রাজু আলাউদ্দিনের গল্প : মুখোশের স্বীকারোক্তি

ওর চেহারার গাম্ভীর্য দেখে অনুমান করতে পারিনি আসলে ঘটনাটা কী। কদিন থেকেই এ অবস্থা চলছে। আমি অবশ্য রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করিনি। করিনি এ কারণে যে ঐ চেষ্টার কারণে না আবার লুকানো বিষয়টি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে।

বাসায় ফিরতে ফিরতে আমার রাত হয়ে যায়। আসলে অফিসে তো যাই বিকেলবেলা। কিন্তু তারপরেও আমার স্ত্রীর ধারণা আমি অন্য কারোর সাথে সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরছি।


বেড রুমে ঢুকতেই আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে ও জিজ্ঞেস করলো-- আয়েশাকে তুমি চিঠি দিয়েছ?

ওর প্রশ্নটা আমার শরীরকে একটু যেন বিবশ করে দিচ্ছিল, আমি প্রতিরোধের ভঙ্গীতে বললাম-- ওকে চিঠি দিতে যাব কেন? মুখে এ কথা বললেও ভিতরে ভিতরে আমার রীতিমত ঘাম ছুটে যাচ্ছিলো ওর সামনে। ফলে ওর পরিবর্তে আমি নিজেই ওর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠি।

--সন্দেহ করাটা তোমার একটা রোগ ওঠে উঠেছে। কোনো মেয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে দেখলেই তুমি আমাকে সন্দেহ কর। এর আগেও আমি দেখেছি, সেদিন তোমার সামনেই আমি দিঠিকে ফোন করেছি। অন্যায়টা কী করেছি? ওর সঙ্গে আমার কাজ ছিল সে কারণেই ফোন করা। ওর কাছ থেকে লেখা চাইতে হয় অফিসের প্রয়োজনে। আমি কি অফিসের কাজও করতে পারবো না?

কপট রাগটাই ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠতে লাগলো আমার মধ্যে। এর আগে ঘটে যাওয়া এ রকম সব উদাহরণ আমি ওর সামনে জড়ো করতে লাগলাম। কিন্তু ওকে এতে মোটেই দুর্বল দেখালো বলে মনে হচ্ছে না। আমার বলা শেষ হওয়ার আগেই আমাকে ও অব্যর্থ বল্লমে বিদ্ধ করার জন্য বললো,মনীষার নামে কছম খেয়ে বলতো তুমি ওকে চিঠি দিয়েছে কিনা? চিঠিতে নেরুদার একটা প্রেমের কবিতা পাঠিয়েছ কিনা?

মনীষাকে এর মধ্যে টেনে আনার দরকার কী? বুঝতে বাকি রইলো না ব্যাপারটা ও জেনে গেছে। তাহলে ও কি আমার পাস ওয়ার্ড জেনে ফেলেছে? নিশ্চিতভাবেই জেনেছে অথবা এমনও হতে পারে ওর অগোচরে আমি যখন মেইল করেছিলাম তখন বিদ্যুত চলে যাওয়ায় সব ও রকমভাবেই রয়ে গেছে এবং আবার যখন বিদ্যুত ফিরে এসেছে তখন আমি আর কম্পিউটার স্ট্যার্ট করে সাইন আউট করতে ভুলে গেছি। বিকেলে অফিসে চলে যাওয়ার পর ও তাহলে নিশ্চয়ই কম্পিউটার স্ট্রার্ট করে আমার মেইলে প্রবেশ করেছে। কিংবা এও হতে পারে যে মেইল খোলা না থাকলেও ইনবক্সে যে সব নতুন মেইল প্রবেশ করছে কম্পিউটারে তার একটা নোটিফিকেশন আসতে থাকে। স্ক্রীনের ডান দিকে নিচের কোনায় সেটা দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায়। জিমেইল ব্যবহারের এই এক অসুবিধা। বেশি সুবিধা দিতে গিয়ে আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে । যে-ভাবেই হোক ব্যাপারটা ওর নজরে পড়েছে। এখন আর কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিধ্বস্থ আমি শেষ প্রতিরোধ হিসেবে বললাম, হ্যাঁ ওকে নেরুদার প্রেমের কবিতা পাঠিয়েছি, কিন্তু এতে দোষের কী আছে? আমি তো আর বলিনি যে তোমাকে ভালোবাসি।

--দোষেরর কিছু নেই? তাহলে আমি কোনো ছেলেকে প্রেমের কবিতা পাঠালে কিছু মনে করবে না?

