না করে শান্তভাবে ড্রিলের পাদানি চাপা থামিয়ে চেয়ার পেছন দিকে টানলো এবং টেবিলের নিচের ড্রয়ারটি খুললো। এখানেই তার নিজের রিভলবারটি পড়ে আছে।
ডেন্টিস্ট ছেলেকে বলল, বেশ এবার মেয়রকে বলো, এসে আমাকে গুলি করুক।’ চেয়ারটাকে ঘুরালো যেন তা দরজার মুখোমুখি থাকে আর তার হাত পড়ে থাকে সেই ড্রয়ারের প্রান্তে।
মেয়র দরজায় হাজির হলেন। তিনি তার বাম গাল শেভ করেছেন, কিন্তু অন্য গাল ফোলা, তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে আর সে গালে প্রায় পাঁচদিনের দাড়ি। ডেন্টিস্ট তার বিবর্ণ চাহনিতে মেয়রের মুখে যন্ত্রণাকাতর রাতের সাক্ষ্য দেখতে পেল।
আঙ্গুলের ডগায় ঠেলে ড্রয়ার বন্ধ করে মৃদুস্বরে বললো:
‘বসে পড়ুন’।
মেয়র বললেন,...শুভদিন’,
ডেন্টিস্ট জবাব দিল,...শুভদিন।’
যখন গরম পানিতে যন্ত্রপাতি সেফ হচ্ছে মেয়র চেয়ারের হেয়ারের হেডরেস্টে নিজের মাথার খুলিটা স্থাপন করলেন। আর আগের চেয়ে ভালো অনুভব করতে লাগলেন। তার নিঃশ্বাস বড় শীতল।
ডেন্টিস্টের অফিসের বড় দৈন্যদশা: একটি পুরনো কাঠের চেয়ারের পায়ে চালালো ড্রিল, কানের বাক্সে কিছু সিরামিক বোতল চেয়ারের উল্টোদিকে একটি জানালায় তাতে কাঁধ সমান কাপড়ের পর্দা।
মেয়র যখন বুঝলেন ডেন্টিস্ট এগিয়ে আসছেন, তিনি পা দু’টোর একটাকে অন্যটা দিয়ে আঁকড়ে ধরে হা করে মুখ খুললেন।
অরেলিয় এস্কোবার নিজের মাথা আলোর দিকে ঠেলে দিল। ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত পরীক্ষা করার পর আঙ্গুলে সতর্কভাবে চাপ দিয়ে তার চোয়াল সঠিকভাবে মিলিয়ে দিল।
বললো... আমাকে অ্যানেসথেমিয়া ছাড়াই কাজটা করতে হচ্ছে।’
‘কেন?’
কারণ আপনার মুখে একটি ফোঁড়া রয়েছে।
মেয়র তার চোখে চোখে তাকালেন।
বললেন... ঠিক আছে।’ তারপর হাসতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ডেন্টিস্ট তাকে বিনিময়ে হাসি উপহার দিল না।
ডেন্টিস্ট তার জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির পাত্রটি টেবিলের মাঝখানে রেখে সাঁড়াশি দিয়ে একটা একটা করে যন্ত্র তুলে আনে। তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। থুতু ফেলার পাত্রটি জুতোর ডগা দিয়ে ঠেলে হাত ধোয়ার জন্য বেসিনের দিকে এগোয়। মেয়রের দিকে না তাকিয়েই এসব করে যায়। মেয়র কিন্তু ডেন্টিস্টের উপর থেকে তার দৃষ্টি সরায়নি।
দাঁতটা আসলে নিচের মাটির আক্কেল দাঁত। ডেন্টিস্ট নিজের যুঁৎসই অবস্থানটি ঠিক করে নিয়ে তার দাঁত-সাঁড়াশি দিয়ে সেই দাঁতটিকে চেপে ধরল।
মেয়র চেয়ারের হাতল চেপে ধরলেন, পায়ের সকল শক্তি খাটিয়ে স্থির থাকতে চেষ্টা করলেন, যকৃতের ভেতর শূন্যতা অনুভব করলেন, কিন্তু একটি কথাও বললেন না। কেবল তার কব্জির সঞ্চালন চলতে থাকলো। ডেন্টিস্ট কেবল দাঁতটি নাড়াতে লাগলো। কোনো ধরনের শত্রুতা থেকে নয়, বরং তিক্ত কোমলতা নিয়ে মেয়রকে বললো, ... লেস্টেনেট এবার আমাদের কুঁড়ি মরার দাম দিন।’
