যাত্রা

আদিল হাসান



ডাইনিং টেবিল থেকে চেয়ারটা টেনে নিয়ে বারান্দায় বসে আছি। মেজাজটা চরম খারাপ। অন্যসময় হলে হয়তো খুশিতে লাফিয়ে উঠতাম। কিন্তু এখন এই অবস্থায় হঠাৎ করে বৃষ্টি আসাতে আক্ষরিক অর্থেই বিপদে পড়েছি। রাত সাড়ে বারোটায় ঢাকার বাস ধরতে হবে, এখন বাজে পৌনে বারো। এখান থেকে বাজারটা চার কিলোমিটারের পথ।
ভেবেছিলাম তপুকে সাথে নিয়ে বাবার বাইকে করে আরামেই চলে যাবো। আমাকে কাউন্টারে রেখে সে বাইক নিয়ে ফিরে আসবে বাসায়। সাথে যা লাগেজ আছে ক্যারিয়ারেই বেঁধে নেয়া যাবে। কিন্তু হুট করেই বৃষ্টি চলে এলো।

তাও যাওয়া যেতো কিন্তু বাধ সাধলো মা। এই বৃষ্টির মধ্যে বের হওয়া যাবে না। উপরন্তু লাগেজে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও আছে। ভিজলে একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে আজই না যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। রাতেই আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। কাল তুহিনের সাথে জরুরি কাজ আছে, না গেলেই না।

বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই, বরং মনে হলো জোর আরও বাড়ছে। এদিকে ধুপ করে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো। চারিদিকে ঘন অন্ধকার, চার্জার লাইট জ্বালালো তপু।উপায়ন্তর না দেখে সাদেক চাচাকে ফোন দিলাম। সাদেক চাচা আমাদের গ্রামের মানুষ। এইমহল্লাতেই থাকেন। উনার একটা সিএনজি আছে। উনি দিনে সেটা নিজেই ভাড়া খাটেন। কিন্তু এত রাতে নিশ্চয়ই জেগে নেই। এদিকে এই মুহুর্তে আমারও অন্য উপায় নেই। যাইহোক, চাচাকে ফোন করে জানালাম। উনি বললেন, মিনিট দশেকের মধ্যে আসছি।



কাউন্টারে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ। কাউন্টার বন্ধ করে রেখে গেছে! বাজারের সব দোকান বন্ধ। অন্যদিন বাসের কাউন্টারগুলো খোলা থাকে, আজ দেখি একটাও নেই। খটকা লাগলো, কাহিনি কী? পকেট থেকে টিকেট বের করে চেক করলাম, নাহ্‌ সব তো ঠিকই আছে। পরে মনে হলো আসলে আমি এই কাউন্টার থেকে টিকেট নেইনি। তাই হয়তো এতরাতের গাড়িতে এখান থেকে আর কেউ নেই ভেবে কাউন্টার বন্ধ করে চলে গেছে। তাছাড়া আছে এই ঝুমবৃষ্টি। অবশ্য মন্দের ভালো, বাজারে এখনও ইলেক্ট্রিসিটি যায়নি। নিরাপত্তার জন্যে রাখা লাইটগুলো আর সাইনবোর্ডগুলো জ্বলছে।

বৃষ্টি বেড়েই চলেছে। রাত এমনিতেই বেশি হয়ে গেছে। সাদেক চাচাকে আর কষ্ট না দিয়ে বিদায় করে দিলাম। আর বলে দিলাম বাসায় যেনো কিছু না বলে। গাড়ি ছাড়লে আমি নিজেই ফোন দেবো। আপাতত বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্যে কাউন্টারের পাশের একটা দোকানের সামনের ছাপড়ার নিচে দাঁড়ালাম। তাও হালকা ছাঁট এসে লাগতে থাকলো।

আশেপাশে একেবারে সুনসান নীরবতা। আকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে দুই একটা ট্রাক যাচ্ছে। বৃষ্টি-বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে কেমন চারিদিক ছমছম আবহ। একটু ভয়ও লাগতে লাগলো। অবশ্য আর চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি চলে আসার কথা। আশংকার কথা এইযে, কোনো কারণে গাড়ি না থেমে আমাকে ফেলে চলে গেলে বিপদ। একে তো ঢাকা যাওয়া মার যাবেই, উপরন্তু বাসায় ফেরারও উপায় নেই তপুকে বা সাদেক চাচাকে ফোন করা ছাড়া। ভয়ের সাথে টেনশনও জমতে শুরু করলো আমার।