পাটানোর মধ্যে আমি কোন দোষ দেখি না। প্রথমে আমার মিথ্যাচার পরে এই স্বীকারোক্তি আর এখন এই অবিশ্বাস্য উক্তিতে ও যে ক্ষিপ্ত, বিরক্ত তা ওর শরীর ও অভিব্যক্তির মধ্যে লেলিহান শিখার মতো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। আমি ওর ক্রোধের শিখায় রীতিমত ঝলসে যাচ্ছিলাম। অপমানবোধ ওকে যেন আরও ক্ষিপ্ত করে তুলেছিলো।

চিঠিটা ও পুরোপুরি দেখেছে কিনা আমি এখনও নিশ্চিত নই। তবে আয়েশার প্রতি আমার আগ্রহটা ও টের পেয়ে গেছে এটা নিশ্চিত।

আমার ছেলের স্কুল গেটে আয়েষাকে দেখে আমি প্রথমে ভাবিনি যে ও অবাঙালি। আমি এবং আমার স্ত্রী যখন ছেলেকে আনতে যেতাম তখন আমরা দুজনই ওকে দেখেছি। আমরা ওকে নিয়ে কথা বলেছি। এই গরমের মধ্যে মাথায় স্কার্ফ আর এরকম জোব্বা পরে কেউ আসতে পারে? ওকে নিয়ে এক রকম হাসিঠাট্টাই করেছি। আমার স্ত্রীই প্রথম আয়েশা সম্পর্কে আমার মনযোগকে কেন্দ্রীভূত করার সূচনা করে। আয়েশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতো ওর মেয়ের অপেক্ষায়। মেয়েটা এলে ইংরেজিতে দুএকটা কথা বলে নিয়ে চলে যেতো। অন্য কারো সঙ্গে কখনো কথা বলতে দেখিনি। এখনকার অনেক বাবা মা সন্তানদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন যাতে ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে বুঝার উপায় ছিল না আয়েশা ভিনদেশী।

এরপরে হঠাৎ করেই একদিন আবিস্কার করলাম আমরা একই দোকান থেকে কেনাকাটা করছি। আয়েশাই এগিয়ে এসে জানতে চাইলো, তোমার বউ কেমন আছে। ওকে প্রেগনেন্ট দেখেছিলাম।

ভালো আছে, আমাদের মেয়ে হয়েছে।

--ও, তাই নাকি?

সৌজন্যের খাতিরেই ওকে বললাম, চলে আস একদিন মেয়েকে দেখতে।

--অবশ্যই আসবো।

বাসায় ফিরেই আমার বউকে বললাম, জান, আজকে ওই মহিলার সঙ্গে দেখা হলো। তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছে। মনীষাকে দেখতে আসতে চায়।

--কোন মহিলা ?

ঐ যে মোটা মতো কালো, মাথায় স্কার্ফ-পড়া আর বোরখা-পরা মহিলাটা। খেয়াল নেই তোমার?

--ও হ্যাঁ হ্যাঁ । কোথায় পেলে ওনাকে?

--মেগাশপে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলো ।

--আসতে বলনি?

--বলেছি তো, তোমার ফোন নাম্বারও ওকে দিয়েছি। ফোন করবে যে কোনো দিন।

আমার বউকে অবশ্য সে ফোন করেনি, করেছিল আমাকে। এক দুপুরে ওর ফোন এলো।

--তুমি বিকেলে আজকে বাসার থাকবে?

--হ্যাঁ থাকবো। আসতে চাচ্ছ? চলে এসো।

কথা শেষ করে বউকে বললাম, আয়েশা আজ বিকেলে আমাদের এখানে আসবে।

--কী রান্না করবো ওদের জন্য ?

আমি উদাসীন ভঙ্গীতে বললাম, রাঁধ তোমার যা ইচ্ছা ।

কী খায় না খায় তা তো আমি জানিনা ।


সন্ধ্যার দিকে এক গাদা খাবার নিয়ে প্রবেশ করলো আয়েশা, সঙ্গে ওর মেয়ে আর কোলে ছোট্ট ছেলেটি।

--এসব আবার আনতে গেলে কেন?

