রাত্রে বাড়ি ঢুকে রণদেববাবু ছেলেকে বললেন, কাল আমাকে একটু মুর্শিদাবাদ যেতে হচ্ছে।
ছেলে অয়ন জিজ্ঞেস করল, এই বয়সে অ্যাসাইনমেন্ট পেয়েছো নাকি?
রণদেববাবু বললেন, হ্যাঁ- পেয়েছি। কল্যাণবাবু বললেন মুর্শিদাবাদে পদ্মার ভাঙনের আসল চিত্রটা সরজমিনে দেখে এসে একটা কভার স্টোরী করতে।
অয়ন বলল, তাহলে গাড়ি নিয়ে যাও। একদিনেই ফিরে আসতে পারবে।
রণদেববাবু বললেন, গাড়ি নেব না। শুনেছি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ভাল নয়। টায়ার কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে পূর্ত দপ্তর নাকি রাস্তা সারাচ্ছে না! তাই ঠিক করেছি হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস ধরে যাব। সকাল ৬.৫০ -এ ছাড়ে কলকাতা স্টেশন থেকে। লালগোলায় পৌঁছয় দুপুর ১২ টায়। সেখানে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে লালগোলা - ভগবানগোলা দু’টোই কভার করে আবার বিকেলের ডাউন হাজারদূয়ারী ধরে কালই ফিরে আসব।
অয়ন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না বাবাকে। বরং বলে, সকালে আমি তাহলে তোমাকে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে দেব।
রণদেববাবু ‘না’ ‘না’ করে বলে উঠলেন, দরকার নেই। আমি ট্যাক্সি ধরে চলে যাব। তোমাকে আর কষ্ট করে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে না। স্নেহ ঝরে পড়ে রণদেববাবুর কন্ঠে।
- তোমার জন্য আমাকে উঠতে না হলেও ঝরণার জন্য উঠতে হবে বাপি। ভোর ৫.৫০ -এর ফ্লাইট ধরাতে হবে ওকে।
ঝরণাকে ফ্লাইট ধরাতে হবে! ঝরণা কখন এল যে, তাকে আবার ফ্লাইট ধরাতে হবে? রণদেববাবু কিছু বুঝতে পারছেন না। ঝরণা তাঁর মেয়ে। অয়নের ছোট। ব্যাঙ্গালুরুতে এমবিএ করছে। কখন এল সে?
বাবার অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে অয়নের। কিন্তু বাবাকে নিয়ে সে হাসতে চায় না। তার বাবা একটু অন্য ধরণের মানুষ। সংসারে থেকেও সংসার বিমুখ যেন! সাংবাদিকতা করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন সেই উত্তাল সত্তরের দশকে। চালচুলো কিছু ছিল না। কিন্তু লক্ষ্য ছিল। সাংবাদিক হবেন। সেই সময় কল্যাণবাবুরা তাঁদের দৈনিক কাগজটা বের করেন। কল্যাণবাবুর সঙ্গে বাবার কীভাবে হৃদ্যতা হয়েছিল, কে জানে! বাবার মনের কথা জানতেন কল্যাণবাবু। বাবাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। সেই থেকে বাবা আজ পর্যন্ত কল্যাণবাবুর সঙ্গেই আছেন। বড় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি।
যদিও বাবা নিজের চেষ্টায় একটা প্রকাশনা সংস্থা খুলেছেন। একটা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় সেই সংস্থা থেকে। সার্কুলেশন ভাল। বইমেলায় কিছু বইও প্রকাশিত হয়। কাগজ কলমে সেই সংস্থার কর্ণধার অয়ন নিজে। পড়াশুনো শেষ হলে বাবা তাকে ইংল্যান্ড পাঠিয়েছিলেন। প্রকাশনা বিষয়ক ডিপ্লোমা করতে।
ইতিমধ্যে রণদেববাবু নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করেছেন। স্বভাবতই তাঁর মুখ থেকে প্রশ্ন ভেসে এল, ঝরণা কখন এল? এখন তো ওর আসার কথা ছিল না!
অয়নকে কিছু বলতে হয় না, ঝরণা পেছন থেকে এসে রণদেববাবুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, আসার কথা ছিল না বলে কি আমি আসতে পারব না বাপি? ব্যাঙ্গালুরু আমি পড়তে গেছি। ওটা তো আর আমার শ্বশুরবাড়ি নয়!
- না, মা। আমি তোকে সেকথা বলেছি নাকি? বলা - কওয়া নেই, এভাবে এসে হাজির! বড্ড চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।
- চিন্তার কিছু নেই। আমি এখন বড় হয়েছি। তোমাদের দেখার জন্য মন খারাপ করছিল। তাই চলে এলাম। কাল ভোরে আবার পালাব।
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মাসুদা বেগম। রণদেব সেনগুপ্তের স্ত্রীর নাম মাসুদা বেগম। অয়ন সেনগুপ্ত – ঝরনা সেনগুপ্তের মা। অনেকে বলে সাংবাদিকতা নয়, প্রেমিকা মাসুদাকে ভাগিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই অধ্যাপনা ছেড়ে তাঁর কলকাতায় পালিয়ে আসা। যাইহোক, এতক্ষণ মাসুদা বেগম কিচেনে রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে সব কথা শুনছিলেন। বেরিয়ে এসে বললেন, খুব হয়েছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। খেতে হবে। রাত অনেক হয়েছে।
সত্যি অনেক রাত। বিজন সেতুতে জ্যামে প্রায় একঘন্টা খেয়েছে। রণদেববাবু টের পেলেন। কাল ভোরে আবার বেরোতে হবে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিছানায় যাওয়াটা খুব জরুরী।
দুই
রণদেববাবু বিছানায় এলেন বটে, কিন্তু কিছুতেই তাঁর ঘুম আসছে না। ডাক্তার সিগারেট খেতে নিষেধ করেছে। অথচ ঘুম না এলে সিগারেট ছাড়া চলে না। অগত্যা তিনি একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন। অন্যদিন হলে লেখার টেবিলে গিয়ে বসতেন। কিন্তু আজ একেবারেই লেখার ভাবনা নেই মাথায়। বদলে অন্য ভাবনা আছে। শিলু বানু নামের মেয়েটির ভাবনা। একমাস আগে যে-মেয়েটি তাঁর প্রকাশনা সংস্থায় যোগদান করেছিল। ইন্টারভিউ-এ যাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাড়ি কোথায়?
- মুর্শিদাবাদে।
- মুর্শিদাবাদের কোথায়?
- ভগবানগোলা থানার রাণীতলা গ্রামে।
- এখানে কোথায় থাকেন?
- বেলঘরিয়ায়, একটা মেস-এ।
- পড়াশুনো করেছেন কোথায়?
- রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
- আপনার তো শিক্ষক কিংবা অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা! তাহলে এই অনিশ্চয়তার চাকরী কেন?
- যতদিন শিক্ষক বা অধ্যাপক না হতে পারছি ততদিনের জন্য। আব্বা রিটায়ার করছেন। এখনও পেনশন চালু হয়নি। এই অবস্থায় আব্বার ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
কী জানি কেন, শিলু বানুকে দেখে - শিলু বানুর কথা শুনে তিনি মোহিত হয়ে যান। শিলু নয়, ঠিক যেন মাসুদা!
- স্যার, আপনি আমাকে ইংরেজী পড়াবেন?
সদ্য অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ হয়েছেন। রণদেববাবুর স্পষ্ট মনে পড়ছে সব। ভাড়া থাকেন মাঠের মধ্যে নিরালা একটা বাড়িতে। বাড়িটাও তাঁর মতো ব্যাচেলার। তারপর অচেনা জায়গা! অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসত না। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম ভাঙতে চাইত না। দরজায় খট্খট্ আওয়াজ। নিশ্চয় রান্নার মাসি! কিন্তু মাসি তো অনেক আগেই এসেছে। তাহলে আবার কে? বিরক্ত হয়েছিলেন। তবু ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর লজ্জ্বার একশেষ! পরণে শুধু একটা বারমুডা। খালি গা। দরজা খউলতেই প্রশ্নের সম্মুখীন- স্যার, আপনি আমাকে ইংরেজী পড়াবেন?
