অনুবাদ গল্প : শহিদ

মূল : ন্গুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও
অনুবাদ:শামসুজ্জামান হীরা

নিজ বাড়িতে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের হাতে মিস্টার ও মিসেস গারস্টোন খুন হওয়ার পর এ-নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হতে লাগল। বিষয়টা সব খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পেল এবং যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে রেডিয়োর খবরেও প্রচারিত হল। সম্ভবত একারণে যে, তাঁরা ইউরোপ থেকে আসা প্রথম সেটলার [বসতিস্থাপনকারী] যাঁরা নিহত হলেন ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঢেউ যা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশব্যাপী, তাতে। বলা হত, সন্ত্রাসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। জনসমাবেশে, ভারতীয় বাজারে, প্রত্যন্ত আফ্রিকান দুকায় [দোকান], যেখানেই আপনি যান না কেন, — সব জায়গাতেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু না-কিছু না-শুনে উপায় ছিল না। ছিল বহুরকমের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা।


প্রত্যন্ত পাহাড়ের ওপর তৈরি বিচ্ছিন্ন একটি বাড়িতে বিষয়টি যতটা বিশদভাবে আলোচিত হয়েছিল, অন্য কোথাও ততটা নয় — স্থানের সঙ্গে ভালোই মানানসই ছিল বাড়িটির মালিকের নাম — মিসেস হিল। তাঁর স্বামী বসবাসের জন্য এদেশে আগমনকারীদের মধ্যে ছিলেন অগ্রণী এবং চৌকস একজন ব্যক্তি। গতবছর উগান্ডা সফরকালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর একমাত্র পুত্র ও কন্যা এখন ‘স্বদেশে’শিক্ষা গ্রহণ করছে — ‘স্বদেশ’ বলতে বিলাতের অপর নাম বোঝানো হয়ে থাকত। এদেশের প্রথম দিককার একজন স্থায়ী বসবাসকারী হওয়ায় এবং সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো বৃহৎ চা-বাগানের মালিক হওয়ার কারণে তাঁকে সবাই সম্মান করত, যদিও সবাই হয়ত পছন্দ করত না।

কারণ, কেউ কেউ ‘স্থানীয়দের’ প্রতি তাঁর অতিরিক্ত উদার মনোভাবকে ভালোভাবে নিত না। দু’দিন বাদে যখন মিসেস স্মাইলস্ এবং মিসেস হার্ডি মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করতে তাঁর বাড়িতে এলেন, তাঁদের চেহারায় খেলা করছিল যুগপৎ বিষণ্নতা ও সাফল্যের আভাস — বিষণ্নতা, যেহেতু ইউরোপীয়দের (মিস্টার ও মিসেস গারস্টোন বলে নয়) হত্যা করা হয়েছিল, সাফল্য এজন্য যে, ‘স্থানীয়দের’কাছ থেকে তাদের স্বভাবসিদ্ধ নীতিহীনতা, ক্রুরতা ও কৃতজ্ঞতাবোধহীনতার নজির সন্দেহাতীতভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। আর কখনও মিসেস হিল মনে করবেন না যে, স্থানীয়দের সঠিকভাবে চালালে তারা সভ্য হয়ে উঠবে।

মিসেস স্মাইলস্ একজন মাঝবয়সী হ্যাংলা-পাতলা মহিলা, যাঁর শক্ত উন্নত নাসিকা, দৃঢ়সংলগ্ন ঠোঁট যেকাউকে স্পষ্টভাবে একজন মিশনারির কথা স্মরণ করিয়ে দিত। এক অর্থে তিনি তাই ছিলেন। বিশ্বাস করতেন, তিনি এবং তাঁর মত আরও কিছু লোক জংলি দেশের অসভ্য লোকদের জন্য সভ্যতার মরুদ্যান তৈরি করছেন, তিনি তার হাঁটা-চলা, কথাবার্তা এবং আচরণ দিয়ে স্থানীয়দের এ-ব্যাপারটি মনে করিয়ে দেওয়াকে প্রায় তাঁর মহান কর্তব্য হিসাবে জ্ঞান করতেন।

