শুক্কুরবারের কান্ডটা ঘটানোর আগে কাশেম
আমাদের গ্রামে পাত্তা পাওয়া
কেউ ছিল না।
অথবা এটা বললে
ভালো হয়, কাশেমকে নিয়ে
বহুকাল আমাদের মাথা ঘামাতে
হয়নি। কিন্তু শুক্কুরবার
আছর ওয়াক্তের পর থেকে কাশেমকে
পাত্তা দিতে শুরু করতে
হয় আমাদের। শুক্কুরবার
দুপুরের একটু পর পর
কাশেম গলায় ফাঁস নেয়। তার
জিহ্বা বের হয়ে যায়
আধ হাত এবং সে
মাটি হতে সাত আট
হাত উপরে শূণ্যে ঝুলে
থেকে বাতাসে নড়তে থাকে
ডানে, বাঁয়ে।
কাশেমের শরীরটা পাওয়া যায়
রাঢ়ি খালের গা ঘেঁষে
বাইম মাছের মতো পড়ে
থাকা হাটে যাবার রাস্তার
মাঝ বরাবর। জায়গাটিতে
একটা বাঁক আছে, বাঁকের
খাঁপ বরাবর একটা বিশাল
চালতা গাছ রাস্তাটিকে প্রায়
অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটিতে
রাজ্যের চালতা ধরে, এবার
এখনো চালতা ধরেনি , সবে
মাত্র ফুল এসেছে।
কাশেম এই চালতা গাছের
একটা অপেক্ষাকৃত হালকা ডাল বেছে
নিয়েছিল নারিকেলি কাছিটি বাঁধার জন্য,
যে কাছির ঝোলানো মাথাটি
সে ফাঁসের আকৃতি করে
তার মধ্যে হনু ঠেলে
উঠা মুখ সমেত মাথাটি
ঢুকিয়ে দিয়ে ‘হু আল্লা
হু’ বলে ঝুলে পড়ে। ‘হু
আল্লা হু’ সে বলেছে
এটা আমরা সহজেই ধরে
নিতে পারি, কাশেম যে
কোন কাজের আগেই বাক্যটি
বলতো। চালতা
তলাটি আমাদের কাছে বেশ
গুরুত্বপূর্ণ, এখানেই সকাল, দুপুর
এবং সন্ধ্যায় আমরা হাতের তালুতে
লুকিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে মৌলানা
সাহেবের কণ্যা জাহেদার জন্য
দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম একসময়, সে
সব দীর্ঘশ্বাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের
পুষ্টি এখনও চালতার পুরনো
ডালপালায় খুঁজলে পাওয়া যেতে
পারে।
কিন্তু নিছক গলায়
ফাঁস নেওয়াতেই কাশেমকে নিয়ে মাথা ঘামাতে
শুরু করতে হয় না
আমাদের। নারিকেলি
কাছি আর তা বাঁধার
মতো আম-চালতা-গাব
গাছের কমতি না থাকায়,
গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে
পড়ার কাণ্ড আমাদের গ্রামের
ইতিহাসে নেহায়েত কম নয়।
কাশেমকে পাত্তা দিতে শুরু
করতে হয় তার ঝুলে
থাকা শরীরের গায়ে ঝাপটে
থাকা লাল ফুলের ছাপা
শার্টের পকেটে পাওয়া একটা
চিরকুটের কারণে, মানে চিরকুটের
লেখাটার কারণে। ঘামের
শুকিয়ে উঠা দাগের ব্যাকগ্রাউন্ডে,
ডাক্তারখানার প্যাডের চকচকা কাগজে সবুজ
কালিতে লিখা ইংরেজী অক্ষর
‘জেড’, তার নিচে গোটা
গোটা হাতে লেখা: ‘ইহা
সইত্য’ এবং কোণায় একটা
ঝাপসা ‘লাভ চিহ্ন’ আঁকা। ‘ইহা
সইত্য’ বাক্যটি পরপর দশবার লিখা,
এক লাইনের নিচে আরেক
লাইন। চিরকুটটি
আমরা হাতে নিয়ে দেখার
সুযোগ পাই না, পুলিশ
এসে তার শার্টের পকেট
হাতড়ে চিরকুটটি বের করে, তারপর
বাতাসে ঝুলিয়ে জোরে জোরে
পড়ে। আমরা
তা ভিড়ের ভিতরে খানিকটা
দূর হতে দেখার সুযোগ
পাই এবং দেখেই বুঝতে
পারি লেখাটি কাশেমের নিজ
হাতের। তার
হাতের লেখার সাথে আমরা
পরিচিত।
মুরুব্বীরা ‘জেড’ অক্ষরের মানে
বুঝতে পারে না, কিন্তু
এক ঝলক দেখেই আমাদের
মনে একটা পুরনো স্মৃতি
ঝিলিক মেরে উঠে এবং
আমরা এই সংকেতের মানে
বুঝে ফেলি। চালতা
গাছের শক্ত বাকলে নানাবিধ
যে সব আঁকি বুঁকি
প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়,
তার মধ্যে একবার জেড
অক্ষরের মতো একটা চিহ্ন তৈরী হলে তা
সর্বপ্রথম চোখে পড়ে কাশেমের
এবং সে রাজ্য জয়ের
আনন্দ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠে,
দেখছস, দেখছস, চালতা গাছের
মইধ্যে কোন হারামজাদায় জাহেদার
নাম লিখ্যা রাখছে।
তার সে আবিষ্কারে আমরা
প্রথমে হতচকিত হয়ে গেলেও
সে সময় বিষয়টা নিয়ে
আমরা দীর্ঘদিন হাসাহাসির খোরাক পেয়ে যাই
এবং রঙ্গ করে বলি,
চালতা গাছের মনে হয়
জাহেদারে মনে ধরছে।
সুতরাং সবুজ কালিতে আঁকা
জেড মানে যে জাহেদা,
তা আমরা পরস্পরের মধ্যে
পরামর্শ না করেই স্থির
করে ফেলতে পারি।
প্রশ্ন হলো, ‘ইহা সইত্যে’র কাহিনীটা কি?
এ প্রশ্নের কাছে মুরুব্বীদের মতো
আমরাও থমকে যাই এবং
চিন্তা ভাবনা প্যাঁচ খেয়ে
গেলে কাশেমকে অন্য চোখে আমাদের
দেখতে শুরু করতে হয়,
কেননা, প্যাডের কোণায় ঝাপসা ‘লাভ
চিহ্ন’ আমাদের মনে ‘কুড়কুড়ির’
জন্ম দেয় এক নিমেষে।
হঠাৎ করে আমরা
বুঝতে পারি, কাশেমকে আমরা
এতকাল মনোযোগ দিয়ে দেখিনি। তার
ঠেলে ওঠা দুই গালের
হনু, মাথায় ফোঁড়ার কারণে
চেঁছে ফেলা থোকা থোকা
কদম ছাঁট চুল এবং
মুখে ব্রণের বিচ্ছিরি দাগের
কথা আমাদের মনে আছে। কিন্তু
আরেকটু ডিটেইলস, মানে, তার চোখের
রঙ কিংবা থুতনির আকার
কিংবা কপালের দৈর্ঘ্য, এমন
সব জিনিস বারবার চেষ্টা
করেও আমরা মনে করতে
পারি না। তারো
চে’ বড় কথা, জেড
দিয়ে জাহেদাকে ইংগিত করার কারণের
বিন্দু বিসর্গও আমাদের মাথায় ঢোকে
না।
তবে কি -? এ্যাঁ
-?
