জাকির তালুকদার
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জাকির তালুকদার এসময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার। তিনি লেখেন অভিজ্ঞতা থেকে। এবং এই অভিজ্ঞতার জন্য তাকে গ্রামে যেতে হয়নি। তিনি গ্রামেরই মানুষ। এর সঙ্গে মেল বন্ধন ঘটেছে তাঁর বহুমূখী পড়াশুনার। তিনি শুরু থেকে সিরিয়াস গল্পকার। কোনো অর্থেই সখ করে লেখেন না। ফলে তাঁর পাঠকও তাঁর সঙ্গে হয়ে ওঠেন সিরিয়াস। সম্ভবত জাকির তালুকদারই সাহিত্যের সেই প্রাচীন বংশের নিঃশ্ব সন্তান যিনি সত্যি সত্যি লেখালেখির জন্য সব ছেড়েছেন। নিজেকে বাজী ধরেছেন। এবং তাকে পড়া ছাড়া পাঠের পূণ্যি অসম্ভব।
গল্পের পাশাপাশি লিখছেন উপন্যাস ও প্রবন্ধ। প্রথম উপন্যাস কুরসিনামা। মুসলমানমঙ্গল উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকমহলে পরিচিতি পান। তার সর্বশেষ উপন্যাস পিতৃগণ সম্প্রতি জেমকন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।--গল্পপাঠ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
জাকির তালুকদার : রাজনীতি করতে পারছিলাম না বলে লেখালেখিতে এসেছি। বেশ কিছুদিন রাজনীতির চত্বরে ঘোরাফেরা করেছি, ছাত্রজীবনের পুরোটাই। কিন্তু অন্তর থেকে বুঝতে পারছিলাম যে এটা, মানে রাজনীতি আমার লাইন না। আমি তথাকথিত বড় দলগুলি সম্পর্কে কোনোদিনই আগ্রহী ছিলাম না। সেসব দলের কথা মাথাতে আসেইনি। দেশ এবং জাতিকে রসাতলে নিয়ে যাওয়াই যে তাদের প্রধান কাজ, সেটি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে গিয়েও দেখলাম যে এখানেও তৈলমর্দন, নেতাকে চেহারা দেখানো, অমেধাবী পোর্টফোলিওধারীদের পেছনে ঘোরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ইনট্রাপার্টি স্ট্রাগলের নাম করে এ আসলে কোটারিদের গদ ধরে রাখা এবং পদ বণ্টন করা। তারপরে নব্বই দশকের শুরুতে দেখলাম সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো আদর্শগত পর্যালোচনা ছাড়াই দলে দলে তথাকথিত ত্যাগী বামনেতারা ছুটছেন বড় দুই দলের ছোট ছোট পদ নিতে। তখন এককভাবে কী আর করা সম্ভব? যা একটু আধটু পারি, তা লেখালেখি। সেই লেখালেখিতেই মন দিলাম।
লেখার মাধ্যম হিসাবে গল্পই কেন? সে আরেক উপলব্ধির ব্যাপার। ছিলাম একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। ইলেকট্রিসিটি গিয়ে পৌঁছায়নি এমন এলাকায়। সেখানে যে জীবন দেখলাম, মনে হলো তা কবিতা তো দূরের কথা, নাটক-প্রবন্ধেও জ্যান্ত তুলে আনা সম্বব নয়। তার পাশাপাশি দেখলাম যে কবিতা আমার ঠিক আসে না। গল্প লেখার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম যে হচ্ছে মনে হয়। তাই গল্প বা কথাসাহিত্যকেই আঁকড়ে ধরা।
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
জাকির তালুকদার : শুরুর আগেও তো অনেক শুরু থাকে। আমি এখনকার পর্যায়ের লেখালেখির সূত্রপাত ধরি ১৯৯৬ সালকে। তার আগে ছড়া লিখেছি, কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি, কিশোরদের জন্য ২/১ টা গল্প লিখেছি, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছি, এমনকি একটা মঞ্চনাটকও লিখেছি। সেগুলি তো পরিণত নয়। তবে ১৯৯৬ সালে যখন পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিলাম যে গল্প লেখাই হবে আমার প্রধান কাজ, তখন থেকে এক বা দেড় বছরের মধ্যে লিখে ফেললাম একের পর এক দাস পরম্পরা, সোলেমান পয়গম্বরের দেয়াল , তিন ভাগ জল , বিশ্বাসের আগুন। এই গল্পগুলিকে তো পাঠকরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন।
৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে কেমন?
জাকির তালুকদার : প্রচুর গল্প পড়েছি। পাঠক হিসাবে আমি ছোটবেলা থেকেই পেটুক। কোনো বাছবিচার ছিল না। তবে যখন গল্প লিখতে শুরু করলাম, তখন বা তার আগে থেকেই সিরিয়াসলি গল্প পড়তে শুরু করলাম। একেবারে শুরুর বাংলাগল্প থেকে ধাপে ধাপে সর্বসাম্প্রতিক বাংলাগল্প পর্যন্ত। ১৩০০ গল্প পড়ার প্রমাণ আমার সেই সময়কার ডায়েরিতে আছে। প্রস্তুতি বললে বোধহয় এটাকেই বলা যায়।
৪. আপনি যে সিরিয়াসলি গল্প লেখার আগে ১৩০০ গল্প পড়ে ফেললেন, এই পড়ার মধ্যে আর আগেকার পড়ার মধ্যে পার্থক্য কি ছিল--যে কারণে আপনি বিশেষভাবে এই লেখাগুলোর উল্লেখ করলেন? সে সময়ে আপনার কি কি বিষয় খুঁজে বের করলেন বা নতুন করে পেলেন?
৫. আপনার গল্প লেখার কেীশল বা ক্রাফট কি?
জাকির তালুকদার : সত্যি বলতে কী, আমার কোনো কৌশল জানা নেই। প্রতিটি গল্পই আমাকে নতুন ভাবে শুরু করতে হয়। জীবনের প্রথম গল্প লেখা শুরুর সময় যে অবস্থা ছিল, এখন ষাট বা সত্তরতম গল্প লিখতে বসলেও আমাকে সেই শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়। আগের লেখা আমাকে কোনো সাহায্য করে না। কারণ প্রতিটি গল্পই তার বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাষা এবং আঙ্গিক দাবি করে।
৬. নিজের গল্প বিষয়ে আপনার বিবেচনা কি কি?
জাকির তালুকদার : এমন ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বিনয় প্রদর্শন করাই স্বাভাবিক রীতি। কিন্তু আমি বিনয় দেখাতে চাই না। সচেতন এবং সর্বভূক একজন পাঠক হিসাবে বলতে পারি যে গল্পলেখক জাকির তালুকদার অন্তত গোটা দশেক অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের গল্প লিখেছেন। সাহিত্যের অপরাজননীতি যদি পেছন থেকে হাত না খেলায়, তাহলে ২/১ টি গল্প অনেক দূর ভবিষ্যতের পাঠকও পড়বেন।
৭. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেন তাদেরকে আদর্শ মনে করেন?
জাকির তালুকদার : আমার কোনো আদর্শ গল্পকার নাই। তবে আমার পূবসূরি, সমকালীন, এমনকি উত্তরসূরি গল্পলেখকদের কাছ থেকেও আমি শিখি। তাদের রচনার সফলতা থেকে যেমন শিখি, ব্যর্থতা থেকেও তেমনি শিখি।
৮. আপনার আদর্শের গল্পকার না থাকলেও কিছু কিছু প্রিয় গল্পকার তো আছে। তাঁদের একটু উল্লেখ করুন। তারা কেনো প্রিয় হয়ে উঠেছে সেগুলোও বিস্তারিত বলুন। তাদের রচনার সফলতাগুলো কি কি দেখতে পেয়েছেন? আবার তাদের ব্যার্থতাগুলোই বা কি ধরনের?