শিলু বানুকেই নিয়োগ করবেন, দ্বিধাহীন ভাবে স্থির করেন। যদিও ইন্টারভিউ শেষ হলে ব্যাপারটা অয়নকে খুলে বলেন। অয়নের মতামত জানতে চান।
অয়ন বলে, বাপি- তুমি যেটা ঠিক মনে করবে সেটাই হবে। এব্যাপারে আমার নিজস্ব কোনও মতামত নেই।
তারপর শিলুকে নিজের হাতে গড়ে তুলবেন বলে স্থির করেন রণদেববাবু। তাঁর স্বপ্নের পাবলিশিং হাউস যেভাবে গড়ে উঠবে, ঠিক সেভাবেই। কিন্তু দিন পনেরো পেরোতে না পেরোতে শিলুর অফিস কামাই। একদিন, দু’দিন, তিনদিন! একটু অবাক হলেও তিনি মনে করেন, নিশ্চয় শরীর খারাপ! হতেই পারে। অল্প বয়সী মেয়ে। নতুন কাজের ধকল নিতে বেগ পাচ্ছে হয়ত! রেস্ট নিক্। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। মনে মনে এমন ভাবলেও রণদেববাবু সেই রাত্রেই শিলুকে ফোন করেছিলেন। খবর জানার জন্য। শিলু ফোন ধরেনি। বার বার শিলুর ফোন বেজে গেছে। আশ্চর্য! না, বেশী আশ্চর্য হতে ভালোবাসেন না তিনি। পরেরদিন তাঁর নিজস্ব প্রকাশনার অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে বেলঘরিয়া ছুটেছিলেন। তাও নিজের গাড়িতে নয়, লোকাল ট্রেনে চড়ে। খুব কম করে হলেও প্রায় ২০ বছর পর তাঁর ট্রেনে ওঠা! তবু শিলুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। মেস্-এ শিলু ছিল না। শিলুর সঙ্গীরা ছিল। তারা বলেছিল, শিলু অসুস্থ! বাড়ি গেছে।
বাড়ি মানে তো সেই মুর্শিদাবাদ! ভগবানগোলা থানার রাণীতলা গ্রাম। ইন্টারভিউ-এর দিন জেনেছিলেন। স্পষ্ট মনে আছে। তারপর একে ওকে জিজ্ঞেস করে বাকিটা জেনেছেন। বিশেষ করে লালগোলার সেই ছেলেটি, কী যেন নাম! তাদের কাগজে ফ্রি-ল্যান্স করে! ফোন করে তার কাছে যাবতীয় তথ্য নিয়েছেন তিনি। সেই মতো কাল ভোর ভোর বেরোবেন।
শিলুর কথা ভাবতে ভাবতে ভোর এসে কখন ঘরের দরজায় ঠক্ ঠক্ করছিল, টের পান নি রণদেববাবু। হঠাৎ অয়নের ডাক, বাপি উঠে পড়। এক্ষুনি বেরোতে হবে। না হলে ঝরণা ফ্লাইট পাবে না।
একই সঙ্গে ঝরনার কণ্ঠ, বাপি আমি রেডি। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
রণদেববাবুর হাসি পায়। কিন্তু তিনি হাসেন না। মনে মনে বলেন, আমি তো জন্মানোর আগে থেকেই এই জীবন নিয়ে রেডি হয়ে আছি। নতুন করে রেডি হওয়ার কী আছে?
যদিও নিয়মমাফিক তিনি ল্যাট্রিন-এ যান। বাথরূমে স্নান করবার উদ্দেশ্যে ঢোকেন। কিন্তু একটু একটু শীত অনুভূত হয় বলে স্নান করেন না। হাত-পা-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে মুর্শিদাবাদে পদ্মার ভাঙনের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
তিন
বাইপাশ ধরে তাঁদের গাড়িটা হু হু করে ছুটে চলেছে। অয়ন ড্রাইভ করছে। পেছনের সিটে বসে আছেন রণদেববাবু। পাশে কন্যা ঝরণা। কেউ কোনও কথা বলছে না। ব্যাপারটা অস্বস্তি জন্মাচ্ছে রণদেববাবুর মনে। কোনও রকম অস্বস্তি তাঁর বরদাস্ত হয় না। এক্ষেত্রেও হল না। তিনি বলে উঠলেন, কী ব্যাপার- তোরা সবাই এত নিশ্চুপ কেন?
ঝরণা বলে উঠল, তুমি আমাদের কথা বলতে শিখিয়েছো অথচ তোমার মুখে কোনও কথা নেই! তুমি চুপ করে আছো। আমরা তাহলে কথা বলি কী করে?
রণদেববাবু আত্মপীড়নে ভোগেন। তাই তো! তিনি নিজেই তো কথা বলছেন না! চুপ করে আছেন।
নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। শিলুর ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। পুত্র-কন্যা সেটা টের পায় নি তো? শিলুকে নিয়ে তাঁর বাড়াবাড়ি অয়নের পছন্দ ছিল না। অফিসে একদিন ‘তুমি’ সম্বোধন করে কী যেন বলছিলেন! অয়ন সেটা শুনে ফেলেছিল। বাড়িতে গিয়ে বলেছিল, বাবা- অফিসে আমাকেও তুমি ‘আপনি’ সম্বোধন কর!
সমজ্দারকো ঈশারা কাফি! তিনি বুঝে গেছিলেন। যেমন এখন বুঝে গেলেন এক্ষুণি তাঁদের গাড়িটা বাইপাশ ছেড়ে ভিআইপি রোড ধরবে। আগে ঝরণাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে তারপর তাঁকে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে দেবে। রাত্রে অয়নের সঙ্গে এরকম কথা হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হল এখানেই তাঁর নেমে যাওয়া উচিৎ। সেই মতো তিনি অয়নকে বললেন, আমাকে এখানে নামিয়ে দাও। একটা ট্যাক্সি করে আমি স্টেশনে চলে যাচ্ছি।
অয়ন বলল, তোমার ট্রেণের অনেক সময় আছে। আমিই তোমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেব। বসে থাকো তুমি।
- না বাবা, তুমি আমাকে নামিয়ে দাও। তোমার তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমি ঠিক পৌঁছে যাব। তাছাড়া এই অ্যাসাইমেন্টটা আমি বিখ্যাত সাংবাদিক রণদেব সেনগুপ্ত’র মতো কভার করতে চাইছি না। খুব সাধারণ মানুষের মতো করতে চাইছি। আশাকরি ব্যাপারটা তুমি বোঝার চেষ্টা করবে।
অয়ন আর কিছু বলে না, গাড়িটা দাঁড় করায়। রণদেববাবু মেয়ের মাথায় হাত ছুঁয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। মুখে বললেন, পৌঁছে ফোন করিস মা।
চার
শীত আসে ঘূর্ণাবর্তের ওপর ভর করে। সেই ঘূর্ণাবর্ত বেশীরভাগ সময় ঘূর্ণি ঝড়ের রূপ নেয়। এবার যেমন নিয়েছে। আমেরিকায় সে নাম পেয়েছে ‘স্যান্ডি’। আর ইন্ডিয়া’য় ‘নীলম’। অন্ধ্রকে বিধ্বস্ত করলেও তামিলনাড়ু এবং বাংলাতেও তার প্রভাব পড়েছে। সেই প্রভাবেই গতকাল বিকেল থেকে আকাশ মেঘাছন্ন থাকলেও সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ‘হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস’-এ রিজার্ভেশন ছিল না। রণদেববাবু টিকিট কেটে জেনারেল কমপার্টমেন্টে উঠেছিলেন। বৃষ্টির কারণে শীতল আবহাওয়া। জানালার কাঁচ নামিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে তাঁর তন্দ্রা এসেছিল, টের পান নি। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠতে টের পেলেন। হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস হু হু করে ছুটে চলেছে। মোবাইলটা প্যান্টের পকেট থেকে বের করলেন। লালগোলার সেই সাংবাদিক ছেলেটিই ফোন করেছে। ফোনটা ধরলেন তিনি, হ্যাঁ বলুন!
- আপনি এখন কোথায়?
- এই তো ট্রেনে। কৃষ্ণপুর না কী একটা স্টেশন পেরোলাম।
- আপনি অলরেডি লালগোলা স্টেশনে ঢুকছেন। গাড়ি দাঁড়ালে প্লাটফর্মে নেমে ওভারব্রিজ বেয়ে আসুন। আমি ১ নম্বর প্লাটফর্মে ওভারব্রিজের গোঁড়ায় আপনার অপেক্ষা করছি।
- আমাকে চিনবেন কী করে?
