যুথবদ্ধতার চুক্তিগুলো সব শারীরিক ও মানসিক সম্পর্কের জালে আটকে পড়ার খেলা। এর তিক্ততা বা মুক্ততা নির্ভর করে পারষ্পরিক বুদ্ধির সমঝোতার উপর। নারীর বুদ্ধিদীপ্ততা বরাবরই ভয়ংকর; পুরুষকে ছাপিয়ে যাওয়াতো রীতিমত অপরাধ। প্রতিনিয়ত বিলুপ্ততা, নিম্নগামী হয়ে থাকা, আনুপাতিক সীমারেখা বা সুবিভাজনের বিবেচনা নেই। সমাজ সংসার, ধর্ম, সবই কোথায় যেন বেসামাল, অসাম্যের টাল। আর ইশ্বরের সাথে চুক্তিটা মধ্যস্থতার। চাওয়া বা পাওয়ার হিসাব নিকাশটা ঢিলেঢালা, তিনিতো কত কিছুই চান, কতকিছু দেন, কিন্তু কতটা তার দৃশ্যমান, অথবা প্রশ্নের সম্মুখীন????
আমি যাকে চাই তাকে নিজের মতন করে চাই। যে আমাকে চায় সেও তার মত করে চায়। কেউবা চুক্তিবদ্ধ বিয়ের সূত্রে। কারো বা জন্মসূত্রে যূথবদ্ধতা। কেউ ভাবেনা কেন এই চুক্তি? কেন এই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের চাপ? আমি যদি লাল পানি পান করি, নেশা করি, এই সিদ্ধান্ত আমার। আমি যদি লাল জামা পড়ি সেই সিদ্ধান্তও আমার। কারো ভালো লাগা মন্দ লাগার হিসেব কষতে গেলে গোলামী করেই জীবন পাড় হয়ে যাবে। আর না করলে সমাজ সংসারের বিরোধিতা করছি, এই মর্মে সমাজ ছাড়া হতে হবে।
আমাদের বাড়ীতে সবসময়ই বৃক্ষের প্রাধান্য ছিল। বাগান থাকার দুটো কারন হতে পারে। এক, মানুষের চেয়ে গাছের সাথে হ্রদ্যতা অনেক সহজ। ইচ্ছে মত নাড়া যায়, জলছায়ায় বেড়ে ওঠে গাছ, অভিযোগ করেনা, মধ্যবিত্তরা অভিযোগ ভয় পায়। সেই বাড়িটার ছোটখাট সামান্য বাগান, চাপা ইটের মলিন দেয়ালে ঝুলে থাকা বিলাসী ফুল আর তার ফাঁকে ছোট্ট করে লেখা 'স্বান্তনা'। বানান বিভ্রাট মনে করে কতনা দিন পাড় করেছি। মধ্যবিত্ত বানান সচেতনতার পাহাড়। লেখাপড়া করো, ডিকশনারী মুখস্ত করো, এটাই একমাত্র সম্বল, আর কিছু নেই তোমাদের। কার্ল মার্ক্স-টার্ক্স করে কিচ্ছু হবেনা। সমাজে একদল আরেক দলকে আষ্টেপৃষ্ঠে শোষন করবে, এটাই স্বাভাবিক নিয়ম বলে মেনে নাও। আর যারা মধ্যবিত্তের দল, তারা কোথাও নেই, গরীব মানুষের বিস্কুট কটকটে স্বাদ, আর গরম সূপ একেবারে বেহজম।
যখন কাউকে কিছু দিতে চাই, হিসেব করি আগে, কতটা দেয়া উচিত। বিনিময়ে ফেরত পাবো কতটুকু? যদি খুব বেশী কিছু না পাই তবে অন্যত্র যেথায় পাওয়া যায় সেইখানে পূজি করাই ভালো।
জীবনের কোথায় যেন কোনকিছু ঠিকঠাক মিলছেনা। ডিপফ্রিজে সেল ফোনটা ঢুকিয়ে রেখে সারা বাড়ি খূঁজে ফিরছি। বিছানায় শুতে গিয়ে দেখি, পায়ে স্যান্ডেল। নিজেকে প্রশ্ন করছি, 'তুই ঠিক আছিসতো?' নাকি নিজের সংগে নিজের ক্ষমতার চুক্তিটাও বিট্রে করছে। একবার মন বলছে, 'আমি পারি', আমাকে পারতেই হবে! আবারই পরপর দেখছি, 'বেচারা দিশেহারা' 'বরবাদ'! পাহাড় ভেঙে নেমে আসে ঘুম, নিস্তব্ধ বাতাস; এইসব বেঁচে থাকার কোন মানে হয়না। আমরা যারা নিজেদের আলোকিত সূর্যফুল বলি, তারাই অন্ধকারে কাটাই সারাটাকাল।
