শিশিরকণা বা শৈলবালা যে নামেই ডাকা
হোকনা কেন মেয়েটি সত্যিই শ্রীময়ী। শৈল শিখরের এক সাক্ষাৎ শুভেচ্ছা । এমন শাশ্বত শ্রী
সন্দেহাতীত ভাবে শংসিত । যেন এক সৌম্য শিল্পীর আঁকা শতপত্রী রূপ শোভা ছড়িয়ে পড়ছে শষ্পে আবৃত শৈল প্রান্তরে । সেই শ্যামলশয্যায় শতনরি হার
কণ্ঠে দুলিয়ে যখন শাদ্বলে শিঞ্জিত হয় তার চরণ তখন শাল অরণ্য শতমুখ হয়ে ওঠে সৌজন্যে
। তার শুভশ্রী যেন শ্রাবস্তীর শিল্প শৈলী
।
অনন্য শিল্পপ্রভায় সমুজ্জ্বল । শ্রুতিমধুতে গুঞ্জরণে মাতে শিলীমুখ । শুন্য কুম্ভ পূর্ণ হয় বার বার শতদ্রুর জলে । মা শতাক্ষি তাকে শেষোক্ত বর দিতে কার্পণ্য করেননি । তিনি সত্যই শনাক্ত করলেন শ্রেষ্ঠাকে । এটা তাঁর যথার্থই শ্রেয়োবোধ । এই শশশাবক সতত চকিতা ।
অনন্য শিল্পপ্রভায় সমুজ্জ্বল । শ্রুতিমধুতে গুঞ্জরণে মাতে শিলীমুখ । শুন্য কুম্ভ পূর্ণ হয় বার বার শতদ্রুর জলে । মা শতাক্ষি তাকে শেষোক্ত বর দিতে কার্পণ্য করেননি । তিনি সত্যই শনাক্ত করলেন শ্রেষ্ঠাকে । এটা তাঁর যথার্থই শ্রেয়োবোধ । এই শশশাবক সতত চকিতা ।
শঙ্কুপট্ট থেমে থাকার কথা নয় । তাই শম্পাসম এই শাশ্বতী নারী বেড়ে উঠতে লাগলো শম্বুক গতিতে , শোভনতায়
শালীনতায় শৌখিনতায় । মায়ের শঙ্কিল প্রাণে শেল বেঁধে বৈকি ! শত্রুবাহনে দিনে দিনে
বেলা বাড়ে । শ্রেয়সী শকুন্তলার শেতপদ্ম রূপের শমীতে কোনও শ্রীমান যে আহুতি দেয়নি তা শক্ত করে বলা সম্ভব নয় । তবে শ্রীমতী শঙ্খচূড় ।
আষাঢ়ে কী শ্রাবণে মন তার শঙ্খিনী ।
শঙ্খচিলের মত ডানা মেলে উড়ে চলে শাল বীথির শ্যামলিমায় । কখনো শবলিত শৈবালে তার
ছায়া ঘনায় । ধানের শিষ সিক্ত হয় শিশিরে । হৃদিপদ্মে শিখীর নাচন । শিস দিয়ে
যায় দোয়েল সখী । একটি কথা সন্তর্পণে বলে রাখি – কোন এক শপ্ত
ইতিহাসের শনৈশ্চরের শেকলে এই শারিকার
স্বর্ণ হৃদয় গ্রন্থিত ।
শিবস্বামীর শনৈ শনৈ শ্রীবৃদ্ধি
দেখে শুভ বিবাহের দিন ক্ষণ ঠিক হল । যদিও
শানকিতে শাকান্ন থাকলেই শ্রেয় ছিল । লোকে
বলে শীর্ষারোহণের আকাঙ্ক্ষায় অকালে পুড়ে যায় শলভ সম প্রাণ । এ বেলায়ও হয়ত তাই হল ।
এত শীঘ্র যে জীবনটা কণ্টকশয্যা হবে বোঝেনি
সে । কোথায় তার সেই শরণ ! কোথা তার শালপ্রাংশু স্বামী ! হারিয়ে
গেল তার স্মৃতিময় শারদপ্রভাত । শরদিন্দু রাত । শারদবাসরের স্বপ্ন তাকে সততই
শরবিদ্ধ করে । এ যেন এক শেবধি । সযত্ন লালিত সিঁদুররেখা শিরজের অরণ্যে হারিয়ে গেছে
গহন রাতে । কোন সে অর্জুনের রচিত
শরশয্যায় শোকবিধুর হল তার জীবন শিবিকা !