৯. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? আর যদি পাটকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেন পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়?
জাকির তালুকদার : লিখি ২৫ কোটি বাংলাভাষীর জন্য। স্বপ্ন দেখি তারা সবাই আমার লেখা পড়বেন।
তবে লেখার সময় কারও কথা মাথায় থাকে না। তখন লেখাটিই থাকে সচেতন এবং অবচেতন মনকে দখল করে। পাঠকের কথা ভেবে লিখতে গেলে তো লেখকের স্বাধীনতা আগেই খর্ব হয়ে বসে থাকে।
১০.. আপনি যখন অনুরুদ্ধ হয়ে লেখেন, বিশেষ করে ঈদ বা বিশেষ সংখ্যায়--সেটা তো এক ধরনের চাপের মধ্যে থেকেই লেখেন। এই অনুরুদ্ধ লেখাগুলো আপনার লেখার মানকে দুর্বল করে?
১১. এখন কি লিখছেন?
জাকির তালুকদার : শাহবাগ উপন্যাস। তবে লেখাটা তেমন এগুচ্ছে না। আমি অবশ্য তাতে হতাশ নই। এমনটি আগেও অনেকবার হয়েছে। আসলে আমার এখন নানা বিষয়ে পড়তে খুব ভালো লাগছে। লেখায় ফাঁকি দিয়ে পড়ছি।
১২. লেখালেখি নিয়ে আপনার আগামী পরিকল্পনা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?
জাকির তালুকদার : তেমনভাবে কোনো ছক তৈরি করা নেই। তবে লিখে যাব যে কটা নিশ্বাস বাকি আছে, সবটা জুড়েই।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জাকির তালুকদার এসময়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার। তিনি লেখেন অভিজ্ঞতা থেকে। এবং এই অভিজ্ঞতার জন্য তাকে গ্রামে যেতে হয়নি। তিনি গ্রামেরই মানুষ। এর সঙ্গে মেল বন্ধন ঘটেছে তাঁর বহুমূখী পড়াশুনার। তিনি শুরু থেকে সিরিয়াস গল্পকার। কোনো অর্থেই সখ করে লেখেন না। ফলে তাঁর পাঠকও তাঁর সঙ্গে হয়ে ওঠেন সিরিয়াস। সম্ভবত জাকির তালুকদারই সাহিত্যের সেই প্রাচীন বংশের নিঃশ্ব সন্তান যিনি সত্যি সত্যি লেখালেখির জন্য সব ছেড়েছেন। নিজেকে বাজী ধরেছেন। এবং তাকে পড়া ছাড়া পাঠের পূণ্যি অসম্ভব।
গল্পের পাশাপাশি লিখছেন উপন্যাস ও প্রবন্ধ। প্রথম উপন্যাস কুরসিনামা। মুসলমানমঙ্গল উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকমহলে পরিচিতি পান। তার সর্বশেষ উপন্যাস পিতৃগণ সম্প্রতি জেমকন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।--গল্পপাঠ
------------------------------------------------------------------------------------------------------------

জাকির তালুকদার : রাজনীতি করতে পারছিলাম না বলে লেখালেখিতে এসেছি। বেশ কিছুদিন রাজনীতির চত্বরে ঘোরাফেরা করেছি, ছাত্রজীবনের পুরোটাই। কিন্তু অন্তর থেকে বুঝতে পারছিলাম যে এটা, মানে রাজনীতি আমার লাইন না। আমি তথাকথিত বড় দলগুলি সম্পর্কে কোনোদিনই আগ্রহী ছিলাম না। সেসব দলের কথা মাথাতে আসেইনি। দেশ এবং জাতিকে রসাতলে নিয়ে যাওয়াই যে তাদের প্রধান কাজ, সেটি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে গিয়েও দেখলাম যে এখানেও তৈলমর্দন, নেতাকে চেহারা দেখানো, অমেধাবী পোর্টফোলিওধারীদের পেছনে ঘোরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ইনট্রাপার্টি স্ট্রাগলের নাম করে এ আসলে কোটারিদের গদ ধরে রাখা এবং পদ বণ্টন করা। তারপরে নব্বই দশকের শুরুতে দেখলাম সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো আদর্শগত পর্যালোচনা ছাড়াই দলে দলে তথাকথিত ত্যাগী বামনেতারা ছুটছেন বড় দুই দলের ছোট ছোট পদ নিতে। তখন এককভাবে কী আর করা সম্ভব? যা একটু আধটু পারি, তা লেখালেখি। সেই লেখালেখিতেই মন দিলাম।
লেখার মাধ্যম হিসাবে গল্পই কেন? সে আরেক উপলব্ধির ব্যাপার। ছিলাম একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। ইলেকট্রিসিটি গিয়ে পৌঁছায়নি এমন এলাকায়। সেখানে যে জীবন দেখলাম, মনে হলো তা কবিতা তো দূরের কথা, নাটক-প্রবন্ধেও জ্যান্ত তুলে আনা সম্বব নয়। তার পাশাপাশি দেখলাম যে কবিতা আমার ঠিক আসে না। গল্প লেখার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলাম যে হচ্ছে মনে হয়। তাই গল্প বা কথাসাহিত্যকেই আঁকড়ে ধরা।
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
জাকির তালুকদার : শুরুর আগেও তো অনেক শুরু থাকে। আমি এখনকার পর্যায়ের লেখালেখির সূত্রপাত ধরি ১৯৯৬ সালকে। তার আগে ছড়া লিখেছি, কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি, কিশোরদের জন্য ২/১ টা গল্প লিখেছি, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছি, এমনকি একটা মঞ্চনাটকও লিখেছি। সেগুলি তো পরিণত নয়। তবে ১৯৯৬ সালে যখন পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিলাম যে গল্প লেখাই হবে আমার প্রধান কাজ, তখন থেকে এক বা দেড় বছরের মধ্যে লিখে ফেললাম একের পর এক দাস পরম্পরা, সোলেমান পয়গম্বরের দেয়াল , তিন ভাগ জল , বিশ্বাসের আগুন। এই গল্পগুলিকে তো পাঠকরা ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন।
৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে কেমন?
জাকির তালুকদার : প্রচুর গল্প পড়েছি। পাঠক হিসাবে আমি ছোটবেলা থেকেই পেটুক। কোনো বাছবিচার ছিল না। তবে যখন গল্প লিখতে শুরু করলাম, তখন বা তার আগে থেকেই সিরিয়াসলি গল্প পড়তে শুরু করলাম। একেবারে শুরুর বাংলাগল্প থেকে ধাপে ধাপে সর্বসাম্প্রতিক বাংলাগল্প পর্যন্ত। ১৩০০ গল্প পড়ার প্রমাণ আমার সেই সময়কার ডায়েরিতে আছে। প্রস্তুতি বললে বোধহয় এটাকেই বলা যায়।
৪. আপনি যে সিরিয়াসলি গল্প লেখার আগে ১৩০০ গল্প পড়ে ফেললেন, এই পড়ার মধ্যে আর আগেকার পড়ার মধ্যে পার্থক্য কি ছিল--যে কারণে আপনি বিশেষভাবে এই লেখাগুলোর উল্লেখ করলেন? সে সময়ে আপনার কি কি বিষয় খুঁজে বের করলেন বা নতুন করে পেলেন?
