অর্ধেক খোঁজ

ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়

১ ১৮।০৮।২০২৪

হচ্ছে না...কিস্যু হচ্ছে না। ৫বছর, ৪মাস, ৩৫দিন, ২৮ঘন্টা, ২০মিনিট, ১৩ সেকেন্ড মানে অনেকদিন পর কফি হাউসের ৭নং টেবিলে বসে ৩নং সিগারেটের মাঝবরাবর টানা ধোঁয়াটা দীর্ঘশ্বাসের মত ছেড়ে মাথা নিচু করল সৌকর্য। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গেই শব্দগুলো বেরিয়ে গেল মাথা থেকে। কিন্তু বিকেলের গমগমে কফি হাউসে আর কারও কানে হয়রানিটা গিয়ে পৌঁছল না বোধহয় ।
কানে হেডফোন ছিল তাই নাক দিয়ে দীর্ঘ বিলম্ব শ্বাসের সাথে বের হওয়া ধোঁয়া বাইরে বেরিয়ে নিমেষের মধ্যে গালের আলতো ফাঁক দিয়ে বুকের মধ্যে পৌছে গেলো। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের পাশে ফাঁক পেয়ে সেখানে বসল খানিকক্ষণ,কথা হতে। আলতো একটা খচখচানি যেন তক্ষণি নেমে গেল শিরদাঁড়া দিয়ে, ধপ করে কালো ধোঁয়া ওঠা ইনফিরিয়ার মধ্যে সিগারেটের ছাই পড়ল একই সময়ে। অবশ্য সেকেন্ড গত কিছু উনিশ-বিশ থাকতেই পারে। ছাইটা কাপে পড়ার আগে ওর ডানহাতের গুটিকয়েক লোমও পুড়িয়েছিল, তাই... সৌকর্য্য আবার ৭নং টেবিলে ফিরে আসল। কাপের মধ্যে ছাই-এর কেলাশ, একটা মিহি ঘূর্ণন তুলেছিল তখন, সেই ঘূর্ণন দেখেই ওর মাথায় দু'রকম স্মৃতি এসে ভিড় করল। কফি এণ্ড সিগারেট সিনেমায় এভাবেই কালো কফিতে মিশে যাচ্ছিল ছাইগুলো, যেভাবে পেয়ালায় রাখা চামচ দিয়ে যত্ন করে ছাইটা কফিতে মিশিয়ে চুমুক দিল সে। বেশ পোড়া পোড়া একটা অনুভব লাল ঠোঁটের নরম মাংসে কেউ মিশিয়ে দিল যেন। অনেকটা পোড়া চিঠির গন্ধ যেমন। পাঁচ বছর আগে এমন এক শনিবারের সন্ধ্যেবেলা এই ৭নং টেবিলে, ঠিক উল্টোপাশের চেয়ারে জয়ী বসে ছিল । মা আর মাম্মাম কলেজ স্ট্রীটের ওই মাথায় শাড়ির দোকানে তখন,

মারিয়ামের বছর পাঁচেক বয়স, যখন প্রথম সে ‘হারামি’ শব্দটি শোনে।

২ ০৬।০৩।২০১৪

হাওয়া দিচ্ছে। ভোর পেরিয়ে সকালবেলার হাওয়া। নিষ্পাপ শিশু যেমন ছোট্ট-ছোট্ট দুটো হাত দিয়ে বুড়ো চামড়ায়-বুড়ো মাংসে হাত বোলায়, আর শির শিরে অনুভূতি দেয়। তেমন হাওয়ায় নাক দিয়ে বুকের পাঁজরে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সরল নিঃশ্বাসকে। কেমন ফিনফিনে, এক পৃথিবী ছুটে গিয়ে, দুই পৃথিবী দৌড়ে ফিরে আসা যেন। একটু কান কটকট করে, চোখ লেগে যায় চোখে। বেশ লাগে। সকাল সাড়ে ছ'টার বাসে রোজ এই হাওয়াটাই যা নতুন করে পায় সে। রোজকার মত এদিনও পরপর তিনটে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে বসবে মেঘজিৎ। সকাল ৮টার ফার্স্ট প্যানেল শেষ হতে হতে প্রায় ১১টা বেজে যাবে। চট করে বেরিয়ে ব্রেড ওমলেট খেয়ে আবার পরেরটা। রেস্ত কম তাই দুপুরবেলা না খেয়ে খানিক বাদে বারাখাম্বা রোডের ধার থেকে ফ্রুট স্যালাড কিনে নেবে অর্ধেক দামে, যা ভীষণ অম্লশূল তার। অম্লশূল, শব্দটা বেশ না! এরকম আরো কত শব্দ হয়, চক্ষুশূল, মনশূল, ঊরূশূল। বাসের জানলা দিয়ে বাইরের পেরিয়ে যাওয়া দুনিয়াটা দেখতে দেখতে হরেক ভাবনার মধ্যে এটাও খেলা করছিল মাথায়। চটপট ঘড়ির দিকে তাকাল মেঘ। এখনো দুটো স্টপেজ। মানে সোয়া ৮টায় পৌছে যাওয়া উচিত সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েটে। কোম্পানিটা, রিটেল চেন মার্কেটের লোক চেয়ে বিঞ্জাপন দিয়েছিল কাগজে। মাইনে প্রথম মাস হিসেবে তো ভালোই, অবশ্য এখন যা অবস্থা তাতে যা হোক একটা পেলেই চলবে। খালি খরচ আর খরচ। খাটিয়া ভাড়া নাও রে, জামা-কাপড় বানাও রে, ইস্ত্রি করো রে, মশমশে কালো জুতো কেনো রে…অবশ্য মশমশে জুতো তার ফ্যাক ফ্যাকে হয়ে ভাজা ভাজা হওয়ার পথে। কদিনের মধ্যে আবার একটা কিনতে হবে। আবার খরচ। এটা ভেবেই মেঘের মনটা খানিক খারাপ হয়ে গেল,ঝকঝকে শহরে আচমকা আসা আঁধিবৃষ্টির মত। মনে আছে সেবার যখন মেঘ শেয়ালদা স্টেশনে লোকাল ট্রেন ছেড়ে নেমেছিল বাবার সাথে কি জানে ভুলোমনে নাকি তাড়াহুড়োর জন্য তার ভালোজুতোর ব্যাগটা লোকালের কামরাতেই ফেলে এসেছিল। ব্যাপারটা মেঘের বাবাই প্রথম খেয়াল করেছিল, জুতোটা নেই। ৬নং প্ল্যাটফর্মের কারসেডে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল তখন, বাক্স-প্যাটরা গুলোর দিকে তাকাতেই বাবার খেয়াল হল জুতোর ব্যাগটা পারা হয়নি। কি যা তা অবস্থা, ভাবলেও কে জানে মেঘের কেমন হতে থাকে এখনও শরীরে। তারপর ওরা দুজনেই হনহন করে ছুটে গিয়েছিল ট্রেনটার দিকে, অনেকটা ৩ মিনিটে কলেজস্ট্রিট থেকে শেয়ালদা পৌঁছে ট্রেন পাকড়ানোর মত। ৭নং কামরা থেকে বাক্সটা হাতে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নামতেই বাবাকে দেখে ওর সম্রাট জাহাঙ্গীর মনে হয়েছিল যেন। হকের জিনিস, এখনও মনে আছে নেমে আসার পরে বাবার সেই কথাটা। তারপর, আর কিছু মনে নেই । নামার স্টপেজ এসে গেল তার, নামতে যাবে তখনই দেখল বছর দশেকের একটি বাচ্চা স্কুল পড়ুয়া গাড়িতে উঠে ওর সিটটাতে গিয়েই বসল। পায়ের জুতোটা, মশমশে কালো।