রাস্তায় বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়ছে। সারা রাস্তা জুড়ে মনে হচ্ছে খই ফুটছে সমানে। আর দুইপাশ দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। চেয়ে দেখলাম আশেপাশের বেশিরভাগ দোকানেরই সাইনবোর্ড জ্বলছে। একটা দোকানের দেয়াল ঘেঁষে একটা নেড়ি কুকুর শরীর পেঁচিয়ে শুয়ে আছে। আসার সময়ই খেয়াল করেছিলাম। তখন ঘুমে ছিলো। এখন দেখছি জেগে গেছে। নড়েনি। কিন্তু স্থির শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এখন যদি ধাওয়া করে তাহলে আমার খবর আছে। ওর দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে নজর ফিরিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম। ভাগ্য ভালো, সে নড়েনি। কিন্তু আমি আড়চোখে ঠিকই টের পাচ্ছি, সে একইভাবে আমার দিকে চেয়ে আছে, নিস্পৃহ কিন্তু ভয়ংকর দৃষ্টি। এখন মনে হচ্ছে সাদেক চাচাকে বিদায় করে দেয়া ঠিক হয়নি। গাড়ি আসলে তারপর ছাড়তে হতো। টেনশন আর ভয় কমানোর জন্যে হেডফোন কানে লাগিয়ে মোবাইল থেকে গান শুনতে থাকলাম।



অবশেষে গাড়ি এলো, সময়মতোই। দেরি করেনি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কাউন্টারে এসে দাঁড়াতেই যত দ্রুত পারি গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, গাড়িটা আসা মাত্রই কুকুরটা তারস্বরে চেঁচাতে শুরু করলো। যাইহোক,বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি। সুপারভাইজার লাগেজটা বক্সে দিয়েই উঠে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। গাড়ি ধীরে ধীরে চলা শুরু করলো। গাড়িরে ভেতরে ডিম-লাইট জ্বালানো, আবছাআলো।আমার সিটে যেতে যেতে মনে হলো, যাত্রীরা সব ঘুমিয়ে গেছে, কেউ কথা বলছে না বা নড়ছেনা। এদিকে পাশে পর্দার ফাঁকে জানলার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। কী যেনো আবছা একটা মনে হলো পিছু ছুটে আসছে। একে তো ঘোর বৃষ্টি, অন্ধকার, তার উপর আবার এসি বাসের কাচ-আটকানো জানলা। বোঝার উপায় নেই। তাই সিটে গিয়ে বসার আগে একটু হেলে ভালোমতো লক্ষ্য করলাম। এবং প্রচন্ড ভয়ে আঁতকে উঠলাম। সেই কুকুরটা বৃষ্টির মধ্যে ছুটে আসছে!কী যেনো একটা অস্বাভাবিক অস্বাভাবিক ঠেকতে লাগলো আমার কাছে। কাহিনি কী কিছুই বুঝছিনা।

ভয় কাটানোর জন্যে বাসায় ফোন দিলাম। আর জানালাম, আমি গাড়িতে ঠিকমতো উঠে গেছি। আমি সকালে পৌঁছে রিং দেবো বলে ফোন রাখলাম। যদিও জানি সারারাত আমার জন্যে টেনশন করে বাসার কেউই ঠিকমতো ঘুমোতে পারবে না। যাইহোক, আমি সিট হেলিয়ে দিয়ে বসলাম আয়েশ করে। কম্বল সিটেই ছিলো। আমার পাশের সিটটা ফাঁকা। কেউ নেই। সামনে গিয়ে উঠবে মনে হয় কেউ। একটু উঁকি দিয়ে আশেপাশে বোঝার চেষ্টা করলাম। শুধু আমার পাশে না, আরও কয়েকটা সিট ফাঁকা আছে। প্রায় সব যাত্রীই মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে, আর যাদের দিকে চোখ গেলো সবার গায়েই কম্বল জড়ানো। বাসের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত রকমের ঠান্ডা। আমি আমার বরাবর এসির সুইচ বন্ধ করে দিলাম। তাও দেখি ঠান্ডা কমে না। আশেপাশের দিক থেকে সব এসে জড়ো হচ্ছে।

মনের মধ্যে থেকে খচখচানিটা গেলো না, ঐ কুকুরের ব্যাপারটা। শরীরে ভালোমতো কম্বল জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকলাম সিটে। প্রথমে কিছুক্ষণ জানলা দিয়ে বাইরে দেখলাম, তুমুল বৃষ্টি। আজ মনে হচ্ছে ভাসিয়ে ফেলবে একেবারে। এরপরে কিছুক্ষণ গান শুনলাম মোবাইলে। তাও কুকুরের চিন্তাটা যাচ্ছে না। এদিকে প্রচন্ড ঘুম জড়িয়ে আসছে চোখে দ্রুত। এই ব্যাপারটাও আমার কাছে অস্বাভাবিক ঠেকতে লাগলো। কারণ বাসে আমার সাধারণত ঘুম হয় না তেমন, যখন বা যে বাসেই যাই না কেনো। উপরন্তু আজ বাসাতেও দিনে অনেক্ষণ ঘুমিয়েছি। দিনে ঘুমালে আমার রাতে ঘুম আসতে আরও দেরি হয়। অথচ সিটে বসার পর থেকেই চোখে যেনো রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে।