মিসেস হার্ডি ছিলেন ডাচ অভিবাসীদের উত্তরসূরী এবং প্রথমদিকেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এদেশে এসেছিলেন। কোনও কিছু সম্পর্কে নিজস্ব কোনও মতামত না থাকায় তিনি মোটামুটি সেই-সেই মতের সঙ্গে সহমত প্রদর্শন করছিলেন যা তাঁর স্বামী বা গোত্রের মতামতের খুব কাছাকাছি ছিল। যেমন, আজ তিনি মিসেস স্মাইলস্ যা বলছিলেন তার সঙ্গে একমত হচ্ছিলেন। মিসেস হিল ছিলেন তাঁর চিন্তায় অনড় এবং তা রক্ষা করে চলেছিলেন, যেমন তিনি সবসময় করে থাকতেন, স্থানীয়রা অন্তর থেকে অনুগত এবং যা দরকার তা হল তাদের সঙ্গে দয়ালু আচরণ করা।

‘তারা শুধু এটাই চায়। তাদের সঙ্গে দয়ালু আচরণ করুন । তারাও আপনার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবে। আমার ‘ছেলেদের’ দিকে খেয়াল করুন। তারা সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমি যা-ই বলব তারা তাই করবে।’ এই ছিল তাঁর দর্শন এবং এটা অনেক উদার ও প্রগতিশীল প্রকৃতির ব্যক্তি ধারণ করতেন। মিসেস হিল তাঁর ‘ছেলেদের’ জন্য কিছু উদার কাজ করেছিলেন। তিনি শুধু তাদের জন্য ইটের (খেয়াল করুন, ইট) বাসস্থানই নির্মাণ করেননি, বাচ্চাদের জন্য স্কুল তৈরি করে দিয়েছিলেন। এটা কোনও ব্যাপার নয় যে, স্কুলটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ছিল না, এবং ছেলেপিলেরা অর্ধেক বেলা পড়াশোনা করত, বাকি অর্ধেক বেলা কাজ করত বাগানে। কাজটা ছিল অনেক বেশি কিছু একটা, যা বেশির-ভাগ সেটলার করার সাহস পেত না।

‘ভয়াবহ, ওহ্ কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড’, যেন বেশ জোর দিয়ে ঘোষণা করলেন মিসেস স্মাইলস। মিসেস হার্ডি তাঁর সঙ্গে একমত হলেন। মিসেস হিল নিরপেক্ষ থাকলেন।

‘কীভাবে তারা এটা করতে পারল? আমরা তাদের সভ্যতা এনে দিয়েছি। আমরা দাসপ্রথা এবং গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বন্ধ করেছি। তারা কি সবাই দুর্দশাগ্রস্ত অসভ্য জীবন যাপন করছিল না?’ মিসেস স্মইলস্ তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার সব ক্ষমতা উজাড় করে দিয়ে বলে চলেছিলেন। তারপর তিনি দুঃখসহকারে মাথা ঝাঁকিয়ে উপসংহার টানলেন, ‘আমি সবসময়ই বলেছি, তারা কখনও সভ্য হতে পারবে না। সাফ কথা, তারা এটা গ্রহণ করতে পারবে না।’

‘আমাদেরকে সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে।’ মিসেস হিলের পরামর্শ। মিসেস স্মাইলসের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে তাঁর স্বর ছিল বেশি মিশনারিসুলভ।

‘সহিষ্ণুতা! সহিষ্ণুতা! সহিষ্ণু হয়ে আমরা আর কতদিন চালিয়ে যাব? গারস্টোনদের চেয়ে বেশি সহিষ্ণু আর কে হতে পারত? কে বেশি দয়ালু? এবং যত অবৈধ দখলদারদের তাঁরা রক্ষা করতেন!’

‘সে যাক, এটা দখলদাররা নয়, যারা...’

‘তাহলে কে করেছে? কে করেছে?’

‘ওদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো দরকার।’ মিসেস হার্ডির মন্তব্য। তাঁর স্বরে ছিল দৃঢ়প্রত্যয়।

‘চিন্তার ব্যাপার, তাঁদের গৃহপরিচারক আসলে তাঁদেরকে বিছানা থেকে ডেকে তুলেছিল!’

‘তাই!’

‘হ্যাঁ। তাঁদের গৃহপরিচারক দরজায় ধাক্কা দিয়েছিল এবং তাঁদের তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে বলেছিল। বলেছিল কিছু লোক তার পিছু নিয়েছে...’

‘সম্ভবত সেখানে...’

‘না! এটা পুরোপুরি পরিকল্পিত। পুরোটাই চালাকি। দরজা খোলামাত্র ঘাতক দলটি হুড়মুড়িয়ে ঘরে প্রবেশ করেছিল। এসবকিছু পত্রিকায় আছে।’

মিসেস হিল যেন অপরাধীর মত তাকালেন। তিনি তাঁর পত্রিকাটি এখনও পড়েননি।

তখন ছিল চায়ের সময়। সবার অনুমতি নিয়ে তিনি দরজার কাছে গিয়ে দয়া-জড়ানো উচ্চকণ্ঠে ডাকলেন।

‘জোঁরোগে! জোঁরোগে!’