এ নিয়ে আমাদের
মধ্যে প্রথমে তর্কাতর্কি হয়,
তারপর কথা কাটাকাটি হয়
এবং এক পর্যায়ে ঝগড়া
লেগে যাবার উপক্রম হলে,
আমরা পরস্পরকে থামাই। আমরা
বলি: আইচ্ছা, দুই মিনিট খেমা
দে, একটা সুখটান দিয়া
লই, মাতা-মুতা ঘুরতাছে।
জেড
অক্ষরের মাহাত্ম্য আমরা
পুলিশ এবং মুরুব্বীদের কাছে
পেশ করি না, নিজেরা
এর সমাধান বের করবো
বলে ঠিক করি।
চিরকুটটি হাতে পাওয়া গেলে
ভালো হতো, তা সম্ভব
হয় না। পুলিশ
কাশেমের লাশের সাথে সাথে
চিরকুটটিও নিয়ে যায় থানায়। দুইদিন
পর লাশটি ফেরত আসে,
চিরকুটটি ফেরত আসে না।
আমাদের আড্ডার জায়গা
পরিবর্তন হয়েছে গত কয়দিন
ধরে। চালতার
ডালে কাছির একটা অংশ
এখনো ঝুলছে, অসাবধানে চোখ
পড়লে তাকে লকলকে জিহ্বার
মতো মনে হয়।
তাছাড়া জায়গাটিতে গত কয়েকদিনে গ্রামের
নানানজন কর্তৃক কি কি
সব উল্টা-পাল্টা দেখার
ঘটনা বেশ ক’বার
ঘটে যাবার পর থেকে
নিজের অজান্তেই কেমন একটা গা
ছমছমে ভাব হয়।
তাই আমরা এখন হরিশংকর
বাবুর চাউল কলের পাশে,
আকাশের দিকে পেট ঠেলে
উঁচু করা পুলের সরু
বাহুতে বসে, খালের দিকে
পা ঝুলিয়ে দিয়ে থাকি। একটাই
সমস্যা, জায়গাটিতে আড়াল কম, আগুন
ধরানোর আগে চোখ কান
একটু বেশি খোলা রাখতে
হয়। একটা
ফাইভ স্টারের ঝিম ধরানো ধোঁয়া
ভাগাভাগি করে নিতে নিতে,
আমরা কাশেমকে খুঁটিয়ে মনে করার চেষ্টায়
লিপ্ত হই।
বয়সের হিসেবে কাশেম
আমাদের চেয়ে বছর এক
কিংবা দুই বড় হতে
পারে। তবে
সিক্স পর্যন্ত সে আমাদের সাথেই
পড়েছে। তারপর
সেভেনে উঠার দিন কাশেম
আমাদেরকে জানায়, ‘আব্বায় কইছে, ক্ষেতের
কামে লাগি যাইতে।’
সেই অব্দি কাশেম ক্ষেতের
কাজে লেগে যায় তার
বাবার সাথে, বছর ঘুরতে
না ঘুরতেই তার শরীর
এক প্রকার পোড়াটে শক্ত
হয়ে যায়। হা
ডু ডু খেলতে এলেই
তা আমরা টের পেয়ে
যাই। হা
ডু ডু মাঠে কাশেমকে
নিয়ে কাড়াকাড়িও লেগে যেতে থাকে,
আড়ালে আবডালে আমরা তাকে
ডাকতে শুরু করি: কাশু
ভইষ। মহিষের
মতোই তার জোর আমাদেরকে
ইর্ষান্বিত করে দিতে থাকে।
ক্ষেতের কাজের মাহাত্ম্য কাশেম বর্ণনা করতো উদাস
গলায়। এ
সময় তার স্বরে যে
অভিজ্ঞতা ফুটে উঠতো, তা
শুনে আমরা রীতিমত চুপসে
যেতাম। সে
লুঙির খোঁট হতে আকিজ
বিড়ির একটা দলা পাকানো
টুকরো বের করে তাতে
ফস করে আগুন ধরাতো,
তারপর কালচে ধোঁয়া নাকের
দুই ফুটো দিয়ে বের
করে দিতে দিতে বলতো:
ব্যাডা, মাটির ভিতর তন
গাছ বাহির করন সোজা
ভাইবছত নি? হোগা হাডি
যায় কাম কইরতে কইরতে। কিন্তুক
একবার গাছ ভুডভুডাইয়া বাইর
হইলে দেইখতে কি যে
সুখ লাগে রে-।
রে বলে সে দীর্ঘ
টান দিতো, সাথে সাথে
বিড়ির ধোঁয়ার একটা লম্বা রেখাও
তৈরী হতো তার রোদ
পোড়া মুখটাকে ঘিরে। মাটি
ভেদ করে গাছ বের
করাতে কি সুখ লাগে
তা জানার জন্য আমাদের
মধ্যে খুব একটা আগ্রহ
তৈরী হয় না, ততদিনে
আমরা স্কুলের বিজ্ঞান বই হতে চিত্রসহ
বীজের অংকুরোদগমের বৃত্তান্ত শিখে গেছি।
কিন্তু নাক দিয়ে আকিজ
বিড়ির ধোঁয়া বের করার
কায়দা আমাদের রীতিমত বিমুগ্ধ
করে, আমরা সে বিদ্যা
তার কাছ থেকে শিখতে
চাই। কাশেম
তার হলুদ দাঁত দেখিয়ে
হাসে: হ, হরে ধরা
খাইলে কবি কাইশ্যায় শিখাইছে,
ক্যান? আমরা এ অভিযোগের
উত্তরে কিরা কাটতে শুরু
করি। নানান
জিনিসের দোহাই দিয়ে আমরা
কিরা কাটি, কিন্তু একমাত্র
বিদ্যার কিরা কাটাকে কাশেম
বিশেষ গুরুত্ব দেয় এবং আমাদেরকে
আকিজ বিড়ির ধোঁয়া মুখে
খেয়ে নাকে বের করার
তালিম দিয়ে দেয়।
ধূমপানের তালিম নেয়া হয়ে
গেলে সে বিজ্ঞের মতো
জিজ্ঞেস করে: মুখে গন্ধ
হইছেনি? আমরা হাহ্ হাহ্
করে হাতের উপর নিঃশ্বাস
ফেলি এবং আতংকিত হয়ে
আবিষ্কার করি, বিড়ির উৎকট
ধোঁয়া ভুর ভুর করে
বেরুচ্ছে মুখ দিয়ে।
কাশেম খিল খিল করে
হাসতে হাসতে তার অব্যর্থ
বিদ্যা বাতলায়: লেবু গাছ তন
দুইটা কচি পাতা ছিড়ি
ভালো মতন চাবাই ঘরে
যাবি। বিড়ির
গন্ধ মন্ধ দেখবি সব
দূর হই যাইব।
আমরা এখন আর আকিজ
বিড়ি খাই না, ফাইভ
ফাইভ কিংবা ক্যাপস্টান অথবা
নিদেনপক্ষে থ্রি স্টার ছাড়া
আমরা ছুঁই না, কিন্তু
মুখের গন্ধ দূর করার
কাশিমী বুদ্ধিতে আমরা এখনো নির্ভর
করে আছি। বস্তুত
সিগারেটের প্যাকেটের মধ্যেই আমরা লেবু
পাতা জমা করে রেখে
দেই। কখন
হাতের কাছে পাওয়া না
যায়, বলা যায় না। লেবু
পাতার একটা নামও আমরা
দিয়েছিলাম তখন: কাশেমী বিড়ি।
কাশেমের কাছে আমাদের এমন
আরো কিছ গোপন বিষয়ের
হাতেখড়ি হয়েছিল। তবে
সব’চে বর্তমান পরিস্থিতিতে
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কাশেমের
উদ্বৃতির মধ্য দিয়ে জাহেদাকে
আবিষ্কার।
ততদিনে আমরা ক্লাস
টেনে উঠেছি। কাশেমের
সাথে আমাদের মেলামেশা শূণ্যতে
গিয়ে ঠেকেছে। বড়জোর
যেদিন ফুটবল খেলায় কোন
একজন খেলোয়াড় কম পড়ে, সেদিন
তাকে আমাদের বিশেষ দরকার
হয়, অথবা গরমের দিনে
ডাব ও শীতকালে খেজুরের
রস চুরির প্রয়োজনে তাকে
আমরা তোয়াজ করি।
তার প্রয়োজন যথাযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তার
সাথে যে কারণে আমরা
মিশতে সংকোচ বোধ করতে
শুরু করি, তার কারণ
নিতান্তই বাহ্যিক। ক্লাস
টেনে উঠতে না উঠতেই
আমরা শাহরুখ খানের স্টাইলে
চুল কাটতে শুরু করেছি,
মুখে তিব্বত স্নো এবং
ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে ‘আই
এম সরি, থ্যাংক ইউ
ভেরী মাচ’ বলতে শিখে
গেছি। অন্যদিকে
কাশেমের ত্বকে ততদিনে রোদে
পুড়ে চাকা চাকা দাগ
পড়ে গেছে, মুখের ব্রণ
খুঁটে খুঁটে সে বিভৎস
সব ক্ষত তৈরী করে
ফেলেছে এবং তার বিড়ি
টানা কুচকুচে কালো মাড়ির সাথে
ফাটা ঠোঁট প্রসারিত করে
সে যখন ‘কি রে
ব্যাডা, স্কুলে নি যাস’
বলতো, তার হলুদ দাঁত
আমাদের মনে ঘৃণার উদ্রেক
করতে শুরু করতো। কাশেম
যখন রোদে পিঠ ঠেকিয়ে
ক্ষেতে মাটি মেখে অশ্লীল
সুর করে ‘বুকটা ফাইট্যা
যায়’ গায়, আমরা তখন
জ্যামিতি, ভূগোল ও ইংরেজীর
রচনার মাঝে প্রায়ই উদাস
হয়ে ‘হে মেরে হাম
সফর’ গাই। দিনে
দিনে এ পার্থক্য ক্রমশ
বাড়তেই থাকে এবং একসময়
আমরা বেমালুম ভুলে যাই, কোন
এক কালে আমরা একই
সাথে পড়তাম। কাশেমকে
এখন আমাদের তুলনায় অনেক
বয়স্ক দেখায়, তার ছোট
ছোট করে ছাঁটা চুলে
অনেক ফ্যাকাশে পাকা চুলের আবির্ভাব
আঙুল তুলে নিত্য তাই
মনে করিয়ে দেয়।
এহেন এক সময়েই আমাদের
স্কুলে মৌলভী সাহেব মাস্টারী
নিয়ে আসেন, স্কুল বদলে
সংগে আসে ক্লাস এইটে
ওঠা জাহেদা, মৌলভী সাহেবের মেয়ে।
সে
সময় আমরা সবেমাত্র মেয়েদের
দিকে তাকিয়ে ঠোঁট গোল
করে নীচু স্বরে শিস
বাজাতে শিখেছি। সমস্যা
হলো, বোম্বের নায়িকাদের পোস্টার ( যেগুলো নান্টু নাপিত
স্বয়ং ইন্ডিয়া থেকে কিনে নিয়ে
এসে তার দোকানের বেড়ায়
সেঁটে রেখেছে) দেখে দেখে আমাদের
নাক উঁচু হয়ে গিয়েছে। যার
ফলে, আয়নায় নিজেদের দেখা
চেহারার কাঠামো বেমালুম ভুলে
গিয়ে আমরা গ্রামের মেয়েদের
দেখে নাক সিঁটকাতে শুরু
করেছি। কাউকেই
আমাদের মনে ধরার মত
মনে হয় না এবং
নান্টু নাপিতের দোকানে বসে পোস্টারের
দিকে তাকিয়ে আমরা দীর্ঘ
উদাস উদাস দিন পার
করতে থাকি। জাহেদাকে
দেখেও আমাদের ভাবান্তর হয়নি
প্রথমে। হওয়ার
উপায়ও ছিলো না।
জাহেদা কালো একটা বোরখা
পরে আসতো, কোন দিন
রিকশায়, কোন দিন মাইল
তিনেক পায়ে হেঁটে।
আর সব সময়ই তার
সাথে সাথে মৌলভী সাহেব। বোরখা
দেখে প্রথমেই আমরা নাক সিঁটকাই,
মৌলভী সাহেব সাথে থাকাতে
আমরা তাকে সোজাসুজি খরচের
খাতায় ফেলে দিই।
কিন্তু আমাদের ধারণায় প্রবল ঝাঁকি
দেয় কাশেম।
চালতা তলায় সেদিন
আমরা বরাবরের মতো গুলতানি মারছি,
বিষয়বস্তু ‘সজন’। এই
সব বিষয়ে হানিফ সবার
থেকে একটু এগিয়ে, সে
আমাদের উচ্চারণ ঠিক করে দেয়:
সজন না ব্যাটা, উচ্চারণটা
হলো ‘সাজন’। তারপর
সে সিনেমাটির কাহিনীও বর্ণনা করে সবিস্তারে। আমাদের
বাজারে তখন একমাত্র মশিউর
ভাইর কাঠ মিলে ভিসিআর
ছিল। সেখানে
সাজনের ক্যাসেটটি আনে নি তখনও। হানিফ
ঢাকা গিয়েছিল তার খালার বাসায়,
সেখানে দেখে এসেছে।
হানিফ দু লাইন গানও
গায়: তু আশিক হে,
মে তেরে আশিকি...।
ঠিক এমন সময় কাশেম
আড্ডায় ঢুকে পড়ে।
এসেই তার হলুদ দাঁত
মুখের খাপ হতে বের
করে আমাদের কথার মাঝে
বাম হাত ঢুকিয়ে দেয়:
কি রে, তোগো স্কুলে
বলে মধুরী আইছে একটা?
