অন্ধ চাঁদের উপকথা

তুহিন দাস

দাদীবুড়ির নাম কি ছিল তা জানা যায়নি, তবে মোসাম্মাৎ আয়মননেছা বেগম জাতীয় কিছু একটা ছিল নিশ্চয়। তিনি মাল বইতেন ও তার ডেরার পাশে একটি হোটেলের পানি এনে দিতেন। মাল বয়ে নেবার সময় কেউ পেছন থেকে টেনে ধরলে দাদীবুড়ি অশ্রাব্য গালিগালাজ করতেন। কখনো মেজাজ অতিরিক্ত খিঁচড়ে থাকলে ন্যাংটো হয়ে দেখাতেন। তাই খুব কম লোকই তাকে ঘাটাতো। আসলে তিনি বুঝতেন সমাজের মিশ্রিত চরিত্রের মানুষের মাঝে নিরাপদে বাস করতে হলে এসবই তার মত একজন নিম্নশ্রেণীর মানুষের রক্ষাকবচ।

তিনি কমবেশি কবিরাজী চিকিৎসা জানতেন। একে তো গ্রামের মেয়ে। তার উপর তার বাবা ছিল সে সময়ের একজন ভালো কবিরাজ। তিনি যে হোটেলে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতেন সে হোটেলের এক মেচিয়ার একবার প্রচণ্ড জ্বরের কবলে পড়ে। দাদীবুড়ি তাকে একগাছি বনজ পাতা পানিতে ডুবিয়ে খেতে দেন। তাতেই নাকি ওর জ্বর অবিশ্বাস্য রকম কম সময়ের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। লোকশ্রুতি অনুসারে, এভাবেই তার কেরামতি প্রথম ধরা পড়ে। এরপর তার কাছে মাঝেমধ্যে আশেপাশের লোকেরা ওষুধপত্তর নিতে আসতো। কবিরাজি ও ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী মানুষেরা স্বল্পসাধ্যের খরচে চিকিৎসার জন্য তার শরণাপন্ন হত এবং খুশি হয়ে তার হাতে পাঁচ-দশ টাকার নোট গুঁজে দিত। প্রথম প্রথম দাদীবুড়ি ফিরিয়ে দিতেন। কিছুদিন পরে দেখলেন, মানুষের আসা-যাওয়া যে হারে বাড়ছে তাতে তাদের টাকাপয়সা ভিজিট হিসেবে রাখলে তাকে আর বোঝা টানার কাজ করতে হবে না। ওতেই তার তিনবেলা খাওয়া-দাওয়া বেশ ফূর্তিতেই হয়ে যাবে। এরপর দাদীবুড়ি যে যা খুশি দ্যায় তাই রাখতেন এবং নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করলেন।

তিনি যে হোটেলের পানি বইতেন, সে হোটেলের মালিক ওয়াজেদ সাহেব আলেম প্রকৃতির ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন। চোখে সুরমা, সাদা ধবধবে পাজামা-পাঞ্জাবী পড়তেন। মাথায় টুপি, লম্বা দাড়ি ছিল। একদিন দাদী বুড়ির ডাক পড়ল তার বৈঠকখানায়। দাদী বুড়ি তখন বোঝা না টানলেও, ওয়াজেদ সাহেবের রহমাতুল্লাহ হোটেলের খাবার পানি এনে দিতেন। ওয়াজেদ সাহেব সাতঘাটের পানি খাওয়া মানুষ। ব্যবসাও বুঝতেন। ধর্ম-কর্ম কাজে বিভিন্ন মাজার-আউলিয়ার আস্তানায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি জানতেন, এসব গড়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনী। ওয়াজেদ সাহেব বুঝলেন দাদীবুড়িকে দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব। তিনি দাদী বুড়িকে বিস্তারিত খুলে বললেন। টাকাপয়সার লোভও দেখালেন। দাদীবুড়ি যে অবুঝ ছিলেন, তা নয়। এখন বয়সের ভারে একটু ন্যুজ্ব, এই যা। ওয়াজেদ সাহেবের কথা তার মনে ধরলো। যদিও বারকয়েক ইতস্তত করছিলেন। তখন ওয়াজেদ সাহেব বুঝালেন:'মোরা তো মানৃষের মন্দ করতাছি না...'