চা দিয়ে যাওয়ার সময় চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বাবার গলা শুনতে পেলাম,-‘তোর কোন পুরানো জুতো আছে কি?’ আমি মুখ তুলে বাবার দিকে চাইলাম । বাবা একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেন-‘তোর কোন পুরানো জুতো আছে কি?’

কেন?

-রাস্তাটা একেবারে পাথরে ভরারে- পা ফেলাই যায় না- পায়ে ভীষণ লাগে। এবার আমি বাবার খালি পা দু'টোর দিকে তাকালাম। দেখলাম, জীবনে জুতোর মুখ না দেখা পা দুটোর চামড়া শক্ত মোটা হয়ে চিঁড়ে চিঁড়ে একেবারে ফুটি-ফাটা হয়ে গেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, পা দু'টো ঠিক মানুষের নয়- ঠিক যেন হাতির পা, রাস্তার পাথর ছিল কিনা সেসব খেয়ালই হয়নি, পায়ে হান্টিং বুট থাকায় কথাটা আমার মাথায় আসার কোন কারণই ছিল না।

০৩/০১/১৯৯৪



‘মার্ক্সবাদী হওয়া মানেই(কমিউনিষ্ট) স্ট্যালিনবাদী হওয়া বোঝায় না, বোঝায় নানানানানানা না কিন্তু’- স্লাভোই যিযেক

মন্দাক্রান্তা- বলুন? শুনলাম নাকি আপনি সেই দিল্লী থেকে এখানে এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে? (কেতা নিয়ে)

লেখক- আপনি নিজের সম্পর্কে মানে নিজেকে নিয়ে একটা কিছু বলে শুরু করুন?

মন্দাক্রান্তা- চলা হাওয়ার উল্টোদিকে...(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)

লেখক- মানে?

মন্দাক্রান্তা- শুনুন মশাই, আপনি কি আমার সাথে সাথে রতি-রতি খেলতে এসেছেন নাকি...এরকম মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপন মার্কা বদন করে কারোর নামের মানে শুনে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার তো কোনও মানে নেই...যাই হোক, জলদি বলুন তো কি মতলব আপনার।

লেখক- হুমমম দুঃখিত যদিও আমি মানুষটা চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল, তবু যাই হোক...। আচ্ছা এই সমাজটা মানে ঠিক এখনই দাঁড়িয়ে, এই সমাজটার কাছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আপনার প্রত্যাশাটা কি?

মন্দাক্রান্তা- (৫ নম্বর তপন বিড়ি জ্বালিয়ে)

এই যে দাদা শুনুন, আপনি ফিউচারসিম পড়েছেন, কুবো-ফিউচারিসম, মানে জানেন বলশেভিক রাশিয়ার আগে এই তত্ত্বটা নিয়ে কতো কপচা-কপচি হয়েছে। এমনকি জানেন ওদের নিজেদের ম্যানুফেস্টো পর্যন্ত ছিল। কি হল, কি করতে পারলো তারা। শুনুন আমাদের অবস্থাটা কেমন জানেন, প্রত্যেকটা শতাব্দী আসবে, আমরা শালা জাত হঠকারীরা ভাববো একেবারে অন্যকিছু ভেবে দেশটাকে, সমাজটাকে উদ্ধার করছি। তারা সব দল বেঁধে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালের খাঁচায় ক্যাঁৎ করে লাথি মারবো তারপর সব্বাই মিলে গণ কমিউন তৈরি করব (বিড়ি ফেলে দিয়ে), আর ঐ শালা সরকারি শুয়োরের বাচ্চা লুনাচরস্কিরা আমাদের সংস্কৃতিক লুম্পেন হিসেবে বেছে নেবে কারণ...আমরা তাদের কথা মত সরকারি পরীক্ষা দিয়ে ইস্কুলে-ইস্কুলে ঢুকে নিজেদের চুতটা সরকারের কাছে বন্ধক রাখিনি না। বরং প্রমোদদার ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে পছন্দের পুরুষ শরীরে বা মেয়ে শরীর নিয়ে মানে যখন যাকে ইচ্ছা হয়েছে আর কী তার ঠোঁটে লিপবামের জায়গায় জেলিবিন লাগিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজন পড়লে মাঝরাতে উঠে নিজের যোনিতে আঙুল ঘষে নেশা করেছি...

লেখক- আপনি কি তাহলে স্বেচ্ছাচারী না কমিউনিষ্ট? জানেন তো নিহিলিজমের ও নূন্যতম ডিসিপ্লিনের দরকার পড়ে।

মন্দাক্রান্তা- প্রশ্নটা আর একবার করুন না...আপনি না মশাই খুব রসিক। আচ্ছা বছর ষাটেক আগে ট্রটস্কি, গ্রামসি ওদেরকেও একই প্রশ্নটা করতেন বুঝি... মিয়াওঁও...

