চারটি দেয়ালজুড়ে এনার্জি বাল্বের ধবধবে সাদা আলো; পুরো রুমজুড়ে গ্রাঢ় নীরবতা। বালিশের উপর মাথা রেখে অনন্ত ঘুমের তলে লুকিয়ে পড়বার আগেই, সে পবিত্র গ্রন্থটার যতগুলো পৃষ্ঠা পারে, পড়ে নিতে চায়। নিজের বুকের ধুকধুকানি স্পষ্ট কানে শুনতে পাচ্ছে, ভয়ে পড়া আর বেশি দূর এগোয় না, সত্যি যদি মরে যায় তখন কী হবে?
সে কি এই মৃত্যুই চেয়েছিল? মনে তো হয় না— ‘ডাস্টবানের’ অতি তিতে আর গন্ধে ভরা সামান্য তরলটুকু গ্লাসের আধেক পানিতে মিশিয়ে এক চুমুকে খেয়ে নিয়েছিল, এরপরেই মনে হতে থাকে, নাহ, কাজটা বোধহয় ঠিক হল না! অলৌলিক প্রতিভা লাভের অন্য আরো পন্থা থাকতে পারে, কিন্তু মরে গিয়ে যদি দেখে পরকাল বলে কিছু নেই, তাহলে তো সেখানে শেকসপিয়ার রবীন্দ্রনাথ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কিংবা মাইকেল এঞ্জেলোদের অস্তিত্ব থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। যদি আগামিকাল সকালে তার ঘুম ভাঙ্গে আর দেখতে পায়, সে বেঁচে আছে, তাহলে মাথা থেকে সবার আগে এইসব ভূত নামাবে সে। বেঁচে থাকা দিয়ে কথা!
বাতি নিভিয়ে দেবার সাথে সাথে প্রগাঢ় অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায় রুমের সাদা দেয়াল, পেপার বিছানো টেবিল, বাহারি ফুলের বেড-শিট কিংবা মাথার ওপরের ফুলতোলা কাগজের সিলিং। সেই অন্ধকারকে ক্যানভাস ভেবে, চাইলেই মনে মনে অনেক ছবি কিন্তু আঁকা যায়। শুধু অন্ধকারে কেন, ওদের বাড়ির পেছনে ঠান্ডা আর ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন যে বাঁশঝাড় আছে, সেখানে ও এমন কত ছবি এঁকেছে ওর ছোটবেলায়! ছায়ায় ভেজা নরম মাটির ওপর কঞ্চির চোখা আগায় ঘর আঁকত সে, তাদের ভাঙ্গা-চোরা অথর্ব বুড়োর মত টিনের ঘর নয়, সে আঁকত রঙিন টিনের কানটুপি মাথায় তে-কোণা বিল্ডিং, তার লাগোয়া বারান্দা, সামনে আবার হরেক রকম ফুলের বাগান। তবে, মোটরওয়ালা লাল গাড়ির ছবি সে কখনো এঁকেছে কিনা, তার ঠিক খেয়াল হচ্ছে না; পাশের বাড়ির ছেলেটি যখন হাঁটু-পর্যন্ত লম্বা নীল রঙের সুন্দর একটা ইংলিশ প্যান্ট পরে সেই গাড়ি চালাত, সে কী আকুল চোখেই না তাকিয়ে থাকত— আর ভাবত, ইশ! ওমন একটা গাড়ি যদি শুধুই তার থাকত! ব্যাটারি লাগিয়ে চাবি ঘুরালেই গাড়ির মাথায় কেমন লাল লাল বাতি জ্বলে ওঠে আর কী সুন্দর ঝিঝিঝি শব্দ তুলে সমানে গড়িয়ে চলে বাঁধানো মেঝের ওপর দিয়ে! আর ওই ছেলের যে মেশিনওয়ালা একটা লঞ্চ ছিল, যেটাতে কেরোসিন তুলে আগুন ধরিয়ে দিলেই বোঁ বোঁ শব্দ তুলে পানির ওপর দিয়ে ধা করে ছুটে যেত, তার ছবি সে মাটিতে কখনো আঁকে নি; শুয়ে পড়ার শেষে বাতি নেভানোর পর ঘর অন্ধকার হয়ে গেলে, কল্পনায় ওর চোখের সামনে ফুটে ওঠত অপার্থিব দিনের আলো;— সেই আলোয় খয়েরি রঙের লঞ্চটা ভেসে ওঠত। আর, ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক, শিশির পড়ার শব্দ অথবা বাড়ি ফেরার পথে, শেষ হাটুরের দরদ ভরা গলায় গাওয়া যে অপার্থিব সুর দূরের রাস্তা থেকে ভেসে আসত, তার সমান্তরালে সেই লঞ্চের বোঁ বোঁ শব্দের টান মিশে একাকার হয়ে যেত। কোন কোন দিন আবার, অন্ধকারে সুদূরে ঝুলে থেকে হাতছানি দিয়ে তাকে ডাকত ছেলেটির রুমে লটকানো এক মহিলার সেই পেইন্টিংটা। আজ আবার, বহুকাল আগের এইসব শব্দ দৃশ্য মনে করতে চেষ্টা করে, শব্দ শোনার আশায় কান পেতে থাকে— অস্পষ্ট কানে রাত্রির অতল গভীর অতীত অন্ধকার থেকে তখন শব্দগুলো কোলাহল হয়ে ফিরে ওঠে আসছে বলে মনে হতে থাকে তার। সেইসব কোলাহল শুনতে শুনতে তার কেমন ঘুম পায়। কিন্তু এখন ঘুমিয়ে পড়াটা কি ঠিক হবে? ভয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য নাহয় ঘুমিয়ে পড়ল, কিন্তু একবার ঘুমিয়ে গেলে, তারপর যদি সকালে আর জেগে না-ওঠে?
নরম বিছানায় আস্ত শরীর এলিয়ে দেয়। চারপাশের যে ছোট ছোট স্পর্শ, দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণ— সে এতোদিন এড়িয়ে গেছে, বিছানা আর বালিশের কোমল আদুরে আতিথেয়তায় তারা আজ এই রাতে তার অনুভূতিতে এসে ধাক্কা মারে। তার এক ভোর সকালের কথা মনে পড়ে যায়। সেই ভোরে পাশের বাসার নীল ইংলিশ-প্যান্ট পরুয়া ছেলেটি ওরই অপেক্ষায় তাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিল; তার হাতে ধরে রাখা একটা চারকোণা রঙিন পোস্টার। পোস্টারে লাল কাঁকর বিছানো পথে দাঁড়িয়ে এক তরুণ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূরের অন্ধকারাচ্ছ বাড়ি-ঘরের দিকে। হাতে ধরে আছে সোলেমানি তলোয়ার, মাথায় সোনালি ফিতে বাঁধা, কাঁধের উপর বসা কথা-বলা-টিয়ে। তার পেছনে, অনেক দূরে, দিগন্তে, হলুদ পাহাড়ের ওপারে ডুবে যাওয়া সূর্যের উজ্জ্বল আভা। আর মাথার ওপরে অজস্র নীলচে সান্ধ্য নক্ষত্র, নক্ষত্রের নিচ দিয়ে দিগন্তের দিকে উড়ে যাচ্ছে সবুজাভ বিচ্ছুর দল। আকাশের রং কালচে সবুজ। সেই ভোরে তার ঘুম ভাঙা চোখ আটকে যায় পোস্টারে । তখন ছেলেটি বাম হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে, ডান হাতে উঁচিয়ে ধরে রাখা পোস্টারের দিকে ভ্রু নাচায়। তারপর চোখ-মুখ কুঁচকিয়ে ঘোষণা দেয়, ‘দুনিয়ার এমন কোনো কাম নাই, এই লোকটা না-পারে! কেমনে জানো? ঐ তরোয়াল দিয়া। আল্লায় তারে এই তরোয়াল নিজে দিছে। আর ঐ যে টিয়া পাখি, কোনো বিপদ হবার আগেই ওরে কইয়া দেয়। সবসময় কান্দে চইড়া থাকে। শোন, তোমার মুছলমানির মইদ্যে আল্লারে দাওয়াত দিও। তাইলে, আল্লা তোমারে এই রহম একটা সোলেমানি তরোয়াল দিতে পারে...' ছেলেটির কথা শুনতে শুনতে খুশিতে ওর নাক আর ঠোঁট তিরতির করে কাঁপতে থাকে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে— যে করেই