কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
এই দেহকাবাখান বুঝো, দেখার পরও দেখতে থাকো, মনে করো এইখান তুমার, তুমার নামে তার মালিকানা আছে, তুমি তারে ভর্তা বানায়ে-বানায়ে খাবার পারো; শরবতের ঢকে গিলবার পারো। ছেঁড়াত্যানার মতন ত্যানা-ত্যানাও করবার পারো। কতকিছু তুমি করবার পারো। এখন মাথাখানরে ঠাণ্ডা কইরা ভাবো। চিন্তা করো; চিন্তা করার এমন দায়িত্বের ভিতর পড়ে জাফরের যাবতীয় চিন্তা যেন কেমন এলোমেলো হওয়া শুরু করে। জীবনের ঝামেলা তো কম নয়। তাকে তাহলে এতভাবে দেখা যায়, বুঝা যায় এতকিছু? কী জানি আরও কি করা যায়! আবারও সে নন্দিনীর কথায় মনোযোগী হয়। আরেকজনের জীবন নিয়া ভাবো, তার জীবনরে কিচ্ছু করবার পারো? কী বালখান ছিঁড়বার পারো? কথাটাকে পাকাপোক্ত করার মানসে নন্দিনী তার বুড়াআঙুলকে জাফরের নাক বরাবর উপরে-নিচে দোলাতে থাকে। জাফরের মন কাঁপে, ভাঙা কাচের বাসনের মতন টুকরাটাকরা হওয়া শুরু করে। নন্দিনীর এইসব প্রলাপের পাল্লায় পড়ে তার যারপরনাই দশা। এসব কথা কি সত্য? মানুষ শুধু নিজের জীবনখানই ধরে টানাটানি করবার পারে?
কথা তো ঠিকই হতে পারে-- আরেক জীবনকে তার কী করার আছে? সেই জীবন ধরে টান দিলে তার কতটুকুই বা চ্যাঞ্জ করে দিতে পারে। এত সোজা! আরেকজনের জীবনের প্রতি কোনো অধিকার নাই? এই কথার গ্যাঞ্জামে পড়ে তাকে মেলা সময় পার করতে হয়। গভীর-তীক্ষ্ণভাবনার ভিতরই তার সময় পার হয়। এখন সে নিজের ফ্যামিলির দিকে নজর দেয়। নজরের ভিতরে নজরকে আরও বাড়ায়। সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নজরের ভিতর আরও নজর আছে। তার মন নড়ে উঠলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সংসার তার কেমন, কতদিন হলো তার সংসার-- আরে না, নোভার মা কি তার কথাবিহীন একটা কাইক বাড়াবার চায়। এইখান আরেকটা জীবন নয়? এইসব সে মিলিয়ে দেখে।
সূচনার কথার কোনো আগামাথা মাঝে মাঝে সে ধরবার পারে না। এখানকার আরেক চরিত্র নোভার মা-- যেখানে জাফরের চাকুরি, উকালতির প্র্যাক্টিস, লেখালেখির নানান হাঙ্গামায় পড়ে জীবন তার কাবু হয়ে আছে।
এখন ও বারান্দায়ই বসে আছে। একটানা দীর্ঘসময় সে বসে থাকে। চোখে-মুখে-বুকে-চুলে-লুঙ্গিতে বিষ্টির দাপট-- সেই দাপটের তোড়ে অনেকসময় পার হয়। তুমুল এই বিষ্টি-বাদলার ভিতর বসেই সে নন্দিনীকে ভাবনায় রাখে। তাকে এক্ষেত্রে এভাবে রাখতে হয় না, নিজের যোগ্যতাসূত্রে জাফরের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপের ওপর অত্র মানবী প্রভাব রাখতে শুরু করে। এসব নিয়ে আবারও ভাবছে। আবারও ও বাইরে তাকায়, কতদিনের কথকতা তার মনের ভিতর আসা-যাওয়া করে। এর সাথে বিষ্টির এক আশ্চর্য মিশ্রণ আছে-- বিষ্টির কী আচরণ, একেবারে বেশ্যা মাগীর মতন আচার-বিচার করে। বিষ্টি তার ষোলআনা শরীর উপুড় করে দিয়ে ছ্যারছ্যার করে তলপেট খালাস করেই যাচ্ছে।
এরই ভিতর আমরা বিষ্টির দাপট দেখতে বাধ্য হবো। পাহাড়-পর্বত, বিরিক্ষি-লতা, গাছ-পাতা, ঘরের দেয়াল ডাকাতের মতন, গুণ্ডা-পাণ্ডার মতন ভিজিয়েই দিচ্ছে। এত যে কাণ্ড করে, তার কোনো চিহ্ন কোনোখানে থাকে? এ এক আজগুবি কারবার। আকাশের কী এমন কান্না! এইখানে জাফরের কাছে স্বপ্নের এক স্মৃতি আছে। একধরনের হাঙ্গামাও বলা যায় একে। স্বপ্নের ওই আওতা থেকে এখনও নিজেকে মুক্তই করতে পারে না। স্বপ্নে-স্বপ্নে বিরাজ করা ক্লান্তির হাঁপানি এখনও তাকে কাবু করে রেখেছে। স্বপ্নের মানুষটি তার কাছে আসে তুমুল-বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। কার শক্তি কিভাবে নির্নয় করা যায়। মাইয়ামানুষের শক্তিও তো আলাদা, তাদের কলকব্জাও ভিন্ন ঘরানার। তার শক্তিও এমনই যেন সোলায়মান পয়গম্বরের উম্মত, নিজেকে গায়েব করার হাফেজ, বাতাসের তালে তালে চলে সে। এই আছে, এই নাই। যেন জিনের অনুসারী, লতা-পাতায় জড়নো থাকে। পাখির স্বরে কথা কয়। এমন মানুষকে কোন্ কারিগর কেমনে পয়দা করে। কী কারিগরের হাতে পড়েছে সে। কোন্টা ছেড়ে কোন্টা নিয়ে কথা বলবে, পার্ট বাই পার্ট গুণ বিচার করে নিবে! মাথা, মুখ, ঠোঁট, বুক, পেট, পিঠ, নিতম্ব, কোমড়, পা, পায়ের পাতা, সর্বোপরি পায়ের গড়নের কত যে মায়াবী ধরন। তাই সে দেখে, ভাবে, ভাবতে-ভাবতে ভাবনার এক অকূল সাগরে নিমজ্জিত হয়। সে ভাবে-- সৃজনকারীর কেমন হুঁশজ্ঞান! কী যে কম্পোজিশনের সমাহার! তবে স্বপ্নের এই মানুষটাকে দেখার কোনো শেষ নাই। সব দেখার আগেই মুখ দেখে, দেখতে দেখতে শরীরে জোয়ার নামে।
