নীলমন বিবি, লাইলী-মজনু ও ড. আবুল এয়নদা

মাসুদ পারভেজ


নীলমন বিবি রূপের ছবি
রূপ থাকিলে হয়রে সবি
জগৎ মাতাল রূপের নেশায়
জাত কুল মান সবই ভাসায়।


গ্রামের লোকদের এই কয়টি লাইন ছাড়া বলার মতো আর কিছুই থাকে না। থাকত, যদি তাদের দাদা কিংবা দাদার দাদা কিংবা তারও দাদা জীবিত থাকত হয়তো-বা তাহলে নীলমন বিবি সম্পর্কে বিস্তর জানা যেত। কিন্তু সে সম্ভাবনা এখন আর নাই।
তাই গ্রামের লোকেরা এই কয়টি লাইনের মাঝে নীলমন বিবির রূপ-যৌবন খুঁজে। তাতে তারা কিছুটা সফল হয়, হয়তো-বা হয় না। কিন্তু তাদের সময় গড়াতে থাকে। কে নীলমন বিবি, কার বিবি, কার সাথে ঘর ছাড়ে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তাদের কারোরই ভাল মত জানা না থাকলেও গল্প বাড়ানোর প্রয়োজনে তারা তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। তার চেয়ে আরও নতুন কিছু যোগ করে।

তারা তখন হাস্যু ডাকাতের খোঁজ করে। হাস্যু ডাকাত আসলেই ডাকাত ছিল কি-না কিংবা হাস্যু ডাকাতের বংশে আর কেউ এখনও ডাকাতি করে কি-না কিংবা হাস্যু ডাকাতের পিতৃপ্রদত্ত প্রকৃত নাম কী কিংবা হাসুয়া দিয়ে এক কোপে সত্যি কি সে কারও কল্লা ফেলে দিয়ে হাস্যু নাম পেয়েছিল কি-না এইসকল প্রশ্নের উত্তর তারা নিজের মতো করে বানায়, ব্যাখ্যা করে, বিশ্লেষণ করে। হাস্যু ডাকাতের সাথে নীলমন বিবির সম্পর্ক কী ছিল কিংবা হাস্যু ডাকাতকে নীলমন বিবি কত টাকায় ভাড়া করেছিল নাকি নীলমন বিবি তার সোনার হার দিয়েছিল তা তারা কেউ খোলাসা করতে পারে না। তারা খোলাসা করার তাগিদও বোধ করে না। যার ফলে তারা কাসেম ফকিরের খোঁজ করে।

কাসেম ফকিরকে হাস্যু ডাকাত আসলেই খুন করেছিল কি-না, খুন না করলে কাসেম ফকিরকে হাস্যু ডাকাত কী বলেছিল কিংবা কাসেম ফকির কোথায় চলে গিয়েছিল তা তারা জানে না। তবে তারা শুধু এটুকু জানত যে, কাসেম ফকির নীলমন বিবির স্বামী কাদের মির্জাকে জানাতে চেয়েছিল।

তখন তারা কাদের মির্জার জন্যে আফসোস করে। কি তার শান-শওকত কি তার জোত- জমি কোনো কিছুতেই লোকটার সুখ মেলেনি। বউয়ের-- যে রূপ দেখে সে বিয়ে করেছিল সেই রূপই তার কাল হয় এবং সেই রূপের হাতেই তার মরণ ঘটে। তখন তারা কাদের মির্জার মৃত্যুর জন্য নীলমনকে দায়ী করে এবং মাগী সম্বোধন করে গালি দেয়। তখন তারা আরও কয়েকটি লাইনের খোঁজ পায় :

স্বামীর মুখে ঢালিতে বিষ
হইলো নাকো উনিশ বিশ
দেখিয়া নীলমনের আসল রূপ
কাদের মির্জা হইলো নিশ্চুপ।

কাদের মির্জার মৃত্যুর শোকে তারাও আচ্ছন্ন হয়। এবং তারা কাদের মির্জা ও নীলমনের ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানদের খোঁজ করে। তখন তারা বলাবলি করে যে, পরপুরুষের সাথে তাদের মায়ের যাওয়াকেই তাদের বাবার মৃত্যুর কারণ ধরে এবং তারা আরও কয়েকটি লাইনের খোঁজ পায় :