হোক, তাকে সোলেমানি তরবারি পেতেই হবে। এখন থেকে তাহলে নিয়মিত নামাজ পড়াটা খুবই দরকার; আল্লা একবার ওর প্রতি রাজি-খুশি হলেই তাকে অলৌকিক শক্তি দিয়ে দিবে। তখন সে নিজেকে অদৃশ্য করে দুনিয়ার যেকোন জায়গায় চাইলেই চলে যেতে পারবে মাত্র এক মুহূর্তে। কী যে মজা হবে! আর তখন যে তার সাথে লাগতে আসবে, আসুক— জনমের তরে তার থুতনি ভেঙ্গে দেবে ও, অনেক সহ্য করেছে এতোদিন, আর না; তারপর, ধরা যাক, কাউকে অজগর সাপে দৌড় লাগাল, তখন ও সোলেমানি তরবারি দিয়ে সাপের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, হু, তারপর সবাইকে চমকে দিয়ে তরবারিটা শুধু সাপের দিকে তাক করা সই, ওমনি জাদুর আলোতে সাপ কেটে একেবারে দুই ভাগ! ভয়ের কিছু নেই, তখন তো হাতে থাকবে সোলেমানি তরবারি, আর অলৌকিক শক্তি; জাদুর সেই শক্তি দিয়ে সে কী করতে চায়, সবই করা সম্ভব। পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটি তখন ওর, আহ— সবাই কেমন তাক লাগে যাবে, ঈর্ষা করবে তাকে। আর, ওর খুব অনুগত বন্ধু টিয়ে পাখিটা তো থাকবেই— ওর নানির বাড়ির কোন বটগাছে নাকি টিয়ে পাখির খোড়ল আছে, খোঁজ তো তাহলে নিতেই হয়! কাউকে এইসব আগে-ভাগে কিছুই বলা যাবে না। তারা কল্পনাও করতে পারবে না সে কী জিনিস পেতে যাচ্ছে...
প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। হঠাৎ ঘুম ছুটে যায় দুই চোখ থেকে। এই যাহ— নোটবুক? ওর হলুদ নোটবুক! নোটবুকটা তো পোড়া হয় নি! মনের গভীর গহীনে যত ভাবনা ছিল, সব তো ওটার ভেতরেই রয়ে গেছে;— এখন? শুধু তো লেখা না, যখন যে মেয়েকে নিয়ে কল্পনায় ও মেতে থেকেছে, তাদের ছবিও যে আঁকা আছে অনেক। তারপর, ও যেসমস্ত মেয়েকে একান্ত আপন করে পাশে চেয়েছে, রাতের পর রাত রাস্তায় হাঁটার সময় ওদের নিয়ে স্বপ্ন বুনেছে, উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে এসে যারা মাথায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে— তাদের নাহয় যত্ন করে সুন্দর সুন্দর কাপড়সহ এঁকেছে; মার্কার পেন দিয়ে আবার রঙের প্রলেপও দিয়ে দিয়েছে কারুকার্যময় পোশাকে; কিন্তু যাদেরকে সে শুধুই উত্তেজিত মুহূর্তে পেতে চেয়েছে, ম্যাগাজিনের রঙ্গিন পৃষ্ঠা ছেড়ে অথবা টিভির পর্দা ফুঁড়ে লেপের উষ্ণতায় তার শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ের পড়েছে, তাদের একটারও গায়ে তো সুতো পর্যন্ত নেই! ধুর— না থাকুক; তার মৃত্যুর পর সবাই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্ত করলেই তার কী, আর আস্ত নোটবুকটা মুদির দোকানে বিক্রি করে দিলেই বা কী? এটা সত্য যে, এই নোটবুকটি খুলে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকেও কখনো দেখায় নি, শুধু বলেছে, তার একটা নোটবুক আছে। এইসব কী কাউকে দেখানো যায়?