‘মধুরী’ মানে যে
মাধুরী দীক্ষিত, তা বুঝতে আমাদের
কয়েক মুহূর্ত লাগে এবং বোঝার
পর আমরা হা হা
করে উঠি। এ
সব হাসি কাশেমের গায়ে
লাগে না, সে বলা
বাক্যটি আবার বলে।
এবারে আমরা কিঞ্চিত মনোযোগী
হই তার কথায়।
আমাদের স্কুলে মাধুরী আর
আমরা এখনো জানি না,
এ কথা রীতিমত অপমানকর। কাশেম
বেশি মজাকের ধার দিয়ে
যায় না, সোজাসুজি বলে:
মৌলুভীর মাইয়াটার চেহারা-চবি দেখছত?
বোরখা যে পরে, সেইটা
কি এমনে এমনে মনে
করছস!
মৌলভীর মেয়ে মানে
জাহেদা, আমরা চমকে উঠি। তাই
নাকি?
তার পরের কয়েকদিনে
আমরা আড়ে আড়ে জাহেদাকে
খেয়াল করি। সপ্তাহ
খানেকের মধ্যেই আমরা একমত
হয়ে যাই, মাধুরী দীক্ষিতের
মত না হলেও জাহেদা
এ গ্রামের হিসেবে নায়িকা তুল্য,
অন্তত কালো বোরখায় ঘিরে
আসা সুডৌল এবং ফর্সা
মুখটা ভালো করে দেখলে
একটা বুক কাঁপানো দীর্ঘশ্বাস
উঠতে বাধ্য। এ
মুখ এতদিন আমাদের চোখের
আড়ালে রয়ে গেছে আর
ধরা পড়েছে কাশিম্যার চোখে
- ভেবে আমাদের দৃষ্টির ব্যাপারে
কনফিডেন্স খানিকটা টাল খেয়ে যায়। ভাঙা
কনফিডেন্স জোড়া লাগাতে আমরা
জাহেদাকে আরো মনোযোগ দিয়ে
খেয়াল করতে থাকি।
অচিরেই চলতে ফিরতে বাতাসে
বোরখা টলটল করে উঠলে
মুখটার নিচে জাহেদার ধবধবা
ফর্সা লম্বাটে গলাও ( অনেক পরে
আমরা জেনেছি এ ধরনের
গলাকে গ্রীবা বলে) দেখা
যায় এবং আমরা একযোগে
ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রাইভেট
পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
জাহেদার ব্যাপারে কাশেমের অবদানের কথা পর্যন্ত স্মৃতিচারণ
হয়ে গেলে আমাদের উচিত
জাহেদার সাথে কাশেমের যোগসূত্র
ঘটার মতো কোন ঘটনা
খোঁজার দিকে মনোযোগী হয়ে
উঠা। কিন্তু
জাহেদার ব্যাপারে আমাদের দীর্ঘশ্বাসের সূত্রপাতের
পুরনো কথাগুলোর স্মৃতি ঝালাই করে
নিতে, আমরা বুঝতে পারি,
একটা জ্বালা ধরানো ভালো
লাগা মনের মধ্যে ভুস্
ভুস্ করে উঠছে।
অতএব, এ ব্যাপারে আরেকটু
স্মৃতিচারণ করা যেতে পারে
বলে আমরা একমত হই।
অংক এবং বুককিপিং
ছাড়া আমাদের স্কুলে আর
কোন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার
চল নেই। অন্য
সব বিষয়ে পপি গাইড
আমাদের যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে
দিতো, কিন্তু এই দুই
বিষয়ে পপি গাইডের উপর
ভরসা করা সম্ভব হয়
না, যেহেতু জিনিসগুলো একটু
বেয়াড়া, নিছক মুখস্থ করে
পার হবার উপায় নাই। তাই,
অংক ও বুককিপিংয়ের টিচাররা
যখন প্রাইভেট পড়িয়ে কুল পান
না, সেখানে অন্য টিচাররা
বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলে
বাড়তি রোজগারের ধান্দায় কেউ ভাগের পুকুরে
মাছ চাষে টাকা লাগান,
কেউবা সকাল ও বিকালের
অবসর সময়টায় বাজারে একটা
দোকান খোলার কথা ভাবেন। জাহেদার
বাবা মৌলভী স্যার গনিপুর
জামে মসজিদের ইমামতি করেন।
আব্বাস বুদ্ধি দেয়: চল
একখান কাম করি।
পাইভেট পড়নের কতাটা স্কুলে
না কইয়া গনিপুর চইল্যা
যাই। গনিপুর
গিয়া স্যারের বাড়িত গিয়া কই। তাইলে
বেশি গুরুত্ব দিবো।
মৌলভী স্যারকে এতদিন
আমরা খুব যত্নে এড়িয়ে
চলতাম। কেননা
যেখানে অন্য স্যারদেরকে কোনরকমে
মুখের ভিতরে রেখে ‘স্লামুলাইকুম’
বললেই চলে, সেখানে উনাকে
শুদ্ধ উচ্চারণে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে
হতো। তাও
বেশির ভাগ সময়ই উনি
ভুল ধরতেন। মেয়েদের
সামনেই বলে বসতেন: তোমার
জিব্বাটা বেশি ভারী।
সুপারি কি বেশি খাও?
সুপারি বেশি খাইলে এমন
জিব্বা ভারী হয়।
অথচ উনার বাড়িতে গিয়ে
প্রাইভেট পড়ার কথা বলার
বুদ্ধিতে আমরা একটুও চমকাই
না। আমরা
দ্রুত একমত হই, আইডিয়াটা
এক নম্বর। মৌলভী
সাহেবের বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে আব্বাস আরো দু’এক কথা বলতে
শুরু করেছিল, কিন্তু সে দ্রুত
বুঝতে পারে, তার দরকার
নেই। তার
থেকে আমাদের কারো গরজ
নেহায়েত কম নয়।
অতএব এক ছুটির দিন,
আমাদের গ্রাম হতে তিন
মাইল দূরে গনিপুর গিয়ে,
মৌলভী সাহেবের বাড়ির চারদিকে ঘুর
ঘুর করতে শুরু করি। আমাদের
মুখ গম্ভীর হয়ে থাকে,
চুলের ভাঁজ যাতে নষ্ট
না হয় সে চেষ্টায়
যেদিক হতে বাতাস আসে
সেদিক হতে যথাসম্ভব মুখ
সরিয়ে রাখি এবং কিছু
একটা শোনার জন্য কান
খাড়া করে রাখি।
খানিকবাদে জলিল চোখ
বড় বড় করে ফিসফিসফিসিয়ে
উঠে: শুনছস? শুনছস?