দুধের ছাওয়াল কান্দি মরে
মাও মাগী রঙ্গ করে
ত্যাগ করিল বুকের ধন
স্বৈরিণীর নাম নীলমন।

তখন তারা নীলমনের মত্যু দিনের ঘটনা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং বলাবলি করে যে, এমন মরণ যেন শত্রুরও না হয়। নীলমনের লাশের কী হয় কিংবা নীলমন যার সাথে পালিয়েছিল সে কে কিংবা সে নীলমনকে কেন ত্যাগ করেছিল তারা তা খোঁজা শুরু করে। তখন তারা আরও কয়েকটি লাইনের খোঁজ পায় :


দুই দিনের এই জিন্দেগানি
যতোই থাকুক রূপ জাওয়ানি
রূপ কচু পাতার ওপর পানি
বাড়িলে বেলা গড়াবে জানি।

তখন তারা কাদের মির্জার সেই ভাগ্নি জামাইয়ের খোঁজ করে যার সঙ্গে নীলমন বিবি পালিয়েছিল। তখন তারা বলাবলি করে যে, কাদের মির্জার সেই ভাগ্নি জামাইয়ের রূপ তৃষ্ণার নেশা কিছুদিন পরেই মিটে যায় এবং তার কাছে নিজের জীবন অতি প্রিয় হয়ে ওঠে। তখন সে নীলমন বিবিকে ত্যাগ করে এবং যাওয়ার আগে বলে, যে নারী তার স্বামীকে হত্যা করে তার কাছে আমার জীবন নিরাপদ নয়। তখন তারা আর নীলমন বিবির খোঁজ পায় না। যখন খোঁজ পায় ততদিনে নীলমনের মরার কাল উপস্থিত হয়। তখন তারা আরও কয়েকটি লাইনের খোঁজ পায় :

নীলমনের হাতে ভিক্ষার ঝুলি
মুখে আহাজারির বুলি
বেশভূষায় ঠিক পাগিলি
ভিখ চাইলে পায় গালি।

তখন তারা বলাবলি করে যে, মরার কয়দিন আগে নীলমন তার ছেলেমেয়েদের দেখার জন্য এই গ্রামে ফিরে কিন্তু গ্রামের রাস্তার মুখে সে মরে পড়ে থাকে। রাস্তায় মরে পড়ে থাকা লাশ কেউ ধরে না, ছোঁয় না। তার সন্তানরা তাকে দেখতেও যায় না। নীলমনের লাশের কী ব্যবস্থা হয় সেই খোঁজ গ্রামের লোকেরা পায় না।



আসমানের কোণ-কানাচে দু'এক ফোঁটা আন্ধার মেঘের হুদিশ ছাড়াই এমন সাদা ধবধবা আসমান থেকে হুট করে ঝমঝমা বৃষ্টি শুরু হবে তা কে জানত, ভাবতে ভাবতে মজনু ঠাহর করার চেষ্টা করে রাত তো কেবল শুরু। ঝমঝমা বৃষ্টির আন্ধার রাতে মাঝে মাঝে চমকানো বিদ্যুতের আলোয় ঝলসে ওঠা মুখ দেখার জন্য রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নাই। তারপরেও অতিসাবধানী হয়ে মজনু তার হাতে ধরে থাকা হাসুয়াটা আড়াল করে। মাঝে মাঝে চমকানো বিদ্যুতের আলোয় হাসুয়াটা ঝিলিক দিয়ে হাসে আর মজনু তখন আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে হাসুয়ার ধার পরখ করে। একাধারে চলতে থাকা বৃষ্টিতে মজনু একটা গাছের নিচে দাঁড়ালে গাছের পাতা নিঙড়ানো পানির বড়ো বড়ো ফোঁটা তার মাথায় মুখে টপটপ করে পড়লে সে চ্যাতে ওঠে এবং হাতের হাসুয়াটা গাছে কোপ মারার জন্য তুলে আবার থেমে যায়। তখন সে চমকানো বিদ্যুতের আলো মাথায় নিয়ে গাছের নিচ থেকে সরে এসে হাঁটা দেয়। ঝমঝমা বৃষ্টি কিছুটা থিতু হলে সে হাঁটার গতি বাড়ায়। রাজাপোড়া ঘাটে পৌঁছার আগে আগে সে জুয়ার আড্ডার জায়গাটায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখে। এই জায়গা থেকে তার জীবনের উলটা-পালটা দশা শুরু ভেবে সে হাসুয়াটা শূন্যে তাক করে ধরে কিন্তু সেই রাতে জুয়ার আসর থাকে শূন্য। শূন্য আসরের চালার নিচে দাঁড়ালে ঝলকানো বিদ্যুতের আলোয় ওই রাতের দৃশ্য সে স্পষ্ট দেখতে পায়।

