রোহণ কুদ্দুস
আমার কিশোরবেলায় মিরোর থেকে শিখেছিলাম নারীদেহের মোটামুটি একটা আভাস। তখনও শীতকালে তাপমাত্রা কমে যেত দারুণ ভাবে। আমরা লেপ-কম্বলের নিচে রাত কাটাতাম। এমনই এক শীতের রাতে অদ্ভুত আলো ছড়িয়ে আমার বিছানার মাত্র ফুট দুয়েক ওপরে ভাসতে ভাসতে মিরো বলেছিল – “সময় থাকতে পালাও। আর ১০ বছর বড়জোর। তারপর পাঁপড়ভাজা হয়ে যাবে তোমাদের গ্রহ।”
মিরোর শরীরে ছিল একটা পাতলা শার্ট। ওপরের খোলা বোতামের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছিল তার বাম স্তনের খয়েরি বোঁটা। জামার নিচে থাকা সত্ত্বেও তার নাভিটা আন্দাজ করা যাচ্ছিল। জামা যেখানে শেষ হয়েছে তার অল্প নিচে ঘন যৌনকেশে ঢাকা যোনি। মিরো এসেছিল সতর্কবার্তা নিয়ে। কিন্তু আমি অবাক চোখে দেখছিলাম তার ঊরু। হালকা রোমে ঢাকা ২টো পা।
পৃথিবীতে প্রায় সবার বাড়িতেই সেদিন মিরো এসেছিল। প্রলয়ের পূর্বাভাষ নিয়ে। অধিকাংশই গুরুত্ব দেয়নি। কেউ কেউ কেঁদেছিল। না বুঝেই ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিল। প্রার্থনা করেছিল। কিছু মানুষ আত্মহত্যাও করেছিল। আর অল্প কয়েকজন মিরোকে মারার চেষ্টা করেছিল। যেমন আমার মা। আলমারির মাথায় পড়ে থাকা অকেজো একটা বন্দুকের কুঁদো দিয়ে মিরোর মাথায় মারতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে ঘাড় ভেঙেছিল। ২ দিন পর হাসপাতালে মারা যাবার সময় হতাশ গলায় মা বলে গিয়েছিল – “তাকে ছোঁওয়া যায় না।”
সত্যিই মিরোকে ছোঁওয়া যায় না। কারণ সে নাকি চতুর্থ মাত্রায় রাখা একটা শরীরের প্রতিবিম্ব। আমাদের দৃশ্য-গ্রাহ্য-শ্রাব্য পরিবেশের উপযোগী করে বানিয়ে তোলা একটা ছায়া। পৃথিবীতে ভিনগ্রহীদের যাতায়াতের সেই শুরু। আমার বয়স তখন ১৫।
এরপর সূর্যের হলকা প্রায়ই ছুঁয়ে যেতে থাকল পৃথিবীর আশপাশ। তাপমাত্রা বেড়ে গেল অত্যধিক। মিরোর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হবার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ দেখে দেশে দেশে সরকারী-বেসরকারি মদতে গড়ে উঠল স্পেস ট্র্যাভেলে এজেন্সি। মানুষের মধ্যে পৃথিবী ছাড়ার হিড়িক পড়ে গেল। সারা জীবনের জমানো পুঁজির বিনিময়ে অধিকাংশ মানুষ চলে গেল বৃহস্পতিতে। মঙ্গলেও যাওয়া যেত। কিন্তু পৃথিবী যখন ছাড়তেই হচ্ছে, তখন আর একটা প্রায় সমান আকৃতির গ্রহে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। বৃহস্পতি মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক বড়। আর যারা বিশেষ বড়লোক, তারা চলে গেল শনিতে। সূর্য থেকে যত দূরে থাকা যায়, ততই মঙ্গল।
এত সব কিছুর মধ্যেও কিছু মানুষ, যেমন আমার বাবা, বিশ্বাস করত সূর্যের এই আগুনে বিস্ফোরণ সাময়িক। ক’বছরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানুষের জন্যে পৃথিবীই উপযুক্ত গ্রহ। এর স্বপক্ষে তারা নানা যুক্তি বানিয়ে তুলেছিল। এর সবটাই আমি বিশ্বাস করতাম এমন নয়। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে এ্যাস্টরয়েড বেল্ট পেরিয়ে অন্য একটা গ্রহে গিয়ে বসবাস শুরু করা আমার অহেতুক মনে হত।- সেই রাতের পর মিরোকে দেখিনি প্রায় বছর পাঁচেক। এক বিকালে আমার প্রথম বান্ধবী ইলার সাথে বসেছিলাম পার্কে। আমাদের কলেজ শেষ। আমার জন্যে চাকরি বলতে স্পেস ট্রাভেল এজেন্সির টেকনিশিয়ানের কাজ অথবা বাবার সুপারিশে সূর্যের বিস্ফোরণ সংক্রান্ত গাণিতিক পর্যবেক্ষণ। ইলা একটা ভিনগ্রহী সংস্থায় নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট হিসাবে যোগ দিচ্ছে। আগামীকাল সে পৃথিবী ছেড়ে বরাবরের জন্যে চলে যাবে। আমার কাঁধে মাথা রেখে ইলা বলল – “তুমিও চলো আমার সাথে। আমরা দু’জন একসাথে থাকব। নিরাপদ থাকব। এই গ্রহ তো আর কটা বছর পরেই...” ফুঁপিয়ে ওঠে ইলা।