লেখক- সেটা তো প্রেক্ষিত, স্থান, কাল ইত্যাদির উপরে নির্ভরশীল তাই না।

মন্দাক্রান্তা- মেয়াওঁওঁওঁ ওঁ.........

ধুর, আপনার সাথে বালের ফ্যাদানো...ফেদিয়ে কোনো ফায়দা নেই, যা হোক এবার কথার কথা মানে হকের কথাটাতে আসি। আপনি যিযেক-বাদুইদের চেনেন। আরে না না এটা কোনও কিমিতিবাদী দর্শন বা স্যুররিয়াল পদ্য নয়। এরা তারা যারা আপনাদের ওই মহান মার্ক্স-এর ঠিক পরের থেকে ভাবতে শুরু করেছেন, হ্যাঁ হয়তো কারো-কারো মতে সেটা সোনার পাথর বাটিতে মুড়কি খাওয়া হতেই পারে, আজ থেকে বিশবছর আগেও তো সেইসব খানকী পোয়াতি মালগুলো উত্তর আধুনিকতা আর নব্য উদারবাদ দেখে, নাক সিটকোঁতে আর সন্ধ্যে হলেই শপিং মলের সামনে ঘুরঘুর করতো যাদের ছেলেমেয়রা মোটা ডোনেশন দিয়ে বেসরকারী কলেজে ধোনে আঙুল ঠেকাতে যেতো তাদের মত তো আর জিজেক-রা ভাবছেন না, তাই হয়তো আমরা মানে আমি আর কি সেই পন্থী......

এই, একটু উবু হবেন কুকুরের মত।

লেখক- কি আজেবাজে বোকছেন মশাই...প্রতিক্রিয়াটা শেষ করুন, আমার তাড়া আছে।

মন্দাক্রান্তা- এই তো...

আহা না হয় আমার জন্যে এটুকু কুকুর হলেনই বা, কি ভালো হবে বলুন তো বেশ আমি আর আপনি এক খাটে...

আহ...আহ...আহ...

লেখক- আহ...

মন্দাক্রান্তা- আচ্ছা শুনুন তা হলে, রাগ করবেন না, মানে জানেন তো আমি যৌনতার দিক দিয়ে ভীষণ দুর্বল। মানে শরীর দেখলে আর কমিউনে থাকলে যা হয় আর কি। আর কমিউনে থাকলে, বুঝতেই তো পারছেন...আচ্ছা দাদা তুমি শুভ দাকে চেনো। (আদো, আদো করে)

লেখক- কাজের কথা বলুন, জলদি... প্রতিদিন রাত দুটো অবধি ফেসবুকে স্যাণ্ডম্যান নামের একটি ছেলে, মানে যে ছেলেটি ইয়ো ইয়ো স্যাণ্ডম্যান নামের, লোদী রোডে এলাকার, ছেলেটির সাথে আপনি গল্প করেন কেনো?

আর...

মন্দাক্রান্তা-এমাঃ ভুলে গেছে, হিঃ,হিঃ......

(গম্ভীর হয়ে) শুনুন আমি তো আর দর্শন, দ্বন্দ্ব এবং আরো কিছু একটা যাই হোক সেগুলো বিকিয়ে রাত্তির নটার সময় হাইহিল পরে ওয়াইন খাইনি। বরং আমার বাবা মানে বামপন্থী জাতিয়তাবাদী প্রগতিশীল মহান বাবা যে কিনা এঞ্জেলসকে দেবতা ভেবে পুজো করতেন এবং আমার দাদা যে কিনা সমুদ্রপোকূলের বন্ধঘড়ির ওই বিলাতে দৃশ্য দেখে এবং দিবারাত্র লুই বুনোয়েল মারিয়ে শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলেন সব মূর্তি ভাঙবেন, মানে এখন যিনি বিলেতে বসে টাইমস পত্রিকায় মাও এর নামে বাক্যরচনা করেন...

যা হোক তারা আমায় একটি জিনিস জীবনভর শিখিয়েছেন যে,

১। গু মাড়িয়ো না

২। ভালো আর সৎ কমিউনিষ্ট হও।

কিন্তু যেহেতু কমিউনিষ্ট হতে গেলে রাশিয়ার প্রাভদা প্রকাশনীর বইপত্তর পড়তে হয় এবং তারও আগে নাবাল জমির আবাল নিজের কমিউন প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাই এটা মানে আজকের রিয়ালিটি শোয়ের যুগে তো ভীষণ স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়া তাই না।

ও হ্যাঁ, আপনার ২নং টা

লেখক- বলে যান, বলে যান বেশ লাগছে বলুন

মন্দাক্রান্তা- দাঁড়ান অনেকক্ষণ বকলে, হালকা ফ্যানা মানে ফেকো ওঠে মুখ দিয়ে আরকি...হ্যাঁ যেটা বলছিলাম, তো ঐ প্রক্রিয়াতে সন্দীপন মানে স্যাণ্ডম্যান একজন প্রার্থী আমার কাছে...

তবে কি জানেন, ছেলেটির মধ্যে পাভেল হওয়ার একটা হেভি চান্স...আচ্চা শুভোদাকে বলে আমার গলার সেই......হিহিহিহিহি...ওঁ গাঁর

ছেঁড়া তমসুক- ভাট বকা ফুরোলে পরে, একটা জোড়সে থাপ্পড় কসালাম যিযেক পার্টির নয়া লিডার কমরেড মন্দাক্রান্তা-র বাঁ গালে। কারণ জেগে ঘুমানো, দিনে স্বপ্ন আর লুকোনো বিপ্লব দেখলেই কেমন যেন লিভারের উপরে ভীষণ চুলকানি হয়, শালা এদের মুখে থুতু আর গুদে ফ্যাদা।

৪ ১/০১/১৯৮৪

প্যারাম্বুলেটর

‘ম্যয় এক চিংগারি হু......মুঝে কৌন বাঁচায়েগা...... ইস বন্ধ দরওয়াজে সে......’