গান শুনতে ভালো লাগছিলো না। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমঘুম চোখে শুয়ে ভাবার চেষ্টা করতে থাকলাম কুকুরের ব্যাপারটা নিয়ে। ঠিক কুলকিনারা করে উঠতে পারছিলাম না। কোনোভাবেই কারণ খুজে পেলাম না কুকুরটা দৌড়ে আসার। এদিকে হঠাৎ কেনো যেনো মনে হতে লাগলো দূর থেকে কুকুরটার ডাক শুনতে পাচ্ছি। কান তীক্ষ্ণ করে সজাগ হলাম। হ্যাঁ ঠিক তাই, যেনো অনেক দূর থেকে একটা, না আসলে অনেকগুলো কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। আমি পাশ ফিরে আরও সজাগ হলাম। এইবার আরও কিছু ব্যাপার আমার কাছে অন্যরকম ঠেকলো। ফিসফিস শব্দ শুনতে পাচ্ছি, কে বা কারা যেনো কথা বলছে, অস্পষ্ট। ভালোমতো ওঁৎ পেতেও কথার কিছুই উদ্ধার করতে পারলাম না। এদিকে তীব্র ঘুমে ঢলে যাচ্ছি। তারমধ্যে থেকে কুকুরের আওয়াজ আর ফিসফিস শব্দ কানে আসছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে সজাগ হবার চেষ্টা করলাম। এইবার আমার আসলেই ভয় লাগতে লাগলো।

কী যেনো ঠিক নেই। আমি ঠিক জায়গায় নেই। হয়তো এখন কম্বল থেকে মাথা বের করলেই ভয়ংকর কিছু একটা দেখে ফেলবো। ধারালো শিহরণ টের পেলাম শরীরে। হঠাৎ মনে হতে লাগলো, বাসটা ঠিক সামনে যাচ্ছে না। আমার সম্মুখ বরাবর না, যেনো সেটা পেছনে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমার সিট উল্টোদিকে মুখ করা। আবার মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বাসটা শুধু ঘুরছে। বাসায় আবার ফোন দিবো কিনা ভাবতে লাগলাম। আবার অযথা বাবা-মা এর টেনশন বা আমারই ছেলেমানুষি এই ভেবে লজ্জায় সাহসও হচ্ছে না। সুপারভাইজারকে ডাক দিবো সেই ভরসাও পাচ্ছি না। এটাও অদ্ভুত, সে আমার টিকেট চেক করতে আসেনি এখনও। যাইহোক, মনের ভয় কাটাতে ঘুম চোখেই কম্বল মাথা থেকে সরিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম, আর ঠিক সেইমুহূর্তে বাস একটা ঝাঁকুনি খেলো। আমি তাল না রাখতে পেরে সিটে পড়ে গেলাম। পরক্ষণেই সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন ড্রাইভার ভেতরের সব লাইটই বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু সামনে রাস্তায় হেডলাইট এর আলো দেখা যাচ্ছে। বাসের ভেতরে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না।তবে সব কিছু আগের মতোই স্বাভাবিক মনে হলো।

কিন্তু কম্বলের নিচে ফেরত যেতেই আবার সেই শব্দ আর ডাকশোনা যেতে থাকলো। ধুরো, অযথা কুসংস্কার আর ভয় ভেবে ভেবে ভয় পাচ্ছি মনে করে নিজের উপরই রাগ আসলো। আর তাই অযথা এইসব চিন্তা না করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। এবং তাতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না কেনোজানি। মনে হয় খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ এরপরে আরকিছু মনে নেই যতক্ষণ যা সুপারভাইজার এসে ডাক দিলো একসময়।