এই নিয়ে আমরা আগেও আলোচনা করেছি। এই গ্রহ পৃথিবী। আমার জন্মস্থান। এই গ্রহ থেকে শিকড় উঠিয়ে অন্য কোনও মাটিতে বসবাস করা নিতান্তই ঝুঁকির। ইলা ঝগড়া করেছে। চেঁচিয়েছে। আমায় ‘কুয়োর ব্যাঙ’ বলেছে। তাই আজ আমরা দু’জনই চুপ রইলাম। ইলার হাতের তালু মুঠোয় নিয়ে নিষ্করুণ সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছি। এমন সময় খোলা মাঠের মধ্যে থেকে ছুটে এলো একটা বুলডোজার। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। যন্ত্রটার ড্রাইভিং সিটে বসে আছে মিরো। তার পরনে একটা আলখাল্লা কোমর পর্যন্ত গোটানো। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যৌনকেশ ঢাকা মিরোর ত্রিভুজ। নরম রোমে ঢাকা তার দুটো পা।
মিরোর বুলডোজার এসে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের বেঞ্চটা। ইলার নরম শরীরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আমার হাতের মুঠোয় ধরে থাকা তার আঙুলগুলো ৪৮ ঘণ্টা পরেও আমি অনুভব করেছিলাম হাসপাতালের বিছানায়। আসলে সেই স্পর্শ ছিল মিরোর। আমার জ্ঞান ফিরছে দেখে আমার কানে ফিসফিস করে সে বলেছিল – “চলো রূপনগর যাই।”
এবং মিরো রূপনগরে চলে এলো পাকাপাকিভাবে। রূপনগর পৃথিবীতে থেকে যাওয়া মানুষের জন্যে মায়া শহর। ট্রাভেল এজেন্সির অফিস থেকে শুরু করে, সস্তা হোটেল, নাইট ক্লাব, ক্যাসিনো – মিরো যা চেয়েছিল। মিরো যা চায়। সে এখানে হোটেলের ঘর পালটায়। ক্যাসিনো পালটায়। ক্যাসিনো থেকে নতুন পুরুষ। পয়সা-পুরুষ-মদ-মৃত্যু। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মিরো মৃত্যু দারুণ উপভোগ করে। মাঝে মাঝে সন্ধ্যের পর সে অসতর্ক মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। টিভি-তে এক সাক্ষাতকারে মিরো নিজেই বলেছিল – “মৃত্যু এখন সহজলভ্য। সস্তা।” সত্যি বলতে কী কর্তৃপক্ষও এইসব বিক্ষিপ্ত মৃত্যুতে তেমন একটা বিচলিত নন। সবাই জানে আমরা যারা এখনও থেকে গেছি এই গ্রহে, তারা ক’দিন পরেই ডিপ-ফ্রায়েড হব।
কী মনে করে একদিন অফিস ফেরত ঢুকলাম স্বর্ণখোঁচা’য়। বছর চারেক পর মিরোর সঙ্গে দেখা হল। সে তখন আঙুলের ফাঁকে সবুজ একটা চিপ ধরে বাজি রাখতে যাচ্ছিল ১৬ নম্বরে। আমায় দেখে ইশারায় ডাকল – “তুমি ক্যাসিনোয়? তুমি বাজি ধরতে ভয় পাও না?” আমি মিরোকে দেখছিলাম চোখ ভরে। একটা বাদামি নকশাদার লেদার জ্যাকেট আর লেদার প্যান্টে তাকে সুন্দরী অজগর মনে হচ্ছিল। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার ওয়ালেট উপুড় করলাম। মিরো পরের বাজি ধরল ২১-এ। আমি ২৪-এ। ঘুরন্ত চাকতির ওপর রুপোলী বল গিয়ে স্থির হল ২১ নম্বরে। এভাবেই আরও ২বার আমি হারার পর মিরো কানে ফিসফিসিয়ে বলল – “এবারেও আমি জিতলে তুমি কী বলবে? ভাগ্য না দুর্ঘটনা?” মরিয়া আমি বাজি ধরলাম মিরোর নম্বরে। ৩৫। আর অবিশ্বাস্যভাবে জিতলাম। জীবনে প্রথমবার সম্ভবতঃ।
