মানস চৌধুরী
পলানের
পরিসংখ্যান বিদ্যা
পরিসংখ্যান বিষয়ক পলানের আগ্রহ ধরা পড়ে হঠাৎ করেই। একেবারে হঠাৎ। বলা নেই কওয়া নেই একদিন স্কুল থেকে ফিরে বাসায় যা ছিল খেয়ে দেয়ে পলানের খেলতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না একেবারেই। বরং সে স্কুলের বাংলা রুলটানা খাতার পরিত্যক্ত পৃষ্ঠাগুলো খুলে সাহিত্যচর্চায় মন দিল। স্কুল বলতে চাটাই দেয়া একখানা ঘর যেরকম অনেকগুলো ঘর বাংলাদেশের শহরে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
যে ঘরগুলো দেখতে প্রায়ই বিদেশ থেকে
বিশালাকায় সাদা সাহেবরা আসে। এবং প্রায় প্রতিটা সফর শেষে তাদের বাহবার অন্ত থাকে
না। শহরে গরিব পাড়ার লোকেরা তখন খুব আস্থার সঙ্গে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই এই
স্কুলঘরগুলো নিয়ে অনেক গর্ববোধ করা যায়। তারা খুশিমনে পরের বার আবার কবে সাহেবরা
আসবে সেই অপেক্ষা করতে থাকে। আর গর্ব করে। পলানেরও ভারি গর্ব। এরকম একটা স্কুলে
পড়তে পেরে গর্ব কিছুতেই ওর ছোট্ট বুকটাতে ধরে না। তাই বলে কখনো বাসায় এসে ঘরের
মাটিতে হোগলায় বসে বুকে উবু হয়ে একমাত্র বলপেনটা হাতে নিয়ে সাহিত্যচর্চা করতেও
সে বসে না। পরিসংখ্যান বিষয়ক পলানের আগ্রহ ধরা পড়ে হঠাৎ করেই। একেবারে হঠাৎ। বলা নেই কওয়া নেই একদিন স্কুল থেকে ফিরে বাসায় যা ছিল খেয়ে দেয়ে পলানের খেলতে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না একেবারেই। বরং সে স্কুলের বাংলা রুলটানা খাতার পরিত্যক্ত পৃষ্ঠাগুলো খুলে সাহিত্যচর্চায় মন দিল। স্কুল বলতে চাটাই দেয়া একখানা ঘর যেরকম অনেকগুলো ঘর বাংলাদেশের শহরে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
সাহিত্যচর্চা বলা হলো বটে, কিন্তু পলান এসব লঘুচিত্ত বিষয়ে একেবারেই ভাবছে না তখন। ও একটা পরিসংখ্যান হাজির করতে ব্যস্ত। ও লিখল ‘বাংলাদেশের তিনভাগের একভাগ লোক রিকশা চালায়, আর তিনভাগের একভাগ লোক বাসের কন্টাকটার, আর তিনভাগের একভাগ লোক পায়ে হাঁটে, আর তিনভাগের একভাগ লোক বাসে চড়ে যায়, তারপর তিনভাগের একভাগ লোক ঘোড়ার গাড়ি চালায়। ...’ এইরকম একটা দুরূহ পরিসংখ্যান পলান বার করল কীভাবে সেটা কাউকেই দুশ্চিন্তায় ফেলল না। বরং, তার পড়শিদের যে ক’জনা এই সমস্যাটা পলানের কাছ থেকে শুনেছে তারা সবাই গম্ভীরভাবেই শুনেছে। এবং বুঝেছে সমস্যাটার গুরুত্ব। সকলেই তারা পলানের বিচক্ষণতা নিয়ে গর্বিতও বটে। তখন আর কত বয়স ওর! এই তো সবে ফোর কি ফাইভে পড়ে। যাহোক, পরে জানা গেল পলানের স্কুলে তাকে যে-কোনো একটা জন্তু-জানোয়ারের উপর রচনা লিখতে দিয়েছিল। ফলে তার লেখাখানা ঘোড়া বিষয়ক রচনাও বটে। এবং, ঘটনাচক্রে, এদিন ঠিক সকালেই পলানের বাবা, সাহেবালি, একটা ঘোড়া কিনে পাড়ায় নিয়ে এসে হৈ চৈ বাধিয়ে ফেলেছিল। পলান যখন ওর সাহিত্যরচনা করছে তখন সেই ঘোড়াটা ওদের সকলের একসারি ঘরের ঠিক শেষ মাথায় একটা বালিফেলা জায়গায় দড়ি দিয়ে ভাবলেশহীন বাঁধা।
সাহেবালি
বলে না দিলে সাহেবালিকে পলানের বাবা বলে চেনা খুব মুস্কিল। যে পলান সেই ৯/১০ বছর বয়সেই দুরূহ সব পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে, সিরিয়াস বিষয় নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশিদের গম্ভীর বানিয়ে দেয় সেই পলানের বাবা কিনা প্রায় কারো কাছেই ঠিক পাত্তা-পাওয়া লোক না। মানে ঠিক কারোরই আশপাশে মনে হয় না যে সাহেবালিকে দিয়ে কোনো কাজের কাজ করানো সম্ভব। সে হচ্ছে সেইসব বিরল প্রজাতির মানুষ যারা ভাবতেই থাকে মাথায় ঘিলু থাকলে আজ না হোক কাল কিছু একটা হয়ে যাবে, এবং সেই সম্ভাব্য ফলাফলের আশায় লাগাতার কিছু না কিছু ঘিলুর-উদ্যোগ দু’চারদিন পরপরই নিতে থাকে। তার মেজাজ-মর্জি বোঝার জন্য অতি পরিচিত তার একখানা জবান শোনানোই যথেষ্ট -- ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল?’ কথাটা সাহেবালি বলেও যথেষ্ট চেঁচিয়ে। কোনকিছুকেই একটা ব্যাপার হিসেবে পাত্তা না দিয়ে সাহেবালি জীবনটাকে সহজ বানাতে চাইছিল। যখন মহিলাদের বড়ি খাবার উপকারিতা নিয়ে একগাদা বক্তৃতা দিয়ে বেড়াল এনজিওর আপারা, প্রায় সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে এই বিদেশি মাল খেয়ে ঈমান নষ্ট হবে কিনা। সাহেবালি কিন্তু একটা দোকানে বসে প্রায় বিড়ি খেতে খেতে এক মিনিটে রায় দিয়ে দিয়েছে ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল? খাইলে কী অয়!’ এরপর এত উৎসাহের সঙ্গে সে অফিস থেকে ৬ মাসের বড়ি নিয়ে এসেছিল, যে-কারো মনে হতে পারে সাহেবালি ওগুলো নিজেই খেয়ে ফেলতে চায়। সেজন্য বিলিকারী আপা বারবার করে বলে দিল যাতে কিছুতেই সাহেবালি নিজে ওগুলো না খায়। কিংবা ভুলভাল খেয়ে ঝামেলা বাধালে কিন্তু তাদের আর কিছু করার থাকবে না। যাহোক, সাহেবালি অবশ্য এসে কলমিকেই ওগুলো দিয়েছিল। এবং খুব ভালমত বুঝিয়ে দিয়েছিল কীভাবে খেতে হবে। তখন পলানের বয়স ৫ আর ওর ছোটবোন পলির বয়স ১।
এরপর যখন পোলিওর টীকা দিতে পাড়ায় আপারা এবং স্যারেরা আসে, পড়শিদের অনেকেই পলির নাম নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়ে যায়। সাহেবালি কিন্তু আবার ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল? শিক্ষিত লোকদের মাইয়্যাগো এই নাম কত দেখছি।’ এরপর যখন ইট পড়ে ওর পা থেতলে গেল, পনেরো দিন কাজে যেতে পারেনি। প্রতিবেশিরা কিন্তু খুব আন্তরিকভাবেই দুঃখ পেয়েছে। সাহেবালি তখনো ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল? কাজ কইর্যা খাইতে গ্যালে এগুলা অয়ই, মোহাশিন যে পইর্যা মইর্যাই গেল।’ এই কথাগুলো বলার সময় সেবার তার মুখটা একটু শুকনা ছিল এই যা। প্রতিবেশিরা সবাই মোহসীনের মৃত্যুর গুরুত্ব বুঝল কিংবা বুঝল না। কিন্তু যাবার সময় কেউ কেউ নিশ্চিত হয়েই গেল ‘হালার কুনোদিকে কুনো তাল নাই। ঠ্যাং ফাটাইয়্যাও এমন ভাব য্যান লটারি পাইছে।’
ঘোড়াটা
পলান যখন পরিসংখ্যান শাস্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, কিংবা ঘোড়া বিষয়ে রচনা লিখছে, তখন একগাছা নতুন ঝা চকচকে পাটের দড়ি দিয়ে ঘোড়াটা নতুন একটা খুঁটায় বাঁধা। সকাল বেলাতেই সে ওখানে বাঁধা পড়েছিল। পরিস্থিতি তখন বিশেষ অনুকূল ছিল না তার।
