শান্তনু ভট্টাচার্য'এর গল্প : কনককুমার

হয়তো ঠিকঠাক হিসাব কষে দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর বলতে পারব না, তবে এটা বলব, কনককুমারের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিনের। অনেক দিন ধরেই আমি কনককুমারকে চিনি এবং কনককুমার আমাকে চেনেন। কনককুমারকে আমি প্রথম দেখি খুব অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে; আসলে আমি দেখিনি, কনককুমার-ই প্রথম আমাকে দেখেছিলেন। আমার চারপাশে জমে থাকা ভিড় সরিয়ে সামনে এসে দাড়িয়ে, মাথা থেকে পা অবধি জরিপ করে, চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন--- নাম কী?

জীবনে ওই এক বারই আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, ভুলে গিয়েছিলাম বাড়ি ফেরার রাস্তাটা! কনককুমার আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছিলেন সে-দিন। অল্প কিছুক্ষণ ছিলেন, কিছু কথা বলেছিলেন, তারপর চলে গিয়েছিলেন। দু-দিন পর আবার এসেছিলেন। সে-দিন অনেকক্ষণ ছিলেন আমাদের এই ভাঙা বাড়িতে। ঘুরে-ঘুরে বাড়িটা দেখেছিলেন; বাড়ির চারধারে যে এলোমেলো বাগান, ঝোপঝাড়--- সেখানে হেঁটেছিলেন। এটা-সেটা কথা বলেছিলেন। সমাজ-চলতি, আমার জানা সম্মানজ্ঞাপক প্রত্যেকটি সম্মোধন এক-এক করে আমি তাঁর প্রতি ব্যবহার করেছিলাম, কিন্তু প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তিনি ভীষণ আপত্তি জানিয়েছিলেন। শেষে বলেছিলেন, তুমি আমাকে ডাকার সময় শুধু নামটাই ব্যবহার করবে। নামের আগে-পরে আর কিছু যোগ করবে না, এতে আমার সুন্দর নামটা মাধুর্য হারাবে!

আমার মনে আছে কথাগুলো--- আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি কোথায় থাকেন?

তিনি খুব সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছিলেন--- ভূতের গলিতে, ওখানেই আমার জন্ম।
--- আপনি কী করেন?
--- চাকরি করি; প্রথমে জাহাজে করতাম, ছেড়ে দিয়ে রেলে, তারপর রেল ছেড়ে উড়োজাহাজে।
--- জল থেকে শুরু করে এখন আকাশে!
--- ঠিক বলেছ! তুমি খুব বুদ্ধিমান।
কথা শেষ করেই সে-দিন উঠে পড়েছিলেন কনককুমার--- যাই, আবার একদিন আসব।

ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা দিয়েছিলেন। হাঁটায় যেন যোগ করেছিলেন কিছুটা বাড়তি গতি!
তিনি আমাকে 'বুদ্ধিমান' বলায়, চলে যাবার পরেই আমি তাঁকে নিয়ে ভাবতে বসেছিলাম। প্রথমেই মনে পড়েছিল, তিনি যে 'ভূতের গলি'-র কথা বললেন, তেমনই এক ভূতের গলিতে বাংলা-সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কথাসাহিত্যিক জন্মেছিলেন।... কিন্তু তাঁর চাকরির কথা ভাবতে গিয়ে মনে হয়েছিল, মানুষটা মিথ্যা বলেছেন। জল থেকে আকাশ অবধি চাকরি করার মতো যোগ্য লোক তিনি নন। এ-রকম যোগ্যতা থাকা আমাদের দেশের কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।... পরে মনে হয়েছিল, কেন সম্ভব নয়! একটা মানুষ যদি কঠোর-কঠিন অনুশীলনে সমস্ত পরিস্থিতির জন্য নিজেকে গড়ে নিতে পারেন, তবে তিনি কেন পারবেন না বিভিন্ন চাকরিতে নিজেকে নিয়োগ করতে!