দাদীবুড়ি রাজি হয়ে গেলেন। ওয়াজেদ সাহেব দাদীবুড়িকে এখন থেকে হোটেল পানি দিতে নিষেধ করলেন। পানি আনার জন্য ম্যানেজারকে নতুন লোক ঠিক করতে বললেন। দাদীবুড়ি ওয়াজেদ সাহেবের জমিতে একটি নিমগাছের নিচে চারদিকে পলিথিন টাঙিয়ে চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে ঘর বানিয়েছিলেন। এবার ওয়াজেদ সাহেব নিমগাছ থেকে কিছুদূরে সিলিং উঁচু করে বড় দুইটি ঘর বানিয়ে দিলেন। এর একটিতে দাদীবুড়ি থাকতেন, অন্যটিতে দাদীবুড়ি ধর্মপরায়ণ ও চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষকে সাক্ষাৎ দিতেন।

কিছুদিন পরে দাদীবুড়ির নিজের মাথায় নতুন ব্যবসার পন্থা খুলে গেল। তিনি সরাসরি ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলেন। ওয়াজেদ সাহেব বুঝলেন, বুড়ি এবার নিজের প্রয়োজনেই এসেছে। দাদীবুড়ি ওয়াজেদ সাহেবকে নেপথ্যে তাবিজ-কবজ-তাগার ব্যবসার কথা বললেন। ওয়াজেদ সাহেবের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় এটাও ছিল। তবে এত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারেননি। তিনি দাদীবুড়িকে আশ্বস্ত করলেন এবং তখন থেকে যেসব কঠিন ব্যামো নিয়ে মানুষ আসতো, যে রোগের কবিরাজি চিকিৎসা থাকা তো দূরের কথা, লক্ষণ দেখে দাদীবুড়ি রোগই সনাক্ত করতে পারতেন না, সেসব ক্ষেত্রে তাবিজ-কবচ-তাগা দেয়া শুরু করলেন। এমন সময় এল গাঁওগেরামের মানুষ এমনিতেই তাবিজ-কবচ-তাগা নিতে আসতো। তারা দাদীবুড়ির দেয়া তাবিজ-কবচ-তাগা কিনতে হত দাদীবুড়ির উঠান থেকেই। সেখানে এক খোঁড়া লোককে ওয়াজেদ সাহেব কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, যার দুই পা কাটা পড়েছিল এক সড়ক দুর্ঘটনায়। সে বুকে ভর রেখে এক কুৎসিত সরীসৃপ প্রাণীর মত মাদুরের উপর শুয়ে ওয়াজেদ সাহেবের সরবরাহ করা তাবিজ-কবচ-তাগা বিক্রি করে।

