আমার তখন পনেরো বছর বয়স-- যখন আমার বিয়ে হয়। তাও দেখতে দেখতে এই পনেরোই ফাল্গুনে একুশ বছর হল। ঠিক সময়ে মেয়ে হলে আমাদের গাঁ-ঘরে সে মেয়েরও বিয়ে হয়ে যেত। ঠাকুমাও হয়ে যেতাম আমি। তার বদলে আমি এখন জেলে, গরাদের ওপারে।
এখানে এসে থেকে অনেকদিন ধরে অনেক কেঁদেছি। জেলের ভেতর মাথা ঠুকে ঠুকে মাথায় আলু হয়ে গেছে। নিজের গলায় দশ আঙুলের চাপ দিয়ে দেখেছি তার কেমন লেগেছিল।
তারপর এখন স্থির হয়েছি। মনকে বলেছি—আমার তো সংসার বলে কিছু ছিল না। ওখানে তো কেবল বড়সরো একটা গরাদের পিছনে ঘুরঘুর করতাম। আমার শ্বশুর উদ্ধব মণ্ডল লাঠি ছাড়াই সেখানে পাহারা দিতেন।
আমি কি সবই অন্যায় করেছি? আমি কি উদ্ধব মণ্ডলের মতো পাষণ্ড রাক্ষসের কাছ থেকে আমার একমাত্র সন্তান, মাত্র পাঁচ বছরের দুধের শিশু অনন্তকে উদ্ধার করিনি? কেউ জানে না কাউকে বলিনি অনন্ত এখনও আমার সঙ্গে আছে। আমার সঙ্গে ঘুমায়। আমার সঙ্গে খায় খেলা করে। আমি বুঝি, আমি অনুভব করি। আমি ছাড়া কেউ তার ভালো চায়নি।
নাগো, মিথ্যে কথা। আমি আমার পুতুলের মতো ছেলেটাকে খেয়ে ফেলেছি। সে জন্যই তো আমাকে কেউ দেখতে আসে না। আমার মা না, আমার দুই দিদি না, আমার ভাই না, আমার বেচারা স্বামী না—এমনকি পুলীনবাবুও না। সন্তানকে হত্যার থেকে কি বড় পাপ কিছু আছে। আমার কপালে কী লেখা দেখে যে আমার ঠাকুমা আমার রাধিকা নাম রেখেছিলেন কে জানে। এক বোষ্টমি বুড়ি আমার ঠাকুমার কাছে মাঝে মাঝে আসত, আর কত যে গল্প বলত। ওর কাছে একবার শুনেছিলাম রাসের পর শ্রীরাধিকা নাকি রেগে গিয়ে তার প্রসব করা ডিম যমুনার জলে বিসর্জন করেছিলেন। আমিও কি তাই করলাম! রেগে গিয়ে, নাকি ভয় পেয়ে? এত ভয় পেলাম কেন? আমার মাথা না হয় উদ্ধব মণ্ডলের বাঁকের ঘায়ে দু-ফাঁক হয়ে যেত। হয়তো পুলীনবাবুকে খুঁজে পেতে হাপিস করে দেওয়া হত। তাতে কি সত্যিই বিশেষ কিছু হত!
তারপর এখন স্থির হয়েছি। মনকে বলেছি—আমার তো সংসার বলে কিছু ছিল না। ওখানে তো কেবল বড়সরো একটা গরাদের পিছনে ঘুরঘুর করতাম। আমার শ্বশুর উদ্ধব মণ্ডল লাঠি ছাড়াই সেখানে পাহারা দিতেন।
আমি কি সবই অন্যায় করেছি? আমি কি উদ্ধব মণ্ডলের মতো পাষণ্ড রাক্ষসের কাছ থেকে আমার একমাত্র সন্তান, মাত্র পাঁচ বছরের দুধের শিশু অনন্তকে উদ্ধার করিনি? কেউ জানে না কাউকে বলিনি অনন্ত এখনও আমার সঙ্গে আছে। আমার সঙ্গে ঘুমায়। আমার সঙ্গে খায় খেলা করে। আমি বুঝি, আমি অনুভব করি। আমি ছাড়া কেউ তার ভালো চায়নি।
নাগো, মিথ্যে কথা। আমি আমার পুতুলের মতো ছেলেটাকে খেয়ে ফেলেছি। সে জন্যই তো আমাকে কেউ দেখতে আসে না। আমার মা না, আমার দুই দিদি না, আমার ভাই না, আমার বেচারা স্বামী না—এমনকি পুলীনবাবুও না। সন্তানকে হত্যার থেকে কি বড় পাপ কিছু আছে। আমার কপালে কী লেখা দেখে যে আমার ঠাকুমা আমার রাধিকা নাম রেখেছিলেন কে জানে। এক বোষ্টমি বুড়ি আমার ঠাকুমার কাছে মাঝে মাঝে আসত, আর কত যে গল্প বলত। ওর কাছে একবার শুনেছিলাম রাসের পর শ্রীরাধিকা নাকি রেগে গিয়ে তার প্রসব করা ডিম যমুনার জলে বিসর্জন করেছিলেন। আমিও কি তাই করলাম! রেগে গিয়ে, নাকি ভয় পেয়ে? এত ভয় পেলাম কেন? আমার মাথা না হয় উদ্ধব মণ্ডলের বাঁকের ঘায়ে দু-ফাঁক হয়ে যেত। হয়তো পুলীনবাবুকে খুঁজে পেতে হাপিস করে দেওয়া হত। তাতে কি সত্যিই বিশেষ কিছু হত!
