অপরাহ্ণ সুসমিতো
ভ্যান চালায় গয়েজউদ্দি । সকাল সকাল তাকে আজ খ্যাপ নেবার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির উঠানে বসে থাকতে হবে,মেজাজ খারাপের বনিটা সে কারনে । খাকী রঙের একটা দোনলা প্যান্ট পরেছে বলে আজ তার মেজাজ গরম পিচ । লুঙ্গি পরতে তার বরাবর কমফি কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন প্যান্ট পরা ভালো ।
ভ্যান চালাতে জোস। কিসের কি ! বিরক্ত লাগে,খসখস করে । রাগে গয়েজউদ্দি ঘসঘস করে পাছা চুলকায় । সকালে পান্তা ভাত খেতে চেয়েছিল,ভাগে পড়েনি । আসলে তা না । মা সকালে ওকে সাত সকালে পান্তা দিতে চায়নি । ঘুমঘুম করবে পোলা । চেয়ারম্যান বাড়ির ডিউটি আজ । ঘুমঘুম কাজ করলে হবে ?
গয়েজউদ্দি রাগে মুখ ভর্তি করে একদলা থুথু জমায় তারপর ‘হালার পো হালা’ বলে থু থু ছুঁড়ে মারে সামনে । কারপ্রতি কে জানে ? পকেটে সামান্য কয়েক টাকা আছে । চাইলে আলেফ মেয়া’র দোকানে চা বিস্কুট খেতে পারতো । খায়নি । এখন বুঝতে পারছে খাওয়া উচিত ছিল । খাওয়া খাদ্যের সাথে রাগ করন ঠিক না ।
একবার মনে হয় চেয়ারম্যান সাহেব তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি । না কি উঠেছে ? কে জানে ! তারপর উনি দুইখান সিগারেট নিয়ে টাট্টিখানায় ঢুকবেন,সাথে খবরের কাগজ । তারপর বেরিয়ে গলা খক খক করে নিমডাল দিয়ে মিসওয়াক করবেন । এক গামলা গরম ভাত খাবেন দোতলায় বসে । মোবাইলে কার সাথে পুটুরপাটুর করবেন তারপর নিচে নামবেন । ভ্যানে উঠবেন ।
চেয়ারম্যান সাহেবের ডানহাত মোফাক্কারুল মোটর সাইকেল চালায় সব সময় । চেয়ারম্যান সাহেবের পারমানেন্ট ড্রাইভার । মোটর সাইকেলে করেই তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসা যাওয়া করেন । কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রজেক্ট দেখেন । গমের হিসাব কিতাব করেন । কয়েকদিন থেকে মোটর সাইকেল নষ্ট । মেকানিকের দোকানে । তাই এ চরের এলাকায় ভ্যানের ইন্তেজাম ।
কয়েকদিন বৃষ্টি হবার পর মাটি খুব নরম । এ সময়ে পাকা রাস্তা ছাড়া ভ্যান চালানো কঠিন । জান ঝিলিক মেরে বেরিয়ে আসতে চায় ভ্যানের প্যাডেলে চাপ দেয়ার সময় । গয়েজউদ্দির মুখে আবার থুথু জমা হয় । বুঝতে পারে খিদেটা জানান দিচ্ছে,পেটে ফুয়েল দরকার । ভাবল চেয়ারম্যান নামনের আগে এক দৌঁড়ে আলেফ মেয়া’র দোকান থেকে কিছু খেয়ে আসবে কি না । আবার ভয় করছে এর মধ্যে যদি চেয়ারম্যান দোতলা থেকে নাইমা আসে ! যদি তখন গয়েজউদ্দিরে না পায় ভ্যানে !