ঘোড়াটার সামনে পুরানো যোগাড়-করা একটা মাটির নাদায় কতগুলো ছোলা ভিজিয়ে দেয়া। ঘোড়াটা সেটা খানিক খানিক খাচ্ছে। আবার খানিক চোখ বুঁজে ঝিমানির তাল করছে। কিন্তু কোনোটাই বিশেষ সুবিধে তার হচ্ছে না। তার চারপাশে তখন এন্তার দর্শক। এই এতগুলো দর্শকের সামনে খাবার মতো একটা ব্যক্তিগত কাজ করতে খুব স্বস্তি তার লাগছে না। আরো কিছু ইহজাগতিক সঙ্কট নিয়ে সে তখন চিন্তিতও বটে। তার মধ্যে প্রথমটাই তাকে বিশেষ কাহিল করে রেখেছিল। আসবার কালে পথে তার নেহায়েৎ ভুলবশতঃ নাদি-ছাড়া হয়নি। এখন সেই অসমাপ্ত কর্তব্যটা পালন করতে তার মন ও শরীর দুই-ই চাইছে। পাশে এতগুলো দর্শক সমেত কাজটা করা তক্ষুনি ঠিক হবে কিনা সে ভেবে উঠতে পারছে না। অভ্যাগতদের নিরুৎসাহিত করতে সে চায়। বিশেষতঃ এখানকার ঘরবাড়ির লাগোয়া চেহারা দেখে সে প্রথমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল যে দর্শকের আনাগোনা এখানে একটা সাধারণ নৈমিত্তিক ব্যাপার হবে। তাই বলে প্রথম দিনেই আচ্ছামতো নেদে দিয়ে এদেরকে হতাশ করতে মন সায় দিচ্ছিল না। অধিকন্তু সে সাহেবালির আতিথেয়তার বহর দেখে বিশেষ নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। তাকে নিয়ে আসবার আগে কম করেও পাঁচবার মোলাকাত হয়েছিল তার নতুন মালিকের সঙ্গে। সাহেবালির এই পরিমাণ উৎসাহ দেখে ঘোড়াটা কেবল ভরসাই পেয়েছিল -- বুঝি এক আরামখানায় যাচ্ছে। আসার পর ছোলার পরিমাণ দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে এটা নেহায়েৎ মেহমান হিসেবে পাওয়া। অচিরেই এটা শুকনো খড়ে গিয়ে ঠেকবে। এই এতরকম হৈ চৈ-এর মধ্যেও তার কয়েকবারই মনে হয়েছে যে সাহেবালির বড়জোর ছাগল কেনাই উচিৎ ছিল। আরো খান দুই বিষয় তখন ঘোড়াটার মাথায় ঘুরছে। একটা হলো, ও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ওর চাকরি-বিত্তান্তটি কী হতে পারে। এসে কোনোরকম আন্দাজও করতে পারছে না। চারপাশে উৎসাহ হৈচৈ চেঁচামেচি তার ভালই লাগছে। কিন্তু সে নিশ্চিত কেবল এই আমোদের জন্য তাকে আনা হয়নি। দু’চারবার সে ভেবেছে আপাততঃ এই সব চিন্তা বাদ দিয়ে খানিক ঘুমাবে। কিন্তু যে বিষয়টা ভেবে সে ঘুমাতে পারছিল না তা হচ্ছে প্রথম দিনেই সে একটা গাধা-কিসিমের ঘোড়া হিসেবে পরিচিত হতে চায় না। এমনিতেও তাকে গাধা থেকে আলাদা করতে দর্শকের কসরৎ করা লাগে। কেবল ফোটো-দেখা জ্ঞানে সেটা সম্ভব নয়। সে নিশ্চিত অচিরেই পাছায় খোঁচা খেতে হবে। তখন সে একটা লাথি-গুঁতো জাতীয় কিছু না দিলে ওটা বাড়তেই থাকবে। ঝিমাতে থাকলে একটা ফ্যালফ্যালে ভাব তৈরি হতে পারে। ঘোড়াটা সেটা বরদাশ্ত করতে পারছে না।
ঘোড়াটা এত বিবেচনা করলে কী হবে ক্ষতি যা হবার তা ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। পড়শিদের মধ্যে কেউ কেউ রায় দিয়ে দিয়েছে যে এটা আসলে একটা গাধা। সাহেবালিকে ঠকিয়ে এটা গছিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য যারা গাধা-তত্ত্বে বিশেষ খুশি নয় তারাও এটাকে খচ্চর থেকে বেশি কিছু বলতে নারাজ। সাহেবালি ফুঁসছে। কিন্তু সেও ঠিক করে রেখেছে লোকজনের সঙ্গে এ নিয়ে তর্ক সে করবে না। এটাকে কাজে লাগিয়েই সে দেখাবে। তবে লোকজনকে বিশেষ দোষ দেয়াও যায় না। ঘোড়া তারা দেখেছেই বা ক’টা! সিনেমায় যা দেখেছে সেগুলো ইয়া তাগড়া, নায়কের সাথে মানানসই মাপের। এর বাইরে মাঝে মধ্যে অনুষ্ঠান থাকলে পুলিশের একদল রাস্তায় ঘোড়া নিয়ে বের হয়। সেগুলো তো আরো বড়। আর তারা চুল কাটতে গেলে নাপিতের দোকানে মাঝে মধ্যেই বোরাকের ছবি দেখেছে। তো এরকম বাট্টু ছোটখাট ঘোড়া যে থাকতে পারে সেটা তাদের অনেক ধারণায় নেই। আর ধারণা থাকলেও পাড়ার একমাত্র ঘোড়াটাকে কেই বা এরকম দেখতে চায়! তাদের মনের বাসনাটা হলো সাহেবালি একটা উঁচা-লম্বা ঘোড়া নিয়ে আসবে। একজন বলেই বসল, ‘ঘোড়া হবে উঁচা-লম্বা-তাগড়া’।
সাহেবালির উত্তর রেডি: ‘তুমি উট দেখিছ।’ এটাকে যদি গাধা বলতে পারে তাহলে তাদের দেখা ঘোড়াগুলোকেও সে উট বলতে পারে! সাহেবালির প্রত্যুৎপন্নমতিতায় ঘোড়াটা খুশি হয়। আরেকজন সাহেবালিকে বলে, ‘তুমি একটা ছাগল কিনলেই পারতা।’ সাহেবালি এইদিন খুবই প্রসন্ন। ‘ছাগলে আমার গাড়ি টানবে? আর ছাগল দেখতেই ছাগল, খায় তো একটা হাতির নাহান।’ নিজের কাজ সম্পর্কে ঘোড়াটার একটা ধারণা হলো বটে। কিন্তু ঘোড়াজাতির কৃচ্ছতাসাধন সম্পর্কে সাহেবালির জ্ঞানের বহর দেখে ঘোড়াটা প্রমাদ গুণল।
বেলা বাড়তে থাকলে পড়শিদের অনেকেরই হুঁশ হয়। যে দু’চারজন স্কুল পালিয়ে এসে ঘোড়া দেখছিল তাদেরকেও তখন আবিষ্কার করা হচ্ছিল। যে যার মতো রওনা করার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কলমিই উদ্যোগ নিল: ‘নতুন জিনিস। মাথা খারাপ কইরে দিও না।’
পলান যখন পরিসংখ্যান শাস্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, কিংবা ঘোড়া বিষয়ে রচনা লিখছে, তখন একগাছা নতুন ঝা চকচকে পাটের দড়ি দিয়ে ঘোড়াটা নতুন একটা খুঁটায় বাঁধা। সকাল বেলাতেই সে ওখানে বাঁধা পড়েছিল। পরিস্থিতি তখন বিশেষ অনুকূল ছিল না তার।
ঘোড়াটার সামনে পুরানো যোগাড়-করা একটা মাটির নাদায় কতগুলো ছোলা ভিজিয়ে দেয়া। ঘোড়াটা সেটা খানিক খানিক খাচ্ছে। আবার খানিক চোখ বুঁজে ঝিমানির তাল করছে। কিন্তু কোনোটাই বিশেষ সুবিধে তার হচ্ছে না। তার চারপাশে তখন এন্তার দর্শক। এই এতগুলো দর্শকের সামনে খাবার মতো একটা ব্যক্তিগত কাজ করতে খুব স্বস্তি তার লাগছে না। আরো কিছু ইহজাগতিক সঙ্কট নিয়ে সে তখন চিন্তিতও বটে। তার মধ্যে প্রথমটাই তাকে বিশেষ কাহিল করে রেখেছিল। আসবার কালে পথে তার নেহায়েৎ ভুলবশতঃ নাদি-ছাড়া হয়নি। এখন সেই অসমাপ্ত কর্তব্যটা পালন করতে তার মন ও শরীর দুই-ই চাইছে। পাশে এতগুলো দর্শক সমেত কাজটা করা তক্ষুনি ঠিক হবে কিনা সে ভেবে উঠতে পারছে না। অভ্যাগতদের নিরুৎসাহিত করতে সে চায়। বিশেষতঃ এখানকার ঘরবাড়ির লাগোয়া চেহারা দেখে সে প্রথমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল যে দর্শকের