শাহনাজ মুন্নী
সেটা ছিল, রোদে পেঁচানো উত্তপ্ত এক গ্রীষ্মদিন। জ্বলন্ত রাস্তায় একটা
হাড় জিরজিরে বুড়ো বাস চলছিলো ধুঁকে ধুঁকে। বাস যাত্রীরা ঠাসাঠাসি করে একে অন্যেও
সাথে প্রায় গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিলো, তাদের সবার গায়ে গরম জলের মতো জবজবে ঘাম, সে ঘামের স্বাদ নোনতা, গন্ধ নোনতা।
বাসের লেডিস সীটে বসেছিলো কয়েকজন শাড়ী পরা
এবং কয়েকজন সালোয়ার কামিজ পরা লেডিস। তারা কথা বলছিলো না, কেবল শ্যাওলা পড়া পাথরের ম্লান স্থাপত্যের মতো সামনে
তাকিয়েছিলো চুপচাপ। বাসের উইন্ডস্ক্রীন দিয়ে হয়তো তারা কালো রাস্তার গা চিরে বয়ে
যাওয়া হলুদ, সাদা, দাগ দেখছিলো।
বাসের মতো বাসের ড্রাইভারও ছিলো
বৃদ্ধ। তার তোবড়ানো গাল জুড়ে চিত্রলতার মতো লতিয়ে ছিলো নিস্প্রভ সাদা দাড়ি, ঝানু গোয়েন্দার মতো তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে চার পাশ দেখে এ্যাকসিডেন্ট এড়িয়ে ধীরে
সুস্থে গাড়ি চালাচ্ছিলো সে। বাসের যুবকযাত্রীরা সে কারণে ঈষৎ বিরক্ত, তারা চায় রোমাঞ্চপূর্ণ গতি এবং বয়স্করা নিশ্চিন্ত তারা চায়
স্বস্তিকর নিরাপত্তা। মধ্যবয়সীদের অবশ্য এই সংক্রান্ত কোন অনুভব ছিলো না, তারা কেউ পরিবার, কেউ ভবিষ্যত, কেউ গন্তব্য, কেউবা বস, গ্যাস, পানির বিল, চাকরি, প্রমোশন এইসব ভাবছিলো। এতোগুলো লোক অথচ কোন কোলাহল নেই, সবার মুখ বিকৃত হয়ে ছিলো ক্লান্তিতে।
হঠাৎ করেই গুমোট স্তব্ধতা ভেঙ্গে খান খান। বাসের পেছন দিকে হৈ
চৈ। শক্ত সীটে বসে যারা ঝিমুচ্ছিলো তারা সোজা হয়ে বসলো, মহিলারা উৎসুক হলো ঘটনা জানার জন্য, তারা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির কাছে জানতে চাইলো ব্যাপারটা, লোকটি তার পেছনের যাত্রীকে জিজ্ঞেস করলো, সে শুধালো পরবর্তী যাত্রীর কাছে, এইভাবে জানা গেল, এক যুবক ছাত্র পরিচয় দিয়ে কন্ডাকটরকে হাফ ভাড়া দিতে চেয়েছিলো যদিও যুবকের কাছে
কোন পরিচয়পত্র ছিলো না, এই নিয়েই এসব
তর্কাতর্কি। ঘটনা জানাজানি হবার পর আবার নেতিয়ে পড়ে কথাস্রোত।
অল্পকিছু পরেই বাসের মাঝামাঝি
থেকে ভেসে আসে কান্না ও চিৎকার ধ্বনি। এক ভদ্রলোকের পকেট কাটা গেছে। তিনি হাত পা
আছড়ে বিলাপ শুরু করেছেন। পকেটমার নাকি তার একমাসের পুরো বেতনটাই নিয়ে গেছে
মানিব্যাগ শুদ্ধ। বাসের কেউ পকেটমারের
শাস্তি দাবি করলো না, সহানুভূতি
জানালো না কেউ। ভদ্রলোকের অসহায় কান্না
ধীরে ধীরে ফোঁপানীতে নেমে এলো। দু’হাতে মাথা চেপে তিনি নীরবে চোখের জল ফেলে চললেন- যে জলের স্বাদ নোনা।
বাসের সামনের অংশ এতক্ষণ নীরব
ছিলো,
নীরবতা ভাঙ্গলো নারী কন্ঠের গর্জনে। মহিলা তার সামনে রড ধরে
দাঁড়িয়ে থাকা একজন বাসযাত্রীকে সজোরে ধমকাচ্ছেন,
-এই যে, আপনি সরে দাঁড়ান তো, এভাবে গায়ের উপর পড়ছেন কেন?