আমার বউকে নিজের পরিচয় দিলো। কথাবার্তা মূলত আমার সাথেই হচ্ছিলো। আমার বউ ইংরেজি জানে না। অন্যদিকে আয়েশা বাংলা দুএকটা শব্দ জানলেও স্প্যানিশও এক বর্ণও বোঝে না। ইতিমধ্যে আমার বউ জেনে গেছে আয়েশা দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়ে। সুতরাং ইংরেজি ছাড়া অন্য কোন ভাষায় যোগাযোগ সম্ভব নয়। সপরিবারে আয়েশার সাথে যোগাযোগ ঐ একবারই। কিন্তু ঐ যোগাযোগই আমাকে ক্রমশঃ আয়েশার দিকে আগ্রহী করে তুলেছিলো। দেখতে যে খুব সুন্দরী তা নয়। আমার বউয়ের তুলনায় যে কেউ ওকে অসুন্দর বলতে দ্বিধা করবে না। সৌন্দর্য্যরে প্রশ্নে যে কোন সংস্কৃতির মানদন্ডেই আয়েশা আমার বউয়ের তুলনায় অনেকটাই নিচে।



তাছাড়া বেশ মোটাও। রাগে, ক্ষোভে বউতো বলেই ফেলেছে, আমার মধ্যে কী এমন নেই যা তুমি ওর মধ্যে খুঁজে পেয়েছ? কালো কুৎসতি আর বোরখা-পরা মেয়েদের প্রতি তোমার টান তৈরি হচ্ছে কেন? মেহিকো থাকতে তো তোমার মধ্যে এসব দেখিনি। কী হয়েছে তোমার? বুড়া বয়সে ভীমরতি?

ভীমরতি কিনা জানি কিন্তু অন্য এক রতি-তৃষ্ণা যে আমার মধ্যে ধীরে ধীরে জাগ্রত হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। একই শরীর আমার মধ্যে যৌন আকর্ষণকে স্তিমিত করে ফেলছে। আমার স্ত্রী এ নিয়ে অভিযোগও করেছে দু’একবার । সেই আকর্ষণকে ফিরে পাওয়ার জন্য হয়তো নয়, কিন্তু অন্য নারীর সাথে যৌন মিলনই ফিরিয়ে দিতে পারে স্ত্রীর প্রতি যৌন আকর্ষণ--এই অনুভুতিটা অবচেতনে কোথাও আমার মধ্যে রয়ে গেছে বলেই কি আয়েশার প্রতি আমার আকষর্ণ?


গতকাল রাতে আয়েশাকে অফিস থেকে ফোন করেছিলাম। পাঠানো কবিতার জন্য আয়েশা আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। বললো, কাল বিকেলে আমাদের বাসায় চলে আস তোমার বউ বাচ্চা নিয়ে।

আমি বললাম, মেয়েটা অসুস্থ্য, তাই ওর মা আসতে পারবে না। তুমি চাইলে আমি একা আসতে পারি।


--দেখ, আমি চাইনা তোমার সংসার ভেঙে যাক।

--সংসার ভাঙবে কেন? আমার বউতো জানবে না যে আমি তোমার কাছে আসছি। আয়েশা কিছু বললো না।

--কয়টায় আসবো বল। সময়টা নির্ধারণ করার জন্য আমি উতলা হয়ে উঠলাম। ওকে, সিক্ত করার জন্য বললাম, তোমার অদ্ভুত একটা সৌন্দর্য আছে।

--আমি তো সুন্দর নই।

আমি ওকে দুর্বল করার জন্য বললাম, আয়েশা, শরীরটা আমার কাছে মুখ্য নয়, মনটাই আসল। তোমার মনের মতো অপূর্ব সৌন্দর্য আমি আজও কেনো মেয়ের মধ্যে পাইনি। কটা মেয়ে কবিতা ভালোবাসে বল? তার উপরে নেরুদার কবিতা। নেরুদার নামই তো শোনেনি অনেক মেয়ে। আমি নিশ্চিত আয়েশাও শোনেনি। নেরুদা কেন, হয়তো ওদের দেশের কোন কবির নামও জানে না। কিন্তু একবার যেহেতু ও আমাকে বলেছে কবিতা ভালোবাসে এবং আমাকেও কবিতা পাঠাতে বলেছে, অতএব এখন আমাকে প্রতিরোধ করা কঠিন।

--বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে চলে আস। আয়েশা এমনভাবে বললো যেন আমার সঙ্গে অন্য কারোর না, কেবল আমার একা আসার কথাই ও বলতে চেয়েছে।

বাকি সময়টুকু আমি আয়েশাকে নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করতে লেগে গেলাম। তেমন কোন জরুরী কাজ না থাকায় আমি পুরো সময়টা আয়েশাতে ঢেলে দিতে পেরেছিলাম। ওর জন্য ছোট্ট একটা ফুল নিলে কেমন হয়? ব্যাপারটা কি খুব বেশি এগিয়ে যাওায়ার প্রতীক হয়ে উঠবে ? মাথা থেকে এক সময় এই পরিকল্পনাটা বাদই দিলাম । সিদ্ধান্ত নিলাম খালি হাতেই যাবো । পুরোপুরি না জেনে এসব করা ঠিক হবে না ।


আয়েশার কাছে আমি গেলাম পাঁচটায়ও নয়, ছয়টারও নয়, ঠিক সাড়ে পাঁচটায় গিয়ে পৌঁছালাম। বসুন্ধরাতেই থাকে। তেতলার এক ফ্লাটে। ঘরে আয়েশা, তার ১০ বছরের মেয়েটি আর কোলে দেড় বছরের এক ছেলে।

আয়েশার কাছ থেকে এর আগেই জেনেছিলাম ওর স্বামী এখন আফ্রিকায়। স্বামী বাংলাদেশেই আরেক বিয়ে করা নতুন বউ নিয়ে এখন আফ্রিকায় থাকে। কী এক ব্যবসা করে বলেছিলো। কিন্তু আয়েশাকে ছেলেমেয়েসহ এখানে রেখে খরচপাতি দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়। টাকা পয়সা ঠিকঠাক মতো পাঠায়। কিন্তু ঐটুকুই।

আয়েশা আমাকে সোফায় বসতে বলে নিজে অন্য আরেকটি সোফায় বসলো। বললাম দুরে কেন, আমার পাশে বস।

কোন আপত্তি না করে আমার পাশে এসে বসলো। সৌজন্যমূলক দু’চার কথা বলার পরই ও উঠে গিয়ে আমার জন্য দু’চার রকমের ফল কেটে নিয়ে এলো। ছেলেটাকে কোলে নিয়েই আমার পাশে এসে বসে হঠ্যাৎ করে জানতে চাইলো, আচ্ছা বলতো, বিবাহিত পুরুষরা অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় কেন?

আমি বুঝতে পারছিলাম কী বলবো। আমি মমতার সাথে ওর খালি হাতটা আমার মুঠোর মধ্যে ভরে নিলাম। আস্তে আস্তে প্রেমময় স্পর্শে, ওর মধ্যে আস্থা তৈরি করতে চাইলাম। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম কোন উত্তর ওকে মুগ্ধ করবে। উত্তরটাকে জটিল করার জন্য উল্টো ওকেই প্রশ্ন করলাম, দেখ এর সঠিক উত্তর কী হবে জানি না। তবে আমার যা ধারণা তা তোমাকে বলতে পারি। আমার কাছে দুটো উত্তর আছে। তুমি সত্যিকারের উত্তরটা শুনতে চাও নাকি মিথ্যেটা?