আবার দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে। বিষের ক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে নাকি? এই অন্ধকারেও দেয়ালে ওসব কী লটকানো? এইত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! আরেহ, বদ মেয়েগুলোর কান্ড-কারখানাটা একবার দ্যাখো! সে চিন্তায় অস্থির যে, কেউ যদি নোটবুকটার খোঁজ একবার পায়, তাহলে সে কীসব আজেবাজে জিনিস এঁকে গেছে— সবটা মানুষ জেনে যাবে, আর এদিকে এই মেয়েগুলো নিজে থেকেই কেমন ঝুলে আছে নোনা-ধরা দেয়ালে! এখন আর কী! এখন তো অন্ধকার! সকাল হলেই সবাই যখন এই ঘরে আসবে, তখন পয়লাতেই তো তাদের চোখ চলে যাবে দেয়ালের স্কেচগুলোর দিকে। নোটবুকের পৃষ্ঠা থেকে উঠে এসে দেয়ালে ঝুলে পড়ার আগে এইসব বেহায়াদের একবার কি ভাবা উচিৎ ছিল না যে, তাদেরকে এত যত্ন করে যে মানুষটা সারাজীবন ধরে এঁকে গেল, সে যখন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই হয়ত বা নাই হয়ে যাবে, তখন তাদের ওমন করে দেয়ালে লটকানো অবস্থায় মানুষ-জন যদি দেখে, লোকেরা কী ভাবতে পারে এই মানুষটার সম্বন্ধে?
নাহ, কিছুতেই ঘুমানো যাবে না। সে বন্ধ জানালা খুলে দেয়, বাইরের আবছা আলোয় মেলে ধরে নোটবুকটার প্রথম পৃষ্ঠা। জানালা গলে চুয়ে চুয়ে আসা আলো কুয়াশার সাথে আছড়ে পড়ছে নোটবুকটির ওপর; সে সেই আলোয় একটার পর একটা পৃষ্ঠা ওলটাতে থাকে। আর তখনি, সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে যায় এক মুহূর্তে। তবুও কী আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ বা শেকসপিয়ার কিংবা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিদের প্রতি একটুও ক্ষোভ জাগে না তার— সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে নোটবুকটার ওপরে। তখন জন্ডিসে ভোগা কুকুরের পেচ্ছাপের মত হলদেটে নোটবুকের কভারের রং চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আগুনে আত্মাহুতি দেওয়াই ছিল যার কপালের নিয়তি, সেখানে তার কী করার আছে?
নোটবুকের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যত শব্দ আর স্কেচ, সমস্তটাতে সে বুঁদ হয়ে যায় মুহূর্তেই। ঘরের উপরেই কাঁঠাল গাছ, তার পাশেই লেবু আর জাম্বুরা গাছ পাশাপাশি; বাইরে তাদের পাতা চুয়ে চুয়ে শিশির পড়ার টুপ টুপ শব্দ। নাম-না-জানা একটা পাখি একটানা ডেকেই যাচ্ছে, তার শৈশবে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলেই এই পাখির ডাক খুব ধ্যান ধরে শুনত সে। এই সব শব্দ ভেদ করে কাদের যেন হাসাহাসির শব্দ ওর কানের ওপর আছড়ে পড়ে। শব্দটা কোথা থেকে আসছে তা জানার আশায় বাইরে বেরোয় ব্যাকুল হয়ে। আরে, বাইরে তো দেখি দিনের মত ফুটফুটে আলো। বাইরে এমন উৎসব রেখে ঘরের ভেতরে শুয়ে শুয়ে এতোক্ষণ কীসের ছাতার মাথা করছিল সে! উচ্ছ্বসিত চোখে ও সামনে তাকায়; অরুণদের বাড়ির সামনেই সেই ঝটলা, কীসের জন্য এত আওয়াজ ওখানে? ও নিঃসংকোচে সামনে এগোয়।