আনাগোনা এখানে একটা সাধারণ নৈমিত্তিক ব্যাপার হবে। তাই বলে প্রথম দিনেই আচ্ছামতো নেদে দিয়ে এদেরকে হতাশ করতে মন সায় দিচ্ছিল না। অধিকন্তু সে সাহেবালির আতিথেয়তার বহর দেখে বিশেষ নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। তাকে নিয়ে আসবার আগে কম করেও পাঁচবার মোলাকাত হয়েছিল তার নতুন মালিকের সঙ্গে। সাহেবালির এই পরিমাণ উৎসাহ দেখে ঘোড়াটা কেবল ভরসাই পেয়েছিল -- বুঝি এক আরামখানায় যাচ্ছে। আসার পর ছোলার পরিমাণ দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে এটা নেহায়েৎ মেহমান হিসেবে পাওয়া। অচিরেই এটা শুকনো খড়ে গিয়ে ঠেকবে। এই এতরকম হৈ চৈ-এর মধ্যেও তার কয়েকবারই মনে হয়েছে যে সাহেবালির বড়জোর ছাগল কেনাই উচিৎ ছিল। আরো খান দুই বিষয় তখন ঘোড়াটার মাথায় ঘুরছে। একটা হলো, ও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ওর চাকরি-বিত্তান্তটি কী হতে পারে। এসে কোনোরকম আন্দাজও করতে পারছে না। চারপাশে উৎসাহ হৈচৈ চেঁচামেচি তার ভালই লাগছে। কিন্তু সে নিশ্চিত কেবল এই আমোদের জন্য তাকে আনা হয়নি। দু’চারবার সে ভেবেছে আপাততঃ এই সব চিন্তা বাদ দিয়ে খানিক ঘুমাবে। কিন্তু যে বিষয়টা ভেবে সে ঘুমাতে পারছিল না তা হচ্ছে প্রথম দিনেই সে একটা গাধা-কিসিমের ঘোড়া হিসেবে পরিচিত হতে চায় না। এমনিতেও তাকে গাধা থেকে আলাদা করতে দর্শকের কসরৎ করা লাগে। কেবল ফোটো-দেখা জ্ঞানে সেটা সম্ভব নয়। সে নিশ্চিত অচিরেই পাছায় খোঁচা খেতে হবে। তখন সে একটা লাথি-গুঁতো জাতীয় কিছু না দিলে ওটা বাড়তেই থাকবে। ঝিমাতে থাকলে একটা ফ্যালফ্যালে ভাব তৈরি হতে পারে। ঘোড়াটা সেটা বরদাশ্ত করতে পারছে না।
ঘোড়াটা এত বিবেচনা করলে কী হবে ক্ষতি যা হবার তা ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। পড়শিদের মধ্যে কেউ কেউ রায় দিয়ে দিয়েছে যে এটা আসলে একটা গাধা। সাহেবালিকে ঠকিয়ে এটা গছিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্য যারা গাধা-তত্ত্বে বিশেষ খুশি নয় তারাও এটাকে খচ্চর থেকে বেশি কিছু বলতে নারাজ। সাহেবালি ফুঁসছে। কিন্তু সেও ঠিক করে রেখেছে লোকজনের সঙ্গে এ নিয়ে তর্ক সে করবে না। এটাকে কাজে লাগিয়েই সে দেখাবে। তবে লোকজনকে বিশেষ দোষ দেয়াও যায় না। ঘোড়া তারা দেখেছেই বা ক’টা! সিনেমায় যা দেখেছে সেগুলো ইয়া তাগড়া, নায়কের সাথে মানানসই মাপের। এর বাইরে মাঝে মধ্যে অনুষ্ঠান থাকলে পুলিশের একদল রাস্তায় ঘোড়া নিয়ে বের হয়। সেগুলো তো আরো বড়। আর তারা চুল কাটতে গেলে নাপিতের দোকানে মাঝে মধ্যেই বোরাকের ছবি দেখেছে। তো এরকম বাট্টু ছোটখাট ঘোড়া যে থাকতে পারে সেটা তাদের অনেক ধারণায় নেই। আর ধারণা থাকলেও পাড়ার একমাত্র ঘোড়াটাকে কেই বা এরকম দেখতে চায়! তাদের মনের বাসনাটা হলো সাহেবালি একটা উঁচা-লম্বা ঘোড়া নিয়ে আসবে। একজন বলেই বসল, ‘ঘোড়া হবে উঁচা-লম্বা-তাগড়া’।
সাহেবালির উত্তর রেডি: ‘তুমি উট দেখিছ।’ এটাকে যদি গাধা বলতে পারে তাহলে তাদের দেখা ঘোড়াগুলোকেও সে উট বলতে পারে! সাহেবালির প্রত্যুৎপন্নমতিতায় ঘোড়াটা খুশি হয়। আরেকজন সাহেবালিকে বলে, ‘তুমি একটা ছাগল কিনলেই পারতা।’ সাহেবালি এইদিন খুবই প্রসন্ন। ‘ছাগলে আমার গাড়ি টানবে? আর ছাগল দেখতেই ছাগল, খায় তো একটা হাতির নাহান।’ নিজের কাজ সম্পর্কে ঘোড়াটার একটা ধারণা হলো বটে। কিন্তু ঘোড়াজাতির কৃচ্ছতাসাধন সম্পর্কে সাহেবালির জ্ঞানের বহর দেখে ঘোড়াটা প্রমাদ গুণল।
বেলা বাড়তে থাকলে পড়শিদের অনেকেরই হুঁশ হয়। যে দু’চারজন স্কুল পালিয়ে এসে ঘোড়া দেখছিল তাদেরকেও তখন আবিষ্কার করা হচ্ছিল। যে যার মতো রওনা করার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কলমিই উদ্যোগ নিল: ‘নতুন জিনিস। মাথা খারাপ কইরে দিও না।’
কলমি
সাহেবালির সঙ্গে কলমির বিয়ে হয় ঘোড়াটা আসার দশ বছর আগে। বিয়ের ঠিক কিছুদিন আগে কলমির মা-বাবা ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। সাহেবালিরা আগে থেকেই ছিল। কমলাপুর বস্তিতে। সেখানেই ওদের বিয়ে হয়। কলমিরা ঢাকায় আসে ময়মনসিংহের সেই গ্রামে আর কোনোভাবেই বেঁচে-থাকার-উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে। কলমি বড় ছিল বলে পরিস্থিতিটা বেশ বুঝত। এবং বেঁচে থাকার উপায়সমূহ খুঁজতে কলমির বিয়েও যে একটা প্রসঙ্গ সে বিষয়ে তার বিশেষ সন্দেহও ছিল না। ফলে সাহেবালিকে একই বস্তির মধ্যে যখন আবিষ্কার করা হলো, কলমি পূর্ব-সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব নিয়ে কথা না-বাড়িয়ে কবুল করেছে। লোকটাকে সে দু’চারবার দেখেছিলও বটে। এবং কলমির তাকে ভালই লাগত।
তবে কলমির আসল দেখাদেখির সূচনা হয় বিয়ের পর। যখন প্রতিটা ঘণ্টা আঠার মতো লেগে থাকত বাসায় তখনই কলমি সাহেবালির গুণের বাহার টের পেতে শুরু করে। বিশেষতঃ সাহেবালির লাগাতার উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিয়ে কলমি অচিরেই সন্ত্রস্ত, এবং পরিশেষে অবসন্ন, হয়ে পড়ে। কলমির জন্য পরিস্থিতিটা আরো দুরূহ হয়ে পড়ে যেহেতু সাহেবালি তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার সবচেয়ে বড় গুণগ্রাহী হিসেবে কলমিকে সবসময়েই চাইত, এবং আন্তরিকভাবেই। কলমি বরাবর সাহসী ধরনের মেয়ে। কিন্তু তাই বলে সাহেবালির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাহবা দেয়া বেশ কঠিন ছিল ওর জন্য। নিজের মা-বাবা ভাইবোনদের পরিস্থিতি থেকেই কলমি জানত বেঁচে থাকা সমূহ কঠিন এবং বিস্ময়কর একটা ঘটনা। এবং বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে বের করা সহজ কাজ বিশেষ না। সেই উপায়গুলোই যখন পরম আয়েশে সাহেবালি সকালে একটা আর বিকালে একটা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করেছিল তখন কলমির আতঙ্কিত না হয়ে উপায় ছিল না। বিয়ের এক বছরের মাথাতে পলান চলে এসে কলমির আতঙ্কটাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল কেবল। সাহেবালিও তখন নানারকম স্বঘোষিত ছুটি নিয়ে বাসায় বসে সময় কাটানো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