নয়ডা,৩১/১২/১৯৮৩

যে সময়ের কথা তখন বলিউডের বি-গ্রেড সিনেমায় রামসে রাজত্ব চলছে। রামসেরা দুভাই মিলে একটু হালকা নেড়ে ,চেটে,ঘেটে ভূতঘাম আর চ্যুতকাম দেখিয়ে ফ্যাদায় ফ্যাদায় বাজার গরম করছে। এদিকে, যেহেতু ড্রাকুলার মাগী রক্ত খাওয়ার দৃশ্য দর্শকের মনে ফিকে হয়ে এসেছে। দর্শক তাই এখন শয়নে, স্বপনে, বাথরুমে কামিয়াকে দেখছে আর লম্বা লম্বা ফ্যাদা ফেলছে। বোঝাই যায় কালাপাহাড়ির এই আকেলা’র রাজত্বে ক্রিস্টোফার লি’র ফিরে আসা মুশকিল হি নহী নামুমকিন হ্যাঁয়, ঠিক তখনই দিল্লীর বুকের উপর হালকা ব্রা তুলে মানে নিউ ওখলা ইন্ডাসট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’তে এক কেলো ঘটে গেলো। জায়গাটা অবশ্য দিল্লী-নয়ডা সীমান্ত। মানে অশোকনগরের ওই তখনও প্রবাহিত বিষাক্ত জলা পেরিয়ে খানিক ঝোপ-ঝাড়, এখন যার উপর দিয়ে মেট্রো উঠে গেছে, সেটা পার করেই একটা বছর পাঁচেকের ‘পুনোরাধুনিক’ ফার্মহাউস। শোনা যায় ওটা নাকি সিংহানিয়াদের প্লেজার হাউস। সেই প্লেজার হাউসে সিংহানিয়া ফ্যামিলির সেকেণ্ড ইন ডিমাণ্ড, জয়া সিংহানিয়া ৩১-এর রাতে একটা পার্টি থ্রো করেছিলেন ওর নিজের মেয়ে আলিয়া সিংহানিয়ার বার্থডে-র জন্য। কি ভালো লাগছে না, শুনে অন্তত এটা নিশ্চই মনে হচ্ছে কোনও টিনসেল দুনিয়ার ম্যাট ফিনস ইলাসট্রেশনের উপরে এসে জুড়ে বসেছি টাইপ ব্যাপার। যেখানে সোনু আর আমি হাতে হাত ধরে র‍্যাম্প ওয়াক করবো আর পরদিন এইচটি প্লাসে সে ছবি সাদায়-কালোয় সাটিং করে বেরোবে। কিন্তু ওএমজি, সে আশায় তো সেগুড়ে বালি পুরো। পার্টি শুরু হওয়ার ঘন্টা খানেক বাদে আলিয়া সিংহানিয়া উধাও! ভাবা যায়, বর্জ্রআঁটুনি ফোস্কা গেঁরো কেস তো । শোনা যায় গ্রাউণ্ড ফ্লোরের বাথরুমের দেওয়ালে পূর্ব পরিকল্পনা মত কেউ একজন ৬ ফুট বাই ৮ ফুটের গর্ত খুড়েই রেখেছিল। অন্তত পুলিশের কাছে আশপাশে পাওয়া নমুনা মানে, হাতের ছাপ, গাউনের সুতো, ভাঙা নোখ থেকে সেটা একেবারে জলের মত পরিস্কার যে ওই গর্ত দিয়েই ভিক্টিমকে ফোর্সফুলি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সবাই দ্বিধাহীন হয়ে যায় আরো দুটি ঘটনা মানে তিনটি ঘটনা’র পর।

১। পার্টি অর্গানাইজ করতে আসা ক্যাটারিং দলের সাপ্লাইয়ার ডির্পাটমেন্টের একটি ছেলে মিসিং। ক্যাটারার্সদের ম্যানেজারের বয়ান আর পুলিশের অনুমান অনুযায়ী ছেলেটি ভিকটিম মানে আলিয়া’র টয়লেটে যাওয়ার প্রায় পরপরই বা একই সময়ের মধ্যে সাপ্লায়ার্স কিউবিকল থেকে বেড়িয়ে টয়লেটের দিকে গিয়েছিল।

২। আলিয়াও তখন টয়লেটে ছিল, অন্তত আলিয়ার বেস্টি অনুপমা ভার্গবের বয়ান অনুযায়ী, নিজের ১৮ বছর পূর্তির উপলক্ষ্যে ‘সেলিব্রেট’ করতে, একটা সিঙ্গেল মল্টের পেগ সে এক ঢোকে সাবাড় করে দেয় । কিন্তু খালিপেট বা ভরাপেট যেমনটাই থাকুক না কেনো, একপেগ বিলিতি স্কচ মারলে দুধের শিশুও ক্যালিয়ে পড়বে না। আলিয়ার তো ১৮ বছর ,তাই তারও ফোটকে পড়ার চান্স কম। তাহলে বিচিটা শর্ট হলো কোথায়? কোথায় আবার, ধরা হচ্ছে এই ধরনের কিছু একটা হতেই পারে ধরে নিয়ে সেই সাপ্লায়ার ছোকরাটি পার্টিকুলার একটি সেকশনের গ্লাসে হাইডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল, যেটা অ্যালকোহলের সাথে রিঅ্যাক্ট করে মিডিয়াম রেঞ্জের মরফিনিয়া টাইপ লিকুইড ড্রাগ তৈরী করে... ফলে তখন ভিকটিম...।

৩। টয়লেটের ফ্ল্যাসারের ঠিক নিচে, মানে ফিতে মাপে ১৮০ ডিগ্রী, একটি চিরকুট পাওয়া গেছে যাতে একটা পেন্সিলে আঁকা প্যারাম্বুলেটরের ছবির মধ্যে লাল মার্কার দিয়ে আঁকা হাঁসতে থাকা একটি খুলির নীচে, জিগিস ভাষায় ‘লোলজ’ লেখা।

