বহুদিন গ্রামে থেকে সংগঠনের বৈঠকে যোগ দিতে নৈশকোচে করে দীপু সায়েদাবাদ বাস স্পপেজে নামলো, তখন যাত্রীরা কেউ সাধারণত বের হয় না। দীপু বেশ কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে গাড়ির দরোজার দিকে। না, কেউ আসছে না। একজন হেলপার দীপুর দিকে এগিয়ে এসে বলে আরে যায়ন কই মামু, মাতাডা কি খারাপ অইয়া গ্যাছে? এই রাইতে সব লইয়া যাইবো তো। হোনেন নাই কাইলক্যের ঘটনা। সব মাইনষের সামনের থাইকা সব লইয়া গেল। পুলিশ চুদির ভাইরা ভোদাইর মতো সব খাড়াইয়া দেখলো। হালারা অইলো জাত শয়তান। অরা টাহা চায় অর বাগেগো থিক্কা। এই দ্যাশটার কপালে যে কি আছে মামু। এভাবে হেলপার একদিক দিয়ে বলে যেতে থাকে। গত্যান্তর নেই। দীপু কি করবে? অন্ধকারে বাসের সিটে বসে অনাসিটে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমোবে। না, ওই ঘুমটা তার হবে না। বাড়ি থেকে আসার আগে কপিলা এটা চিঠি দিয়েছিলো। বেশ কয়েক বারই সেটা পড়েছে দীপু। পুনরায় পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দীপু পড়তে থাকে। কি চমৎকার গেল কপিলা। পড়া শেষ হতে দীপু স্মৃতিচারণ করে। একা মানুষ স্মৃতিচারণ ছাড়া আর কি করতে পারে? দীপু ও কমিলার সম্পর্কের পরিণতি কি হবে? দুজনের কে ধর্মান্তরিত হবে। বিয়ের পর মেয়েদের পদবী বদলায়। কপিলার বেলায় কি তা হবে? কপিলাকে সে জিজ্ঞেস করেছে এসব ব্যাপারে। কপিলা চুপ থেকেছে। দীপু বলেছে, ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। আমরা মানুষ আমরা সৃষ্টি করবো ভিন্ন নিদর্শণ। দুজন প্রগতিশীল রাজনীতি করার পরও এ সংকট কেন বারবার তাদের বাধা হয়ে দাঁড়ায়? দীপু তা বুঝে কিন্তু করবেই বা কি? ধর্মকে ছেড়ে আসা এতো সহজ? কপিলা বলেছে এসব পরে চিন্তা করা যাবে।
দীপুর কাছে তিনটা বিষয় স্পষ্টভাবে ছায়াপাত করে। প্রথম সমাজতন্ত্র, দ্বিতীয় স্বাধীনতা আর তৃতীয় তার ভালোবাসা এবং তার ভেতরের দেওয়াল ধর্ম। কপিলা বলেছে ওসব সে দেখবে। দেখার মতো বুদ্ধি তার আছে। দীপু তার পরে নির্ভর করে নিশ্চিন্ত।
দীপু খোঁজে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ। রাষ্ট্র রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করবে না। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো এই চেতনায়। হিন্দু-মুসলিমের চেয়ে মানুষের প্রশ্নটাই বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। বিপদে মানুষের জাত ছিলো না, বিভেদ ছিলো না। ঈশ্বর-সংকটে কেউ ভোগেনি। মুক্তি হয়েছে যুদ্ধের জন্যে। কিন্তু আজ সমাজে ধর্মের প্রশ্নটাই যদি বড়ো হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের পরেও দাঙ্গা হয়েছে। রাষ্ট্র তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। যাক সেসব কথা।
এরপর সমাজতন্ত্র। আজ পুনরায় লড়াইয়ের অঙ্গনে তারা। এক সময়ের সমাজতন্ত্রীরা ভোগ-লালসার আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে দেশের আন্দোলনের অনেক ক্ষতি করেছে। তারা সমাজতান্ত্রিক মত-পথ বর্জন করেই শুধু ছাড়েনি এখন মার্কস-লেনিন সম্পর্কে আপত্তিকর সব মন্তব্য করছে, অপব্যাখ্যা দিচ্ছে সমাজতন্ত্রের। আর নগ্নভাবে বিরুদ্ধচারণ করছে কমিউনিস্টদের। এখানেও লড়াই। বাকি রইলো স্বাধীনতা। নয়টি মাস যুদ্ধে রক্ত দিলো ৩০ লক্ষ মানুষ আর সম্ভ্রম হারালো ২ লক্ষ মা-বোন। অথচ ইতিহাস কি নির্মম। স্বাধীনতার দুই যুগ পার হতে না হতেই দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে সুখে আছে স্বাধীনতা বিরোধীরাই। দেশের অন্তজ শ্রেণীর মানুষেরা আশাহত। গরিব মানুষ বাড়ছে, কারণ ধনীও বাড়ছে। ধনী তো আর আকাশ থেকে পড়ে না। কারো না কারো সম্পদ কেড়েই তো সম্পদ বাড়াতে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে দীপু দেখে ভোর হয়ে আসছে, কুয়াশা পড়ছে কাফনের শুভ্রতা নিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শ্লোগান লেখা কতকগুলো পোস্টার দেওয়ালে লাগানো। সেগুলো ছিঁড়ে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে টোকাইরা। গ্রাম থেকে এসেছে এরা। পেটের খিদে মেটাতে পোস্টার ছিঁড়ে সেগুলো বিক্রি করে। এর মধ্যে একজন টোকাই মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার ছিঁড়তে নিষেধ করে। ওয়ার্ড কমিশনার নাকি নিষেধ করছে এই পোস্টার ছিঁড়তে। খিস্তি মারে ওই টোকাই ওই হালায় কি খাইতে দিবো? বাকি খিস্তি গাড়ির হুইসেলে চাপা পড়ে যায়।
হঠাৎ তার চোখ যায় প্লাটফর্মের পাশের একটা দেওয়ালে দিকে। এক ১০/১২ বছরের নাবালক, সম্ভবত ফুটপাত থেকে ঘুম ছেড়ে উঠে এসেছে। সে দেওয়ালের দিকে ফিরে হাফ-প্যান্টের ফাঁক দিয়ে প্রস্রাব করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। প্রস্রাবের ধারা সে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা বর্ণমালা লেখার চেষ্টা করছে।
দীপু দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখছে প্রস্রাব দিয়ে অক্ষর লেখার এই নান্দনিকতা। একটা বাংলা সিনেমা অশ্লীল পোস্টারের ওপর কিশোর প্রস্রাব করছে। তবে ছবির অশ্লীলতার জন্যে নয়। এই ছবি দেখতে গিয়ে সিনেমা হলের গেট কিপারের তাড়া খেয়েছে বলে। দীপু ছেলেটির কাছে ঘটনা শুনে অবাক হয়। রাগের প্রকাশ ভঙ্গি এত চমৎকার হতে পারে এর আগে তার জানা ছিলো না। একটু পরেই বাইরের দিকটা মোটামুটি ফর্সা হলে তার চোখ যায় রেল লাইনের দিকে। রেল লাইন জুড়ে ছোট-বড়ো মিলে ১০/১২ জন, রেলা পাটির ওপরে বসে সূর্যের বিপরীতে মুখ রেখে মাথাটা নিচু করে মলত্যাগ করছে। প্লাটফর্মের পাশে পুলিশ বসে ঝিমাচ্ছে আর একজন মানুষ প্রায় বিবস্ত্র হয়ে পাসেই বসে একটা চিরুনি দিয়ে শরীর চুলকাচ্ছে। তার বিছানাটা একটা ব্যানার। সাদা কাপড়ে লাল কালি দিয়ে গণতন্ত্রের সব শ্লোগান লেখা। নিচে একটা একটা দলের নাম লেখা। কালি সিটে হয়ে এসেছে। গণতন্ত্রটা বড় অক্ষরে লেখা। রাস্তায় হঠাৎ থেমে গেল একটা ট্রাক। একজন ট্রাফিক পুলিশের সাথে কানে কানে কি যেন বলে চলে গেল। যাবার সময় পুলিশের পকেটে তার ডান হাতটা ডুকিয়ে একটা হাসি দিলো। পুলিশ ফিরে থাকালো অন্যদিকে। ইতোমধ্যে একটা কাক মলত্যাগ করে পোশাকের ওপর। পুলিশ গালি দিতে দিতে কাগজ খুঁজে শেষমেষ দেওয়ালের দিকে চোখ দেয়। দেওয়ালে লাগানো একটা পোস্টারে এক সন্ত্রাসীর ফাঁসি চেয়েছে এক এলাকাবাসী। আরেক পোস্টারে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় বহনকারীকে জনদরদী নেতার পরিচয় দিয়ে মুক্তি চেয়েছে একটি সংগঠন। পুলিশ পোস্টার ছিড়ে মল মুছতে থাকে তার পোশাক থেকে। আর যেভাবে বিড়বিড় করেতে থাকে তাতে মনে হয় সে গালাগালি করছে কাকটাকে। একদল