- আসুন তো আগে! তারপর চিনতে পারছি কিনা দেখা যাচ্ছে।
ছেলেটি অর্থাৎ সাংবাদিক ছেলেটি ঠিক চিনতে পারল রণদেব সেনগুপ্তকে। ব্যক্তিত্ব এমনই ভিড়ের মধ্যেও চিনতে অসুবিধা হল না তার। এগিয়ে গেল সে। বলল, আমিই সেই ... আমার নাম গোলাম কুদ্দুশ । আসুন। আপনার কথামতো একটা গাড়ি রেডি রেখেছি। কিন্তু যা ওয়েদার!
- হ্যাঁ, আগে বুঝতে পারলে আসতাম না।
- যাক্ গে। এসেছেন যখন, চলুন- আগে খান্দুয়াটা দেখে আসি।
- খান্দুয়া বলতে?
- আমাদের লালগোলায় যে জায়গায় ভাঙন চলছে সেই জায়গাটার নাম।
- চলুন তাহলে।
প্লাটফর্মের নীচে লাল রঙের একটাই ‘টাটা সুমো’ দাঁড়িয়েছিল। সেটাই চড়ে বসল ওরা। ড্রাইভার ছেলেটি জিজ্ঞেস করল, প্রথমে কোনদিকে যাবো কুদ্দুশদা?
গোলাম কুদ্দুশ বলল, খান্দুয়া। তারপর জিজ্ঞেস করল, ঘোষপাড়ার ভেতরকার রাস্তাটার অবস্থা কেমন রে সুরজ?
- ভালো। কংক্রিট ঢালাই রাস্তা এখন।
- তাহলে চিন্তা নেই। চল। খান্দুয়া সেরে আখেরীগঞ্জ যেতে হবে আবার।
বৃষ্টি পড়ছে টিপ টিপ। সকাল থেকে সেই একই রকম। না একটু বেশী, না একটু কম! এমন দিনে বাড়িতে বিছানায় শুয়ে বুকে ল্যাপটপ নিয়ে ফেস্বুক খুলে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট্ করা যেত। সকাল থেকেই গোলাম কুদ্দুশের মনে এনিয়ে এক ধরণের খচ্খচি ছিল। এখন আর সেটা নেই। বরং এক অদ্ভূত ভালোলাগা আঁচ টের পেল। সেই ভালোলাগা আঁচের মধ্যে রণদেববাবু তার দিকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে ধরলেন। সে একটা সিগারেট হাতে নিল। যদিও সে দিনের বেলা সিগারেট খায় না। এখন সেটা তার মনে নেই।
টাটাসুমোটা এগিয়ে চলেছে নাটাতলা মোড় ছেড়ে খান্দুয়ার দিকে। লাল মোড়ামের রাস্তা। দু’পাশে জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি। রণদেববাবু সিগারেট টানতে টানতে দেখছেন। কোনও কথা বলছেন না। দু’পাশ দেখতে দেখতে তিনি গোলাম কুদ্দুশের কথাও শুনছেন। নাকি কিছুই শুনছেন না। শিলুর কথা ভাবছেন।
হ্যাঁ, শিলু তাকে টানছে। সেই টানেই তিনি এসেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট উপলক্ষ্য মাত্র। কেউ জানে না সেটা। এমনকী গোলাম কুদ্দুশ নামের ছেলেটিও জানে না। নিজের ভবিষ্যতের আশায় পদ্মাপাড়ে দাঁড়িয়ে সে সর্বনাশা পদ্মার কীর্তি বর্ণনা করছে। এই ক’বছরে পদ্মা কতটা এগিয়ে এসেছে! ক’টা জনপদ গিলে খেয়েছে, সবিস্তারে বলছে সব। এমন কী শতাব্দী প্রাচীন সেখালিপুর হাইস্কুলটার তলিয়ে যাওয়ার কথাও বলতে ভুলছে না। রণদেববাবু খুব বড় মাপের সাংবাদিক। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে সঙ্গী হন। রাষ্ট্রপতি তাঁকে আমন্ত্রণ পাঠান পারিবারিক অনুষ্ঠানে। এসব খবর সে জানে। তাই তার আশা- যদি তিনি তাঁর লেখনীতে এইসব ব্যাপার খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এবং সরকারের টনক নড়ে!
কিন্তু রণদেববাবুর যেন এসবে কোনও আগ্রহ নেই। সিগারেট টানা শেষ করে তিনি বললেন, চলুন- এবারে আখেরীগঞ্জ যাওয়া যাক। আমার ফেরার ট্রেণ তো আবার বিকেল ৩.৫০-এ।
গোলাম কুদ্দুশ ঘড়ি দেখল। মেঘে মেঘে বেলা প্রায় ১ টা। আখেরীগঞ্জ ঘুরে আসতে ২ ঘণ্টা মতো লাগবে। তাহলে আর দেরী করা ঠিক হবে না।
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশকেও বলতে হয়, চলুন- যাওয়া যাক। আপনি তো আবার রাণীতলা গ্রামেও যাবেন!
পাঁচ
টাটাসুমোটা যখন ভগবানগোলা ঢুকছে। রণদেববাবু বললেন, আখেরীগঞ্জ যাওয়ার পথেই কি রাণীতলা গ্রামটা পড়বে?
গোলাম কুদ্দুশ বলল, হ্যাঁ স্যার।
বলেই কুদ্দুশের কৌতুহল হয়। সে জিজ্ঞেস করে, রাণীতলা গ্রাম কেন বলুন তো?
- ওখানে আমার লেখার ভক্ত আছেন একজন। নাম লালমহম্মদ সেখ। এলাম যখন একটু দেখা করার ইচ্ছে জাগছে।
গোলাম কুদ্দুশ উৎসাহ নিয়ে বলল, রাস্তার ওপরেই পড়বে। চলুন- খোঁজ নিয়ে দেখছি।
ড্রাইভার ছেলেটি ওদের কথা শুনছিল। বলল, লালমহম্মদ মাস্টার তো! আমি চিনি। মোড়ের ওপরেই বাড়ি।
গোলাম কুদ্দুশ ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল, কী ভাবে চিনলে তুমি?
- বিয়ের বরযাত্রী নিয়ে এসেছিলাম ওই বাড়িতে।
- কতদিন আগে? রণদেববাবু জিজ্ঞেস করলেন।
ড্রাইভার ছেলেটি বলল, তা প্রায় বছর তিনেক হয়ে গেল।
- বড় মেয়ের বিয়ে তাহলে। মেয়েটার বিয়েটা টেকেনি। ভেঙে গেছে। খুব ব্যথাতুর কন্ঠ রণদেববাবুর।
গোলাম কুদ্দুশ রণদেববাবুকে দেখে। অবাক হয়। লোকটা এতকিছু জানল কী করে? সে আরও ভাল করে রণদেববাবুকে নিরীক্ষণ করে।
রণদেববাবু একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন। কেমন বিষন্ন তাঁর মন! ঠিক যেন মেঘভার আকাশটার মতো। পার্থক্য মেঘভার আকাশ থেকে টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি ঝরছে। আর লোকটা থম্ মেরে আছে। তাহলে কি লোকটা পদ্মার ভাঙনের আড়ালে অন্য কোনও ভাঙনের খোঁজে এসেছে?
গোলাম কুদ্দুশের খুব কৌতুহল হয়। যদিও এবারে সে কৌতুহল চেপে রাখে। সঙ্গে যখন আছে ঠিক সব জানতে পারবে।
হঠাৎ ড্রাইভার ছেলেটি জিজ্ঞেস করল, রাণীতলা ঢুকছি স্যার। যাবেন নাকি লালমহম্মদ মাস্টারের বাড়ি?
- হ্যাঁ, গাড়ি দাঁড় করাও। এসেছি যখন একটু দেখা করে যাই।
রণদেববাবুর তৎপরতা লক্ষ্য করে গোলাম কুদ্দুশ। ইতিমধ্যে একটা বটগাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ায় গাড়িটা। ড্রাইভার বলে, ডানদিকের বাড়িটা স্যার।
গাড়ি থেকে আগে গোলাম কুদ্দুশ নামে। রণদেববাবু পরে। বাড়িটার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কলিংবেলের সুইচে হাত দেয়। কিন্তু সেটা বাজে কি না, বুঝতে পারে না। যদিও একটা লোক দরজা খোলে। লোকটির খালি গা। পরণে একটা তেলচিটে লুঙ্গি। গোলাম কুদ্দুশ লোকটিকে বাড়ির চাকর ভেবে বলল, লালমহম্মদ সেখকে একটু ডেকে দেবেন!