একেক সময় কলমির মনে হয়েছে বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণাটা সাহেবালি গভীরভাবে বোঝে বলেই এরকম খ্যাপা। আবার অন্য সময়ে তার একদম অন্য কথা মনে হয়। তখন মনে হয় বেঁচে থাকাটাকে কিছুতেই যন্ত্রণার হতে দিতে চায় না সাহেবালি, তাই সে অমন আউলা। আবার আরেক সময়ে কলমির মনে হয় সাহেবালি বেঁচে-থাকা নিয়ে এক পরম পরিহাস রচনা করতে চায়। এই সংকল্পে অবিচল বলেই ওর অফুরান প্রাণশক্তি। সাহেবালির সঙ্গে সংসারে কলমি যত দিন-গুজরান করেছে, ততই নিস্পৃহ হতে শিখেছে। একরকম প্রসন্নতাই সেটা। দিনকে দিন সে সাহেবালির এই খ্যাপামির একজন অন্তরঙ্গ গ্রাহক হয়ে পড়েছে, আর গভীর মমত্ব তৈরি হয়েছে তার লোকটাকে নিয়ে। একটা কারণ হলো সে নিজেও সেখানে বাৎসল্যেই থাকে। আর পলির জন্মের পর সাহেবালি যে তাকে খাবার-বড়ি নিয়ে এসে দিয়েছে সেটা নিয়ে সে পরম কৃতজ্ঞও বটে।
সাহেবালির প্রাণশক্তি নিয়েই এখন সে বেশি মনোযোগী। নাহলে যে-মাত্র একটা কোনো রুজির ব্যবস্থায় সাহেবালি দু’চার কদম আগায় সেখান থেকেই পরিত্রাণের জন্য তার নিঃসীম ব্যাকুলতা দেখে কলমির ঝগড়া বাধানোর কথা। কলমি ঝগড়া বাধায় না। সাহেবালিকে তার বিশেষ ঝগড়ার উপযোগীও মনে হয় না। চরম অপছন্দের মুহূর্তে ঘাড়-গোঁজ করে বসে থাকা ছাড়া উচ্চকিত কোনো ঝগড়া করতে সাহেবালিকে বিশেষ পারঙ্গম তখন একদমই মনে হয় না। অবশ্য কলমি জানে এটা একটা অস্ত্র ওর। না হলে হাত-পা নাচিয়ে ঝগড়া করতে সাহেবালির জুড়ি নেই। কোনো একটা কাজ থেকে যখন সে অবসর নিয়ে আসে, প্রায়শঃই সেটা একটা ঝগড়া দিয়ে শেষ করে। কলমি বহুবার বলেছে ‘কাম করবা না ভাল কথা। তুমি তো মন ঠিক কইরেই গ্যাছো। গ্যাছো না? তো ঝগড়া বাধানোর কাম কী?’ সাহেবালি সেসবে দমে না: ‘এ্যাগোরে চিনস তুই? ঝগড়া কী? আমার তো পোরতি দিন মাইরে ফ্যালাইতে মন লয়।’ কলমি আর কথা আগায় না। কলমির এরকমও মনে হয় যে কাজ ছাড়াটা আসলে বাহানা। ওই ঝগড়াটা করতে চায় বলেই ও কাজ ছাড়ে। কিন্তু কলমির ভয় ধরে। চড় থাপ্পড় তো নিত্য নৈমিত্তিক! কিন্তু কোনোদিন যদি ওরা সাহেবালিকে আচ্ছামতো পেটায়! সে কথাও বলেছে। কিন্তু সাহেবালির সোজা উত্তর -- ‘ও এমনিতেই মাইরতিছে। তুই বুধয় ট্যার পাস না।’
এতকিছুর পরও আধপেটা খেয়ে আর এখানে সেখানে খুচরা কাজ করে কলমির জমানো দু’ হাজার টাকায় সাহেবালি যখন ঘোড়াটা কিনতে মনস্থির করে, কলমি মানা না করে পারেনি। সাহেবালি বরাবরের মতো উৎসাহী হয়ে কলমিকে বুঝিয়েছে কীভাবে এই ঘোড়ার সঙ্গে একটা গাড়ি লাগিয়ে সাবলম্বী হয়ে যাবে সে। শহরের প্রান্তে সেই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সে সংসার চালাবে। এবং, ফলতঃ, তাদের জীবনে নিশ্চিন্ত একটা বেঁচে-থাকার-উপায় হয়ে যাবে এটা। এরপর সাহেবালি আর নতুন কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না। কলমি সেটা বিশ্বাস করেছে সে ভরসা তার চোখের দিকে তাকিয়ে সাহেবালির একটুও হয়নি। তখন সে আবার গোড়া থেকে ঘোড়ার-গাড়ির উপকারিতা বিষয়ে একটা আলোচনা শুরু করল। তবে এবারে অনেক অনুচ্চ গলায় এবং খুবই নড়বড়ে ভাবে। কলমি সেটাও পুরোটা বসে থেকে শুনল। তারপর যে দু’চার গ্রাশ ভাত তখনো ছিল তা সাহেবালিকে খাবার জন্য বেড়ে দিল। সাহেবালি সেখান থেকে আবার অর্ধেকটা প্রায় জোর করেই কলমিকে খাইয়ে দিল। আধপেটা খাওয়া বা না-খাওয়া কলমির নৈমিত্তিক অভ্যাস। আসলে সাহেবালিরও তাই। কেবল দু’ হাজার টাকাটাই কলমির খচখচ করছিল। পেটের ব্যথা যখন ওর খুব বাড়ে তখনো এই টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা মাথায় আসে না কলমির।
সাহেবালির সঙ্গে কলমির বিয়ে হয় ঘোড়াটা আসার দশ বছর আগে। বিয়ের ঠিক কিছুদিন আগে কলমির মা-বাবা ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে। সাহেবালিরা আগে থেকেই ছিল। কমলাপুর বস্তিতে। সেখানেই ওদের বিয়ে হয়। কলমিরা ঢাকায় আসে ময়মনসিংহের সেই গ্রামে আর কোনোভাবেই বেঁচে-থাকার-উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে। কলমি বড় ছিল বলে পরিস্থিতিটা বেশ বুঝত। এবং বেঁচে থাকার উপায়সমূহ খুঁজতে কলমির বিয়েও যে একটা প্রসঙ্গ সে বিষয়ে তার বিশেষ সন্দেহও ছিল না। ফলে সাহেবালিকে একই বস্তির মধ্যে যখন আবিষ্কার করা হলো, কলমি পূর্ব-সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব নিয়ে কথা না-বাড়িয়ে কবুল করেছে। লোকটাকে সে দু’চারবার দেখেছিলও বটে। এবং কলমির তাকে ভালই লাগত।
তবে কলমির আসল দেখাদেখির সূচনা হয় বিয়ের পর। যখন প্রতিটা ঘণ্টা আঠার মতো লেগে থাকত বাসায় তখনই কলমি সাহেবালির গুণের বাহার টের পেতে শুরু করে। বিশেষতঃ সাহেবালির লাগাতার উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিয়ে কলমি অচিরেই সন্ত্রস্ত, এবং পরিশেষে অবসন্ন, হয়ে পড়ে। কলমির জন্য পরিস্থিতিটা আরো দুরূহ হয়ে পড়ে যেহেতু সাহেবালি তার উদ্ভাবনী ক্ষমতার সবচেয়ে বড় গুণগ্রাহী হিসেবে কলমিকে সবসময়েই চাইত, এবং আন্তরিকভাবেই। কলমি বরাবর সাহসী ধরনের মেয়ে। কিন্তু তাই বলে সাহেবালির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাহবা দেয়া বেশ কঠিন ছিল ওর জন্য। নিজের মা-বাবা ভাইবোনদের পরিস্থিতি থেকেই কলমি জানত বেঁচে থাকা সমূহ কঠিন এবং বিস্ময়কর একটা ঘটনা। এবং বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে বের করা সহজ কাজ বিশেষ না। সেই উপায়গুলোই যখন পরম আয়েশে সাহেবালি সকালে একটা আর বিকালে একটা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করেছিল তখন কলমির আতঙ্কিত না হয়ে উপায় ছিল না। বিয়ের এক বছরের মাথাতে পলান চলে এসে কলমির আতঙ্কটাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল কেবল। সাহেবালিও তখন নানারকম স্বঘোষিত ছুটি নিয়ে বাসায় বসে সময় কাটানো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