হাড্ডিসার মানুষ আসছে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় সে বিজ্ঞানাগারে কংকাল ঝোলানো দেখেছিলো। এরা তেমনই। শুধু নড়ে-চড়ে-হাঁটে। এরাই ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। সবখানে অবক্ষয়, দ্বন্দ্ব। এতো দ্বন্দ্বের পরেও শ্রেণীসংগ্রাম সফল হয় না কেন? কারা শ্রেণীসংগ্রামের বিরুদ্ধে দেওয়াল রচনা করে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সে দেখে দেওয়াল সর্বত্র অদৃশ্যে দৃশ্যমান। এমনকি কপিলা ও তার মধ্যেও দেওয়াল রয়েছে। এতো ঘটনা ঘটে তবু দেওয়াল ভাঙ্গে না, শুধু রূপ বদলায়। এই দেওয়াল না ভাঙ্গলে মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষকে মুক্ত করতে হলে নিজেকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে। দীপু অঙ্গীকার করে যুদ্ধ তাহলে তার নিজেকে দিয়েই শুরু হোক। ভাবতেই দেখে ধর্ম ব্যারিকেড সৃষ্টি করছে। সে এগিয়ে যাবে কোন পথে? আঘাত কোন্ পথে করবে ভাবতে থাকে।
দীপু সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে। সুতরাং তার আন্দোলন সংস্কৃতি দিয়েই হোক। প্লাটফর্মে বসে সে ভাবতে থাকে কি নিয়ে সে কাজ শুরু করবে। সে যেহেতু পরিবর্তন চাচ্ছে, সেহেতু ছবিটা পরিবর্তন বিষয়ক হোক। তার ভেতরে জন্ম নিতে থাকে কাহিনী। পাঠক কাহিনীটার দিকে একটু দৃষ্টি দিন। এটা একটা শর্ট ফিল্মে ।র পরিকল্পনা । সুতরাং একটা বিষয় আগেই জানিয়ে দেই অর্থের সীমাবন্ধতায় এটির স্থায়ীকাল ১৫ মিনিট হবে। কথা থাকবে না। আর অভিনয় করবে দীপুর বন্ধুরা এমনকি সে নিজেও।
কাহিনী শুরু হলো:
ফকরুল ছোট ছেলে। গোপলগঞ্জ শহরে প্রেসক্লাবের পাশে একটা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল ঘেঁষে সে চা বানায়। সকাল থেকে রাত অবধি চলে তার চা বানানো। চায়ের বেচাকেনা শেষ হলে একদিন সে দেখে একদল ছাত্র প্রথমে দেওয়ালে সাদা চুনকাম করে যাচ্ছে এবং শ্লোগান লিখছে, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’ ধীরে সে শোনে এরা রাজনীতি করে, এরা স্বাধীনতা চায়। ফকরুল আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। পরে সে ছাত্রদের এক সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়। এভাবে ৫২, ৫৬, ৬২, ৬৪, ৬৯ শেষে আসে ১৯৭১ সাল। এর মধ্যে শুধু দেওয়ালের লিখন বদলায় না, বদলায় না ফকরুলের জীবন। সেই স্টোভ, কেটলি, কাপ। সবই আগের মতো, এর মধ্যে ফকরুল বিয়ে করে, ছেলে হয়। ছেলের নাম বিপ্লব। ১৯৭১ সালে সবাই পালালেও ফকরুল পালায়নি। দেশের মাটি ছেড়ে সে যাবে না। এ চিন্তায় থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু তাকে হত্যা করেছে পাক-হানাদার বাহিনী।
ফকরুলকে ‘মুক্তি’ হিসেবে জেনেছিলো পাক-বাহিনী। রাজাকার ইয়াকুব তাকে ধরে নিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। তারপর ফকরুলকে হত্যা করা হয়েছিল দেওয়ালের পাশে। তার চোখগুলো উপড়ে ফেলেছিলো হানাদার বাহিনী। আর মাথা, চোখ, মুখ সবখানে গজাল লোহা পিটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ইয়াকুব সেসময় কাছেই ছিলো। ইয়াকুব আজ এলাকার চেয়ারম্যান। সে এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি। সার্টিফিকেট কিনে সে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে।
