ময়ুখ চৌধুরী এর অনুগল্প - অন্য ট্রেন

                                                                              
আজ বৃহস্পতিবার। কালপরশু দু’দিন ছুটি। প্লাটফর্ম গিজগিজ করছে। গুঞ্জন। কোলাহল। ঠেলাঠেলি। টুকরো টুকরো কিছু কথা। উড়ে আসছে। কথাগুলোর অন্য রকম মানে বানিয়ে বানিয়ে সময় কাটাচ্ছে সারোয়ার। - ‘এর চেয়ে বাস ভালো ছিলো।’‘ট্রেন পাই না পাই , টিকেট তো পেয়েছি।’ তা হলে কবে আবার দেখা হচ্ছে।’ ইত্যাদি।


হঠাৎ রিংটোন। পকেটে হাত দিতে গিয়েও থেমে যায় সরোয়ার। একই সাউন্ড , কিন্তু অন্য কারো। নয়দশ বছর আগেও এতো লোকের হাতে মোবাইল ছিলো না। লোকজন বেড়েছে। রিকশাও। তারপরও এই মফস্বল শহরের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুপুরের রোদে পুকুরগুলো আগের মতোই টলমল করে। শুধু , উল্টোদিকের প্লাটফর্মে বসে থাকা পাগলিটাকে আর দেখা যায় না।


সারোয়ারের প্রমোশন হয়েছে। মাস কয়েক আগে , বদলি হয়ে আবার আগের কলেজে। ভিক্টোরিয়ায়। বাংলা পড়ায় সে। আবার রিংটোন। এবার তারটাই। এককান চেপে অন্য প্রান্তের কথা শোনার চেষ্টা করছে। ‘ আমি প্লাটফর্মে , .. শোনা যাচেছ না। ’ ‘ তিন্নি কথা বলতে চায়। ... নাও , বাপির সাথে কথা বলো।’...

হঠাৎ ধাক্কা লেগে মোবাইলটা ছিটকে পড়লো। একজন বেপরোয়া যুবক উৎকণ্ঠ ছুটে যাচ্ছে। নিবে গেলো তিন্নির ছবি। স্ত্রীর কণ্ঠস্বর। সারোয়ারের আগেই এক মহিলা ওটা কুড়িয়ে নিলো। ‘নিন স্যার ; আপনার সংসার। ’ ‘ আরে , কবিতা না!’ ‘ওটা আমার ডাক নাম, ভালো নাম শকুন্তলা সেন।’ ‘ জানি , জানি। তা কী করছো আজকাল?’ ‘আপনি ভালো আছেন স্যার?’শকুন্তলা সকলের প্রিয় ছাত্রী ছিলো। সারোয়ারের একটু বেশি।তাই,ফশ্ করে বলেই ফেললো ‘ তা কেথায় বিয়ে হলো?’ ‘ আপনাকে একটা কথা বলবো স্যার?’ শকুন্তলার চোখ দুটো আগের মতোই, কালো,চকচকে,গভীর। অনুমতির অপেক্ষা না করেই বললো ‘ আপনি কি এখনো কবিতা পড়ান?...আমার অনুরোধ, অন্তত বনলতা সেন পড়াবেন না ।’

হঠাৎ লেকজনের হুড়োহুড়ি আড়ম্ভ হলো। ট্রেন এসে গেছে।পায়ের কাছে রাখা ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ফিরে দেখলো ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেছে কবিতা , মানে শকুন্তলা সেন। সারোয়ার খেয়াল করেনিÑ শকুন্তলার কপালে সিঁদুর ছিলে না, হাতে শাঁখা ছিলে না। অন্য মনস্কভাবেই ট্রেনে উঠেই সারোয়ার টের পেলো সে অন্য ট্রেনে উঠে পড়েছে।






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