ওয়াজেদ সাহেব জানতেন কিভাবে ব্যবসা জমানো যায়। এরপর তিনি গানের দল ডেকে এনে সপ্তাহে একদিন গান গাওয়াতে লাগলেন:'মেরা অন্দর আলী আলী...।' এক সময় জনসমাগমের কারণেই গানের দল সপ্তাহে দু'দিন বসাতে হল।
আস্তানায় জনসমাগম আরো বাড়ানোর জন্য এবার ওয়াজেদ সাহেব নিজেই মাঠে নামলেন। রবিবার ও বৃহস্পতিবার গানের আসর ছাড়াও শুক্রবার তবারকের ব্যবস্থা করা হল। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই দাদীবুড়ির হাতে রান্না করা খিঁচুড়ি বিনে পয়সায় খেতে আসতো। আস্তানা প্রাঙ্গণে একটি মসজিদের প্রয়োজন ছিল। ওয়াজেদ সাহেব এবার একটি মসজিদ, একটি টিনের চালা দিয়ে বড়সড় বিশ্রামাগার ও পাকা লেট্রিন নির্মাণ করে দিলেন। আশেপাশের জমি কিছু কিনে, কিছু জবরদখল করে আস্তানার পরিধি বাড়ানো হল। চারদিকে বেড়া দেওয়া হল। দেখাশোনার জন্য লোক রাখা ও তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হল। আস্তানার ভেতরে, প্রবেশপথে, বিভিন্ন দোকানঘরে টিনের দানবাক্সে ঝুলান হল। একমাস পর পর সে বাক্স খুলে টাকাপয়সা আনা শুরু করল। দাদীবুড়ির আস্তানার লোক পরিচয় দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকমারফত চাল-ডাল-টাকা সংগ্রহ শুরু হয়। যারা এসব সংগ্রহ করতো তারা মোটা অংকের টাকা কমিশন পেত বা সংগৃহিত চাল-ডাল-আলু প্রভৃতির একাংশ নিজেদের বাড়ি নিয়ে যেত এবং তা দিয়েই সংসার চলতো। কৃষিজীবী মানুষগুলো কৃষিকাজের থেকে দাদীবুড়ির আস্তানার হয়ে কাজ করাকে অধিক লাভজনক মনে করতে শুরু করল।

তার আধিপত্য বিস্তার বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল। ওয়াজেদ সাহেব একা সব সমস্যার সমাধান দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আস্তানার ব্যবস্থাপনা, খাদেমদারি, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজেকে সভাপতি রেখে একটি কমিটি গঠন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং বিষয়টি নিয়ে জুম্মার নামাজের পর বেশ কয়েক শুক্রবার ও ব্যক্তিগতভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করলেন। অন্যদিকে, এই কমিটি গঠন নিয়ে এলাকায় কানাঘুষা আরম্ভ হল। এক কানাঘুষার মূল উদ্যোক্তা এলাকার আরেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আতাহার আলী। তিনি ইতোমধ্যে হজ্জ করে এসেছেন। সবাই তাকে এত মান্য করে, শুধু ওয়াজেদ মিয়াই হেলাফেলা করে। আতাহার আলী বুঝলেন আস্তানাকে কেন্দ্র করে কমিটির সকলেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাবে। তাছাড়া কমিটিতে থাকা না থাকা প্রেস্টিজের ব্যাপার। তাই তিনি এবার চক্ষুলজ্জা ভেঙে ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করলেন এবং তার মনষ্কামনা ব্যক্ত করলেন। তাকে সহ-সভাপতি বানানোর জন্য ওয়াজেদ সাহেবকে ইঙ্গিত করলেন। ওয়াজেদ সাহেব 'দেহি কি করা যায় আপনার লাগি' বলে এড়িয়ে গেলেন।
ওয়াজেদ সাহেবের বৈঠকখানায় এক দুপুরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দাওয়াতি খাওয়ানোর পরে আস্তানা কমিটি গঠিত হল। সে কমিটিতে আতাহার আলীর নাম ছিল না। তবু আতাহার আলী আক্রোশে ফেটে পড়লেন না। তিনি বিচক্ষণ মানুষ। ওয়াজেদ সাহেবের সঙ্গে গণ্ডগোল পাকিয়ে টিকতে পারবেন না। তাই আপাতত নিরব থাকলেন এবং ফন্দি খুঁজতে থাকলেন, আঘাতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।

