হ্যাঁরে, তোর বাবা মা আছে?
না।
দুজনেই মারা গেছে?
হ্যাঁ।
বোনটোন?
না।
তুই একা?
হ্যাঁ।
নিস্তব্ধতা।
কী করিস?
ভিক্ষা।
রোজ কত পাস?
কুড়ি পয়সা! তিরিশ পয়সা!
এতেই চলে যায়?
হ্যাঁ।
কী খাস?
মুড়িটুড়ি খাই।
নিস্তব্ধতা।
আজ কত পেয়েছিস?
আজ ভিক্ষা করিনি।
কেন?
আজ ভাল লাগল না।
শরীর খারাপ?
না।
নিস্তব্ধতা।
এই চেনটেন লাগানো জামাটা কিনেছিস?
না।
কেউ দিয়েছে?
না।
কোথায় পেলি?
কুড়িয়ে পেয়েছি।
কোথা থেকে?
নর্দমা থেকে।
ও।
নিস্তব্ধতা।
ইজেরটা?
এটা মা দিয়েছিল।
নিস্তব্ধতা।
তোর মাকে মরতে দেখেছিলি?
হ্যাঁ।
কী হয়েছিল?
অসুখ করেছিল।
কোথায় মরে গেল?
ওই যে ওইখানটায়।
তোর মা-র নাম কি?
গৌরী।
বাবার নাম?
সর্যুপ্রসাদ সিং।
বাবাকে দেখেছিস?
না।
মা নাম বলে গিয়েছিল?
হ্যাঁ।
কতদিন আগে মারা গেছে?
অনেকদিন।
তোর বয়স কত? সাত?
অনেকদিন।
নিস্তব্ধতা।
তোর কোনও অসুখ আছে?
না।
কোনও কষ্ট হয়?
না।
ঘুম হয়?
হ্যাঁ।
কোথায় শুস?
এইখানে।
ন্যাকড়াটা পেতে?
হ্যাঁ।
বৃষ্টি হলে? হববে!
স্বপ্ন দেখিস?
হ্যাঁ।
মনে আছে?
না।
মাকে স্বপ্ন দেখিসনি?
একবার দেখেছিলুম।
মনে আছে?
না।
তোর পায়খানা কী--রকম হয়?
ন্যাড় হয়।
নিস্তব্ধতা।
জ্যোতি বসুর নাম শুনেছিস?
না।
ইন্দিরা গান্ধী?
না।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়?
না।
উত্তমকুমার?
উত্তমকুমারকে চিনিনা না।
কখনও সিনেমা দেখিসনি?
না।
সূর্য কোনদিকে ওঠে?
এইদিকে! ওইদিকে! সেইদিকে।
তোর দেশের নাম জানিস?
দেশ?
এই যে, যে মাটিতে এখন বসে আছিস?
বিটি রোড।
নিস্তব্ধতা।
তোর ভয় করে না?
না।
কাউকে ভয় করে না?
পুলিসকে ভয় করে!
আজ ভিক্ষে করিসনি, কী খেলি?
ওই দই-এর হাঁড়িটা।
দোকান থেকে ফেলে দিল?
হ্যাঁ।
গায়ে যা লেগেছিল?
হ্যাঁ।
নিস্তব্ধতা।
ওই কুকুরটাকে চিনিস?
হ্যাঁ। ও ত আমার কুকুর!
তোর কুকুর?
আমার মা ওকে মানুষ করেছে।
ওর নাম কী?
রোবি। এই রোবি—উসস। উসস।
নিস্তব্ধতা।
তোকে প্রথমে কী কথা জিজ্ঞেস করেছিলুম?
তোর বাপ-মা আছে?
তোর একটা চোখ লাল আর মস্ত বড়, তুই জানিস?
না ত।
আয়না দেখিস না?
অনেকদিন আগে দেখেছিলুম।
নিস্তব্ধতা।
তোর নাম কী?
গণেশ।
-----------------
রচনা : ১৯৭৫
টারজান মিনিবুক—১১
১৯৮০
2 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্য? বেধড়ক চড় খেলাম।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী।
খুব প্রিয় একটা গল্প।
উত্তরমুছুনসহজ সরল সংলাপ দিয়েও যে কশাঘাতের অনুভব পৌছে দেয়া সম্ভব- তার উদাহরণ এই গল্পটি।