- আমিই লালমহম্মদ সেখ। কী বুলার আছে, বুলেন ক্যানে।
রণদেববাবু নিজের নাম বললেন। গোলাম কুদ্দুশ লক্ষ্য করে, নাম শুনে লোকটির মুখচোখ কেমন বদলে যায়। রক্তশূণ্য অবস্থা যেন! যদিও কোনও রকমে উচ্চারণ করে, আপনি!
- হ্যাঁ আমি। আপনাকে বলেছিলাম না যে, আসতে পারি!
- ও হ্যাঁ- হ্যাঁ। আসেন- ভিতরে আসেন।
দরজা পেরোতেই সিড়ি। লোকটি আগে আগে উঠছে। পেছন পেছন রণদেববাবু। তাঁদের পেছনে গোলাম কুদ্দুশ। সিড়ির ধাপিগুলি অপ্রশস্ত। তার ওপর প্রায় অন্ধকার। তাদের বাড়ির মতো প্রশস্ত আর আলোময় নয়।
গোলাম কুদ্দুশের চোখে বাইফোকাল চশমা। সবকিছু অস্পষ্ট! তবু সে উঠে যাচ্ছে। কৌতুহলে। এত বড় একজন সাংবাদিক! কী সম্পর্ক থাকতে পারে এরকম একজন ছাপোষা মানুষের সঙ্গে?
লালমহম্মদ নামের লোকটি ওদের নিয়ে গিয়ে বসায় দোতলার একটি ঘরে। সাদামাটা ঘর একটা। বইয়ের আলমারি। টিভি। সোফা। দু’টি চেয়ার। বিছানা পাতা একটা খাট। রণদেববাবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন সব। এমন কী আলমারিতে কী কী বই আছে, সেসবও। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়, শংকর। আবার দেওয়ালে ক্যালেন্ডারে ঝুলছে দুলদুল ঘোড়ার ছবি! একপাশে একটা ড্রেসিং-টেবিলও আছে। ঘরটার সঙ্গে শিলুকে মেলানোর চেষ্টা করছেন রণদেববাবু। কিন্তু মেলাতে পারছেন না। এই বাড়ির মেয়ে শিলু! কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর। তবে কি তিনি ভুল ঠিকানায় এসেছেন? যদি ভুল হবে তাহলে লালমহম্মদ লোকটি ঠিক হবে কী করে? মগজে সবকিছু কেমন গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে!
ঠিক এই সময়ে মোবাইলে একটা মেসেজ আসে রণদেববাবুর। তিনি প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ইনবক্স খুলে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন। গোলাম কুদ্দুশ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। রণদেববাবুর মুখচোখ কেমন পালটে যাচ্ছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না যেন!
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশ তাঁকে জিজ্ঞেস করে, কোনও অসুবিধা স্যার?
রণদেববাবু ফোনটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়েই গোলাম কুদ্দুশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাদের এখান থেকে এখনি বেরোতে হবে!
গোলাম কুদ্দুশ কিছু বুঝতে পারছে না। কেন বেরোতে হবে? বেরোতেই যদি হবে, তাহলে আসা কেন? রণদেববাবু ততক্ষণে সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। লালমহম্মদ নামের লোকটি তাদের বসিয়ে ভেতরে গেছে। নিশ্চয় চা-পানির ব্যবস্থা করতে! তাকে না বলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? সে ভাবছে। রণদেববাবুর কিন্তু তর সইছে না, কী হল- তাড়াতাড়ি চলুন! বলেই রণদেববাবু আর অপেক্ষা করেন না, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান।
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশকেও বেরিয়ে আসতে হয়। রণদেববাবুর পিছু পিছু সিড়ি ভেঙে সটান গাড়িতে গিয়ে ওঠে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। জিজ্ঞেস করে, পদ্মার পাড়ে যাবেন তো?
- হ্যাঁ। হ্যাঁ। তাই চল। তাড়াতাড়ি চল!
বলে রণদেববাবু আবার একটা সিগারেট ধরান। খুব অস্থির দেখায় তাঁকে। সিগারেট টানতে টানতে ফোনে কাউকে ধরার চেষ্টা করছেন। পাচ্ছেন না। গোলাম কুদ্দুশ তাঁকে কিছু বলতে পারছে না। বলবে কী, ব্যাপারটা তার কাছে রহস্য লাগছে। ট্রেণ থেকে নামার পর থেকে দেখেছে একটা শান্ত-শিষ্ট মানুষ। তাহলে হঠাৎ কী এমন হল যে ওই শান্ত-শিষ্ট মানুষটি একটা মেসেজ পেয়ে অমন অশান্ত হয়ে উঠল! কার মেসেজ?
কিছুক্ষণে ওদের টাটাসুমোটা পদ্মাপাড়ে পৌঁছে যায়। অথচ ওরা বুঝতে পারে না। ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলে, চলে এসেছি স্যার। ওই দেখুন পদ্মা!
রণদেববাবু এতক্ষণ ফোনে কাউকে ধরার চেষ্টা করছিলেন, ড্রাইভারের কথা শুনে ক্ষান্তি দিলেন। গাড়ি থেকে নামলেন। সামনের দিকে তাকালেন। কিন্তু কোথায় পদ্মা? তাঁর চোখের সামনে তো শুধুই মেঘ! নাকি ঘন কুয়াশা?
না, এসব ভাবনা কিছুই ভাবলেন না তিনি। মেঘ কিংবা কুয়াশার ভেতর দিয়ে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। কোনও কিছুই যেন দেখছেন না তিনি! শুধু হেঁটে যাচ্ছেন। অন্ধ যেভাবে হেঁটে যায়। কিংবা কোনও ঘোর আবিষ্ট মানুষ! তিনি ঠিক সেভাবেই হেঁটে যাচ্ছেন পদ্মার ভাঙ্গা পাড়ের দিকে।
গোলাম কুদ্দুশ গাড়িতেই বসে আছে। সে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। বুঝতে পারছে না রণদেব সেনগুপ্ত নামের এক বিশাল মাপের সাংবাদিক মানুষটি কেন এসেছেন? কী চাইছেন?
গোলাম কুদ্দুশ ব্যাপারটা বোধে আনতে চাইছে। বুঝতে চাইছে। না হলে হয়ত সে নিজেই পাগল হয়ে যাবে! এমন অস্থিরতার মধ্যে হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ে সিটে পড়ে থাকা রণদেববাবুর মোবাইলটার ওপর। এই মোবাইলে একটা মেসেজ আসার পর লোকটা কেমন পাগলের মতো আচরণ শুরু করেছে। কার মেসেজ? কী লেখা আছে ওই মেসেজে?
কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারে না ফ্রী-ল্যান্সার গোলাম কুদ্দুশ। মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়। ইনবক্স খোলে। মেসেজ না বলে রীতিমতো একটা চিঠি বলা ভাল। স্পষ্ট বাংলায় লেখা, আপনি আমাদের বাড়িতে কেন এসেছেন? এক্ষুণি বেরিয়ে যান! আপনার আসাটা আমরা মেনে নিতে পারছি না...
রণদেববাবু মেঘ কিংবা কুয়াশার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে কী ভাবছেন কে জানে! তবে মেসেজ পড়তে পড়তে গোলাম কুদ্দুশের মাথাটা কেমন করছে! কে শিলু? শিলুর সঙ্গে কী এমন সম্পর্ক একজন সাংবাদিকের? যে সম্পর্কের টানে এত বড় একজন সাংবাদিক কাজকাম ফেলে ছুটে আসেন সুদূর কলকাতা থেকে? রণদেববাবু পাশে থাকলে হয়ত এতক্ষণ সে জিজ্ঞেস করে বসত! কিন্তু লোকটা গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে গেল! না, সে-ভাবনাও সে ভাবতে পারছে না। তার ভাবনা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। হাজার চেষ্টাতেও জোড়া রাখতে পারছে না। পদ্মা যে ভাবে তাঁদের ভিটেমাটি ভাঙছে, ঠিক সে ভাবেই।
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
ছেলে অয়ন জিজ্ঞেস করল, এই বয়সে অ্যাসাইনমেন্ট পেয়েছো নাকি?