গাড়িতে মিরো আমার হাতের ওপর হাত রেখে বলল – “তোমার একটা নতুন নাম দিয়েছি। হেরোলাল। হিরো হেরোলাল।” মিরো হেসে উঠল হি-হি করে। একটা লালবাতিতে দাঁড়িয়ে আমরা। মিরোর চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞাসা করলাম – “তুমি জোচ্চুরি করছিলে। তাই না?” মিরো আহত চোখে আমায় দেখল – “জোচ্চুরি?” আমি পরিস্থিতি লঘু করতে হাসতে চেষ্টা করলাম – “তাহলে তুমি বললে কেন ভাগ্য না দুর্ঘটনা? তোমার জেতাটা?” মিরো খিলখিলিয়ে উঠে পা বাড়িয়ে এ্যাক্সিলেটারে চাপ দিল। গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছিল উদাসীন এক মানুষ। আমার গাড়িটা গিয়ে সরাসরি ধাক্কা মারল তাকে।
যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ উপেক্ষা করে মিরো আমার হয়ে গাড়ি চালাতে লাগল। আমি হতচকিত বসে রইলাম স্টিয়ারিং ধরে। তার হোটেলের সামনে পৌঁছে মিরো আমায় ধরে গাড়ি থেকে নামাল – “তুমি এর আগে মানুষ মারোনি, না?” মানুষ মেরেছি আমি। আমার স্নায়ুর প্রত্যেকটা কোষ চিৎকার করে উঠল। আমায় ঠেলতে ঠেলতে মিরো নিয়ে গিয়ে ফেলল তার ঘরে। ৩ পেগ হুইস্কির পর আমি চোখ বুজিয়ে ফেললাম। মিরো তখন লাগোয়া স্নানঘরে শুয়ে আছে তার ফেনিল বাথটাবে। - রাত ক’টা জানিনা। ঘুম ভাঙল দারুণ উষ্ণতায়। এমনিতেই রাতগুলো অস্বাভাবিক গরম এখন। তার ওপর ঘরের এয়ার কন্ডিশনারের চাপা হিসহিস শোনা যাচ্ছে না। আমার সারা শরীর চটচট করছে ঘামে। আমার। মিরোর। চাপা গলায় সে আচ্ছন্নের মত বলতে থাকে – “তুমি জুয়াচুরি শিখতে চাও সোনা? আমার মত করে জিততে চাও তুমি?” মিরোর ভেতরটা ফার্নেসের মত জ্বলছে। আমার যৌনাঙ্গ থেকে আস্তে আস্তে পাগল করা সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে। আমি অসহায়ের মত মিরোর মাথাটা চেপে ধরলাম দু’হাতে। তার চোখে চোখ রেখে বললাম – “আমি বাঁচতে চাই।”
আমায় নিয়ে মিরো বারান্দায় এলো। বারান্দার রেলিঙের ওপর বসে সে আমার কোমর জড়িয়ে ধরল দু’পায়ে – “তুমি দেখতে চাও কীভাবে বেঁচে আছি আমি?” আমার শরীরে নিজের ভার রেখে রেলিঙ থেকে নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ নিচের দিকে ছেড়ে দিল সে। মিরোর শরীরের সাথে আমিও ক্রমশঃ বারান্দার শেষ সীমানার দিকে ঝুঁকে চলেছি বিপজ্জনক। আমার কোমরে মিরোর দু’টো পা কাঁচির মত আটকানো। আমার পিঠে তার গোড়ালি দু’টো নিচের দিকে ডাকছে – “এসো সোনা। দেখো কীভাবে আমি বেঁচে থাকি।” আকাশে সূর্যের হলকাতে অপার্থিব জ্যোতির সৃষ্টি হয়েছে। সেদিকে আঙুল দেখিয়ে মিরো বলল – “বেঁচে থাকা সুন্দর।”
মিরোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। কাতর স্বরে আবার বললাম – “আমি বাঁচতে চাই।” তার পা দুটো সজোরে ছাড়িয়ে আমি পিছিয়ে এলাম বারান্দায়। মিরোর শরীরটা রেলিঙ থেকে ভেসে গেল শূন্যতায়। আমি কোনও আর্তনাদ শুনিনি। কোনও পতনের শব্দ কানে আসেনি। দু’হাতে কান চেপে ধরে আমি ধপ করে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পেলাম ঘরের ভেতরে মোবাইল বাজছে। এতক্ষণে অনুভব করলাম আমার নগ্ন নিতম্ব বারান্দার কংক্রিটে পুড়ে যাচ্ছে।