সারাশরীরের ভিতর তার মুখটিই সে দেখা শুরু করে। কী যে আছে তার মুখখানটায়-- শরীর কী আর দেখবে, মুখ দেখেই তো শেষ করতে পারছে না। শ্যামলা, গোলগাল মুখের একেবারে গভীরে কোথায় কী যেন আছে। কী আছে, তাই সে নির্ণয় করে শেষ করে-করেও শেষ করতে পারে না। একসময় ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটের ছোঁয়ায়। ঠোঁটের চরিত্র ফুলের পাপড়ির ঢংয়ে বদলে যেতে থাকে। চোখ দিয়ে ঠোঁট দিয়ে সমগ্র নিরবতা শুষে নিতে থাকে। তাতে অনেককাল হয়ত পার হয়। একটা শরীর থেকে আরেকটা শরীর যেন মৃদুকাঁপুনির তালে তালে জেগে উঠতে থাকে। তারও পর সর্বাঙ্গ জাগে, জাগতে জাগতেই সময় পার হয়। জীবন থেকে জীবনের এমন বিনিময়ে দুজন মানুষ যেন কাঁপতেই থাকে। কোন্ এক আনন্দের ভিতরই তাদেরকে নিয়ে যেতে থাকে। ঘ্রাণ থেকে ঘ্রাণ, হাড়-মাংসের এক তুমুল বিনিময় যেন হতে থাকে। নির্জনতামুখর নগ্নতার শ্বাসপতনে চারপাশে এক কাঁপুনি তৈরি হয়।
জাফরের সর্বাঙ্গে কী এক নেশা যেন খোঁদাই হতে থাকে। নারীর শরীরের এই বিস্ময়কে বয়ে বেড়ানোর দারুণতৃষ্ণা নামে তার।
বেহেশতের একটা সিস্টেম নন্দিনী নামক মানবীর শরীরে ফিট করা আছে। বয়স তার চল্লিশের নিচে, চামড়ার পাতলা আবরণ ভেদ করে হাড্ডির মায়াবি চলন তার নজরে গেঁথে যেতে থাকে। একে যেন কোন্ জনমেই তার জীবন থেকে আলাদা করতে পারবে না সে। তাকে জন্মের মতো রাখার চিন্তায় সময় পার করার ভিতরই আাবরও বাস্তবে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির কোন তল থেকেই যেন সূচনা উঠে এসে সারাটা ময়াল ক্যাপচারে নিয়ে যেতে থাকে। সে শরীরের কোনায় কোনায় আলাদা স্বর অনুভব করতে থাকে। শিশ্নের এ কেমন উত্থান জাফরকে বন্ধকির ভিতর ফেলে দিচ্ছে।
আর কোনো ঠাঁয়ই যেন তার নেয়। কোন্ জগতের ভিতর থেকে এসে কোন্ জগতে আসে। শরীরের সবখানে যে কম্পন সে অনুভব করে তা এতদিন কোথায় ছিল। কোত্থেকে এমন আচানক স্বর ভেসে ভেসে আসে! তাই তাকে এমন এক জগতের সন্ধান দেয় যা তার বোঝের কোনোখানে ছিল না।
জাফরের অনেক সাধ্য-সাধনার পরও নন্দিনীর সংসারের ইতিবৃত্ত পুরাপুরি আদায় করতে পারে না। তার সংসার কতদিনের, সংসারে ওর কে কে আছে? সে কোত্থেকেই বা বা আসে, কোথায় হাওয়ার তালে তালে নিজেকে লুকায়!
এমন কথাকে নোভার মা একআনা পাত্তা দেয় না, বরং কাসার বাসনের মতোই ঝনঝন করতে থাকে—বাজারের মাগীরে নিয়া কথা কওয়া শুভা পায়? আরে তারে নিয়া কত কওয়ার মানে কী? তা নিয়ে একরকমের গ্যাঞ্জাম থাকেই। তবু তার ব্যাপারটা জাফরের কাছে একেবারেই ক্লিয়ার হয় না। যখন তার বাসায় আসে অচেনা রাস্তার ভিতর দিয়েই আসে। কিন্তু চেনাপথ তার এত দুশমন কেন কেউ জানতেও পারে না। তার নিজের জীবনকেই আসমানের মতন বিশাল মনে করে, একমাত্র ভালোবাসার জায়গা ওইখানে আর কিছুই নাই।
এইসব নিয়ে নোভার মায়ের সাথে কথা হওয়ার কোনো বিষয়ই নয়। সে কেবল বলে, মাগীর জীবনে কোনো গণ্ডুগোল আছে। পেটের আত-উজুরিতে কোনো ঝামেলা তো থাকতেই পারে। মনে হয় কোনো পচা রোগ ধরেছে। পুরুষ মানুষের সাথে অত ঘসামাঞ্জা করলে নিজের ইঞ্জিন ঠিক থাকার তো কথা না। না হলে বিয়া-শাদীর অতদিন পরেও বাচ্চা নষ্ট হয় কেন? এমনও হবার পারে, মাগীবাজির নিশানা ষোলআনা চালাচালি করার জন্যই পেটে বাচ্চা থাকবার দেয় না। বাইঞ্জামাগীর শইল্যের কামড়ানি বেশি ত, তাই এই ইতরামি শুরু করছে।
এভাবে চলাচলের ভিতরই নন্দিনী আসা-যাওয়া করে। লেখালেখি বা খোয়াবের ভিতরই তার চলাচল। বাসাটির ভিতর ঢোকার মেলা রাস্তা থাকলেও সে এমন এক রাস্তা দিয়ে ঢোকে যা একবার আসার পরই সেটি একেবারে বদলে যায়। এর রূপ আবার কেমন হবে বা আদৌ তা সেই রূপ ফিরে আসবে কিনা কেউ বলতে পারে না। নন্দিনীর সাথে এভাবেই রাস্তাটার কোনো এক বোঝাপড়া থাকতে পারে। ওর শরীরে আচানক রোশনাই সে তার জন্মের পরই ধরে রেখেছে। তা ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়। খানিক পাহাড় থেকে, খানিক পাহাড়ের গায়ে গায়ে লাগানো ঝোপঝাড় থেকে তা নিয়ে থাকে। কোন্ দিকের আচরণ কোন্দিকে কী করবে তার কাণ্ডজ্ঞান যদি থাকত। ফাল্গুনের এই প্রথম সপ্তাহটি এভাবেই কি রাঙিয়ে উঠার কথা? তা হচ্ছে তো ওই মানুষটির জন্যই। কিন্তু তার তো এই মুহূর্তে এখানে আসার কোনোই সম্ভাবনা দেখছে না। আকাশে এমন মেঘ আর রোদের হাঙ্গামা কেন? এই মেঘ তো এই রোদ আশপাশ একেবারে ছিঁড়েফেড়ে দিচ্ছে। তাই সূর্যাস্তের সময়টা জাফর চেখে-চেখে দেখে নিতে থাকে।
এরই ভিতর একটা স্বর স্বপ্নের সারারাস্তা ধরে টান দেয়। এমন চাপা, জলে ভেজা-ভেজা, বৃষ্টিগন্ধময়, কর্কশ স্বর সে বাপের, বা তার বাপেরও বাপের কালে শুনে নাই। কোন্কাল থেকে একেবারে হিজড়া টাইপের স্বর আসে। তার যে কোনো দিশামিশা নাই। কী করতে পারে সে। জলের এমন কান্দনের ভিতর জাফরকে কাঁপিয়ে জানাতে থাকে, আমারে এল্হা ফালাইয়া কই যান। কেমুন পুরুষগো আফ্নে, আফ্নার বিবেচনাডা কেমুনগো। এই কথার ভিতর থেকে জাফরের বের হতে সময় লাগে। একেবারে থুম ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বেশ সময় তাকে ভাবতে হয়। তাই তো কেমন বিচার-বিবেচনা তার। তার এ কোন্ সময়ের সাথে একখান রফা করতে চায় মাগী!