ভাল করে কিছু বোঝার আগেই, উৎসবের ভেতর ও ঢুকে পড়ে। সালিম ভাই বলে, কাছে আয়। কে যেন ট্রাকের উপর ওকে উঠিয়ে দেয়। ওর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এত এত ঝিকঝিকে রূপালি নক্ষত্র। আচ্ছা, সব নক্ষত্র নামিয়ে আনলে আকাশ খালি হয়ে যাবে না তো আবার? প্রতিদিন ঘুমুবার সময় জানালা দিয়ে সে শিশিরে ভেজা চোখে আকুল হয়ে তাকিয়ে থাকে এইসব রূপালি নক্ষত্রের দিকে— ইশ, কেউ যদি একটা পেড়ে দিত তাকে! আর দ্যাখো এইবার, সেই নক্ষত্রই এখন ট্রাকের উপরে ওর চারপাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে! পাশ ফিরে দেখে ওর মামা আর আপাও দাঁড়িয়ে। চোখে চোখ পড়ে যায় মামার সাথে ওর। মামা কানের কাছে মুখ এনে বলে, শালিক পাখির ডিম চাইছিলা না? যাও, আপার কাছে রাইখা দিছি।
এক ছুট্টে চলে আসে রান্নাঘরে। তাকে দেখামাত্র মা গনগনে চুলার দিকে চোখ রেখেই কোলের ভেতর আন্দাজে হাতড়ায়। তারপর বের করে আনে তিনটা ডিম। এত বড় বড়, দুই হাত দিয়েও বেড় পায় না; ডিমের খোলসের রং আকাশি নীল— সেই নীলের ওপর আকাশের গায়ে গেঁথে থাকা রূপালি নক্ষত্রের মত সাদা সাদা অজস্র ফোটা। মা'র কানের কাছে মুখ এনে জানতে চায়, ডিমের খোলসের গায়ে এই যে এত এত তারা ফুটে আছে, এগুলো তুলে আনবে কী দিয়ে।
মা নিশ্চিন্ত গলায় উত্তর দেয়, ‘ডালার মইদ্যে গিয়া দ্যাখ খেতা আছে, খেতার মইদ্যে সুঁই!' সুঁই নিয়ে ফিরে এসে দেখে প্রায় ভোর হয়ে গেছে। তখন, রান্নাঘরের দরজায় নীল ইংলিশ প্যান্ট পরা ছোটনের মুখ ভেসে ওঠে, হাতছানি দিয়ে তাকে ডাকে ছোটন, হাতে একটা রঙিন পোস্টার; বিরক্তিভরা চোখে সে ছোটনের দিকে তাকায়— শালা আসার আর সময় পেল না। মনে মনে গজগজ করতে করতে ও উঠোনে চলে আসে। ডিমগুলোর জন্য কান্না চলে আসে ওর— এই ডিমগুলো কি সারাজীবনে পাওয়া হবে আর? কক্ষণো না, কোনদিন না।
পোস্টারটা ওর হাতে দিয়ে ছোটন উত্তেজিত গলায় বলে, ‘তোমারে দিয়া দিলাম।' তারপর ওর কাঁধে হাত রেখে খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে জানায়, ‘তোমারে টিয়া পাখির বাসা দেখাইতে চাইছিলাম না? আও আমার সঙ্গে!'
উঠান পেরোলেই বাঁশঝাড়। সেই বাঁশঝাড়ের নরম ভেজা মাটিতে কাল দুপুরে আঁকা ঘর-বাড়ি-বাগান পা দিয়ে মাড়িয়ে ছোটনের পেছনে পেছনে ছোটে সামনের ছোট্ট বটগাছটার দিকে। বটগাছের মগডালের দিকে আঙুল উঁচিয়ে গর্ত দেখায় ছোটন, বলে, ‘ঐ যে ঐখানে!' ও দেখতে পায়, গর্তের ভেতরে পাখার নীল ফইড় ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন টিয়ে পাখি ও কত খুঁজেছে, পায় নি। অথচ ওদের বাড়ির পেছনের এই বটগাছটাতেই যে তার বাসা, সে কেন যে এতোদিন জানে নি!
তাকে ছোটন বাঁশঝাড়ের মাঝখানে রেখে ‘তুমি এইখানে থাক, আমি এক দৌড়ে আইতেছি' বলে ওদের বাড়ির দিকের পথ ধরে। সে খুব স্বস্তি বোধ করে। বটগাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে। তার খুব খুশি লাগে যে, পোস্টারটার মালিক এখন সে নিজে, এটা ভেবে। নীলচে তারায় ছাওয়া কালচে সবুজ আকাশের নিচে কী চমৎকার সবুজাভ বিচ্ছুরা উড়ে যাচ্ছে; বিচ্ছুরাও বুঝি উড়ে! ঘনায়মান সন্ধ্যার সবুজাভ আলোয় সুলেমানি তলোয়ার হাতে যে যুবক দাঁড়িয়ে, তার পেছনের হলদে পাহাড়্গুলো বেয়ে বেয়ে উঠতে পারলে, কী মজা যে হত! এজন্য দরকার অলৌকিক শক্তিধর এই যুবকটির মুখোমুখি হওয়া— গিয়ে বলবে, আপনার তরবারিটা দ্যান প্লিজ! আর ঐ পাখিটাও।