তারপর আবার একদিন তিনি এলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বাড়িতে কে-কে আছেন?
কনককুমার বললেন--- কেউ নেই।... চাকরি ছাড়াও তো আমি কেউটে-গোখরো-কাঁকড়াবিছে-মৌমাছি নিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করি, তাই আমার প্রিয়জনেরা আমায় ছেড়ে চলে গেছে।

আমার মনে হল, আমাকে কখনো তাঁর বাড়িতে না নিয়ে যাওয়া, এবং এ-ব্যাপারে আমার দিক থেকে কোনো অনুরোধ বা আবদারের সম্ভাবনা থামাতেই কথাগুলো বললেন তিনি। আমি আর কোনো প্রশ্ন করিনি সে-দিন। কারণ, আমি বুঝে গিয়েছিলাম, কনককুমার নামের লোকটা একটা ডাহা মিথ্যাবাদী।

মিথ্যাবাদী আর গুলবাজ--- মানুষ সে যেমনই হোক, কনককুমার মাঝেমধ্যেই আমার কাছে চলে আসতেন; এবং তার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। ঘটনাচক্রে, সে-সময়গুলোতে আমি বাড়িতেই থাকতাম। আসলে আমি অধিকাংশ সময়টা বাড়িতেই থাকি।

বেশ কিছুটা সময় তিনি আমার ঘরে থাকতেন, এটা-সেটা কথা বলতেন, আর আমাকে বিভিন্ন রকম উপদেশ দিতেন। এবং যত বারই আসতেন, আমার জন্য কোনো-না-কোনো উপহার সঙ্গে আনতেন। বড়ো অদ্ভুত সেসব উপহার!

একবার আনলেন ইঁদুর ধরার একটা কল। এসেই একগাল হেসে গলা তুলে বললেন--- বিশ্বকর্মা, তোমার জন্য এটা আনলাম, তোমার কাজে লাগবে।

একবার একটা হামানদিস্তা হাতে ধরিয়ে ফিক করে হেসে বললেন--- বিসমিল্লা, এটা তোমাকে দিলাম। যত্নে রেখো, খুব উপকার পাবে এর কাছ থেকে।

একবার হাসতে-হাসতে একটা কাঁচি হাতে তুলে দিয়ে বললেন--- বরিস, এটা শুধু তোমার জন্য। এর মতো উপকারী বন্ধু আর পৃথিবীতে নেই।

এগুলো ছাড়াও তাঁর উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল জাঁতি, কোকিল পোষার বাঁশের খাঁচা, কাঁসার খঞ্জনি, মাটির কুঁজো...

আমার খুব রাগ হত। বিদঘুটে উপহারগুলো দেখে নয়, তাঁর মুখে আমার নামগুলো শুনে--- বিশ্বকর্মা, বিসমিল্লা, বরিস ছাড়াও বুধন, বব, বাঁধন, বিলটন... এ-রকম আরও কত! লক্ষণীয়, সব নাম-ই 'ব' দিয়ে। আমি পিতৃদত্ত আমার নামটা জানিয়ে তাঁর ভুল সংশোধনের চেষ্টা করতাম; কিন্তু তিনি প্রতি বারই এমন আচরণ করতেন, যেন আমি তাঁকে ভুল তথ্য দিচ্ছি, আসলে তিনি যেটা বলেছেন, সেটাই ঠিক।

আমি রাগ সামলে তাঁর মুখের সামনে বসতাম। কনককুমার এটা-ওটা কথা বলতে শুরু করতেন। তাঁর কথার বিপরীতে আমিও কথা ছুড়ে দিতাম। কথার মধ্যেই আমার জন্য উপদেশ তুলে ধরতেন কনককুমার। একটা উপদেশ তিনি আমাকে অনেক বার শুনিয়েছেন : সর্দি হলে জিভের ওপর এক ফোঁটা সরষের তেল রাখবে।

সারাবছর সর্দিতে ভুগলেও তাঁর অন্যান্য উপদেশের মতো এ-উপদেশটাও আমি কানের বাইরে রেখেছি।
অনেকটা সময় পেরিয়ে যাবার পর আমি আমার বাড়িতে থাকা কিছু একটা খেতে অনুরোধ করতাম তাঁকে। তিনি সে-অনুরোধ ফিরিয়ে তাঁর পছন্দের কোনো খাবারের আর্জি জানাতেন। তাঁর আনা উপহারগুলোর মতো সেগুলোও ছিল সব অদ্ভুত। একবার তিনি খেতে চাইলেন ডুমুরের চাটনি। একবার বললেন, কালমেঘের বড়া থাকলে দাও! একবার বললেন, কাঁঠালের দানা সেদ্ধ করে গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে কাঁচা টমাটোর কুচো দিয়ে খাব।... এ-রকম আরও কত! সব মনে নেই আমার।

এটা ঘটনা যে, এর একটাও আমি তাঁকে কোনোদিন খাওয়াতে পারিনি। এবং এটা নিশ্চিত, তিনিও জানতেন আমি তাঁকে এগুলো খাওয়াতে পারব না। প্রতি বারই তিনি হো হো করে হেসে বলতেন--- ঠিক আছে, পরের বার এসে খাব।

