গরুটারই চরিত্র ভালো নয়

মাহবুব আজাদ

সবাই আগেই টের পেয়েছিলো, গরুর শ্লীলতাহানির সালিশে বেদম মজা হবে। তাই বিকেলের দিকে এলাকার লোক সরোয়ার মেম্বারের বাড়ির প্রশস্ত উঠানে এক মহোৎসব বসিয়ে দিলো।

সরোয়ার মেম্বার স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে বসার সময়ই ফিসফাস চলছিলো রবাহূতদের মাঝে। গ্যালো ইউপি নির্বাচনে সরোয়ার মেম্বারের কানের পাশ দিয়ে গুলি গিয়েছিলো, সতেরো ভোটে হেরেছিলো মাঝাপাড়ার কালাম মেম্বার, সে তার স্যাঙাৎ শফিককে নিয়ে সালিশে মুরুব্বি হিসেবে উপস্থিত। খেলা না জমেই যায় না।

সরোয়ার মেম্বার কেবল প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার তালেব মাস্টার আর গ্রামের মসজিদের ইমাম মৌলবি সদরুদ্দিকে শুধিয়ে ফট করে রায় দিয়ে বসলো, ধর্ষিতা গরুটিকে কিনে নিতে হবে কিশোর মশিউরের বাপকে।

আর তখনই জমে উঠলো খেল।

মুরুব্বি কালাম সরোয়ার মেম্বারের বাড়ির ফিনফিনে সাদা কাপে পরিবেশিত চায়ে গগনবিদারী চুমুক দিয়ে গলা খাঁকরে বললো, কেন?

এই একটি প্রশ্নের পর গোটা সালিশ চুপ। শুধু একটু দূরে একটা লিচু গাছে এক বেয়াদপ কাঠঠোকরার সশব্দ অধ্যবসায় প্রথমবারের মতো সকলের মরমে পশলো।

সরোয়ার মেম্বার ঘাস খেয়ে মেম্বার হয়নি। সে পায়ের ওপর পা তুলে গম্ভীর গলায় বললো, সেইটাই দস্তুর। কোনো মেয়েছেলের উপর এই বলাৎকার ঘটে থাকলে আমরা বলতাম, দুইজনের বিবাহ দিয়ে দাও। সংসার করুক। এই লাফাঙ্গা মশিউর গিয়ে বলাৎকার করলো জাবেদ আলীর অবোলা গরুটাকে। এখন গরু তাকে কিনে নিতে হবে।

এবার সাদা কাপে বাজখাঁই চুমুকের পর শোনা গেলো কালামবন্ধু শফিকের মিহি গলার আওয়াজ, কেন?

সরোয়ার মেম্বার এবার তাকায় তালেব মাস্টারের দিকে। তালেব মাস্টার তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৌলবি সদরুদ্দি আড়চোখে হাতের ঘড়ি আর উঠানে গাছের ছায়া দেখেন। মাগরিবের ওয়াক্ত হতে দেরি আছে।

সরোয়ার বলে, আবার কেন বলেন কেন শফিক ভাই? মশিউর জাবেদ আলীর গরুর ইজ্জত লুটছে। এখন এই বেইজ্জত গরু নিয়া জাবেদ আলী কই যাবে?

জাবেদ আলী ফুঁপিয়ে ওঠে, আমার কাজলী গাইটারে হারামজাদা মশিউর দিনে দুপ্রে খোলা আসমানের নিচে একটা ঘন্টা ধরে ... ।

আর বলতে পারে না জাবেদ আলী, তার গলা ধরে আসে। জাবেদের প্রতিবেশিনী আসমা চেঁচিয়ে ওঠে, আমরা সবাই দেখেছি, হারামজাদা মশিউর কাজলী গাইটাকে একেবারে সর্বনাশ করে ছেড়ে দিছে। আরো সর্বনাশ করতো, কিন্তু আমরা দূর থেকে চিক্কুর দিয়ে বললাম, ওরে হারামজাদা তুই শুধু ঐখানে দাঁড়া তোর বিচি যদি হাঁসুয়া দিয়ে না ফেলছি ...।