একেক সময় কলমির মনে হয়েছে বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণাটা সাহেবালি গভীরভাবে বোঝে বলেই এরকম খ্যাপা। আবার অন্য সময়ে তার একদম অন্য কথা মনে হয়। তখন মনে হয় বেঁচে থাকাটাকে কিছুতেই যন্ত্রণার হতে দিতে চায় না সাহেবালি, তাই সে অমন আউলা। আবার আরেক সময়ে কলমির মনে হয় সাহেবালি বেঁচে-থাকা নিয়ে এক পরম পরিহাস রচনা করতে চায়। এই সংকল্পে অবিচল বলেই ওর অফুরান প্রাণশক্তি। সাহেবালির সঙ্গে সংসারে কলমি যত দিন-গুজরান করেছে, ততই নিস্পৃহ হতে শিখেছে। একরকম প্রসন্নতাই সেটা। দিনকে দিন সে সাহেবালির এই খ্যাপামির একজন অন্তরঙ্গ গ্রাহক হয়ে পড়েছে, আর গভীর মমত্ব তৈরি হয়েছে তার লোকটাকে নিয়ে। একটা কারণ হলো সে নিজেও সেখানে বাৎসল্যেই থাকে। আর পলির জন্মের পর সাহেবালি যে তাকে খাবার-বড়ি নিয়ে এসে দিয়েছে সেটা নিয়ে সে পরম কৃতজ্ঞও বটে।
সাহেবালির প্রাণশক্তি নিয়েই এখন সে বেশি মনোযোগী। নাহলে যে-মাত্র একটা কোনো রুজির ব্যবস্থায় সাহেবালি দু’চার কদম আগায় সেখান থেকেই পরিত্রাণের জন্য তার নিঃসীম ব্যাকুলতা দেখে কলমির ঝগড়া বাধানোর কথা। কলমি ঝগড়া বাধায় না। সাহেবালিকে তার বিশেষ ঝগড়ার উপযোগীও মনে হয় না। চরম অপছন্দের মুহূর্তে ঘাড়-গোঁজ করে বসে থাকা ছাড়া উচ্চকিত কোনো ঝগড়া করতে সাহেবালিকে বিশেষ পারঙ্গম তখন একদমই মনে হয় না। অবশ্য কলমি জানে এটা একটা অস্ত্র ওর। না হলে হাত-পা নাচিয়ে ঝগড়া করতে সাহেবালির জুড়ি নেই। কোনো একটা কাজ থেকে যখন সে অবসর নিয়ে আসে, প্রায়শঃই সেটা একটা ঝগড়া দিয়ে শেষ করে। কলমি বহুবার বলেছে ‘কাম করবা না ভাল কথা। তুমি তো মন ঠিক কইরেই গ্যাছো। গ্যাছো না? তো ঝগড়া বাধানোর কাম কী?’ সাহেবালি সেসবে দমে না: ‘এ্যাগোরে চিনস তুই? ঝগড়া কী? আমার তো পোরতি দিন মাইরে ফ্যালাইতে মন লয়।’ কলমি আর কথা আগায় না। কলমির এরকমও মনে হয় যে কাজ ছাড়াটা আসলে বাহানা। ওই ঝগড়াটা করতে চায় বলেই ও কাজ ছাড়ে। কিন্তু কলমির ভয় ধরে। চড় থাপ্পড় তো নিত্য নৈমিত্তিক! কিন্তু কোনোদিন যদি ওরা সাহেবালিকে আচ্ছামতো পেটায়! সে কথাও বলেছে। কিন্তু সাহেবালির সোজা উত্তর -- ‘ও এমনিতেই মাইরতিছে। তুই বুধয় ট্যার পাস না।’
এতকিছুর পরও আধপেটা খেয়ে আর এখানে সেখানে খুচরা কাজ করে কলমির জমানো দু’ হাজার টাকায় সাহেবালি যখন ঘোড়াটা কিনতে মনস্থির করে, কলমি মানা না করে পারেনি। সাহেবালি বরাবরের মতো উৎসাহী হয়ে কলমিকে বুঝিয়েছে কীভাবে এই ঘোড়ার সঙ্গে একটা গাড়ি লাগিয়ে সাবলম্বী হয়ে যাবে সে। শহরের প্রান্তে সেই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সে সংসার চালাবে। এবং, ফলতঃ, তাদের জীবনে নিশ্চিন্ত একটা বেঁচে-থাকার-উপায় হয়ে যাবে এটা। এরপর সাহেবালি আর নতুন কোনো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না। কলমি সেটা বিশ্বাস করেছে সে ভরসা তার চোখের দিকে তাকিয়ে সাহেবালির একটুও হয়নি। তখন সে আবার গোড়া থেকে ঘোড়ার-গাড়ির উপকারিতা বিষয়ে একটা আলোচনা শুরু করল। তবে এবারে অনেক অনুচ্চ গলায় এবং খুবই নড়বড়ে ভাবে। কলমি সেটাও পুরোটা বসে থেকে শুনল। তারপর যে দু’চার গ্রাশ ভাত তখনো ছিল তা সাহেবালিকে খাবার জন্য বেড়ে দিল। সাহেবালি সেখান থেকে আবার অর্ধেকটা প্রায় জোর করেই কলমিকে খাইয়ে দিল। আধপেটা খাওয়া বা না-খাওয়া কলমির নৈমিত্তিক অভ্যাস। আসলে সাহেবালিরও তাই। কেবল দু’ হাজার টাকাটাই কলমির খচখচ করছিল। পেটের ব্যথা যখন ওর খুব বাড়ে তখনো এই টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা মাথায় আসে না কলমির।
ঘোড়ার গাড়ি
যাকে এইরকম গুরুতর একটা দায়িত্বে মুখ্য অনু-ঘোটক বানিয়ে আনা হয়েছে, সেই ঘোড়া কিন্তু গাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানে না। অন্ততঃ সাহেবালি পড়শিদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবার আগ পর্যন্ত। সাহেবালিও নাচার। তার পক্ষেও সম্ভব ছিল না গাড়িটাকে নিয়ে এসে ঘোড়াটার সামনে রাখা যাতে ঘোড়াটা তার গাড়ি জানতে পারে। গাড়িটা যে ঘোড়ার তাতে সাহেবালির সন্দেহ ছিল না, কিন্তু সম্প্রদান করবার জন্য গাড়িটা তখনো সাহেবালির ছিল না। কোথাও নেই সেটা। ঘোড়ার আগে সে গাড়ি আনেনি।
শলা-পরামর্শ বিশেষ করবার লোক সাহেবালি নয়। কলমি বাদে যে ক’জন ইয়ার-পড়শিকে সে ঘোড়ার গাড়ি বিষয়ে আগাম জানিয়েছিল তাদের কেউই সাহেবালিকে উৎসাহ দেয়নি। ‘এ্যাদ্দিন কিছু হয় নাই, এহন ঘোড়ার গাড়ির পেছনে পড়ছ?’ এই সব নৈরাশ্যব্যঞ্জক কথাবার্তা শুনলে সাহেবালির গা জ্বলে যায়। অন্য দু’চার জন অবশ্য সংকটটার গভীরে যাবার চেষ্টা করেছে। ‘এতগুলান টাকা আবার খরচ করবা?’ এই ভাবনাটা যেহেতু সাহেবালি নিজেও ভেবেছে, পরন্তু টাকাটা আবার কলমির, ফলে সে মাথা নিচু করে এই বক্তব্য শুনেছে। অন্য দু’ একজন একদম বাস্তব সমস্যা সামনে নিয়ে এসেছে। ‘ঢাকার শহরে তোমারে ঘোড়ার গাড়ি চালাইতে দেবে?’ সাহেবালির সাফ জবাব। ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল? ঘোড়া কি মাইনষের থিকাও খারাপ? মাইনষের ঠেলাগাড়ি যদি ঢাকার শহরে চালাইতে দ্যায়, আমার ঘোড়ার কিয়ের দোষ?’ সাহেবালির ইয়ার-পড়শিরা তার বুদ্ধি-বিবেচনা নিয়ে কখনোই তারিফ করে না। কিন্তু এ দফা সাহেবালির এই প্রশ্নটা যে শক্ত তা তারা স্বীকার করে নিয়েছে সবাই। ঠিকই তো! মানুষে টানা ঠেলাগাড়ি তো ঢাকাতে আছেই। ঘোড়ার গাড়ি চলবে না কেন? সাহেবালি অবশ্য সবাইকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যে শহরের মধ্যখানে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে যাবে না। গাবতলীর বাজারে কাঁচামাল নেয়া আনা করবে। অল্প স্বল্প ইট বালি যাদের লাগে, সেইসব সে টানবে। আর যদি কেউ শখ করে ঘোড়ার গাড়িতে করে চিড়িয়াখানা বা বোটানিক্যাল গার্ডেন যেতে চায় তো নিয়ে যাবে। পাড়ার লোক বলে সে বেশি ভাড়াও নেবে না। মোটামুটি পরিকল্পনা তার পাকাই দেখতে পেল সবাই।