মেয়র তার চোয়ালের হাড়ের মচমচ শুনতে পেলেন, অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো তার চোখ। যতক্ষণ পর্যন্ত না দাঁতটি বেরিয়ে আসে তিনি ঠায় নিঃশ্বাস ধরে রাখলেন। চোখভরা কান্নার ফোকর দিয়ে নিজের দাঁতটি দেখতে পেলেন। এই যন্ত্রণাটি তার কাছে এতই অপরিচিত যে গত পাঁচরাত তার উপর দিয়ে যে যাতনা গেছে তাও মনে করতে পারছিলেন না।
থুথুদানির উপর উপুড় হয়ে ঘামে ভিজে হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি নিজের আলখেল্লাটি খুলে পকেট হাতড়ে একটি রুমাল বের করলেন। ডেন্টিস্ট তাকে এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় দিল।
বলল,... চোখটা মুছে নিন।’
মেয়র তা-ই করলেন। তিনি কাঁপছিলেন। ডেন্টিস্ট যখন তার হাত ধুয়ে নিচ্ছে, তার চোখে পড়লো ঘরের কুচকানো সিলিং আর নোংরা মাকড়শার জাল, তাতে আটকানো মাকড়শার পা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। নিজের হাত শুকিয়ে ডেন্টিস্ট ফিরে এলো। বললো,...বাড়ি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়বেন আর লবণপানিতে কুলি করবেন।
মেয়র উঠে দাঁড়ালেন। সামরিক কায়দায় যেনতেনভাবে স্যালুট ঠুকে মেয়র দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। নিজের আলখেল্লার বোতাম তখনও লাগানো হয়নি, পা বাড়িয়ে বললেন, বিলটা পাঠিয়ে দিয়ো।’
— আপনার নামে না এই শহরের নামে।
মেয়র তার দিকে ফিরে তাকালেন না। দরজাটা বন্ধ করে পর্দার ফাঁক দিয়ে বললেন,...একই তো কথা।
তপ্ত ও বৃষ্টিহীন সোমবার সকাল। ডেন্টিস্ট অরেলিয় এস্কোবার ডিগ্রিছাড়া ডাক্তার। সকাল সকাল জেগে ওঠা তার নিত্যকার অভ্যাস, সকাল ছটা বাজতেই দোকান খুলে বসলো। প্লাস্টার ছাঁচে ঢাকা কতগুলো নকল দাঁত কাচের বাক্সের বাইরে নিয়ে এলো, একমুঠো যন্ত্রপাতি টেবিলের উপর আকার অনুযায়ী সাজিয়ে রাখলো— যেন এসবের প্রদর্শনী হচ্ছে। তার পরনে ডোরাকাটা কলারহীন শার্ট, সোনালি আংটাতে গলার কাছে আটকানো, ঘাড়ের উপর দিয়ে যাওয়া ফিতে পরনের প্যান্ট ঝুলিয়ে রেখেছে। তার খাড়া হাড্ডিসার শরীর। চারপাশের সঙ্গে তার চাহনির বলতে গেলে কোন সঙ্গতিই নেই— অনেকটা বধির মানুষের মতো।
টেবিলের উপর জিনিসপত্র সাজিয়ে নেবার পর ড্রিলমেশিনটা তার দাঁত মেরামতি চেয়ারের কাছে নিয়ে নকল দাঁত পালিশ করতে বসে গেলে দেখে মনে হয় লোকটি কি নড়ছে? একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছে, এমনকি প্রয়োজন না হলেও পা চেপে ড্রিলমেশিন পাঞ্চ করছে।
সকাল আটটার পর খানিকক্ষণ কাজ থামিয়ে জানালা পথে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলো পাশের বাড়ির শীর্ষদেশে খুঁটির উপর বসে গা শুকোচ্ছে একজোড়া বিষণ্ন শকুন। মনে হলো দুপুরের আগে আবার বৃষ্টি হবে। এমন একটি ধারণা নিয়ে আবার কাজে লেগে গেল। এগার বছর বয়সী ছেলের তীক্ষ্ণ ডাক, তার অভিনিবেশ নষ্ট করে দিল।
‘বাবা’।
কী?...