জাকির তালুকদার : আমি ১৩০০ গল্প পড়লাম এই জিনিসটা দেখার জন্য যে আমার জন্য গল্প লেখার
কোনো অবকাশ আছে কি নেই। ব্যাপারটা অপরিপক্ক এবং হাস্যকর চিন্তার ফসল, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। আমি চাইছিলাম পুনরাবৃত্তি না
করতে। ঐ যে কেউ কেউ বলে না--রবীন্দ্রনাথ তো
সবই লিখে গেছেন, আমি আর লেখার
জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না। এমন ভাবনা আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুর মধ্যে ছিল, আমার মধ্যেও কিছু পরিমাণে ছিল যে মানিক-তারাশঙ্কর-বিভূতি, সতীনাথ-জগদীশ-নরেন্দ্রনাথ-সুবোধ, কমলকুমার-অমিয়ভূষণ-হাসান-সন্দীপন-জ্যোতিপ্রকাশ-ইলিয়াসের পরে
কি সত্যি সত্যিই কোনো মৌলিক কাজের অবকাশ রয়েছে? দেখা গেল যে আমার গল্প লেখার ব্যাপক অবকাশ আছে। যে কারো জন্যই আছে। কারণ পৃথিবীর
যেমন প্রতিদিন বয়স বাড়ে, তেমনই প্রতিদিন
সে নতুন হয়। ফলে নতুন নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। নতুন লেখা ছাড়া নতুন দ্বন্দ্বকে প্রকাশ
করা যায় না। ১৩০০ গল্প পড়ে এটা বুঝতে হলো আমাকে। খুবই হাস্যকর মনে হয় এখন। কিন্তু সেই
সময় এই ভয়মিশ্রিত চিন্তাটা বাস্তবিকই ছিল আমার মধ্যে।
দ্বিতীয় আর একটা কারণ ছিল। সেটি হচ্ছে আশির দশকে আমাদের এখানে যেসব কাগজ বেরুচ্ছিল, লিটল ম্যাগাজিনগুলো, সেগুলোতে যেসব গল্প ছাপা হচ্ছিল, বা যেসব ধরনের গল্পের প্রাধান্য ছিল, সেগুলি আমাকে ধন্ধে ফেলে দিয়েছিল। গল্প বলতে যদি এগুলোকেই বোঝানো হয়ে থাকে, তাহলে তো আমার দ্বারা গল্প লেখা হবে না। কারণ সেগুলি যতটা
ছিল গল্প, তারচেয়ে বেশি
ছিল কবজির সার্কাস। কিন্তু নিজে পড়ে থাকি মফস্বলে, বড় বড় লেখকদের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না, আমার সমসাময়িক তরুণদের সাথে দেখা হলে তারা সবাই ঐসব পত্রিকার লেখকদের নিয়ে ব্যাপক
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে-- তখন তো বিভ্রম
আরও বেড়েই চলে। তো তখন মনে হলো গল্প জিনিসটা যে আসলেই কী, তা জানার একমাত্র পথ হচ্ছে যাদের গল্প নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত
নেই, সেগুলি পড়ে ফেলা। তো আমার এই পঠনের সাথে সমকালীন
মাঠদাপানো কারো গল্পই মিলল না। পরবর্তীতে আবশ্য তাদের দাপাদাপি পুরোপুরি মিলিয়ে গেছে।
কেউ কেউ টিকে আছেন কাকবন্ধ্যা লেখক হিসাবে। কিন্তু তারা আমাকে পরিশ্রম করালেও এই উপকারটা
করেছেন পরোক্ষে।
৫. আপনার গল্প লেখার কেীশল বা ক্রাফট কি?
জাকির তালুকদার : সত্যি বলতে কী, আমার কোনো কৌশল জানা নেই। প্রতিটি গল্পই আমাকে নতুন ভাবে শুরু করতে হয়। জীবনের প্রথম গল্প লেখা শুরুর সময় যে অবস্থা ছিল, এখন ষাট বা সত্তরতম গল্প লিখতে বসলেও আমাকে সেই শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়। আগের লেখা আমাকে কোনো সাহায্য করে না। কারণ প্রতিটি গল্পই তার বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাষা এবং আঙ্গিক দাবি করে।
৬. নিজের গল্প বিষয়ে আপনার বিবেচনা কি কি?
জাকির তালুকদার : এমন ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বিনয় প্রদর্শন করাই স্বাভাবিক রীতি। কিন্তু আমি বিনয় দেখাতে চাই না। সচেতন এবং সর্বভূক একজন পাঠক হিসাবে বলতে পারি যে গল্পলেখক জাকির তালুকদার অন্তত গোটা দশেক অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের গল্প লিখেছেন। সাহিত্যের অপরাজননীতি যদি পেছন থেকে হাত না খেলায়, তাহলে ২/১ টি গল্প অনেক দূর ভবিষ্যতের পাঠকও পড়বেন।
৭. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেন তাদেরকে আদর্শ মনে করেন?
জাকির তালুকদার : আমার কোনো আদর্শ গল্পকার নাই। তবে আমার পূবসূরি, সমকালীন, এমনকি উত্তরসূরি গল্পলেখকদের কাছ থেকেও আমি শিখি। তাদের রচনার সফলতা থেকে যেমন শিখি, ব্যর্থতা থেকেও তেমনি শিখি।
৮. আপনার আদর্শের গল্পকার না থাকলেও কিছু কিছু প্রিয় গল্পকার তো আছে। তাঁদের একটু উল্লেখ করুন। তারা কেনো প্রিয় হয়ে উঠেছে সেগুলোও বিস্তারিত বলুন। তাদের রচনার সফলতাগুলো কি কি দেখতে পেয়েছেন? আবার তাদের ব্যার্থতাগুলোই বা কি ধরনের?