আবার ওয়াক করে থুথু ফেলতে যাবে তখনি ধুলোর মতো বৃষ্টি শুরু হয় । শরতকালের বৃষ্টি,মেয়েদের মাসিকের মতোন । জানান দিবে মাস ধরে থাকবে তিন চারদিন । গয়েজউদ্দি’র মেজাজ আরো টং হতে থাকে । গামছা খোঁজে মাথায় দেবে বৃষ্টি বাচাঁবার জন্য । একসময় নিজেই নিজের থুথু গিলে ফেলে ।
গলা খাকারির শব্দ শুনতে পায় বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে । ছাতা মাথায় ফোলা চোখ নিয়ে ঘ্রাণওয়ালা সিগারেট টানতে টানতে চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে আসছেন । চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে ব্যাগ নিয়ে ছাতা ধরে থাকা মোফাক্কারুল । চেয়ারম্যান সাহেব কুঁতকুঁতে চোখ নিয়ে গয়েজউদ্দি’র দিকে তাকান । গয়েজউদ্দিন খিদে পেটে বৃষ্টি মাথায় ভ্যানের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ায় । ১৬/১৭ বছরের নওজোয়ান । চেয়ারম্যান সাহেব গয়েজউদ্দিকে ঠিক চিনতে পারেন না ।
তারপর পাত্তা না দেবার ঢঙে ভ্যানের পাশ দিয়ে রেডি হন উঠে বসবেন বলে । ওঠার সময় ইচ্ছে করেই কি না জোরে শব্দ করে গ্যাস ছাড়েন । শরতের বৃষ্টি ছাপিয়ে ধ্বনি । মোফাক্কারুলের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই,ছাতাটা বাগিয়ে আছেন চেয়ারম্যানের মাথার উপর । গয়েজউদ্দি এসবে অভ্যস্ত কিন্তু আজ সে রাগে মুখ ফিরিয়ে রাখে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে ।
প্রস্তুত সে । সাহেব বসলেই রওয়ানা দেবে । চেয়ারম্যান বসতে বসতে এবার ঢেকুর তোলেন,সদ্য খেয়ে আসা গরম ভাতের আয়েশ ছড়িয়ে ।
গয়েজউদ্দিন ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে ভ্যানের সিটে উঠে চালানোর জন্য প্যাডেলে পা দিতেই চেয়ারম্যান সাহেব আরাম আরাম গলায়,চোখ প্রায় বন্ধ করে ওকে জিজ্ঞেস করে । ফ্যাসফ্যাসে গলা,শুনলে মনে হবে নিজেই কেশে নিজের গলা পরিস্কার করি । : ও মনু ভ্যান চালাইতারো ?
গয়েজউদ্দি জবাব দেয় না । চেয়ারম্যান এবার খ্যাকখ্যাক হাসির ঢেউ তুলে আবার বলেন--মনু ধোন টোন শক্ত হইছে তো ? চালাইতে পারবা ? কতা কও না ক্যা ?
গয়েজউদ্দিন মূহুর্তে চালকের আসন থেকে নেমে পড়ে । সোজা হয়ে দাঁড়ায় মাথা নিচু । নড়ে না । মোফাক্কারুল মহা চিৎকার করে ওঠে-- এ হালার পো হালা,থামলি ক্যা ? চল । গয়েজউদ্দি মাথা নিচু করেই জবাব দেয়; : যামু না । খিদা লাগছে ।
শরতের বৃষ্টি কমে এসেছে আচানক । বরিশাল-ফরিদপুর সড়কে বিআরটিসি’র মেরুণ রঙের একটা দ্রুতগামী বাস যাবার শব্দ কানে ভেসে আসে । গয়েজউদ্দি’র ঠোঁটের কোণায় আলতো এক চিলতে হাসি ঢেউ তুলে মূহুর্তে মিলিয়ে যায়,কেউ দেখে না । গয়েজউদ্দি’র মুখে আবার থুথু জমে খিদে’র জ্বালায় । এবার সে মুখ ঘুরিয়ে পাশের কাঁচা রাস্তার জমিনে শব্দ করে থুথু ফেলে । থু !