সরোয়ার মেম্বার হাত তোলে, বুবু থামেন।

আসমা চুপ করে যায়। কাঠঠোকরাটাও থেমে যায় হঠাৎ। উঠানের মানুষ মৃদু গুঞ্জন করে ওঠে, না, সরোয়ার মেম্বার একটা মরদ বটে।

কালাম মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে মেম্বারির দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত থাকলেও সে লোকটা তো কালাম মেম্বারই, মেম্বারি তার রগে মজ্জায়। সে আরেকটি রসঘন চুমুক দেয় চায়ের কাপে, একটা কাঠবিড়ালি শিউরে উঠে তরতরিয়ে পালিয়ে যায় পেছনের কাঁঠাল গাছের উচ্চতর ডালে।

কালাম মেম্বার বলে, এক ঘণ্টা ধরে?

জাবেদ আলী ফোঁস করে ওঠে, হাঁ! কত্তবড় শুয়ার হলে একটা অবোলা জীবের ওপর একটা ঘণ্টা ধরে ...।

আবারও তার গলা ধরে আসে।

শফিক সপ্রশংস দৃষ্টিতে দূরে উঠানের মেঝেতে বসে থাকা মশিউরকে দেখে। কালাম মেম্বার বলে, এ তো পরিষ্কার মিছা কথা মেম্বার সাহেব। এক ঘণ্টা ধরে একা একটা বাচ্চা ছেলে এই কাম কীভাবে করবে?

সালিশের দর্শকদের মাঝে জোর গুঞ্জন ওঠে। তাই তো?

কালাম মেম্বার মৃদু হেসে বলে, এইখানে এক ঘণ্টা ধরে এই কাজ করার মতো কেউ আছেন? থাকলে হাত তোলেন।

মশিউরের পাশে বসে থাকা মশিউরের পিতা আলতাব খপ করে মশিউরের সরণোন্মুখ কব্জি চেপে ধরে। বাকি সবাই উসখুশ করে নড়েচড়ে বসে বা দাঁড়ায়।

সরোয়ার মেম্বার নিজের ঘরের কাপের চায়ে ভুরু কুঁচকে চুমুক দেয়। বলে, আপনি কী বলতে চান কালাম ভাই?

কালাম মেম্বার কাপের চা শেষ করে কাপ নামিয়ে রেখে গামছা দিয়ে ঠোঁট মোছে। তারপর হাসিমুখে বলে, এক ঘণ্টার কথা বাদই দিলাম। তিরিশ মিনিট কে কে পারবেন? হাত তোলেন।

মশিউর গর্বিত চোখে উপস্থিত ভিড়কে যাচাই করে। প্রৌঢ়রা মাথা নাড়ে, জাবেদ আলীর দাবিতে সত্যতার গন্ধটা একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসে।

তালেব মাস্টার গলা খাঁকরে বলেন, কিন্তু একটা শ্লীলতাহানি হয়েছে, এটা তো সত্য, নাকি? সাক্ষীর তো অভাব নাই।

কালাম মেম্বার মধুর হাসে। বলে, জাবেদ আলী জানলো কীভাবে, যে মশিউর তার আদরের কাজলী গাইকে এক ঘণ্টাব্যাপী শ্লীলতাহানি করেছে?

জাবেদ আলী গর্জে ওঠে, এই মশিউর হারামজাদারে যখন আমরা দৌড়ানি দিয়ে ধরলাম, তখন তো সে নিজেই স্বীকার করছে সব! আর ... আর ... এই যে আসমাবু দেখছে, সালেহাবু দেখছে, ঐ যে মনসুরের মেয়ে পপি সেও দেখছে নিজের চোখে, যে এই অমানুষ মশিউর কাজলীর উপর কী করে গিয়ে চড়াও হইছে!

কালাম মেম্বার হাসে। শফিকও হাসে।

সরোয়ার মেম্বার গম্ভীর গলায় বলে, হাসেন কেন কালাম ভাই?