আবারও স্বপ্নের ভিতরই তাকে দেখে সে, দেখে-দেখে সে ক্লান্ত হওয়ারও আগে বুঝতে পারে, তার ভিতর পুরুষের খানিক মিশানো ছাঁচ আছে। বৃষ্টি তাকে একআনাও ছাড়ে না, লেখককে বৃষ্টিমাদকতা বাস্তবকেও নাড়িয়ে দেয়-- এমনকি তার আশপাশের পাহাড়-পর্বত, রাস্তা-ঘাট একেবারে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এসব যখন নোভার মাকে সে বলে তখন রাত বারোটার বিছানা থেকে নোভার মা লাফ দিয়ে একেবারে উঠে বসে, বসতে বসতে কাপে; কাঁপাকাঁপির ভিতর বলে, ঢং করো, আমি কিছু বুঝি না মনে করছো, লেখালেখির নাম কইরা মাগীগো লগে ফষ্টিনষ্টি করো। এখন দেখি হিজড়া মাগীগো শরীল থাইকা তোমার চোখ সরে না। জাফর এমন কথার তোড়ে পড়ে বসে-বসেই ঘামতে থাকে। এর প্রতিবাদ করার ভঙ্গিকেই আক্রমণ করে নোভার মা, বলে, আমি কি কই? এক কাম করো, তোমার বেডিং পত্র লইয়া বাথরুমে ঢুকো। খবিস কোন্হানের। এবার জাফর সরবে বলে, আরে কি শুরু করছো? কিন্তু এ কথা নোভার মার আমি কি শুরু করছি! তুমার লুচ্চামি থামাও; কথার কাছে পাত্তাই পায় না।
এসবের ভিতরই জাফর-নোভার মা সময় পার হয়। সংসার, লেখাজোখা, উকালতি, নানান প্যাঁচালের ভিতর তাদের সময় পার হয়। কতদিন হলো সূচনার পাত্তা নাই। কোথায় যেতে পারে? মানুষটার বিবেচনা আসলেই কম। এভাবে একোবারে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার কারণ কি? পলকের জন্য হলেও অন্নত খোয়াবের ভিতর দেখা দিতে পারে না। আগে খোয়াবের চান্স নিয়ে কত কথাই বলত, এমুন ঘর এই জনমে হয় না? এই মনে করো, দেশ আছে পুলিশ নাই; জমিন আছে আইল নাই; ঘর আছে তালা-চাবি নাই; দালান আছে পার্টিশান নাই। হাহাহা, পার্টিশান কই রাখছো। এমন কথা যে বলাবলি করত, সেই মানুষটা কই গেল? ওর আসা-যাওয়ার রাস্তা ধরেই খানিক খোঁজ করবে নাকি জাফর? হঠাৎই তার কোনো খবর নাই। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ। বরং একটা শিখণ্ডি আওয়াজ যেন কোত্থেকে আসে। জাফর এসবের কোনোই হিসাব মেলাতে পারে না। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? পাহাড়-পর্বতের কোন্ চিপায় তাকে খুঁজবে। পথ কোনোই হদিস দিতে পারে না। আজ ওর এমনই মনে হচ্ছে; আকাশে এখন একেবারে দপদপা জোছনার প্রলেপ নাই। নন্দিনীবিহীন শহরটা কেমন হবে? জীবন চলতে তো! তাদের যৌথজীবনের আলাদা এক নিশানা তার হয়? জাফর এইভাবে ভাবতে ভাবতে কোনো কূল-কিনারা পায় না। এ জীবন জলহীন-বিষ্টিহীন, একেবারেই বিরাণভূমি।
আশার এইটুকু ছোঁয়ার ধান্ধা মাথায় ঘুরপাক খায়। তাহলে এর শেষ আছে কি-- শেষেরও শেষ থাকে? তা কতভাবে? নিজেকে এত বাড়তি মনে হওয়ার কী কারণ? আবারও তার মগজের কোনায় কোনায় নিজেরই মৃতদেহের গন্ধ রোদের তাপের মতন ঘুরঘুর করে। আত্মহত্যায় জীবনের আরেক নিশানা! নাকি? কাজটি কতভাবেই করা যায়? অনেকভাবেই বোধ হয় কাজটি করা যায়। রিক্সাযোগে যাতায়তের সময় রিক্সাসমেত থেঁৎলে গেলে কেমন হয়।
কতদিন ওর মনে হয়েছে মোটর সাইকেল যোগে সে যাচ্ছে, আর একটা দয়ালু কার তাকে একেবারে পিষে দিচ্ছে। ওর ছোট্টবেলায় মনে হতো গামছাটা ঘরের কড়িবর্গায় বেঁধে ঝুলে পড়লে কেমন হয়। একদিন সিনেমা দেখার পয়সা না-পাওয়ার জন্য মার সাথে রাগ করে ঝুলে পড়তে চাই। বাবার সাথে রাগ করে এমন একটা কাজ করবে তা কিন্তু কোনোদিনই মনে হয়নি। বাবার সাথে এমন সম্পর্কই গড়ে উঠেনি যাতে আত্মহত্যার মতো অত বড়ো কাজ করতে পারে। সব কাজেরই যোগ্যতা লাগে। একটা মিলে যাওয়ার ব্যাপার থাকে। নিজের মেয়েটার বহুমুখী স্মৃতি তাকে আরও কাতর করতে থাকে। জীবন যতই সে পার করছে ততই জীবনটা একেবারেই শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে তার। কার জন্য জীবনটা ও চালাবে? মেয়েটাকে অত বুকের পাঁজরে নেয়, কিন্তু ওর সাথে তো প্রীতির সম্পর্কই গড়ে ওঠল না। আবারও মগজের কোথায় যেন মৃতদেহের গন্ধ আছড়ে পড়ছে। তাহলে জীবনটা আর কোথায় থাকল। নোভার মা-ই ওর জীবনটাকে নিঃসঙ্গ করল না তো?। জীবন কেবলই ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে। ভালোলাগার আলাদা ফরমুলা আছে কিনা তাই ভাবতে ভাবতে সে আবার মগজে নিজেরই মৃতদেহের গন্ধ আসতে থাকে। এই গন্ধ কতজনম ধরে তার ভিতর ক্রিয়াশীল আছে? এ কি কোনেব ধারাবাহিক প্রক্রিয়া? অনেক জনমের অনেক মৃত্যু তার ভিতর কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে! তাই তার জীবনকে বড়োই রোদনমুখর হয়ে আছে? স্থায়ী মরণ কি তার একেবারে বুকের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে? সংসারের মৌল-সীমানা তো নির্ণয় করা হলো না। আত্মহত্যাবিষয়ক একধরনের প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েই বোধ হয় জাফর তার জীবন পার করছে। কিংবা এখনও সেই প্রক্রিয়ার ভিতরই সে আছে।
আসলে জীবন মানেই আত্মহত্যার সাথে একধরনের বোঝাপড়া। জীবন আসলেই খুব লম্বা এক বিষয়ের নাম মনে হতে থাকে। শেষ হোক সবকিছু। একসময় ওর এমনই মনে হতে থাকে যে, তার জীবন একটি আত্মহত্যাময় প্রকল্প।