কি শুনেছি সে
প্রশ্ন এবং তার উত্তর
শুরু করতে না করতেই
বাড়ির দিক হতে মৌলভী
স্যার বেরিয়ে আসেন।
আমরা সমস্বরে দীর্ঘ সালাম দিই। তিনি
বিন্দুমাত্র ভুল ধরতে পারেন
না আমাদের উচ্চারণে, ঝাড়া
তিন মাইল ‘আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ মকশো করতে করতে
গিয়েছিলাম আমরা।
সালাম মকশো করা
ছাড়াও আমরা ইসলাম শিক্ষা
বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে
নানাবিধ পয়েন্ট আলোচনা করতে
করতে গিয়েছিলাম, যাতে মৌলভী সাহেবের
মনে অন্য সন্দেহ বিন্দুমাত্র
খচ্ করে না উঠে। সুখের
বিষয়, তার একটা বাক্যও
আমাদের খরচ করতে হয়
না। সুনির্দিষ্ট
করে বলা যায়, প্রাইভেট
পড়ানোর জন্য অনুরোধ করা
বাক্যটিও আমরা শেষ করতে
পারি না, তিনি বলতে
শুরু করেন: দেখো দেখি,
বুঝাইয়া সুঝাইয়া আরো দু’একজন
যোগাইতে পার নি, তাইলে
ধরো ব্যাচটা পুরা হয়।
তারপর অন্যদেরকে কি বলে বোঝাতে
হবে সে বিষয়েও পয়েন্ট
ধরিয়ে দেন: মেট্রিকে কয়টা
লেটার পাইছো, এইটাই আসল। কোন
বিষয় পাইছো, এইটা ঘটনা
না। পোলাপাইনরে
কইবা, ইসলামিয়াতে লেটার পাওয়াইয়া দেওনের
দায়িত্ব আমার।
কথাবার্তা হয়ে যাবার পর
আমরা ভেবেছিলাম, তিনি আমাদেরকে বাড়িতে
নিয়ে পিঠা-মিঠা খাওয়ার
জন্য বলবেন (বাড়ির দিক
হতে চাইয়্যা পিঠা’র ভুরভুরে
ঘ্রাণ ভেসে আসছিল), আমরা
প্রথমে আমতা আমতা করবো,
তারপর ‘থাক স্যার, কি
দরকার‘ বলতে বলতে রাজি
হয়ে যাব। মৌলভী
স্যার তার বাড়ির দিকে
আমাদেরকে নিয়ে যাওয়ার নিমন্ত্রণ
এবং আমাদের আমতা আমতা
করার ও পরবর্তীতে রাজি
হয়ে যাবার যে প্ল্যান,
তার ধার দিয়েও গেলেন
না। কথা
বলতে বলতে তিনি আমাদের
নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা
ধরে এগুতে লাগলেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে আব্বাস
বলেই বসল: স্যারগো বাড়িত
মনে হয় চাইয়্যা পিঠা
বানায়। হে
হে হে হে।
মৌলভী স্যার আব্বাসের কথা
পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে ইসলাম শিক্ষা
বিষয়ে প্রাইভেট পড়া যে কত
গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে কয়েকটা
আরবী লাইন সহ বোঝাতে
লাগলেন। আমরা
ওয়াজ শোনার মত করে
সেসব শুনতে শুনতে একটু
পর পর ‘সোবহানাল্লাহ, সোবহানাল্লাহ’
বলতে থাকি। রাস্তার
মোড়ের দোকান থেকে তিনি
বাকিতে আমাদের প্রত্যেককে একটা
করে মুড়ির গোল্লা কিনে
দিয়ে, বাকি ফায়সালা কাল
স্কুলে হবে বলে, বিদায়
দিয়ে দেন।
পরদিন ফায়সালা যা
হয়, তাতে আমাদের আক্কেল
গুড়ুম হয়ে যায়। পরপর
দুই দিন দুইটা ফায়সালা
হয় এবং তাতে আমাদের
আক্কেল দুইবার গুড়ুম
হয়ে যায়।
প্রথম আক্কল গুড়ুম: আমাদের স্কুলের
সব স্যাররাই প্রাইভেট পড়ান তাদের নিজেদের
বাড়িতে। আমরা
সকালে কিংবা বিকালে কিংবা
সন্ধ্যায় গিয়ে পড়ে আসি। কেউ
কেউ সন্দেশ, পিঠা, মুড়ি মাখানিও
খাওয়ান। মৌলভী
স্যার এক ঝটকায় সে
সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে
বললেন: তাইলে আগামী কাল
থেইক্যা স্কুল ছুটির পর
শুরু কইরা দিই? এ
কথায় আমরা সমস্বরে ‘জ্বি
জি’¡ শুরু করে দিই
কেননা, স্কুল ছুটির পর
মানে হলো তিন মাইল
উনি ও জাহেদার সাথে
হেঁটে হেঁটে উনাদের বাড়িতে
যাবার সুযোগ। আর
বিকালে নাস্তা না খাইয়ে
রাখবে, এমন পাষ- উনাকে
আমাদের মনে হয় নি
তখনো। আমাদের
‘জ্বি জ্বি’র মাঝখানেই
তিনি প্রথম ফায়সালাটা করলেন:
দশম খ শাখার রুমটাতে
বইসো। ঐটাতে
হাওয়া বাতাস আসা যাওয়া
করে ভালো। দপ্তরীরে
আমি কইয়া রাখছি, খোলা
রাখবো তোমগো লাইগা।
দ্বিতীয় আক্কেল গুড়ুম:
প্রথম আক্কেল গুড়ুমের
ধাক্কা সামলানোর জন্য আমাদের সামনে
একটা প্রবোধ ছিল, নিশ্চয়
জাহেদাও স্যারের সাথে সাথে বসে
থাকবে আমাদের প্রাইভেট পড়ার
সময়টাতে। না
হলে সে একা বাড়ি
যাবে কেমন করে! কিন্তু
দ্বিতীয় দিন স্কুল ছুটির
পর আমরা অবিশ্বাস্য চোখে
দেখতে পাই, মানে চোখে
অবিশ্বাস নিয়ে দেখতে হয়
যে, মৌলভী স্যার জাহেদার
একা বাড়ি যাওয়ার সমাধান
করেছেন তার জন্য একটা
বাঁধা রিকশার ব্যবস্থা করে। সপ্তাহে
তিনদিন তিনি আমাদের পড়াবেন,
সে তিনদিন জাহেদা রিকশা
করে বাড়ি যাবে।
আর বাজারে বিশ-পচিঁশটা
রিকশাওয়ালাদের মধ্যে তিনি খুঁজে
বের করেছেন কাশেম’কে!
জ্বি, আমাদের সেই কাশেমের
কথাই বলছি।
কাশেম ক্ষেতের কাজই
করতো মূলত। কাজ-কাম কম থাকলে
সে মাঝে মাঝে রিকশা
চালাতো। মৌলভী
স্যারের সাথে এ বাবদে
তার যোগাযোগ নেহায়েত কাকতালীয় কি না, এ
প্রশ্নের জবাব আমাদের কখনো
জানা হয় নি।
প্রশ্নটির জবাবে সে সবসময়
তার হলুদ দাঁত ও
ঘোলা চোখ সহকারে এমন
একটা ভঙ্গি করতো, তার
একটাই উত্তর ধরে নেয়া
যেত: আল্লার দান, মিয়া
বাই।
ঘটনা এমন মোড়
নিলে আমরা পরস্পরকে দোষারোপ
করতে থাকি। আমাদের
মধ্যে তর্ক বেঁধে যায়
- ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রাইভেট
পড়ার বুদ্ধি প্রথম কার
মাথায় এসেছে, এ নিয়ে। সে
তর্কের বিশদ বিবরণে গিয়ে
লাভ নেই। কেননা,
তর্কাতর্কি উদ্ভূত কোন বুদ্ধিই
যে আমাদের আগামী তিনমাস
মাসিক দেড়শ টাকা করে
স্কুল পরবর্তী সপ্তাহে তিনদিন ইসলাম শিক্ষা
বিষয়ক প্রাইভেট পড়ার হাত থেকে
বাঁচাতে পারবে না - এ
বাস্তবতায় আমরা নিশ্চিত হয়ে
যাই। তখন
ঘাসের ডগা চিবুতে চিবুতে
আমাদের একজন বলেঃ আরে
ব্যাটা আল্লা রাসূলের নাম,
তারপর ধর পরকাল -আখিরাত,
সুন্নত-ফরজ, হজ্ব-যাকাত
এইসব নিয়া ভাল ভাল
কথা লিখে দিলেই তো
ধর্মে লেটার উঠে।
তার লাগি সপ্তায় তিনদিন
মোলভীর কাছে প্রাইভেট পড়া
লাগে? আর দ্বিতীয় জন
বলেঃ আমরা তাইলে স্কুলে
বইসা বইসা আলেফ বে
তে পড়–ম, ফাঁক
তালে কাশিম্যা জাহেদারে লই রিকশায় হাওয়া
খাইবো!