জোঁরোগে তাঁর ‘গৃহপরিচারক’। উঁচু-লম্বা চওড়া কাঁধের একজন প্রায় মাঝবয়সী লোক। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সে মিসেস হিলের চাকরি করে আসছে। পরনে তার সবুজ ট্রাউজার, লাল কাপড়ের পট্টি জড়ানো কোমরে এবং মাথায় একটি লাল রঙের ফেজ-টুপি। সে দরজার কাছে আবির্ভুত হল এবং জিজ্ঞাসার ঢঙে ভুরু তুলল — একটি ভঙ্গি যাকে অনুসরণ করে এই শব্দগুচ্ছ, ‘জি, মেমসাহেব?’ অথবা ÔNdio, BwanaÕ [জি, মনিব — সোয়াহিলি ভাষা]।

ÔLeta ChaiÕ [চা আনো — সোয়াহিলি]।

‘জি, মেমসাহেব!’ সেখানে জমায়েত মেমসাহেবদের দিকে চকিতে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে সে অদৃশ্য হল। কথপোকথন যা জোঁরোগের আগমনে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল তা আবার শুরু হল।

‘তাদেরকে এত নিরীহ দেখায়,’ বললেন মিসেস হার্ডি।

‘হুঁ। পুরোপুরি নিষ্পাপ ফুল কিন্তু নিচে তার বিষধর শাপ।‘ [Quite the innocent flower but the serpent under it] মিসেস স্মাইলসের শেক্সপিয়রের সঙ্গে পরিচয় ছিল।

‘আমার সঙ্গে তো ওর থাকা হল দশ বছরের মত। অত্যন্ত বিশ্বস্ত। আমাকে পছন্দ করে খুব।’ মিসেস হিল তাঁর ‘ছেলে’কে সমর্থন করলেন।

‘তাতে কিছু এসে যায় না, আমি তাকে পছন্দ করি না। তার চেহারা আমার পছন্দ নয়।’

‘আমারও একই মত।’

চা আনা হল। তখনও মৃত্যুটি, সরকারি নীতি, এবং সেইসব বাগাড়ম্বরসর্বস্ব রাজনৈতিক নেতা, যারা অন্যসব দিক থেকে সুন্দর এই দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুর শামিল, এসব বিষয় নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতে-যেতে তাঁরা চা পান করে চললেন। কিন্তু মিসেস হিল মনে করেন এইসব অর্ধশিক্ষিত নেতা যারা ব্রিটেনে গিয়েছিল এবং মনে করত তাদের শিক্ষা আছে, জানত না তাদের জনগণের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা।

যাহোক, যখন মিসেস স্মাইলস্ এবং মিসেস হার্ডি চলে গিয়েছিলেন, তিনি সেই মৃত্যু-ঘটনা ও আলোচনা নিয়ে ভাবলেন। তিনি অস্বস্তি বোধ করলেন এবং প্রথমবারের মত অনুভব করলেন যে, কোনও আক্রমণ হলে সাহায্য জোটে এমন এলাকা থেকে তিনি বেশ দূরবর্তী স্থানে বাস করেন। তাঁর একটা পিস্তল আছে, এই যা ভরসা।

নৈশভোজ সাঙ্গ হল। সেইসঙ্গে শেষ হল জোঁরোগের দিন। সে আলো থেকে বেরিয়ে এল অসংখ্য ছায়ার মধ্যে এবং মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। সে মিসেস হিলের বাসা থেকে পাহাড়ের পাদদেশে শ্রমিকদের বস্তি পর্যন্ত যাওয়ার ফুটপাত ধরে হাঁটতে লাগল। চারপাশের নৈঃশব্দ্য এবং নিঃসঙ্গতা তাড়াতে সে শিস দিতে চেষ্টা করল। পারল না। উপরন্তু সে শুনল এক পাখির তীক্ষ্ণ সুরের ডাক। রাতের বেলা কোনও পাখির কূজন বিস্ময়কর বটে।

সে থামল, দাঁড়াল স্থিরভাবে। নিচে সে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। কিন্তু তার পেছনে মেমসাহেবের বাড়ির অতিকায় ছায়া-অবয়ব — বিশাল, চিত্তাকর্ষক — দেখা যাচ্ছিল। সে ইচ্ছা করে রাগ নিয়ে পেছন ফিরে তাকাল। রাগের বশে হঠাৎ তার মনে হল সে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।

‘তুমি। তুমি। আমি দীর্ঘসময় তোমার সঙ্গে বসবাস করছি। এবং তুমি আমাকে এইটুকুনে কমিয়ে এনেছ।’ জোঁরোগে ঘরটিকে উদ্দেশ করে এগুলো, আরও অনেককিছু চিৎকার করে বলতে চাইল, যা সে দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে রেখেছিল তার অন্তরে। বাড়িটি জবাব দেবে না। সে বোকামি বোধ করল এবং সামনে এগোলো।

আবার পাখিটি ডেকে উঠল। দু’বার!

