সাগুফতা শারমীন তানিয়া
তাঁর সহজাত লিখন ভঙ্গী আছে। জলের মত ঘুরে ঘুরে লেখেন। ধ্বনিময় এবং চিত্রধর্মী। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। পেশায় স্থাপত্যবিদ। লন্ডনপ্রবাসী সাগুফতা শারমীন তানিয়া গল্পপাঠের কাছে লিখিত আকারে তাঁর লেখার ভুবন পাঠিয়েছেন।--গল্পপাঠ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------

লিখবার শুরু আমার আসলেই মনে নেই, মনে আছে, যখন থেকে বাক্য লিখবার স্ফূর্তি, তখন থেকেই লেখার শুরু, যদি সেটাকে শুরু বলা যায়। ডাক্তারদের বিলাবার রাইটিং প্যাডগুলি তখন খুব সুন্দর ছিল, নানা ঢংএ তৈরি হতো, সেগুলিতে চলতো আমার লেখা আর আঁকা। স্কুলের দেয়ালপত্রিকা-সাময়িকী-বার্ষিকী এইসবে লিখতাম আর লেখা কাউকে দেখাতে ভয়ানক লজ্জা পেতাম বলে অনেক লেখা দিতামই না। পরে সেগুলি দেখে মনে হতো- কী বাজে, কী কাঁচা। আবার লিখতাম। এভাবে বছরের পর বছর লেখা রেখে দিয়েছি এমনও হয়েছে।
গল্প লেখার শুরুটা কাঁটা দিয়ে সেলাই করা ফুলস্কেপ অথবা
ডিমাই সাইজের খাতায়, তখনকার কাগজগুলি আমার ভাল
লাগতো, (সেদ্ধ ডিমের মতো আভা, একটু মোটা কাগজ, পাঠ্যবইয়ের মতে আমরা তখন কাগজে স্বয়ংসম্পূর্ণ) গল্পের নাম ‘পুন্নাম’, প্রথম পাঠক আমার স্কুলের
সহপাঠী শাওন ঘোষ। আমার ওকে লেখা দেখাতে লজ্জা লাগত না। বিষয় ছিল একটা চিঠি একই
নামের আরেকজন মানুষের বাসায় চলে যাবার প্রতিক্রিয়া, প্রবাসী ছেলের চিঠি, যে চিঠি ঘিরে একটি নিরানন্দ পরিবারে আনন্দ শুরু হয়, সে আনন্দ মিলিয়েও যায় একসময়, নতুন আরেক সম্ভাবনার শুরু হয়। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘টিপ’, তখন আমি স্কুল শেষ করেছি, গল্প পড়ে বেবী মওদুদ আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন, আর আমি তাঁকে দেখা দিতে গিয়েছিলাম মনে আছে। পরবর্তীতে এইরকম
ঘটনা পৌনঃপুনিকভাবে ঘটেছে, এমনকি যুক্তরাজ্যে আসবার পরেও
এমন হয়েছে, গল্প পড়ে দেখতে চাওয়ার
ব্যাপারটা। যেন গল্প দেখা যায়- বা দেখা যায় গল্পের উৎস! আরেকটা প্রতিক্রিয়ার কথা
না বললেই নয়, সেটা পারিবারিক প্রতিক্রিয়া।
ছোটমামারা যেমন সিনেমার গর্হিত(!) দৃশ্যে খেয়াল করতেন আমরা ছেলেমেয়েরা চোখ বন্ধ
করে আছি কি না, এঁরা মনে করেন এঁরা এখনও
তেমনই করতে পারেন। লেখা ছাপা হলে এবং সেটা তাঁদের দৃষ্টিগোচর হলে অনেকসময়ই শুনতে
হয়- “এডি কি লিখসোস?” পরে আমার মনে হয়েছে এই দৃষ্টিভঙ্গীর বাইরে তো আমাদের
বেশিরভাগ পাঠক-সমালোচকই নন, লেখায় তাঁরা ব্যক্তির
মানচিত্র খুঁজে বের করতে চান। কনফেশনিস্ট লেখা হলে তো কথাই নেই, শিল্প এসে যেখানে ব্যক্তি আর অভিব্যক্তির সীমা ঝাপসা করে দেয়, তারা সেই সীমা অব্দি দেখতেই পান না।
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?

শুরুর লেখাগুলিতে বোধ করি আমার প্রিয় সাহিত্যিকদের গলাতেই
আমি কথা বলতে চাইতাম, যেগুলি কোনোদিন প্রকাশিত
হয়নি। আমার লেখার কৃষ্ণদাস-শচীদাস বীরভূমের লোক মনে হতো, আমার বুড়িরা ‘পিঠে-পুলি-সরুচাকলি’ রাঁধতো, কারণ বইয়ের দুনিয়াই আমার
অভিজ্ঞতার চারদিওয়ারি ছিল। পরে যখন নিজে বাইরের পৃথিবীর স্বাদ পেলাম, তখন আস্তে আস্তে লেখার ভঙ্গি বদলাতে লাগলো, দেখবার চোখও। আমার যতদিন মনে হয়নি আমার লেখায় আমার পায়ের
আওয়াজ পাওয়া যায়- আমার ভ্রুকুটি-আমার হাসি-কান্না-আবেগ-দুশ্চিন্তা, ততদিন আমি লেখা ছাপাইনি। গল্প লিখবার জন্যে আলাদা প্রস্তুতি
ছিল না, যা ছিল সেটা পাঠক হিসেবে
প্রস্তুতি, যদি সেটাকে বড়মুখ করে ‘প্রস্তুতি’ বলা যায়। ‘শতকিয়া’ লিখবার জন্যে আমাকে প্রচুর
পড়তে হচ্ছে, আরো পড়তে হবে, কিন্তু সেটা ঠিক প্রস্তুতিমুলক না, সেটা আনন্দের।
৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?