বাস্তবিকই কাশেম যখন থেকে
জাহেদাকে রিকশাতে উঠাতে শুরু করে,
আমরা তার মধ্যে একটা
লক্ষনীয় পরিবর্তন খেয়াল করি।
তার কদম ছাঁট চুল
লম্বা হয়ে উঠতে থাকে,
একটা পকেট চিরুনী ( কালো
রঙের, এক টাকা দাম,
বাজারে কুদ্দুস মিয়ার মনিহারী দোকানে
পাওয়া যায়) দিয়ে যখন
তখন সে চুল আঁচড়ায়। তার
মুখের ব্রণে পাউডার পড়ে
বলেও আমাদের মনে হয়,
কেননা তার পাশ দিয়ে
যাবার সময় তিব্বত ট্যালকম
পাউডারের কড়া গন্ধ পাওয়া
যায়।
শেষ
পর্যন্ত ঘটনা দাঁড়ায় এই
রকম: সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস শেষ
করে আমরা দশম শ্রেনীর
খ শাখায় ঢুকতে ঢুকতে
দেখি, কাশেম তার কমলা-হলুদের চক্রাবক্রা মাফলারটা
কায়দা করে গলায় পেঁচিয়ে
রিকশা নিয়ে স্কুল গেটে
দাঁড়ায়, জাহেদা তার রাঙা
পা ফেলে ( জাহেদার রাঙা
পা আমাদের কল্পনা করতে
হয় কেননা তা দেখার
সৌভাগ্য আমাদের হয়নি, সে
কালো রঙের মোজা পরে
থাকে পর্দার অংশ হিসেবে,
তবে সুন্দরী মেয়েদের পা রাঙাই হয়,
আমরা সিনেমায় দেখেছি) রিকশায় উঠতে যায়। সে
যতো রিকশার দিকে এগোয়,
কাশেমের হলুদ হলুদ দাঁত
( ইদানীং সেগুলোকে প্রায় সাদাই দেখায়,
মনে হয় নিয়মিত ছাই
ঘষে) ততো মুখগহ্বর হতে
বেরুতে থাকে। জাহেদা
ঠিক যে মুহূর্তে রিকশায়
উঠে, সেই মুহূর্তে কাশেম
আমাদের দিকে ফিরে চোখ
টিপ মারে, তারপর জাহেদার
দিকে ফিরে বলে: টাইট
হইয়া বও দেখি, দেখ
কেমনে উড়াইয়া লইয়া যাই। হু
আল্লা হু। তখন
জাহেদা টাইট হয়ে বসে,
কাশেম হোন্ডায় উঠার মতো লাফ
দিয়ে রিকশায় উঠে প্যাডেল
চালাতে থাকে, তার মাথা
দুলতে থাকে এদিক ওদিক
রিকশার তালে তালে, আমরা
পরিষ্কার শুনতে পাই (কল্পনায়)
কাশেম গাচ্ছে: আমার গরুর গাড়িতে
বউ সাজিয়ে, ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধু, সানাই বাজিয়ে...
তারপরের কিছুদিন আমরা কাশেমের সাথে
আগের তুলনায় একটু বেশি
ঘনিষ্ট হই। কিংবা
কাশেমই আগ বাড়িয়ে আমাদের
সাথে বেশি বেশি মিশতে
থাকে। তার
মুখে আমরা জাহেদা সর্ম্পকিত
প্রায় অলৌকিক সব খবরাবর
শুনতে থাকি। যেমন,
কাশেম আমাদের জানায়: মাইয়াটা
বড় ভালো রে।
মোটেও দেমাগ নাই।
আমারে নিজ মুখে কইছে,
রিকশাওয়ালারাও মানুষ। কাশেম
আমাদের আরো জানায়: আরে
ব্যাটা, যেই ভদ্র বুঝছত
নি। প্রত্যেকটা
দিন আমারে হয় পিঠা
নাইলে মুড়ি নাইলে শরবত,
একটা না একটা কিছু
খাওয়াইবই। জাহেদার
মাও বড় ভালো।
আমারে কইছে, রাস্তা ঘাটে
যেন জাহেদারে দেইখ্যা রাখি। আমিও
কইছি, খালাম্মা, কোন চিন্তা কইরেন
না, হু আল্লা হু,
কোন পোলাপাইনে জাহেদার দিকে চোখওতো তুলি
তাকাইতো পাইরতো ন।
এইসব বলতে বলতে
কাশেম যেই দৃষ্টিতে আমাদের
দিকে তাকাতো, তা সহ্য করা
আমাদের পক্ষে শীঘ্রই মুশকিল
হয়ে পড়ে। কাশেমের
এই সব গালগল্প আমরা
প্রথম প্রথম হেসে উড়িয়ে
দিই। তাকে
নিয়ে ঠাট্টাও করি: হ, তোমারে
বডি গার্ড রাখছে।
কিন্তু অচিরেই আমরা খেয়াল
করি, রিকশায় উঠার সময়
জাহেদা হেসে হেসে কাশেমের
সাথে গল্প করছে।
কি নিয়ে গল্প করে
তা আমরা দূর থেকে
বুঝতে পারি না, কিন্তু
কাশেমকে শত্রু জ্ঞান করার
জন্য তার দিকে তাকিয়ে
জাহেদার হাসিই যথেষ্ট হয়ে
দেখা দেয়। মৌলভী
স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়লেই
আমাদের মনে পড়ে যেতো:
কাইশ্যা হারামজাদায় জাহেদাগো বাড়িত বইস্যা নারকেল
মুড়ি খাইতেছে রে। শেষ
পর্যন্ত ‘কাশিম্যার মতো পোলা’র
কাছে হেরে
যাওয়ার একটা বিচিত্র অনুভূতি
আমাদের কুরে কুরে খেতে
থাকলে আমরা এ মর্মেও
গোপনে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি:
পড়া লেখা না করি
জীবনে রিকশাওয়ালা হওনটাও খারাপ না
। প্রেম কি
আর ধনী গরীব মানে?
এটা স্বীকার করাই
ভালো যে, প্রেম কি
আর ধনী গরীব মানে
- সংক্রান্ত তত্ত্বটি আমাদের মৌলিক আবিষ্কার
নয়, সিনেমা দেখে শেখা। উদাহরণ
হিসেবে আমরা ‘বেদের মেয়ে
জোছনা’র নায়িকা জোছনার
যুগপৎ গলা এবং হৃদয়
কাঁপানো অনেকগুলো সংলাপের
হুবহু উদ্ধৃতি দিতে পারি।
কিন্তু প্রেম এবং শ্রেনী
সংগ্রাম গোলানো এ তত্ত্বটি
যত হৃদয়গ্রাহী হোক না কেন,
ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে কাশেমকে মিলাতে
আমাদের রীতিমত কসরত করতে
হয়। সে
কসরতে আমরা সফল হই
না এবং বর্তমান প্রেক্ষিতে
নায়ক হিসেবে কাশেমকে মানতে
আমাদের ভীষণ কষ্ট হতে
থাকে। আমরা
অচিরেই দেখতে পাই, জাহেদার
ব্যাপারে কাশেমের কথা বার্তায় একটা
সম্ভ্রম মেশানো সর্তকতা ফুটে
উঠছে, কোন রকম খারাপ
ইংগিত সেখানে থাকে না,
এবং কাশেম মাঝে মাঝে
- ‘আল্লায় যদি তোগো মতন
পড়ালেখা করনের সুযোগ দিতো’-
জাতীয় বাক্য বলে দীর্ঘশ্বাস
ফেলে হঠাৎ হঠাৎ উদাস
হয়ে যায়।
এ পর্যন্ত আমাদের
স্মৃতি চারণ হয়ে গেলে
দেখা যায়, আমাদের প্রত্যেকেরই
বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস পড়ছে। আমরা
তখন পরস্পরের চোখের দিকে তাকানো
এড়িয়ে যাবার জন্য দূরের
বোরো ক্ষেতের দিকে এবং তার
পরে মাথা তুলে থাকা
গোয়াল বাড়ির সহোদর তালগাছ
দুটির দিকে তাকিয়ে থাকি। তালগাছের
দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে
আমরা বুঝতে পারি কাশেম
ও জাহেদা সংক্রান্ত স্মৃতিচারণের
মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর বিশেষ কোন
ঘটনা আমরা মনে করতে
পারছি না, যাকে বর্তমান
কালে পাওয়া চিরকুটটির সরাসরি
যোগসূত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে
দেয়া যায়।
আমাদের মনে পড়ে,
কাশেমের মুখে জাহেদা সংক্রান্ত
কথাবার্তা ক্রমশঃ কমে যেতে
থাকলে আমরা একদিন জিজ্ঞেস
করেছিলাম: কি রে কাশিম্যা,
খাওন-দাওন এখনও চলেনি
মৌলভীর বাড়িত? তার উত্তরে
কাশেম মুখ গম্ভীর করে
উত্তর দেয়: তোগো হিংসা
লাগে, ক্যান?
মূলত কাশিমের এই
গা জ্বালানো উত্তরই প্রথম বারের
মতো আমাদের নায়ক নায়ক
ভাবের মধ্যে কষে ঝাঁকুনি
দেয়। আমরা
বলাবলি শুরু করি: ধুর
অ। যেই
মাইয়ার রিকশাওলার লগে খাতির, হের
নজর কেমন তাতো বুঝাই
যায়। তখন
আমরা নতুন করে ভাবতে
শুরু করি: আসলেই কি
জাহেদার জন্য দীর্ঘশ্বাস খরচ
করা যায় কি না?