আমি ভাবতাম, আদৌ এই পদগুলোকে সুখাদ্যের পর্যায়ে ফেলা যায় কি না! তেমনই ভাবতাম, আমার ঘরে বসে তাঁর বলে যাওয়া কথাগুলো নিয়ে। প্রতি বারই তিনি অনেক কথার মাঝে তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িত কোনো-না-কোনো মানুষ নিয়ে কথা বলে যেতেন। সে-কথাগুলোর সবটা না হলেও, বেশিরভাগই আমার মনে আছে! এটাতে অবশ্য আমার কোনো কৃতিত্ব নেই; তিনি এমনভাবে কথাগুলো বলতেন, কিছু মিলিয়ে গেলেও, বেশিটাই রয়ে গেছে মনে। তিনি যেন অনেক অধ্যাবসায়ের মধ্যে দিয়ে এই গুণ আয়ত্ত করেছেন!

গতকাল কনককুমার এসেছিলেন দুপুর দেড়টা নাগাদ। উপহার হিসাবে এনেছিলেন একটা হাতুড়ি। আমি তাঁকে ভাত খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। জানতাম তিনি 'না' বলবেন, এবং তা-ই বললেন। ভেবেছিলাম এবার কোনো উদ্ভট খাবারের আবেদন আসবে। কিন্তু গতকাল কনককুমার তেমন কোনো খাবারের ইচ্ছা জানালেন না। হাতপাখা নেড়ে হাওয়া খেতে-খেতে কথা শুরু করলেন। প্রথমেই কোনো ভুমিকা ছাড়াই আমাকে একটা উপদেশ দিলেন : রাস্তায় নেমে হাঁটা শুরু করার আগে দুটো পা জোড়া করে, দুটো হাত কোমরে রেখে, বুক ফুলিয়ে জোরে এক বার শ্বাস টেনে নেবে, তারপর শুরু করবে হাঁটা। এতে মনে ও হাঁটায় জোর আসবে।

এটা-ওটা অনেক কিছু বলার পর কনককুমার কাল চার জনের কথা শোনালেন। এঁদের দু-জন তাঁর বন্ধু, দু-জন চিরশত্রু। ঠোঁটের ওপর অতি হালকা এক হাসি নিয়ে প্রথমে তাঁর দুই প্রিয় বন্ধুর কথা বললেন কনককুমার---

কমল মিত্র : থাকতেন এবং জন্মেছিলেন ভূতের গলিতে। কমল মিত্র ও কনককুমার একসঙ্গে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। খুব বড়ো বাড়ির ছেলে ছিলেন কমল মিত্র। দেখতে ভারি সুন্দর ছিলেন তিনি, ছেলেবেলা থেকেই গলার স্বর ছিল গমগমে। মেপে কথা বলতেন। পড়াশোনায় দারুণ মনোযোগ ছিল তাঁর, কখনো কোনো অঙ্ক ভুল হত না। কনককুমার ও কমল মিত্র ছুটির দিনে হাঁটতে-হাঁটতে অনেক দূর চলে যেতেন। একেবারে নদীর ধারে গিয়ে থামতেন। কিন্তু কমল নদীতে নামতে চাইতেন না, জলকে ভয় পেতেন তিনি। সে-কারণে তাঁর সাঁতার শেখা হয়নি। কমল মিত্র বলতেন, কনক রে, একশো বছর বয়স হয়ে গেলও তোকে আমি ভুলব না।

উৎপল দত্ত : থাকতেন ভূতের গলিতে, যদিও জন্মেছিলেন তাঁর মামাবাড়িতে। কনককুমারের সঙ্গে তিনি পড়াশোনা করতেন। বিখ্যাত 'দত্তবাড়ি'-র ছেলে ছিলেন তিনি। উৎপল দত্ত ছিলেন ফর্সা, স্বাস্থ্যবান। গলার স্বর ও কথা বলার ভঙ্গিমা ছিল মনে রাখার মতো। ছোটো থেকেই যেকোনো বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় তিনি কথা বলে যেতে পারতেন। এক একদিন কনককুমারকে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে উৎপল অনেক দূর চলে যেতেন, কখনো কোনো প্রাচীন ভগ্ন দেউলে, কখনো-বা প্রাচীন কোনো বট-অশ্বত্থের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়াতেন। উৎপল দত্ত বলেছিলেন, মরার আগের দিনকেও তোর সঙ্গে কথা বলে মরব কনক।