রণদেববাবু বললেন, হ্যাঁ- পেয়েছি। কল্যাণবাবু বললেন মুর্শিদাবাদে পদ্মার ভাঙনের আসল চিত্রটা সরজমিনে দেখে এসে একটা কভার স্টোরী করতে।
অয়ন বলল, তাহলে গাড়ি নিয়ে যাও। একদিনেই ফিরে আসতে পারবে।
রণদেববাবু বললেন, গাড়ি নেব না। শুনেছি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা ভাল নয়। টায়ার কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে পূর্ত দপ্তর নাকি রাস্তা সারাচ্ছে না! তাই ঠিক করেছি হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস ধরে যাব। সকাল ৬.৫০ -এ ছাড়ে কলকাতা স্টেশন থেকে। লালগোলায় পৌঁছয় দুপুর ১২ টায়। সেখানে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়ে লালগোলা - ভগবানগোলা দু’টোই কভার করে আবার বিকেলের ডাউন হাজারদূয়ারী ধরে কালই ফিরে আসব।
অয়ন আর কিছু জিজ্ঞেস করে না বাবাকে। বরং বলে, সকালে আমি তাহলে তোমাকে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে দেব।
রণদেববাবু ‘না’ ‘না’ করে বলে উঠলেন, দরকার নেই। আমি ট্যাক্সি ধরে চলে যাব। তোমাকে আর কষ্ট করে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে না। স্নেহ ঝরে পড়ে রণদেববাবুর কন্ঠে।
- তোমার জন্য আমাকে উঠতে না হলেও ঝরণার জন্য উঠতে হবে বাপি। ভোর ৫.৫০ -এর ফ্লাইট ধরাতে হবে ওকে।
ঝরণাকে ফ্লাইট ধরাতে হবে! ঝরণা কখন এল যে, তাকে আবার ফ্লাইট ধরাতে হবে? রণদেববাবু কিছু বুঝতে পারছেন না। ঝরণা তাঁর মেয়ে। অয়নের ছোট। ব্যাঙ্গালুরুতে এমবিএ করছে। কখন এল সে?
বাবার অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে অয়নের। কিন্তু বাবাকে নিয়ে সে হাসতে চায় না। তার বাবা একটু অন্য ধরণের মানুষ। সংসারে থেকেও সংসার বিমুখ যেন! সাংবাদিকতা করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন সেই উত্তাল সত্তরের দশকে। চালচুলো কিছু ছিল না। কিন্তু লক্ষ্য ছিল। সাংবাদিক হবেন। সেই সময় কল্যাণবাবুরা তাঁদের দৈনিক কাগজটা বের করেন। কল্যাণবাবুর সঙ্গে বাবার কীভাবে হৃদ্যতা হয়েছিল, কে জানে! বাবার মনের কথা জানতেন কল্যাণবাবু। বাবাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। সেই থেকে বাবা আজ পর্যন্ত কল্যাণবাবুর সঙ্গেই আছেন। বড় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি।
যদিও বাবা নিজের চেষ্টায় একটা প্রকাশনা সংস্থা খুলেছেন। একটা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় সেই সংস্থা থেকে। সার্কুলেশন ভাল। বইমেলায় কিছু বইও প্রকাশিত হয়। কাগজ কলমে সেই সংস্থার কর্ণধার অয়ন নিজে। পড়াশুনো শেষ হলে বাবা তাকে ইংল্যান্ড পাঠিয়েছিলেন। প্রকাশনা বিষয়ক ডিপ্লোমা করতে।
ইতিমধ্যে রণদেববাবু নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করেছেন। স্বভাবতই তাঁর মুখ থেকে প্রশ্ন ভেসে এল, ঝরণা কখন এল? এখন তো ওর আসার কথা ছিল না!
অয়নকে কিছু বলতে হয় না, ঝরণা পেছন থেকে এসে রণদেববাবুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, আসার কথা ছিল না বলে কি আমি আসতে পারব না বাপি? ব্যাঙ্গালুরু আমি পড়তে গেছি। ওটা তো আর আমার শ্বশুরবাড়ি নয়!
- না, মা। আমি তোকে সেকথা বলেছি নাকি? বলা - কওয়া নেই, এভাবে এসে হাজির! বড্ড চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।
- চিন্তার কিছু নেই। আমি এখন বড় হয়েছি। তোমাদের দেখার জন্য মন খারাপ করছিল। তাই চলে এলাম। কাল ভোরে আবার পালাব।
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন মাসুদা বেগম। রণদেব সেনগুপ্তের স্ত্রীর নাম মাসুদা বেগম। অয়ন সেনগুপ্ত – ঝরনা সেনগুপ্তের মা। অনেকে বলে সাংবাদিকতা নয়, প্রেমিকা মাসুদাকে ভাগিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই অধ্যাপনা ছেড়ে তাঁর কলকাতায় পালিয়ে আসা। যাইহোক, এতক্ষণ মাসুদা বেগম কিচেনে রান্নার তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে সব কথা শুনছিলেন। বেরিয়ে এসে বললেন, খুব হয়েছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। খেতে হবে। রাত অনেক হয়েছে।
সত্যি অনেক রাত। বিজন সেতুতে জ্যামে প্রায় একঘন্টা খেয়েছে। রণদেববাবু টের পেলেন। কাল ভোরে আবার বেরোতে হবে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিছানায় যাওয়াটা খুব জরুরী।
দুই
রণদেববাবু বিছানায় এলেন বটে, কিন্তু কিছুতেই তাঁর ঘুম আসছে না। ডাক্তার সিগারেট খেতে নিষেধ করেছে। অথচ ঘুম না এলে সিগারেট ছাড়া চলে না। অগত্যা তিনি একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন। অন্যদিন হলে লেখার টেবিলে গিয়ে বসতেন। কিন্তু আজ একেবারেই লেখার ভাবনা নেই মাথায়। বদলে অন্য ভাবনা আছে। শিলু বানু নামের মেয়েটির ভাবনা। একমাস আগে যে-মেয়েটি তাঁর প্রকাশনা সংস্থায় যোগদান করেছিল। ইন্টারভিউ-এ যাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাড়ি কোথায়?
- মুর্শিদাবাদে।
- মুর্শিদাবাদের কোথায়?
- ভগবানগোলা থানার রাণীতলা গ্রামে।
- এখানে কোথায় থাকেন?
- বেলঘরিয়ায়, একটা মেস-এ।
- পড়াশুনো করেছেন কোথায়?
- রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
- আপনার তো শিক্ষক কিংবা অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা! তাহলে এই অনিশ্চয়তার চাকরী কেন?
- যতদিন শিক্ষক বা অধ্যাপক না হতে পারছি ততদিনের জন্য। আব্বা রিটায়ার করছেন। এখনও পেনশন চালু হয়নি। এই অবস্থায় আব্বার ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
কী জানি কেন, শিলু বানুকে দেখে - শিলু বানুর কথা শুনে তিনি মোহিত হয়ে যান। শিলু নয়, ঠিক যেন মাসুদা!
- স্যার, আপনি আমাকে ইংরেজী পড়াবেন?
সদ্য অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ হয়েছেন। রণদেববাবুর স্পষ্ট মনে পড়ছে সব। ভাড়া থাকেন মাঠের মধ্যে নিরালা একটা বাড়িতে। বাড়িটাও তাঁর মতো ব্যাচেলার। তারপর অচেনা জায়গা! অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসত না। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম ভাঙতে চাইত না। দরজায় খট্খট্ আওয়াজ। নিশ্চয় রান্নার মাসি! কিন্তু মাসি তো অনেক আগেই এসেছে। তাহলে আবার কে? বিরক্ত হয়েছিলেন। তবু ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর লজ্জ্বার একশেষ! পরণে শুধু একটা বারমুডা। খালি গা। দরজা খউলতেই প্রশ্নের সম্মুখীন- স্যার, আপনি আমাকে ইংরেজী পড়াবেন?