তবে মাইয়ামানুষের নানান লীলা বুকের ভিতর ধাপ্পুর-ধুপ্পুর করে বাজে। শরীলের নানান প্যাঁচে তার আনাগোনা চলে। জীবন কি করে সচল হতে পারে-- এসব নিয়ে তার ভাবনা বাড়ে। বারবার কেন একটা কর্কশ কিন্তু জীবন্ত আওয়াজ তাকে কাবু করে দিচ্ছে। এখানে ক্ষমতার একটা ব্যবহার হতে পারে। আওয়াজের এমন ক্ষমতা থাকতে পারে! এবং একি তবে অবাধ স্বাধীন মুক্তজীবন প্রত্যাশার এক ক্রমধারা? সভ্যতার একটা ধারা এখানে থেকেই পাওয়া যেতে পারে। ওর এও মনে হয়, জীবনের শৃঙ্খলা এভাবে বদলে তো যাচ্ছেই। এর ভিতরই সূচনা যেন জীবনটা গড়ে দিচ্ছে, ফের ভেঙেও দিচ্ছে। সেই জীবনের দিকেই জাফর ফের তাকায়। সূচনার আসা-যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে সে।
শরীরখানার রগে-উগের ভিতর নোভার মা, সূচনা, অন্য কেউ, অন্যের অন্য কেউ, হিজড়া, অন্য মানবী নাকি ভিন্ননামের নামের মানবীর নানান ডিজাইন ঘুরে। সজীবতার বহুমুখী তেজ নিয়ে তা ঘুরঘুর করে। বিষ্টির তীব্র তেজে তার চলাচল টের পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নোভার মায়ের কথা ওর মনে পড়ে। সে তো কবেই বলে দিয়েছিল নন্দিনীর মতো মাগীরা দোজখের লাকড়ি হবেই। এ নারী কাষ্ঠ হবেই। কী জানি কি হয়। বরং জাফর তো অন্যকিছু যেন অনুভব করতে থাকে, কোথায় যেন বৃষ্টিমুখর এক সুর ঝরে। এরই তালে পড়ে শব্দের এক চিত্র আঁকার চেষ্টা চলে তার। শব্দের পর শব্দ দিয়ে সৃজনকর্মে মন লাগালেও তা ক্রমাগত ছিঁড়েফেড়ে যেতে থাকে। সৃজনকর্মের বদলে এক বা বহু নারীশরীর তার সৃষ্ট চরিত্রময় ঘুরপাক খায়। নারী এক নদীর স্রোতের মতোই কি? এক চিহ্নের ভিতর কি বহু চিহ্ন আছে? এক নারীর ভিতর দিয়ে বহু নারীর যোগাযোগ নির্মাণ হতে পারে? তাও হতে পারে, একজনমে কতকিছুই হতে পারে। ভাবে থরোথরো কম্পনমুখর রমণীর কাছের শরীরের তামাম সরবতা বা নিরবতার পাঠ নেয়ার দরকার। যেন এক স্রোতের ভিতর চলাচল থাকে। এক নারীর সর্বাঙ্গে অবগাহনের ভিতর নগ্নতার সৌন্দর্য নবমে। মানবীর শরীরেএমন আয়নার জোয়ার নবমে, যাতে বক্ষদেশ কিংবা উরুই নয় সর্বত্র আয়নার বেহেশতি জোয়ার নামে। যেন বিবি হাওয়ার সৌরভ কোত্থেকে প্রবহমাণ থাকে। সেই জোয়ারে জাফর কিংবা নন্দিনী, কিংবা সূচনা-জাফর জোয়ারের জোয়ার ছড়ায়। ক্রমে ক্রমে বেহেশতি সৌরভ কোথাও মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শরীরের নগ্নতা সরব হতে থাকে। যেন বিবি হাওয়ার জগতের ডুমুর, কলাপাতা কিংবা অন্যসব পাতার আবরণ তাদেও ঢাকতে থাকে। তবু যৌথশরীরের ভিতর এক উতাল-পাতাল দেহকাবা খেলা করে। তাতে মেলা সময় পার হয়। যেন আসমানি কিতাবের আশা/ ভয়ের জীবন ক্রমে ক্রমে রূপান্তরিত হওয়া শুরু করেছে। জাফর নিজেকে আবারও দেখার সরবতায় নামে। কী যেন পরিবর্তন নামে মনে-শরীরে। একপর্যায়ে ওর উত্থিত শিশ্নের হাঙ্গামায় পড়ে সবই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে।
০৫-০৮-০৯
লেখক পরিচিতি
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
তাঁর জন্ম ১৯৬৩-এ, মামাবাড়িতে। কিশোরগঞ্জস্থ বাজিতপুর থানার সরিষাপুর গ্রামে শৈশব- কৈশোর, যৌবনের প্রাথমিক পর্যায় কাটান তিনি। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করেছেন গ্রাম ও
গ্রামঘেঁষা শহরে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একাডেমিক পড়াশুনা করেন চট্টগ্রামে। লেখাজোখা তাঁর কাছে অফুরন্ত এক জীবনপ্রবাহের নাম। মানুষের অন্তর্জগতে একধরনের প্রগতিশীল বোধ তৈরিতে তাঁর আকাক্সক্ষা লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জায়গায়--ছোট বা বড়োকাগজে তিনি লিখে যাচ্ছেন।
কথাসাহিত্যের ছোটকাগজ কথা’র সম্পাদক। কথা সম্পাদনার জন্য তাকে ‘লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ পুরষ্কার ২০১১’ প্রদান করা হয়।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ -- মৃতের কিংবা রক্তের জগতে আপনাকে স্বাগতম (জাগৃতি প্রকাশনী), স্বপ্নবাজি (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ), কতিপয় নিম্নবর্গীয় গল্প (শুদ্ধস্বর)
উপন্যাস-- পদ্মাপাড়ের দ্রৌপদী ’(মাওলা ব্রাদার্স),
প্রবন্ধগ্রন্থ-- উপন্যাসের বিনির্মাণ, উপন্যাসের জাদু (জোনাকী)।
এই দেহকাবাখান বুঝো, দেখার পরও দেখতে থাকো, মনে করো এইখান তুমার, তুমার নামে তার মালিকানা আছে, তুমি তারে ভর্তা বানায়ে-বানায়ে খাবার পারো; শরবতের ঢকে গিলবার পারো। ছেঁড়াত্যানার মতন ত্যানা-ত্যানাও করবার পারো। কতকিছু তুমি করবার পারো। এখন মাথাখানরে ঠাণ্ডা কইরা ভাবো। চিন্তা করো; চিন্তা করার এমন দায়িত্বের ভিতর পড়ে জাফরের যাবতীয় চিন্তা যেন কেমন এলোমেলো হওয়া শুরু করে। জীবনের ঝামেলা তো কম নয়। তাকে তাহলে এতভাবে দেখা যায়, বুঝা যায় এতকিছু? কী জানি আরও কি করা যায়! আবারও সে নন্দিনীর কথায় মনোযোগী হয়। আরেকজনের জীবন নিয়া ভাবো, তার জীবনরে কিচ্ছু করবার পারো? কী বালখান ছিঁড়বার পারো? কথাটাকে পাকাপোক্ত করার মানসে নন্দিনী তার বুড়াআঙুলকে জাফরের নাক বরাবর উপরে-নিচে দোলাতে থাকে। জাফরের মন কাঁপে, ভাঙা কাচের বাসনের মতন টুকরাটাকরা হওয়া শুরু করে। নন্দিনীর এইসব প্রলাপের পাল্লায় পড়ে তার যারপরনাই দশা। এসব কথা কি সত্য? মানুষ শুধু নিজের জীবনখানই ধরে টানাটানি করবার পারে?