সে হঠাৎ আবিষ্কার করে, বাঁশঝাড় বটগাছ ভোর ওদের বাড়ি— কোথায় মিলিয়ে গেছে! এখন সে দাঁড়িয়ে আছে লাল কাঁকড় বিছানো পথে। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে মাথায় সোনালি ফিতে বাঁধা তরুণ, হাতে সোলেমানি তরবারি, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাঁকর পিছানো পথ যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেই অন্ধকারাচ্ছ বাড়িটির দিকে। যেন এতোদিন কোন বদ্ধ ঘরে বন্দী ছিল সে, তারপর হঠাৎ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বিশাল এক খোলা প্রান্তরে; সেখানে আছে জাদুর তরবারি, মুখ ফুটে বলার আগেই মনের সমস্ত কথা বুঝে ফেলে এমন টিয়ে পাখি। তার চারপাশে তাকিয়ে দেখে, তার সামান্য ছায়াও পড়ে নাই, ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার জন্য পাহাড় আর গাছ-গাছালির দিকে তাকায়। উত্তেজনা আর আনন্দে সে কী করবে, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ছুটে যায় তরুণটির কাছে; উত্তেজিত গলায় বলে, ‘দেখেন আমার ছায়া একটুও পড়ে নাই!' তরুণটা ঠাণ্ডা চোখে ওর দিকে তাকায়, কোনো উত্তর দেয় না। কিছুক্ষণ পর ধীর আর অন্যমনস্ক গলায় বলে ওঠে, ‘সব ছায়া ঐ বাড়িটা চুরি করে নিয়ে গেছে!'
সে এবার পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বাড়িটার দিকে তাকায়; বাড়ির জানালায় এক কিশোরীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ, আবছা ছায়ার কারণে সে মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না। তার খুব ইচ্ছে করে এক দৌড়ে জানালার কাছে ছুটে যায়। তরুণটি সহানুভূতিমাখা চোখে তাকায় ওর দিকে, বলে, ‘ওটা কমলা রঙের ছায়া, তুমি তো চামড়ার মানুষ! ওর কাছে যেতে হলে তোমাকে চামড়ার ভেতর থেকে বের হতে হবে সবার আগে, আর মৃত্যুই পারে তোমাকে চামড়ার ভেতর থেকে বের করে আনতে।' কমলা ছায়াটির কাছে ও এই জীবনে কখনো পৌঁচ্ছতে পারবে না ভেবে ওর মন ভারি খারাপ হয়ে যায়। অথচ, কোন এক হলুদ ছায়ার কিশোর কিন্তু ঠিকই হয়ত ওর ঘর দখল করে বসে আছে; সন্ধ্যা নামলেই কমলা আর হলুদ দুই ছায়া বসে বসে গায়ের ঘ্রাণ নেবে মুখোমুখি। তারপর...
সে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তরুণের দিকে তাকায়। হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘আপনে একটা ভন্ড! আপনার জন্যই আমি ছবির ভেতরে ঢুকে পড়েছি, আপনি আসলে কোন ছাতার মাথাই পারেন না।' তরুণটির ঠোঁটে নীরব এক বাঁকা হাসি খেলে যায়। বাঁকা ঠোঁটেই বিষন্ন গলায় উত্তর দেয়, 'আমার কী করার আছে? তুমিই তো জন্মেছ চামড়ার দেহ নিয়ে!'