যাকে উদ্দেশ্য করে মহিলার এই
রক্তচক্ষু, সে কোন কথা না বলে একটু সরে
দাঁড়ায় মাত্র। মহিলা এতে সন্তুষ্ট নন, তিনি লোকটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কটাক্ষে বললেন, নারীকে প্রত্যেক পুরুষই মনে করে লোভনীয় কেক অথবা পায়ের
জুতো।
লোকটি এবার কেশে গলা পরিস্কার করে নেয়, তারপর স্পষ্ট উচ্চারণে বলে, ‘দেখুন ম্যাডাম, আমার মাথার সবগুলো চুল কালো, আর আপনার অর্ধেক
চুল সাদা,
শোনেন, বাসি কেক ছোয়ার
ইচ্ছে আমার নেই, ব্যবহৃত জুতোও আমি পরি না।’
হেসে ফেললো অনেকেই, কেউ খুব রাগ করলো।
এই জাতীয় অশোভন কথা বলার মানে কি? মহিলাদের প্রতি নূন্যতম সম্মান নাই? ভদ্রতা নাই? সৌজন্যজ্ঞান নাই? দেশ থেকে কি
আদব-কায়দা উঠে গেল?
মহিলাও হয়তো আরো কিছু বলতে
যাচ্ছিলেন, মাঝখান থেকে ড্রাইভার বাদ সাধলো, তার শরীর ক্ষীণকায় হলেও কন্ঠ সবল। দৃষ্টি সম্মুখে রেখেই
বাজখাঁই কন্ঠে হাঁক দেয় সে,
‘চিল্লাচিল্লি বন্ করেন, কোনখানে যামু খেয়াল নাই?’
যাত্রীরা থেমে যায়। আবার
দীর্ঘক্ষণ পথ চলা। পথের শেষ রেখায় সম্ভবত নিশ্চিত গন্তব্য, গন্তব্যে অসম্ভব সুগন্ধী শান্তি, প্রিয়তোষ জীবন, সুখের কোমল হাওয়ায় প্রলন্বিত বিশ্রাম।
চলতে চলতে কেশে উঠে হঠাৎ থেমে পড়ে
বাসটা। জায়গাটা পূর্ণিমায় ভেসে থাকা একটা অলস বিষণ্ন বাজার। ‘বাসের হৃদপিন্ডে পানি চাই, তাই এই হঠাৎ ব্রেক’- কৈফিয়ত দেয় ড্রাইভার। কন্ডাকটর ছোটে পানি সংগ্রহে।
‘এই বাস কই যাইবো গো?’
বাজারের কয়েকজন কৌতুহলী লোক গলা
বাড়িয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞেস করে।
‘স্বর্গছেঁড়া’।
লোকেরা বিভ্রান্তিতে চোখ নাচায়, কয়েকবার অনিশ্চিত দৃষ্টি ছুড়ে দেয় দিগন্তে, তাদের কণ্ঠে বিস্ময়,
‘স্বর্গছেঁড়া? নামটাতো নতুন শুনলাম, জায়গাটা কোনখানে? দয়া করে যদি
বৃত্তান্ত বলেন ... যদি বিবরণ শোনান ...’