কথা তো ঠিকই হতে পারে-- আরেক জীবনকে তার কী করার আছে? সেই জীবন ধরে টান দিলে তার কতটুকুই বা চ্যাঞ্জ করে দিতে পারে। এত সোজা! আরেকজনের জীবনের প্রতি কোনো অধিকার নাই? এই কথার গ্যাঞ্জামে পড়ে তাকে মেলা সময় পার করতে হয়। গভীর-তীক্ষ্ণভাবনার ভিতরই তার সময় পার হয়। এখন সে নিজের ফ্যামিলির দিকে নজর দেয়। নজরের ভিতরে নজরকে আরও বাড়ায়। সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নজরের ভিতর আরও নজর আছে। তার মন নড়ে উঠলেও এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সংসার তার কেমন, কতদিন হলো তার সংসার-- আরে না, নোভার মা কি তার কথাবিহীন একটা কাইক বাড়াবার চায়। এইখান আরেকটা জীবন নয়? এইসব সে মিলিয়ে দেখে।
সূচনার কথার কোনো আগামাথা মাঝে মাঝে সে ধরবার পারে না। এখানকার আরেক চরিত্র নোভার মা-- যেখানে জাফরের চাকুরি, উকালতির প্র্যাক্টিস, লেখালেখির নানান হাঙ্গামায় পড়ে জীবন তার কাবু হয়ে আছে।
এখন ও বারান্দায়ই বসে আছে। একটানা দীর্ঘসময় সে বসে থাকে। চোখে-মুখে-বুকে-চুলে-লুঙ্গিতে বিষ্টির দাপট-- সেই দাপটের তোড়ে অনেকসময় পার হয়। তুমুল এই বিষ্টি-বাদলার ভিতর বসেই সে নন্দিনীকে ভাবনায় রাখে। তাকে এক্ষেত্রে এভাবে রাখতে হয় না, নিজের যোগ্যতাসূত্রে জাফরের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপের ওপর অত্র মানবী প্রভাব রাখতে শুরু করে। এসব নিয়ে আবারও ভাবছে। আবারও ও বাইরে তাকায়, কতদিনের কথকতা তার মনের ভিতর আসা-যাওয়া করে। এর সাথে বিষ্টির এক আশ্চর্য মিশ্রণ আছে-- বিষ্টির কী আচরণ, একেবারে বেশ্যা মাগীর মতন আচার-বিচার করে। বিষ্টি তার ষোলআনা শরীর উপুড় করে দিয়ে ছ্যারছ্যার করে তলপেট খালাস করেই যাচ্ছে।
এরই ভিতর আমরা বিষ্টির দাপট দেখতে বাধ্য হবো। পাহাড়-পর্বত, বিরিক্ষি-লতা, গাছ-পাতা, ঘরের দেয়াল ডাকাতের মতন, গুণ্ডা-পাণ্ডার মতন ভিজিয়েই দিচ্ছে। এত যে কাণ্ড করে, তার কোনো চিহ্ন কোনোখানে থাকে? এ এক আজগুবি কারবার। আকাশের কী এমন কান্না! এইখানে জাফরের কাছে স্বপ্নের এক স্মৃতি আছে। একধরনের হাঙ্গামাও বলা যায় একে। স্বপ্নের ওই আওতা থেকে এখনও নিজেকে মুক্তই করতে পারে না। স্বপ্নে-স্বপ্নে বিরাজ করা ক্লান্তির হাঁপানি এখনও তাকে কাবু করে রেখেছে। স্বপ্নের মানুষটি তার কাছে আসে তুমুল-বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। কার শক্তি কিভাবে নির্নয় করা যায়। মাইয়ামানুষের শক্তিও তো আলাদা, তাদের কলকব্জাও ভিন্ন ঘরানার। তার শক্তিও এমনই যেন সোলায়মান পয়গম্বরের উম্মত, নিজেকে গায়েব করার হাফেজ, বাতাসের তালে তালে চলে সে। এই আছে, এই নাই। যেন জিনের অনুসারী, লতা-পাতায় জড়নো থাকে। পাখির স্বরে কথা কয়। এমন মানুষকে কোন্ কারিগর কেমনে পয়দা করে। কী কারিগরের হাতে পড়েছে সে। কোন্টা ছেড়ে কোন্টা নিয়ে কথা বলবে, পার্ট বাই পার্ট গুণ বিচার করে নিবে! মাথা, মুখ, ঠোঁট, বুক, পেট, পিঠ, নিতম্ব, কোমড়, পা, পায়ের পাতা, সর্বোপরি পায়ের গড়নের কত যে মায়াবী ধরন। তাই সে দেখে, ভাবে, ভাবতে-ভাবতে ভাবনার এক অকূল সাগরে নিমজ্জিত হয়। সে ভাবে-- সৃজনকারীর কেমন হুঁশজ্ঞান! কী যে কম্পোজিশনের সমাহার! তবে স্বপ্নের এই মানুষটাকে দেখার কোনো শেষ নাই। সব দেখার আগেই মুখ দেখে, দেখতে দেখতে শরীরে জোয়ার নামে।
সারাশরীরের ভিতর তার মুখটিই সে দেখা শুরু করে। কী যে আছে তার মুখখানটায়-- শরীর কী আর দেখবে, মুখ দেখেই তো শেষ করতে পারছে না। শ্যামলা, গোলগাল মুখের একেবারে গভীরে কোথায় কী যেন আছে। কী আছে, তাই সে নির্ণয় করে শেষ করে-করেও শেষ করতে পারে না। একসময় ঠোঁট নেমে আসে ঠোঁটের ছোঁয়ায়। ঠোঁটের চরিত্র ফুলের পাপড়ির ঢংয়ে বদলে যেতে থাকে। চোখ দিয়ে ঠোঁট দিয়ে সমগ্র নিরবতা শুষে নিতে থাকে। তাতে অনেককাল হয়ত পার হয়। একটা শরীর থেকে আরেকটা শরীর যেন মৃদুকাঁপুনির তালে তালে জেগে উঠতে থাকে। তারও পর সর্বাঙ্গ জাগে, জাগতে জাগতেই সময় পার হয়। জীবন থেকে জীবনের এমন বিনিময়ে দুজন মানুষ যেন কাঁপতেই থাকে। কোন্ এক আনন্দের ভিতরই তাদেরকে নিয়ে যেতে থাকে। ঘ্রাণ থেকে ঘ্রাণ, হাড়-মাংসের এক তুমুল বিনিময় যেন হতে থাকে। নির্জনতামুখর নগ্নতার শ্বাসপতনে চারপাশে এক কাঁপুনি তৈরি হয়।