ভ্যান চালায় গয়েজউদ্দি । সকাল সকাল তাকে আজ খ্যাপ নেবার জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির উঠানে বসে থাকতে হবে,মেজাজ খারাপের বনিটা সে কারনে । খাকী রঙের একটা দোনলা প্যান্ট পরেছে বলে আজ তার মেজাজ গরম পিচ । লুঙ্গি পরতে তার বরাবর কমফি কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন প্যান্ট পরা ভালো ।
ভ্যান চালাতে জোস। কিসের কি ! বিরক্ত লাগে,খসখস করে । রাগে গয়েজউদ্দি ঘসঘস করে পাছা চুলকায় । সকালে পান্তা ভাত খেতে চেয়েছিল,ভাগে পড়েনি । আসলে তা না । মা সকালে ওকে সাত সকালে পান্তা দিতে চায়নি । ঘুমঘুম করবে পোলা । চেয়ারম্যান বাড়ির ডিউটি আজ । ঘুমঘুম কাজ করলে হবে ?
গয়েজউদ্দি রাগে মুখ ভর্তি করে একদলা থুথু জমায় তারপর ‘হালার পো হালা’ বলে থু থু ছুঁড়ে মারে সামনে । কারপ্রতি কে জানে ? পকেটে সামান্য কয়েক টাকা আছে । চাইলে আলেফ মেয়া’র দোকানে চা বিস্কুট খেতে পারতো । খায়নি । এখন বুঝতে পারছে খাওয়া উচিত ছিল । খাওয়া খাদ্যের সাথে রাগ করন ঠিক না ।
একবার মনে হয় চেয়ারম্যান সাহেব তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি । না কি উঠেছে ? কে জানে ! তারপর উনি দুইখান সিগারেট নিয়ে টাট্টিখানায় ঢুকবেন,সাথে খবরের কাগজ । তারপর বেরিয়ে গলা খক খক করে নিমডাল দিয়ে মিসওয়াক করবেন । এক গামলা গরম ভাত খাবেন দোতলায় বসে । মোবাইলে কার সাথে পুটুরপাটুর করবেন তারপর নিচে নামবেন । ভ্যানে উঠবেন ।
চেয়ারম্যান সাহেবের ডানহাত মোফাক্কারুল মোটর সাইকেল চালায় সব সময় । চেয়ারম্যান সাহেবের পারমানেন্ট ড্রাইভার । মোটর সাইকেলে করেই তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসা যাওয়া করেন । কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রজেক্ট দেখেন । গমের হিসাব কিতাব করেন । কয়েকদিন থেকে মোটর সাইকেল নষ্ট । মেকানিকের দোকানে । তাই এ চরের এলাকায় ভ্যানের ইন্তেজাম ।
কয়েকদিন বৃষ্টি হবার পর মাটি খুব নরম । এ সময়ে পাকা রাস্তা ছাড়া ভ্যান চালানো কঠিন । জান ঝিলিক মেরে বেরিয়ে আসতে চায় ভ্যানের প্যাডেলে চাপ দেয়ার সময় । গয়েজউদ্দির মুখে আবার থুথু জমা হয় । বুঝতে পারে খিদেটা জানান দিচ্ছে,পেটে ফুয়েল দরকার । ভাবল চেয়ারম্যান নামনের আগে এক দৌঁড়ে আলেফ মেয়া’র দোকান থেকে কিছু খেয়ে আসবে কি না । আবার ভয় করছে এর মধ্যে যদি চেয়ারম্যান দোতলা থেকে নাইমা আসে ! যদি তখন গয়েজউদ্দিরে না পায় ভ্যানে !