জাকির তালুকদার : প্রিয় গল্পকার বললে মনে হবে ঢালাও ভাবে সেই লেখকের সব গল্পের কথা বলছি।
তেমন কেউ নেই, যার সব লেখাই
আমার প্রিয়। কারো একটি-দুটি, কারো বা তার চেয়ে
বেশি, কারো অনেকগুলি
গল্প প্রিয় আমার। এভাবে বলতে গেলে তো কোনো ধারাবাহিকতা থাকবে না। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর
নয়নচারা বা পরাজয় পছন্দের গল্প। অনেক পরে এসে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের
উৎসব এবং খোঁয়ারি।
সবার আগে বোধহয় বলা উচিত ছিল গোগোলের ওভারকোট গল্পের কথা। অমিয়ভূষণ মজুমদারের সাইমিয়া ক্যাসিয়া তো আমার মনে হয় বাংলাভাষায় লেখা চিরকালের গল্পের
মধ্যে জায়গা পাবে। আবার আন্তন চেখভ-এর অনেকগুলি গল্প খুব প্রিয়। একই ভাবে প্রিয় আর্নেস্ট
হেমিংওয়ের স্নোজ অফ কিলিমানজারোর গল্পগুলি। মিলন
মুখোপাধ্যায়ের একটিমাত্র গল্প পড়েছি আমি দেশ পত্রিকার পাতায়। গল্পটির নাম ছিল খগেন বাবুর ওড়াউড়ি। সেটি আমার খুব প্রিয়
গল্প। মঈনুল হক সাবেরের বৃত্ত তো মধ্যবিত্ত নিয়ে লেখা অন্যতম শ্রেষ্ট গল্প। হাসান আজিজুল হকের আমৃত্যু
আজীবন অসাধারণ। জ্যোতিপ্রকাশ
দত্তের রংলাল ফেরে না, আবুবকর সিদ্দিকের মরে বাঁচার স্বাধীনতা, শহীদুল জহিরের ডুমুরখেকো মানুষ, রাহাত খানের কয়েকটি গল্প, সতীনাথ ভাদুড়ীর চখাচখি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অতিথি-- এগুলি প্রিয়। নাগিব মাহফুজের যাত্রী ছাউনির নিচে বইয়ের গল্পগুলিও অসাধারণ। বিভূতিভূষণের পুঁই
মাচা তো কেবল বাংলাভাষাতেই
লেখা সম্ভব। অ্যালান পো-র বিড়াল সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প আমার কাছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলুদ পোড়া শিখিয়েছে মনস্তত্ত্বের ব্যবহার কেমন করে করতে হয়
ছোটগল্পে। তালিকা আরো অনেক অনেক বাড়বে। কিন্তু স্মৃতিশক্তির ওপর আর বেশি চাপ দিতে চাই
না।
এইসব গল্প প্রিয় বিভিন্ন কারণে। কোনোটি শুধু আখ্যানের কারণেই। এতই শক্তিশালী
আখ্যান যে তার নির্মানশৈলী নিয়ে চিন্তা করাটাও তখন অশ্লীল মনে হয়। কোনোটা আবার প্রিয়
সেই নির্মাণ শৈলীর কারণেই। কোনোটি প্রিয় পরিমিতির কারণে। কোনোটা প্রিয় উপরিতলের বাস্তবতা
যে আদৌ বাস্তবতা নয়, তা বুঝিয়ে দেবার
কারণে। আবার কোনো কোনো গল্প প্রিয় হয়ে উঠেছে এই কারণে যে সেগুলোতে আবহমান বাংলার কথকতার
ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যায়।
আর ব্যর্থতার কথা? আমার কাছে ব্যর্থতার
চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির। একটু বুঝিয়ে বলি। তার লেখা প্রথমটি পাঠ করার
সময় পাঠক অসাধারণ এক নতুনত্বের স্বাদ পাবেন। দ্বিতীয়টি পাঠের সময় সেই স্বাদ অনেকটা
কমে যাবে। তারপরে যত পড়তে থাকবেন, তত দেখতে পাবেন
যে একঘেয়ে লাগছে। মনে হবে তিনি নিজের লেখা নিজেই কপি করছেন। অথবা মনে হবে যে তিনি প্রথমে
একটা ছাঁচ তৈরি করেছেন, পরে সেই ছাঁচের
মধ্যে শব্দ ঢেলে ঢেলে প্যারডি তৈরি করছেন, নিজের লেখার ভঙ্গি নিজেই নকল করছেন। এই যে একটা আঙ্গিক নির্মাণের পরে সেখানে
বন্দি হয়ে থাকা, এটি যে কোনো বড়
লেখকের জন্য অন্তরায়।
৯. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? আর যদি পাটকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেন পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়?
জাকির তালুকদার : লিখি ২৫ কোটি বাংলাভাষীর জন্য। স্বপ্ন দেখি তারা সবাই আমার লেখা পড়বেন।
তবে লেখার সময় কারও কথা মাথায় থাকে না। তখন লেখাটিই থাকে সচেতন এবং অবচেতন মনকে দখল করে। পাঠকের কথা ভেবে লিখতে গেলে তো লেখকের স্বাধীনতা আগেই খর্ব হয়ে বসে থাকে।
১০.. আপনি যখন অনুরুদ্ধ হয়ে লেখেন, বিশেষ করে ঈদ বা বিশেষ সংখ্যায়--সেটা তো এক ধরনের চাপের মধ্যে থেকেই লেখেন। এই অনুরুদ্ধ লেখাগুলো আপনার লেখার মানকে দুর্বল করে?
জাকির তালুকদার : অনুরুদ্ধ হয়ে বেশি লিখতে হয় লিটল ম্যাগাজিনে। বিশেষ করে যে সময় আমার লিখতে ইচ্ছা করছে না, বা পূর্ব পরিকল্পনা নাই-- সেই সময় লিটল ম্যাগাজিন থেকে হঠাৎ চাপ আসে। চাপের পর চাপ আসতে থাকে। আবার লিটল ম্যাগাজিন যেহেতু ভালোবাসার জায়গা, সেই কারণে লেখা তৈরি করার ইচ্ছাটা নিজের গরজেই জাগিয়ে তুলতে হয়। ফলে চাপটা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ঈদসংখ্যা নিয়ে কোনো চাপ তেমন অনুভব করি না। প্রথম কারণ, তারা এক বছর আগে থেকেই জানিয়ে রাখে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, নিজের ওপর কোনো জোরজবরদস্তি করতে হয় না। লিখতে পারলে দেবো, না পারলে বলে দেবো পারছি না। যাকে দিতে পারলাম না, সে হয়তো পরে আমাকে বয়কট করবে, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে-যায় না। আমি লেখক। লেখার জোগানদার নই।
সাধারণভাবে অনরুদ্ধ লেখা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না পুরোপুরি। তবে ন্যূনতম মান বজায় রাখার চেষ্টা করি সবসময়। আবার অনুরুদ্ধ হয়ে যেসব লেখা লিখেছি, সেগুলির মধ্যে কোনো-কোনোটা পরবর্তীতে আমার প্রিয় লেখা হয়ে উঠেছে, এমন উদাহরণও আছে।
ঈদসংখ্যা নিয়ে কোনো চাপ তেমন অনুভব করি না। প্রথম কারণ, তারা এক বছর আগে থেকেই জানিয়ে রাখে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, নিজের ওপর কোনো জোরজবরদস্তি করতে হয় না। লিখতে পারলে দেবো, না পারলে বলে দেবো পারছি না। যাকে দিতে পারলাম না, সে হয়তো পরে আমাকে বয়কট করবে, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে-যায় না। আমি লেখক। লেখার জোগানদার নই।
সাধারণভাবে অনরুদ্ধ লেখা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না পুরোপুরি। তবে ন্যূনতম মান বজায় রাখার চেষ্টা করি সবসময়। আবার অনুরুদ্ধ হয়ে যেসব লেখা লিখেছি, সেগুলির মধ্যে কোনো-কোনোটা পরবর্তীতে আমার প্রিয় লেখা হয়ে উঠেছে, এমন উদাহরণও আছে।
১১. এখন কি লিখছেন?
জাকির তালুকদার : শাহবাগ উপন্যাস। তবে লেখাটা তেমন এগুচ্ছে না। আমি অবশ্য তাতে হতাশ নই। এমনটি আগেও অনেকবার হয়েছে। আসলে আমার এখন নানা বিষয়ে পড়তে খুব ভালো লাগছে। লেখায় ফাঁকি দিয়ে পড়ছি।
১২. লেখালেখি নিয়ে আপনার আগামী পরিকল্পনা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?