ফকরুল শহীদ হলে তার ছেলে বিপ্লব, কিশোর বিপ্লব বাবার চায়ের দোকানে বসে। সে বাবার চেয়েও বিপ্লবী। কথায় কাউকে ছেড়ে দেয় না। এখনও রাতে লোকজন আসে। এরপর আসে ১৯৭৫। একরাতে ছাত্ররা আসে দেওয়াল লিখতে। এবারে দেওয়ালের লেখা হয়, ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।’ এক সকালে বিপ্লবের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে দেওয়ালের পাশে এসে দাঁড়ায় দ্যাখে ট্যাংকের বহর আসছে নল উঁচিয়ে। বিপ্লবের প্রসাবের গতি থামাতে পারে না। সে ভয়-ভীতি ছেড়ে ট্যাংকের দিকে ফিরেই প্রস্রাব করতে থাকে।
দীপুর চোখে ভেসে ওঠে সেকেন পাগলার মুখ। মধুমতির পাড়ে দাঁড়িয়ে সে এখনও গভীর রাতে চিৎকার করে। সবাই তাকে পাগল বলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সেকেন পাগলার নাম ছিলো সেকেন মাস্টার। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। ঘুমানোর সময়েও তার পাশে থাকতো টমিগান। যুদ্ধে যুদ্ধে চলতো তার দিনের বহমান সময়। তার লক্ষ্য ছিলো একটাই যুদ্ধের পর একটা স্বপ্নের দেশ গড়বে। জমিনের আল থাকবে না। ভূমির মালিকানা থাকবে না। সম্পত্তির মালিক হবে রাষ্ট্র। সবাই তার যোগ্যতা অনুযায়ি কাজ পাবে। বেকারত্ব থাকবে না অশিক্ষা অজীর্ণ দূর হবে। সে তার সহায় সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়োছিলো মানুষের ভেতরে। মুক্তিযুদ্ধের পর তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্টে সে উল্টে যায় নিজ অবস্থান থেকে। তার মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবে না কোনোদিন। কারণ শত্রুর বহুরূপ সেজন্যে শত্রু কমে না। একদলকে পরাস্ত করতেই মেকাপ খসে পড়ে অন্য এক জন গোষ্ঠীর। খোলস ছেড়ে তারাই শত্রু হয়ে বেরিয়ে আসে। এরা যেন রক্তবীজ। স্বপ্নের এই সকরুন পরিণতিতে সেকেন্দার মাস্টার অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। অমনি সবাই তাকে ‘পাগল’ বলে। মানুষ পাগল বলতে বলতে অকৃতদার সেকেন পাগলাকে আরো বেশি পাগল করে তোলে। তবুও প্রিয় দেখলে চেনে, কথা বলে। বক্তৃতা দেয় নগরের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়ে। তার বক্তৃতার কথা হলো 'সাবধান ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। যুদ্ধ শেষ হয় না। যুদ্ধ শেষ হয়নি। যতোদিন ক্ষুধা আছে, দারিদ্র্য আছে, বৈষম্য আছে সেদিন পর্যন্ত যুদ্ধ থাকবে। আপনারা আবার রাস্তায় আসুন। শত্রু এখনো সবখানে। শুভ্র তিমিরে থাকা শত্রুদের চেনা যায় না। এদের সবার পকেটে অস্ত্র। শহীদের সংখ্যা বাড়ছে, ওরা জিতে যাবে, অস্ত্র নিন।’ কেউ শোনে হাসে, মজা করে। কেউবা চলে যায়। তবু গভীর রাতে সেকেন পাগলা ডাক দেয় মধুমতির পাড়ে দাঁড়িয়ে ‘যুদ্ধ বাকি আছে, কেউ ঘুমাবে না বিপদ হয়ে যাবে, স্বাধীনতার রক্ষা করা যাবে না।’ গভীর রাতে এ আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে দূর থেকে দূরান্তে। রাত বয়ে চলে তারপরও বেজে চলে সেকেন পাগলার গলা। দীপুর বিশ্বাস ওটাই, যুদ্ধ আরেকটা করতে হবে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, একযোগে সবখান থেকে, যে যেভাবে পারে।