এবার কালাম মেম্বার থেমে যায়। উঠানে সম্মিলিত শ্বাসের শব্দ হুট করে মিলিয়ে যায়। কাঠঠোকরাটা অনিশ্চিত কয়েকটা ঠোকর দেয় লিচু গাছের কাণ্ডে।

প্রতিটি শব্দ চিবিয়ে চিবিয়ে কালাম মেম্বার বলে, একটা ঘণ্টা ধরে যদি এই নামরদ দুধের কিশোর মশিউর জাবেদ আলীর কাজলী গাইয়ের সঙ্গে কিছু করেই থাকবে, তো কাজলী গাই কেন আপত্তি করলো না?

সবাই পার্শ্ববর্তীর মুখ দেখে। তাই তো?

কালাম মেম্বার বলে, কেন কাজলী গাই দুইটা হাম্বা হাম্বা বলে আশেপাশের গরুবাছুর বা মানুষকে জানান দিলো না, যে মশিউর তার শ্লীলতাহানি করতেছে?

তালেব মাস্টার অস্বস্তিভরে জাবেদ আলীর মুখ দেখেন। মৌলবি সদরুদ্দি আবারও আড়চোখে গাছের ছায়া আর হাতের ঘড়ি দেখে নেন।

শফিক বলে, একটা ঘণ্টা ধরে এই ঘটনা কাজলী গাই ঘটতে দিলো কেন? সে তো অন্য সময় হাম্বা হাম্বা ডাকে, এই একটা ঘণ্টা সে কেন চুপচাপ ছিলো? সে কি নিজের ইচ্ছায় অবোলা ছিলো তবে?

কালাম মেম্বার চাপা গর্জন করে বলে, জাবেদ আলী তোমার গাইটার চরিত্র ভালো না। এই কথা আর দশজনের সামনে এসে বলতে হবে, আমি কখনও কল্পনা করি নাই। কিন্তু সত্য কথা এইটাই। তুমি তোমার গাইরে সঠিক সহীহ তরিকায় বড় করতে পারো নাই।

মশিউর আর আলতাবের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

জাবেদ আলী চেঁচিয়ে ওঠে, তার মানে কী? আমার কাজলীর কী দোষ? সে ছিলো মাঠে বান্ধা, তারে ঘাস খাওয়ানোর জন্য আসমাবু নিয়া গেলো, তারপর আসমাবু বাড়ি ফিরলো দুইটা দানাপানি মুখে দেওয়ার জন্য। তারপর আবার মাঠে ফিরা গিয়া দেখে এই হারামজাদা মশিউর লুঙ্গি তুলে কাজলীরে ...।

আবার অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে থেমে যায় জাবেদ আলী।

কালাম মেম্বার হিংস্র হাসে, আড়চোখে সরোয়ার মেম্বারকে মাপে সে। বলে, আসমা যে বাড়ি ফিরা গেলো, দানাপানি মুখে দিলো, কাজলীর কাছ থেকে কোনো কমপেলেন কি সে এই সময়ের মধ্যে পাইছে? হ্যাঁ? তোমার কাজলীর চরিত্র যদি ভালোই হবে, সে কেন দুইটা লম্বা হাম্বা ডাক দিয়া আসমারে ডাকলো না?

জাবেদ আলী গর্জে ওঠে, আরে গাইয়ের আবার চরিত্র কী?

কালাম মেম্বার ঠা ঠা করে হেসে বলে, তাইলে গাইয়ের আবার শ্লীলতা কী?

সরোয়ার মেম্বার গলা চড়িয়ে বলে, কালাম ভাই, কথা প্যাঁচায়েন না বড় ভাই। মশিউর জাবেদ আলীর গাইরে কী করছে এইটা এখন অঞ্চলের বেবাক মানুষ জানে। এখন শাস্তির পালা, শাস্তি কী দিতে হবে সেটাই কন।