এরপর এক ঘটনা ঘটলো। দাদীবুড়ির সেই নিমগাছ থেকে মিষ্টি রস পড়া শুরু করল। এই কাণ্ড দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ। ঘটনাটিকে সংস্কারবদ্ধ, হুজুগে মানুষের উদ্ভিদবিজ্ঞানের আলোকে দেখার অবসর নেই। একে সৃষ্টিকর্তার আশ্চর্য লীলা মনে করল সবাই। তাদের কাছে এ ঘটনা অলৌকিক বৈ কিছু নয়। এবার আর দাদীবুড়ির নাম ঠেকায় কে? গুজব রটে গেল, এই কুদরতি কাণ্ড নাকি দাদীবুড়ি সাত দিন সাত রাত সেজদা ও সাধনার পর জ্বীন দ্বারা ঘটিয়েছেন। শুনে দূর-দূরান্ত থেকে হৈ হৈ করে মানুষ আসতে লাগলো। বারবার দানবাক্সের তালা খুলতে হল। নিমগাছের নিচে মোমবাতি, আগরবাতির স্তূপ জমে গেল। মানুষের আবেগ, বিশ্বাস ও ভক্তির আর কোন সীমা রইল না। এখনো জনশ্রুতি আছে যে সে সময় নাকি তাবিজের মোমঢালাই দেওয়ার জন্য ডেকচিতে মোম জ্বাল দেয়া হত।
এবার আরো চরম ঘটনা ঘটল। কে বা কারা দাদীবুড়ির খাবার ধুতরা বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। তা খেয়ে বুড়ি অচেতন। দীর্ঘসময় সংজ্ঞাহীন থাকার পর দাদীবুড়ি একসময় চোখ মেলেই প্রথমে একটি স্বপ্নের কথা বললেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী স্বপ্নটা ছিল এরকম: চারদিকে বাগান আর বাগান। অজস্র ফুল ফুটে আছে। কেবলই বৃষ্টি পড়ছে। তিনি ঐ বৃষ্টির মধ্যে বাগানে সেজদায় মগ্ন। শব্দ পাচ্ছেন কারা যেন সুর দিয়ে জিকির ধরেছে। ক্রমেই আল্লাহধ্বনি উচ্চকিত হয়ে উঠছে। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে এই ধ্বনি তার মনযোগ নষ্ট করে ফেলছে। তিনি সেজদা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। এবার একটা বড় বটগাছ দেখতে পেলেন। তার সামনে দাঁড়ানো মাত্র অন্যপথের দরজা খুলে গেল। উঁকি মেরে দেখতে পেলেন গাছের মধ্যে প্রশস্ত স্থান, জায়নামাজ পেতে রাখা। যেন কেউ এইমাত্র নামাজ পড়ে গেছে। দাদীবুড়ি আবার সেজদা দিলেন। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানেন না। এক সময় তিনি সেজদা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ফুলের এত উৎকট গন্ধ! বৃষ্টি থেমে গেছে। জিকিরও শোনা যাচ্ছে না। তবে এত শব্দ কিসের? কিছুদূর এগিয়ে দেখতে পেলেন, বাগানের তীর ছুঁয়ে এক তরঙ্গবহুল হেলানো ঝর্ণা নিচে নামছে। নিচে একদল নর-নারী গোসল করছে। নরের থেকে নারীর সংখ্যাই বেশি। এরা কি হুর? ওই তো কে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে:'আয় বুড়ি মা...।' দাদীবুড়ি ওপর থেকে লাফিয়ে পড়লেন।