ভাবনা শেষ হয়ে যায় দীপুর। ঘটনাটা আরও বাড়ানো যাবে। তার আগে দ্রুত তাকে বাসায় পৌঁছতে হবে। চাটগাঁ থেকে টিপু, জামালপুর থেকে মাসুম, নাটোর থেকে জাকির ভাই হয়তো ইতোমধ্যে এসে গেছে। কারণ আজ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসবে। সেখানে এটা আলাপ করা যেতে পারে।
মূল যুদ্ধের দিকে যাত্রা করতে হবে।স্বাধীনতার অসমাপ্ত কাজগুলো জায়গায় ছাতা মেলে বসেছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, এবারের আন্দোলনে প্রথম ব্যারিকেড দিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে।
লেখক পরিচিতি
দীপুর কাছে তিনটা বিষয় স্পষ্টভাবে ছায়াপাত করে। প্রথম সমাজতন্ত্র, দ্বিতীয় স্বাধীনতা আর তৃতীয় তার ভালোবাসা এবং তার ভেতরের দেওয়াল ধর্ম। কপিলা বলেছে ওসব সে দেখবে। দেখার মতো বুদ্ধি তার আছে। দীপু তার পরে নির্ভর করে নিশ্চিন্ত।
দীপু খোঁজে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ। রাষ্ট্র রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করবে না। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো এই চেতনায়। হিন্দু-মুসলিমের চেয়ে মানুষের প্রশ্নটাই বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। বিপদে মানুষের জাত ছিলো না, বিভেদ ছিলো না। ঈশ্বর-সংকটে কেউ ভোগেনি। মুক্তি হয়েছে যুদ্ধের জন্যে। কিন্তু আজ সমাজে ধর্মের প্রশ্নটাই যদি বড়ো হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের পরেও দাঙ্গা হয়েছে। রাষ্ট্র তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। যাক সেসব কথা।
এরপর সমাজতন্ত্র। আজ পুনরায় লড়াইয়ের অঙ্গনে তারা। এক সময়ের সমাজতন্ত্রীরা ভোগ-লালসার আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে দেশের আন্দোলনের অনেক ক্ষতি করেছে। তারা সমাজতান্ত্রিক মত-পথ বর্জন করেই শুধু ছাড়েনি এখন মার্কস-লেনিন সম্পর্কে আপত্তিকর সব মন্তব্য করছে, অপব্যাখ্যা দিচ্ছে সমাজতন্ত্রের। আর নগ্নভাবে বিরুদ্ধচারণ করছে কমিউনিস্টদের। এখানেও লড়াই। বাকি রইলো স্বাধীনতা। নয়টি মাস যুদ্ধে রক্ত দিলো ৩০ লক্ষ মানুষ আর সম্ভ্রম হারালো ২ লক্ষ মা-বোন। অথচ ইতিহাস কি নির্মম। স্বাধীনতার দুই যুগ পার হতে না হতেই দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে সুখে আছে স্বাধীনতা বিরোধীরাই। দেশের অন্তজ শ্রেণীর মানুষেরা আশাহত। গরিব মানুষ বাড়ছে, কারণ ধনীও বাড়ছে। ধনী তো আর আকাশ থেকে পড়ে না। কারো না কারো সম্পদ কেড়েই তো সম্পদ বাড়াতে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে দীপু দেখে ভোর হয়ে আসছে, কুয়াশা পড়ছে কাফনের শুভ্রতা নিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শ্লোগান লেখা কতকগুলো পোস্টার দেওয়ালে লাগানো। সেগুলো ছিঁড়ে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে টোকাইরা। গ্রাম থেকে এসেছে এরা। পেটের খিদে মেটাতে পোস্টার ছিঁড়ে সেগুলো বিক্রি করে। এর মধ্যে একজন টোকাই মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার ছিঁড়তে নিষেধ করে। ওয়ার্ড কমিশনার নাকি নিষেধ করছে এই পোস্টার ছিঁড়তে। খিস্তি মারে ওই টোকাই ওই হালায় কি খাইতে দিবো? বাকি খিস্তি গাড়ির হুইসেলে চাপা পড়ে যায়।
