মর্নিং। আমার নাম। ফেসবুক নাম 'মনি মর্নিং'। মনি নিয়ে বলব আগে, না মর্নিং নিয়ে? একটা বললেই হলো, পরেরটা এমনি বুঝা যায়। মনি আমার ডাক নাম, আম্মু-আব্বু দুজনেই ছোট থাকতে এই নামে ডাকতেন। মনির সাথে আরো কিছু যোগ দেয়ার আগেই বা আসল নাম রাখার আগেই আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। পরে আম্মু মনিটা রেখে সাথে মর্নিং লাগিয়ে দিলেন। এখন মনি নামে আম্মু ছাড়া আর কেউ ডাকে না।
ছিচল্লিশ মিনিট আগে মনি মর্নিং আইডি থেকে একটা ছবি পোস্ট করেছিলাম। সাথে ক্যাপশন ছিল 'বয়ফ্রেন্ডদের সাথে চা-সাক্ষাৎ'। সমস্যা কি নিয়ে? ছবি? না ক্যাপশন? বুঝতেছি না। দেখার জন্য আইডিতে ঢুকলাম। যৌথ সমস্যা। ছবিটায় আমার ছয়জন বয়ফ্রেন্ড আমাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতেছিল, আর আমরা যেহেতু একটা চা দোকানেই পিকটা তুলেছিলাম ফলে আমি চা খাচ্ছিলাম বিধায় আমার হাতে দুধ-চার কাপ ধরা।
সামান্য সেলফি! এখন পর্যন্ত পাঁচশত এক কমেন্ট, হাজার চুরাশি লাইক, সাতশত চুয়াত্তর শেয়ার। এত আগ্রহের বিষয় কি আজকে? প্রকাশ্যে চুমু দিতে চাওয়ায় সমস্যা, না ছয় বয়ফ্রেন্ডকে এক সাথ করায় সমস্যা? এত এত কমেন্ট! একটা যেমন,'এই যুগের দ্রৌপদী।'
আমার বয়ফ্রেন্ডদের ধৈর্যের প্রশংসা করতেই হয়। উস্কানিমূলক কমেন্টগুলোতে তারা কেউ অংশ নেয়নি, এমন প্রসঙ্গে নিজেকে না জড়াতে দেয়ার পরীক্ষাটা কঠিনই। পিকটা ওদের সবাইকেই ট্যাগ করেছিলাম, পোস্টের সময়ই। নিশ্চিত, ওরাও আজেবাজে ম্যাসেজ পাচ্ছে। কিন্তু পোস্টটার ত্রিসীমার মধ্যে, মানে লাইক, কমেন্ট, শেয়ারে ওদের কোনো টু-শব্দ পাচ্ছি না এই মুহূর্তে। এমনিতে ম্যাসেঞ্জারে কথা হচ্ছে সবার সাথেই, তবে এই বিষয়ে কারোরই মাথাব্যথা নাই, পাত্তা দিচ্ছে না বিষয়টাকে। আমারও উচিত হবে অন্য কাজে মন দেয়া।
দুই.
হইতে পারে, ডিব্বা বাজানোর শব্দের মধ্যে ঘুমের অভ্যাস হয়ে গেছে সোলাইমানের। অথবা হাগু করার, মুতু করার বিরাট এক যেকোনো অভ্যাস বাঁধিয়ে বসেছে সে। যেজন্য এখন শব্দের উৎসের দ্বারে প্রকৃত কারণের ধ্বনি বাজিয়ে গেল!
এমনকি ভাড়াটিয়া আন্টিরাও এসেছিলেন বলতে, 'ভাবি, কামরাঙা ধরছে তো!'
আমি নিজে থেকেই আম্মুকে বললাম, 'আম্মু, কলেজ যাই কাল থেকে?' আম্মু বললেন, 'যাবেই ত, জানি ত, মা।'
ডিব্বা খোলা হয় নাই, গাছেই ঝুলছে, দড়ির শেষপ্রান্তটা আমার ঘর থেকে কোথায় জানি গেল ভুলেই গেলাম। সোলাইমান চাইলে ওর ঘর পর্যন্ত পৌঁছায় এমন জায়গা থেকে কেটে দড়ির নতুন শেষপ্রান্ত আবিষ্কার করতে পারে। তারপর বাজাতে পারে। আমার ধারণা, এটা করার সাহসই তার ছিল না।
তিন.
সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটি ঘটেছে, আমার বয়ফ্রেন্ডরা আমাকে সহজেই বোঝে। কেউই আমাকে এই প্রশ্ন করে বিব্রত করেনি বা করছে না, 'আমাকে ভালোবাসলে, তুমি আবার একই সাথে ওদের ভালোবাস কীভাবে?'