শিলু বানুকেই নিয়োগ করবেন, দ্বিধাহীন ভাবে স্থির করেন। যদিও ইন্টারভিউ শেষ হলে ব্যাপারটা অয়নকে খুলে বলেন। অয়নের মতামত জানতে চান।
অয়ন বলে, বাপি- তুমি যেটা ঠিক মনে করবে সেটাই হবে। এব্যাপারে আমার নিজস্ব কোনও মতামত নেই।
তারপর শিলুকে নিজের হাতে গড়ে তুলবেন বলে স্থির করেন রণদেববাবু। তাঁর স্বপ্নের পাবলিশিং হাউস যেভাবে গড়ে উঠবে, ঠিক সেভাবেই। কিন্তু দিন পনেরো পেরোতে না পেরোতে শিলুর অফিস কামাই। একদিন, দু’দিন, তিনদিন! একটু অবাক হলেও তিনি মনে করেন, নিশ্চয় শরীর খারাপ! হতেই পারে। অল্প বয়সী মেয়ে। নতুন কাজের ধকল নিতে বেগ পাচ্ছে হয়ত! রেস্ট নিক্। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। মনে মনে এমন ভাবলেও রণদেববাবু সেই রাত্রেই শিলুকে ফোন করেছিলেন। খবর জানার জন্য। শিলু ফোন ধরেনি। বার বার শিলুর ফোন বেজে গেছে। আশ্চর্য! না, বেশী আশ্চর্য হতে ভালোবাসেন না তিনি। পরেরদিন তাঁর নিজস্ব প্রকাশনার অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে বেলঘরিয়া ছুটেছিলেন। তাও নিজের গাড়িতে নয়, লোকাল ট্রেনে চড়ে। খুব কম করে হলেও প্রায় ২০ বছর পর তাঁর ট্রেনে ওঠা! তবু শিলুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। মেস্-এ শিলু ছিল না। শিলুর সঙ্গীরা ছিল। তারা বলেছিল, শিলু অসুস্থ! বাড়ি গেছে।
বাড়ি মানে তো সেই মুর্শিদাবাদ! ভগবানগোলা থানার রাণীতলা গ্রাম। ইন্টারভিউ-এর দিন জেনেছিলেন। স্পষ্ট মনে আছে। তারপর একে ওকে জিজ্ঞেস করে বাকিটা জেনেছেন। বিশেষ করে লালগোলার সেই ছেলেটি, কী যেন নাম! তাদের কাগজে ফ্রি-ল্যান্স করে! ফোন করে তার কাছে যাবতীয় তথ্য নিয়েছেন তিনি। সেই মতো কাল ভোর ভোর বেরোবেন।
শিলুর কথা ভাবতে ভাবতে ভোর এসে কখন ঘরের দরজায় ঠক্ ঠক্ করছিল, টের পান নি রণদেববাবু। হঠাৎ অয়নের ডাক, বাপি উঠে পড়। এক্ষুনি বেরোতে হবে। না হলে ঝরণা ফ্লাইট পাবে না।
একই সঙ্গে ঝরনার কণ্ঠ, বাপি আমি রেডি। তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
রণদেববাবুর হাসি পায়। কিন্তু তিনি হাসেন না। মনে মনে বলেন, আমি তো জন্মানোর আগে থেকেই এই জীবন নিয়ে রেডি হয়ে আছি। নতুন করে রেডি হওয়ার কী আছে?
যদিও নিয়মমাফিক তিনি ল্যাট্রিন-এ যান। বাথরূমে স্নান করবার উদ্দেশ্যে ঢোকেন। কিন্তু একটু একটু শীত অনুভূত হয় বলে স্নান করেন না। হাত-পা-মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এসে মুর্শিদাবাদে পদ্মার ভাঙনের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
তিন
বাইপাশ ধরে তাঁদের গাড়িটা হু হু করে ছুটে চলেছে। অয়ন ড্রাইভ করছে। পেছনের সিটে বসে আছেন রণদেববাবু। পাশে কন্যা ঝরণা। কেউ কোনও কথা বলছে না। ব্যাপারটা অস্বস্তি জন্মাচ্ছে রণদেববাবুর মনে। কোনও রকম অস্বস্তি তাঁর বরদাস্ত হয় না। এক্ষেত্রেও হল না। তিনি বলে উঠলেন, কী ব্যাপার- তোরা সবাই এত নিশ্চুপ কেন?
ঝরণা বলে উঠল, তুমি আমাদের কথা বলতে শিখিয়েছো অথচ তোমার মুখে কোনও কথা নেই! তুমি চুপ করে আছো। আমরা তাহলে কথা বলি কী করে?
রণদেববাবু আত্মপীড়নে ভোগেন। তাই তো! তিনি নিজেই তো কথা বলছেন না! চুপ করে আছেন।
নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। শিলুর ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। পুত্র-কন্যা সেটা টের পায় নি তো? শিলুকে নিয়ে তাঁর বাড়াবাড়ি অয়নের পছন্দ ছিল না। অফিসে একদিন ‘তুমি’ সম্বোধন করে কী যেন বলছিলেন! অয়ন সেটা শুনে ফেলেছিল। বাড়িতে গিয়ে বলেছিল, বাবা- অফিসে আমাকেও তুমি ‘আপনি’ সম্বোধন কর!
সমজ্দারকো ঈশারা কাফি! তিনি বুঝে গেছিলেন। যেমন এখন বুঝে গেলেন এক্ষুণি তাঁদের গাড়িটা বাইপাশ ছেড়ে ভিআইপি রোড ধরবে। আগে ঝরণাকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়ে তারপর তাঁকে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে দেবে। রাত্রে অয়নের সঙ্গে এরকম কথা হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হল এখানেই তাঁর নেমে যাওয়া উচিৎ। সেই মতো তিনি অয়নকে বললেন, আমাকে এখানে নামিয়ে দাও। একটা ট্যাক্সি করে আমি স্টেশনে চলে যাচ্ছি।
অয়ন বলল, তোমার ট্রেণের অনেক সময় আছে। আমিই তোমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেব। বসে থাকো তুমি।
- না বাবা, তুমি আমাকে নামিয়ে দাও। তোমার তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমি ঠিক পৌঁছে যাব। তাছাড়া এই অ্যাসাইমেন্টটা আমি বিখ্যাত সাংবাদিক রণদেব সেনগুপ্ত’র মতো কভার করতে চাইছি না। খুব সাধারণ মানুষের মতো করতে চাইছি। আশাকরি ব্যাপারটা তুমি বোঝার চেষ্টা করবে।
অয়ন আর কিছু বলে না, গাড়িটা দাঁড় করায়। রণদেববাবু মেয়ের মাথায় হাত ছুঁয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। মুখে বললেন, পৌঁছে ফোন করিস মা।
চার
শীত আসে ঘূর্ণাবর্তের ওপর ভর করে। সেই ঘূর্ণাবর্ত বেশীরভাগ সময় ঘূর্ণি ঝড়ের রূপ নেয়। এবার যেমন নিয়েছে। আমেরিকায় সে নাম পেয়েছে ‘স্যান্ডি’। আর ইন্ডিয়া’য় ‘নীলম’। অন্ধ্রকে বিধ্বস্ত করলেও তামিলনাড়ু এবং বাংলাতেও তার প্রভাব পড়েছে। সেই প্রভাবেই গতকাল বিকেল থেকে আকাশ মেঘাছন্ন থাকলেও সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ‘হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস’-এ রিজার্ভেশন ছিল না। রণদেববাবু টিকিট কেটে জেনারেল কমপার্টমেন্টে উঠেছিলেন। বৃষ্টির কারণে শীতল আবহাওয়া। জানালার কাঁচ নামিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে তাঁর তন্দ্রা এসেছিল, টের পান নি। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠতে টের পেলেন। হাজারদূয়ারী এক্সপ্রেস হু হু করে ছুটে চলেছে। মোবাইলটা প্যান্টের পকেট থেকে বের করলেন। লালগোলার সেই সাংবাদিক ছেলেটিই ফোন করেছে। ফোনটা ধরলেন তিনি, হ্যাঁ বলুন!
- আপনি এখন কোথায়?
- এই তো ট্রেনে। কৃষ্ণপুর না কী একটা স্টেশন পেরোলাম।
- আপনি অলরেডি লালগোলা স্টেশনে ঢুকছেন। গাড়ি দাঁড়ালে প্লাটফর্মে নেমে ওভারব্রিজ বেয়ে আসুন। আমি ১ নম্বর প্লাটফর্মে ওভারব্রিজের গোঁড়ায় আপনার অপেক্ষা করছি।
- আমাকে চিনবেন কী করে?
- আসুন তো আগে! তারপর চিনতে পারছি কিনা দেখা যাচ্ছে।
ছেলেটি অর্থাৎ সাংবাদিক ছেলেটি ঠিক চিনতে পারল রণদেব সেনগুপ্তকে। ব্যক্তিত্ব এমনই ভিড়ের মধ্যেও চিনতে অসুবিধা হল না তার। এগিয়ে গেল সে। বলল, আমিই সেই ... আমার নাম গোলাম কুদ্দুশ । আসুন। আপনার কথামতো একটা গাড়ি রেডি রেখেছি। কিন্তু যা ওয়েদার!
- হ্যাঁ, আগে বুঝতে পারলে আসতাম না।
- যাক্ গে। এসেছেন যখন, চলুন- আগে খান্দুয়াটা দেখে আসি।
- খান্দুয়া বলতে?