ঘোড়াটা সাহেবালিদের বাসায় আসার তিন-চার দিনের মাথাতেই একটা গাড়ি ঘোড়ার পাছায়, আসলে কাঁধে, বেঁধে দেয়া হলো। বাঁশ দিয়ে বানানো জোড়াতালির একটা গাড়ি। নতুন প্রাপ্ত এই নিরঙ্কুশ মালিকানার অবশিষ্টটি তার পাছায় লাগানো হয়েছে দেখে ঘোড়াটা যে বিশেষ খুশি হলো তা কিন্তু মনে হয় নি। বরং এই প্রাপ্তিতে এক ধরনের ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই সে থাকল। খুব একটা পিছন ফিরে দেখারও চেষ্টা করল না কীসের সে মালিক হয়েছে। ঘোড়ার এই ভ্যাবদা-মারা অবস্থা দিনকে দিন বাড়তেই থাকল যখন তারই সেই মালিকানাধীন গাড়িতে সাহেবালি চড়ে বসে এখানে সেখানে নিয়ে যেতে শুরু করল। এটা তখন নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য ছিল যে শহর-প্রান্তের কোনো রাস্তার মাঝখানে ঘোড়াটা গাড়িভর্তি বালি নিয়ে, কিংবা পুঁইশাক আর কুমড়া নিয়ে, ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস টানছে। আর সাহেবালি ঘোড়ার ঘাড়ে, ল্যাজে, কানে টানাটানি বা গুঁতোগুঁতি করে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে দাঁড়িয়ে থাকা তার কাজ নয়।
যাকে এইরকম গুরুতর একটা দায়িত্বে মুখ্য অনু-ঘোটক বানিয়ে আনা হয়েছে, সেই ঘোড়া কিন্তু গাড়ি সম্পর্কে কিছুই জানে না। অন্ততঃ সাহেবালি পড়শিদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবার আগ পর্যন্ত। সাহেবালিও নাচার। তার পক্ষেও সম্ভব ছিল না গাড়িটাকে নিয়ে এসে ঘোড়াটার সামনে রাখা যাতে ঘোড়াটা তার গাড়ি জানতে পারে। গাড়িটা যে ঘোড়ার তাতে সাহেবালির সন্দেহ ছিল না, কিন্তু সম্প্রদান করবার জন্য গাড়িটা তখনো সাহেবালির ছিল না। কোথাও নেই সেটা। ঘোড়ার আগে সে গাড়ি আনেনি।
শলা-পরামর্শ বিশেষ করবার লোক সাহেবালি নয়। কলমি বাদে যে ক’জন ইয়ার-পড়শিকে সে ঘোড়ার গাড়ি বিষয়ে আগাম জানিয়েছিল তাদের কেউই সাহেবালিকে উৎসাহ দেয়নি। ‘এ্যাদ্দিন কিছু হয় নাই, এহন ঘোড়ার গাড়ির পেছনে পড়ছ?’ এই সব নৈরাশ্যব্যঞ্জক কথাবার্তা শুনলে সাহেবালির গা জ্বলে যায়। অন্য দু’চার জন অবশ্য সংকটটার গভীরে যাবার চেষ্টা করেছে। ‘এতগুলান টাকা আবার খরচ করবা?’ এই ভাবনাটা যেহেতু সাহেবালি নিজেও ভেবেছে, পরন্তু টাকাটা আবার কলমির, ফলে সে মাথা নিচু করে এই বক্তব্য শুনেছে। অন্য দু’ একজন একদম বাস্তব সমস্যা সামনে নিয়ে এসেছে। ‘ঢাকার শহরে তোমারে ঘোড়ার গাড়ি চালাইতে দেবে?’ সাহেবালির সাফ জবাব। ‘দুর মিয়া! এইড্যা এড্ডা ব্যাপার অইল? ঘোড়া কি মাইনষের থিকাও খারাপ? মাইনষের ঠেলাগাড়ি যদি ঢাকার শহরে চালাইতে দ্যায়, আমার ঘোড়ার কিয়ের দোষ?’ সাহেবালির ইয়ার-পড়শিরা তার বুদ্ধি-বিবেচনা নিয়ে কখনোই তারিফ করে না। কিন্তু এ দফা সাহেবালির এই প্রশ্নটা যে শক্ত তা তারা স্বীকার করে নিয়েছে সবাই। ঠিকই তো! মানুষে টানা ঠেলাগাড়ি তো ঢাকাতে আছেই। ঘোড়ার গাড়ি চলবে না কেন? সাহেবালি অবশ্য সবাইকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে যে শহরের মধ্যখানে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে যাবে না। গাবতলীর বাজারে কাঁচামাল নেয়া আনা করবে। অল্প স্বল্প ইট বালি যাদের লাগে, সেইসব সে টানবে। আর যদি কেউ শখ করে ঘোড়ার গাড়িতে করে চিড়িয়াখানা বা বোটানিক্যাল গার্ডেন যেতে চায় তো নিয়ে যাবে। পাড়ার লোক বলে সে বেশি ভাড়াও নেবে না। মোটামুটি পরিকল্পনা তার পাকাই দেখতে পেল সবাই।
ঘোড়াটা সাহেবালিদের বাসায় আসার তিন-চার দিনের মাথাতেই একটা গাড়ি ঘোড়ার পাছায়, আসলে কাঁধে, বেঁধে দেয়া হলো। বাঁশ দিয়ে বানানো জোড়াতালির একটা গাড়ি। নতুন প্রাপ্ত এই নিরঙ্কুশ মালিকানার অবশিষ্টটি তার পাছায় লাগানো হয়েছে দেখে ঘোড়াটা যে বিশেষ খুশি হলো তা কিন্তু মনে হয় নি। বরং এই প্রাপ্তিতে এক ধরনের ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই সে থাকল। খুব একটা পিছন ফিরে দেখারও চেষ্টা করল না কীসের সে মালিক হয়েছে। ঘোড়ার এই ভ্যাবদা-মারা অবস্থা দিনকে দিন বাড়তেই থাকল যখন তারই সেই মালিকানাধীন গাড়িতে সাহেবালি চড়ে বসে এখানে সেখানে নিয়ে যেতে শুরু করল। এটা তখন নিত্য-নৈমিত্তিক দৃশ্য ছিল যে শহর-প্রান্তের কোনো রাস্তার মাঝখানে ঘোড়াটা গাড়িভর্তি বালি নিয়ে, কিংবা পুঁইশাক আর কুমড়া নিয়ে, ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস টানছে। আর সাহেবালি ঘোড়ার ঘাড়ে, ল্যাজে, কানে টানাটানি বা গুঁতোগুঁতি করে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে দাঁড়িয়ে থাকা তার কাজ নয়।
পলানের পালানো
পালানো বলা হলো বটে, কিন্তু পলানের পালানো নিয়ে পড়শিদের মধ্যে গুরুতর মতভেদ আছে। একদলের মতে, পলান ওর খ্যাপাটে বাবার অনাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজের জীবন নিজে গড়ে নিতে পালিয়েছে। শহরের কোথাও সে আপাততঃ গা-ঢাকা দিয়েছে। সাহেবালি যদি কিছুমাত্র দায়িত্ববান এই এতদিনেও হয়ে থাকে তাহলে তার উচিত হবে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে তাকে খুঁজে বের করা। অন্যদল এই প্রস্তাবে একেবারেই গা করেনি। তাদের বক্তব্য হলো, সাহেবালি আসলে পলানকে খুবই ভালবাসে। আর পলানের মতো বিচক্ষণ ছেলে এই অবস্থায় বাবাকে একা ফেলে পালানোর মতো নয়। ওকে আসলে ছেলেধরারা নিয়ে গেছে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান কোনো জায়গায় পাচার করা হয়েছে পলানকে। তাদের কিছুই করার নেই। সকলের দোয়া করা উচিত যাতে পলান সহি-সালামতে হাত-পা সহ বেঁচে থাকে। তিন নম্বর থিসিসটা আরো মর্মন্তুদ। সেই অনুসারীদের মতে, পলান ওর মা আর বোনের মরে যাওয়ার কষ্টে পাগল হয়ে গেছিল। কোথাও হারিয়ে গেছে। এখন ও আর চিনে বাবার কাছে আসতে পারছে না। পাড়ার দোকানের সামনে বসে এই ধরনের নানামুখী আলাপ-আলোচনায় পড়শিরা সবাই ন্যস্ত থাকে। কেবল যে লোকটা এসব বিষয়ে কিছুই বলে না, আসলে কোনোকিছু নিয়েই আর কিছু বলে না, সে হচ্ছে সাহেবালি। ঘোড়াটা আসবার বছর তিনেক পরের ঘটনা এগুলো।