জাফরের সর্বাঙ্গে কী এক নেশা যেন খোঁদাই হতে থাকে। নারীর শরীরের এই বিস্ময়কে বয়ে বেড়ানোর দারুণতৃষ্ণা নামে তার।
বেহেশতের একটা সিস্টেম নন্দিনী নামক মানবীর শরীরে ফিট করা আছে। বয়স তার চল্লিশের নিচে, চামড়ার পাতলা আবরণ ভেদ করে হাড্ডির মায়াবি চলন তার নজরে গেঁথে যেতে থাকে। একে যেন কোন্ জনমেই তার জীবন থেকে আলাদা করতে পারবে না সে। তাকে জন্মের মতো রাখার চিন্তায় সময় পার করার ভিতরই আাবরও বাস্তবে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির কোন তল থেকেই যেন সূচনা উঠে এসে সারাটা ময়াল ক্যাপচারে নিয়ে যেতে থাকে। সে শরীরের কোনায় কোনায় আলাদা স্বর অনুভব করতে থাকে। শিশ্নের এ কেমন উত্থান জাফরকে বন্ধকির ভিতর ফেলে দিচ্ছে।
আর কোনো ঠাঁয়ই যেন তার নেয়। কোন্ জগতের ভিতর থেকে এসে কোন্ জগতে আসে। শরীরের সবখানে যে কম্পন সে অনুভব করে তা এতদিন কোথায় ছিল। কোত্থেকে এমন আচানক স্বর ভেসে ভেসে আসে! তাই তাকে এমন এক জগতের সন্ধান দেয় যা তার বোঝের কোনোখানে ছিল না।
জাফরের অনেক সাধ্য-সাধনার পরও নন্দিনীর সংসারের ইতিবৃত্ত পুরাপুরি আদায় করতে পারে না। তার সংসার কতদিনের, সংসারে ওর কে কে আছে? সে কোত্থেকেই বা বা আসে, কোথায় হাওয়ার তালে তালে নিজেকে লুকায়!
এমন কথাকে নোভার মা একআনা পাত্তা দেয় না, বরং কাসার বাসনের মতোই ঝনঝন করতে থাকে—বাজারের মাগীরে নিয়া কথা কওয়া শুভা পায়? আরে তারে নিয়া কত কওয়ার মানে কী? তা নিয়ে একরকমের গ্যাঞ্জাম থাকেই। তবু তার ব্যাপারটা জাফরের কাছে একেবারেই ক্লিয়ার হয় না। যখন তার বাসায় আসে অচেনা রাস্তার ভিতর দিয়েই আসে। কিন্তু চেনাপথ তার এত দুশমন কেন কেউ জানতেও পারে না। তার নিজের জীবনকেই আসমানের মতন বিশাল মনে করে, একমাত্র ভালোবাসার জায়গা ওইখানে আর কিছুই নাই।
এইসব নিয়ে নোভার মায়ের সাথে কথা হওয়ার কোনো বিষয়ই নয়। সে কেবল বলে, মাগীর জীবনে কোনো গণ্ডুগোল আছে। পেটের আত-উজুরিতে কোনো ঝামেলা তো থাকতেই পারে। মনে হয় কোনো পচা রোগ ধরেছে। পুরুষ মানুষের সাথে অত ঘসামাঞ্জা করলে নিজের ইঞ্জিন ঠিক থাকার তো কথা না। না হলে বিয়া-শাদীর অতদিন পরেও বাচ্চা নষ্ট হয় কেন? এমনও হবার পারে, মাগীবাজির নিশানা ষোলআনা চালাচালি করার জন্যই পেটে বাচ্চা থাকবার দেয় না। বাইঞ্জামাগীর শইল্যের কামড়ানি বেশি ত, তাই এই ইতরামি শুরু করছে।
এভাবে চলাচলের ভিতরই নন্দিনী আসা-যাওয়া করে। লেখালেখি বা খোয়াবের ভিতরই তার চলাচল। বাসাটির ভিতর ঢোকার মেলা রাস্তা থাকলেও সে এমন এক রাস্তা দিয়ে ঢোকে যা একবার আসার পরই সেটি একেবারে বদলে যায়। এর রূপ আবার কেমন হবে বা আদৌ তা সেই রূপ ফিরে আসবে কিনা কেউ বলতে পারে না। নন্দিনীর সাথে এভাবেই রাস্তাটার কোনো এক বোঝাপড়া থাকতে পারে। ওর শরীরে আচানক রোশনাই সে তার জন্মের পরই ধরে রেখেছে। তা ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়। খানিক পাহাড় থেকে, খানিক পাহাড়ের গায়ে গায়ে লাগানো ঝোপঝাড় থেকে তা নিয়ে থাকে। কোন্ দিকের আচরণ কোন্দিকে কী করবে তার কাণ্ডজ্ঞান যদি থাকত। ফাল্গুনের এই প্রথম সপ্তাহটি এভাবেই কি রাঙিয়ে উঠার কথা? তা হচ্ছে তো ওই মানুষটির জন্যই। কিন্তু তার তো এই মুহূর্তে এখানে আসার কোনোই সম্ভাবনা দেখছে না। আকাশে এমন মেঘ আর রোদের হাঙ্গামা কেন? এই মেঘ তো এই রোদ আশপাশ একেবারে ছিঁড়েফেড়ে দিচ্ছে। তাই সূর্যাস্তের সময়টা জাফর চেখে-চেখে দেখে নিতে থাকে।
এরই ভিতর একটা স্বর স্বপ্নের সারারাস্তা ধরে টান দেয়। এমন চাপা, জলে ভেজা-ভেজা, বৃষ্টিগন্ধময়, কর্কশ স্বর সে বাপের, বা তার বাপেরও বাপের কালে শুনে নাই। কোন্কাল থেকে একেবারে হিজড়া টাইপের স্বর আসে। তার যে কোনো দিশামিশা নাই। কী করতে পারে সে। জলের এমন কান্দনের ভিতর জাফরকে কাঁপিয়ে জানাতে থাকে, আমারে এল্হা ফালাইয়া কই যান। কেমুন পুরুষগো আফ্নে, আফ্নার বিবেচনাডা কেমুনগো। এই কথার ভিতর থেকে জাফরের বের হতে সময় লাগে। একেবারে থুম ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বেশ সময় তাকে ভাবতে হয়। তাই তো কেমন বিচার-বিবেচনা তার। তার এ কোন্ সময়ের সাথে একখান রফা করতে চায় মাগী!