জাকির তালুকদার : তেমনভাবে কোনো ছক তৈরি করা নেই। তবে লিখে যাব যে কটা নিশ্বাস বাকি আছে, সবটা জুড়েই।
13 মন্তব্যসমূহ
Razib Datta
উত্তরমুছুনআমার কাছে ব্যর্থতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির। একটু বুঝিয়ে বলি। তার লেখা প্রথমটি পাঠ করার সময় পাঠক অসাধারণ এক নতুনত্বের স্বাদ পাবেন। দ্বিতীয়টি পাঠের সময় সেই স্বাদ অনেকটা কমে যাবে। তারপরে যত পড়তে থাকবেন, তত দেখতে পাবেন যে একঘেয়ে লাগছে। মনে হবে তিনি নিজের লেখা নিজেই কপি করছেন। অথবা মনে হবে যে তিনি প্রথমে একটা ছাঁচ তৈরি করেছেন, পরে সেই ছাঁচের মধ্যে শব্দ ঢেলে ঢেলে প্যারডি তৈরি করছেন, নিজের লেখার ভঙ্গি নিজেই নকল করছেন। এই যে একটা আঙ্গিক নির্মাণের পরে সেখানে বন্দি হয়ে থাকা, এটি যে কোনো বড় লেখকের জন্য অন্তরায়।
- জাকির তালুকদার
10 hours ago · Like
Hasnat Soyeb সাক্ষাতকারটা পড়েছি! দ্বিমত পোষণ করছি শহিদুল জহির সম্পর্কে যা বলেছেন সেটা সম্পর্কে!
10 hours ago · Like · 5
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য জাকিরভাই, বড় কবি-শিল্পী-লেখকের সৃষ্টির মধ্যে খানিকটা রিপিটেশন থাকেই। যেমন ধরেন, আমাদের জীবনানন্দ দাশ, এস এম সুলতান ইত্যাদি। আর তাছাড়া শহীদুল জহির একটা ধরন ঠিকমতো তৈরির আগেই মারা গেলেন। আমাদের কতিপয় লেখকের মতো দিস্তায় দিস্তায় কাগজ নষ্ট করার বা কয়েক গিগাবাইট ওয়ার্ডফাইল ভরিয়ে ফেলার সময় পান নি। ওনি তো ধরতে গেলে আপনারই সমসাময়িক-- হিশেব করলে আপনার দশভাগের একভাগও লিখেন নি (পৃষ্ঠার পরিমাণের দিক থেকে)। সুতরাং চাইলে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন। Zakir Talukder
9 hours ago · Edited · Like · 12
Zakir Talukder ভাইরে ‘আমার কাছে’ শব্দটি খেয়াল করবেন।
9 hours ago · Like · 1
Zakir Talukder নির্ঝর আমার সমপরিমাণ বা আমার চাইতে বেশি বা আমার চাইতে কম লেখা বিবেচ্য নয়। দিস্তা দিস্তা কাগজ নষ্ট করার খোঁচাটা যদি আমাকে দিয়ে থাকেন তাহলে বলি যে আপনাকে তার চাইতে অনেক বেশি কাগজ সাপ্লাই দেব আমি। পারলে লিখে দেখান।
8 hours ago · Like · 2
Chanchal Ashraf মানছি না। ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’ পাঠের পর ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ আমার কাছে নতুনতর মনে হয়েছে। উচ্চাভিলাষী লেখক মাত্রেরই নিজস্ব আঙ্গিকসাধনা থাকে। সে-জায়গায় তো বটেই, বিষয়সন্ধানেও শহিদুল জহির অসফল নন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর পর বাংলা কথাসাহিত্যের অঙুলিমেয় সৃষ্টিশীলদের একজন বলে তাঁকে আমি গণ্য করি। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতেও আমি প্রস্তুত।
8 hours ago · Like · 14
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য জাকির ভাই, আপনাকে খোঁচা দেয়ার দুঃসাহস কিংবা যোগত্য কোনোটাই আমার নেই। আর তাছাড়া আপনি আমার প্রিয় গল্পকারদের একজন। এবং একদিনের জন্য হলেও আমার শিক্ষক ছিলেন। এইখানে আমি কেবল আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। সেই রকম কিছু বলতে চাইলে সরাসরিই বলতাম। দিস্তা দিস্তা কাগজ নষ্ট করার মতো কতিপয় লেখক যে আমাদের আছেন সেটা আপনিও জানেন। আর আপনি সেই দলে যে নন সেটাও প্রমাণ করেছেন ইতোমধ্যে। কারণ আপনার শ্রেণিচেতনা সেই দলে আপনাকে যেতে দিবে না। আর আমাকে আপনার কাগজ সাপ্লাই দেয়ার প্রস্তাব শুনে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত। কারণ সেই ভার বহনের ক্ষমতা আমার নেই। Zakir Talukder
উত্তরমুছুন8 hours ago via mobile · Edited · Like · 6
Saikat Dey Dipendranath bondopadhayer akta ghotona mone porlo.Debesh roy r dipen gechen 'desh' ar office..ki akta bisoye soi nite..namar somoy sunil agie dite ase bollen'dipen,tumi to r likhlena!'dipen suniler chokhe takie bollen,'lekhok hote gele koy ton likhte hoy sunil!'
8 hours ago via mobile · Like · 4
Ahmed Munir এটা একজন লেখক সম্পর্কে আরেকজন লেখকের অনুভূতি। তিনি পাঠক বা অন্য লেখকদের হয়ে কোনো মতামত দেননি বলে মনেহয়। শহীদুল জহির সম্পর্কে প্রত্যেকেরই আলাদা মুল্যায়ন থাকতে পারে; থাকাটাই স্বাস্থ্যকর। তবে জাকির তালুকদার সম্ভবত লেখকদের আঙ্গিকগত সমস্যাটাই সামনে আনতে চেয়েছেন। 'আঙ্গিক নির্মাণের পরে সেখানে বন্দি হয়ে থাকা' এমন পরিস্থিতি তুলে ধরতে চেয়েছেন। অথচ সেটা নিয়ে আলোচনা হল না...
8 hours ago · Edited · Like · 2
Chanchal Ashraf জাকির তালুকদার আগেই বলে দিয়েছেন ‘আমার কাছে ব্যর্থতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির।’ Ahmed Munir বুঝতেই পারছেন।...