কনককুমার বললেন, এই দুই বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বহুদিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি। তাঁরা কোথায় আছে, তা তিনি জানেন না। তাঁদের এখন কেমন দেখতে হয়েছে, তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করলেন। কথা শেষ করে লম্বা শ্বাস টেনে ও ফেলে এবার তাঁর দুই চিরশত্রুর কথা বললেন কনককুমার---

ছবি বিশ্বাস : থাকতেন ভূতের গলির আগে বড়োরাস্তার ওপর। সে এক পেল্লায় বাড়ি, সামনে প্রাচীর ঘেরা সাজানো বাগান। সে-বাড়ির সবাই ছিলেন সুরূপ-সুরূপা, গৌড়বর্ণ। ছবিও ছিলেন তাঁদেরই মতো, সুন্দর। ছবি বিশ্বাস যদিও কনককুমারের সঙ্গে একই স্কুলে পড়তেন না। তাঁদের দেখা হত নদী কিংবা বিলের পাড়ে। ছবি সাঁতার কাটতেন দারুণ, সাঁতরে নদী-বিল এপার-ওপার করতেন। কনককুমারকে সাঁতার শেখাবেন বলে হাত ধরে ডেকে এনে একবার বিলে ডুবিয়ে বেশ কিছুটা জল খাইয়ে দিয়েছিলেন। কনককুমারের সঙ্গে কথা শুরুর আগে ছবি বিভিন্ন জীবজন্তুর ডাক নকল করে আওয়াজ তুলতেন। বলতেন, ও কনক, তোকে দেখলেই আমার কোনো একটা জন্তুর মুখ মনে পড়ে। সেজন্য আমার চিড়িয়াখানা দেখতে যাওয়ার সাধ হয় না রে! ভবিষ্যতে যাতে আমার মনে সে-সাধ জাগে, তারজন্য তোর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া।

জহর রায় : ভূতের গলির পেছনের পাড়ায় ছিল জহর রায়দের পৈতৃক বাড়ি। লাল প্রাসাদতুল্য বাড়িটা বহুদূর থেকে দেখা যেত। সে-বাড়ির প্রায় সব পুরুষই ছিলেন উকিল-ব্যারিস্টার। জহর রায় পড়তেন নামি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে। ফর্সা, একটু খাটো চেহারার জহরের মাথায় ছিল ঘন, ঢেউ খেলানো চুল। জহর রায়ের সঙ্গে কনককুমারের দেখা হত কুমিরডাঙার মাঠে। মাঠের ধার ঘেঁষে বিরাট বাগানে হাজারো রকমের ফলের গাছ। রাজ্যের বাচ্চা-বুড়োরা ওখানে ফুল কুড়াতে আসত। জহর গাছে উঠতে পারতেন না, কিন্তু আমে ছিল তাঁর ভীষণ লোভ। তিনি কনককুমারকে গাছে তুলতেন। বলতেন, আম ছিঁড়ে নীচে ফেল; তারপর তুই নেমে এলে দু-জনে মিলে খাব। তুই দশটার মধ্যে ছ-টা খাবি, আমি চারটে।... কনককুমার যখন গাছ থেকে ডাল বেয়ে নামতেন, তখন দু-একটা ছোটো আম কনককুমারের জন্য রেখে সব আম নিয়ে দৌড় লাগাতেন জহর। যেতে-যেতে বলতেন, আমগুলো খুব টক, তাই তোকে বেশি দিলাম না। টক আম খেলে তোর শরীর খারাপ হবে। কাল তা'লে আর গাছে উঠে আম পাড়তে পারবি না।... জহর রায় বলেছিলেন, ওরে কনক, বাগানের এই আম গাছটা মরে গেলেই তোর সঙ্গে আর আমার দেখা হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

কনককুমার বললেন, ছবি বিশ্বাস ও জহর রায়ের সঙ্গে আমার প্রায়ই দেখা হয়, কথা হয়। তাঁরা আমার ও আমি তাঁদের এটা-সেটা খবর নিই।

আমি কৌতূহল ও উত্তেজনা চেপে রেখে একমনে তাঁর কথা শুনছিলাম। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। প্রায় চিৎকার করেই বললাম--- কিন্তু আপনি এতক্ষণ যাঁদের কথা বললেন, এঁরা সবাই বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল সব অভিনেতা!