বরং তারা পরস্পর এই নিয়ে ভীত যে, কখন আমি তাদের এই প্রশ্নে জর্জরিত করি যে, 'তোমরা সবাই আমাকে ভালোবাস, কিন্তু নিজেরা নিজেদের ভালোবাস না কেন?' এমন প্রশ্ন উত্থাপন ছাড়াই তাদের বন্ডিং ভালো। একে অপরকে ভালো করেই চেনে, জানে। খোঁজ নেয়। আমাদের দেখা হয় কখনো কখনো দলবেঁধে। একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে। একই সময়ে যখন তিনজনের সাথে প্রেম চলছিল তখন সিরিয়ালি আরো তিনজন জুটল। আমি অনেস্ট ছিলাম। চতুর্থজন যেদিন প্রপোজ করল সেদিনই তাকে জানিয়েছিলাম, 'আমার আরো তিনটা বয়ফ্রেন্ড আছে। আর তোমাকেও আমার ভালো লাগছে। এমন না যে তুমি আমার চতুর্থ নাম্বার বয়ফ্রেন্ড, তবে এটা সত্য, তুমি তিনজনের পরেই এসে থাকবে আমার জীবনে।' এভাবে পঞ্চম ও ষষ্ঠজনের বেলায়ও একই ঘটনা।
ফোনে ওয়েট করতে হলেও তারা করে। বুঝে যে, আমি বাকি পাঁচজনের যে কারো সাথেই কথা বলতেছি দীর্ঘসময়। যখন যাকে খুব মিস করি তার সাথেই দেখা হয়। সময় কাটাই, সেক্স করি। সবচেয়ে বড় কথা, বিকল্পের ফলাফল সম্ভাবনাসহ হাজির থাকে আমার চাহিদামাফিক। একান্ত পরিসর ব্যতিরেকে আমরা গ্রুপে ঘুরতেও যাই, মানে পাহাড়ে চড়া, সমুদ্র দেখা, জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে থাকা এসব আরকি। আমরা ইচ্ছে করে চলন্ত ট্রেনের আলাদা বগিতে উঠে নেক্সট স্টেশনে নেমে একসাথে হই!
সেদিন একজনার সাথে সেক্সের পর জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমার খারাপ লাগে? অন্যদের সাথে যখন করতে যাই?' সে উত্তর দিল,'প্রত্যেকের মর্নিং আলাদা।' তারপর আমরা একে অপরকে শুভসকাল জানিয়ে বাসা থেকে যার যার কাজে বেরিয়ে পড়লাম।
এর যেমন অনুভূতি, অন্যদেরও নিশ্চয় একই অনুভূতি, বা ভিন্নও হইতে পারে। তবে ভিন্ন ভাবনা নাই, ভাবনা আসে পাশে, এরা আমার লাইফে আছে এটা সেই ভাবনার পক্ষেই কথা বলছে।
আম্মু ফান করে। বলে যে, 'তোর কোন বয়ফ্রেন্ডটা ভালো কথা বলতে পারে, রে! ভালো মানে ভালো না, মন ভালো করে দিতে পারে?' আম্মুকে ধরিয়ে দিলাম। আম্মু তাকে বলল,' মর্নিংয়ের আম্মু হিসাবে কথা বললে হবে না, এখন তুমি অনুপাত আমি। এসো কথা বলি।' তারপর ঘণ্টাব্যাপী কথা বলল। তারাই ভালো জানে কি কথা হয়েছে!
বয়ফ্রেন্ডদের মধ্য দুইজন আমাকে মর্নিং না ডেকে 'মিয়া' ও 'ভাই' ডাকে। একজন বলতেছিল, 'মর্নিং ভাই আমাকে খারাপ থেকে ভালো বানাইছে। সুন্দর জীবন দান করছে।'
অবাক হই এদের রুচি ও পছন্দের একই ধরন দেখে। ধরা যাক, একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, 'আজ কি কালার পরব?' সে পার্পাল সাজেস্ট করলে অন্যরাও তাই বলে। এটা ম্যাজিক!এমন খুব কমই হয়, একজন নুপুর পরতে বলছে বা নাকছাবি, অন্যজন বলছে পরা যাবে না। যদিও তাদের বলার বা সাজেশনের তোয়াক্কা আমি করি না। তারাও ভালো করেই জানে সেটা। আমার মর্জি মতই সব হয়। এমনকি বিয়ের বেলায়ও। ওদের কাউকেই যে আমি বিয়ে করব না সেটাও তারা ভালো করেই জানে। আসলে, বিয়ে করার ইচ্ছাই আমার নাই। এদেরকেও না, কাউকেই না।
এদের প্রথমজনের সাথে প্রেমটা খুব অদ্ভুতভাবে হয়ে গেছে। যেকালে আমি ডিব্বা বাজাতাম, সেকালের একদিন সে ফোন দিয়ে বলে,'একদিনের জন্য একটু রজারকে রাখতে পারবি? আমি একটু ঢাকার বাইরে যাচ্ছিরে।' 'নিয়ে আয়' বলতেই চলে এলো। ও আমাদের বাড়ির চিলেকোঠায় থাকত, এখনো।
তারপর ও চলে যাবার পর রজার ঘেউ ঘেউ করে বাড়ি মাথায় তুলছিল। বাধ্য হয়ে ওকে কামরাঙা গাছের সাথে সারাদিন বেঁধে রাখার হুকুম দিসিলাম। ওর চিৎকার আর ডিব্বার শব্দে যেদিন থেকেই আমি একটু একটু করে সারতে আরম্ভ করি! মূলত, প্রথমে রজারের প্রেমে পড়েছিলাম, তারপর ওর মালিকের।
চার.