হঠাৎ তার চোখ যায় প্লাটফর্মের পাশের একটা দেওয়ালে দিকে। এক ১০/১২ বছরের নাবালক, সম্ভবত ফুটপাত থেকে ঘুম ছেড়ে উঠে এসেছে। সে দেওয়ালের দিকে ফিরে হাফ-প্যান্টের ফাঁক দিয়ে প্রস্রাব করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। প্রস্রাবের ধারা সে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা বর্ণমালা লেখার চেষ্টা করছে।
দীপু দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখছে প্রস্রাব দিয়ে অক্ষর লেখার এই নান্দনিকতা। একটা বাংলা সিনেমা অশ্লীল পোস্টারের ওপর কিশোর প্রস্রাব করছে। তবে ছবির অশ্লীলতার জন্যে নয়। এই ছবি দেখতে গিয়ে সিনেমা হলের গেট কিপারের তাড়া খেয়েছে বলে। দীপু ছেলেটির কাছে ঘটনা শুনে অবাক হয়। রাগের প্রকাশ ভঙ্গি এত চমৎকার হতে পারে এর আগে তার জানা ছিলো না। একটু পরেই বাইরের দিকটা মোটামুটি ফর্সা হলে তার চোখ যায় রেল লাইনের দিকে। রেল লাইন জুড়ে ছোট-বড়ো মিলে ১০/১২ জন, রেলা পাটির ওপরে বসে সূর্যের বিপরীতে মুখ রেখে মাথাটা নিচু করে মলত্যাগ করছে। প্লাটফর্মের পাশে পুলিশ বসে ঝিমাচ্ছে আর একজন মানুষ প্রায় বিবস্ত্র হয়ে পাসেই বসে একটা চিরুনি দিয়ে শরীর চুলকাচ্ছে। তার বিছানাটা একটা ব্যানার। সাদা কাপড়ে লাল কালি দিয়ে গণতন্ত্রের সব শ্লোগান লেখা। নিচে একটা একটা দলের নাম লেখা। কালি সিটে হয়ে এসেছে। গণতন্ত্রটা বড় অক্ষরে লেখা। রাস্তায় হঠাৎ থেমে গেল একটা ট্রাক। একজন ট্রাফিক পুলিশের সাথে কানে কানে কি যেন বলে চলে গেল। যাবার সময় পুলিশের পকেটে তার ডান হাতটা ডুকিয়ে একটা হাসি দিলো। পুলিশ ফিরে থাকালো অন্যদিকে। ইতোমধ্যে একটা কাক মলত্যাগ করে পোশাকের ওপর। পুলিশ গালি দিতে দিতে কাগজ খুঁজে শেষমেষ দেওয়ালের দিকে চোখ দেয়। দেওয়ালে লাগানো একটা পোস্টারে এক সন্ত্রাসীর ফাঁসি চেয়েছে এক এলাকাবাসী। আরেক পোস্টারে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় বহনকারীকে জনদরদী নেতার পরিচয় দিয়ে মুক্তি চেয়েছে একটি সংগঠন। পুলিশ পোস্টার ছিড়ে মল মুছতে থাকে তার পোশাক থেকে। আর যেভাবে বিড়বিড় করেতে থাকে তাতে মনে হয় সে গালাগালি করছে কাকটাকে। একদল হাড্ডিসার মানুষ আসছে। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় সে বিজ্ঞানাগারে কংকাল ঝোলানো দেখেছিলো। এরা তেমনই। শুধু নড়ে-চড়ে-হাঁটে। এরাই ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। সবখানে অবক্ষয়, দ্বন্দ্ব। এতো দ্বন্দ্বের পরেও শ্রেণীসংগ্রাম সফল হয় না কেন? কারা শ্রেণীসংগ্রামের বিরুদ্ধে দেওয়াল রচনা করে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সে দেখে দেওয়াল সর্বত্র অদৃশ্যে দৃশ্যমান। এমনকি কপিলা ও তার মধ্যেও দেওয়াল রয়েছে। এতো ঘটনা ঘটে তবু দেওয়াল ভাঙ্গে না, শুধু রূপ বদলায়। এই দেওয়াল না ভাঙ্গলে মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষকে মুক্ত করতে হলে নিজেকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে। দীপু অঙ্গীকার করে যুদ্ধ তাহলে তার নিজেকে দিয়েই শুরু হোক। ভাবতেই দেখে ধর্ম ব্যারিকেড সৃষ্টি করছে। সে এগিয়ে যাবে কোন পথে? আঘাত কোন্ পথে করবে ভাবতে থাকে।