দেশের অবস্থা ভালো নেই। দখলদার এবং শ্রমিক শ্রেনীর দ্বন্দ অবসানে নিজের কি অবস্থান হতে পারে, সেই নিয়ে ভেবেছি অনেক...ভাবতে ভাবতেই জীবন চলে গেল...কখনো কোন সুস্থ চিন্তার পরিবেশ দেখিনি, নিরপেক্ষ বলে কোন 'শব্দ' নেই আমার ডিকশনারীতে। প্রতিটা মানুষ 'বায়াসড'...প্রতিটা দল বায়াসড' এবং এটাই একটি স্বাভাবিক দৃশ্য। প্রশ্ন করি নিজেকে...'জন্মটা যেখানে খুব স্পষ্ট ছিল', সেখানে কিভাবে এইরকম ধোঁয়াশা অবস্থানে নিয়ে এসে দাঁড় করালে..!!! কে বা কারা এর জন্যে দায়ী ছিল? কোথায় গেল সেইসব শ্রেনীচেতনা! কোথায় দেশপ্রেম!!! কোথায় আদর্শ!! কোথায় মমত্ববোধ!! ...
দেশে আমার অনেক বন্ধু ছিল; বিদেশেও আছে। বন্ধুত্বের বিনিময়সূত্রতা। একই সঙ্গে তারা ইর্ষাকাতর, লোভী, ভঙুর এবং অমানবিক। যদি দিতেও চায়, হিসেব করে তার দ্বিগুন। কাকে তেল দিলে বেগুন ভাজাটা তুখোড় হবে, এই হিসেব টনটনা। দাওয়াতের লিস্ট কাকে রাখা হবে, কাকে বাদ দিতে হবে, কোথায় গেলে স্ট্যাটাস ঠিক থাকবে; তা সে ভালই হোক আর মন্দই হোক...সেই বিচার অহেতুক। বলতে পারেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমাদের ? কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই পরগাছা গুল্ম লতা...কে জানে!
আমার এক বন্ধু ভাল লেখে। আমি তার লেখার ভক্ত। ওর যে কোন লেখায়ই আমি লাইক দেই। সময় নিয়ে পড়ি। বিনিময়ে সে একটিও কমেন্টস করেনা। যেন দুনিয়ার সব ভাল মন্তব্য পাবার যোগ্যতা সে একাই রাখে???? সে কোন রাজবংশে জন্মেছে? কি তার ইতিহাস? কিসের অহংকার মানুষের? বলতে পারেন?
আজ আমি এই মর্মে দস্তখত দিয়ে গেলাম, এই জাতি হারামখোর, স্বার্থপর।
কি করে বদলে গেল ভাষা আন্দোলন? মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস?? কেন বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেও পালিয়ে বেড়ালো দেশপ্রেম। কিছুই কি দিতে পারেনি দেশ আমার? নাকি ঘুনে মরচে পড়া আসবাব হয়ে গ্যাছে সকল অনুভূতি। নাকি মানুষের বিবেকবোধ লোপ পেতে পেতে লোপাট হয়ে গ্যাছে সভ্যতা।
যদি পারেন, আমাকে একটা স্বান্তনার সূত্র দিন।
লেখক পরিচিতি
মৌসুমী কাদের
জন্ম : ময়মনসিং। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী।
কবি। গল্পকার। সুরকার। সঙ্গীত শিল্পী
0 মন্তব্যসমূহ