সদা শর্মী এই সধবা নারীর জীবনে নেমে এলো
শর্বরী সঘন । জীবনের গতি হল শ্লথ । জীবন শলতে নিভন্তপ্রায় । শিরে সংক্রান্তি ।
শাল্মলি বৃক্ষের শল্কলে পিঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল সে । দুচোখ শশব্যস্ত হয়ে কী যেন
খুঁজছে । শ্মশান প্রান্তে শেষকৃত্যের চিতাগ্নি । এ কোন অগ্নি শোণিমা ! সহমরণে যাওয়াই ছিল শ্রেয়তর । সতীদাহে পুড়ছে
হৃদয় ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । অম্বরে শশাঙ্ক বাঁকা । শশিকর আজ বড় অকৃপণ । পূর্ণ
দানে আজ সে শতদল । শস্য ক্ষেত্রের বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস । দূরে শহরতলীতে শোনা যায় বাষ্প
শকটের ঝিক ঝিক । বনের প্রান্তসীমায়
শার্দূলের ডাক শোনা যায় । বৃক্ষ শিখরে শাখামৃগরা শঙ্কিত । সাড়া পেলে বাঘ নির্ঘাত
করবে শিরশাতন । শান বাঁধানো ঘাটে এসে বসলো সে । সমুখে শান্ত জল টলমল । মনে মনে শান্তিপাঠ করল সে । তবুও কী তার
শাপমোচন হবে ! শাপশাপান্তের তো শেষ নেই
শ্বশ্রূ মহলে । শম্বুক মন শঙ্কিত হল । আহা কী বিস্তর শালুক ফুটেছে সলিলে ।
সলজ্জ বদন। হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে চলেছে শাহানার সুর । এ এক অন্য সুর , বাসর সানাই অপসৃত । এ যেন প্রকৃতির শুভাশিস। জনঅরণ্যে শৌনিক ছল । শিকার আর শিকারীর খেলা । শরব্যের শেকলে বাঁধছে সকলকে ।
অদূরে বয়ে চলেছে শাখানদী শিপ্রা । এই সেই শিপ্রা ! কে যেন খুঁজতে এসেছিল
তার প্রথমা প্রিয়ারে ।
নদীর বুকে শালতিগুলোর আলো টিম টিম করে জ্বলছে । অকস্মাৎ
শিবিকাবাহী লোকদের কণ্ঠ স্বননে
বিদীর্ণ হল শিখরচুম্বী পাহাড়ের
শিরস্ত্রাণ । শিলালিপিতে লেখা আছে শ্রমণদের শ্রুতিলেখা । শুক্লপক্ষ রাতে জীবনের
শুশ্রূষা । শ্রমণদের সঙ্গে হেঁটে যায় শিষ্যরা । শুদ্ধ শুচিস্মিত তাদের অভিব্যক্তি । শিশুতোষ প্রভা ছড়িয়ে আছে শ্বেতকেতুর আবক্ষ মূর্তিতে নিমগ্নশোভায় । শিহরণ জাগে তার । কবে আসবে সেই শুভ ক্ষণ ! সবই কী শুভঙ্করের ফাঁকি
! শতরঞ্জি ক্রীড়ায় হার হল তার । অঙ্গে অঙ্গে শতপদী জ্বালা । কাকে শুধবে সে
? চারিদিকে শুনশান নিরবতা । শুকতারা পূর্ব
গগনে । গগন শিরীষ ছুঁয়েছে তার গ্রীবা । শিউলী ফুলের মত চোখের তারায় অশ্রুতপূর্ব বেদনার সঙ্গীত । কালই ঝরে পড়বে শেফালী বিথানে
। বড়ই শিষ্ট সে বড়ই শ্রান্ত ।
শৈলরাজের সঙ্গে গান্ধর্ব বিবাহ হল তার । তার শৌভিক সম্ভাষণে
আজও সে আনতা । তার শোণিতে বইছে শ্রুতিমধুর
সেই মধুক্ষরা ডাক ‘শ্রীময়ী । আমার
শিশুমাতা শ্রী’ । শ্রবণে বাজছে তার শ্রেয়
কথন । হা আমার শব্দ ইশ্বর ! ঐ তো শামাদানে জ্বলছে দীপ । আজ সে দূর দ্বীপবাসিনী । শৈলপতি
তার জীবনে ছিল একমাত্র শ্লাঘা ।
শ্বেত দ্বিপে উপবিষ্ট হয়ে সে এসেছিল বাসর শয়ানে । শ্রীমতীর হাতে ছিল শ্বেত পাথরের
থালা । শ্বেত উত্তরীয় উড়ছিল হাওয়ায় । শ্যামা মেয়েরা গাইছিল শ্রবণমুগ্ধ সঙ্গীত । শান্তি জল ছিটিয়ে দিচ্ছিল বর্ষীয়ান সখীরা । একটি শৌক্তিক