আমি তো ভগবান নই। মানুষ গো মানুষ, মেয়ে মানুষ। তাই এত ভয় পাই। নাকি রাগ। শেষ পর্যন্ত তুই অন্তত, আমার গর্ভজাত হয়ে আমাকে হাড়িকাঠের দিকে এগিয়ে দিস।
দেখতে তো ভালো ছিলাম না। কালো চেহারা। দিদিরা বরং আমার থেকে দেখতে ভালো। তবু ইস্কুলে আমাকে শিক্ষকরা ভালোবাসতেন। ক্লাস নাইনে পড়তে আমার বিয়ে হলে তাঁরা রাগ করেছিলেন। আর আমাদের স্কুলের লাইব্রেরীর দু-আলমারি বই-এর প্রায় অর্ধেক গল্পের বই আমি ক্লাস নাইনের মধ্যেই পড়ে ফেলেছিলাম। রূপ সোনাতলার উদ্ধব মণ্ডলের ছেলে যদুনন্দনের গলায় মালা পরাতে আমাদের তিনটে দুধেল গাই বিক্রি করতে হয়েছিল। আমরা জাতে গোয়ালা-গরু বিক্রি যে আমাদের প্রাণে কী লাগে তা আমরাই জানি!
বিয়ের পর যতদিন আমার শাশুড়ি বেঁচে ছিলেন, কিছুটা হলেও আমি নির্ভাবনায় ছিলাম।
আমার শ্বশুরের ডাকাতের মতো গায়ের শক্তি, তেমনি তার প্রতাপ। তার ভয়ে আমার শাশুড়ি স্বামী অস্থির। আমার বিয়ের পরও তিনি তার ছেলেকে আমার সামনেই পিটিয়েছেন। এরকম ধারাবাহিক ব্যবহার পেয়েই বোধহয় আমার স্বামী মনের সমস্ত বল হারান। বাবার বিরুদ্ধে একটা কথা বলারও তাঁর ক্ষমতা ছিল না। আমার বা আমার শাশুড়ির শুধু কাজ ছিল তার পুজো করা। গোবর্ধন পুজো আমাদের গ্রামে চিরকাল ধুমধামের সঙ্গে হয়। আমি সারাদিন উপোষ করতাম আর প্রার্থনা করতাম-উদ্ধব মণ্ডল, আমার শ্বশুর যেন আর একদিনও না বাঁচেন। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তিনি বেঁচে রইলেন, আর আমার শাশুড়ি একদিন রান্না করতে করতে স্ট্রোক হয়ে হঠাৎ মরে গেলেন, তখন তার একটা পা উনুনের আগুনে চিতাতে ওঠার আগেই জ্বলে পুড়ে গেল।
তবে আমার একান্ত প্রার্থনায় কিনা জানি না—পাশের গ্রামের গাজনের মেলায় বাগদিদের একটা বৌ-এর গায়ে হাত দেওয়া নিয়ে খুব মারামারি হয়। আমার শ্বশুরের এইসব গুণের কথা সবাই জানত, আর অনেকেই অনেক রাগ পুষে রেখেছিল। সেই মারামারিতে কেউ একজন টাঙ্গির কোপ মারে আমার শ্বশুরের হাতে। হাত ছিঁড়ে পড়ে যায়। এই নিতে মামলা-মোকদ্দমা হলেও আমার শ্বশুর চিরকালের মতো নুলো উদ্ধব হয়ে যান। তাঁর প্রতাপ কিছুটা কমে। আর এই সময়ই আমি আমার বিয়ের বারো বছর পর আমার গর্ভের মধ্যে অনন্তর আগমন টের পাই।
পুলীনবাবু তখন থেকেই আমাদের বাড়ি আসেন। উনি কোয়াক ডাক্তার হলেও গাঁয়ে বেশ নাম করেছিলেন। আমাদের দুধের ব্যবসা। আমার নয়, গরুদের চিকিৎসা করতেই উনি বাড়িতে আসতেন। আমার স্বামী দুধ আর ছানা বিক্রি করতেন বলে বিশেষ বাড়ি থাকতেন না।
আর শ্বশুরকেও একহাতেই লাঠি নিয়ে গরু চরাতে হত। এরকম একটা দিন—যখন কেউই নেই—তখন আমার গর্ভবেদনা শুরু হলে আশেপাশের ছেলেরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাতেই আমি সন্তানের জন্ম দিই। আমি মরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পুলীনবাবুই আমাকে প্রাণে বাঁচান। আমাকে তিনি গরু বা ছাগল মনে করেই আমার ভেতর হাত ধরে রক্তমাখা অনন্তকে টেনে বের করেন আর বোধহয় মানুষের বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে যান।