‘তাঁর প্রতি এটি একটি হুঁশিয়ারি,’ জোঁরোগে ভাবল। আবার তার পুরো অন্তর ক্রোধে ভরে উঠল — তাদের বিরুদ্ধে ক্রোধ যাদের চামড়া সাদা, সেই বিদেশি মানুষদের প্রতি, যারা ঈশ্বর-প্রদত্ত জমি থেকে প্রকৃত সন্তানদের উচ্ছেদ করেছিল। ঈশ্বর গিকুয়ুদেরকে [কেনিয়ার সর্ববৃহৎ নৃগোষ্ঠী] কি এই সমগ্র ভূখণ্ডের প্রতিশ্রুতি দেননি, তাকে এবং তার সন্তানদের এখন এবং সর্বকালের জন্য? আর এখন কিনা সেই ভূমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সে তার পিতার কথা স্মরণ করল, যা সে সবসময়ই করত যখন এই ক্রোধ ও তিক্ততার মুহূর্তগুলো তাকে ঘোরের মধ্যে নিয়ে যেত। সে মারা গিয়েছিল সংগ্রামে — ধ্বংস করে ফেলা মন্দিরগুলো পুনর্নির্মাণের সংগ্রামে। সেটা সেই সুবিদিত ১৯২৩-এর নাইরোবি ম্যাসাকার, যখন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ এক মিছিলে শামিল জনতার ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করেছিল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তার বাবাও ছিল। তখন থেকে জোঁরোগেকে জীবনধারণের জন্য লড়াই শুরু করতে হয়েছিল — এখানে-সেখানে ইউরোপীয় ফার্মে চাকরির খোঁজে। অনেক ধরনের লোকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল — কেউ কঠোর, কেউ দয়ালু, কিন্তু সবাই কর্তৃত্ববাদী, তাকে দিত সেই পরিমাণ বেতন যা তার জন্য উপযুক্ত মনে করত। তারপর সে হিলদের কাজে নিয়োগ লাভ করেছিল। তার এখানে আসাটা অদ্ভুত এক কাকতালীয় ঘটনা ছিল। সম্পত্তির বিরাট এক অংশ, যা এখন মিসেস হিলের দখলে, একসময় ছিল তাদের দখলে যা তার বাবা তাকে দেখিয়েছিল। তারা দেখল ভূসম্পত্তি বেদখল হয়ে গিয়েছে যখন দুর্ভিক্ষের কারণে তার বাবাসহ আরও কিছু লোক সাময়িকভাবে মুরাঙ্গা গিয়েছিল। তারা ফিরে এল, কিন্তু হায়! সম্পত্তি ততদিনে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল।

‘তুমি কি সেই ফিগ [মিষ্টি ফল] গাছটি দেখেছ? জেনে রেখ, ওই জমি তোমার। ধৈর্য ধর। এই ইউরোপীয়দের দিকে নজর রাখ। তারা চলে যাবে এবং তখন তুমি তোমার জমি দাবি করতে পারবে।’

তখনও সে খুব ছোট। পিতার মৃত্যুর পর জোঁরোগে ভুলে গিয়েছিল তার এই আজ্ঞা। কিন্তু যখন কাকতালীয়ভাবে এখানে এল এবং গাছটি দেখল, সে সবকিছু মনে করতে পারল। এর সব বৃত্তান্ত সে জানল — হৃদয় দিয়ে জানল সবকিছু । সে জানল কোথা দিয়ে প্রতিটি সীমানা চলে গিয়েছে।