আমার কথাটা একটুকু গুরুত্ব পেল না কনককুমারের কাছে। বললেন, ওসব চলচ্চিত্র-বায়োস্কোপ নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না, ওসবের খোঁজখবরও রাখি না; অভিনয় যদি বলো, তবে তা হল যাত্রাপালা! সেটাই হল অরিজিনাল অ্যাক্টিং।

আমি চুপ করে গেলাম। তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। তিনি বললেন---'সমুদ্রমন্থন' অপেরার নাম শুনেছ? শোনোনি তো! তাদের সাড়া জাগানো পালা ছিল--- ব্রহ্মাণ্ডবীর নেপোলিয়ান। সেখানে নেপোলিয়ানের ভূমিকায় কে অভিনয় করেছিল জানো? এই কনককুমার!

তিনি বুক চাপড়ালেন। তাঁর মোটা ঠোঁটের ওপর চওড়া হাসি। আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিল--- বাজে কথারও তো একটা সীমা আছে!

কনককুমার বলতে শুরু করলেন--- আমার নাম শুনেই আমাকে দলে নিলেন অধিকারী হারান বেরা। তখন আমার সে কী রূপ! গ্রামেগঞ্জে পোস্টারে-পোস্টারে শুধু আমার ছবি--- নটনক্ষত্র কনককুমার! সেই পালায় খোলা মঞ্চে আমি হাতের ওপর কোলা ব্যাঙ রেখে ধারালো তরবারি দিয়ে তার শিরশ্ছেদ করেছিলাম। বাংলা যাত্রাপালায় এ-রকম দৃশ্য এর আগে হয়নি।...

চার ফুট উচ্চতা, নাকের ডগায় মাছির মতো গোল্লা আঁচিল, সে হবে নেপোলিয়ান--- আমি যে বিরক্তির সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছি, তা বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন কনককুমার। চেয়ার ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে। দরজার মাথার ওপরে থাকা আমার ঠাকুরদার ছবিটির দিকে আঙুল তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে?

ওঁর এই প্রশ্নের উত্তর ওঁকে আমি অন্তত বার পাঁচেক দিয়েছি, তবু বললাম--- আমার ঠাকুরদা।

কনককুমার বোধহয় নতুন একটা উপদেশ দানের সুযোগ-সন্ধানেই প্রশ্নটা করেছিলেন। বললেন--- শোনো, শুধুমাত্র পরম প্রিয় নয়; পরম অপ্রিয়ও, সে যদি বয়সে বড়ো হয়, তাকেও অন্তত এক বার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবে, এবং সেটা করবে চৌকাঠকে মাঝখানে রেখে। তুমি এবং তোমার সেই পরম অপ্রিয় মানুষটির মাঝে থাকবে ঘরের চৌকাঠ!

কথা শেষ করে তিনি আমার ঘরের চৌকাঠ অতিক্রম করে গেলেন। বাইরে গিয়ে বললেন--- আবার আসব।

তাঁর ওই ফালতু উপদেশ আমার কানের ওপর থেকে মিলিয়ে গেল মূহূর্তেই।

কিন্তু তাঁর 'আবার আসব'-টা যে পরের দিনকেই, অর্থাৎ আজ, তা আমি ভাবতেই পারিনি। কাজেই দরজা খুলে কনককুমারকে দেখে একটু অবাকই হলাম! ঘরের ভেতর পা দিয়ে হে-হে করে হাসতে-হাসতে সঙ্গে আনা আজকের উপহারটা তিনি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন--- একটা কোদাল।... তারপর বসে পড়লেন চেয়ারে। শরীরটা একটু বেশি এলিয়ে খুঁজে নিতে চাইলেন যেন কিছুটা বাড়তি আরাম। আমি আড়চোখে ঘড়ি দেখলাম--- বারোটা চল্লিশ। বৈশাখী দুপুরের রোদ আমার ঘরটাকে সাদা করে রেখেছে। কনককুমার সেই আলোয় দৃষ্টি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ঘরটাকে দেখতে লাগলেন। যেন এই প্রথম তিনি এ-ঘরে পা দিয়েছেন, কিংবা আসার সুযোগ পেয়েছেন বহু বছর পর!

বললাম--- আমি ভাত খাব, আপনিও আমার সঙ্গে আজ একটু ভাত খান।
--- হ্যাঁ, খাব তো!

তাঁর খাওয়ার উৎসাহ আমার ভালো লাগল : যাক, আজ অন্তত লোকটা একটু সহজ পথে আছে!... ভালো লাগার রেশ মনে ছড়িয়ে থাকতে-থাকতেই তিনি বললেন, বোয়াল মাছের তেল-তেলে ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়ার মজাই আলাদা!... বোয়াল মাছ আছে তো?
--- বোয়াল মাছ কোথায় পাব! চারা রুই।
--- তা'লে আর ভাত খেয়ে কাজ নেই, তুমি একাই খাও।
আমি আর তাঁকে খেতে সাধলাম না। মনে মনে বললাম : ভগবান, তুমি পৃথিবীতে একটা মানুষ পাঠিয়েছিলে বটে!