আয়েশা একটুও চিন্তা না করে বললো, আমি তোমার কাছে সত্য উত্তরটাই শুনতে চাই।

আমি ইতিমধ্যে ওর শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছি। আমার শরীর ওর স্পর্শে বহুদিনের অভ্যস্ত ঘুম থেকে জেগে উঠতে শুরু করেছে। শরীরের মধ্যে এক ঢেউয়ের গর্জন মুখ দিয়ে বরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু মুখের কাছে এসে যথার্থ অভিব্যক্তির অভাবে তীরে এসে যেভাবে ঢেউগুলো তাদের আকৃতি ও শক্তি হারিয়ে ভেঙে যায় আমার বেলায়ও ঠিক সে রকম হচ্ছে। প্রচলিত শব্দগুচ্ছের মধ্য দিয়ে আমার মুখ দিয়ে এই ভেঙে-পড়া ঢেউয়ের গর্জনের সামান্য অভিব্যক্তি হিসেবে বললাম, আয়েশা তুমি অপূর্ব সৌন্দর্য্যরে এক নমুণা। জানি না তোমার স্বামী তোমার মধ্যে কেন এই সৌন্দর্য্য খুঁজে পায়নি। সৌন্দর্য্য আবিস্কারের জন্য সৌন্দর্য বোধ থাকতে হয়। ওটা না থাকলে চোখের সামনে সৌন্দর্য থাকলেও তা দেখা যায় না। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওকে চুমু খেতে গেলাম ওর আফ্রিকান পুরু ঠোঁটে। ঠোঁটটা ছোঁয়ার সুযোগ দিয়ে ও আমাকে হাত ধরে টেনে আবার বসিয়ে দিলো।বললো, তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দেওনি।

--দেব, সোনা।

আমি বসে থেকেই ওর বিশাল শরীরের সবটুকু আমার শরীরের ভেতরে পেতে চাওয়ার জন্য দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকলাম।

--তুমি তো জান আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি, তুমিও তাই। কিন্তু পুরুষরা-- জানি না মেয়েরাও কিনা-- স্বভাবত বহুগামী, মানুষতো আসলে প্রাণীদের চেয়ে আলাদা কিছু না। ভেতরের পশুটাকে দমিয়ে রেখে আমরা একগামী থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের চাওয়ার চেয়ে আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি অনেক বেশি শক্তিশালী। এক ঘেয়েমী আমাদেরকে ক্লান্ত করে। একই শরীরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলি।

--তোমার বউকে তাহলে তুমি আর ভালোবাস না?

জানি না শুধুই কৌতুহল নাকি দ্বিমত প্রকাশের জন্যই আয়েশা আমাকে এই প্রশ্নটা করেছে কিনা।

--না, আয়েশা, আমার বউকে আমি ঠিকই ভালোবাসি। কিন্তু তোমাকে আমার সত্য অনুভুতিটা বললাম। তুমি আমার কাছে সত্য কথা জানতে চেয়েছ। আর তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই তোমার কাছে আমি স্বচ্ছ থাকতে চাই।

আয়েশা আমাকে ফল খাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে বললো, তুমি ঠিকই বলেছ। আসলেই তাই।

কোলের ছেলেটা ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। বললাম, ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছ না কেন? বিছানায় শুইয়ে দিলে তো তোমার কষ্ট করে কোলে রাখতে হয় না।

বিছানায় নিলেই ও জেগে উঠবে। আজ সারাদিনই বিরক্ত করছিলো। চোখ দুটো কেন জানি লাল হয়ে আছে। সাতটার দিকে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা।

সাতটার দিকে ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছে তা আমাকে আয়েশা আগে বলেনি।

আমি বেশ কয়েকবারই চাইছিলাম ছেলেটাকে শুইয়ে দিক যাতে ওকে আরও অন্তরঙ্গভাবে পাওয়া যায়। মেয়েটা ওর ঘরে কম্পিউটারে খেলায় মত্ত। আমি যতবারই ওকে আরও কাছে পেতে চাইছিলাম ততবারই মেয়ের অজুহাত দিচ্ছিলো। আমি পীড়াপিড়ি করায় আয়েশা শেষে আমাকে বললো, আজ না, আরেকদিন হবে।


লেখক পরিচিতি
রাজু আলাউদ্দিন

কবি। অনুবাদক। প্রবন্ধকার।
স্পানিশ ভাষা বিশেষজ্ঞ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ

  1. ভাল লাগলো । গল্পের ডিটেইলের কাজ ভাল লেগেছে ।

    উত্তরমুছুন
  2. valo laglo.basobe ajkal ja ghotce tar bimurta rup.

    উত্তরমুছুন
  3. ডিটেলিং সুন্দর। নরম লেখা।
    শ্রাবণী দাশগুপ্ত।

    উত্তরমুছুন
  4. পড়লাম। লুকিয়ে কী লাভ! তবুও লুকাতে হয়! আর কিছু বলা সে আমার কাজ নয়!

    উত্তরমুছুন