ঠিক কী হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। আমাকে কে যেনো ঠেলছে হাত দিয়ে, অস্বাভাবিক রকমের শক্ত। টলতে টলতে চোখ খুলে দেখি সুপারভাইজার ডাকছে। আমাদের বাস কাউন্টারের সামনে, ঢাকায় পৌঁছে গেছে! আমাকে নেমে যেতে বলছে। চারিদিকে তখনও অন্ধকার। ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ঢাকায় পৌঁছালে তো সকালে পৌঁছানোর কথা, রাত থাকতেই পৌঁছে গেলো নাকি? বাইরে তাকিয়েও তেমন কিছু দেখছি না, তবে মনে হচ্ছে ভোর সন্নিকটে। আমি টলতে টলতে বের হয়ে এলাম। বাসের কোনো যাত্রী নেই। সব নেমে গেছে। সবসিটে কম্বল পড়ে আছে শুধু। আমি মনে হয় ঘুমে থাকায় আমাকে ডেকে তুলতে হয়েছে। ড্রাইভারের দিকে খেয়াল করিনি। নামার সময় পেছনে ফিরে জিজ্ঞাসা করলাম, মাঝে ব্রেক দেননি? সুপারভাইজার এই প্রশ্নে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো বলে মনে হলো। তড়িৎ সামলে নিয়ে বললো, নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি মরার মতো ঘুমাচ্ছিলেন। ওর দিকেও ভালোমতো লক্ষ্য করা গেলো না। কারণ ততক্ষণে আমি নেমে গেছি। দেখি ইতোমধ্যে লাগেজও বের করে রাখা হয়ে গিয়েছে। আমি নামতেই প্রায় হুশ করে সামনে ছুটে গেলো বাসটা। অন্ধকার থাকায় মুহূর্তের মধ্যেই চোখের আড়াল হয়ে গেলো।

আমি গাবতলী কাউন্টারের সামনে, মেইনরোডে। মোবাইল অন করে দেখলামমাত্র পাঁচটা বাজে! তারমানে মাত্র সাড়ে চার ঘন্টায় নামিয়ে দিয়ে গেছে! রোডের কাউন্টারই তখনও খুলেনি। আশেপাশে এই মুহূর্তেও সিএনজিও দেখছি না। অবাক কান্ড, বাসের আর কোনো যাত্রী নেই কাউন্টারের সামনে। আমি জেগে ওঠার আগেই সব ভেগে গেছে নাকি? এখন কী করা যায় ভাবতে লাগলাম। মনে হলো বাসায় মানে বাবাকে ফোন করি। কিন্তু পরে মনে হলো না থাক, একেবারে বাসাতে পৌঁছে ফোন দেবো। আশেপাশে কোনো গাড়ি না দেখে কাউন্টারের সামনে লাগেজ নিয়ে বসে পড়লাম।



ঢাকার বাসায় গিয়ে যখন উঠলাম তখন ভোর সোয়া ছয়টার মতো বাজে। ভাবলাম এত সকালে ফোন দিয়ে লাভ নেই। বরং আরেকটু বেলা হলে তপুকে ফোন দেবো। আর বলবো রাস্তায় জ্যাম থাকায় দেরিতে পৌঁছেছি আর দেরিতে ফোন দিয়েছি। কিন্তু আমাকে তা করার অবকাশ না দিয়ে একটু পরে বাবাই ফোন দিলেন। শুরুতেই জিজ্ঞাসা করলেন আমি কোথায়? এবং এটা শোনার পরেই শুরু হলো হৈ-হৈ কান্ড। একেবারে ক্ষেপে আছেন। কথায় কথায় প্রচন্ডভাবে আমাকে ধমকালেন। আমি না বলে কাল রাতেই অন্য গাড়িতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে ঢাকায় চলে এসেছি এবং বাসায় কিছুই জানাইনি পুরো পথে- এই ক্ষোভে। উপরন্তু আমি ঠিকমতো গাড়িতে চড়ে ঢাকায় রওনা দিয়েছি-এই বলে মিথ্যা বলায় এরপরে বাসায় গেলে যথোপযুক্ত উত্তম-মধ্যম দিবেন বলেও শাসিয়ে দিলেন। আমি যতই বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমি ঠিকমতো এসেছি; বাবা বিশ্বাসই করলেন না। উপরন্তু মুখের উপর খট করে ফোনটা রেখে দিলেন। আমি কিছুই বুঝতে না পেরে বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে মোবাইল হাতে বসে থাকলাম। একটুপরে তপুর মেসেজ এলো, “ভাইয়া, যা করসো, করসো। এখন সময় নিউজের হেডলাইনগুলো দেখে বাবাকে আবার ফোন দাও। নাইলে তোমার খবর আছে।“ আমি এটা পড়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে টিভি অন করলাম।

নিচের হেডলাইন বারের একটি শীর্ষ খবরের সারমর্ম এমন, গতকাল রাতে বগুড়া থেকে ঢাকাগামী কেয়া এন্টারপ্রাইজের একটি এসি নাইটকোচ এর মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় চালকসহ ২৫ যাত্রীর সকলের প্রাণহানি। বাসটি ঢাকায় আসার পথে শহরের হেমায়েতপুর বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে দূর্ঘটনাকবলিত হয়।

আমি হেমায়েতপুর বাজার থেকে বাসে উঠি। পুরো খবর দেখে যাবুঝলাম, হিসেব ভুল না করে থাকলে এই বাসে করেই আজ সকালে আমি ঢাকায় এসে পৌঁছেছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