দীপু সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে। সুতরাং তার আন্দোলন সংস্কৃতি দিয়েই হোক। প্লাটফর্মে বসে সে ভাবতে থাকে কি নিয়ে সে কাজ শুরু করবে। সে যেহেতু পরিবর্তন চাচ্ছে, সেহেতু ছবিটা পরিবর্তন বিষয়ক হোক। তার ভেতরে জন্ম নিতে থাকে কাহিনী। পাঠক কাহিনীটার দিকে একটু দৃষ্টি দিন। এটা একটা শর্ট ফিল্মে ।র পরিকল্পনা । সুতরাং একটা বিষয় আগেই জানিয়ে দেই অর্থের সীমাবন্ধতায় এটির স্থায়ীকাল ১৫ মিনিট হবে। কথা থাকবে না। আর অভিনয় করবে দীপুর বন্ধুরা এমনকি সে নিজেও।
কাহিনী শুরু হলো:
ফকরুল ছোট ছেলে। গোপলগঞ্জ শহরে প্রেসক্লাবের পাশে একটা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল ঘেঁষে সে চা বানায়। সকাল থেকে রাত অবধি চলে তার চা বানানো। চায়ের বেচাকেনা শেষ হলে একদিন সে দেখে একদল ছাত্র প্রথমে দেওয়ালে সাদা চুনকাম করে যাচ্ছে এবং শ্লোগান লিখছে, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’ ধীরে সে শোনে এরা রাজনীতি করে, এরা স্বাধীনতা চায়। ফকরুল আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে যায়। পরে সে ছাত্রদের এক সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়। এভাবে ৫২, ৫৬, ৬২, ৬৪, ৬৯ শেষে আসে ১৯৭১ সাল। এর মধ্যে শুধু দেওয়ালের লিখন বদলায় না, বদলায় না ফকরুলের জীবন। সেই স্টোভ, কেটলি, কাপ। সবই আগের মতো, এর মধ্যে ফকরুল বিয়ে করে, ছেলে হয়। ছেলের নাম বিপ্লব। ১৯৭১ সালে সবাই পালালেও ফকরুল পালায়নি। দেশের মাটি ছেড়ে সে যাবে না। এ চিন্তায় থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু তাকে হত্যা করেছে পাক-হানাদার বাহিনী।
ফকরুলকে ‘মুক্তি’ হিসেবে জেনেছিলো পাক-বাহিনী। রাজাকার ইয়াকুব তাকে ধরে নিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। তারপর ফকরুলকে হত্যা করা হয়েছিল দেওয়ালের পাশে। তার চোখগুলো উপড়ে ফেলেছিলো হানাদার বাহিনী। আর মাথা, চোখ, মুখ সবখানে গজাল লোহা পিটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ইয়াকুব সেসময় কাছেই ছিলো। ইয়াকুব আজ এলাকার চেয়ারম্যান। সে এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি। সার্টিফিকেট কিনে সে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে।
ফকরুল শহীদ হলে তার ছেলে বিপ্লব, কিশোর বিপ্লব বাবার চায়ের দোকানে বসে। সে বাবার চেয়েও বিপ্লবী। কথায় কাউকে ছেড়ে দেয় না। এখনও রাতে লোকজন আসে। এরপর আসে ১৯৭৫। একরাতে ছাত্ররা আসে দেওয়াল লিখতে। এবারে দেওয়ালের লেখা হয়, ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।’ এক সকালে বিপ্লবের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে দেওয়ালের পাশে এসে দাঁড়ায় দ্যাখে ট্যাংকের বহর আসছে নল উঁচিয়ে। বিপ্লবের প্রসাবের গতি থামাতে পারে না। সে ভয়-ভীতি ছেড়ে ট্যাংকের দিকে ফিরেই প্রস্রাব করতে থাকে।
দীপুর চোখে ভেসে ওঠে সেকেন পাগলার মুখ। মধুমতির পাড়ে দাঁড়িয়ে সে এখনও গভীর রাতে চিৎকার করে। সবাই তাকে পাগল বলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সেকেন পাগলার নাম ছিলো সেকেন মাস্টার। মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো। ঘুমানোর সময়েও তার পাশে থাকতো টমিগান। যুদ্ধে যুদ্ধে চলতো তার দিনের বহমান সময়। তার লক্ষ্য ছিলো একটাই যুদ্ধের পর একটা স্বপ্নের দেশ গড়বে। জমিনের আল থাকবে না। ভূমির মালিকানা থাকবে না। সম্পত্তির মালিক হবে রাষ্ট্র। সবাই তার যোগ্যতা অনুযায়ি কাজ পাবে। বেকারত্ব থাকবে না অশিক্ষা অজীর্ণ দূর হবে। সে তার সহায় সম্পত্তি বিলিয়ে দিয়োছিলো মানুষের ভেতরে। মুক্তিযুদ্ধের পর তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্টে সে উল্টে যায় নিজ অবস্থান থেকে। তার মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবে না কোনোদিন। কারণ শত্রুর বহুরূপ সেজন্যে শত্রু কমে না। একদলকে পরাস্ত করতেই মেকাপ খসে পড়ে অন্য এক জন গোষ্ঠীর। খোলস ছেড়ে তারাই শত্রু হয়ে বেরিয়ে আসে। এরা যেন রক্তবীজ। স্বপ্নের এই সকরুন পরিণতিতে সেকেন্দার মাস্টার অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। অমনি সবাই তাকে ‘পাগল’ বলে। মানুষ পাগল বলতে বলতে অকৃতদার সেকেন পাগলাকে আরো বেশি পাগল করে তোলে। তবুও প্রিয় দেখলে চেনে, কথা বলে। বক্তৃতা দেয় নগরের বিভিন্ন প্রান্তে দাঁড়িয়ে। তার বক্তৃতার কথা হলো 'সাবধান ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। যুদ্ধ শেষ হয় না। যুদ্ধ শেষ হয়নি। যতোদিন ক্ষুধা আছে, দারিদ্র্য আছে, বৈষম্য আছে সেদিন পর্যন্ত যুদ্ধ থাকবে। আপনারা আবার রাস্তায় আসুন। শত্রু এখনো সবখানে। শুভ্র তিমিরে থাকা শত্রুদের চেনা যায় না। এদের সবার পকেটে অস্ত্র। শহীদের সংখ্যা বাড়ছে, ওরা জিতে যাবে, অস্ত্র নিন।’ কেউ শোনে হাসে, মজা করে। কেউবা চলে যায়। তবু গভীর রাতে সেকেন পাগলা ডাক দেয় মধুমতির পাড়ে দাঁড়িয়ে ‘যুদ্ধ বাকি আছে, কেউ ঘুমাবে না বিপদ হয়ে যাবে, স্বাধীনতার রক্ষা করা যাবে না।’ গভীর রাতে এ আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে দূর থেকে দূরান্তে। রাত বয়ে চলে তারপরও বেজে চলে সেকেন পাগলার গলা। দীপুর বিশ্বাস ওটাই, যুদ্ধ আরেকটা করতে হবে। শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়, একযোগে সবখান থেকে, যে যেভাবে পারে।
ভাবনা শেষ হয়ে যায় দীপুর। ঘটনাটা আরও বাড়ানো যাবে। তার আগে দ্রুত তাকে বাসায় পৌঁছতে হবে। চাটগাঁ থেকে টিপু, জামালপুর থেকে মাসুম, নাটোর থেকে জাকির ভাই হয়তো ইতোমধ্যে এসে গেছে। কারণ আজ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসবে। সেখানে এটা আলাপ করা যেতে পারে।
মূল যুদ্ধের দিকে যাত্রা করতে হবে।স্বাধীনতার অসমাপ্ত কাজগুলো জায়গায় ছাতা মেলে বসেছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি, এবারের আন্দোলনে প্রথম ব্যারিকেড দিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে।
লেখক পরিচিতি
কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক। জন্ম: কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে কর্মরত। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতির সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত। লিখেন দেশ-বিদেশের কাগজে। কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, গবেষণাসহ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪টি।
গল্পগ্রন্থ: স্বপ্নচোর। তার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ মেঘ-বিচ্ছেদ(২০০৩) এবং মেঘ বলি কাকে (২০০৪) নব্বইয়ের কবিতায় বিশেষ নিরীক্ষার দাবি রাখে। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। ই-মেইল :
dipongker@yahoo.com, +88 01715 816169
0 মন্তব্যসমূহ