সে অন্ধকারাচ্ছ বাড়িটার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আবছা অন্ধকারে ঢাকা, তবুও যেন স্পষ্ট দেখতে পায়— রঙিন টিনের কানটুপি মাথায় তে-কোণা বিল্ডিং, লাগোয়া বারান্দা, সামনে হরেক রকম ফুলের বাগান। সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে বাড়িটি মাত্র কয়েক মুহূর্তের হাঁটা-পথ, অথচ মনে হচ্ছে যেন কয়েক শত ক্রোশ দূরের;— এক জীবন হেঁটেও যেন ও সেখানে পৌঁচ্ছতে পারবে না। ওর বিষন্ন চোখের দিকে তাকিয়ে তরুণটি এবার ক্ষোভের সাথে বলে যে, চামড়ার মানবীরা যখন স্কুল-বারান্দায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওর সাথে চাপা উচ্ছ্বসিত গলায় কথা বলত, তখন ওদের সেইসব উচ্ছ্বাসকে সে মাটিতে পড়তে দিল কেন। সাথে কি হাত ছিল না তার? এই অভিযোগে সে চিন্তায় পড়ে যায়; ছায়া-মানবীর কাছে যা পাবার জন্য এতকাল ছুটে আসছে, চামড়া-মানবীর কাছে কি তা পেত না? পেত, অবশ্যই পেত। কিন্তু শরীর জাগা আর মন জাগা কি এক জিনিস? তারপর হঠাৎ কী মনে হওয়ায় সে মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে, কৈফিয়তের স্বরে বলে ওঠে, ‘কিন্তু ওরা যখন কথা বলত, জামার উপর দিয়ে কারোর কারোর তো স্তনবৃন্ত একদম স্পষ্ট দেখা যেত; তাছাড়া ওদের মুখের আদল আর জামাগুলোর নকশা এত পরিচিত যে, চাইলে আমার আফার কোঁচড় থেকে আমিই বের করে এনে দিতে পারতাম ঐসব! আর, সবচেয়ে যেটা বড় কথা, ওরা কথা বলত আমার থেকে মাত্র দেড় হাত দূরে দাঁড়িয়ে।'
দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে গেছে; দূরে হলুদ পাহাড়ের কোমল হলদে রং। মাথার উপরের কালচে সবুজ আকাশ ধীরে কালো হয়ে যেতে যেতে এখন উজ্জ্বল কালো, লাল কাঁকর বিছানো পথের দু-পাশের মাঠ বহুদূরের উজ্জ্বল দিগন্তে পায়ের কাছে ঘুমুচ্ছে; সেই মাঠটাকে হাতে হাত ধরে ঘিরে আছে ছাই রঙের গাছ-পালা। মাঠের উপরে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেবদারু, হিজল, কড়ই— সে বাতাসে কান পাতে। শুনতে পায়, বহুদূর থেকে কার যেন মিহি গলার সুর ভেসে আসছে। সামনের এইসমস্ত দৃশ্য রং মুছে যায় মুহূর্তেই; এবার সে স্পষ্ট শুনতে পায়, মাঝরাত্তিরে শেষ হাঁটুরের দরদ ভরা গলায় গাওয়া গানের আকুল করা সুর— ইশ! এই সুর গেলাসে ভরে মদের মত করে ঢক ঢক করে সে যদি খেতে পারত! সুর ধীরে ধীরে রাত্রির গায়ে মিশে গেলে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর শিশির পড়ার শব্দ স্পষ্ট হয়। সে এবার খুব মনোযোগ দিয়ে শিশির পড়ার শব্দ শোনে; এই শব্দ চিড়ে কার যেন পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়— এতো ছোটনের পায়ের আওয়াজ! চোখের সামনে থেকে যে রঙিন দৃশ্য বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল, মুহূর্তেই তা আবার স্পষ্ট হয়।
কাছে এসে ছোটন উদ্বিগ্ন সুরে বলে—
‘তুমি ছবির ভিতরে কী কর?'
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চুপ হয়ে যায় সে। তাই তো! তার নিজেরই আঁকা কত শত স্কেচ রয়েছে, আর সে কিনা ঢুকে আছে কার না কার এক ছবির ভেতরে। এই ছবি কে কবে এঁকেছে, কে জানে! তরুণ কত যুগ আগে থেকে অন্ধকারাচ্ছ বাড়িটির দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছে, তা-ই বা কীভাবে জানবে সে। ঝুলন্ত কালচে সবুজ আকাশের নিচে এতকাল স্থির নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর আজ হঠাৎ করে পাহাড়টি, গাছ-পালা, বাড়ি আর তরুণটি যখন ওর পায়ের আওয়াজে জেগে ওঠেছে, তখন ওদের কীভাবে সে আর বিশ্বাস করবে? এই ছবির ভেতর থেকে বের হওয়াটা এখন খুব জরুরি। কিন্তু ছবি থেকে বের হয়ে গেলে সামনেই এই বাড়ি আর সেখানকার কমলা রঙের ছায়া-মানবীকে আর কোথায় খুঁজে পাবে? এখানে আছে, তবুও তো অন্তত চোখের দেখাটা দেখতে পারছে।