এইবার একজন মহিলা যাত্রী কথা বলে, তার চশমার ফ্রেমে খেলা করে রামধনু রঙের অজস্র বিচিত্র বেলুন, মোহনীয় সুরে সে ফিস ফিস্ করে,
‘স্বর্গ চেনো না, মিয়ারা, বেহেশত চেনো না, জান্নাতের কথা শুনো নাই কোন দিন?’
‘শুনছি, শুনছি।’
লোকেরা বলাবলি করে, ‘স্বর্গের আছে মণি
মুক্তা খচিত সোনার তৈরি দরজা, সেই খানে সকল
দালানের ইট সোনা রূপায় তৈরি, মাটি খাঁটি
জাফরানের,
কাঁকর হইলো মণিমুক্তা আর ইয়াকুত পাথর, আবে রহমতের নদী সুরম্য স্পন্দনে সারক্ষণ বয়ে চলে সেখানে, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠান্ডা, মধুর চে মিষ্টি, স্বর্গের গাছগুলো সোনা ও রূপার, ফলগুলি নিকটবর্তী, বাতাস মোলায়েম, জান্নাতে
ইচছাপ্রকাশ করলেই সোনা রূপার পাত্রে তোমার সামনে চলে আসে সুস্বাদু বেহেশতি খানা, আসে মাছের কলিজার কাবাব, আসে সুমিষ্ট ফল ফলাদি, আসে শীতল পানীয়
ভর্তি পান পাত্র। আরো নাকি সেইখানে আছে নূর দিয়া তৈরি অলৌকিক হুর। তারা নব্য
কুমারী,
অতিশয় সুন্দরী, নম্র ও নরম। তারা পরিচ্ছন্ন, স্বপ্নমানসী।
হুর বালিকার মৃদু হাসিতে চারদিক আলোকিত হয়, একবিন্দু থুতুতে মিঠা হয়ে যায় দরিয়ার সমস্ত পানি ...’
‘আহ্ স্বর্গ, যেখানে আছে আমাদের ক্লান্ত ও ভারতপ্ত হৃদয়ের প্রশান্তির পরম
আশ্বাস,
আছে অনিন্দ্য সুখ সৌরভ, আছে জীবনের নব রূপায়ন, মিলন মধুর অমল
নিদ্রার রাত শেষে সুখ স্বচ্ছ অমলিন ভোর ... আহ স্বর্গের অনুপম আনন্দময় জীবন ...’
‘হ্যাঁগো মিয়ারা, সেই স্বর্গেরই একখানা টুকরা ভাগ্যক্রমে ছিঁড়া পড়ছে ওই
পূর্ব-দক্ষিণে, মহা দক্ষিণে, সেই স্থানের নামই স্বর্গ ছেঁড়া, আমরা সেইখানে যাবো, সেই মহাশান্তির দেশে।’
বাজারের লোকেরা কেমন শিহরণে
স্বয়ংক্রিয় গুঞ্জন তোলে,
‘আমরাও সেইখানে যেতে চাই, আমাদের নিয়া যান ’
‘না, না,
বাসে আর কোনো সীট নাই, একটু জায়গাও নাই, নাই, নাই’
‘তবে আমাদের পথের ঠিকানা বলেন, মানচিত্র এঁকে দেন, আমরা নিজেরাই স্বর্গছেঁড়া খুঁজে নিবো।’
যাত্রীদের এইবার মনে পড়ে তারা
রয়েছে নিতান্তই অন্ধকারে, তারা বেকুবের
মতো বলে,
‘আমরা তো সেই পথ চিনি না, সেই পথ চেনে শুধু আমাদের বৃদ্ধ ড্রাইভার-’
একটা কোলাহলময় ভীড় এবার জাড়িয়ে
ধরে ড্রাইভারের চারপাশ,
‘পথের ঠিকানা দ্যান জনাব, একবার সেই সুন্দর স্বপ্নের দেশে নিয়া চলেন’