সেইসময় মিসেস গান্ধী বেঁচে। সুনন্দা পুস্করের সুইসাইড বা নির্ভয়া রেপ কেস দিল্লী দেখেইনি। তাই এরকম ডেন্টেড পেন্টেড টিভি শো টাইপ পি৩ঋ পার্টির রাতারাতি ট্রাফিকিং হ্যাপেনিং-এ বদলে যাওয়াটা কন্সিভ করতে দিল্লী প্রেসের সময় লাগলো বেশ খানিক। অনেকে ভাবলো কেসটা খুব, খুব সাইকো-সাইকো টাইপ, কেউ কেউ ভাবলো কেসটা খুব মরবিড আর কি, আর বাকিরা ভাবলো একটা স্যুররিয়াল অ্যানার্কি’র গন্ধ আছে কেসটার গায়ে। আর টপক্লাস বোকাচোদা, যারা নাকি দেশ চালায় তারা ভেড়ুয়া হয়ে বেশী গভীরে না ঢুকে সিম্প্যাথি আর কন্ডোলেন্স মাড়িয়ে গিয়ে উঠলো চার নম্বর গাঁড়মারানির ঘাটে । তখনও নাইটশো শেষ হতে ঘন্টা খানেক বাকি, তাই রিগালে, ইম্পারিয়ালে সেই শোয়ের দর্শক, তিনটে স্টেশনে গোনা পাঁচেক করে অটো দাঁড়িয়ে, আর গুটি কয়েক লোক কম্বল চাপা দিয়ে কাশ্মীরি গেট, রোহিলা থেকে বাসে উঠছে , তা ছাড়া বাদবাকি গোটা দিল্লী কিন্তু ঘুমোচ্ছে। কেউ দেখে বলতেই পারবেনা, সকাল ৮টার দিকে ঘুম ভাঙার পর রামভজনের সাথে ওবোহেঞ্চোদা খিস্তিটাও মাটরির মতই এদের ভীষণ প্রিয়। এই বাদবাকি দিল্লীর ভেতরে কিন্তু যেমন সিপি-সিএস আছে তেমনই সেই কুখ্যাত খুনি দরওয়াজার মত প্লেজার মানে ফার্ম হাউসটাও আছে। যেখানে রাত সাড়ে তিনটের বুড়ো অন্ধকার কে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দেওয়া সকালবেলার মত আলোতে তখন স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, গোল প্যাসেজ যেখানে ঘন্টা খানেক আগে প্রায় হাজার লোক চিয়ার্স বলেছে , আলিয়া’র ১৮বছর বয়সকে উদ্দেশ্য করে । সেখানটায় সোফার একধারে চুপটি করে বসে সেক্রেটারী ঋতা শ্রীবাস্তব। ভয়ে, টেনশনে ঋতার অজ্ঞান হওয়ার যোগাড় আরকি। অবশ্য অন্য আর একটি প্রাণী তখন ঠিক সেই সময়টাতে বাইরের বড় জানলায় চোখরেখে সাপলুডো খেলার ৯৮ থেকে পড়ে যাওয়া যেমন দেখে তেমন করেই রাতভোরে হাইওয়ের নিস্তব্ধতা দেখছিলেন। ম্যাডামের ডানহাতের মুঠোয় থাকা চিরকুটটা যেন বা ছিড়ে যাওয়ার জোগাড়...

কিন্তু এতো গেলো দিল্লীর দিমাগের ব্যাপার......’দিল ই দিল্লী’ কি পুকার দিচ্ছে তা একটু জানবেন না সেটা হয় নাকি,আবার...

‘বাঁচাও...বাচাওঁ, ম্যায় কালাপাহাড়িকা আমানত কভি নেহী বানুঙ্গা...কভী নেহী......’



৫ ০৩/০৩/২০১২

রাইনোফিভার

সিনেমা বানানোকে লার্স ফন ট্রিয়ের নিজের জুতোর মধ্যে ঢোকা সেই ছোট্ট ক্ষুদে পাথর,মানে যে পাথর জুতোর মধ্যে ঢুকলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁড়ে আঙ্গুলের নীচে গিয়ে পড়লে আঙ্গুলে খচ,খচ করে একটা যন্ত্রণা জাগান দিয়ে ওঠে, ঠিক তেমন একখানা কালো,খাটো খোয়া পাথর কে পা থেকে বের করার ক্র্যাফট বলে মনে করেন। তাঁর ডিপ্রেশন ট্রিলজি দেখলে তাই আপ তক ছাপ্‌প্ন-এর লাস্ট সিনের আগের ফ্রেমে ঘাড় ঘুরিয়ে সাধু আগাসের পিছনে তাকানোর দৃশ্য মনে পড়ে যেতেই পারে। যাই হোক এই পারা না পারার সম্ভবনা ব্যপারটা খুব আর্শ্চযের। মানে, ধরা যাক আমি শিয়ালদা স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি রাত্তির ৯টা ১২’র লোকাল ধরে বাড়ি ফিরব বলে। ঘড়িতে তখন ৯টা ৭বাজে, ৫নং প্ল্যাটফর্মের ঠিক মাথার উপরে থাকা ওয়াচ বোর্ডে তখনও টাইম ট্রেন দেয়নি ।সবাই অধীর অপেক্ষার চাতকের মত দাঁড়িয়ে আছে ঘড়িটার দিকে চেয়ে, এমন সময় দেখলাম ৬নং প্ল্যাটফর্মের ওদিক দিয়ে কবি স্বাগতা দাশগুপ্ত অনেক লাগেজ পত্তর নিয়ে এদিকটায় আসছেন। স্বাগতা দি’র সাথে আমার অনেকদিনের পরিচয় ফেসবুকে। প্রায়ই ইনবক্সে কথা হয় নানা ব্যাপারে। তো এমন এক পরিস্থিতিতে তো অনেক কিছু ঘটতে পারে। যেমনটা পরিচিত মানুষজনকে চোখের সামনে দেখলে ঘটে আর কি, কিন্তু কিছুই আর …মিনিট ৭ এর পর ট্রেন এসে গেলো, ৬নং প্ল্যাটফর্মের দিকেই আমি ছুট লাগালাম তখন। আচ্ছা এই পুরো ঘটনার মধ্যে কেমন একটা নিহিলিজম আছে না। মানে ঘটার কোনও দাবি নেই, কোনও গরজ নেই তবু ঘটনা আছে। অনেকটা বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে কোনও এক অজানা গলিপথ, যেখানে সূর্যের আলো ক্ষীণ হয়ে আসা ধূলোবালি না ঢোকা সেই রাস্তা ধরে সাইকেল পায়ে এগিয়ে যাওয়া। অজানা গন্তব্যে চোখখোলা অন্ধের মত নিশ্চিন্ত যাত্রা।না তাতে কোনও দর্শন নেই এ কথনের মত শুধু ভালোলাগা আছে। এ ভালোলাগা’র ধরণ ও অবশ্য বড় অদ্ভুত। মানে আপনি যিনি পাঠক তিনি কিন্তু শীতের সকালে, বসন্তের বিকেলে বা শ্রাবণের সন্ধ্যায়, গরমের দুপুরে এ কথন পড়ে মজা পাবেন না। তাহলে তো শরৎ কি হেমন্তেও পড়া যাবে না…না না যাবে, যাবে খালি হেমন্তেই পড়বেন। আচ্ছা এই যে এত কথা, এত আধ-কথন, এত ভাবনা সব গড়গড় করে পাঠকের সামনে বলে যাচ্ছি এসব বলার আমি কে? না আমি কেউ নেই। খালি কথাগুলো যেগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে সেগুলো কে এক জায়গায় গুটিয়ে স্ট্যানলি সোমে’র কাছে পাঠিয়ে দেওয়াই আমার কাজ। কাজটা কিছুটা ইন্টারপ্রিটারের মত বলা যেতে পারে। আচ্ছা এসব সবকথার আগে স্ট্যানলিদা’র কাছে যে ব্রিফটা যাবে সেটা একবার ঝালিয়ে নিই চলুন,