আর তার পরের দিনগুলোতে বন্ধ্যা নাম কাটিয়ে আমি মাতৃগর্বে ফেটে পড়ি। আমার স্বামী পুলীনবাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। আর আমার শ্বশুর সবদিক বিবেচনা করে আমাদের গরু মোষের বিনাপয়সায় চিকিৎসা নেবেন বলেই আমাদের গোয়ালঘরের পিছনে তার জন্য একটা ডিসপেন্সারি খুলে দেন।
সংসারে আমার কাজের অন্ত নেই। রান্না করা, ছানি কাটা, দুধ দোওয়া, ঘুঁটে দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার করা—শতেক কাজ। তবু আমার একটা ছোট বাগানের শখ ছিল। রূপ সোনাতলার মানুষরা বড় চাষি। তারা এতটুকু জায়গা পেলেও সবজি লাগায়। লাউ-কুমড়োর লতা চালে তোলে। আর আমি ছাগল গরু মোষের হাত থেকে বাঁচিয়ে বেড়া দিয়ে দুখানি হলুদ গাঁদা গাছ, একখানি চাপা সাদা টগরের গাছ লাগাই। না চাইতেই পুলীনবাবু আমার জন্য একটা লাল গোলাপের চারা আনেন। আমার মনে হয় আমি এত বড়ো উপহার কখনো পাইনি। উচ্ছ্বসিত আমার চোখে জল এসে পড়ে। উনি একদৃষ্টে আমাকে দেখতে থাকেন।
তারপর কী ভেবে বলেন—আপনি খুব সুন্দরী। আপনি জানেন, আপনি যেন ঠিক রাধিকাই।
চিরকাল আমি শুনে এসেছি—আমি কুৎসিত, আমার জন্য তিনটে গাইগরু বিক্রি করতে হয়েছে। এখানেও বারো বছর আমি বন্ধ্যা ছিলাম। উদ্ধব মণ্ডলের আমাকে তাড়িয়ে দেবার হাজার ছক ছিল। কেবল আমি ভয়ানক খাটতে পারতাম। সহজে পরিশ্রান্ত হতাম না। গরু মোষের ভার আমার ওপর ছেড়ে তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন। আর সুন্দরী স্ত্রী তিনি তার ছেলেকে দিতে চাননি, ছেলে বৌমুখো হবে বলে।
আমি অবিশ্বাসের চোখে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকি। তিনি বলেন—আপনি গোলাপের নতুন কচি ডাঁটির মতো দেখতে, বিশ্বাস করুন। অমনি গায়ের রঙ, অমনি নরম আপনি।
আমরা দুজনে মিলে গাছখানা লাগিয়ে ফেলি। এরপর তাঁকে আমি মন থেকে, শরীর থেকে আর নামাতে পারিনা। আমি যদুর বৌ, অনন্তের মা থেকে রাধিকা, রাধা হয়ে উঠি। তার ডিসপেন্সারির পিছনে গোয়ালে গিয়ে আমি গরুদের সঙ্গে উচ্চস্বরে গল্প শুরু করি। আসলে তাঁকে ডাকি। তিনি তখন আমাকে দেখবার জন্য কোনো না কোনো ছুতোয় সামনের রাস্তায় পায়চারি করেন।
তিনি আমার আর একটি উপকার করেন। পাশের গ্রামের ‘যুগের প্রদীপ’ লাইব্রেরী থেকে প্রতি সপ্তাহে আমার জন্য একটি করে গল্পের বই নিয়ে আসেন। আর এই বই-এর সূত্রেই আমার স্বামী বা শ্বশুর বোঝেন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের গল্পটা। শ্বশুর কাজে ক্ষতি হচ্ছে বলে একদিন চোটপাট করলে, কোন কোন কাজে ক্ষতি হচ্ছে- এ বিষয়ে তার কাছে স্পষ্ট জবাব চাই। আর তিনি কোনও সদুত্তর দিতে না পেরে আমার দিকে শুধুই কটমট করে তাকিয়ে থাকেন। আমিও তাঁর সামনে শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়াই।