- আমাদের লালগোলায় যে জায়গায় ভাঙন চলছে সেই জায়গাটার নাম।
- চলুন তাহলে।
প্লাটফর্মের নীচে লাল রঙের একটাই ‘টাটা সুমো’ দাঁড়িয়েছিল। সেটাই চড়ে বসল ওরা। ড্রাইভার ছেলেটি জিজ্ঞেস করল, প্রথমে কোনদিকে যাবো কুদ্দুশদা?
গোলাম কুদ্দুশ বলল, খান্দুয়া। তারপর জিজ্ঞেস করল, ঘোষপাড়ার ভেতরকার রাস্তাটার অবস্থা কেমন রে সুরজ?
- ভালো। কংক্রিট ঢালাই রাস্তা এখন।
- তাহলে চিন্তা নেই। চল। খান্দুয়া সেরে আখেরীগঞ্জ যেতে হবে আবার।
বৃষ্টি পড়ছে টিপ টিপ। সকাল থেকে সেই একই রকম। না একটু বেশী, না একটু কম! এমন দিনে বাড়িতে বিছানায় শুয়ে বুকে ল্যাপটপ নিয়ে ফেস্বুক খুলে বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট্ করা যেত। সকাল থেকেই গোলাম কুদ্দুশের মনে এনিয়ে এক ধরণের খচ্খচি ছিল। এখন আর সেটা নেই। বরং এক অদ্ভূত ভালোলাগা আঁচ টের পেল। সেই ভালোলাগা আঁচের মধ্যে রণদেববাবু তার দিকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে ধরলেন। সে একটা সিগারেট হাতে নিল। যদিও সে দিনের বেলা সিগারেট খায় না। এখন সেটা তার মনে নেই।
টাটাসুমোটা এগিয়ে চলেছে নাটাতলা মোড় ছেড়ে খান্দুয়ার দিকে। লাল মোড়ামের রাস্তা। দু’পাশে জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি। রণদেববাবু সিগারেট টানতে টানতে দেখছেন। কোনও কথা বলছেন না। দু’পাশ দেখতে দেখতে তিনি গোলাম কুদ্দুশের কথাও শুনছেন। নাকি কিছুই শুনছেন না। শিলুর কথা ভাবছেন।
হ্যাঁ, শিলু তাকে টানছে। সেই টানেই তিনি এসেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট উপলক্ষ্য মাত্র। কেউ জানে না সেটা। এমনকী গোলাম কুদ্দুশ নামের ছেলেটিও জানে না। নিজের ভবিষ্যতের আশায় পদ্মাপাড়ে দাঁড়িয়ে সে সর্বনাশা পদ্মার কীর্তি বর্ণনা করছে। এই ক’বছরে পদ্মা কতটা এগিয়ে এসেছে! ক’টা জনপদ গিলে খেয়েছে, সবিস্তারে বলছে সব। এমন কী শতাব্দী প্রাচীন সেখালিপুর হাইস্কুলটার তলিয়ে যাওয়ার কথাও বলতে ভুলছে না। রণদেববাবু খুব বড় মাপের সাংবাদিক। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে সঙ্গী হন। রাষ্ট্রপতি তাঁকে আমন্ত্রণ পাঠান পারিবারিক অনুষ্ঠানে। এসব খবর সে জানে। তাই তার আশা- যদি তিনি তাঁর লেখনীতে এইসব ব্যাপার খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এবং সরকারের টনক নড়ে!
গোলাম কুদ্দুশ ঘড়ি দেখল। মেঘে মেঘে বেলা প্রায় ১ টা। আখেরীগঞ্জ ঘুরে আসতে ২ ঘণ্টা মতো লাগবে। তাহলে আর দেরী করা ঠিক হবে না।
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশকেও বলতে হয়, চলুন- যাওয়া যাক। আপনি তো আবার রাণীতলা গ্রামেও যাবেন!
পাঁচ
টাটাসুমোটা যখন ভগবানগোলা ঢুকছে। রণদেববাবু বললেন, আখেরীগঞ্জ যাওয়ার পথেই কি রাণীতলা গ্রামটা পড়বে?
গোলাম কুদ্দুশ বলল, হ্যাঁ স্যার।
বলেই কুদ্দুশের কৌতুহল হয়। সে জিজ্ঞেস করে, রাণীতলা গ্রাম কেন বলুন তো?
- ওখানে আমার লেখার ভক্ত আছেন একজন। নাম লালমহম্মদ সেখ। এলাম যখন একটু দেখা করার ইচ্ছে জাগছে।
গোলাম কুদ্দুশ উৎসাহ নিয়ে বলল, রাস্তার ওপরেই পড়বে। চলুন- খোঁজ নিয়ে দেখছি।
ড্রাইভার ছেলেটি ওদের কথা শুনছিল। বলল, লালমহম্মদ মাস্টার তো! আমি চিনি। মোড়ের ওপরেই বাড়ি।
গোলাম কুদ্দুশ ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল, কী ভাবে চিনলে তুমি?
- বিয়ের বরযাত্রী নিয়ে এসেছিলাম ওই বাড়িতে।
- কতদিন আগে? রণদেববাবু জিজ্ঞেস করলেন।
ড্রাইভার ছেলেটি বলল, তা প্রায় বছর তিনেক হয়ে গেল।
- বড় মেয়ের বিয়ে তাহলে। মেয়েটার বিয়েটা টেকেনি। ভেঙে গেছে। খুব ব্যথাতুর কন্ঠ রণদেববাবুর।
গোলাম কুদ্দুশ রণদেববাবুকে দেখে। অবাক হয়। লোকটা এতকিছু জানল কী করে? সে আরও ভাল করে রণদেববাবুকে নিরীক্ষণ করে।
রণদেববাবু একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন। কেমন বিষন্ন তাঁর মন! ঠিক যেন মেঘভার আকাশটার মতো। পার্থক্য মেঘভার আকাশ থেকে টিপ্ টিপ্ বৃষ্টি ঝরছে। আর লোকটা থম্ মেরে আছে। তাহলে কি লোকটা পদ্মার ভাঙনের আড়ালে অন্য কোনও ভাঙনের খোঁজে এসেছে?
গোলাম কুদ্দুশের খুব কৌতুহল হয়। যদিও এবারে সে কৌতুহল চেপে রাখে। সঙ্গে যখন আছে ঠিক সব জানতে পারবে।
হঠাৎ ড্রাইভার ছেলেটি জিজ্ঞেস করল, রাণীতলা ঢুকছি স্যার। যাবেন নাকি লালমহম্মদ মাস্টারের বাড়ি?
- হ্যাঁ, গাড়ি দাঁড় করাও। এসেছি যখন একটু দেখা করে যাই।
রণদেববাবুর তৎপরতা লক্ষ্য করে গোলাম কুদ্দুশ। ইতিমধ্যে একটা বটগাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ায় গাড়িটা। ড্রাইভার বলে, ডানদিকের বাড়িটা স্যার।
গাড়ি থেকে আগে গোলাম কুদ্দুশ নামে। রণদেববাবু পরে। বাড়িটার দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কলিংবেলের সুইচে হাত দেয়। কিন্তু সেটা বাজে কি না, বুঝতে পারে না। যদিও একটা লোক দরজা খোলে। লোকটির খালি গা। পরণে একটা তেলচিটে লুঙ্গি। গোলাম কুদ্দুশ লোকটিকে বাড়ির চাকর ভেবে বলল, লালমহম্মদ সেখকে একটু ডেকে দেবেন!
- আমিই লালমহম্মদ সেখ। কী বুলার আছে, বুলেন ক্যানে।
রণদেববাবু নিজের নাম বললেন। গোলাম কুদ্দুশ লক্ষ্য করে, নাম শুনে লোকটির মুখচোখ কেমন বদলে যায়। রক্তশূণ্য অবস্থা যেন! যদিও কোনও রকমে উচ্চারণ করে, আপনি!
- হ্যাঁ আমি। আপনাকে বলেছিলাম না যে, আসতে পারি!
- ও হ্যাঁ- হ্যাঁ। আসেন- ভিতরে আসেন।
দরজা পেরোতেই সিড়ি। লোকটি আগে আগে উঠছে। পেছন পেছন রণদেববাবু। তাঁদের পেছনে গোলাম কুদ্দুশ। সিড়ির ধাপিগুলি অপ্রশস্ত। তার ওপর প্রায় অন্ধকার। তাদের বাড়ির মতো প্রশস্ত আর আলোময় নয়।
গোলাম কুদ্দুশের চোখে বাইফোকাল চশমা। সবকিছু অস্পষ্ট! তবু সে উঠে যাচ্ছে। কৌতুহলে। এত বড় একজন সাংবাদিক! কী সম্পর্ক থাকতে পারে এরকম একজন ছাপোষা মানুষের সঙ্গে?