ওই রাতে তার সামনে যে পরিস্থিতি খাড়া হয় তখন সে ওই সিদ্ধান্ত ছাড়া আর অন্যকিছু চিন্তা করতে পারে না। একের পর এক জুয়ার বাজি যখন সে হারতে থাকে তখন তার গরম মাথা আরও গরম করে আসরের জুয়াড়িরা। ওই সময় জুয়াড়িরা তার সুন্দরী বউয়ের দিকে ইঙ্গিতে নজর দেয়। এতে তার মাথা আরও গরম হলে সে খিস্তির বান ডাকে। তখন জুয়াড়িরা বলে, আসল মরদের যেমন মাথা ভরা রাগ থাকে তেমন থাকে বুকভরা কলিজা আর সেই কলিজা ভরা সাহস। তখন জুয়াড়িরা আরও বলে, বুকত যার সাহস থাকে দুনিয়াত তায় টিকি থাকে। ঘরত সুন্দরী বউ থাকিলে মরদ হওয়া যায় না, মরদ হওয়ার জন্যে লাগে সাহস আর সাহস টিকায় মরদের মান। তখন মজনুর মাথার ভেতর গরম রাগের প্রবাহ আর কলিজা ভরা সাহসের বেগ একইসাথে আন্দোলিত হতে থাকলে সে শেষ বাজি ধরে। তখন অন্য জুয়াড়িরা বারবার প্রশ্ন করে, সে ঠিক বলেছে কি-না সেটা যাচাই করার জন্যে। তখন সে বলে, আসল মরদের মুখ এক জবান এক। তখন শুরু হয় বউবাজির শেষ জুয়া। বউবাজির ওই জুয়া হারার পর মজনু তার বউকে হারায়। ওই রাতের পরের দিন মজনু তার বউ লাইলীকে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে নিয়ে যায় এবং যে জুয়াড়ি জুয়ায় জিতেছিল লাইলীকে তার বাড়িতে রেখে মজনু চলে আসে। ওই জুয়াড়ির শান-শওকত আর দাসী বান্দীর সেবায় মজনুর তিন মাস আগে বিয়া করা বউ লাইলী, মজনুকে ভুলে যায় এবং ওই জুয়াড়ি লাইলীকে বিয়ে করে। কিন্তু মজনু লাইলীকে ভুলতে পারে না। সে ওই জুয়াড়ির বড়ির আশোপাশে রাত-বিরাতে ঘুরঘুর করে এবং লাইলীকে তার সাথে পালিয়ে যাবার কথা বলে। লাইলী তাতে রাজী হয়ে মজনুকে পরের রাতে আসাতে বলে। মজনু যখর পরের রাতে এসে হাজির হয় তখন লাইলী তার জুয়াড়ি স্বামীকে মজনু আসার খবর জানায়। তখন জুয়াড়ি স্বামী লাইলীর একটি শাড়ি শরীর আর মাথায় পেচিয়ে মজনুর কাছাকাছি আসতে ধরলে মজনু তাকে লাইলী মনে করে এগিয়ে যায়। তখন জুয়াড়ি স্বামীর হাতের আড়ালে রাখা লাঠির বাড়িতে মজনুর ডান হাতটা প্রায় অবশ হয়ে যায়। আর তখন সে কোনোরকমে জান নিয়ে ফিরে আসে। ওই রাতের পর আরও তিরিশ রাত পার হয়ে গেছে কিন্তু মজনুর ডান হাতটা এখনও ঠিক মতোন কাম করে না।