জোঁরোগে কখনও মিসেস হিলকে পছন্দ করত না। তিনি শ্রমিকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন, এই চিন্তা নিয়ে তাঁর যে আত্মপ্রসাদ সেটাকে সে সবসময় অপছন্দ করত। মিসেস স্মাইলস্ এবং মিসেস হার্ডির মত নিষ্ঠুর লোকদের সঙ্গে সে কাজ করেছিল। কিন্তু সবসময় জানত কীভাবে তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। কিন্তু মিসেস হিল! তাঁর উদারনীতিবাদ ছিল প্রায় শ্বাসরুদ্ধকর। জোঁরোগে সেটলারদের ঘৃণা করত। সর্বোপরি ঘৃণা করত, যা সে মনে করত তাদের কপটাচার এবং আত্মপ্রসাদ। সে জানত, মিসেস হিলও কোনও ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি ছিলেন অন্য সবার মতই, তিনি কেবল ভালোবাসতেন প্রভুত্ববাদকে। তাঁর নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, তিনি ছিলেন অন্যন্যদের থেকে ভালো। কিন্তু আদপে তিনি ছিলেন অধিকতর মন্দ। আপনি ঠিক জানতেন না, তাঁর সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলতে হয়।

হঠাৎ করে জোঁরোগে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আমি তাদের ঘৃণা করি! আমি তাদের ঘৃণা করি!’ তখন একধরনের হিংস্র পরিতৃপ্তি তার ওপর এসে ভর করল। সে যাই হোক, আজ রাতে মিসেস হিল মারা যাবেন — তাঁর আত্মতৃপ্তির, উদারবাদের খেসারত দেবেন, তাঁর কর্তৃত্ববাদের এবং তাঁর ঔপনিবেশিক সম্প্রদায়ের যত পাপ তার খেসারত দেবেন। এটা হবে, ব্যস্, একজন সেটলার কমে যাওয়া।

সে তার নিজের কুঠুরিতে এল। অন্য শ্রমিকদের কক্ষগুলো থেকে কোনও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল না। এমন কী তাদের অনেকের কক্ষের বাতিও নিভে গিয়েছিল। বোধহয় কেউ কেউ এরই মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল, অথবা বিয়ার পানের জন্য ‘নেটিভ রিজার্ভে’ [আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত স্থান] গিয়েছিল। সে লন্ঠন জ্বালাল এবং বিছানার ওপর বসল। অতি ক্ষুদ্র একটি কক্ষ। বিছানার ওপর বসে কেউ যদি ভালোভাবে হাত ছড়িয়ে দিত তাহলে কক্ষের প্রায় সবগুলো প্রান্ত স্পর্শ করতে পারত। তারপরও এখানেই তাকে তার দুই স্ত্রী ও বেশ ক’টা বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে থাকতে হত, থাকতে হয়েছিল আসলে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। কী ঠাসাঠাসি! তারপরও মিসেস হিল ভাবতেন যে, ইট দিয়ে ঘর বানিয়ে তিনি অনেক কিছু করেছেন।

ÔMzuri sana, eh?Õ [খুব ভালো, অ্যাহ্? — সোয়াহিলি] এধরনের প্রশ্ন করতে তিনি পছন্দ করতেন। এবং যখনই কোনও অতিথির আগমন ঘটত, তিনি তাদের পাহাড়ের কিনারে নিয়ে যেতেন এবং ঘরগুলো দেখাতেন।

মিসেস হিল কী করে তাঁর এইসব স্ব-অভিনন্দিত সুকৃতির খেসারত দেবেন এটা ভেবে জোঁরোগের ঠোঁটে কোণে আবার ক্রুর হাসির রেখা দেখা দিল। সে এটা জানত যে, তার একটা কুঠার ছিল শাণ দেওয়ার জন্য। তার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হবে, এবং দখলকৃত পারিবারিক জমির জন্য চরম আঘাত হানতে হবে। এটা তার দূরদর্শিতা ছিল যে, সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের রিজার্ভে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তা নাহলে তারা হয়ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত; কোনাক্রমেই সে তাদের বিপদে ফেলতে চাইছিল না, যদি কাজ সমাধা হওয়ার পর পালিয়ে যেতে সে বাধ্য হত।

অন্য Ihii [স্বাধীনতাকামী “ছেলেরা” — সোয়াহিলি] যেকোনোও সময় আসতে পারে। সে তাদের পথ চিনিয়ে সেই বাড়িতে নিয়ে যাবে। বিশ্বাসঘাতকতা — হ্যাঁ! কিন্তু কী প্রয়োজনে।