পুলীনবাবুর পশার জমছিল। পাশের গ্রামে গরু-মোষের মড়ক লাগলেও আমাদের গ্রামে তা থমকে দাঁড়িয়েছিল। ফলে কৃতজ্ঞ শ্বশুরের রাগ সামান্য কমেছিল। আমি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। সাহসী হয়েছিলাম। গোয়ালঘরের ভেতরের অন্ধকারে গোবরের সোঁদা গন্ধের মধ্যে তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম, ভর দুপুরে। আমাকে গ্রহণ করতে তাকে বাধ্য করেছিলাম। তারপর দ্বিতীয়দিন, তারপর তৃতীয়দিনও। এক অনাস্বাদিত শারীরিক মূছর্নার গৌরবে ভয়ানক তৃপ্ত আমি, কাজে কর্মে উল্লাসে উদ্দীপনায় ফেটে পড়ছিলাম। পাশের বাড়ির জ্যোতির মা আমাকে তখন বলেছিল—তোমাকে দেখলে যদুর বৌ, বোঝাই যায় না তোমার এত বয়স। ঠিক আঠারো উনিশ লাগে।
আমার আড়ালে আমার শ্বশুরের সন্দেহ বাড়ছিল। মত্ত আমি, মুগ্ধ আমি কিছুই ধরতে পারিনি। অনন্তকে আমার শ্বশুর আমার কাছে রাখতেন না বহুদিনই। আমার বুকে বিশেষ দুধ ছিল না, আর যে কোনও শিশুর মতো ও বাইরে বেড়াতে যেতে খুব ভালোবাসত। শ্বশুর একহাতে ওকে বুকে নিয়েই কাজেকর্মে যেতেন। রাস্তায় রাস্তায় ও বড় হয়ে উঠছিল। আমি ভয় পেতাম ও বড় হয়ে যেন ওর ঠাকুরদার স্বভাব না পায়। আমার কাছে ও থাকতে চাইত না। পড়তে চাইত না। উদ্ধব মণ্ডলের কাঁধে চেপে ও গরু চরাত। ও মোষের পিঠের ওপর চেপে পুকুরের মধ্যে নেমে যেত। আমি প্রচণ্ড ভয় পেতাম—ওর যদি কিছু হয়ে যায়,
আমার তবে কী থাকবে? কিংবা ও যদি আমার কিছু নাই পেল, তাহলে আমার গর্ভে ওর আসার মানেটা কী রইল। রাতের বেলায় ঘুমিয়ে গেলে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখতাম, নইলে জেগে উঠলেই তো ও পালিয়ে যাবে।
এক-একদিন ও ঘরেই থাকত। আমি বুঝিনি ওকে আমার পাহারাদার করে রেখে গেছে ওর দাদু। একদিন পুলিনবাবুর বুকের উত্তাপে আমার বহুদিনের শৈত্য গলে যেতে যেতে মুহূর্তে চোখ খুলে দেখি গোয়ালঘরের দরজা খুলে আমার অনন্ত আমাদের খেলা দেখছে।
তখনও ভয় পাইনি। সেদিন অনন্তকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলাম। আর সেদিন কী আশ্চর্য, সব ভুলে সেই ছেলে আমার কোলে শুয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদেছিল। মা তোমাকে ওই ডাক্তার মারছিল কেন? আমি বলেছিলাম, না বাবা, ও আমাকে আদর করছিল ও খুব ভালো লোক। আমাকে খুব ভালোবাসে। তোমার কোনও ভয় নেই। সেদিন সন্ধ্যেবেলা সকলে ঘরে ফিরেছিল। অনন্তের বাবা হাওড়া থেকে ঘেমে নেয়ে ফিরে কুয়ােতলায় চান করছিলেন। অনন্তকে রান্নাঘরে আমি খেতে দিচ্ছিলাম, আর ওর ঠাকুরদা গোয়ালঘরে মশা তাড়ানোর ধোঁয়া দিতে যাচ্ছিলেন। আমি অনন্তর মুড়ির বাটিতে সবেমাত্র গরম দুধ ঢালছি, এমন সময় সে ঠাকুরদাকে দেখে উত্তেজিত, উঠে দাঁড়িয়েছে, কী একটা বলার চেষ্টা করছে। আমি বললাম, খেয়ে যা। ও বলল বলে আসি, আজ ডাক্তার তোমার বুকের ওপর চেপে তোমাকে মারছিল।
আমি চোখ বড় করে বললাম—এ কথা তুমি বলবে না।