পলি মারা গেছিল তিন দিনের জ্বরে। সেই জ্বরে পড়ার দিন থেকেই সাহেবালি দৌড়াদৌড়ি করেছে। ওষুধপত্তর এনেছে। কিন্তু জ্বরে যে একটা মানুষ মরে যেতে পারে সেটা খুব মাথায় তার ছিল না। তবে মাথায় থাকলেও দৌড়াদৌড়ি করা আর কিছু ওষুধপত্তর আনা ছাড়া ভিন্ন কিছু সাহেবালি করত কিনা বলা মুস্কিল। পলি মরে গেলে পলান এক সপ্তাহ স্কুলে যায়নি। তবে কলমি মারা যাবার সময় সাহেবালি এবং পলান তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত আনতে পেরেছিল। ‘পেটে ব্যথা’ ‘পেটে ব্যথা’ বলতে বলতে কলমি যেদিন থেকে চেঁচামেচি করতে শুরু করেছিল সেদিনই সাহেবালি আর পলান তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সাহেবালি খুব ভালই জানত কলমি ঠিক চেঁচিয়ে পাড়া-মাথায় করবার মেয়ে না। পড়শিরা অনেকেই যদিও ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে যেতেই বলছিল, কিন্তু সাহেবালি একটা রিকশাই ডাকে। হাসপাতালে কলমি ছিল পাঁচ দিন। পুরাটা সময় সাহেবালি তো ছিলই, কলমি পলানকে কাছ-ছাড়া করত না। কেবল পলানের হাত ধরে রেখে শুয়ে থাকত। ওর দু’ চোখের কোণা দিয়ে এক ফোঁটা দু’ ফোঁটা পানি গড়াত। কাঁদত পলানও।
ফলে পলানের পালানো বিষয়ে শেষের থিসিসটার বিশেষ শক্তিমত্তা লক্ষ্য করা যায়। যদিও, ক’দিন পরপরই কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও, পলানকে দেখেছে বলে দাবি করত। কিন্তু সাহেবালিকে আরেকটু গুছিয়ে কেউই কোনো তথ্য কখনো দিতে পারেনি। যাবার আগে, অথবা ছেলেধরারা নিয়ে যাবার আগে, পলান তার ঘোড়া-বিষয়ক রচনাটার একটা পরিমার্জিত সংস্করণ করেছিল। সেটা জানা যায় কারণ পলানের অন্তর্ধানের পর সাহেবালি পলানের যাবতীয় জিনিস-পত্র টেনে-হেঁচড়ে বের করেছে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। পলানের নানারকম রচনা নিয়ে সে পাড়ার দোকানে এসেছিল। পলানের বিচক্ষণতায় যে ক’জন পড়শি মোহিত ছিল তারা সেগুলো নাড়াচাড়া করেছে। যারা পড়তে জানে তারা পড়েও শুনিয়েছে। এর মধ্যে ঘোড়া বিষয়ক রচনাটাই সাহেবালির বেশি মনে ধরেছে। ইদানীং সাহেবালি সেটা সঙ্গে করেই রাখে। রচনাটা পলান শেষ করেছে এভাবে -- “... আর ঘোড়াদের জীবনে ভারি দুঃখ। তাদের মা থাকে না। থাকলেও কাছে থাকে না। তাছাড়া এখন মানুষেরা খুব বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় ঘোড়া খুবই কম। ফলে ঘোড়াদের অনেক বোঝা টানতে হয়। ঘোড়া আর মানুষ সমান হলে ভাল হয়।”
পালানো বলা হলো বটে, কিন্তু পলানের পালানো নিয়ে পড়শিদের মধ্যে গুরুতর মতভেদ আছে। একদলের মতে, পলান ওর খ্যাপাটে বাবার অনাচারে অতিষ্ট হয়ে নিজের জীবন নিজে গড়ে নিতে পালিয়েছে। শহরের কোথাও সে আপাততঃ গা-ঢাকা দিয়েছে। সাহেবালি যদি কিছুমাত্র দায়িত্ববান এই এতদিনেও হয়ে থাকে তাহলে তার উচিত হবে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে তাকে খুঁজে বের করা। অন্যদল এই প্রস্তাবে একেবারেই গা করেনি। তাদের বক্তব্য হলো, সাহেবালি আসলে পলানকে খুবই ভালবাসে। আর পলানের মতো বিচক্ষণ ছেলে এই অবস্থায় বাবাকে একা ফেলে পালানোর মতো নয়। ওকে আসলে ছেলেধরারা নিয়ে গেছে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান কোনো জায়গায় পাচার করা হয়েছে পলানকে। তাদের কিছুই করার নেই। সকলের দোয়া করা উচিত যাতে পলান সহি-সালামতে হাত-পা সহ বেঁচে থাকে। তিন নম্বর থিসিসটা আরো মর্মন্তুদ। সেই অনুসারীদের মতে, পলান ওর মা আর বোনের মরে যাওয়ার কষ্টে পাগল হয়ে গেছিল। কোথাও হারিয়ে গেছে। এখন ও আর চিনে বাবার কাছে আসতে পারছে না। পাড়ার দোকানের সামনে বসে এই ধরনের নানামুখী আলাপ-আলোচনায় পড়শিরা সবাই ন্যস্ত থাকে। কেবল যে লোকটা এসব বিষয়ে কিছুই বলে না, আসলে কোনোকিছু নিয়েই আর কিছু বলে না, সে হচ্ছে সাহেবালি। ঘোড়াটা আসবার বছর তিনেক পরের ঘটনা এগুলো।
পলি মারা গেছিল তিন দিনের জ্বরে। সেই জ্বরে পড়ার দিন থেকেই সাহেবালি দৌড়াদৌড়ি করেছে। ওষুধপত্তর এনেছে। কিন্তু জ্বরে যে একটা মানুষ মরে যেতে পারে সেটা খুব মাথায় তার ছিল না। তবে মাথায় থাকলেও দৌড়াদৌড়ি করা আর কিছু ওষুধপত্তর আনা ছাড়া ভিন্ন কিছু সাহেবালি করত কিনা বলা মুস্কিল। পলি মরে গেলে পলান এক সপ্তাহ স্কুলে যায়নি। তবে কলমি মারা যাবার সময় সাহেবালি এবং পলান তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত আনতে পেরেছিল। ‘পেটে ব্যথা’ ‘পেটে ব্যথা’ বলতে বলতে কলমি যেদিন থেকে চেঁচামেচি করতে শুরু করেছিল সেদিনই সাহেবালি আর পলান তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সাহেবালি খুব ভালই জানত কলমি ঠিক চেঁচিয়ে পাড়া-মাথায় করবার মেয়ে না। পড়শিরা অনেকেই যদিও ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে যেতেই বলছিল, কিন্তু সাহেবালি একটা রিকশাই ডাকে। হাসপাতালে কলমি ছিল পাঁচ দিন। পুরাটা সময় সাহেবালি তো ছিলই, কলমি পলানকে কাছ-ছাড়া করত না। কেবল পলানের হাত ধরে রেখে শুয়ে থাকত। ওর দু’ চোখের কোণা দিয়ে এক ফোঁটা দু’ ফোঁটা পানি গড়াত। কাঁদত পলানও।
ফলে পলানের পালানো বিষয়ে শেষের থিসিসটার বিশেষ শক্তিমত্তা লক্ষ্য করা যায়। যদিও, ক’দিন পরপরই কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও, পলানকে দেখেছে বলে দাবি করত। কিন্তু সাহেবালিকে আরেকটু গুছিয়ে কেউই কোনো তথ্য কখনো দিতে পারেনি। যাবার আগে, অথবা ছেলেধরারা নিয়ে যাবার আগে, পলান তার ঘোড়া-বিষয়ক রচনাটার একটা পরিমার্জিত সংস্করণ করেছিল। সেটা জানা যায় কারণ পলানের অন্তর্ধানের পর সাহেবালি পলানের যাবতীয় জিনিস-পত্র টেনে-হেঁচড়ে বের করেছে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। পলানের নানারকম রচনা নিয়ে সে পাড়ার দোকানে এসেছিল। পলানের বিচক্ষণতায় যে ক’জন পড়শি মোহিত ছিল তারা সেগুলো নাড়াচাড়া করেছে। যারা পড়তে জানে তারা পড়েও শুনিয়েছে। এর মধ্যে ঘোড়া বিষয়ক রচনাটাই সাহেবালির বেশি মনে ধরেছে। ইদানীং সাহেবালি সেটা সঙ্গে করেই রাখে। রচনাটা পলান শেষ করেছে এভাবে -- “... আর ঘোড়াদের জীবনে ভারি দুঃখ। তাদের মা থাকে না। থাকলেও কাছে থাকে না। তাছাড়া এখন মানুষেরা খুব বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় ঘোড়া খুবই কম। ফলে ঘোড়াদের অনেক বোঝা টানতে হয়। ঘোড়া আর মানুষ সমান হলে ভাল হয়।”
ঘোড়ারোগ