তারপর একদিন কাশেমের
তিনমাসের রিকশা বাওয়ার বান্ধা
চাকুরী ও আমাদের তিন
গুনন দেড়শ, মানে সাড়ে
চারশ টাকার ইসলাম শিক্ষার
প্রাইভেট পড়া শেষ হয়। মৌলভী
সাহেবের হাতের লেখা আরবী
কোটেশান সহযোগের লম্বা লম্বা সব
নোট বাদ দিয়ে আমরা
পপি গাইড পড়ে মেট্রিক
পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে
থাকি। আমাদের
স্কুল তিনমাসের জন্য বন্ধ হয়ে
যায় এবং জাহেদার মুখ
মনে পড়ার জন্য (যদিও
জাহেদাকে আমরা প্রায় বাদ
দিয়ে দিয়েছি মন থেকে)
জাহেদার দাড়িওয়ালা আব্বার দিকে তাকানো
ছাড়া আর কোন উপায়
থাকে না। অর্থাৎ
কিনা জাহেদা সংক্রান্ত গোলযোগ
প্রায় থেমে যায় ও
আমরা পড়ায় মনোনিবেশ করি। যদিও
আমাদের কানে আসে প্রায়ই
যে, মৌলভী স্যারের বউ
কিংবা জাহেদার কোথাও যাবার দরকার
পড়লে কাশেমের রিকশার ডাক পড়ে
এবং কাশেম এ সংক্রান্ত
কোন কথা উঠলেই দ্রুত
অন্য কথায় চলে যেতে
চায়।
কিন্তু ঐ পর্যন্তই। মেট্রিক
পরীক্ষার পরবর্তী অখন্ড অবসরে আমরা
কাশেমকে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করি এবং এক
পর্যায়ে নিঃসন্দেহ হই যে, জাহেদার
সাথে কাশেমের নেহায়েত রিকশাওয়ালা ও পেসেঞ্জারের সম্পর্ক। আমরা
ভীষণ ভাবে হাঁফ ছেড়ে
বাঁচি এবং পরীক্ষার রেজাল্ট
আসলে যে মিষ্টি নিয়ে
গনিপুরে মৌলভী স্যারের বাড়িতে
যেতে হবে, এ ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
এর মাঝেই এক দিন
কাশেম হুট করে আদমজী
জুট মিলে কাজ করতে
ঢাকায় চলে যায়।
যেহেতু
আমাদের তখন আর স্কুলে
যেতে হয় না, তাতে
আমাদের মধ্যে একটা বড়
বড় হয়ে যাওয়ার ভাব
চলে আসে এবং আমরা
বাজারের মোড়ে সকালে ও
বিকালে এবং বিশেষত চালতা
তলায় আড্ডা দিতে শুরু
করি। মৌলভী
সাহেবকে দেখে দীর্ঘ সালাম
দিয়ে আলাপ জুড়ে দেবার
চেষ্টা করি এবং তার
পেছনে মাথা নিচু করে
দাঁড়িয়ে থাকা জাহেদাকে মাঝে
মাঝে জিজ্ঞেস করি: ভাল করি
পড় তো? এ সময়
জাহেদা মিষ্টি করে হাসে
এবং আমাদের বুক খাঁ
খাঁ করে উঠে।
উল্লেখ্য, কাশেম আদমজী চলে
যাবার পর থেকে জাহেদার
প্রতি আমাদের মনোযোগ আবার
নিবিষ্ট হতে শুরু করেছে। আর
যাই হোক, এ কথা
তো সত্য যে, জাহেদার
নজর কাশেমের মতো একটা বিদঘুটে
দেখতে রিকশাওলার দিকে যেতেই পারে
না।
এ পর্যায়ে আমাদেরকে পুলের বাহু হতে
নেমে নিচে দাঁড়াতে হয়। আমরা
বুঝতে পারছি, এ রকম
স্মৃতি চারণ আসলে নেহায়েত
বুকের জ্বালাই বাড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু
কাশেমের ‘ইহা সইত্যে’র
কোন কুল কিনারার দিকে
যাচ্ছে না। ঠিক
তখুনি বোমা ফাটায় মোবাশ্বের। সে
ফোঁত করে নাক ঝাড়ে
এবং সিকনী জমা হাত
পুলের গায়ে মুছতে মুছতে
বলে: তাইলে ভিতরের খবর
হুন, ঢাকা থেইক্যা কাশিম্যা
বাড়ি আসলে প্রায়ই জাহেদাগো
বাড়িত যাইতো। আমরা
সমস্বরে ‘এ্যাঁ’ করে উঠি। মোবাশ্বের
দ্বিতীয়বার নাক ঝেড়ে বলে:
হ, সইত্য। আমি
জানি।
দেখা
যাচ্ছে, এতক্ষণ পর ঘটনা
দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আমাদের
ঝাঁ করে মনে পড়ে,
গতবার যখন কাশেম বাড়ি
আসে, তার বাবা তাকে
বিয়ের কথা বললে সে
বাবার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে
দেয়। তার
বাবা নুরুল কাকা চায়ের
দোকানে আমাদের কাছে তার
দুঃখ ঝেড়েছিলেন: পোলাটার মতিগতি বুঝলাম না। চাকরি
বাকরি যখন করছ, কইলাম
বিয়া কর। ঘোঁত
ঘোঁত করে। হাঁ
ও কয় না, না
ও কয় না।
ইয়া মুছিবত।
যে
পর্যায়ের কথা এখন হচ্ছে,
ততদিনে আমাদের সাথে কাশেমের
দূরত্ব যোজন হয়ে গেছে। আমরা
এখন দশমাইল উত্তরে নিবারন
সরকার ডিগ্রী কলেজে ডিগ্রীতে
পড়ি। কাশেম
এখন আর আলোচ্য কোন
বিষয়ই না আমাদের কাছে। বছরে
বড়জোর দুই বার সে
গ্রামে আসে, দুই ঈদে
দুইবার। আমাদের
সাথে দেখা হলে - কি
রে, কুনদিন আসছত? - এর
বেশি কোন কথা হয়
না। জাহেদা
মেট্রিক পাশ করে ঘরে
বসে আছে, যে কোনদিন
তার বিয়ে হয়ে যাবে। তাই
এ সংক্রান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলার মাত্রা ও
পরিমাণ আমাদের মধ্যে কমে
আসছে। জীবনের
এ সত্য আমরা বুঝে
ফেলেছি, চুলে শাহরুখ খান
কাট দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
লাভ হয় না, যার
লাভ হওয়ার তার এমনিতেই
হয় আর কিসে যে
লাভ হয়, তা আমরা
এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। তবু
চালতা তলায় প্রায়ই নানান
কথার সাথে এ প্রসংগ
উঠে এবং আমরা না
চাইলেও মাঝে মাঝে জাহেদা
সংক্রান্ত দীর্ঘশ্বাস উঠতে থাকে।
মোবাশ্বেরের এই উক্তির পর
আমরা একযোগে তাকে বকাঝকা
শুরু করি। যার
মূল বিষয়বস্তু হলো, এই কথাটা
সে এতক্ষণ ধরে কেন
বলেনি। তাহলে
অন্তত এতসব খুচরো স্মৃতি
চারণার আমাদের দরকার পড়তো
না। একই
সংগে মোবাশ্বের আমাদের তদন্তের একটা
কিনারাও দেখিয়ে দেয়, সেজন্য
আমরা তার দেয়া তথ্যের
উপর জোর দিতে শুরু
করি। মোবাশ্বের
তখন আমাদের আরো জানায়:
যতবার কাশিম্যায় বাড়িত আসতো, ততবার
মৌলভী স্যারগো বাড়িত যাইতো।
যাওয়ার সময় চানাচুর চকলেট
এসবও সাথে নিতো।
আমাদের প্রত্যেকের গলা
দিয়ে যে বিস্ময়ের ও
স্বস্তির শব্দটি বের হয়,
তার মিলিত রূপ দাঁড়ায়:
ওহ্ হো, এই ঘটনা,
তাইলে বোঝ, এহ হে
রে, তলে তলে এই-ই, ইসস, পুরাই
চালু রে, হুম ম
ইত্যাদি। এবং
আমরা এবারে আমাদের গোয়েন্দা
রিপোর্টটি তৈরি করে ফেলি। ঘটনা
দাঁড়ায় এরকম:
তলে তলে নিশ্চয়
কাশেম জাহেদার প্রেমে হাবুডুবু খেতে
শুরু করেছিল এবং এ
জন্যই এক কালের বান্ধা
রিকশাওয়ালার পরিচয় সুবাদে সে
জাহেদাদের বাড়িতে নিয়মিত আসা
যাওয়া করতো। তাদের
বাড়ির যাবতীয় কাজে কর্মে
সে সবার আগে এগিয়ে
যেতে শুরু করেছিল, কারণে
অকারণে তার আগ্রহ দেখিয়ে
জাহেদা, মৌলভী সাহেব ও
তার বউয়ের মনও কাড়তে
চেষ্টা করেছিল। এ
ব্যাপারে নিশ্চয়ই সে তার রূপ
ও যোগ্যতার কথা বেমালুম ভুলে
গিয়েছিল এবং মনে মনে
জাহেদাকে বিয়ে করার স্বপ্ন
দেখছিল । কাশেম
বাড়ি এসেছিল দিন তিনেক
আগে। বাড়ি
এলে প্রতিবারের মতো এবারও তার
বাবা ও মা বিয়ে
করার জন্য ঘ্যাঁন ঘ্যাঁন
শুরু করে দেন।
প্রতিবার কাশেম বিষয়টা এড়িয়ে
গেলেও এবার সে পরিবারের
কাছে জাহেদাকে বিয়ের খায়েশটি প্রকাশ
করে। প্রেমে