ও তাও বলল-ঠাকুরদা তো বলেছে ডাক্তারের সঙ্গে তোমাকে কোনওদিন দেখলেই আমাকে বাপ্পার মতো একটা বন্দুক কিনে দেবে।
আমি বললাম, এ কথা তুমি কোনওমতে বলবে না। তাহলে আমি একেবারে মরে যাব।
ও আমাকে পাত্তা না দিয়ে আমার সমস্ত বাধা অগ্রাহ্য করে চিৎকার করল-ঠাকুরদা। আর তখনই আমার দুখানা হাত, দশটা আঙুল ওর কচি গলাকে চেপে ধরল। কচি লাল গোলাপের নীল ডাঁটিটা পুট করে ভেঙ্গে গেল।
আমার যাবজ্জীবন হয়েছে। ফাঁসি কেন হল না? এখনো ভোরবেলায় লালচে আকাশের আলো দেখি। জেলের বাগানে বড় বড় রক্ত গোলাপ হয়। কয়েকজন বন্ধুও হয়েছে। অনন্তও সঙ্গে থাকে। কিন্তু এরপর বারো বছর পার হলে কোথায় যাব আমি? কাদের ঘরে? আমার তো কোনও ঘর নেই। আবারও কারাগারের মতো আর একটা নিশ্চিন্ত ঘর পেতে কোন গোলাপ ডাঁটি ভাঙ্গতে হবে রাধিকাকে?
দেখতে তো ভালো ছিলাম না। কালো চেহারা। দিদিরা বরং আমার থেকে দেখতে ভালো। তবু ইস্কুলে আমাকে শিক্ষকরা ভালোবাসতেন। ক্লাস নাইনে পড়তে আমার বিয়ে হলে তাঁরা রাগ করেছিলেন। আর আমাদের স্কুলের লাইব্রেরীর দু-আলমারি বই-এর প্রায় অর্ধেক গল্পের বই আমি ক্লাস নাইনের মধ্যেই পড়ে ফেলেছিলাম। রূপ সোনাতলার উদ্ধব মণ্ডলের ছেলে যদুনন্দনের গলায় মালা পরাতে আমাদের তিনটে দুধেল গাই বিক্রি করতে হয়েছিল। আমরা জাতে গোয়ালা-গরু বিক্রি যে আমাদের প্রাণে কী লাগে তা আমরাই জানি!
বিয়ের পর যতদিন আমার শাশুড়ি বেঁচে ছিলেন, কিছুটা হলেও আমি নির্ভাবনায় ছিলাম।
আমার শ্বশুরের ডাকাতের মতো গায়ের শক্তি, তেমনি তার প্রতাপ। তার ভয়ে আমার শাশুড়ি স্বামী অস্থির। আমার বিয়ের পরও তিনি তার ছেলেকে আমার সামনেই পিটিয়েছেন। এরকম ধারাবাহিক ব্যবহার পেয়েই বোধহয় আমার স্বামী মনের সমস্ত বল হারান। বাবার বিরুদ্ধে একটা কথা বলারও তাঁর ক্ষমতা ছিল না। আমার বা আমার শাশুড়ির শুধু কাজ ছিল তার পুজো করা। গোবর্ধন পুজো আমাদের গ্রামে চিরকাল ধুমধামের সঙ্গে হয়। আমি সারাদিন উপোষ করতাম আর প্রার্থনা করতাম-উদ্ধব মণ্ডল, আমার শ্বশুর যেন আর একদিনও না বাঁচেন। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তিনি বেঁচে রইলেন, আর আমার শাশুড়ি একদিন রান্না করতে করতে স্ট্রোক হয়ে হঠাৎ মরে গেলেন, তখন তার একটা পা উনুনের আগুনে চিতাতে ওঠার আগেই জ্বলে পুড়ে গেল।
তবে আমার একান্ত প্রার্থনায় কিনা জানি না—পাশের গ্রামের গাজনের মেলায় বাগদিদের একটা বৌ-এর গায়ে হাত দেওয়া নিয়ে খুব মারামারি হয়। আমার শ্বশুরের এইসব গুণের কথা সবাই জানত, আর অনেকেই অনেক রাগ পুষে রেখেছিল। সেই মারামারিতে কেউ একজন টাঙ্গির কোপ মারে আমার শ্বশুরের হাতে। হাত ছিঁড়ে পড়ে যায়। এই নিতে মামলা-মোকদ্দমা হলেও আমার শ্বশুর চিরকালের মতো নুলো উদ্ধব হয়ে যান। তাঁর প্রতাপ কিছুটা কমে। আর এই সময়ই আমি আমার বিয়ের বারো বছর পর আমার গর্ভের মধ্যে অনন্তর আগমন টের পাই।