‘সে পথ বড় দুরের, বড় কষ্টের সে পথ’
‘আমরা যাবো, তবুও যাবো’
‘তবে ভাইসব, সবুর করেন, খোদ রাজধানী
থেকে ঊনসত্তরজন লোকে ভরেছে এই দুর্বল যান, এক ট্রিপ দিয়া আসি, পরবর্তী ট্রিপে
যাবেন আপনেরা, কেউ দরজায় ঝুলবেন না, বাম্পারে উঠবেন না, উঠলে বাস যাবে না, ভাইসব সবুর
করেন। ’
জনগণ গলাকাটা মাছের মতো একটা
ঝাঁকুনি দিয়ে স্থির হয়ে যায়, তাদের চোখ মৃত
মাছের মতো ঠান্ডা ও ঘোলাটে রূপ ধারণ করে, বাজারের প্রাণ যেন ভেসে যায় অমাবস্যায়। বাস আবার চলতে শুরু করে। পথের কৌণিক
দুরত্ব হিসাব করে ধীরে সুস্থে ড্রাইভার স্টিয়ারিং ঘুরায়।
যেন অনন্ত অপেক্ষার সড়কে গড়িয়ে
যায় দীর্ঘ দীর্ঘ সময়ের স্বেচ্ছাচার, বাস যাত্রীরা, যারা নতমুখী
অস্থির ও আজব তারা ক্রমশই আক্রান্ত হয় ছোয়াচে একঘেয়েমীতে, একটু একটু করে জন্ম নেয় জাঁদরেল অসন্তোষ।
যার শুরুটা হয় বক্রতায়, একজন যাত্রী চেহারায় যার দারিদ্র, অশিক্ষা ও গোয়ার্তুমির নিপুণ জ্যামিতি, সে, তার ছেঁড়া ময়লা
লুঙ্গি উরু পর্যন্ত তুলে ঘ্যাশ ঘ্যাশ শব্দে হাঁটু চুলকাচ্ছিল, যেন সে তার চুলকানি আক্রান্ত ত্বক ও গুমোট
স্তব্ধতার উপর মনের সমস্ত ঝাল
মেটাচ্ছিলো, ভুলে গিয়েছিল তার চারপাশ, যেন এভাবেই ত্বকের উপর আঁচড়ে, খামচে, চুলকিয়ে সে ভেঙে দেবে তার সময়ের
এই নিঃশব্দ স্থবিরতা।
তখন হঠাৎ তার কাছেই বসা কে একজন
সুবেশী ভদ্রলোক নাকটাক কুঁচকে হুংকার দিয়ে উঠলো,
‘এই ব্যাটা, লুঙ্গি নামা, আদব-কায়দা, শরম-লেহাজ কিছুই নাই? অসভ্য, বদমাইশ কোথাকার
..’
অকম্মাৎ ধমকে থতমত খেয়ে লোকটি
তাৎক্ষণিক লুঙ্গি নামালো ঠিকই কিন্তু সেই সাথে উদ্ধত ঘাড় বেঁকিয়ে জানতে চাইলো, কোন সাহসে তাকে অসভ্য, বদমাশ বলা হয়েছে? গরীব বলে এই
অপমান ?
এক কথা, দু কথা থেকে
এইসব কথা কাটাকাটি গড়াতে গড়াতে গিয়ে থামলো
বৃদ্ধ ড্রাইভারের ওপর,
‘ওই ড্রাইভার ব্যাটা আমাদের আর কত
দূরে নিয়ে যাবে ? কোথায় সেই
স্বর্গছেঁড়া? আর কতক্ষণই বা লাগবে ওখানে পৌছুতে?’
বৃদ্ধের মুখে শিশিরের মতো বিন্দু
বিন্দু ঘাম, চেহারা মরা ঘাসের মতো ফ্যাকাশে,
‘শান্ত হোন, ভাইসবেরা, শুনেন শান্ত হয়ে, সম্ভবত আমরা পথ হারাইছি’
মুহুর্তে সমস্ত বাস জুড়ে নামে
বনভূমির নিস্তব্ধতা, একটি ভয়ার্ত
কণ্ঠ যেন গহীন পাতাল থেকে আর্তনাদ করে উঠে,
‘কি? কি বল্লা?’