ক্রমশ নেমে যাচ্ছেন, নেমে যাচ্ছেন--পতনের মধ্য থেকেই তিনি চেতনে ফিরে এলেন। সবাই এ গল্প শুনে হায় মাবুত, হায় মাবুত চিৎকার করল। তারা ভাবল দাদীবুড়ি বেহেশত ঘুরে এসেছেন। সেই অভিজ্ঞতা পুনরায় ব্যক্ত করতে বললে দাদীবুড়ি চোখ উল্টে পুনরায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললেন। সকলেই দোয়াদরুদ পড়তে আরম্ভ করল। মাদ্রাসার ছেলেরা নাকিসুরে কোরান খতম করতে লাগল। মসজিদে-বাড়িতে বাড়িতে রাকাত রাকাত নামাজ পড়া হল। সন্ধ্যার পর তার চেতনা পুনরায় ফিরে এলে প্রথমেই পানি খেতে চাইলেন। পানি খেয়েই তসবির খোঁজ করলেন। বুড়ি শুয়ে শুয়েই তসবি টিপতে থাকলো। কারো কোন প্রশ্নের জবাব দিলেন না। ইশারায় চুপ থাকতে বললেন।
দাদীবুড়ির খাবারে ধুতরা বিষ মেশানোর সঙ্গে আতাহার আলীর কতটুকু সম্পর্ক ছিল--তা খতিয়ে দেখার থেকে ওয়াজেদ সাহেব আপাতত জরুরী মনে করলেন, দাদীবুড়ির সুচিকিৎসা যেন না হয়। কারণ তেতো নিমগাছ থেকে মিষ্টি রস পড়া ও দাদীবুড়ির মৃত্যু এই দু'টি ঘটনাকে একই সূত্রে গেঁথে একটা নতুন গল্প তৈরি করতে তার খুব বেগ পেতে হবে না। এবং একটা মাজার তৈরির কাজ তিনি করে যেতে পারবেন।

দাদীবুড়ি তো সুস্থই হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ করে ধুতরা বিষ কেন যে বুড়িকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে গেল, তা ওয়াজেদ সাহেব ও তার দুই ঘনিষ্ঠ সহচর ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারল না। পরদিন ভোরে দাদীবুড়িকে বিছানায় মৃত পাওয়া গেল। ঠাণ্ডা, কর্কশ। সাদা ধবধবে বিছানায় যেন শতাব্দীপূর্ব মৃতডাইনি পড়ে আছে। যার কোন ইতিহাস নেই। ওয়াজেদ সাহেব প্রথমে বেশ কান্নাকাটি করলেন। তারপর সবাইকে দাদীবুড়ির অলৌকিক সব গল্প শুনিয়ে বেড়ালেন। দাদীবুড়ি কিভাবে তার মাথায় শুধু ফুঁ দিয়েই যন্ত্রণা সারিয়ে দিয়েছিলেন। এক গভীর রাতে দেখেছিলেন দাদীবুড়ি বিছানায় নেই, শূন্যে সেজদায় ভাসছেন। বহুরাতে বুড়ির ঘরে অমানুষিক চিৎকার শুনে তার ঘরে ছুটে গেছেন। কিন্তু অদ্ভুতুড়ে আলো ছাড়া কিছু দেখতে পাননি। পরে দাদীবুড়ি বলেছেন তিনি বদজ্বীনদের ধরে এনে শাস্তি দিতেন। নিমগাছ থেকে মিষ্টি রস পড়ার সাধনার সময় তিনি নাকি উঁকি দিয়ে দাদীবুড়ি কি করছেন তা চুপিচুপি দেখতে গিয়েছিলেন। দেখলেন, দাদীবুড়ি গাছের মগডালে ঝুলে আছেন। আর তাকে শাসাচ্ছেন, 'যা-যা...।' ওয়াজেদ সাহেব আরো সব গল্প বলে বেড়াতে লাগলেন। শুনে, দাদীবুড়ির প্রতি সমীহে শোকার্ত মানুষেরা কান্নায় ভেঙে পড়ল।

দাদীবুড়ি তার আবাসস্থলের মাঝেই শায়িত হলেন। পাকা সৌধ বানিয়ে দেয়া হল। ফলকে শ্বেতপাথর খোদাই করে তার নাম লেখা হল। এভাবেই মাজার নির্মাণ করে ওয়াজেদ সাহেব তার উত্তরপুরুষদের জন্য স্বচ্ছল জীবনযাপন নিশ্চিত করে গেলেন। এরপর দাদীবুড়িকে নিয়ে লৌকিকতাহীন গল্প এমনিতেই ছড়াতে শুরু করলো, জনশ্রুতিতে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