বাবা মারা গেছেন। হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে যখন বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন ভোর। সূর্যের আলো দারুণ তেজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাবার মৃত চোখে। বাবার বুকের ওপর আঁকড়ে ধরে রাখা একটা নোটবই। আলগোছে টেনে নিলাম। প্রথম পাতায় লেখা আছে – “আমার সন্তানের জন্যে।” তারপরের কয়েকটা পাতা খালি রেখে আর একটা পাতায় বাবা লিখেছেন – “এ গ্রহে থেকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ ছিল। আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা অন্য কোথাও চলে যেতে দেয়নি। চোখের সামনে তোমায় বাড়তে দেখা আমার জন্যে একটা অনাবিল আনন্দ ছিল। কিন্তু জেনো, পরিযায়ী পাখিও অন্য ভূমিতে ভালোবাসা খুঁজে পায়। আর তাই তারা বছরের শেষে আবার ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু যে পাখির ঘর পুড়ে যায়, তার থাকে অনন্ত আকাশ। সেখানেও বেঁচে থাকার যথেষ্ট কারণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আশা করি একদিন তুমি সেখান থেকে কোনও একটা কারণ বেছে নেবে। অন্য মাটিতে খুঁজে নেবে ভালোবাসা।”
লেখাটা পড়ে চোখে জল এলো। অভিমানে। সারা জীবনেও বাবা আমায় চিনতে পারে নি একফোঁটা। আমি পাখি নই। পরিযায়ী নই। আমার জীবনের ভালোবাসা এক-এক করে আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এই ঘাতক সূর্যের নিচে। কিন্তু তবু জুয়াচুরি করে বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করিনি। নোটবই থেকে মুখ তুলে জানালার বাইরে তাকিয়ে আমি চোখ মুছলাম। আর সেই মূহুর্তে দেখতে পেলাম হাসপাতালের বাইরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে মিরো।
আমি দৌড়ে বাইরে এলাম। চওড়া রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে সে। চিৎকার করে আমায় ডাকছে দু’হাত বাড়িয়ে – “এদিকে চলে এসো।” দু’দিক থেকে হুশহুশ ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। আমি সেদিকে দেখলাম। মিরো হাসতে হাসতে আবার চেঁচিয়ে উঠল – “তুমি এখনও হেরোলাল? এখনও ভাগ্য? দুর্ঘটনা?” এরপর আমায় অবাক করে ছায়ার মত করে একের পর এক গাড়ি পেরিয়ে অবলীলায় আমার পাশে এসে দাঁড়ালো মিরো। আমার বুকে একটা হাত রেখে ঘন হয়ে এলো আমার ঠোঁটের কাছে – “তুমি জুয়াচুরি শিখতে চাও সোনা? আমার সাথে এসো।” তারপর আমার ঠোঁটের মধ্যে ডুবে গেল সে।
অবশেষে শ্বাস নেওয়ার জন্যে আমি পৃথক হলাম। তার অসম্পূর্ণ চুম্বন থেকে চোখ তুলে মিরো আমায় বলল – “এই গ্রহে আমি ক্লান্ত হয়ে উঠেছি। আমার সাথে এসো। পরের বছর যখন সূর্যের হলকা এসে ধুয়ে মুছে দিয়ে যাবে তোমাদের সভ্যতার তলানিটুকু, তখন অন্য কোনও গ্রহে বসে আমরা বাজি ধরব সাপের কঙ্কালের মত পড়ে থাকা ছাইয়ের স্তূপটা চীনের প্রাচীর কিনা।” বুকভরা শ্বাস নিয়ে আমি মিরোর চোখে তাকালাম।
বুঝলাম আমি ভুল। আমি বেঁচে থাকতে চাই। সে জন্য জুয়াচুরি করতেও আমি পেছপা নই। কয়েক ঘণ্টা আগেই মিরোকে শূন্যে ঠেলে দিয়ে তার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করেছি শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যে। বাবার নোটবুকে লেখা নেই, কিন্তু বেঁচে থাকতে চাওয়াটাই সবচেয়ে বড় কারণ। আর সেজন্যেই শুরু হয় অনুসন্ধান। অন্য একটা কারণ বেছে নেওয়ার।
শেষবারের মত দেখে নিলাম রোদ ধুয়ে দেওয়া আমাদের পার্থিব অবশেষ। আমরা যাকে এতদিন নীল গ্রহ বলেছি। জীবন বলেছি। মিরোর আলিঙ্গনে ক্রমশঃ পায়ের নিচে ছোট হয়ে এলো ধূসর একটা পাথর, যাকে আমরা এতদিন বেঁচে থাকা বলেছি।* - (নোট। ঋণস্বীকারঃ গল্পটি A D Bloom-এর Only Suckers Call it Luck দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত।)
- লেখক পরিচিতি
0 মন্তব্যসমূহ