রাতের পাখির ডাক, অন্যসব সময় থেকে এবার বেশি উচ্চরবে, তার কানে এল। ওটা ছিল অলক্ষুনে। এটা সবসময় মৃত্যুর ইঙ্গিত দিয়ে থাকে — মিসেস হিলের জন্য মৃত্যু। সে তাঁর কথা ভাবল। তাঁকে স্মরণ করল। মেমসাহেব, তার মনিবের সঙ্গে দশ বছরেরও বেশি সময় সে কাটিয়েছে। সে জানে যে, তিনি তাঁর স্বামীকে ভালোবাসতেন। এ-সম্পর্কে সে নিশ্চিত ছিল। তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে তিনি শোকে প্রায় মরতে বসেছিলেন। সেইসময়ে তার উপনিবেশবাদিতা দূর হয়ে গিয়েছিল। সেই অরক্ষিত মুহূর্তে জোঁরোগে তাঁকে সমবেদনা জানানোর সুযোগ পেয়েছিল। তারপর সন্তানগুলো! সে তাদেরকে চিনত। সে তাদেরকে অন্য যেকোনোও সন্তানের মত বেড়ে উঠতে দেখেছিল। প্রায় তার নিজেরগুলোর মত। তারা তাদের বাবা-মাকে ভালোবাসত, এবং মিসেস হিল সবসময় তাদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দরদি, অত্যন্ত স্নেহশীল। সে তাদের কথা চিন্তা করল, ইংল্যান্ডে বা যেখানেই তারা থাকুক, হয়ে পড়বে পিতৃ-মাতৃহীন।

এবং তখন সে বুঝতে পারল, অতি আকস্মিকভাবে যে, সে এ-কাজ করতে পারবে না। সে বলতে পারবে না কেমন করে, কিন্তু মিসেস হিল হঠাৎ করেই একজন নারী, একজন স্ত্রী, নেরি বা ওয়ামবুইয়ের মত কেউ একজন এবং সর্বোপরি একজন মা-এর পরিপূর্ণ রূপ পরিগ্রহ করেছিলেন। সে একজন নারীকে হত্যা করতে পারছিল না। একজন মাকে সে হত্যা করতে পারছিল না। এই পরিবর্তনের জন্য সে নিজেকে ঘৃণা করল। সে উত্তেজনা বোধ করল। খুব চেষ্টা করল নিজেকে অন্য অবস্থায় নিতে, তার পুরাতন সত্তায়, এবং তাঁকে নেহাত একজন সেটলার হিসাবে দেখতে। একজন সেটলার হিসাবে এটা সহজ ছিল। কেননা, জোঁরোগে সব সেটলার এবং ইউরোপীয়কে ঘৃণা করত। যদি সে তাঁকে শুধু সেভাবে দেখত (অনেক সেটলার বা শ্বেতাঙ্গের মধ্যে একজন হিসাবে) তাহলে সে এটা করতে পারত। কোনওরকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া। কিন্তু সে তার অন্য সত্তাকে ফিরিয়ে আনতে পারল না। যাহোক, এখন নয়। সে কখনও তাঁর সম্পর্কে এভাবে ভাবেনি। আজকের আগে কখনও। এবং যদিও সে জানত তিনি সেরকমই আছেন, আগামীকালও সেরকমই থাকবেন — একজন সদয়, আত্মসন্তুষ্টিমগ্ন নারী। তখন বুঝতে পারল সে একজন বিভক্ত মানুষ, এবং সম্ভবত সবসময়ই সেরকম থাকবে। এমনকি তার কাছে এখন এরকম মনে হল, দশ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করা তার পক্ষে অসম্ভব, যদিও তার জন্য সেই বছরগুলো ছিল কষ্টের ও লজ্জার। সে প্রার্থনা করল এবং কামনা করল, আর যেন অন্যায় না থাকে। তাহলে কখনও এধরনের বিভেদ থাকবে না — সাদা এবং কালোর মধ্যে বিভেদ। তাহলে সে কখনও আর এরকম যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে পড়বে না।

কী করা যায় এখন? সে কি “ছেলেদের”সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? সে সেখানে বসল, অস্থিরমতি, কাজের ধারা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ। যদি শুধু সে তাঁর সম্পর্কে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না ভাবত! সে যে সেটলারদের ঘৃণা করত এটা তার মনে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু মুক্ত মানসিক অবস্থার মধ্যে থেকে দুটি সন্তানের মাকে হত্যা করা তার কাছে খুবই কষ্টকর একটি কাজ বলে মনে হল।

সে বেরিয়ে পড়ল।

অন্ধকার তখনও তাকে ঢেকে রেখেছিল, এবং সে কোনওকিছুই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল না। ঊর্ধ্বাকাশের তারাগুলো মনে হচ্ছিল উদগ্রীব হয়ে জোঁরোগের সিদ্ধান্ত জানার জন্য অপেক্ষা করছিল। তখন, যেন তাদের শীতল চাউনি তাকে বাধ্য করছিল, সে হাঁটতে শুরু করল, ফিরে যেতে লাগল মিসেস হিলের বাড়ির দিকে। সে তাঁকে রক্ষা করবার সিদ্ধান্ত নিল। এবং তারপর সে হয়ত বনে যেত। সেখানে অনন্তকাল ধরে লড়াই করত তার মুক্ততর বিবেকের সঙ্গে। ব্যাপারটা তার কাছে চমৎকার মনে হল। এটা অন্য “ছেলেদের” সঙ্গে তার বিশ্বাসভঙ্গের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবেও কাজ করত বেশ।

নষ্ট করবার মত সময় ছিল না। এরই মধ্যে ভালোই দেরি হয়ে গিয়েছিল এবং “ছেলেরা” যেকোনোও সময় এসে পড়তে পারে। সুতরাং সে দৌড়াতে লাগল একটিমাত্র লক্ষ্যে — নারীটিকে রক্ষা করতে হবে। পথে সে পদধ্বনি শুনতে পেল। সে ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং নিঃসাড়ভাবে শুয়ে থাকল। সে নিশ্চিত ছিল যে, ওরা ছিল “ছেলেরা”। শ্বাস বন্ধ করে সে অপেক্ষা করতে লাগল পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত। আবার সে নিজেকে ঘৃণা করল এই বিশ্বাসভঙ্গের জন্য। কিন্তু কী করে সে অন্য এই কণ্ঠস্বর শোনা থেকে বিরত থাকতে পারে? পায়ের আওয়াজ পুরোপুরি মিলিয়ে যাওয়ার পর সে আবার দৌড়ে চলল। দৌড়ানোর প্রয়োজন ছিল, কেননা “ছেলেরা”তার প্রতারণা ধরতে পারলে নির্ঘাত তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু এটা নিয়ে সে মাথা ঘামাল না। সে চাইছিল অন্য কাজটি সমাধা করতে। অবশেষে ঘর্মাক্ত দেহে, হাঁপাতে হাঁপাতে সে মিসেস হিলের বাড়িতে পৌঁছাল এবং চিৎকার করে দরজা ধাক্কাতে লাগল, ‘মেমসাহেব, মেমসাহেব!’

মিসেস হিল তখনও শুতে যাননি। বিভিন্ন চিন্তা মাথায় নিয়ে তিনি বসেছিলেন। অন্যান্য মহিলার সঙ্গে সেই বিকেলের কথপোকথনের পর থেকে তিনি বেশি থেকে আরও বেশি অস্থির বোধ করছিলেন। যখন তাঁকে একা রেখে জোঁরোগে বিদায় নিয়েছিল, তিনি সিন্দুকের কাছে গিয়ে তাঁর পিস্তল তুলে নিয়েছিলেন, ওটা নাড়াচাড়া করছিলেন। প্রস্তুত থাকা উত্তম। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছিলেন। নাহলে তিনি নিশ্চয়ই আজ তাঁর সঙ্গে থাকতেন।

তিনি বারবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন এবং শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করলেন। তিনি এবং তাঁর স্বামী ও অন্যান্যরা এই দেশের ঊষর জনমানবহীন প্রান্তরকে বশে এনেছিলেন এবং পরিত্যক্ত বিশাল প্রান্তরের উন্নয়ন করেছিলেন। জোঁরোগের মত লোকেরা এখন পরিতৃপ্তির সঙ্গে বসবাস করে কোনওরূপ গোষ্ঠী-যুদ্ধের ন্যূনতম আশঙ্কা ছাড়া। এজন্য তাদের ইউরোপীয়দের ধন্যবাদ জানানোর মত অনেক কিছু আছে।