মেয়র চাচ্ছেন তুমি তার দাঁত তুলে দাও।’
তাকে বলে দে আমি এখানে নেই।’
ডেন্টিস্ট একটি সোনার দাঁত পালিশ করছিল। নিজের কাছ থেকে হাতখানেক দূরে সরিয়ে আধবোজা চোখে জিনিসটা পরীক্ষা করলো। ছোট্ট ওয়েটিংরুম থেকে ছেলে আবার চেঁচিয়ে বললো, মেয়র জানেন তুমি আছো কারণ তিনি তোমার কথা শুনতে পেয়েছেন।
ডেন্টিস্ট দাঁত পরীক্ষা করে চলেছে। কাজটা শেষ করে দাঁতটা যখন টেবিলে রাখলো কেবল তখনই বললো, বেশ ভালোই তো হয়েছে। আবার ড্রিলের কাজ শুরু করলো। যে কাঠবোর্ডের বাক্সে তার জিনিসপত্র রাখা সেখান থেকে আরো কতগুলো টুকরো বের করে পালিশের কাজে লেগে গেল।
‘বাবা’,
‘কী?...
ডেন্টিস্টের কথার ধরনে এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি।
ছেলে বলল, তুমি যদি মেয়রের দাঁত তুলে না দাও তোমাকে গুলি করবে।’
কোনোরকম তড়িঘড়ি না করে শান্তভাবে ড্রিলের পাদানি চাপা থামিয়ে চেয়ার পেছন দিকে টানলো এবং টেবিলের নিচের ড্রয়ারটি খুললো। এখানেই তার নিজের রিভলবারটি পড়ে আছে।
ডেন্টিস্ট ছেলেকে বলল, বেশ এবার মেয়রকে বলো, এসে আমাকে গুলি করুক।’ চেয়ারটাকে ঘুরালো যেন তা দরজার মুখোমুখি থাকে আর তার হাত পড়ে থাকে সেই ড্রয়ারের প্রান্তে।
মেয়র দরজায় হাজির হলেন। তিনি তার বাম গাল শেভ করেছেন, কিন্তু অন্য গাল ফোলা, তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে আর সে গালে প্রায় পাঁচদিনের দাড়ি। ডেন্টিস্ট তার বিবর্ণ চাহনিতে মেয়রের মুখে যন্ত্রণাকাতর রাতের সাক্ষ্য দেখতে পেল।
আঙ্গুলের ডগায় ঠেলে ড্রয়ার বন্ধ করে মৃদুস্বরে বললো:
‘বসে পড়ুন’।
মেয়র বললেন,...শুভদিন’,
ডেন্টিস্ট জবাব দিল,...শুভদিন।’
যখন গরম পানিতে যন্ত্রপাতি সেফ হচ্ছে মেয়র চেয়ারের হেয়ারের হেডরেস্টে নিজের মাথার খুলিটা স্থাপন করলেন। আর আগের চেয়ে ভালো অনুভব করতে লাগলেন। তার নিঃশ্বাস বড় শীতল।
ডেন্টিস্টের অফিসের বড় দৈন্যদশা: একটি পুরনো কাঠের চেয়ারের পায়ে চালালো ড্রিল, কানের বাক্সে কিছু সিরামিক বোতল চেয়ারের উল্টোদিকে একটি জানালায় তাতে কাঁধ সমান কাপড়ের পর্দা।
মেয়র যখন বুঝলেন ডেন্টিস্ট এগিয়ে আসছেন, তিনি পা দু’টোর একটাকে অন্যটা দিয়ে আঁকড়ে ধরে হা করে মুখ খুললেন।
অরেলিয় এস্কোবার নিজের মাথা আলোর দিকে ঠেলে দিল। ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত পরীক্ষা করার পর আঙ্গুলে সতর্কভাবে চাপ দিয়ে তার চোয়াল সঠিকভাবে মিলিয়ে দিল।
বললো... আমাকে অ্যানেসথেমিয়া ছাড়াই কাজটা করতে হচ্ছে।’
‘কেন?’