আবার ওয়াক করে থুথু ফেলতে যাবে তখনি ধুলোর মতো বৃষ্টি শুরু হয় । শরতকালের বৃষ্টি,মেয়েদের মাসিকের মতোন । জানান দিবে মাস ধরে থাকবে তিন চারদিন । গয়েজউদ্দি’র মেজাজ আরো টং হতে থাকে । গামছা খোঁজে মাথায় দেবে বৃষ্টি বাচাঁবার জন্য । একসময় নিজেই নিজের থুথু গিলে ফেলে ।
গলা খাকারির শব্দ শুনতে পায় বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে । ছাতা মাথায় ফোলা চোখ নিয়ে ঘ্রাণওয়ালা সিগারেট টানতে টানতে চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে আসছেন । চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে ব্যাগ নিয়ে ছাতা ধরে থাকা মোফাক্কারুল । চেয়ারম্যান সাহেব কুঁতকুঁতে চোখ নিয়ে গয়েজউদ্দি’র দিকে তাকান । গয়েজউদ্দিন খিদে পেটে বৃষ্টি মাথায় ভ্যানের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়ায় । ১৬/১৭ বছরের নওজোয়ান । চেয়ারম্যান সাহেব গয়েজউদ্দিকে ঠিক চিনতে পারেন না ।
তারপর পাত্তা না দেবার ঢঙে ভ্যানের পাশ দিয়ে রেডি হন উঠে বসবেন বলে । ওঠার সময় ইচ্ছে করেই কি না জোরে শব্দ করে গ্যাস ছাড়েন । শরতের বৃষ্টি ছাপিয়ে ধ্বনি । মোফাক্কারুলের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই,ছাতাটা বাগিয়ে আছেন চেয়ারম্যানের মাথার উপর । গয়েজউদ্দি এসবে অভ্যস্ত কিন্তু আজ সে রাগে মুখ ফিরিয়ে রাখে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে ।
প্রস্তুত সে । সাহেব বসলেই রওয়ানা দেবে । চেয়ারম্যান বসতে বসতে এবার ঢেকুর তোলেন,সদ্য খেয়ে আসা গরম ভাতের আয়েশ ছড়িয়ে ।
গয়েজউদ্দিন ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে ভ্যানের সিটে উঠে চালানোর জন্য প্যাডেলে পা দিতেই চেয়ারম্যান সাহেব আরাম আরাম গলায়,চোখ প্রায় বন্ধ করে ওকে জিজ্ঞেস করে । ফ্যাসফ্যাসে গলা,শুনলে মনে হবে নিজেই কেশে নিজের গলা পরিস্কার করি । : ও মনু ভ্যান চালাইতারো ?
গয়েজউদ্দি জবাব দেয় না । চেয়ারম্যান এবার খ্যাকখ্যাক হাসির ঢেউ তুলে আবার বলেন--মনু ধোন টোন শক্ত হইছে তো ? চালাইতে পারবা ? কতা কও না ক্যা ?
গয়েজউদ্দিন মূহুর্তে চালকের আসন থেকে নেমে পড়ে । সোজা হয়ে দাঁড়ায় মাথা নিচু । নড়ে না । মোফাক্কারুল মহা চিৎকার করে ওঠে-- এ হালার পো হালা,থামলি ক্যা ? চল । গয়েজউদ্দি মাথা নিচু করেই জবাব দেয়; : যামু না । খিদা লাগছে ।
শরতের বৃষ্টি কমে এসেছে আচানক । বরিশাল-ফরিদপুর সড়কে বিআরটিসি’র মেরুণ রঙের একটা দ্রুতগামী বাস যাবার শব্দ কানে ভেসে আসে । গয়েজউদ্দি’র ঠোঁটের কোণায় আলতো এক চিলতে হাসি ঢেউ তুলে মূহুর্তে মিলিয়ে যায়,কেউ দেখে না । গয়েজউদ্দি’র মুখে আবার থুথু জমে খিদে’র জ্বালায় । এবার সে মুখ ঘুরিয়ে পাশের কাঁচা রাস্তার জমিনে শব্দ করে থুথু ফেলে । থু !
লেখক পরিচিতি
অপরাহ্ণ সুসমিতো
কবি। গল্পকার।
কানাডাপ্রবাসী।
কানাডাপ্রবাসী।
3 মন্তব্যসমূহ
খিদা - ভুখ - মানুষ বা প্রাণী...
উত্তরমুছুনআপনার লেখা বড়ো খোঁচা মারে।
শ্রাবণী দাশগুপ্ত।
পরেরটুকু কি? খেতে পেরেছিল ও? নাকি চেয়ারম্যান এর থেকে কোন শাস্তি পেয়েছিল?
উত্তরমুছুনমনে হচ্ছে সচক্ষে দেখছি। অদ্ভূত গাঁথুনি, আকর্ষনী কথা বলার ভঙ্গি।
উত্তরমুছুন