অঙ্গুরী পরিয়ে দিয়েছিল শৌভিক তার অনামিকায় । কে জানত শ্বাপদসঙ্কুল গৃহেই আজ সে শরণাগত । শিউরে উঠল সে শান্তিপ্রিয় স্বামীর আকস্মিক
শ্রথনে । যদিও শঠ শুম্ভ নিশুম্ভ শ্রীঘরে গেল সত্ত্বর । কিন্তু সেতো নিরাশ্রিতা , শিঙ্গার রিক্তা ।
আজো ভোলে নি সে শ্বাপদের শ্যেন দৃষ্টি । শ্যামা পাখির শিথিল শীৎকারে সচকিত হল শারিকা ।
শিবনেত্রের সঙ্গে মিলন হয়েও হলনা ।
শুন্যলোকের সাথে শুভদৃষ্টির বিনিময় হল ।
শ্বেতপদ্ম বা শুক্ল পক্ষের চাঁদ এখনো তার
শুভার্থী । তাদের শুভ্রতা তাকে
শান্তি বর্ষণ করে । তারাই তার শুলঘ্না ।
জীবনের শেজবাতি কী সত্যি নিভে গেল
! স্মৃতিতাড়িত মনে যত তাড়াতাড়ি বিস্মৃতি আসে ততই মঙ্গল । কথায়
আছে শুভস্য শীঘ্রম । শুভ লগ্নে তো
শুভমিতার সঙ্গে শুভ দর্শন হয়েছিলো
। শিশ মহলে নাইবা থাকা হল । চোখের শার্শিতে জমে উঠল শিশিরাশ্রু । সাধিত যৌবন তার শিয়রে শমন ।
এ যেন শাঁখের করাত । শিরদাঁড়া সোজা
করে দাঁড়াতে হবে । শক্তি হল নারীর শিথানে
শীর্ষ মহিমা । শিলোঞ্ছ করে থাকা মানে শূলাসনে থাকা । দুঃখকে শিখণ্ড করে থাকা তো শাঁস কথা নয় ।
এ যে শিকস্ত । শাস্ত্রে কম দৃষ্টান্ত
নেই । মুহূর্তে জ্বলে উঠল এক আলোক শিখা । শিমুলরাঙা দৃপ্ত শপথ । শাখাচ্যুত ফলের মত ঝরে পড়ল শরমে
আনতা নারীর যত দ্বিধা ।
নীবিবন্ধে জড়িয়ে নিল শাড়ি দ্রৌপদীর ।
শাণিত হল তার ধী শক্তি । এইতো শ্বেতভুজার
আশীর্বাদ । একমাত্র শস্ত্র । অন্যায় শাসন কিংবা শোষণে নতশির
হবেনা সে কোনদিন । সাহস তো শিকে
ছিড়েঁ পড়বার ধন নয় । সেতো শতাক্ষির
মানসপুত্রী । অসুর নিধন করে শতাক্ষি পেয়েছে
সর্ব শ্রেষ্ঠ শিরোপা । এ শিরস্ক
সকল নারীর ।
শময়িতা মা আমার শতায়ু হোক শত্রুঘ্ন
। শিখরবাসিনী শিবপ্রিয়া
শমন ভবনে পাঠিয়ে দাও শত্রু পক্ষকে
। শমিকাঠে জ্বলছে তার শতহ্রদা চিত্ত । ভাঙছে স্বপ্ন , ভাঙছে শাঁখা । শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে , চারিদিকে জয়
শঙ্খ বাজছে । আজ এই সবলা নারীর জীবনে রচিত হবে শক্তিমতীর শিলান্যাস ।*
-----------------------------------------------------------------------------------------------

জন্মস্থান
: খুলনা। বেড়ে ওঠা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এস এস।
বর্তমান নিবাস : ধানমণ্ডি, ঢাকা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পাখির পালকে আগুন (সময় প্রকাশনী, যদি প্রেম দিলে না প্রাণে (পত্র উপন্যাস, ম্যাগনাম ওপাস), স্বপ্নের ছবি ও কবিতা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------

লেখক পরিচিতি
রীআ মাহমুদ
রীআ মাহমুদ
সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এস এস।
বর্তমান নিবাস : ধানমণ্ডি, ঢাকা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পাখির পালকে আগুন (সময় প্রকাশনী, যদি প্রেম দিলে না প্রাণে (পত্র উপন্যাস, ম্যাগনাম ওপাস), স্বপ্নের ছবি ও কবিতা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------
0 মন্তব্যসমূহ