আবারও স্বপ্নের ভিতরই তাকে দেখে সে, দেখে-দেখে সে ক্লান্ত হওয়ারও আগে বুঝতে পারে, তার ভিতর পুরুষের খানিক মিশানো ছাঁচ আছে। বৃষ্টি তাকে একআনাও ছাড়ে না, লেখককে বৃষ্টিমাদকতা বাস্তবকেও নাড়িয়ে দেয়-- এমনকি তার আশপাশের পাহাড়-পর্বত, রাস্তা-ঘাট একেবারে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এসব যখন নোভার মাকে সে বলে তখন রাত বারোটার বিছানা থেকে নোভার মা লাফ দিয়ে একেবারে উঠে বসে, বসতে বসতে কাপে; কাঁপাকাঁপির ভিতর বলে, ঢং করো, আমি কিছু বুঝি না মনে করছো, লেখালেখির নাম কইরা মাগীগো লগে ফষ্টিনষ্টি করো। এখন দেখি হিজড়া মাগীগো শরীল থাইকা তোমার চোখ সরে না। জাফর এমন কথার তোড়ে পড়ে বসে-বসেই ঘামতে থাকে। এর প্রতিবাদ করার ভঙ্গিকেই আক্রমণ করে নোভার মা, বলে, আমি কি কই? এক কাম করো, তোমার বেডিং পত্র লইয়া বাথরুমে ঢুকো। খবিস কোন্হানের। এবার জাফর সরবে বলে, আরে কি শুরু করছো? কিন্তু এ কথা নোভার মার আমি কি শুরু করছি! তুমার লুচ্চামি থামাও; কথার কাছে পাত্তাই পায় না।
এসবের ভিতরই জাফর-নোভার মা সময় পার হয়। সংসার, লেখাজোখা, উকালতি, নানান প্যাঁচালের ভিতর তাদের সময় পার হয়। কতদিন হলো সূচনার পাত্তা নাই। কোথায় যেতে পারে? মানুষটার বিবেচনা আসলেই কম। এভাবে একোবারে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার কারণ কি? পলকের জন্য হলেও অন্নত খোয়াবের ভিতর দেখা দিতে পারে না। আগে খোয়াবের চান্স নিয়ে কত কথাই বলত, এমুন ঘর এই জনমে হয় না? এই মনে করো, দেশ আছে পুলিশ নাই; জমিন আছে আইল নাই; ঘর আছে তালা-চাবি নাই; দালান আছে পার্টিশান নাই। হাহাহা, পার্টিশান কই রাখছো। এমন কথা যে বলাবলি করত, সেই মানুষটা কই গেল? ওর আসা-যাওয়ার রাস্তা ধরেই খানিক খোঁজ করবে নাকি জাফর? হঠাৎই তার কোনো খবর নাই। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ। বরং একটা শিখণ্ডি আওয়াজ যেন কোত্থেকে আসে। জাফর এসবের কোনোই হিসাব মেলাতে পারে না। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? পাহাড়-পর্বতের কোন্ চিপায় তাকে খুঁজবে। পথ কোনোই হদিস দিতে পারে না। আজ ওর এমনই মনে হচ্ছে; আকাশে এখন একেবারে দপদপা জোছনার প্রলেপ নাই। নন্দিনীবিহীন শহরটা কেমন হবে? জীবন চলতে তো! তাদের যৌথজীবনের আলাদা এক নিশানা তার হয়? জাফর এইভাবে ভাবতে ভাবতে কোনো কূল-কিনারা পায় না। এ জীবন জলহীন-বিষ্টিহীন, একেবারেই বিরাণভূমি।
আশার এইটুকু ছোঁয়ার ধান্ধা মাথায় ঘুরপাক খায়। তাহলে এর শেষ আছে কি-- শেষেরও শেষ থাকে? তা কতভাবে? নিজেকে এত বাড়তি মনে হওয়ার কী কারণ? আবারও তার মগজের কোনায় কোনায় নিজেরই মৃতদেহের গন্ধ রোদের তাপের মতন ঘুরঘুর করে। আত্মহত্যায় জীবনের আরেক নিশানা! নাকি? কাজটি কতভাবেই করা যায়? অনেকভাবেই বোধ হয় কাজটি করা যায়। রিক্সাযোগে যাতায়তের সময় রিক্সাসমেত থেঁৎলে গেলে কেমন হয়।
কতদিন ওর মনে হয়েছে মোটর সাইকেল যোগে সে যাচ্ছে, আর একটা দয়ালু কার তাকে একেবারে পিষে দিচ্ছে। ওর ছোট্টবেলায় মনে হতো গামছাটা ঘরের কড়িবর্গায় বেঁধে ঝুলে পড়লে কেমন হয়। একদিন সিনেমা দেখার পয়সা না-পাওয়ার জন্য মার সাথে রাগ করে ঝুলে পড়তে চাই। বাবার সাথে রাগ করে এমন একটা কাজ করবে তা কিন্তু কোনোদিনই মনে হয়নি। বাবার সাথে এমন সম্পর্কই গড়ে উঠেনি যাতে আত্মহত্যার মতো অত বড়ো কাজ করতে পারে। সব কাজেরই যোগ্যতা লাগে। একটা মিলে যাওয়ার ব্যাপার থাকে। নিজের মেয়েটার বহুমুখী স্মৃতি তাকে আরও কাতর করতে থাকে। জীবন যতই সে পার করছে ততই জীবনটা একেবারেই শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে তার। কার জন্য জীবনটা ও চালাবে? মেয়েটাকে অত বুকের পাঁজরে নেয়, কিন্তু ওর সাথে তো প্রীতির সম্পর্কই গড়ে ওঠল না। আবারও মগজের কোথায় যেন মৃতদেহের গন্ধ আছড়ে পড়ছে। তাহলে জীবনটা আর কোথায় থাকল। নোভার মা-ই ওর জীবনটাকে নিঃসঙ্গ করল না তো?। জীবন কেবলই ঝামেলার হয়ে যাচ্ছে। ভালোলাগার আলাদা ফরমুলা আছে কিনা তাই ভাবতে ভাবতে সে আবার মগজে নিজেরই মৃতদেহের গন্ধ আসতে থাকে। এই গন্ধ কতজনম ধরে তার ভিতর ক্রিয়াশীল আছে? এ কি কোনেব ধারাবাহিক প্রক্রিয়া? অনেক জনমের অনেক মৃত্যু তার ভিতর কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে! তাই তার জীবনকে বড়োই রোদনমুখর হয়ে আছে? স্থায়ী মরণ কি তার একেবারে বুকের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে? সংসারের মৌল-সীমানা তো নির্ণয় করা হলো না। আত্মহত্যাবিষয়ক একধরনের প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়েই বোধ হয় জাফর তার জীবন পার করছে। কিংবা এখনও সেই প্রক্রিয়ার ভিতরই সে আছে।