কালাম মেম্বার মৃদু হেসে বলে, আমি তো এইখানে কোনো অপরাধই দেখতে পাচ্ছি না মেম্বার সাহেব। একটা বাচ্চা ছেলে, একটা ডবকা গাইয়ের কাছ থেকে কী ইশারা পাইয়া এমন কাম করে, আপনিই বিচার করেন। এই বয়সে তো কত রকম ভুলই মানুষ করে। তাই বলে কি কাউরে জোর করে দুশ্চরিত্র গাইগরু বেইচা দিবেন নাকি? আমি তো বলি শাস্তি দিতে হইলে কাজলী গাইরেই পঞ্চাশটা দোররা মারার কাম। বেলেল্লা গরু, পর্দাপুশিদার কোনো ঠিক নাই।

আলতাব সম্মতিসূচক সজোর কাশি দেয়। মশিউর মৃদু হাসে। জনতা গুঞ্জন তোলে। কালাম মেম্বারের ধার কমে নাই। সতেরো ভোট কম পেয়েছে তো কী হয়েছে?

সরোয়ার মেম্বার অসহিষ্ণু গলায় বলে, এটা একটা কথা নাকি? একটা দামড়া ছেলে একটা নিরীহ গরুরে ধর্ষণ করবে আর আপনারা তার ওকালতি করবেন?

শফিক সরু গলায় বলে, ধর্ষণ তো হয় যদি ধরেন দুইজনের মধ্যে মতের অমিল থাকলে।

কালাম মেম্বার কথাটা টুক করে তুলে নেয়। বলে, জাবেদ আলীর বেলেল্লা কাজলী গাই যে অরাজি ছিলো, এইটা বুঝার উপায় কী গো মেম্বার সাহেব? একটা ঘণ্টা সে ইয়ে পেতে চুপচাপ দাঁড়ায়ে থাকলো, একটা হাম্বারব পর্যন্ত নাই। বেচারা মশিউরের উপর কী কষ্টটাই না গেছে এই একটা ঘণ্টা? কী রে মশিউর, কষ্ট পাস নাই?

মশিউর দাঁত বার করে হাসে।

আসমা চেঁচিয়ে ওঠে, গরু কবেত্থেকে মানুষের সঙ্গে এই কামে রাজি হওয়া শুরু করলো?

কালাম মেম্বার কড়া গলায় বলে, জাবেদ আলী, তোমার বুজিরে বলো চুপ থাকতে। ব্যাটাছেলেদের সালিশে জেনানারা কথা বলে কেন?

জাবেদ আলী কিছু বলে না, আগুনঝরা চোখে কেবল তাকায় কালামের দিকে।

আসমা তবু চেঁচায়, আরে আমি দেখলাম, সালেহাবু দেখলো, পপি দেখলো, তারপরও আপনেরা কন দোষ গাইটার?

কালাম মেম্বার চকিতে তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৃদু হেসে বলে, হুজুর, শুনলেন মেয়েলোকের কথা? আরে এইসব কেসে কমপক্ষে চারজন নারী সাক্ষী লাগে। তোমরা আছো তিনজন। তোমাগো চৌঠা সাক্ষী কই? আনো তারে। ডাকো এই সালিশে।

জাবেদ আলী ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মৌলবি সদরুদ্দির দিকে। মৌলবি সাহেব গলা খাঁকরে বলে, দ্যাখো কালাম, ব্যাপারটা হইতেছে গিয়ে ...।

কালাম মেম্বার গর্জে ওঠে, ব্যাপার পরে হবে মৌলবি সাহেব! আগে হাদিসকোরানের বিধানটা বলেন! জবরদস্তি চোদার কেসে নারী সাক্ষী কয়জন লাগে? চারজনের কমে হয় নাকি হয় না?

উঠানে জোর গুঞ্জন ওঠে। অভিজ্ঞরা সপ্রশংস চোখে কালাম মেম্বারকে দেখেন। একটা ফিসফাস ওঠে, আসমাদের বাড়ির মেয়েছেলেদের ভোটের কারণেই সতেরোটা ভোট কালাম মেম্বারের পাতে কম পড়েছে কি না।

সদরুদ্দি কেশে গলা সাফ করে নিয়ে বলেন, তা দ্বীনের বিধিতে চারজনই লাগে বটে।

জাবেদ আলী বলে, আমার কাজলী গাই নিজেই তো চতুর্থ সাক্ষী!