পাগল কাশেমের বিষয়-বুদ্ধি লোপ
পেয়ে গেলেও নিশ্চিতই তার
বাবা ও মায়ের তা
যায় নি। তাই
তারা এ বিষয়ে কাশেমকে
তার অযোগ্যতা দেখিয়ে দিয়ে এই
অসম্ভব চিন্তাটি মাথা থেকে ঝেড়ে
ফেলতে বলেন। এইসব
নিয়ে কাশেমের সাথে তাদের ভীষণ
ঝগড়া ঝাটি হয়, গত
দুইদিন সে বাড়িতে রাগ
করে ভাত খায় নি
এবং এক পর্যায়ে গলায়
দড়ি দেওয়ার ভয়ও দেখায়
বাড়িতে। স্বভাবতই
কেউ তার ভয় দেখানোকে
আমলে নেয় না।
তখন কাশেম তার প্রেমের
প্রমাণ স্বরূপ কাগজে ‘জে’
আদ্যক্ষরটি লিখে রাখে ও
’ইহা সইত্য’ জাতীয় নাটকীয়
বাক্যটি লিখে তার প্রেমের
স্মারক রাখতে চেষ্টা করে
এবং নিশ্চয়ই কোন রোমান্টিক সিনেমায়
দেখা অভিমানী নায়কের মতো নিজের
জীবন আত্মাহুতি দেয়। কাগজের
কোণায় আঁকা ‘লাভ চিহ্ন’
বাদ দিয়েই আমরা এতদূর
‘একে একে দুই’ করে
ফেলতে পারি, আর তার
সংগে ‘লাভ চিহ্ন’টিকে
জুড়ে দিলে আমাদের থিউরির
পুরো ষোলকলা পূর্ণ হয়।
থিউরী তৈরী হয়ে
গেলে আমরা আনন্দে ফাইভ
ফাইভ সিগারেট ধরিয়ে ফেলি পটাপট। ভোঁস
ভোঁস করে টানও দিয়ে
ফেলি বেশ কয়েকটা।
আমাদের মাথাগুলো ইতিমধ্যে জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। জ্যাম
মাথা এবার হালকা হতে
শুরু করে। সিগারেট
টানতে টানতে আমরা কাশেমের
পরিমিতি বোধ ও ভদ্রতা
জ্ঞানের প্রশংসা করতে থাকি।
কেননা, সে জাহেদার পুরো নামটি না
লিখে আদ্যক্ষরটিই লিখেছে মাত্র এবং
প্রেমের কথাটি সরাসরি না
প্রকাশ করে কেবল ’ইহা
সইত্য’র মতো দূর্দান্ত
বাক্যটি মাথা খেলিয়ে বের
করেছে। যদিও
আমরা নিশ্চিত কাশেম নিশ্চয় ইদানীং
কালে দেখা কোন প্রেমের
সিনেমা বা নাটকের থেকে
আইডিয়াটা পেয়েছে। আমরা
তখন সহানূভূতিশীল হয়ে এক বাক্যে
স্বীকার করি: নাহ্, পোলাটায়
আসলেই জাহেদারে ভালবাসছিল। এই
সব বলতে বলতে ও
সিগারেট টানতে টানতে আমরা
মাথার জ্যাম ছুটাতে থাকি।
আমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই
জহিরের মাথার জ্যাম আগে
ছুটে গিয়েছিল। সেই
প্রথম আমাদের থিউরীর খানা-খন্দ গুলো আবিষ্কার
করতে শুরু করে।
সে কথা শুরু করে
এভাবে: আমাদের থিউরিটিতে কাকতালীয়
অনুপপত্তি ঘটেছে ।
জহিরের মুখ খোলার
সাথে সাথে প্রায়শই আমাদের
মেজাজ খারাপ হয়ে যায়,
কেননা, তার অভ্যাস সাম্প্রতিক
কালে পড়া বিষয়বস্তু দৈনন্দিন
কথা-বার্তার মধ্যে অবলীলায় ঢুকিয়ে
দেওয়া। ‘কাকতালীয়
অনুপপত্তি’র মতো শব্দগুচ্ছ
নিশ্চিতভাবে গত কিছুদিন ধরে
পড়া যুক্তিবিদ্যার প্রভাব। আমরা
তখন তার দিকে কটমট
করে চাইলাম। জহির
যুক্তিবিদ্যার টার্ম রেখে সহজ
করে বললোঃ থিউরী ঠিক
আছে। তবে
গুরুতর সমইস্যা আছে একটা।
কাশিম্যা হের বাপের লগে
যে জাহেদারে লইয়াই ঝগড়া করছে,
এইটা আমগো শিউর হওন
দরকার না?
জহিরের
তোলা সমস্যায় আমাদের থমকে যেতে
হয়। হয়-ই। কেননা,
কি নিয়ে কাশেমের সাথে
তার বাবার ঝগড়া হয়,
তা আসলেই আমরা জানি
না। কান্না-কাটির ফাঁকে ফাঁকে
কাশেমের বাবা শুধু বলেছিলেন,
কাশেমের সাথে ঝগড়া হয়েছে
এবং কাশেম গলায় ফাঁস
দিবে বলে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু
আমাদের থমকে যাওয়ার কারণ
ঝগড়ার কারণটি আমরা জানি
না বলে নয়।
চাইলেই আমরা ব্যাপারটা জানতে
পারি বলে। এখন
বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুতর প্রশ্ন হলো,
ব্যাপারটা আমরা জানতে চাইবো
কিনা?
তা জানতে চাওয়া
যায়। এটা
এমন কোন বড় ব্যাপার
না। যদিও
আমরা স্থির নিশ্চিত ঘটনা
আমরা যা সাজিয়েছি, তাই
ঘটেছে। কিন্তু
একটা মানুষ মারা গেলে
তার সম্পর্কে বির্তকিত বিষয় নিয়ে আলোচনাটা
কতটুকু ঠিক হবে এবং
আমাদের এই কৌতূহলকে কাশেমের
বাবা কিভাবে নিবেন - এ
ব্যাপারে আমাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব
থেকে যায়। তাছাড়া
কাশেমের বাবা নিশ্চয়ই লোকজনের
উল্টো-পাল্টা কথার ভয়ে
বিষয়টা লুকিয়ে যেতে চাইবেন। অবশেষে
আমাদের কৌতূহল জয়ী হয়
এবং আমরা সিগারেটের গোড়াগুলো
খালের পানির দিকে ছুঁড়ে
ফেলে দিয়ে কাশেমদের বাড়ির
দিকে রওনা হয়ে যাই।
কাশেমকে কবর দেয়া হয়েছে
তাদের বাড়ির সামনের কবরস্থানে,
একেবারে পথের সাথেই।
তার কবরের মাটি উঁচু
হয়ে আছে, তাতে বরই
গাছের একটা ডাল পুঁতে
রাখা আর একটা লম্বা
খেজুর গাছের ডাল ছড়িয়ে
রাখা আছে। জায়গাটি
পার হবার সময় আমরা
এক ধরনের বিজাতীয় ভয়
ও আশংকায় আক্রান্ত হই। আমাদের
মনে জেগে উঠেঃ আইজ
মইরলে কাল দুইদিন রে
ভাই। কথাটি
আমরা সশব্দে বলাবলিও করি
এবং এক বাক্যে এর
সত্যতা সম্পর্কে রাজি হয়ে যাই।
কাশেমদের ঘরের দিক হতে
একটা হালকা ফোঁপানো কান্নার
আওয়াজ শোনা যায়, কিন্তু
কাউকে দেখতে পাই না। আমরা
আস্তে আস্তে উঠানে গিয়ে
- ‘কাকু বাড়ি আছেন নি’
বলে গলা খাঁকারি সহযোগে
মৃদু আওয়াজ তুলি।
তখন কান্নার আওয়াজটি থেমে যায় এবং
একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা মাথা বের
করে আবার ভেতরে ঢুকিয়ে
ফেলেন। খানিকক্ষনের
মধ্যে দুই তিনজন মহিলা
বেরিয়ে আসে ঘর থেকে,
তাদের পেছনে পেছনে ক্রন্দনরত
কাশেমের মা। তিনি
আমাদের সবাইকেই গ্রামের সুবাদে খানিকটা চেনেন। তাই
এক বার আমাদের দেখে
নিয়েই কান্নার ফাঁকে ফাঁকে যে
সব কথা বলেন, তার
মধ্যে - ‘আমরা কাশেমের বন্ধুরা
তাকে দেখতে গেছি, এ
জন্য তার মনটা শান্তি
লাগছে, আমাদেরকে দেখে কাশেমকে দেখার
মতই তার মনে হচ্ছে,
কাশেম বেঁচে থাকলে এখন
আমাদের মতোই ঘুরতো ফিরতো
হাসতে খেলতো, এমন ডগ
ডগা ছেলেটা মরে গেল’
- এরকম কথাগুলো ঘুরে ফিরে আসে। সে
সব শুনতে
শুনতে আমাদের গায়ে কাঁটা
দিতে থাকে এবং চোখে
জলও আসতে থাকে।
ওনার দেয়া ‘কাশেমের বন্ধু’
পরিচয়ে আমরা ক্ষনিকের তরে
কেমন অপরাধী অপরাধী মুখ
করে দাঁড়িয়ে থাকি এবং ‘চাচি
আম্মা, কাঁইদেন না’ বাক্যের বেশি
কোন সান্ত¦না বাক্য
না বলতে পেরে মুখ
ব্যাজার করে থাকি।
কিন্তু‘ কেবল মুখ ব্যাজার
করে থাকলে হবে না,
আমাদেরকে সত্যি উদ্ঘাটন করতে
হবে। আমরা
জানতে পারি, কাকু, মানে
কাশেমের বাবা বাড়িতে নেই। তখন
কাশেমের মা একজন মহিলাকে
ডেকে ভাঙা গলায় ফোঁপানো অব্যাহত রেখে বললেনঃ মইন্যার
মা গো, পোলাগুলারে কাগজ
খান দেখাও গো।
হেরা শিক্ষিত পোলা, বিষয়টা বুঝতে
পারবো গো...