পাশ থেকে ছোটন ওকে অতিক্রম করে, তাগাদা দেয়, ‘এইখানে খাড়ায়া থাইকা লাভ কী?' এই প্রশ্নে তার ঘোর কাটে। হঠাৎ তার একটা কথা মনে পড়ায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সে। সেই কখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছে অথচ কথাটা একবারও কেন পড়ে নি, এটা ভেবে নিজের ওপরই রাগ হয় তার। সে এতো দুঃখ করছে কেন? বিষন্নই বা হবার কী আছে? যে মানুষ আকাশি রঙের বিশাল বড় ডিমের স্কেচ আঁকতে পারে, ট্রাকের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ওর পায়ের কাছে লুটানো অজস্র নক্ষত্রের স্কেচ আঁকতে পারে— সে চাইলেই তো ঐ অন্ধকারাচ্ছ বাড়িটার স্কেচও আঁকতে পারে! একবার আঁকা হয়ে গেলেই, ঐ বাড়িসুদ্ধ ছায়া-মানবীকে চিরদিনের জন্য বন্দি করে রাখতে পারবে ওর স্কেচে। সে কবেই এঁকে নিত এইসব স্কেচ, কিন্তু সেইসব স্কেচ আঁকতে যে পেন্সিল আর আর্টপেপার দরকার, তা এই পৃথিবীতে কে দেবে ওকে? এজন্য শুধু দরকার একবার এই চামড়ার দেহ থেকে বের হওয়া; বহুকাল আগে মরে গিয়ে ছায়া হয়ে যাওয়া শেকসপিয়ার রবীন্দ্রনাথ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কিংবা মাইকেল এঞ্জেলোরা নিশ্চয় ওকে সেই পেন্সিল আর আর্টপেপার দিতে পারবে, অবশ্যই পারবে।
সে নিজের দেহের দিকে খুব ধেয়ান ধরে তাকায়। এই দেহই যত নষ্টের গোড়া— ঐ যে হলুদ-ছায়ার তরুণটি হয়ত এখন বসে বসে কমলা-ছায়ার তরুণীর ঘ্রাণ নিচ্ছে মূখোমুখি বসে, ঐ তরুণের সাথে তার কোনোই পার্থক্য থাকবে না তখন আর; এটা ভেবেও চোখ-মুখ চকচক করে ওর। স্পষ্ট বুঝতে পারছে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ক্রমশ বেড়ে চলছে।
লাল কাঁকর বিছানো পথ ধরে ওরা ছায়ায় ঘেরা বাড়িটার দিকে আগায়। সে একটা বিদ্রুপমাখা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয় বাড়িটার দিকে। যত সামনে আগায়, ছায়া কেটে ততো স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাড়িটার আদল। বাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর আগপর্যন্ত, লাল রাস্তার গায়ে ঘষা খেয়ে ওদের পায়ের আওয়াজ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে বাতাসে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
ছোটন আশাবাদী গলায় বলে, 'তুমি পারবা! আর, সবে মেরাজ রাইতই এইসব কামের জন্য পারফেক্ট আমি মনে করি।'
— ছায়া হয়ে যখন যামু, আমার নোটবুকের কী হব?
— এতদিন যা লেখছ, যা আঁকছ সব ভুলে গেলে সমস্যা কী?
— প্রেমে পইড়া গেছি যে! নোটবুকটা আমার জাদুর বাক্স। আমার পেছনের সমস্ত সময় ঐটাতে বন্দী কইরা রাখছি!
নিজেকে হঠাৎ তাদের পরিত্যাক্ত ভাঁড়ার ঘরটাতে আবিষ্কার করে। সেই কবে থেকে এ-ঘরে আসা হয়না, মনে নেই তার। ঘরের এক কোণায় বহুদিন আগের ড্রেসিং টেবিল, সেই টেবিলের লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে— কখন থেকে বা কতক্ষণ ধরে এভাবে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে, ঠিক খেয়াল হচ্ছে না তার। দরজা পুরোপুরি খোলা, ঘরে ২৫ ওয়াটের টিমটিমে আলো, সমস্ত ঘরজুড়ে মশা আর চামচিকার গন্ধ। ভোর হতে আর কত দেরি কে জানে! সে আবার আয়নায় চোখ রাখে— এবার অবাক হয়ে খেয়াল করে, আয়নায় তার নিজের যে ছবিটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে, গত কয়েক বছর যাবৎ দেখে আসা নিজের ছবির সাথে এই ছবির তেমন কোন মিল নেই। তখন, মুগ্ধ চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকিয়েই থাকে...
লেখক পরিচিতি
কিঙ্কর আহসান
গল্পকার।
ব্লগার।
বাংলাদেশের জামালপুরে থাকেন।
0 মন্তব্যসমূহ