সহকর্মী বাবু সন্তোষ কুমার বিপি-এড। তখন গ্রীষ্মের খরদুপুরে কর্মঅবসরে আমরা আরো কয়েকজন বসেছিলাম বাইরের হাওয়া বেঞ্চটাতে। আগামীকাল থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আমাদের নয়, আমাদের ছেলে-মেয়েদের। সেখানে দায়িত্ব পালনে গেলে অনেককেই ছুটি নিতে হবে। সেই আলোচনায় আমাদের গরমবোধ দূর হচ্ছিল। সন্তোষ বাবু সে ডিউটিতে যাবেন না, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক সে বিবেচনাতে। অথচ তিনি কেমন ভাবলেশহীনভাবে বলছিলেন, তাকেওতো ছুটি নিতে হবে। সাথে সাথে প্রশ্ন খাড়া হলো চৌদিক থেকে তার মুখের 'পরে - কেন ? তাক কেন নিতে হবে ?
আমার বাবা-মা কেউ নেই দুনিয়াতে। বাবার মৃত্যুর আগে মা মারা গেছেন আজ প্রায় সাত বছর। আমরা সন্তোষ বাবুকে প্রবোধ সান্ত্বনা দিতে থাকি। কিন্তু মা’র কথা মনে হতেই ভেতরটা বাষ্পাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা স্বাভাবিক মানুষ লোনা বর্ষা নামালে কি চলে ? সেই দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল চোখটা কেমন ছলছল করছেই। টেবিলে কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। তখন সেই দুপুর বেলা মিনিট পনের পরে হাসান সাহেব তার সিগাট টানা শেষে এসে সন্তোষ বাবুকে বলেছিলেন - বাবু চোখ-মুখটা ধুয়ে আসেন।
জানালেন তিনি - বয়:বৃদ্ধ জন্মদাত্রী মা মৃত্যুশয্যায়। তিনি কেমন স্বাভাবিকভাবে বলে যাচ্ছিলেন - হয়ত আর একদিনের অপেক্ষা। আমাদের মধ্যে তখন ওনাদের সম্প্রদায়ে বাবা-মা মারা গেলে সন্তানকে যে ব্রত পালন করতে হয় তাই নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি বলছিলাম, এলাকা বিশেষে মুসলমানদের মধ্যেও ওনাদের মতো নিরামিষ ভোজীতা লক্ষ্য করা যায়, হাসান সাহেব বলছিলেন, পাতলা ডাল আর কয়টা সাদা ভাত রেঁধে দেওয়া হয় মৃত বাড়িতে। এমনি আলাপচারিতায় আমাদের সবার দৃষ্টি আবার সন্তোষ বাবুর ওপর গিয়ে পড়ে। সন্তোষ বাবু ফের বলছিলেন, বাড়িতে হয়ত গাছকাটা শুরু হয়ে গেছে...। হাসান সাহেবের ছাদে সিগারেট টানতে যাওয়ার তাড়া। সন্তোষ বাবুর ও রুপ বচনে হাসান সাহেব স্বর উচ্চ করে আহা ! করে সন্তোষ বাবুর শেষ উক্তিটা রিপিট করলেন আর তখন ভাবলেশহীন স্বাভাবিক ভঙ্গীতে থাকা ভদ্র শান্তশিষ্ট স্বভাবের আমাদের ৪৬-৪৭ বয়সী সন্তোষ বাবু সবাইকে করে দিয়ে ছোট শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠলেন। যা আমরা কেউ প্রত্যাশা করেনি, তাই ঘটে গেল মুহূর্তে।
আমার বাবা-মা কেউ নেই দুনিয়াতে। বাবার মৃত্যুর আগে মা মারা গেছেন আজ প্রায় সাত বছর। আমরা সন্তোষ বাবুকে প্রবোধ সান্ত্বনা দিতে থাকি। কিন্তু মা’র কথা মনে হতেই ভেতরটা বাষ্পাকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা স্বাভাবিক মানুষ লোনা বর্ষা নামালে কি চলে ? সেই দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল চোখটা কেমন ছলছল করছেই। টেবিলে কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। তখন সেই দুপুর বেলা মিনিট পনের পরে হাসান সাহেব তার সিগাট টানা শেষে এসে সন্তোষ বাবুকে বলেছিলেন - বাবু চোখ-মুখটা ধুয়ে আসেন।
0 মন্তব্যসমূহ