তখন এক মাঝবয়সী
মহিলা ঘরের ভিতরের দিকে
হাঁটতে শুরু করলে আমরা
বুঝতে পারি তিনিই মইন্যার
মা। মইন্যার
মা আধামিনিট বাদে হাতে একটা
প্যাড নিয়ে বের হয়ে
আসেন এবং কাশেমের মায়ের
হাতে তুলে দেন।
কাশেমের মা প্যাডটি সাবধানে
খোলেন। একটা
প্রেসক্রিপসন লিখার ডাক্তারী প্যাড। আমরা
বিপুল কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা
করি তিনি কি দেখাবেন,
তা দেখতে। প্যাডের
ভিতর থেকে একটা ভাঁজ
করা ছোট সাইজের কাগজ
বেরিয়ে আসে। কাশেমের
মা তা আমাদের হাতে
তুলে দিতে দিতে বলেনঃ
পোলায় এইবার বাড়ি আসার
পর থেইক্যা দেখি এই খাতাটা
খুইলা কি সব লেখে। পইড়্যা
দেখো তো বাবারা, কি
ঘটনা। ঢাকাত
তন নিয়া আইছে কি
যাদু-টোনারে, বাপুরে, কিয়ের লাই আমার
পুতের এত রাগ উঠলো
রে.... বলতে বলতে তিনি
আবার কাশেমের জন্য বিলাপ শুরু
করেন। আমরা
প্যাড এবং কাগজটি হাতে
নিই।
কাগজটি একটি ছাপানো
লিফলেটের মতো। তাতে
প্রচুর বানান ভুল সহযোগে
লিখাঃ “মদিনা শরীফের হুজুর
স্বপ্নে দেখেছেন, নবীজি যারপরনাই হয়ে
কাঁদছেন। নবীজির
কান্না দেখে মদিনার হুজুর
বেচাইন হয়ে তাঁকে প্রশ্ন
করেন, ইয়া নবী, আপনি
কেন কাঁদছেন? কি বিষয়? উত্তরে
দয়াল নবী বলেনঃ হে
আমার প্রিয় উম্মত, তুমি
দুনিয়ার মানুষদিগকে বলে দাও যে,
তারা আমার শিক্ষা ভুলে
গিয়ে নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে রয়েছে। এর
জন্য আমি আসমানে আল্লার
কাছে শরমিন্দা হয়ে আছি।
তাদেরকে বলো নাফরমানির কাজ
ছেড়ে দিয়ে দ্বীনের পথে
আসতে।
এই চিঠি যে
পাইবে তাকে দশদিনের মধ্যে
দশ কপি ফটোকপি করে
বা হাতে লিখে দশ
জনের মধ্যে বিলাইতে হইবে। যদি
না বিলায়, তবে দশ
দিনের মধ্যে তার উপর
নালত নেমে আসবে।
আর যদি বিলায়, তবে
দশ দিনের মধ্যে সে
পরম খোশখবর পাইবে।
ইহা সইত্য। ইহা
সইত্য। ইহা
সইত্য।
বি.দ্রঃ খবরদার,
ইহাকে হেলা করিবে না। জনৈক
এক ব্যক্তি দশ জনের মধ্যে
কাগজটি বিলি করায় সে
লটারিতে এক লক্ষ টাকা
জিতিয়াছে। জনৈক
আরেক ব্যক্তি ইহাকে বুজরুকি মনে
করায় আচমকা তার বাড়ির
ছাদ ধ্বসে বউ ছেলে
মেয়ে মারা গেছে।
কোন কারণে পুরোটা লিখতে
বা ফটো কপি করতে
অপারগ হইলে ‘ইহা সইত্য’
বাক্যটি দশবার লিখে প্রচার
করিলেও খোদায় অছিলায় অনুূরূপ
তরক্বী ঘটিবে, ইনশাল্লাহ।”
লিফলেটটি পড়া হয়ে গেলে
আমরা তখন দেখতে পাই
প্যাডটির বেশ
কয়েক পৃষ্ঠা জুড়ে গোটা
গোটা হাতের লেখায় ‘ইহা
সইত্য’ বাক্যটি লেখা, কাশেমেরই হাতের
লিখা, চিনতে আমাদের কষ্ট
হয়না। এবং
সবশেষে প্যাডের কোণায় সবুজ কালিতে
ইংরেজী ছাপানো অক্ষর জেড
দেখতে পাই। জেডের
এব্রিবিয়েশানও সাথে আছে, খুব
হাল্কা কালিতে, চোখে প্রায় পড়েনা’র মতো জল
ছাপে: জেলট্রাপ। কোন
একটা ওষুধের নাম নিশ্চয়ই। কাশেমের
লেখার তলায় জলছাপটি প্রায়
পুরোপুরি চাপা পড়ে গেছে। এবং
সবশেষে কোণায় ঝাপসা ‘লাভ
চিহ্ন’ টি, খানিকটা আঁকা-বাঁকা করে ডিজাইন
করে প্রিন্ট করা, দেখলে মনে
হয় হাতে আঁকা।
এতক্ষণ কাশেমের মায়ের
বিলাপের দিকে আমাদের কান
ছিল না, লিফলেট পড়া
হয়ে গেলে আমরা আবার
বিলাপের প্রতি মনোযোগী হই
এবং শুনতে পাই তিনি
বলছেনঃ পোলায় খালি জমি
বেইচা ডুবাই যাইব ডুবাই
যাইব কইছে গো।
পোলার বাপে মা-মাসি
গালি দিয়া ভাগাই দিছে
গো। পোলায়
আমার রাগের জ্বালায় দুইদিন
ধইরা ভাত-পানি খায়নো
গো... ইত্যাদি। প্রতি
বাক্যের শেষে ‘গো’ শব্দের
দ্যোতনা সুরের মতো বাজতে
থাকে কাশেমদের বিশাল উঠোন জুড়ে।
একটা আচমকা উদাসীনতা
এ পর্যায়ে আমাদের গ্রাস করে। জন্ম-মৃত্যূ যে নেহায়েত
আল্লার হাতে, মানুষের এ
ব্যাপারে কিছুই করার নেই-
এ সত্য পরস্পরকে বোঝাতে
বোঝাতে আমরা অবশেষে কাসেমদের
বাড়ি হতে বেরিয়ে আসতে
থাকি। নানান
দৈর্ঘ্যরে দীর্ঘশ্বাস আমাদের বুক থেকে
সোজা জন্ম নিয়ে নাক
দিয়ে সশব্দে বেরিয়ে যাবার
প্রাক্কালে আমরা বুঝতে পারি,
খানিকক্ষণ মৌন থাকার দরকার। সে
বাবদ আমরা কথা বার্তা
বন্ধ করে মৌন হয়ে
হাঁটা ধরি হাটের রাস্তা
বরাবর। শুধু
জহির মিনমিন করে বলেঃ
হ রে, শুধু জন্ম
মৃত্যূ না, বিয়াও আল্লার
হাতে।
এ ধরনের অনর্থক
বাক্যের উত্তরে মৌনতা ভঙ্গের
কোন কারণ আমরা দেখতে
পাই না।
পাদটীকা: লিফলেটটি আমরা সাথে নিয়ে
এসেছি। দেরি
না করে আজ রাত
থেকেই দশটা লিখে ফেলতে
হবে বলে ঠিক করি
আমরা। তাছাড়া
শুধুমাত্র ‘ইহা
সইত্য’ না, পুরো লিখাটাই
লিখবো বলেও ঠিক করি,
কেননা, তাতে বেশি তরাক্বি
ঘটবে - এ তে আর
সন্দেহ কি? কাশেমকে যে
ফাঁস নিয়ে মরতে হলো-
তার কারণ এখন সহজেই
আঁচ করা যাচ্ছে।
নিশ্চয়ই সে দশদিনের বেশি
লাগিয়ে দিয়েছে লিফলেটটি বিলি
করায়।
লেখক পরিচিতি
সাগর রহমান
জন্ম ১৯৭৮ সালে, বেগমগঞ্জ, নয়াখালিতে।
জন্ম ১৯৭৮ সালে, বেগমগঞ্জ, নয়াখালিতে।
বিভিন্ন পত্রিকাতে লেখালেখি করে থাকেন। ২০১৫ সালের বইমেলায়
খড়িমাটির দাগ নামে তার গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হবে প্রবাস প্রকাশনী থেকে।
কবি হিশেবেও সাগর রাহমান চমৎকার। তার গল্পেরা আরো সমৃদ্ধশালী হোক এই কামনা রইলো।
উত্তর দিনমুছুনকৃতজ্ঞতা, কবি ভাই।
মুছুন