‘কথা বোঝেন নাই? আমরা পথ হারাইছি’ বৃদ্ধ পুনরায় স্পষ্ট কন্ঠে বলে।
একটা সবুজ বৃক্ষ যেন চোখের নিমেষে
শুকিয়ে আয়, বার বার সে গাছের পাতা ঝরে।
চূড়ান্ত এক অসহায়ত্ব সকলকে গ্রাস করে নেয়। দ্রুত ধ্বংস হয় সমস্ত
প্রত্যাশা-আনন্দ-স্বপ্ন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একদল হতাশ মানুষ ফুঁসে উঠে
হিংস্রতায়, তাদের সমস্ত আশা যেন ভেঙে-চুরে
চুরমার হয়ে গেছে। সবাই প্রতারিত হওয়ার অনুভব নিয়ে নির্মম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ে
বৃদ্ধ ড্রাইভারের উপর। মূহুর্তে কি যেন ঘটে যায়। ড্রাইভারের কপাল ফেটে র্দর্দ করে
রক্ত পড়ে,
তার দূর্বল হাত পা ভারসাম্য হারায়।
‘প্রতারক, বাটপার, ঠগ, জোচ্চোর’- এমন গণ-চিৎকারের মধ্যে বৃদ্ধ ড্রাইভারের দূর্বল গোঙানী চাপা পড়ে যায়। হঠাৎ
একজন বয়স্ক মহিলা যাত্রী তীক্ষ্ম কণ্ঠে চেঁচিয়ে ওঠেন,
‘ওরে মারামারি করিস না, থাম্, বুড়াকে মারলে
এইখান থেকে ফিরবি কেমনে? এইখানে, এই অকূল পাথারে যে আটকা পড়বি সবাই, ওরে ছাড়, ছাড়রে বাপধনেরা, রক্তারক্তির ফল ভালো না, তোরা থাম, থাম তোরা।’
ধীরে ধীরে উন্মত্ত মানুষগুলি যেন
সন্বিত ফিরে পায়। কোমলমতি মহিলারা এগিয়ে আসে বৃদ্ধ ড্রাইভারকে শুশ্র“ষা করতে, কিন্তু তারা
অচিরেই টের পায় বৃদ্ধ ড্রাইভার সবার দৃষ্টি এড়িয়ে চলে গেছে নাগালহীন উর্ধ্বে, নিঃশব্দে। চারপাশে তখন নোনা বাতাসের বিবর্ণ দাপাদাপি, নারীরা সুর করে বিলাপ করে, পুরুষেরা বুক চাপড়ায়।
‘এই দেশ তো চির সন্ধ্যার দেশ, এখানে রাত-ও নামে না, সকালও হয় না’
কন্ডাকটরদের একজন চারিদিক জরীপ
করে ঘোষণা দেয়।
বাসযাত্রী যুবকেরা সকলের
উদ্দেশ্যে ইতস্তত রংচটা সান্ত্বনার কথা বলে। এইভাবে সেই অচেনা ধূ ধূ উপত্যকায় কাটে
অনেকটা সময় যদিও কতটা সময় তা ঠিক বোঝা যায় না। নোনা ঘাম, নোনা চোখের পানি ক্রমেই বাতাসকে করে তোলে আরো ভারী, আরো লবণাক্ত, আরো আর্দ্র। ঝড় বৃষ্টিকে সঙ্গী করে নোনা বাতাস প্রবল দাপটে ডানা ঝাপটায়। ঘন, বিষন্ন হয়ে নামে অন্ধকার, কিয়ৎক্ষণ পর শূন্য জীর্ণ বাসটি পড়ে থাকে একেলা। সব মানুষেরা কিংবা বলা চলে
স্বর্গ লোভী বাস যাত্রীরা, দ্বিগবিদিক ছোটে
আশ্রয়ের খোঁজে, কেউ হয়তো ফিরে যায় নিজস্ব
নির্ধারিত সীমানায়, কেউ হয়তো পথ
হারায় আর প্রাচীন বিধ্বস্ত বাসটি চুপচাপ ভিজতে থাকে।
তারপর অবিরত অক্ষম দিন যায়। সেই
বাজারের লোকেরা অপেক্ষায় থেকে থেকে হয়ে যায় কঠিন শুষ্ক সারি সারি পাথর এবং একদা