পুলীনবাবু তখন থেকেই আমাদের বাড়ি আসেন। উনি কোয়াক ডাক্তার হলেও গাঁয়ে বেশ নাম করেছিলেন। আমাদের দুধের ব্যবসা। আমার নয়, গরুদের চিকিৎসা করতেই উনি বাড়িতে আসতেন। আমার স্বামী দুধ আর ছানা বিক্রি করতেন বলে বিশেষ বাড়ি থাকতেন না।
আর শ্বশুরকেও একহাতেই লাঠি নিয়ে গরু চরাতে হত। এরকম একটা দিন—যখন কেউই নেই—তখন আমার গর্ভবেদনা শুরু হলে আশেপাশের ছেলেরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাতেই আমি সন্তানের জন্ম দিই। আমি মরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পুলীনবাবুই আমাকে প্রাণে বাঁচান। আমাকে তিনি গরু বা ছাগল মনে করেই আমার ভেতর হাত ধরে রক্তমাখা অনন্তকে টেনে বের করেন আর বোধহয় মানুষের বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে যান।
আর তার পরের দিনগুলোতে বন্ধ্যা নাম কাটিয়ে আমি মাতৃগর্বে ফেটে পড়ি। আমার স্বামী পুলীনবাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। আর আমার শ্বশুর সবদিক বিবেচনা করে আমাদের গরু মোষের বিনাপয়সায় চিকিৎসা নেবেন বলেই আমাদের গোয়ালঘরের পিছনে তার জন্য একটা ডিসপেন্সারি খুলে দেন।
সংসারে আমার কাজের অন্ত নেই। রান্না করা, ছানি কাটা, দুধ দোওয়া, ঘুঁটে দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার করা—শতেক কাজ। তবু আমার একটা ছোট বাগানের শখ ছিল। রূপ সোনাতলার মানুষরা বড় চাষি। তারা এতটুকু জায়গা পেলেও সবজি লাগায়। লাউ-কুমড়োর লতা চালে তোলে। আর আমি ছাগল গরু মোষের হাত থেকে বাঁচিয়ে বেড়া দিয়ে দুখানি হলুদ গাঁদা গাছ, একখানি চাপা সাদা টগরের গাছ লাগাই। না চাইতেই পুলীনবাবু আমার জন্য একটা লাল গোলাপের চারা আনেন। আমার মনে হয় আমি এত বড়ো উপহার কখনো পাইনি। উচ্ছ্বসিত আমার চোখে জল এসে পড়ে। উনি একদৃষ্টে আমাকে দেখতে থাকেন।
তারপর কী ভেবে বলেন—আপনি খুব সুন্দরী। আপনি জানেন, আপনি যেন ঠিক রাধিকাই।
চিরকাল আমি শুনে এসেছি—আমি কুৎসিত, আমার জন্য তিনটে গাইগরু বিক্রি করতে হয়েছে। এখানেও বারো বছর আমি বন্ধ্যা ছিলাম। উদ্ধব মণ্ডলের আমাকে তাড়িয়ে দেবার হাজার ছক ছিল। কেবল আমি ভয়ানক খাটতে পারতাম। সহজে পরিশ্রান্ত হতাম না। গরু মোষের ভার আমার ওপর ছেড়ে তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন। আর সুন্দরী স্ত্রী তিনি তার ছেলেকে দিতে চাননি, ছেলে বৌমুখো হবে বলে।
আমি অবিশ্বাসের চোখে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকি। তিনি বলেন—আপনি গোলাপের নতুন কচি ডাঁটির মতো দেখতে, বিশ্বাস করুন। অমনি গায়ের রঙ, অমনি নরম আপনি।
আমরা দুজনে মিলে গাছখানা লাগিয়ে ফেলি। এরপর তাঁকে আমি মন থেকে, শরীর থেকে আর নামাতে পারিনা। আমি যদুর বৌ, অনন্তের মা থেকে রাধিকা, রাধা হয়ে উঠি। তার ডিসপেন্সারির পিছনে গোয়ালে গিয়ে আমি গরুদের সঙ্গে উচ্চস্বরে গল্প শুরু করি। আসলে তাঁকে ডাকি। তিনি তখন আমাকে দেখবার জন্য কোনো না কোনো ছুতোয় সামনের রাস্তায় পায়চারি করেন।