১। সৌকর্য কফি হাউসের নিচের লবিতে বসে কফি এণ্ড সিগারেট খাচ্ছে।

২। মেঘজিৎ বাস থেকে নেমে, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েটের স্টপেজ থেকে শাস্ত্রী ভবনের পাশ দিয়ে রওনা হয়েছে ।

৩। মন্দাক্রান্তা যে কিনা থাপ্পড় খেয়ে বিছানায় পড়ে গিয়েছিলো সে উঠে দাঁড়িয়েছে বাড়ির মেঝেতে।

৪। আলিয়া সিংহানিয়া’র নাক বাদে সারা শরীরে লিউকোপ্লাস্ট জড়িয়ে কোম্বলে মুড়িয়ে সেই জিগিস ছোকড়াটি তাকে নিয়ে হরিয়ানা’র দিকে বাসে করে রওনা হয়েছে।

আচ্ছা পাঠক আপনি কখনও ভেবে দেখেছেন, কেউ স্মৃতি সম্বল করে কোনও রহস্য সমাধান করতে পারেন। মানে খানিকটা মিসিং পার্সন টাইপ। মানে, ধরুন আপনি বা আমি দিন পনেরো আগে যেমন স্থিতি, পরিস্থিতি সময় বা কালের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। মানে যে যাওয়াটা থেকে এই সেদিন আপনি বিস্মৃত হয়েছেন, অচানক সেই স্মৃতিটাই ফিরে আসলো আপনার সামনে, ঠিক ফ্রেম বাই ফ্রেম, কথা বাই কথা। বা আপনার কোনও সহকর্মী যে আপনাকে মোটামোটি চেনে সে হঠাৎ-ই আপনার গ্রেট গ্রাণ্ডফাদারের নাম ধরে ক্লাসের ভেতর আপনাকে ডেকে ফেললো। ভাবুনতো ব্যাপারটা,

অনেকটা এই রাইনোফিভারের মত, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে যে ভাইরাসটা আবার ফিরে আসবে। যেজন্য আপনার সর্দি হলে সেটা আর নাক দিয়ে বের হবে না বরং কানে তালা…

এভাবে বহুবছর, বহুযুগ পার হয়ে গেল। সেই হয়তো আছে, হয়তো নেই গ্রন্থটির হদিশ তবু পাওয়া গেলো না। ফলে মানুষের যা স্বভাব, লোকে যেহেতু রহস্যটা কিছুতেই ধরতে পারলো না। সুতরাং একটা সময় তারা বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে ওই হারিয়ে যাওয়া মূল গ্রন্থটিই আসল, ওই ছিল কিন্তু ছিল না বইটিই সেই গোপন উৎস যাকে অনুসরণ করে লুক ও ম্যাথু নিজেদের গস্পেল গুলো রচনা করেছিলেন।

০৬/০৪/২০০৪



৫ ৫টা আত্মহত্যা অপেক্ষা করে আছে। আমি যে সময়টাতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছি, তার আশেপাশের ৫টা দশক। মনে পড়ে রাজমোহন তার বাড়ির দুতলার ঘরে থাকা লাইব্রেরীতে আগুন লাগিয়ে সেদিন বিপ্লব করেছিলেন। সেই দেখে ২০১০ সালে এক ঠিক লেখক না হয়ে উঠতে পারা লেখক উদ্বুদ্ধ হয়ে ,নিজের সমস্ত বই অনুজ পাঠকদেরকে বিলিয়ে দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, আর বই দেখে কিছু না লিখতে, লেখায় তার আস্থা নেই । বরং স্মৃতি ঘেঁটে লেখাতেই তিনি আস্থা রাখতে চান। ব্যাপারটা খুব নতুন ধরনের। অর্থাৎ একটু আড়াআড়ি ভেবে দেখলে এভাবে বোঝা যেতে পারে,

• লেখক যখন এ কথা বলছেন, তার পর থেকেই গ্রন্থিত কোনকিছুর উপরেই যে তার আর কোনও বিশ্বাস/ভরসা নেই তা, মানে এবার তিনি নিজেই নিজের সত্যটা খুঁজে বার করবেন।

• কিন্তু যখন নির্ধারিত সত্যের প্রতি কেউ, কারো অনাস্থা প্রকাশ পায় তখন নিয়ন্ত্রিত সত্য, দর্শন ও যে সবসময় সঠিক হয়ে উঠবে এমন সম্ভবনাও যে অনেক তা বলা যায় না।

• ফলে ভদ্রলোককে স্মৃতি পুনঃনির্মাণের দিকে ঝুঁকতে হবে, এবং সেক্ষেত্রে সেই পুনঃনির্মাণও যে কতটা শুদ্ধ হবে, মানে সেই স্মৃতি পথে যে তিনি স্বপ্নের ওভারব্রিজ তুলে যাদু, যাদু বলে চিৎকার করবেন না, সেটাও ঠিক বলা যায় না।