৪. আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?

৫. আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?

আমি যে প্রতিক্রিয়াগুলি পেয়েছি তার নিরিখে আমি বলতে পারি, গল্প শুনতে বসার সংখ্যাগুরু পাঠক আছে আমাদের। আমাদের পাঠকরা
একটি নিটোল গোলাকার গল্প শুনতে চান, যেটার শুরু আছে, কেন্দ্রবিন্দু আছে, বৃত্তের পরিধি ঘুরে আবার যা সমাপ্তিতে এসে পৌঁছায়, তা না হলে তাঁরা বিরক্ত হন, এর মানে কি জিজ্ঞেস করেন, ভাষার খেলাধুলা মনে করেন, সময়ের অপচয় মনে করেন। গল্প শুনবার যাত্রাটুকুই যে গল্প হতে
পারে, সেটা অনেকেই মেনে নিতে নারাজ, প্লট আর ভাষাকে এঁরা এখনও আলাদা করে-হরলাল রায়ের রচনা বইয়ের
প্যারাগ্রাফের মতন করে দেখেন, ভাষা বা ভাষ্যই যে প্লট তা
বুঝতে পারেন না বা চান না। অন্তর্জগতের টানাপোড়েন নিয়ে নাড়াচাড়া দেখতে ইচ্ছা করে-
যেটা ‘আরবান’, এই ভাষায় কত আগে ‘দিবারাত্রির
কাব্য’র মতো উপন্যাস রচিত হয়েছে-
সারাক্ষণ প্রান্তিক মানুষের জীবনযুদ্ধের প্রাথমিক উত্থানপতনগুলিকে বীভৎস-রস সমেত
পরিবেশনক্ষম লেখা আর কত?
তবে, বহুবার হাজার মাইলের বিস্তার
ডিঙিয়ে ফোনে অথবা মেইলে পাঠকের চকিত উচ্ছ্বাস জুটেছে আমার, সেটা আমূল কৃতজ্ঞ করে আমাকে। লিখে ফেলবার প্রতিক্রিয়া আমার
সবসময়েই একইরকম, একটা অসম্ভব এন্ডোরফিন ঠাসা
মুহূর্ত, উত্তেজনায় টগবগে, তবে দু’তিনদিন পর আমি লেখাটা আরেকবার
পড়ি,
খুঁতখুঁতে মন সহজে শান্ত হয় না। লেখা
ভাল হলে লেখক নিজেই সেটা টের পায় বলে আমি বিশ্বাস করি। লিখতে শুরু করেছি কেন এই
প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই, মানুষের ভিতর থেকে যা কিছু
ফেটে বের হয়ে আসতে চায় তাই অনেক কিছু সৃষ্টি করে, বেদনা-সুর-সন্তান। ঐ নিজেকে কন্টেইন করে রাখতে না পারার
উচ্ছাসটাই প্রাথমিকভাবে হয়তো লেখায়, আঁকায়।এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন, এটা গুহার অন্ধকারে ‘আমি এসেছিলাম’ এঁকে যাওয়ার প্রশ্ন। এটা অসম্ভব একাকী যাত্রা, অথচ এর গন্তব্য মানুষ-প্রচুর মানুষ, এই জার্নিটাও ভাল লাগে।
৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন?

৭. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে
রাখেন না লেখার সময়ে?

৮. এখন কি লিখছেন?

৯. আগামীতে কি লিখবেন?

লেখক
পরিচিতি
সাগুফতা শারমিন তানিয়া
জন্ম ৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭৬
শৈশব কেটেছে ঢাকার বাসাবোতে।স্কুল ও কলেজ যথাক্রমে হলিক্রস স্কুল এবং হলিক্রস গার্লস কলেজ।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্থাপত্য অনূষদ।
২০১০ বইমেলায় প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ- ‘কনফেশন বক্সের ভিতর। অটাম-দিনের গান’, প্রকাশক ভাষাচিত্র
২০১১ বইমেলায় প্রকাশিত দ্বিতীয় গ্রন্থ-‘ ভরযুবতী, বেড়াল ও বাকিরা’, প্রকাশক শুদ্ধস্বর
২০১২ বইমেলায় প্রকাশিত তৃতীয় গ্রন্থ- ‘অলস দিন-খয়েরি পাতা-বাওকুড়ানি’, প্রকাশক শুদ্ধস্বর
২০১৩ বইমেলায় প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ, যুগ্মভাবে লুনা রুশদীর সাথে, -‘আনবাড়ি’, প্রকাশক শুদ্ধস্বর

0 মন্তব্যসমূহ