লালমহম্মদ নামের লোকটি ওদের নিয়ে গিয়ে বসায় দোতলার একটি ঘরে। সাদামাটা ঘর একটা। বইয়ের আলমারি। টিভি। সোফা। দু’টি চেয়ার। বিছানা পাতা একটা খাট। রণদেববাবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন সব। এমন কী আলমারিতে কী কী বই আছে, সেসবও। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়, শংকর। আবার দেওয়ালে ক্যালেন্ডারে ঝুলছে দুলদুল ঘোড়ার ছবি! একপাশে একটা ড্রেসিং-টেবিলও আছে। ঘরটার সঙ্গে শিলুকে মেলানোর চেষ্টা করছেন রণদেববাবু। কিন্তু মেলাতে পারছেন না। এই বাড়ির মেয়ে শিলু! কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁর। তবে কি তিনি ভুল ঠিকানায় এসেছেন? যদি ভুল হবে তাহলে লালমহম্মদ লোকটি ঠিক হবে কী করে? মগজে সবকিছু কেমন গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে!
ঠিক এই সময়ে মোবাইলে একটা মেসেজ আসে রণদেববাবুর। তিনি প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ইনবক্স খুলে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন। গোলাম কুদ্দুশ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। রণদেববাবুর মুখচোখ কেমন পালটে যাচ্ছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না যেন!
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশ তাঁকে জিজ্ঞেস করে, কোনও অসুবিধা স্যার?
রণদেববাবু ফোনটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়েই গোলাম কুদ্দুশকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমাদের এখান থেকে এখনি বেরোতে হবে!
গোলাম কুদ্দুশ কিছু বুঝতে পারছে না। কেন বেরোতে হবে? বেরোতেই যদি হবে, তাহলে আসা কেন? রণদেববাবু ততক্ষণে সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। লালমহম্মদ নামের লোকটি তাদের বসিয়ে ভেতরে গেছে। নিশ্চয় চা-পানির ব্যবস্থা করতে! তাকে না বলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? সে ভাবছে। রণদেববাবুর কিন্তু তর সইছে না, কী হল- তাড়াতাড়ি চলুন! বলেই রণদেববাবু আর অপেক্ষা করেন না, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান।
অগত্যা গোলাম কুদ্দুশকেও বেরিয়ে আসতে হয়। রণদেববাবুর পিছু পিছু সিড়ি ভেঙে সটান গাড়িতে গিয়ে ওঠে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। জিজ্ঞেস করে, পদ্মার পাড়ে যাবেন তো?
- হ্যাঁ। হ্যাঁ। তাই চল। তাড়াতাড়ি চল!
বলে রণদেববাবু আবার একটা সিগারেট ধরান। খুব অস্থির দেখায় তাঁকে। সিগারেট টানতে টানতে ফোনে কাউকে ধরার চেষ্টা করছেন। পাচ্ছেন না। গোলাম কুদ্দুশ তাঁকে কিছু বলতে পারছে না। বলবে কী, ব্যাপারটা তার কাছে রহস্য লাগছে। ট্রেণ থেকে নামার পর থেকে দেখেছে একটা শান্ত-শিষ্ট মানুষ। তাহলে হঠাৎ কী এমন হল যে ওই শান্ত-শিষ্ট মানুষটি একটা মেসেজ পেয়ে অমন অশান্ত হয়ে উঠল! কার মেসেজ?
কিছুক্ষণে ওদের টাটাসুমোটা পদ্মাপাড়ে পৌঁছে যায়। অথচ ওরা বুঝতে পারে না। ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলে, চলে এসেছি স্যার। ওই দেখুন পদ্মা!
রণদেববাবু এতক্ষণ ফোনে কাউকে ধরার চেষ্টা করছিলেন, ড্রাইভারের কথা শুনে ক্ষান্তি দিলেন। গাড়ি থেকে নামলেন। সামনের দিকে তাকালেন। কিন্তু কোথায় পদ্মা? তাঁর চোখের সামনে তো শুধুই মেঘ! নাকি ঘন কুয়াশা?
না, এসব ভাবনা কিছুই ভাবলেন না তিনি। মেঘ কিংবা কুয়াশার ভেতর দিয়ে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। কোনও কিছুই যেন দেখছেন না তিনি! শুধু হেঁটে যাচ্ছেন। অন্ধ যেভাবে হেঁটে যায়। কিংবা কোনও ঘোর আবিষ্ট মানুষ! তিনি ঠিক সেভাবেই হেঁটে যাচ্ছেন পদ্মার ভাঙ্গা পাড়ের দিকে।
গোলাম কুদ্দুশ গাড়িতেই বসে আছে। সে ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। বুঝতে পারছে না রণদেব সেনগুপ্ত নামের এক বিশাল মাপের সাংবাদিক মানুষটি কেন এসেছেন? কী চাইছেন?
গোলাম কুদ্দুশ ব্যাপারটা বোধে আনতে চাইছে। বুঝতে চাইছে। না হলে হয়ত সে নিজেই পাগল হয়ে যাবে! এমন অস্থিরতার মধ্যে হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ে সিটে পড়ে থাকা রণদেববাবুর মোবাইলটার ওপর। এই মোবাইলে একটা মেসেজ আসার পর লোকটা কেমন পাগলের মতো আচরণ শুরু করেছে। কার মেসেজ? কী লেখা আছে ওই মেসেজে?
কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারে না ফ্রী-ল্যান্সার গোলাম কুদ্দুশ। মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়। ইনবক্স খোলে। মেসেজ না বলে রীতিমতো একটা চিঠি বলা ভাল। স্পষ্ট বাংলায় লেখা, আপনি আমাদের বাড়িতে কেন এসেছেন? এক্ষুণি বেরিয়ে যান! আপনার আসাটা আমরা মেনে নিতে পারছি না...
রণদেববাবু মেঘ কিংবা কুয়াশার ভেতর হাঁটতে হাঁটতে কী ভাবছেন কে জানে! তবে মেসেজ পড়তে পড়তে গোলাম কুদ্দুশের মাথাটা কেমন করছে! কে শিলু? শিলুর সঙ্গে কী এমন সম্পর্ক একজন সাংবাদিকের? যে সম্পর্কের টানে এত বড় একজন সাংবাদিক কাজকাম ফেলে ছুটে আসেন সুদূর কলকাতা থেকে? রণদেববাবু পাশে থাকলে হয়ত এতক্ষণ সে জিজ্ঞেস করে বসত! কিন্তু লোকটা গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে গেল! না, সে-ভাবনাও সে ভাবতে পারছে না। তার ভাবনা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। হাজার চেষ্টাতেও জোড়া রাখতে পারছে না। পদ্মা যে ভাবে তাঁদের ভিটেমাটি ভাঙছে, ঠিক সে ভাবেই।
লেখক পরিচিতি
নীহারুল ইসলাম
‘সাগরভিলা’ লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১৪৮ পঃ বঃ, ভারতবর্ষ।
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে (মাতুলালয়)।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে (মাতুলালয়)।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
পুরস্কার :
লালগোলা ‘সংস্কৃতি সংঘ’ (১৯৯৫)এবং শিলিগুড়ি ‘উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ’ কর্তৃক ছোটগল্পকার হিসাবে সংবর্ধিত
(২০০৩)। সাহিত্য আকাদেমি’র ট্রাভেল গ্রান্ট পেয়ে জুনিয়র লেখক হিসাবে কেরালা ভ্রমণ (২০০৪)। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক “ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান “উত্তর বাংলা পদক” প্রাপ্তি (২০১১)। রুদ্রকাল সম্মান (২০১৩) প্রাপ্তি।
লালগোলা ‘সংস্কৃতি সংঘ’ (১৯৯৫)এবং শিলিগুড়ি ‘উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ’ কর্তৃক ছোটগল্পকার হিসাবে সংবর্ধিত
(২০০৩)। সাহিত্য আকাদেমি’র ট্রাভেল গ্রান্ট পেয়ে জুনিয়র লেখক হিসাবে কেরালা ভ্রমণ (২০০৪)। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক “ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান “উত্তর বাংলা পদক” প্রাপ্তি (২০১১)। রুদ্রকাল সম্মান (২০১৩) প্রাপ্তি।
0 মন্তব্যসমূহ