আগুন বরণ ফাগুন মাসের শেষ তারিখে ভোর সকালে রাজধানী শহরের প্রান্তে এসে দাঁড়ায়
একটা জরাজীর্ণ বৃদ্ধ বাস। দুইজন তরুণ কন্ডাকটর লোকজনের কানে কানে শোনায় ‘স্বর্গ-ছেঁড়া’র মধুময় কাহিনী। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসটার পেট ভরে উঠবে। স্বপ্নবাজ যাত্রীরা
দাঁড়াবে ঠাসাঠাসি করে। বেলা দ্বিপ্রহরে একজন সফেদ সাদা বৃদ্ধ ড্রাইভার ধীরে ধীরে
বাস ছাড়বে ‘স্বর্গ-ছেঁড়া’-র উদ্দেশ্যে।
লেখক পরিচিতি....................................।।
শাহনাজ মুন্নী
শাহনাজ মুন্নীর জন্ম ১৯৬৯-এর ৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায়। সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি পেশায় টেলিভিশন সাংবাদিক। এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর। সাংবাদিক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও তিনি মূলত লেখক। এ পর্যন্ত গল্প উপন্যাস গবেষণা মিলিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা আঠারোটি। তার স্বভাবে আছে এক ধরণের নির্মোহতা। শিল্পেও তার প্রভাব দেখা যায়। তার গল্পে সবসময়ই একটা গল্প থাকে। চরিত্রগুলো বিকশিত হয় সহজিয়া প্রেরণায়। জবরদস্তি নয়, সহজাত নির্দেশনা ধরেই যেন তার কথাশিল্পের চরিত্রগুলো নিজস্ব পথে পদচারণা করেন। তার কথাশিল্পের ভাষা রসবোধসম্পন্ন, কাব্যসংলগ্ন ও স্বতস্ফূর্ত। মুন্নীর কবিতাও তার ব্যক্তি স্বভাবের মতোই অউচ্চকিত। মৃদুভঙ্গীতে তিনি মোক্ষম বোধটি ব্যক্ত করে ফেলেন। যার অনুরণন থেকে যায় ঢেউ মিলিয়ে যাবার পরও।
(লিখেছেন: সরকার আমিন)
1 মন্তব্যসমূহ
গল্পটি একটানেই পড়ে ফেললাম। তা কিন্তু করা যায়; মানে শাহনাজ মুন্নীর গল্প একটানেই পড়ে নিতে হয়। গল্পের এক শরীর থাকে, তার সৃজিত ভাষায় থাকে এক সহজ-চলার মাদকতা।
উত্তরমুছুনআমরা গল্পে অত্নর্চেতনার এক সমন্বিত প্রয়াসের কথা জানি, এখানে তাও আছে। কল্পবাস্তবতার পাশাপাশি আমাদের রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা, বা, ইতিহাসও এখানে হয়ত আছে। আমরা পাঁচ বছর পর স্বর্গের টিকেট কাটি। আমরা মূলত হাসিনা-খালেদা ক্রয় করি। তারপর... সেই একই স্বর্গের গল্প। নাকি স্বর্গছেঁড়ার? হয়ত এসব কিছুই নয়_ এ হয়ত একজন পাঠকের বাড়তি কৌতুহল বা সৃজনশীলতা!প্রকৃতই যে কী আছে তাতে, তা ঈশ্বররূপী গল্পকারই জুৎসইভাবে বলতে পারবেন।
তবে গল্পটি ভালো লেগেছে। গল্পপাঠের আয়োজন আরও প্রাণময় হোক।