তো যাই হোক এইমূহুর্তে আমার সামনে যে কেস ফলোআপ অপেক্ষা করে আছে, মানে লেখক যা আপনাদের সাথে আলোচনা করে আমাকে পাঠালেন তা পড়ে বুঝতে পারলাম এই গোটা ঘটনার জট ছাড়িয়ে ফেলতে স্মৃতির সাহায্য আমাকে নিতেই হবে। যাই হোক সে তো নেবো। এবার পরিচয়ের পালা। মানে লেখক আমাকে তেমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন আর’কি। আমি স্ট্যানলি সোম। দিল্লীর চিত্তরঞ্জন পার্কের মার্কেট টু-এর পাশে একখানা পুরোনো আমলের একঘর ফ্ল্যাটে আমার বাস। বয়স সব মিলিয়ে এখন ৫৪। পেশায় গোয়েন্দা। আর এটাই আমার প্রথম কমিশনারেটেড কেস। কি, চমকে গেলেন তো! চমকানোটাই স্বাভাবিক অবশ্য। কেসটার ড্রাইনোট যেদিন আমার পেজারে বিপ সিগ্ন্যাল দিল, সেই শুক্কুরবার রাতে আমি পাহাড়গঞ্জের কাছে ইম্পিরিয়্যাল হলের নাইটশো তে দরওয়াজা দেখছিলাম।

তো যখনই বিপ ম্যাসেজটা ঢুকলো তখন দরওয়াজার সেই বিখ্যাত গথিক রেপ সিনটা আসছে। হঠাৎ ঠাপাতে ঠাপাতে যদি তাল কেটে যায়, ঠিক তখন যেমন অবস্থা হয় তেমন একটা মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে বেরিয়ে এলাম হল থেকে। একদিক থেকে অবশ্য ভালোও হল তাতে করে। না হলে প্যাঁইটটা মিস হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। বাড়ি ফিরেই পেজারে আসা ম্যাসেজটাকে প্রথমে ডিকোড করলাম। ৩০ বছর ধরে প্রাকটিশ করে অবশেষে একটা কেস পেলাম বুঝলেন। ডিপ্লোমা কেস আর কি। কিন্তু গোটা ব্যাপারটার ইন্সিডেণ্টাল মোটিভ ভীষণ ইন্টারেস্টিং বা বলা ভালো ইন্টারেস্টিং খালি নয় একটু সাবভার্সিভ টাইপেরও। মানে নানা সময়ে, নানা দশকে হওয়া ৫টা আত্মহত্যা যেগুলো ঘটার সম্ভবনা একেবারে ১০০ শতাংশ সেগুলোর মধ্যে ৫নং বাদ দিয়ে অন্য যে কোন একটির ঘটা আটকে দিতে হবে আগামী দিন ৫-এর মধ্যে। তাহলেই নাকি চারটি আত্মহত্যা কে খুব সহজেই আটকে দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু যেখানে প্রতিদিন এত লোক মরছে, তাদের মধ্যে কত কত লোক সুইসাইড করছে, কেউ স্বেচ্ছা মৃত্যুকেও গ্রহণ করছে। কই সেসব নিয়ে তো কারো কোনও মাথা ব্যাথা নেই, তবে খালি এই ৫টা আত্মহত্যাতে কার এমন কি ছেঁড়া গেলো? গেলোই তো, না হলে ফুটনোট যেটা পেলাম মানে এই ৫টা সুইসাইডের সঙ্গে নাকি ভীষণভাবে দেশের অর্থনীতি, সমাজ, দর্শন, সমাজেতিহাস জড়িয়ে আছে কি কখনও লেখা থাকতো। মোটেই থাকতো না। মানে রাষ্ট্র মনে করছে এই পাঁচটা সুইসাইড রাষ্ট্রকেও অ্যাফেক্টেড করতে পারে। মানে হিসেব মত এই ৫টা মৃত্যুতে দেশের জিডিপির ওঠা-পড়া থেকে বাজারের চড়াই-উতরাই , শেয়ার-নাসডাক সেনসেক্স সব খ্যায় বারি যেতে পারে একেবারে, ভাবা যায় ৫-৫টা লোক মরে ভূত হয়ে গোট দেশটাকে একেবারে কলা খাইয়ে ছাড়বে… এটা ভেবেই মনে পড়ে গেলো আমার পল সায়েন্সের প্রোফেসর জাভেদ স্যারের গম্ভীর মুখটা। উনি সেদিন ক্লাসে জিঞ্জাসা করেছিলেন, আচ্ছা মানুষ কেনো সুইসাইড করে বলতে পারবে। প্রশ্ন শুনে আমি ভীষণ হালকা ভাবেই উত্তর দিয়েছিলাম-- পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট হয়তো বা। তখন ৬৮ সাল, সিএরা মন্সট্রাতে সবে বিপ্লবীরা ফিদেলের নামে ভিভাধ্বনি তুলে গ্রেনেড শরীর উৎসর্গ করেছেন, আর আমাদের হাতে পাঠ্য বই এর সাথে তখন সবে উঠে এসেছে টোটাল রিভোলিউশান, তাই সেসব আবেগ থেকেই বোধহয় অমন কথা নিমেষে বলে ফেলেছিলাম। অবশ্য প্রতিক্রিয়ায় স্যারের পাথর দৃষ্টি আর আমার পিঠে হাত রাখা ছাড়া কিছুই পাইনি। পরে শুনেছিলাম স্যারের ছোটছেলে ওর ভালো লাগা মেয়েটির অন্য ছেলের সাথে মুম্বাই পালিয়ে যাওয়া মেনে নিতে না পেরে আগের দিন রাত দুটোর সময় রেলে গলা দিয়েছে।

স্পর্শদোষ+খুনি=????