হ্যাঁ, তিনি সেই রাজনীতিকদের পছন্দ করতেন না যারা এসেছিল অনুগত এবং কঠোর পরিশ্রমী লোকগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে, বিশেষ করে যখন তাদের সঙ্গে সহৃদয়তাপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছিল। তিনি গারস্টোনদের এই হত্যাকাণ্ডকে পছন্দ করেননি। না! তিনি তা পছন্দ করেননি। এবং যখন তিনি এটা মনে করলেন যে তিনি প্রকৃতই নিঃসঙ্গ, তিনি ভাবলেন এটা তাঁর জন্য উত্তম নাইরোবি অথবা কিনানগোপ-এ যাওয়া এবং সেখানে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিছুদিন কাটানো। কিন্তু তিনি তাঁর ‘ছেলেদের’ কী করবেন? তাদের সেখানে ছেড়ে যাবেন? তিনি চিন্তায় পড়লেন। জোঁরোগের কথাও ভাবলেন তিনি। অদ্ভুত একটা ছেলে। তার কি একাধিক স্ত্রী? তার কি বড় পরিবার? ব্যাপারটা তাঁর কাছেও বিস্ময়কর মনে হল, এটা অনুধাবন করে যে, তিনি তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছেন অথচ এসব বিষয় নিয়ে কখনও চিন্তা করেননি। এই বোধ তাঁকে কিছুটা আহত করল। এই প্রথমবার যখন তিনি তাকেও পরিবারসহ একজন মানুষ হিসাবে চিন্তা করেছিলেন। তিনি সবসময় তাকে একজন ভৃত্য হিসাবেই দেখতেন। এমন কী এখনও তার গৃহপরিচারককে পরিবারসহ একজন পিতা হিসাবে ভাবতে তাঁর কাছে হাস্যকর মনে হল। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। এটা একটা বাদ পড়া বিষয়, ভবিষ্যতে ঠিক করে নিতে হবে।

আর তখনই তিনি সদর দরজায় ধাক্কার শব্দ শুনলেন এবং একটি কণ্ঠের আহ্বান, ‘মেমসাহেব! মেমসাহেব!’

এটা ছিল জোঁরোগের কণ্ঠস্বর। তাঁর গৃহপরিচারক। তাঁর মুখমণ্ডলে ঘাম দেখা দিল। গারস্টোনদের মৃত্যুর ঘটনা তার মনে আসায় তিনি এমনকি ছেলেটি কী বলছিল তা শুনতে পেলেন না। এটা তাঁর অন্তিম সময়। পথের শেষ। তাহলে, জোঁরোগে “তাদের” এখানে নিয়ে এসেছে! তিনি কেঁপে উঠলেন এবং দুর্বল বোধ করলেন।

কিন্তু হঠাৎই তাঁর ভেতর শক্তি ফিরে এল। তিনি জানেন তিনি একাকী ছিলেন। তিনি জানেন, তারা দরজা ভেঙে ঢুকবে। না! তিনি বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবেন। তিনি আরও শক্ত হাতে পিস্তলটি ধরে দরজা খুললেন এবং দ্রুত গুলি চালালেন। তখন একধরনের বিবমিষা তাঁর মধ্যে দেখা দিল। এই প্রথম তিনি একজন মানুষ হত্যা করলেন। তিনি দুর্বল বোধ করলেন, এবং আর্তচিৎকার করে পড়ে গেলেন, ‘এসো, আমাকে হত্যা কর!’ তিনি জানতেন না যে তিনি আসলে তাঁর রক্ষাকারীকে হত্যা করেছেন।

পরের দিন, এসবকিছুই পত্রিকায় বেরোল। পঞ্চাশজনের একটি শক্তিশালী দলের সঙ্গে একাকী একজন নারী লড়াই করতে পারেন, এ এক অভূতপূর্ব সাহসিকতা! এবং এটা ভাবা যে, তিনি একজনকে হত্যাও করেছেন।

তাঁকে অভিনন্দন জানানোর সময় মিসেস স্মাইলস্ এবং মিসেস হার্ডি বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত ছিলেন।

‘আমরা আপনাকে বলেছি, ওরা সবাই খারাপ।’

‘ওরা সবাই খারাপ।’ সম্মতি জানালেন মিসেস হার্ডি। মিসেস হিল চুপচাপ রইলেন। জোঁরোগের মৃত্যুর ঘটনা তাঁকে উদ্বিগ্ন করেছিল। তিনি যতই এটা নিয়ে ভাবছিলেন ততই এটা তাঁকে বেশি হতবুদ্ধিকর অবস্থায় ফেলছিল। তিনি শূন্যে চেয়ে রইলেন। তারপর ধীরে হেঁয়ালিপূর্ণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

‘আমি জানি না।’ তিনি বললেন।

‘জানেন না?’ মিসেস হার্ডি জিজ্ঞেস করলেন।

‘হ্যাঁ। এটা তাই। রহস্যজনক।’ মিসেস স্মাইলসের মধ্যে ছিল বিজয়ীর ভাব। ‘তাদের সবাইকে চাবুক মারা উচিত।’

‘তাদের সবাইকে চাবকানো উচিত।’ একমত হলেন মিসেস হার্ডি।



টীকা:



প্রথম বন্ধনীর ভেতরকার শব্দ ও বাক্যগুলো লেখকের, তৃতীয় বন্ধনীর ভেতরকারগুলো অনুবাদকের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