যে পিকটা ভাইরাল হয়েছে তাতে সে নাই। পিকটা তোলার খানিক আগে বিদায় নিয়েছিল। আমরা কেউ তাকে যেতে বাঁধা দিই নি। অবশ্য শুরু থেকেই সে খুব প্রাণবন্ত ছিল। কথা বলছিল সবার সাথে খোলাখুলি আর বোধ হয় নজর রাখছিল গোপনে, আমি এত চা কেন খাচ্ছি। আমি বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে ওই চায়ের দোকানটায় যেতেই দেখি সে একটা টুলের ওপর বসে আনমনে বিড়ি টানতেছিল। বেনসন সাদা খেত আগে, আজো তাই খাচ্ছিল। আমাকে দেখেই ভেতর থেকে ধোঁয়া ছাড়া বন্ধ করল, বসতে বলল। বললাম, 'হা, আমরাও চা খেতেই আসছি।'
তারপর ওর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলাম এই বলে,'আমার বয়ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচিত হও।' আর বয়ফ্রেন্ডদের বললাম,'ও আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড। অবশ্য এটা তার সাইড থেকে। আমি 'এক্স' কান্সেপ্টে বিশ্বাসী না। ফলে সে আমার সাইড থেকে এখনো আমার বয়ফ্রেন্ডই।'
সে অন্যদের সাথে হাত মেলালো। নাম বলে পরিচয় দিল। আমি অন্যদের আরো জানালাম, 'ও ফিল্ম বানাইতে চায়। কিম কি দ্যুক ওর পছন্দের ফিল্ম মেকার।' তারপর এফডিসি ফিল্ম কেন আমরা দেখি না সেখান থেকেই আমাদের আড্ডাটা শুরু হল।
ইতোমধ্যে সে খেয়াল করছে, আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চা খাচ্ছি। মানে, চিনি ছাড়া, চিনিসহ, আদা বেশি, আদা ছাড়া, কাঁচা পাতি, চিনি কম দুধ বেশি, বেশি দুধ চিনি ছাড়া, দুধে আদা দিয়ে, লেবুসহ, লেবুছাড়া নানাপ্রকারের চায়ের অর্ডার দিচ্ছি একটু পর পর। এভাবে আর কেউ খাচ্ছে না ওখানে।
একসময় আমি ঝিনুকের মালা পরতাম জামার ভিতরে। প্রচলিত ঝিনুকের মালা না। কালো সুতার মালায় লকেটের পরিবর্তে একগুচ্ছ পিচ্চি পিচ্চি ঝিনুক। ঝিনুকগুলো ক্লিভেজ হয়ে ঝুলে থাকত। একটু ফ্রি সাইজ ব্রা পরতাম, যেন দুই স্তনের মাঝে ফাঁকা থাকে ঝিনুকের জন্য।
ও খুব পছন্দ করত ঝিনুকগুলো নিয়ে খেলতে। সেক্স করার সময় গলার ওপর থাকা কালো সুতা ধরে এমনভাবে টানত যেন ঝিনুকগুলো পরস্পর গায় গায় লেগে বেজে উঠে। এটা সে করতেই থাকত।
একদিন সেক্স করা শেষে ও আমায় বলল, 'ঝিনুকের শব্দের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম। একটা ভারসাম্য ছিল সবকিছুতে। ইদানীং টোনটা মিসিং।
সেদিনের পর আমাদের আর বিছানায় যাওয়া হয় নি। আমিও তাকে আসতে বলি নি, সেও আমাকে আর আসতে বলে নি। আমি ঝিনুক খুলে কামরাঙা গাছে ডিব্বা বাজাতে গেছিলাম।
কামরাঙা গাছে কনডেন্স মিল্কের ডিব্বা বেজে চলছিল!
উপরের লেখাটা ফেসবুকে পোস্ট করব এখন!
------------
লেখক পরিচিতি:
0 মন্তব্যসমূহ