8 hours ago · Like · 3
Kumar Chakraborty প্রথমটি পাঠ করলাম 'আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু', 'অসাধারণ এক নতুনত্বের স্বাদ' পাইলাম, দ্বিতীয়টি পাঠ করলাম 'জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা', 'সেই স্বাদ অনেকটা কমে' গেছে, তারপর পড়লাম ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’, 'তত দেখতে পাবেন যে একঘেয়ে লাগছে' ----এই কথা আমি কী করে বিস্বাস করি! আর কেইবা তা করবে! বরং উল্টাটাই দস্তুর। সুতরাং 'ব্যর্থতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির'--এটা একটু হুজ্জতি কথা হয়ে যায়।
8 hours ago · Like · 4
Razib Datta একটু বাইরে গিয়া বলি, জাকির তালুকদার সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের গল্প’(নান্দনিক প্রকাশিত, প্রায় পঞ্চাশ জনের মতোন লেখকের মধ্যে) হুমায়ুন আহমেদের কোনো গল্প নাই। কিন্তু আমার ধারণা হুমায়ুন আহমেদ বাদ দিয়া এরকম কোনো সংকলন সম্পুর্ন না। (অবশ্যই সম্পাদকের রুচি বলেও কিছু আছে) তারপরও এই জায়গায় প্রসংগটা টেনে আনলাম। একটু শুনি।
উত্তরমুছুন8 hours ago · Like · 6
Ahmed Munir শহীদুল জহির আমারও খুব প্রিয়। আমি জাকির তালুকদারের সঙ্গে একমত নই, কিন্তু কথাটা কি অভিপ্রায়ে বলা সেটা বোঝা উচিত। তিনি একটা সমস্যা চিহ্নিত করেছেন...@Chanchal Ashraf
উত্তরমুছুন8 hours ago · Like
Kumar Chakraborty ''মনে হবে তিনি নিজের লেখা নিজেই কপি করছেন। অথবা মনে হবে যে তিনি প্রথমে একটা ছাঁচ তৈরি করেছেন, পরে সেই ছাঁচের মধ্যে শব্দ ঢেলে ঢেলে প্যারডি তৈরি করছেন, নিজের লেখার ভঙ্গি নিজেই নকল করছেন। এই যে একটা আঙ্গিক নির্মাণের পরে সেখানে বন্দি হয়ে থাকা, এটি যে কোনো বড় লেখকের জন্য অন্তরায়।''----তাহলে তো মার্কেসও অন্তরিত।
8 hours ago · Like · 4
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য মুনির ভাই, আঙ্গিক নির্মাণের পর অনেক বড় লেখকই সেই আঙ্গিকে স্বাচ্ছন্দ্যে বন্দী থেকেছিলেন এটা বলা বাহুল্য। কিন্তু সেই দোষে শহীদুল জহিরকে যদি ‘ব্যর্থতার চূড়ান্ত’ বলা হয় তবে তার প্রতি কি অবিচার করা হয় না। আর কথাটা যদি বলে থাকেন জাকির তালুকদারের মতো বড় মাপের একজন লেখক-- তাহলে? ডুমোরখেকো মানুষ এ আমরা যে রিপিটেশন দেখি তা কতোটা ডলুনদীর হাওয়ায় প্রলম্বিত। কিংবা ধরেন জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা আর আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু কি এক জিনিশ হলো। একজন লেখককে বাতিল করার আগে তার নিরীক্ষা এবং ধরণ নির্মাণের জন্যে তাকে লেখার যে সময়টা দেয়া দরকার সেই সময় কি শহীদুল জহির পেয়েছেন? সবাই তো আর সকল আঙ্গিকের বাইরে গিয়ে নিকোলাই গোগোল আর দস্তয়ভস্তির মতো ক্লাসিক সৃষ্টির মতো ব্যাপ্ততা নিয়ে লিখতে আসে না। Ahmed Munir
8 hours ago · Like · 3
Chanchal Ashraf নির্ঝর নৈঃশব্দ্য শহীদুল জহির যা লিখেছেন, তা দিয়েই তিনি মূল্যায়নযোগ্য। এর চেয়ে বেশি না লিখলেও চলে। কেননা, এতেই তিনি বিশিষ্ট ও নিজস্বপৃথক একজন কথাসাহিত্যিক।
উত্তরমুছুন8 hours ago · Like · 4
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য কেউ সংকলিত করুক বা না করুক হুমায়ূন আহমেদ রবিনাথের পরে বাঙলাসাহিত্যের সবচে’ বড় গল্পকার। এটা শিক্ষিত পাঠক মাত্রই জানেন। অবশ্য কতিপয় আঁতেলেকচুয়াল ঈর্ষাপ্রসূত হুমায়ূন আহমেদকে বর্জন করে থাকেন। তাতে তিনি মুছে যাবেন না। এই মন্তব্যের পর আমার সম্পর্কে অনেকে ধারণা করতে পারেন যে আমি পাঠক হিশেবে অশিক্ষিত। তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি আমি পাঠক হিশেবে ভালোই শিক্ষিত তবে আঁতেলেকচুয়াল নই। Razib Datta
8 hours ago · Like · 3
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য চঞ্চল দা, আপনার কথা অবশ্যই সত্য। তবে তিনি যদি মার্কেজের মতো সময় পেতেন তাহলে আমরা পাঠক হিশেবে আরো উৎকর্ষিত হওয়ার সুযোগ পেতাম। Chanchal Ashraf
7 hours ago · Like · 3
Ahmed Munir হুম, যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা লেখকদের সমস্যা। সমাধানও তাদেরই হাতে। কে কোন ভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন সেটা আমরা বলে দিতে পারি না। আমি কেবল পাঠক হিসেবে মতামত দিতে পারি। কেউ কোনো যুগে অন্য কোনো বিখ্যাত লেখকের স্টাইল নকল করে দাঁড়াতে পেরেছেন বলে জানি না। আজকের যুগেও কেউ গোগোল আর দস্তয়ভস্কির মত ক্লাসিক লিখবেন ভাবলে ভুল হবে। আমার একজন প্রিয় লেখক রসুল হামজাতভের একটি উক্তি মনে পড়লো। 'আমি তলস্তয়ের মত একটা টুপি কিনেছি। কিন্তু তলস্তয়ের মাথা পাচ্ছি না।' আসলে প্রত্যকের নিজের টুপি তার মাথার মাপের হওয়া উচিত। নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
7 hours ago · Like · 2
Chanchal Ashraf নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বটেই। ধন্যবাদ।
7 hours ago · Like · 2
Ahmed Munir আপনিও চঞ্চল @ Chanchal Ashraf
7 hours ago · Like · 1
Muzib Mehdy মুজিব মেহদী নিজের জন্য ভিন্ন একটা ছাঁচ তৈরি করাও লেখকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মতো একটা ওর মতো আরেকটা বই লেখার চাইতে নিজস্ব ও ভিন্ন একটা ছাঁচে লেখা চালিয়ে যাওয়াই লেখকের জন্য বেশি কৃতিত্বের। এজন্য তাঁকে ব্যর্থ বলা একটু বাড়াবাড়ি রকমের নিষ্ঠুর মূল্যায়ন।
6 hours ago · Like · 10