তিনি আমার আর একটি উপকার করেন। পাশের গ্রামের ‘যুগের প্রদীপ’ লাইব্রেরী থেকে প্রতি সপ্তাহে আমার জন্য একটি করে গল্পের বই নিয়ে আসেন। আর এই বই-এর সূত্রেই আমার স্বামী বা শ্বশুর বোঝেন তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের গল্পটা। শ্বশুর কাজে ক্ষতি হচ্ছে বলে একদিন চোটপাট করলে, কোন কোন কাজে ক্ষতি হচ্ছে- এ বিষয়ে তার কাছে স্পষ্ট জবাব চাই। আর তিনি কোনও সদুত্তর দিতে না পেরে আমার দিকে শুধুই কটমট করে তাকিয়ে থাকেন। আমিও তাঁর সামনে শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়াই।
পুলীনবাবুর পশার জমছিল। পাশের গ্রামে গরু-মোষের মড়ক লাগলেও আমাদের গ্রামে তা থমকে দাঁড়িয়েছিল। ফলে কৃতজ্ঞ শ্বশুরের রাগ সামান্য কমেছিল। আমি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। সাহসী হয়েছিলাম। গোয়ালঘরের ভেতরের অন্ধকারে গোবরের সোঁদা গন্ধের মধ্যে তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম, ভর দুপুরে। আমাকে গ্রহণ করতে তাকে বাধ্য করেছিলাম। তারপর দ্বিতীয়দিন, তারপর তৃতীয়দিনও। এক অনাস্বাদিত শারীরিক মূছর্নার গৌরবে ভয়ানক তৃপ্ত আমি, কাজে কর্মে উল্লাসে উদ্দীপনায় ফেটে পড়ছিলাম। পাশের বাড়ির জ্যোতির মা আমাকে তখন বলেছিল—তোমাকে দেখলে যদুর বৌ, বোঝাই যায় না তোমার এত বয়স। ঠিক আঠারো উনিশ লাগে।
আমার আড়ালে আমার শ্বশুরের সন্দেহ বাড়ছিল। মত্ত আমি, মুগ্ধ আমি কিছুই ধরতে পারিনি। অনন্তকে আমার শ্বশুর আমার কাছে রাখতেন না বহুদিনই। আমার বুকে বিশেষ দুধ ছিল না, আর যে কোনও শিশুর মতো ও বাইরে বেড়াতে যেতে খুব ভালোবাসত। শ্বশুর একহাতে ওকে বুকে নিয়েই কাজেকর্মে যেতেন। রাস্তায় রাস্তায় ও বড় হয়ে উঠছিল। আমি ভয় পেতাম ও বড় হয়ে যেন ওর ঠাকুরদার স্বভাব না পায়। আমার কাছে ও থাকতে চাইত না। পড়তে চাইত না। উদ্ধব মণ্ডলের কাঁধে চেপে ও গরু চরাত। ও মোষের পিঠের ওপর চেপে পুকুরের মধ্যে নেমে যেত। আমি প্রচণ্ড ভয় পেতাম—ওর যদি কিছু হয়ে যায়,
আমার তবে কী থাকবে? কিংবা ও যদি আমার কিছু নাই পেল, তাহলে আমার গর্ভে ওর আসার মানেটা কী রইল। রাতের বেলায় ঘুমিয়ে গেলে তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখতাম, নইলে জেগে উঠলেই তো ও পালিয়ে যাবে।
এক-একদিন ও ঘরেই থাকত। আমি বুঝিনি ওকে আমার পাহারাদার করে রেখে গেছে ওর দাদু। একদিন পুলিনবাবুর বুকের উত্তাপে আমার বহুদিনের শৈত্য গলে যেতে যেতে মুহূর্তে চোখ খুলে দেখি গোয়ালঘরের দরজা খুলে আমার অনন্ত আমাদের খেলা দেখছে।