সাহেবালি আর ঘোড়াটার মধ্যে আগে কার রোগ হয়েছে বা ধরা পড়েছে সেটা বলা খুব মুস্কিল। বয়সের হিসাবে সাহেবালিরই হবার কথা। সাহেবালির বয়স তখন প্রায় ৪০ হয়েছে। ঘোড়াটার বয়স কিছুতেই চল্লিশ হবে না। তাছাড়া সব সময়ে বয়সের হিসাব খাটেও না। যেমন কলমি ৩৩ হতে না হতেই মরে গেল। পলি মরল ৮ ডিঙিয়েই। তারপরও যেহেতু ঘোড়াটা আর সাহেবালি প্রায় একধরনেরই কাজ করত, আর দুজনেই পুরুষ -- একটা তুলনামূলক খতিয়ান হতেই পারে। শেষের একটা বছরে আসলে সাহেবালিকেই বেশি রুগ্ন মনে হতো। কিন্তু সেটার একটা কারণ হতে পারে সাহেবালিকেই লক্ষ্য করা হতো বেশি। নাহলে ঘোড়াটা যে সারাটা সময় মাথা নামিয়ে রাখছে, ফোঁস ফোঁস করে ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে, আর এমনকি চোখ দিয়ে কিছু পানিও গড়ায় সেগুলো খেয়াল করবার মতোই ছিল। অন্ততঃ সাহেবালি সেটা নিরন্তর খেয়াল করেছে। আর ওর আপাতঃ খালি বুকটা ভ’রে ঘোড়াটার জন্য বাৎসল্য জেগে উঠত। ঘোড়াটার গলায় তখন হাত বুলিয়ে আদর করে দিত সাহেবালি। পাশে যে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত তখন তাকে সেই কথা বলতেও সে ভুলত না। ‘ঘোড়াডার শরীল এক্কেরে গ্যাছে।’ মানুষে তথাপি ঘোড়ার শরীর নিয়ে বিশেষ চিন্তিত হয় না। বলে -- ‘নিজের শরীল দ্যাখছ?’ পরের দিকে সাহেবালি একা একাই ঘোড়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিলাপ করেছে। বা ঠিক একা নয়, করেছে আসলে ঘোড়াটারই সাথে।
যে রাত্রে পলিথিনের ছাবড়ার নিচে ঘোড়াটা কেবল ডাকতে থাকল, সাহেবালির তখন বেজায় জ্বর আর দাস্ত। তারই মধ্যে সে লাগোয়া বাসার সবগুলোতে গিয়ে গিয়ে খবর দিয়েছে ‘ঘোড়াডার অবস্থা কইলাম ভাল না। তোমরা একটু দেইখো। আমার শরীলডা সুবিদা যাইতাছে না।’ বংশীর বউ সাহেবালিকে বসিয়ে ভাতের মাড়ে ভাত মেখে, লেবু দিয়ে খাওয়াল।
সকালে সাহেবালি ঘোড়ার ডাক আর শোনে না। কুঁজো হয়ে সে বাইরে আসে। পড়শিদের দু’চার জন দেখেছে। তারা সাহেবালির জন্যই অপেক্ষা করছিল। বাঁশে ঘোড়াটাকে বেঁধে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে। সকলেই সাহেবালিকে মানা করছে। ‘তোমার শরীলে তো খাড়াইতেই পার না। ক্যান তুমার ঘোড়া আমরা ঠিকমতো মাটি দিমু না?’ সাহেবালিও বলে ‘দুর মিয়া! তোমরা আছ বইলাই তো ভরসা। শরীল এড্ডা ব্যাপার অইল? আমার ঘোড়া আমার কান্ধে না উঠলে জবাব দিব কী?’
এর নয়দিন বাদে পড়শিরা যখন জানাজা শেষ করে দোকানের সামনে আসল তখনই কেবল তাদের সাহেবালির স্মৃতিচারণ করার সুযোগ হলো। জানাজাটা কর্তব্য, কিন্তু লোকটাকে নিয়ে জানাজায় তো আর মন খুলে আলাপ করা যায় না। এই
বস্তির মোড় বা দোকানই তাদের ভাল। সাহেবালিকে নিয়ে কথা বলতে বসে, এই প্রথম বরং, তারা ঘোড়াটা নিয়েই আলাপ করে। যে সাহেবালি ঘোড়াটার স্বাস্থ্য নিয়ে কাউকেই তেমন চিন্তিত করাতে পারেনি, উল্টো লোকজন তার দিকেই দেখাত, সেই সাহেবালি মরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পড়শিরা সবাই একমত -- ‘ঘোড়াডার কপাল রে ভাই! এই মরাডা যদি হ্যায় আগে মরত ...।’
দোকানদার চার টাকার সুজি মাপছিল পাল্লায়। সে সবাইকে পলানের রচনাটার কথা মনে করিয়ে দেয়।
সাহেবালি আর ঘোড়াটার মধ্যে আগে কার রোগ হয়েছে বা ধরা পড়েছে সেটা বলা খুব মুস্কিল। বয়সের হিসাবে সাহেবালিরই হবার কথা। সাহেবালির বয়স তখন প্রায় ৪০ হয়েছে। ঘোড়াটার বয়স কিছুতেই চল্লিশ হবে না। তাছাড়া সব সময়ে বয়সের হিসাব খাটেও না। যেমন কলমি ৩৩ হতে না হতেই মরে গেল। পলি মরল ৮ ডিঙিয়েই। তারপরও যেহেতু ঘোড়াটা আর সাহেবালি প্রায় একধরনেরই কাজ করত, আর দুজনেই পুরুষ -- একটা তুলনামূলক খতিয়ান হতেই পারে। শেষের একটা বছরে আসলে সাহেবালিকেই বেশি রুগ্ন মনে হতো। কিন্তু সেটার একটা কারণ হতে পারে সাহেবালিকেই লক্ষ্য করা হতো বেশি। নাহলে ঘোড়াটা যে সারাটা সময় মাথা নামিয়ে রাখছে, ফোঁস ফোঁস করে ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে, আর এমনকি চোখ দিয়ে কিছু পানিও গড়ায় সেগুলো খেয়াল করবার মতোই ছিল। অন্ততঃ সাহেবালি সেটা নিরন্তর খেয়াল করেছে। আর ওর আপাতঃ খালি বুকটা ভ’রে ঘোড়াটার জন্য বাৎসল্য জেগে উঠত। ঘোড়াটার গলায় তখন হাত বুলিয়ে আদর করে দিত সাহেবালি। পাশে যে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত তখন তাকে সেই কথা বলতেও সে ভুলত না। ‘ঘোড়াডার শরীল এক্কেরে গ্যাছে।’ মানুষে তথাপি ঘোড়ার শরীর নিয়ে বিশেষ চিন্তিত হয় না। বলে -- ‘নিজের শরীল দ্যাখছ?’ পরের দিকে সাহেবালি একা একাই ঘোড়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিলাপ করেছে। বা ঠিক একা নয়, করেছে আসলে ঘোড়াটারই সাথে।
যে রাত্রে পলিথিনের ছাবড়ার নিচে ঘোড়াটা কেবল ডাকতে থাকল, সাহেবালির তখন বেজায় জ্বর আর দাস্ত। তারই মধ্যে সে লাগোয়া বাসার সবগুলোতে গিয়ে গিয়ে খবর দিয়েছে ‘ঘোড়াডার অবস্থা কইলাম ভাল না। তোমরা একটু দেইখো। আমার শরীলডা সুবিদা যাইতাছে না।’ বংশীর বউ সাহেবালিকে বসিয়ে ভাতের মাড়ে ভাত মেখে, লেবু দিয়ে খাওয়াল।
সকালে সাহেবালি ঘোড়ার ডাক আর শোনে না। কুঁজো হয়ে সে বাইরে আসে। পড়শিদের দু’চার জন দেখেছে। তারা সাহেবালির জন্যই অপেক্ষা করছিল। বাঁশে ঘোড়াটাকে বেঁধে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হবে। সকলেই সাহেবালিকে মানা করছে। ‘তোমার শরীলে তো খাড়াইতেই পার না। ক্যান তুমার ঘোড়া আমরা ঠিকমতো মাটি দিমু না?’ সাহেবালিও বলে ‘দুর মিয়া! তোমরা আছ বইলাই তো ভরসা। শরীল এড্ডা ব্যাপার অইল? আমার ঘোড়া আমার কান্ধে না উঠলে জবাব দিব কী?’
এর নয়দিন বাদে পড়শিরা যখন জানাজা শেষ করে দোকানের সামনে আসল তখনই কেবল তাদের সাহেবালির স্মৃতিচারণ করার সুযোগ হলো। জানাজাটা কর্তব্য, কিন্তু লোকটাকে নিয়ে জানাজায় তো আর মন খুলে আলাপ করা যায় না। এই
বস্তির মোড় বা দোকানই তাদের ভাল। সাহেবালিকে নিয়ে কথা বলতে বসে, এই প্রথম বরং, তারা ঘোড়াটা নিয়েই আলাপ করে। যে সাহেবালি ঘোড়াটার স্বাস্থ্য নিয়ে কাউকেই তেমন চিন্তিত করাতে পারেনি, উল্টো লোকজন তার দিকেই দেখাত, সেই সাহেবালি মরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পড়শিরা সবাই একমত -- ‘ঘোড়াডার কপাল রে ভাই! এই মরাডা যদি হ্যায় আগে মরত ...।’
দোকানদার চার টাকার সুজি মাপছিল পাল্লায়। সে সবাইকে পলানের রচনাটার কথা মনে করিয়ে দেয়।
0 মন্তব্যসমূহ