Rudro Anirban ১. শহীদুল জহির যা লিখেছেন তা দিয়েই তিনি বিচার্য; কী লিখলে কী হতো সে কথা বাহুল্য। ২. অবশ্যই শহীদুল জহিরের একাধিক গল্পে তাঁর ভাষারীতির পুনরাবৃত্তি আছে। ৩. অবশ্যই শহীদুল জহিরের সব লেখা সম্পূর্ণ এক ও অভিন্ন নয়। একটা ভাষারীতি তাঁর আছে, সেটা বিভিন্নভাবে তিনি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু মূল স্টাইল একই বলে তাঁকে ‘ব্যর্থতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত’ বলা যায় না। শহীদুল জহিরের ভাষা, গল্পের গঠনকৌশল, বিষয়...ইত্যাদি ক্রমশ সমৃদ্ধ ও অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রধানত, ‘জীবন ও রাজনৈতিক আস্তবতা’র চেয়ে ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ আলাদা, তার চেয়ে আলাদা ‘মুখের দিকে দেখি’--এ ধারায় ‘আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু’কে রাখা হলো না সঙ্গত কারণেই, সেটা শহীদুলের পাঠকমাত্রই জানেন। তাঁর অনেক গল্পের ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। গল্পের ফিরিস্তি আর দিলাম না, কারণ সবটা হুবহু মনে নেই। গল্পের কথা বাদই দিলাম, এই তিনটা উপন্যাস অন্তত দুবার করে পড়েও আমার একঘেয়ে বা পুনরাবৃত্তি হয়নি। বরং প্রতিবারই বেশ আনন্দ ও বিস্ময়ের সঙ্গে খেয়াল করেছি লেখকের গল্প বলার ভঙ্গিতে ও বিষয় নির্বাচনে বিচক্ষণতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা। জাকির ভাই (Zakir Talukder) যতই ‘আমার কাছে’ বলে দোহাই দেন না কেন, তাঁর বলার মধ্যে--ব্যক্তিগত জায়গায় ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে--জনগণের হয়ে শহীদুলকে খারিজ করে দেওয়ার মতো একটা ভঙ্গি আছে। সুতরাং এত কথা। ৪. ‘একটা আঙ্গিক নির্মাণের পরে সেখানে বন্দি হয়ে থাকা, এটি যে কোনো বড় লেখকের জন্য অন্তরায়’ অবশ্যই। বেশির ভাগ বড় লেখকই নিয়ত নিজেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেন। তবে সব বড় লেখকেরই একটা নিজস্ব ভাষা আছে। তিনি যে বিষয়েই যেভাবে লেখেন না কেন, তাঁর সেই স্টাইল বজায় থাকে। এটা খুবই স্বাভাবিক, এটা মানুষের নিজস্বতা। হয়তো একটা নিজস্ব ভাষা তৈরি করতে পারেন বলেই তাঁরা বড় লেখক, হয়তো এ কারণেই তাঁরা পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য। Chanchal Ashraf, Ahmed Munir, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, Razib Datta
উত্তরমুছুন6 hours ago · Edited · Like · 5
Hasnat Soyeb জাকির তালুকদারের সাক্ষাতকারে শহীদুল জহির নিয়ে করা মন্ত্যব্যের পর বেশ ঘটা করে আলোচনা হচ্ছে। আমিও সেই সাক্ষাতকার পড়ে বেশ খানিকটা আহতই হইছি। প্রথমত জাকির তালুকদার আমার বেশ পছন্দের গল্পকার। তার বিশ্বাসের আগুন আমার পড়া অন্যতম পছন্দের গল্প। এছাড়া তিনি শুধু লেখকই নন এই বাটপার সময়ের বিরুদ্ধে অন্যতম কথকও বটে। কিন্তু গল্পপাঠের সাক্ষাতকারে তিনি যেভাবে শহীদুল জহিরকে উপাস্থাপন করেছেন তা কতটুকু যৌক্তিক? লেখার সর্বজনীন একটা কাঠামো থাকে। সবাই মূলত সেই কাঠামোতেই লিখে থাকেন। বিষয় বৈচিত্র্য ও চরিত্রায়নের ভিন্নতায় কেউ কেউ কিংবদন্তী হয়ে উঠেন। আবার অনেকেই আসেন যারা সব কাঠামো ভেঙে চুড়ে নতুন কোন কাঠামোর নির্মাণ করেন। শহীদুল জহির সেই দ্বিতীয় গোত্রের হাতেগোনা কয়েকজনের একজন। যিনি গল্প লেখার পর মুলত বাংলা ভাষায় গল্প লেখা একটু কঠিনই বটে। বিশ্বাস না হয় তো সমসাময়িক গল্পকারদের গল্পপাঠ করুন নিজেই বুঝতে পারবেন। অধিকাংশই কোন না কোনভাবে শহীদুল জহির দ্বারা প্রভাবিত। যেহেতু তিনি নিজের কাঠামোর মধ্যে থেকে গল্প লিখেছেন। অধিকাংশ স্থানে তার বয়ান মূলত একই রকম শুনায়। কিন্তু সেটাই কি লেখকের সার্থকতা নয়? সবাই সারাজীবন লিখে নিজের একটা ব্যক্তিত্ব নির্মাণের চেষ্টা করেননা? যেখানে নাম ছাড়াও শহীদুল জহিরের লেখা পড়ে আমি বলে দিতে পারি লেখকের নাম। আমার মনে হয় লেখক সেভাবেই লিখতে চান যেভাবে নিজের ভাষা, নিজের চরিত্র, নিজের ব্যক্তিত্বকে তীব্রভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। সেক্ষেত্রে শহীদুল জহিরকে ব্যর্থ বলাটা মেনে নেওয়া যায়না।
উত্তরমুছুন5 hours ago · Like · 6
Shiplu Rahman আমি লেখক নই। তবে বাংলা সাহিত্যের একজন মুগ্ধ পাঠক। আমি মনে করি বাংলা সাহিত্য আন্তর্জাতিক মানের। বা সেটা না হলেও অন্তত সেই মানের কাছাকাছি। যে কয়েকজন লেখক আমাদের সাহিত্যকে এই মানে নিয়ে গেছেন শহীদুল জহির তাদের একজন। তিনি আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তার 'সে রাতে পুর্নিমা ছিল' পড়ার পর অনেক দিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সমসাময়ীক অনেক লেখা পড়েও সেই অনুভূতি হয় না। তিনি তার সাহিত্যকর্ম শুরু করার আগেই চলে গেলেন। এটা বাঙলা সাহিত্যের জন্য অসম্ভব রকমের একটা ক্ষতি। থাক সে কথা। লেখক এবং ব্যাক্তি হিসেবে জাকির ভাই আমার অনেক পছন্দের একজন মানুষ। বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে তিনি যেভাবে এগিয়ে যা্ছেন তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় অদূর ভবির্ষতেই তিনি আমাদের জাতীয় গর্বের একজন মানুষ হয়ে উঠবেন। হয়তো ইতিমধ্যে হয়ে উঠেছেনও। কিন্তু বিনয়ের সাথেই বলছি শহীদুল জহির সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়নের সাথে একমত হতে পারলাম না। তিনি যতই এটা তার নিজের মত বলুন না কেনো। তার কারন আমি যতটুকু জানিবুঝি একজন লেখকের সারা জীবনের সাধনা থাকে, সাহিত্যে নিজের মতো করে একটা ধারা সৃষ্টি করার। এটা করতে না পারলে তার সাহিত্য অমরত্ব লাভ করতে পারেনা। শহীদুল জহির মাত্র কয়েকটা লেখাতেই সেটা করে ফেলেছেন। তাই বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে শহীদুল জহির ততদিন বেঁচে থাকবেন। শুধু গল্প বলার ধরনেই নয় বাংলা সাহিত্যে পরাবাস্তবতার এমন অসাধারণ প্রয়োগের কারনেও তিনি অতুলনীয়। পরাবাস্তবতার প্রয়োগ আরো অনেকেই করেছেন কিন্তু আমার মনে হয় তারা শহীদুল জহিরকে অতিক্রম করতে পারেননি। হয়ত তিনি বেঁচে থাকলে আমরা আরো নতুন কিছু পেতাম। হয়ত তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যেতেন। তার প্রথম আর শেষ দিকের উপন্যাসগুলো পড়লে এমন একটা পরিবর্তন কিন্তু লক্ষ্য করা যায়। তার পরেও নিজের অসামান্য সৃষ্টি কর্মের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবেন।
3 hours ago · Like
Shuvaraj Biswas durbaggo
3 hours ago · Like
Fazlul Kabiry 'আমার কাছে ব্যর্থতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির।'-এই মন্তব্য একজন লেখককে নিয়ে কোনো তামাশা নয়, মূলত তা হতে পারে একজন নিষ্ঠাবান সমালোচকের সাহস ও সততার দলিল। তবে আমরা সমালোচনা পাঠে এতটাই প্রতিক্রিয়াশীল নই যে, কোনো লেখক অন্য কোনও লেখক সম্পর্কে এ-রকম মন্তব্য করলেই গ্রোগ্রাসে গিলে ফেলবো। কথা হচ্ছে সমালোচক কতটুকু দায় নিয়ে, যুক্তির নিক্তিতে মেপে পাঠকের কাছে একজন লেখককে ভিন্নরূপে হাজির করতে পারে, তার উপরই নির্ভর করে পাঠক লেখাটিকে কীভাবে নেবে...