জুয়ার আসরের চালা ছেড়ে মজনু হাঁটা দেয় রাজাপোড়ার ঘাটে। রাজাপোড়ার ঘাটে পৌঁছানোর পর মজনু ভাবে কোনো এক কালে এক অত্যাচারী রাজাকে প্রজারা ওই ঘাটে পুড়িয়ে মারে। তখন থেকে এই ঘাটের নাম রাজাপোড়ার ঘাট আর লাইলীর সাথে তার জুয়াড়ি স্বামী যদি এইঘাটে খুন হয় তাইলে কী নাম হবে। নিঃসঙ্গ ঘাটে হাতে হাসুয়া নিয়ে লাইলী আর তার জুয়াড়ি স্বামীর ফেরার অপেক্ষা করে মজনু। তখন ঝমঝমা বৃষ্টি আরও প্রবল বেগে বাড়তে শুরু করে। সেইসাথে তাল মিলায় মেঘের গর্জন আর বজ্রপাত। মজনুর তখন মনে পড়ে-- বুকত যার সাহস থাকে দুনিয়ায় তায় টিকি থাকে। বুকভরা সহসী মজনু হাসুয়া নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু তার দুনিয়াত থাকা হয় না। বজ্রপাতের আঘাতে তার মৃত্যু ঘটে। বাজপড়া মজনু হাতে হাসুয়া নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকে।




বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপাক ড. আবুল এয়নদা যিনি ফোকলোর নিয়ে নাড়াচাড়া করেন বলে প্রচার করে বেড়ান তিনি একটি বিদেশি এনজিওর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পথকবিদের সন্ধান করছেন। এইযুগে পথকবি পাওয়া অতসোজা না। কিন্তু যেহেতু তিনি একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তার অনেক ছাত্র ছাত্রী আছে তাই তিনি প্রত্যেক ক্লাসে ঘোষণা করেন-- নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে পথকবি খুঁজে বের করা প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট এবং এটার উপর টিউটোরিয়ালের নম্বর প্রদান করা হবে। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা সামর ভ্যাকেশনে বাড়ি গিয়ে পথকবির সন্ধানে বের হয়। অনেক খোঁজাখুজির পর মাত্র দুজন পথকবি ছিল এমন একটি গ্রামের সন্ধান পায় তারা। সামার ভ্যাকেশন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তারা ড. আবুল এয়নদাকে সেই খবর জানান। ড. আবুল এয়নদা তখন তার অতিপ্রিয় ছাত্র নিয়ে পথকবির সন্ধানে গ্রামটিতে হাজির হন। কিন্তু তিনি কোনো পথকবির সন্ধান পান না। তবে তিনি জানতে পারেন যে, এই গ্রামে একসময অনেক পথকবি ছিল। ধীরে ধীরে তাদের কদর কমতে থাকায় শেষ পর্যন্ত এই পেশা আর কেউ ধরে থাকতে পারেনি। ড. আবুল এয়নদা তখন সেই গ্রামের যেই যেই পরিবারগুলো একসময় এই পেশায় ছিল সেই সেই পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করেন। তখন তিনি দেখেন যে, গ্রামটির সকল পরিবারের কেউ না কেউ এই পেশার সাথে যুক্ত ছিল। তখন ড. আবুল এয়নদা একত্রিত হওয়া গ্রামবসীদের সাথে রিসার্চ মেথডোলজি অনুযায়ী গল্প শুরু করেন এবং গল্পের মধ্যে হুট করে গ্রামবাসীদের একজন বলে ওঠে :

নীলমন বিবি রূপের ছবি
রূপ থাকিলে হয়রে সবি
জগৎ মাতাল রূপের নেশায়
জাত কুল মান সবই ভাসায়।