তখনও ভয় পাইনি। সেদিন অনন্তকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলাম। আর সেদিন কী আশ্চর্য, সব ভুলে সেই ছেলে আমার কোলে শুয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদেছিল। মা তোমাকে ওই ডাক্তার মারছিল কেন? আমি বলেছিলাম, না বাবা, ও আমাকে আদর করছিল ও খুব ভালো লোক। আমাকে খুব ভালোবাসে। তোমার কোনও ভয় নেই। সেদিন সন্ধ্যেবেলা সকলে ঘরে ফিরেছিল। অনন্তের বাবা হাওড়া থেকে ঘেমে নেয়ে ফিরে কুয়ােতলায় চান করছিলেন। অনন্তকে রান্নাঘরে আমি খেতে দিচ্ছিলাম, আর ওর ঠাকুরদা গোয়ালঘরে মশা তাড়ানোর ধোঁয়া দিতে যাচ্ছিলেন। আমি অনন্তর মুড়ির বাটিতে সবেমাত্র গরম দুধ ঢালছি, এমন সময় সে ঠাকুরদাকে দেখে উত্তেজিত, উঠে দাঁড়িয়েছে, কী একটা বলার চেষ্টা করছে। আমি বললাম, খেয়ে যা। ও বলল বলে আসি, আজ ডাক্তার তোমার বুকের ওপর চেপে তোমাকে মারছিল।
আমি চোখ বড় করে বললাম—এ কথা তুমি বলবে না।
ও তাও বলল-ঠাকুরদা তো বলেছে ডাক্তারের সঙ্গে তোমাকে কোনওদিন দেখলেই আমাকে বাপ্পার মতো একটা বন্দুক কিনে দেবে।
আমি বললাম, এ কথা তুমি কোনওমতে বলবে না। তাহলে আমি একেবারে মরে যাব।
ও আমাকে পাত্তা না দিয়ে আমার সমস্ত বাধা অগ্রাহ্য করে চিৎকার করল-ঠাকুরদা। আর তখনই আমার দুখানা হাত, দশটা আঙুল ওর কচি গলাকে চেপে ধরল। কচি লাল গোলাপের নীল ডাঁটিটা পুট করে ভেঙ্গে গেল।
আমার যাবজ্জীবন হয়েছে। ফাঁসি কেন হল না? এখনো ভোরবেলায় লালচে আকাশের আলো দেখি। জেলের বাগানে বড় বড় রক্ত গোলাপ হয়। কয়েকজন বন্ধুও হয়েছে। অনন্তও সঙ্গে থাকে। কিন্তু এরপর বারো বছর পার হলে কোথায় যাব আমি? কাদের ঘরে? আমার তো কোনও ঘর নেই। আবারও কারাগারের মতো আর একটা নিশ্চিন্ত ঘর পেতে কোন গোলাপ ডাঁটি ভাঙ্গতে হবে রাধিকাকে?
15 মন্তব্যসমূহ
কোনো মন্তব্য করার ক্ষমতা নেই গল্পটা পড়ে।
উত্তরমুছুনএমন মনস্তত্ত্ব গল্পে বুনে দেওয়ার জন্য কলমে দম লাগে।
কোনো মন্তব্য করার ক্ষমতা নেই গল্পটা পড়ে।
উত্তরমুছুনএমন মনস্তত্ত্ব গল্পে বুনে দেওয়ার জন্য কলমে দম লাগে।
অসাধারণ।মনে রাখর মতোই।
উত্তরমুছুনঅসম্ভব ভালো লেখা ম্যাডাম
উত্তরমুছুনঅনবদ্য কথন। একরাশ ভালো লাগা।
উত্তরমুছুনশুধু অনন্ত টা'র জন্য দুখঃ হয়।
উত্তরমুছুনশুধু অনন্ত টা'র জন্য দুখঃ হয়।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ লেখনী,গল্পের বুনোন সুন্দর।রাধার শারীরিক চাহিদা স্বাভাবিক,সামাজিক লজ্জাবোধকেও অস্বীকার করা যায় না।কিন্তু সন্তান স্নেহ তার হঠকারিতা সত্বেও অমলিন।গল্পের শেষে এসে পাঠক ও দিশেহারা হয়ে পড়ে- রাধিকা কে দোষী বলা যাবে কিনা।ছোট গল্প রচনায় লেখক এখানেই সার্থক হয়ে ওঠেন।ভালো গল্প উপহার দেওয়ার জন্য লেখকের ধন্যবাদ প্রাপ্য।কিন্তু আরো অনেকের মতো অনন্তর জন্য দুঃখ রয়ে গেলো।
উত্তরমুছুনসুন্দর
উত্তরমুছুনএ ই-বুক এ লেখা প্রকাশের পদ্ধতি জানতে চাই।
উত্তরমুছুনধূর! অনন্তের কিচ্ছু হয়নি। সত্যিই কিচ্ছু হয়নি। গল্প বলছেন আপনি। বলুন গল্পটাই বললেন এতক্ষণ। কী স্যাঁতস্যাঁতে মন আমার! কেন যে পারি না এসব নিতে...
উত্তরমুছুনমন খারাপ করা ভালো গল্প
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর গল্প। মন খারাপ হয়ে যায়।
উত্তরমুছুনকি অসাধারণ গল্প অহনা...............।
উত্তরমুছুনভালো লাগল।
উত্তরমুছুন