কারণ আপনার মুখে একটি ফোঁড়া রয়েছে।
মেয়র তার চোখে চোখে তাকালেন।
বললেন... ঠিক আছে।’ তারপর হাসতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ডেন্টিস্ট তাকে বিনিময়ে হাসি উপহার দিল না।
ডেন্টিস্ট তার জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির পাত্রটি টেবিলের মাঝখানে রেখে সাঁড়াশি দিয়ে একটা একটা করে যন্ত্র তুলে আনে। তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। থুতু ফেলার পাত্রটি জুতোর ডগা দিয়ে ঠেলে হাত ধোয়ার জন্য বেসিনের দিকে এগোয়। মেয়রের দিকে না তাকিয়েই এসব করে যায়। মেয়র কিন্তু ডেন্টিস্টের উপর থেকে তার দৃষ্টি সরায়নি।
দাঁতটা আসলে নিচের মাটির আক্কেল দাঁত। ডেন্টিস্ট নিজের যুঁৎসই অবস্থানটি ঠিক করে নিয়ে তার দাঁত-সাঁড়াশি দিয়ে সেই দাঁতটিকে চেপে ধরল।
মেয়র চেয়ারের হাতল চেপে ধরলেন, পায়ের সকল শক্তি খাটিয়ে স্থির থাকতে চেষ্টা করলেন, যকৃতের ভেতর শূন্যতা অনুভব করলেন, কিন্তু একটি কথাও বললেন না। কেবল তার কব্জির সঞ্চালন চলতে থাকলো। ডেন্টিস্ট কেবল দাঁতটি নাড়াতে লাগলো। কোনো ধরনের শত্রুতা থেকে নয়, বরং তিক্ত কোমলতা নিয়ে মেয়রকে বললো, ... লেস্টেনেট এবার আমাদের কুঁড়ি মরার দাম দিন।’
মেয়র তার চোয়ালের হাড়ের মচমচ শুনতে পেলেন, অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো তার চোখ। যতক্ষণ পর্যন্ত না দাঁতটি বেরিয়ে আসে তিনি ঠায় নিঃশ্বাস ধরে রাখলেন। চোখভরা কান্নার ফোকর দিয়ে নিজের দাঁতটি দেখতে পেলেন। এই যন্ত্রণাটি তার কাছে এতই অপরিচিত যে গত পাঁচরাত তার উপর দিয়ে যে যাতনা গেছে তাও মনে করতে পারছিলেন না।
থুথুদানির উপর উপুড় হয়ে ঘামে ভিজে হাঁপাতে হাঁপাতে তিনি নিজের আলখেল্লাটি খুলে পকেট হাতড়ে একটি রুমাল বের করলেন। ডেন্টিস্ট তাকে এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় দিল।
বলল,... চোখটা মুছে নিন।’
মেয়র তা-ই করলেন। তিনি কাঁপছিলেন। ডেন্টিস্ট যখন তার হাত ধুয়ে নিচ্ছে, তার চোখে পড়লো ঘরের কুচকানো সিলিং আর নোংরা মাকড়শার জাল, তাতে আটকানো মাকড়শার পা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ। নিজের হাত শুকিয়ে ডেন্টিস্ট ফিরে এলো। বললো,...বাড়ি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়বেন আর লবণপানিতে কুলি করবেন।
মেয়র উঠে দাঁড়ালেন। সামরিক কায়দায় যেনতেনভাবে স্যালুট ঠুকে মেয়র দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। নিজের আলখেল্লার বোতাম তখনও লাগানো হয়নি, পা বাড়িয়ে বললেন, বিলটা পাঠিয়ে দিয়ো।’
— আপনার নামে না এই শহরের নামে।
মেয়র তার দিকে ফিরে তাকালেন না। দরজাটা বন্ধ করে পর্দার ফাঁক দিয়ে বললেন,...একই তো কথা।
4 মন্তব্যসমূহ
ভাল লাগলো।
উত্তরমুছুনযা হয় আসলটা পড়তে ইচ্ছা করছে
উত্তরমুছুনযা হয় আসলটা পড়তে ইচ্ছা করছে
উত্তরমুছুনProtom jokon Marcuse pori 9/10 hobe, librerite r temon onubad boi cilona, Ditio bar pori bonduder kache bolar jonno ortat jatila patok bonar jonno... Tar por take soto bar porci nijer jonno , sudui nijer jonno.....
উত্তরমুছুন