তখন ড. আবুল এয়নদা এই চারটি লাইন থেকে মোটিফ বের করে গ্রামবসীদের প্রশ্ন করা শুরু করেন। তখন গ্রামবাসীরা ড. আবুল এয়নদার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে নীলমন বিবি সম্পর্কে তাদের পূর্বপুরুষ পথকবিদের তৈরি কবিতার কিছু কিছু লাইন বলেন। নীলমন বিবি সম্পর্কে ড. আবুল এয়নদা যতটুকু জানতে পারেন তাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় 'লাইলী-মজনু' ঘটনাটার বেলায়। মজনুর বউ বাজি ধরে বউ হারানো, আবার বউকে ফেরত পাওয়ার চেষ্টা, পরিশেষে মৃত্যু এসব ঘটনা তারা সরল ভঙ্গিতে বর্ণনা করে। কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষ কর্তৃক রচিত কোনো কবিতার লাইন তারা বলতে পারে না। তখন ড. আবুল এয়নদা লাইলী-মজনু সম্পর্কে কবিতার লাইন খেয়াল করার জন্য গ্রামবাসীদের একটু প্রেসার ক্রিয়েট করেন। তখন ড. আবুল এয়নদার দিকে গ্রামবাসীরা কেমন চোখে তাকালে, তিনি মনে মনে বলেন, একোরডিং টু দ্য রিসার্চ মেথডোলজি মাথা গরম করা যাবে না। প্রেসার ক্রিয়েট করা ঠিক হয়নি। তখন তিনি মনে মনে বলেন, যাক যা পাওয়া গেছে এতে নিজেই কিছু কবিতা বানিয়ে ছানিয়ে লাইলী-মজনুকে নিয়ে পথকবিতা হিসাবে চালানো যাবে। তখন তিনি 'লাইলী-মজনু' নিয়ে কবিতা বানানোর দায়িত্ব তার দুই ছাত্রের উপর দেন। তখন সেই দুই ছাত্র সমস্যা খাড়া করে ড. আবুল এয়নদাকে প্রশ্ন করে-- তারা কোন ছন্দে কবিতা রচনা করবে? তখন ড. আবুল এয়নদা ছাত্রদেরকে ধমক দিয়ে জানতে চান, তাদেরকে ছন্দের কোর্সটি কোন শিক্ষক পড়িয়েছে। তখন ছাত্রদ্বয় আমতা আমতা করে জানায় যে, ড. আবুল এয়নদা তাদের ছন্দের কোর্সটির শিক্ষক ছিলেন। তখন ড. আবুল এয়নদাও আমতা আমতা করা শুরু করেন। ডিপার্টমেন্টে যে সকল ছাত্ররা কবিতা লেখে তাদের বিশেষ কাউকে ডেকে অবশেষে সকল শিক্ষার্থীকে ড. আবুল এয়নদা লাইলী-মজনুর গল্পটি শুনিয়ে ছন্দসহযোগে অন্ত্যমিলের মাধ্যমে লেখার আ্যসাইনমেন্ট দেন। যে সকল শিক্ষার্থীরা কবিতা লিখত তারা জানায় যে, তারা ছন্দে বিশ্বাসী না এবং ছন্দ দিয়ে কবিতা লেখে না। তারা গদ্য কবিতা লেখে। আর সকল শিক্ষার্থীরা সমস্বরে বলে, তারা ছন্দ জানে না। তখন ড. আবুল এয়নদা আসলেই খুব বিপদে পড়েন। এত টাকার একটা কাজ সামান্য ছন্দের কারণে হাতছাড়া হয়ে যাবে তিনি ভাবতে পারেন না। কাজটা সফল হলে তিনি প্লেনের টিকিট থেকে পাছা মোছার টিস্যু পর্যন্ত ফ্রি পাবেন। ডিপার্টমেন্টের যে দুয়েকজন টিচার ছন্দ জানেন তাদের কাছে যেতেও তিনি ভয় পান। যদি ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে যায়। 'লাইলী-মজনু' যখন ড. আবুল এয়নদাকে মহাফাঁপড়ে ফেলে দেয় তখন তিনি টিচার লাউঞ্জে বসে দুধ চায়ে চুমুক দেয়া শুরু করেন আর তখন টিচার লাউঞ্জের পাশের রাস্তাটা দিয়ে কোনো এক বাদামঅলা কিংবা রিক্সাঅলা আর না হয় অন্যকোনোঅলা সুর ধরে গেয়ে ওঠে

মজিয়া লাইলীর প্রেমে
মজনুরে টানিল যমে

আর এই দুইচরণ শোনার পর তিনি টিচার লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে ধিপধাপ করে রাস্তায় নেমে দৌড় দেন আর চিল্লানো শুরু করেন--কে গাইলো এই গান, কে গাইলো এই গান। তিনি এত ক্রেজি হয়ে পড়েন যে, রাস্তার কেউ গান গাওয়ার দায়িত্ব স্বীকার করে না। যদিও গায়ক সেখানে ছিল এবং তিনি ছিলেন একজন পথকবি আর বর্তমানে রিক্সাচালক।




লেখক পরিচিত





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