এখন ঠিক এই মূহুর্তে আমি দিল্লীর সবচেয়ে বড় বাড়ি, মিউনিসিপ্যালিটির এমপো টাওয়ারের মাথায় দাঁড়িয়ে আছি। আর কিছুক্ষণ পর হ্যাঁ আমিই প্রথম আত্মহত্যাটা করবো। কারণ, এই কেসটি আসলে সাজানোই হয়েছে স্ট্যানলি সোমের আত্মহত্যাকেই সামনে রেখে। আপনাদের মধ্যে যারা বিলিতি গোয়েন্দা গল্পের ওই লালরঙা মোটা বই এর পোকা, এ ধরনের কেস তারা বহুবার ঘটতে দেখেছেন চোখের সামনে বই-এর পাতায়। যাই হোক হাতে সময় মাত্র মিনিট সাতেক তার মধ্যে গোটা কেসটা আপনাদের বলে যাই। কেসটা হাতে পাওয়ার পর প্রথম যে প্রশ্নটা আমার মনে জেগেছিল তা হল এই ৫নং লোকটি কে। একে যখন খোঁজারই নির্দেশ নেই তার মানে এর উপরেই গোটা কেসের মেরিটটা দাঁড়িয়ে আছে বলা যায়। আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলাম গোটা কেস ফলোআপটাতে সবসময় সুইসাইড শব্দটা যে একই ভাবে লেখা ছিল তা কিন্তু নয়, কখনও সেটা প্রতিষ্ঠানিক হরফে, কখনও বা টাইপড সেন্টসড ফর্মে আবার কখনও কাগজ কেটে। এর কারণ খুজতেই বেশ অবাক হতে হল। যেমন ঐ সৌকর্য-র কেসটাতে সুইসাইড শব্দটা দেখলাম ব্লার সেডেড স্টেন্সিল ডিজাইনে লেখা। ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষণ করতেই বুঝতে পারলাম ২০২৪-এ আত্মহত্যা উচ্ছেদেরও একটা স্টাইল। মানে ২০২৪ সালের ২৪শে আগষ্ট সন্ধ্যে ৬টায় সৌকর্য যখন কফি হাউসে বসে কানে হেডফোন গুঁজে কফি খাবে আর জয়ীর কথা ভাববে ঠিক তার মিনিট ৩-এর ভেতর গোটা কফি হাউসটা পুড়ে খাক হয়ে যাবে। এবং পরদিন জনজীবনকে শান্ত করতে এই গোটা ঘটনা প্রবাহের জন্য কফি হাউসের যারা তত্ত্বাবধায়ক তাঁদেরকেই খবরের কাগজ, আইন-আদালত প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দায়ী করা হবে। এই ঘটনার যারা নেপথ্য কারিগর সেই c3 মানে কামকাপেকফি, প্রায় বছর দশেক যাবৎ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে অবশেষে না পেরে এভাবেই ঘটনাটির নিষ্পত্তি করবেন। কিন্তু ঘটনার গভীরতা অন্যখানে,এই কামকাপেকফিতে সিংঘানিয়া দের স্টেক প্রায় ৭৫শতাংশ। ফলে ঘটনাটিতে ওদের হাত থাকার একটা ভয়ানক চান্স আছে।

আবার মেঘজিতের কেসটায়, ও স্পেকটেটার্স গ্রুপ এণ্ড কোম্পানিজে চাকরিটা পেয়ে যায় এমনকি নেক্সট সপ্তাহে জয়েন করে। জয়েনিং করার পর মাত্র তিনদিন যেতে না যেতেই কোম্পানি মায়ের ভোগে। সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সবে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হবে এমন সময় কোম্পানির কাছ থেকে একটা মেল আসবে মেঘের কাছে তাতে লেখা আছে কোম্পানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে হায়ার অথরিটি। ঠিক তার ২ সেকেণ্ড বাদেই ওর বাবার ফোনটা মা ধরে বলবে গ্রীনভ্যালি নামে এক চিটফাণ্ডে ওর বাবা, তার আয়ের একটা ল্যাম্পসাম অংশ আমানতকারী হিসেবে ইনভেস্ট করেছিলেন। কোম্পানিটা নাকি সিবিআই ব্ল্যাক লিস্টেড ঘোষণা করে সব অ্যাকাউন্ট সিস করে দিয়েছে। এই ঘটনা শোনার পর, সেদিন রাতেই মেঘজিৎ আত্মহত্যা করবে কারণ তার আগে থেকেই ছেলেটি নার্ভাল প্রবলেমে ভুগতো। এই কেসে মোটিভটা কোম্পানি সিক্রেসির, যা সামনে আসলে ব্ল্যাক মানির ব্যাপারটা আরও বেশি সবার সামনে আসতে পারে।

এবার ৪নং, কারণ মন্দাক্রান্তার মৃত্যু নিয়ে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি আর সময় আসলেও এনিয়ে আমি কিছু বলবো না।

সেই জিগিস ছেলে বলে যাকে প্রোজেক্ট করা হচ্ছিল তার আসল নাম হ্যারি পাটিয়াড়। সেদিনের ওই প্যারাম্বুলেটরের মধ্যেই ঘটনার সূত্র লুকিয়ে আছে। অন্তত আমার মেরঠ পাশ সেক্স এণ্ড ভায়োলেন্সের মাথা সে কথাই বলছে। ছেলেটির মধ্যে একটা বাজে জেদ চেপে বসেছিল, যে জেদের বসে সে আলিয়া নামের ওই মেয়েটিকে প্রথমে সিংহানিয়া ম্যানসন থেকেই অপহরণ করে। তারপর মেয়েটিকে বহুবার রেপ করে এবং সেই ছবি কোনও না কোনও ভাবে সংবাদ মাধ্যমের কাছে গিয়ে পৌছয়। সংবাদ মাধ্যম প্রথমে সেটা চেপে গেলেও পরে মানে সান্ধ্য টেবলয়েডে সেই সব ফটো ছাপতে ভুল করেনা। ফলে সান্ধ্য টাইমসের বিক্রি বহুগুণ বেড়ে যায়। অবশেষে কাগজের বিশ্বস্ত সূত্রের ঘুঘুর বাসা ভেঙ্গে যখন পুলিশ গিয়ে আলিয়ার কাছে পৌঁছায়, ঠিক তঁখনই আলিয়া বিষ খেয়েছে। আলিয়ার মৃত দেহের পাশে একটা ফুটফুটে বাচ্চা শুয়ে ছিল তখন। ঠিক তার পরদিনই বিকেলে মিসেস গান্ধী নিহত হন। না পাঠক, বিশ্বাস করুন মাইকায়াট্রি নামের কোনও রোগ আমার হয়নি। তাই এই রহস্য সমাধানের দায়ও তো আমার না, তাই না। আমি শুধু ডিপ্লোমা কেস স্লভার মাত্র। সেই সলিউশন বের করতেই তো সবচেয়ে উচু জায়গাটাতে আমি দাঁড়িয়েছি। কারণ কেসটাই যখন আত্মহত্যার তখন আমাকেও তো মৃত্যু জায়গাতেই দাঁড়াতে হবে তাই না। সেখানে দাঁড়িয়েই এই দেখুন, কেমন অর্ধেকটা খুঁজে দিলাম। বাকিটা আপনারা...

শেষকথা- আমি কিন্তু মৃত্যু কে ভয় পাই না ,বরং মৃত্যু পরিস্থিতি কে ঘেন্না করি।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