তাঁর সামনেই মাটিতে পাতা হলুদ-নীল আসনে বসে আমি চারা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে শুরু করলাম। তিনি একটা গানের সুর গলায় নিয়ে গুনগুন করছিলেন। হঠাৎ সেটা থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই বাড়িটার কত বয়স হবে? একশো হবে নিশ্চয়!

প্রশ্নটা তিনি আগেও বোধহয় একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

মুখে ভাত নিয়ে জড়ানো গলায় আমি বললাম, কী জানি!
--- কী জানি মানে! যেখানে থাকছ-খাচ্ছ-ঘুমোচ্ছ, সেটার সম্পর্কে তোমার কোনো আগ্রহ নেই!
আমার উত্তরে কনককুমার এতটা অবাক হবেন, এবং তেতে উঠবেন, ভাবিনি আমি।

জবাবটা তাঁকে না ফিরিয়ে পারলাম না--- সে তো আপনার সঙ্গেও কত কথা বলেছি, কত সময় কাটিয়েছি, আপনার সম্পর্কেই-বা কতটা আগ্রহ পূরণ হয়েছে আমার!

আগের মতোই হে-হে করে হেসে উঠলেন তিনি। আমি এঁটো থালা-গেলাস বাইরে রাখতে গেলাম। দালানের নীচে চৌবাচ্চায় মুখে জল ভরে কুলকুচি করার সময়ও শুনলাম ঘরের ভেতর তাঁর হাসির শব্দ। কনককুমার একা একাই হাসছেন।

ঘরে ফিরতে তিনি হাসি থামিয়ে বললেন--- মানুষ ভীষণভাবে বিপদে পড়ে, যখন সে তার কোনো চেপে রাখা কৌতূহল কিছুতেই মিটিয়ে উঠতে পারে না।

কথাটা যে আমাকেই উদ্দেশ্য করে তা আর বুঝতে অসুবিধা হল না আমার। আমি তাঁর সামনে বসে চারা মাছের একটা ঢেকুর তুললাম। তিনি বললেন--- তোমাদের এ-অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো বাসিন্দা কারা?
--- ঠিক জানি না। নরেন বসাকরা হতে পারে!

--- 'জানি না' বললে চলবে কেন! খোঁজ নাও। এসব জানা তোমার অত্যন্ত জরুরি।... আচ্ছা, এই যে পুকুরটা, তোমাদের বড়োরাস্তার পাশে, ওখানে কী কী মাছ আছে জানো? জানার চেষ্টা করো, এসব জানা তোমার দরকার। এগুলোই তো জানার বিষয়!

কনককুমার থামলেন। আমার ঘুম পাচ্ছে।
--- তোমাদের এই গলি-রাস্তার মুখে একটা মুদিখানা আছে, একটা বুড়ো দোকানটা চালায়...
--- হ্যাঁ, সবাই বলে 'বুড়োর দোকান'।
--- তা বলুক। কিন্তু ওই বুড়োর বাবার নাম 
কী, ঠাকুরদার নাম কী, তুমি জানো?
এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না--- আশ্চর্য, ওই বুড়োর বাপ-ঠাকুরদার নাম জেনে আমার কী হবে!
--- কী বলছ! জানতে হবে না? বুড়ো-মানষটা তোমার প্রতিবেশী। প্রত্যেকটা চেনা মানুষের পরিচয় জেনে রাখা প্রয়োজন, অবশ্যই তা তোমার নিজের জন্য!
কনককুমার কি এসব আজেবাজে প্রশ্ন করে আমাকে রাগাতে চাইছেন? মনে হল, ঠিক তা-ই।
--- তাহলে তো আপনার কথাও আমাকে গভীর তদন্ত করে জানতে হয়!
আমার গলায় জোর পড়ল।
তিনি তাঁর সেই পুরোনো হে-হে হাসিটা ঠোঁটের ওপর ফিরিয়ে আনলেন, এবং ক্রমশ তা ছড়িয়ে দিলেন--- জানা তো উচিত। বলো, কী জানতে চাও!

আমি কিছু না বলে দুটো হাত দু-দিকে ছড়িয়ে শরীরটা চেয়ারে আর একটু এলিয়ে দিলাম। কনককুমার দু-হাতের আঙুল দিয়ে চেয়ারের হাতলে তবলার বোল তুলছেন। দু-চোখের দৃষ্টি আমার ওপরেই।
একটু পরে বোল থামিয়ে বললেন, এই ঘরে সন্ধ্যা বেলায় বেশি মশা আসে, না কি মাঝরাতে?
--- সকাল সাতটার সময়।

চোখ বন্ধ করে আমি উত্তর দিলাম।
তিনি একটু সময় নিলেন, বললেন--- শোনো, আমার কথা বলি--- এ-কথা অনেক আগের! আমাদের ভূতের গলিতে হঠাৎ খুব ইঁদুরের উপদ্রব হল। সব বাড়িতে ইঁদুর ঢুকছে, আমাদের বাড়িতেও প্রচুর ইঁদুর। আমার অবশ্য খুব ভালো লাগত। আমি ওদের খাবার দিতাম। থাকার জন্য একটা বড়ো কাঠের বাক্স বানিয়ে দিয়েছিলাম। গলির লোকেরা ভাবল, ইঁদুর তাড়াবার জন্য বিড়াল পুষবে। কিছু বিড়াল নিয়ে এল তারা। কিছু ইঁদুর যে বিড়ালের পেটে গেল না, তার নয়, কিন্তু পরিস্থিতি পালটে গেল অল্পদিনের মধ্যেই। হল কী, ইঁদুরদের সঙ্গে বিড়ালদের ভাব হয়ে গেল। তারা একসঙ্গে খেলা করতে শুরু করল।...

আমার হাই উঠল একটা, এবং মনে পড়ল, ভূতের গলিতে যে-লেখক জন্মেছিলেন, তাঁর একটা লেখা আছে; নাম--- ইন্দুর-বিলাই খেলা।

--- শুনছ? শোনো। তা সবাই তো খুব বিপদে পড়ল; এক ভেবেছিল, এক হল। আমি খুব খুশি। কিন্তু এ-পরিস্থিতিও পালটে গেল কিছুদিনের মধ্যে। হল কী, ভূতের গলিতে শুরু হল মশার উপদ্রব।...
চোখ বন্ধ রেখেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তখন কি আপনি জাহাজে, নাকি উড়োজাহাজে চাকরি করতেন?
--- হুঁ, কী বললে?
আমি কথাগুলো পুনরায় উচ্চারণ করলাম, গলায় জোর লাগিয়ে।
--- না-না, আমি তো তখন সমুদ্রমন্থন অপেরার নেপোলিয়ান।... তা যাই হোক, হল কী, মশার জন্যই ইঁদুরের সংখ্যা কমে গেল। মশার কামড় ইঁদুর বোধহয় সহ্য করতে পারিনি।... সত্যি কথা বলতে কী, এর পেছনেও ছিল গভীর রহস্য! সে-রহস্যের নায়ক কে, জানতে চাও?
--- না।
চোখ খুললাম না আমি।
--- এই কনককুমার। আমি কী করেছিলাম শুনবে!
--- না, শুনব না।
আমার চোখ আগের মতোই বন্ধ।
--- থাক, শুনতে যখন চাও না, তখন আর শোনাব না।... তাহলে আমার সম্পর্কে তোমার যে-কৌতূহল ছিল, তা নিশ্চয় মিটল?
--- হ্যাঁ, ইঁদুর-বিড়াল-মশা এবং আপনি।... আচ্ছা, এই পৃথিবীতে আপনি আপনার মতো আর একটাও মানুষকে খুঁজে পেয়েছেন?
আমি চোখ খুলে তাঁর দিকে তাকিয়েছি।

কনককুমার হাসলেন--- সত্যি বলতে কী, খুঁজিনি জানো! খুঁজলে কী হত বলতে পারব না। তবে তুমি যখন বললে, তখন আজ থেকে খুঁজব। এই ঘর থেকেই খোঁজা শুরু করব।
--- করুন, খুঁজে পেলে আমার কাছে তাকে একবার নিয়ে আসবেন। আমি তাকে একটু ভালো করে দেখব।
--- নিশ্চয় নিয়ে আসব।... আচ্ছা, তাকে তুমি প্রথম কী প্রশ্ন করবে?
আমি চুপ করে রইলাম। কনককুমার আবার বললেন--- বলো, শুনি, তাকে তোমার প্রথম প্রশ্নটা কী হবে?
চুপ থাকলাম আমি। ঠিক কী প্রশ্ন করব তাকে, সেটাই ভাবছিলাম।

কনককুমার যেন আমাকে চেপে ধরতে চাইছেন, আবার বললেন--- বলো, কী প্রশ্ন করবে আমার মতো সেই মানুষটাকে?

আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে পুনরায় চোখ বুজিয়ে ফেললাম। স্বর নামিয়ে বললাম--- জিজ্ঞাসা করব, আপনার বয়স কত?
কনককুমার হাতে তালি দিয়ে উঠলেন, যেন লাফ দিলেন--- ঠিক বলেছ, বয়সটা পেয়ে গেলে একটা মানুষের পুরো ইতিহাস তুমি বের করতে পারবে; অঙ্ক কষে। যেমন করে ঐতিহাসিকরা সব কিছু খুঁজে বের করে!... সত্যিই তুমি বুদ্ধিমান।
--- আপনি না বললেও এটা আমি জানতাম যে, আমি বুদ্ধিমান।
--- জানবেই তো, তুমি কত কিছু জানো, তার প্রমাণ তো আমি পেয়েছি।... আচ্ছা, সে-দিন তুমি হারিয়ে গিয়েছিলে কেন?

কনককুমারের এই ছোট্ট প্রশ্নটা আমার ঘুমের ঝোঁকটাকে মুহূর্তে ভেঙে দিল। আমি চেয়ারে সোজা হয়ে বসলাম, তাকালাম তাঁর দিকে। কনককুমার আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। চোখাচোখি হতে ফিক করে হাসলেন। আমি চোখ বুজিয়ে আবার হেলান দিলাম চেয়ারে।

তিনি সেই পুরোনো হে-হে হাসিটা হেসে বললেন--- মনের মধ্যে একটু ভ্রমণ করে নাও; জাহাজে, রেলে কিংবা উড়োজাহাজে।

আমি একটু পরে চোখ খুললাম, তাঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম, কনককুমার ঘরের বাঁ-পাশের দেওয়ালে লম্বা তাকটার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন, যেখানে ওঁর দেওয়া উপহারগুলো আমি পাশে-পাশে সাজিয়ে রেখেছি।

আমার দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতোই হাসলেন। তারপর উঠে দাঁড়ালেন--- তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও কনককুমার, তোমার ঘুম পাচ্ছে।

আমি আশ্চর্য হলাম, আজ তিনি আমাকে 'কনককুমার' বলে ডাকলেন। আমি চোখ বুজিয়ে নিলাম এবং খুললাম। কনককুমার দরজার দিকে এগিয়ে গেছেন। একটু থামলেন, বললেন--- শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, রাতে বিছানায় ওঠার আগে ভালো করে চান করে নেবে। বিছানা বড়ো পবিত্র জায়গা। বিছানায় মানুষ জন্মায়, বিছানায় মানুষ মরে যায়, ঘুমোনো ছাড়াও মানুষ বিছানায় আর যা করে তা-ও বড়ো পবিত্র। বিছানায় যাওয়ার আগে চান করে নিজেকে শুদ্ধ করে নেবে।

চৌকাঠ ডিঙিয়ে পেছন ফিরলেন কনককুমার, বললেন--- আবার একদিন আসব।

আমি দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। সন্ধ্যার পরে উঠলাম। কিছুটা হাঁটলাম রাস্তায়। রাতে অনেকটা ভাত খেলাম দুপুরের রান্না করা চারামাছের ঝোল দিয়ে।... আজ আমি কনককুমারের রেখে যাওয়া একটা উপদেশ মানলাম---

আমি নতুন করে জন্ম নেব না আজ। মরেও যাব না। ঘুম ছাড়া বিছানায় আর যে-পবিত্র কাজটি করা যায়, তা-ও করব না; তবু বিছানায় ওঠার আগে আজ আমি চান করলাম।

চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে ঢোকার সময় গতকাল কনককুমারের দেওয়া উপদেশটা মনে পড়ল : পরম অপ্রিয় মানুষ, যদি সে বয়সে বড়ো হয়, চৌকাঠকে মাঝখানে রেখে তাকে এক বার অন্তত প্রণাম করবে।

কনককুমার কি আমার কাছ থেকে আজ একটা প্রণাম প্রত্যাশা করেছিলেন? সে কি আমার অতি অপ্রিয় একজন, নাকি পরম প্রিয় কেউ?--- বড়ো কঠিন এসব প্রশ্ন, অন্তত আমার মতো মানুষের কাছে, যে তার নিজের হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার কারণটাই এখনও জেনে উঠতে পারেনি।

তা না-জানাটা অবশ্য আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ ও ভাববার বিষয় হল--- আমার এই ভাঙা বাড়িতে আবার কবে আসবেন কনককুমার?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