আসলে জীবন মানেই আত্মহত্যার সাথে একধরনের বোঝাপড়া। জীবন আসলেই খুব লম্বা এক বিষয়ের নাম মনে হতে থাকে। শেষ হোক সবকিছু। একসময় ওর এমনই মনে হতে থাকে যে, তার জীবন একটি আত্মহত্যাময় প্রকল্প।
তবে মাইয়ামানুষের নানান লীলা বুকের ভিতর ধাপ্পুর-ধুপ্পুর করে বাজে। শরীলের নানান প্যাঁচে তার আনাগোনা চলে। জীবন কি করে সচল হতে পারে-- এসব নিয়ে তার ভাবনা বাড়ে। বারবার কেন একটা কর্কশ কিন্তু জীবন্ত আওয়াজ তাকে কাবু করে দিচ্ছে। এখানে ক্ষমতার একটা ব্যবহার হতে পারে। আওয়াজের এমন ক্ষমতা থাকতে পারে! এবং একি তবে অবাধ স্বাধীন মুক্তজীবন প্রত্যাশার এক ক্রমধারা? সভ্যতার একটা ধারা এখানে থেকেই পাওয়া যেতে পারে। ওর এও মনে হয়, জীবনের শৃঙ্খলা এভাবে বদলে তো যাচ্ছেই। এর ভিতরই সূচনা যেন জীবনটা গড়ে দিচ্ছে, ফের ভেঙেও দিচ্ছে। সেই জীবনের দিকেই জাফর ফের তাকায়। সূচনার আসা-যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে সে।
শরীরখানার রগে-উগের ভিতর নোভার মা, সূচনা, অন্য কেউ, অন্যের অন্য কেউ, হিজড়া, অন্য মানবী নাকি ভিন্ননামের নামের মানবীর নানান ডিজাইন ঘুরে। সজীবতার বহুমুখী তেজ নিয়ে তা ঘুরঘুর করে। বিষ্টির তীব্র তেজে তার চলাচল টের পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নোভার মায়ের কথা ওর মনে পড়ে। সে তো কবেই বলে দিয়েছিল নন্দিনীর মতো মাগীরা দোজখের লাকড়ি হবেই। এ নারী কাষ্ঠ হবেই। কী জানি কি হয়। বরং জাফর তো অন্যকিছু যেন অনুভব করতে থাকে, কোথায় যেন বৃষ্টিমুখর এক সুর ঝরে। এরই তালে পড়ে শব্দের এক চিত্র আঁকার চেষ্টা চলে তার। শব্দের পর শব্দ দিয়ে সৃজনকর্মে মন লাগালেও তা ক্রমাগত ছিঁড়েফেড়ে যেতে থাকে। সৃজনকর্মের বদলে এক বা বহু নারীশরীর তার সৃষ্ট চরিত্রময় ঘুরপাক খায়। নারী এক নদীর স্রোতের মতোই কি? এক চিহ্নের ভিতর কি বহু চিহ্ন আছে? এক নারীর ভিতর দিয়ে বহু নারীর যোগাযোগ নির্মাণ হতে পারে? তাও হতে পারে, একজনমে কতকিছুই হতে পারে। ভাবে থরোথরো কম্পনমুখর রমণীর কাছের শরীরের তামাম সরবতা বা নিরবতার পাঠ নেয়ার দরকার। যেন এক স্রোতের ভিতর চলাচল থাকে। এক নারীর সর্বাঙ্গে অবগাহনের ভিতর নগ্নতার সৌন্দর্য নবমে। মানবীর শরীরেএমন আয়নার জোয়ার নবমে, যাতে বক্ষদেশ কিংবা উরুই নয় সর্বত্র আয়নার বেহেশতি জোয়ার নামে। যেন বিবি হাওয়ার সৌরভ কোত্থেকে প্রবহমাণ থাকে। সেই জোয়ারে জাফর কিংবা নন্দিনী, কিংবা সূচনা-জাফর জোয়ারের জোয়ার ছড়ায়। ক্রমে ক্রমে বেহেশতি সৌরভ কোথাও মিলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই শরীরের নগ্নতা সরব হতে থাকে। যেন বিবি হাওয়ার জগতের ডুমুর, কলাপাতা কিংবা অন্যসব পাতার আবরণ তাদেও ঢাকতে থাকে। তবু যৌথশরীরের ভিতর এক উতাল-পাতাল দেহকাবা খেলা করে। তাতে মেলা সময় পার হয়। যেন আসমানি কিতাবের আশা/ ভয়ের জীবন ক্রমে ক্রমে রূপান্তরিত হওয়া শুরু করেছে। জাফর নিজেকে আবারও দেখার সরবতায় নামে। কী যেন পরিবর্তন নামে মনে-শরীরে। একপর্যায়ে ওর উত্থিত শিশ্নের হাঙ্গামায় পড়ে সবই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে।
০৫-০৮-০৯
লেখক পরিচিতি
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
তাঁর জন্ম ১৯৬৩-এ, মামাবাড়িতে। কিশোরগঞ্জস্থ বাজিতপুর থানার সরিষাপুর গ্রামে শৈশব- কৈশোর, যৌবনের প্রাথমিক পর্যায় কাটান তিনি। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করেছেন গ্রাম ও
গ্রামঘেঁষা শহরে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একাডেমিক পড়াশুনা করেন চট্টগ্রামে। লেখাজোখা তাঁর কাছে অফুরন্ত এক জীবনপ্রবাহের নাম। মানুষের অন্তর্জগতে একধরনের প্রগতিশীল বোধ তৈরিতে তাঁর আকাক্সক্ষা লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন জায়গায়--ছোট বা বড়োকাগজে তিনি লিখে যাচ্ছেন।
কথাসাহিত্যের ছোটকাগজ কথা’র সম্পাদক। কথা সম্পাদনার জন্য তাকে ‘লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ পুরষ্কার ২০১১’ প্রদান করা হয়।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ -- মৃতের কিংবা রক্তের জগতে আপনাকে স্বাগতম (জাগৃতি প্রকাশনী), স্বপ্নবাজি (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ), কতিপয় নিম্নবর্গীয় গল্প (শুদ্ধস্বর)
উপন্যাস-- পদ্মাপাড়ের দ্রৌপদী ’(মাওলা ব্রাদার্স),
প্রবন্ধগ্রন্থ-- উপন্যাসের বিনির্মাণ, উপন্যাসের জাদু (জোনাকী)।
0 মন্তব্যসমূহ