শফিক চিকন গলায় হা হা করে হাসে। কালাম মেম্বার হাসতে হাসতে গামছা দিয়ে চোখের কোণ মুছে বলে, জাবেদ আলী, তুমি কি মশিউরের বাপের কাছে কাজলীরে বেচনের জন্যই এই রকম সালিশের এন্তেজাম করাইলা? হ্যাঁ? আরে গরুর আবার সাক্ষ্য কী? গরু কি কথা কইতে পারে?

জাবেদ আলী এবার মোড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, বলে, ক্যান ক্যান, গরুর যদি খারাপ চরিত্র থাকতে পারে, সাক্ষ্য থাকবে না ক্যান?

কালাম মেম্বার হাতে কিল মেরে বলে, তাহলে ডাকো তোমার কাজলী গাইরে। জিজ্ঞাসাবাদ হোক। সে কি বাংলা ভাষা পারে? আইনকানুন দেওয়ানী ফৌজদারী হাদিসকোরান ইজমাকেয়াস সে বোঝে কিছু?

জাবেদ আলী ধুপ করে আবার মোড়ায় বসে পড়ে, তারপর সানুনয় চোখে তাকায় সরোয়ার মেম্বারের দিকে।

সরোয়ার মেম্বার মন্দ্রস্বরে গর্জে ওঠে, বাকোয়াজি বন্ধ করি আমরা। মশিউর গরুটারে বেইজ্জতি করছে এইটা ফাইনাল। এইবার শাস্তি হবে। শাস্তি সব থেকে নরম শাস্তিই বলতেছি। কাজলী গাইরে আলতাবের কাছে বিক্রি করা হবে। মশিউর তার বাপের গাইয়ের সঙ্গে যা খুশি করুক, কেউ আপত্তি করবে না। কিন্তু জাবেদ আলীর গাইয়ের উপর সে হামলা করতে পারে না।

জাবেদ আলী ফুঁপিয়ে ওঠে, কাজলী রে ...।

কালাম মেম্বার এবার পকেট থেকে কৌটা বার করে এক খিলি পান মুখে ঠেসে বলে, গরুর জায়গা গোয়ালে। গরু গোয়ালে থাকবে, খড়বিচালি খাবে, গোয়াল ঘরের দেখশোন করবে, গরম উঠলে আমাদের মাঝাপাড়ার হাশেমের ষাঁড়টারে দিয়া পেট করাতে হবে, তারপর বাছুর দিবে, দুধ দিবে। এই হচ্ছে গরুর জীবন। আলেমওলামারাও এই কথাই বলেন। তুমি জাবেদ আলী গরুরে ঘরের বাইরে খোলা মাঠে ছাইড়া রাখবা, গরু খালি গায়ে ওলান ঝুলায়ে উদাম ঘুরবে, কাজল দেওয়া চোখে কচি কচি ছেলেদের দিকে আড়ে আড়ে চাইবে, আর তারপর তার ওয়াসওয়াসায় ফাঁসায়ে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের এক ঘণ্টা ধরে খাটাবে, আর সালিশে তার চরিত্র নিয়া দুইটা কথা বললে তোমরা বলবা কালাম মেম্বার সতেরোটা ভোট কম পাইছে। বরকত নাই জাবেদ আলী, বরকত নাই। এইসব কি ভালো?

মশিউর আর আলতাব মাথা নাড়ে। মোটেও ভালো নয়।

শফিক মিহি গলায় বলে, আদুল গরু হইলো গিয়া পাকা তেঁতুলের মতো।

এরপর সালিশের বাতাবরণটাই নষ্ট হয়ে যায়। একেকজন একেক কথা কইতে থাকে, মৌলবি সদরুদ্দিকে উদ্ধারের জন্যে উঠানে গাছের ছায়া ক্রমশ মাগরিবের ওয়াক্তের দিকে ধেয়ে আসে। কাঠঠোকরাটা লিচুকাঠে মাথা ঠুকে মরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