about an hour ago · Edited · Like · 1
সাহিত্যের মানদণ্ড তাঁর পাঠক ও অতিবাহিত সময়কাল। কাজেই ঢালাওভাবে আমরা যেমন কাউকে খারিজ করতে পারি না। তেমন বর্জনও করতে পারি না। রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে হাংরি জেনারেশনের একজন গদ্যকার ও কবি শৈলেশ্বর ঘোষ খুব রূঢ় মন্তব্য করেছিলেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথকে তিনি ‘জমিদারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধনও করেছিলেন। সেটা যে নিতান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা তার প্রমাণ বর্তমান সময়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য। তাঁর সৃষ্টি আমাদের আত্মার অক্সিজেন স্বরূপ। তাই ব্যক্তিগত কোনো মন্তব্য দিয়ে কোনো লেখককে বিচার না করাই শ্রেয়। শহীদুল জহির তাঁর আত্মগুণেই টিকে থাকবেন এবং সেটাই হবে সাহিত্যের বিচারে উপযুক্ত প্রাপ্তি। -------------- গৌতম গোস্বামী
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুনKuloda Roy জাকির তালুকদার একজন ভালো গল্পকার-উপন্যাসিক। তিনি শহীদুল জহিরকে পড়ে অভিমত বা ও পিনিয়ন রেখেছেন। এ ওপিনিয়ন অন্যদের পছন্দ হতে পারে, নাও হতে পারে। তার ওপিনিয়ন যে সবাইকে মানতেই হবে--না মানলে তিনি জোর করে মানানোর জন্য জোর-জবরদস্তি করবেন, এমন দাবী কিন্তু জাকির তালুকদার করেননি। তিনি বলেছেন যে তিনি মনে করেন--শহীদুল জহির ব্যর্থতার চূড়ান্ত হচ্ছেন শহীদুল জহির। কোন ক্ষেত্রে? গল্পলেখার ক্ষেত্রে। শুরুতে কেমন লিখতেন শহীদুল?
উত্তরমুছুনজাকির তালুকদার বলছেন--তিনি যখন শুরু করেছিলেন তখন তিনি অসাধারণ ছিলেন। তবে পড়তে গিয়ে তালুকদারের মনে হয়েছে শহীদুলের এই অসাধারণত্বের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমে এসেছে। তিনি কি বটতলায় নেমে এসেছেন? না। তিনি শেষ পর্যন্ত অসাধারণ গল্পকারই বটে। কিন্তু তারঁ নিজের শুরুর দিকে যে ধরনের গল্প লিখতেন, যে ধার ছিল, যে আখ্যান ছিল, যে নতুন নির্মাণ ছিল-- পরের দিকের গল্পগুলোতে সেগুলোই ছিল--সেগুলিই বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। । নতুন নির্মাণ, উদ্ভাসন ছিল না। একই ধরনের গল্পের মধ্যেই থেকে গেছেন। বৃত্তাবদ্ধ হয়েছেন। বৃত্ত ভেঙ্গে নতুন পথের দিকে হাঁটেননি। নিজেকে অতিক্রম করতে পারেননি। এটাই তাঁর ব্যর্থতা।
তার মানে কি জাকির তালুকদার মনে করছেন শহীদুল তাঁর অপ্রিয় গল্পলেখক? নিশ্চয়ই নয়। জাকির তালুকদারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় লেখক কে বা কারা। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল--কেনো তারা প্রিয়? এই প্রিয় গল্পকারদের সফলতাগুলি কি কি? এবং ব্যর্থতাগুলি কি কি।
তিনি শহীদুল জহীরের নাম নিচ্ছেন তার প্রিয় গল্পকার হিসেবেই।
তিনি প্রিয় বলেই তাঁর গল্পগুলো জাকির গভীরভাবে পড়েছেন। পড়ে খুঁজে পেয়েছেন গল্পের কিছু ফাঁক ফোকর। সেই ফাঁক ফোকরগুলি কি রকম সেটাও জাকির তালুকদার লুকিয়ে যায়নি। নিজের কথার সমর্থনে যুক্তি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে জাকির তালুকদার অত্যন্ত সৎ থেকেছেন।
জাকির তালুকদারের এই যুক্তি যারা মানছেন না তাদের দ্বায়িত্ব হল--পাল্টা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যে--শহীদুল জহিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ব্যর্থতার অভিযোগটি ঠিক নয়।
এটাই বুদ্ধিবৃত্তিক সমালোচনা পদ্ধতি।
ধরা যাক রবীন্দ্রনাথ ছোটো গল্পের জনক। তার গল্প অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু তার শুরু দিকের গল্প যেমন ঘাটের কথা কোনো অতি দুর্বল গল্প। আবার শেষের দিকে গল্পগুলোও নিজের আগেকার গল্পের অনেক ছাপ পড়েছে। অথবা ধরুন তাঁর শেষের কবিতা। আবেগের প্রবল উছ্বাসে গল্প ভেসে গেছে। দুর্বল বাঁধুনি। এধরনের সমালোচনা আছে। সমালোচক উদাহরণ দিয়ে দিয়ে তার কথার স্বপক্ষে যুক্তি হাজির করেছেন। যিনি সমালোচনাটি করছেন--তিনি কি রবীন্দ্রনাথকে খাটো করছেন? নিশ্চয়ই নয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের শক্তিমত্তা জেনেই কিন্তু তার সমালোচনা করছেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিক্ষমতার ক্ষেত্রটাকে মনে রেখেই কথাগুলো বলেছেন।
ফলে শহীদুল জহিরকে সমালোচনা মানেই তাকে খাটো করা হয় না। তাকে নতুন করে দেখার সুযোগটি করে দেয়। মনে রাখা দরকার জাকির তালুকদার এমন দরের গল্পকার যিনি গল্প লেখেন--ভালো গল্পই লেখেন। তিনি যখন কারো গল্প নিয়ে কথা বলেন সেটা কোনো অর্থেই ছেদো কথা নয়। একজন শিল্পীর চোখ দিয়ে আরেকজন শিল্পীর শিল্পকর্মকে বিচার করছেন মাত্র। আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের ইঞ্জিন নিয়ে কথা বলছেন না।
জাকির তালুকদারকে যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতেই মোকাবেলা করুন। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আক্রমণ করবেন না--এ অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদ।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন"জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা" পড়ার পর মত বদলাতে হচ্ছে, শুধু নির্মাণশৈলী,ভাষারীতি ইত্যাদির কারনে নয়,একজন অত্যন্ত শক্তিমান সাহিত্যিক হিসেবেই শহীদুল জহির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন
মুছুন(অন্তত বাংলাসাহিত্যে তো বটেই, বোধহয় বিশ্বসাহিত্যেও),এবং তাঁর উপন্যাসকে প্লট,পিপল,কনটেন্ট প্রভৃতি পচে যাওয়া টার্মিনোলোজির ছুরি বসিয়ে ব্যবচ্ছেদ করার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে
"সে রাতে পূর্ণিমা ছিল" তার সমস্ত আবেশী শক্তি সত্বেও তখনই মহৎ সৃষ্টি হবে যদি "শিল্পের ইতিহাস আসলে আঙ্গিকের ইতিহাস" এই আপ্তবাক্যটিকে ধ্রুব ধরে নিয়ে, অস্কার ওয়াইল্ডের সেই আদিম মন্তব্যেই আমরা আস্থা রাখি( Books are well written or badly written. That is all) , আর এতো অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই যে এই বইটি শুধু "well written" ই নয় "superbly written" ।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুন