শেষপর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে মার্কেটিং-এ বেরলে ছলিমুল্লা খেয়াল করতে পারে তার মেয়ে কী-রকম ভাবে কসমেটিক্সের দোকানে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেরি বিয়ের মালপত্তর গচাচ্চে। সে ল্যাকমের লিপস্টিক দেখে, আইলাইনার কেনে, অসভ্যের মত সেন্টের গন্ধ শোঁকে, আবার অকারণেই হেসে ফেলে; এবং চুকুচুকু হাসিতে লিপস্টিকের কালারশেড পরখ করতে চাইলে ছলিমুল্লা মেয়ের এইসব নখরাবাজিতে অভিভূত হয়ে পড়ে।
ঠিক এই সময়, আসরাফ গাজি ৩ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনে ঘরে ফিরছিল। তরমুজটা আচমকা প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেঁসে রাস্তায় আছাড় খেলে সে অর্থাৎ ছলিমুল্লা এবং তার মেয়ে অর্থাৎ নাফিসা, দুজনে একসঙ্গে, বাপ-বেটিতে মিলে রাস্তার উপর থোকথোক, লাল লাল মাংসের মত অমন বেশরম ও রসালো ফলের ছ্যাতরানো কারুকার্য দেখে পরস্পরের দিকে তাকায়। ওদিকে আসরাফ গাজিও ততক্ষণে সাইকেল থেকে নেমে এসে প্রকৃত কালাকারের মত তরমুজটিকে মেধাবি আদাব জানাচ্ছিল। কিন্তু নাফিসা বা ছলিমুল্লার সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তারা তা খেয়ালও করেনি। উপরন্তু বিয়ের ২ দিন আগে মেয়েকে আরও একবার যখন সে চন্দনা বিউটি পার্লারে ফেসিয়াল করাতে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক এইখানটাতেই, নাফিসা হোঁচট খেয়ে চটির ফিতে ছিঁড়ে ফেলায় তারা ফ্লাইওভারের নিচে মুচির জন্য তালাশ চালিয়ে ছিল।
সেইদিনও আসরাফ গাজি ৩ কেজি ওজনের তরমুজ কিনে ঘরে ফিরছিল। বলাবাহুল্য, সেইদিন আসরাফ গাজি তরমুজটি নিয়েই ঘরে ফিরেছিল।
অবশেষে প্লাটফর্মের কাছে মুচির সন্ধান পাওয়া গেল। এখন নাফিসা চটিটা মুচিকে দিয়ে নিজে একখানা ১০ নং স্যান্ডেলে পা গলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছলিমুল্লা মাঝে মাঝেই মুচিকে তাগাদা দিচ্ছে। মুচি তাকে পাত্তা না দেওয়ায় সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে খুচরো পয়সার ঝুনঝুন আওয়াজ তুলছে।
আসুন পাঠক, আমরা নাফিসা আর ছলিমুল্লাকে আরও কিছুক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দিই। আর এই সুযোগে, খানিক আগে ব্যবহৃত ‘নখরাবাজি’ শব্দটার ভেতর সজ্ঞানে ঢুকে পড়ি।
যে-কোন গল্পে এমন কতকগুলি সূত্র থাকে যা-দিয়ে আমরা গল্পটির ভেতর ছানবিন চালাতে পারি। সূত্রগুলিকে আয়ত্তে আনতে পারলে পাঠক তখন ইস্ত্রিঅলার মতন গল্প মায় চরিত্রগুলিকে টেবিলে ফেলে প্রয়োজনীয় ভাঁজ তুলতে পারে। এখানে ‘নখরাবাজি’ শব্দটিও তেমনি। এই শব্দটির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু মানুষের লড়াই ও বলিদানের ইতিবৃত্ত।
অতএব, আর দেরী নয়, নখরাবাজি শুরু করা যাক।
তো, যতটুকু জানা যায়, ছলিমুল্লার বাপ নজিমুল্লা ১৯৬৬ সালের ১০ই মার্চ আগরপাড়ার তেঁতুলতলায় কী-এক কারণে, ধরা যাক, দোস্তের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেছিল। সেইদিনই সে বিটি রোডের উপর দাঁড়িয়ে থেকে, সফেদ সার্টের নিচে চোঙা প্যান্ট পরে, জীবনে প্রথমবার ব্যারিকেড দেখেছিল।
ঠ্যালা গাড়ি, ড্রাম আর লোহার পাইপ দিয়ে ব্যারিকেড বানানো হয়েছে।ব্যারিকেডের ওপাশে পুলিশ। পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। এপাশে যতসব পেটরোগা, লুম্পেন, বস্তিবাসি আধলা আর রড নিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে।
এইসবের মাঝখানে এসে পড়ে নজিমুল্লা প্রথমে ভিরমি খেয়ে যায়। কী করবে বুঝে উঠতে পারেনা। তার বুকের ভেতর থেকে ধ্বক ধ্বক শব্দ বের হয়। হাত-পায়ে যেন ঝিঁঝিঁ ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে। সে হাঁটতেও পারে না।
নজিমুল্লা রংচটা দেয়ালে ‘যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস’ লেখা দেখে। ফুটপাথে ইলেকট্রিকের ছেঁড়া তার ঝুলছে। তার নাকে টায়ার পোড়ার গন্ধ এল। আর কী আশ্চর্য, সে ততক্ষণে কীভাবে যেন গলির ভেতর সেঁধিয়ে যেতে পেরেছে।
আশপাশের কোন দোকানপাট খোলা নেই। গলির উল্টোদিকে দু-তিনজন বড় রাস্তার দিকে উঁকি দিচ্ছে। আচমকা কে চেঁচিয়ে উঠল। কারা সব স্লোগান দিচ্ছে, সে শুনতে পেল। সে চোখ কচলায়। দু-চোখ জ্বালাজ্বালা করছে। টিয়ার গ্যাস? সে চমকে উঠল। গলির শেষদিকে ক’জনকে টিউবওয়েলে মুখ ধুতে দেখে সে সেদিকেই দৌড় লাগাল।
তার ধবধবে সার্ট দেখে একজন জানতে চাইল, নতুন?
সে মাথা নাড়াল।
কোত্থেকে?
সে কি উত্তর দেবে বুঝতে পারেনা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে খালি।
তারা চলে গেলে সে যেন কিছুটা ধাতস্থ হল। এখন আর আগের মত চিৎকার শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-চারটে স্লোগান উঠছে। তারপর আবার সব চুপচাপ।
সে উপরে তাকায়। দুতলা-তিনতলা থেকে লোকজন রাস্তার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। যেন তারা টিকিট কেটে মরণকূপে মোটরবাইকের কেরামতি দেখতে এসেছে, শালা! সে কেমন রেগে ওঠে। আশপাশে কোথাও আধলা আছে কিনা খোঁজে। আবার খুঁজতে খুঁজতে এমনিই ভেবে ফেলে, এতসবে দোস্তের বাড়ি পৌঁছব কীভাবে?
তখনি তীক্ষ্ণ শব্দে তার কান-মাথা ঝাঁঝিয়ে উঠল। কানের ভেতর, মগজের ভেতর একটানা চিঁই-ই... শব্দ হচ্ছে। গলির মধ্যে একগাদা লোক ঢুকে পড়েছে। যে যেখানে পারে ছুট লাগিয়েছে। তার সামনেই একজন আছাড় খেল। সে তবু কোন শব্দ পেল না।
নজিমুল্লার পায়ে আবার ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে। সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি সব মোচর দিয়ে উঠল। সে কিছুতেই বেগ থামাতে পারছে না। সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে নিল।
এখন, সিনেমার লাস্ট সিনের মত এই ক্লাইমেক্সে এসে তবে কি সে প্যান্টেই হেগে ফেলবে? নিজের জন্যই নিজে আফশোস করে নজিমুল্লা। এখনও তার কানে তালা লেগে রয়েছে। বাইরের কোন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। তবু, বুঝি কোন দায়বদ্ধতা থেকেই, সে কোনরকমে রাস্তা থেকে দু-চারটে ঢিল কুড়িয়ে নিয়ে এই বন্ধ দোকানপাটের মাঝখানে, এই মানুষজনের পালিয়ে যাবার মাঝখানে একজন একস্ট্রা অভিনেতার মতই, তার আর কিছুই করার নেই, এইটুকু ভেবে, কোনক্রমে মাথা নিচু করে উবু হয়ে বসে পড়ে। বসে বসে কেঁদে যায় খালি।
১০ই মার্চ বন্ধের দিনে আগরপাড়ার তেঁতুলতলা অঞ্চলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল ৪ জন মানুষ। বাড়ির বারান্দায় বসে গুলিবিদ্ধ হল ইয়ান আব্রাহাম নামে ছ বছরের একটি বালকও।
পরের দিন এই খবর শুনে ঘরে ফিরেও নজিমুল্লা ভাবতে থাকে, সেই যে সে যখন উপরে তাকিয়ে ছিল, দুতলা তিনতলা থেকে ঝুঁকে পড়া মানুষজনের ভেতর সে কি একঝলকও ইয়ান আব্রাহামকে দেখতে পাইনি? সে নিজের অজান্তেই ইয়ান আব্রাহামের পিছু করতে শুরু করে। কিন্তু একজন মুর্দাকে সে ফলো করবে কোন উপায়ে? সঠিক উপায় নজিমুল্লার জানা ছিল না।
ফলে নজিমুল্লা নয়; ছলিমুল্লাই বাপকে ডিঙিয়ে ইয়ান আব্রাহামের হদিশে গোপণে বেরিয়ে পড়েছিল একদিন!
এমনও হয়েছে রেশনের চাল থলিতে ভরে থলির ভেতর ক্যালানের মত তাকিয়ে থেকেছে সে। তার মনে হয়েছে, চালের প্রতিটা দানার সঙ্গে ইয়ান আব্রাহামের গুলিবিদ্ধ বুক সংঘাত চালাচ্ছে। কখনও বাসনে সফেদ ভাত সরাতে গিয়ে থমকে থেকেছে কতক্ষণ। চীবতে গিয়ে ভেবেছে, সেই সাদা সাদা চামড়ার সোনালি চুলঅলা বালক তার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আঁটকে নেই তো? সে আর ঢোক গিলতে পারে না। তার কানে কানে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে, ‘সাবধান, ওই হোংকার আসছে।
- হোংকার কে?
নজিমুল্লা ছুটির দিনে সাইকেলের চেইনে ফোটা ফোটা মোবিল ঢালছিল। সে বলে, ‘ওই টা তো পুলিশ।’
- হোংকার মানে পুলিশ?
- শালারা আজরাইল। নজিমুল্লা উল্টোদিকে প্যাডেল ঘুরিয়ে বলে, ‘ওদের কাছে মানুষের লাইফের কোন দাম নেই।’
এবার ছলিমুল্লা পুণরায় গল্পটা শোনবার জন্য বাপের গা ঘেষে বসে। তখন নজিমুল্লা পরাজিত সৈনিকের মত আফসোসের ঢঙে চুকচুক শব্দ তোলে।
এইভাবে ইয়ান আব্রাহাম ছলিমুল্লার সঙ্গে শুধু যে বসবাস করে গেছে তাই নয়; তাকে কোন রাজনৈতিক মুখপাত্রের মতই সমাচারও প্রদান করে গেছে মাঝেমাঝে।
ছলিমুল্লাদের ঝোপড়াপট্টির পাশে একটি পার্ক ছিল। সেই পার্কের মাঠে বড় বাড়ির ছেলেরা রোজ বিকেলে ক্রিকেট খেলতে আসত। ছলিমুল্লারা তাদের সঙ্গে খেলতে পারত না। তারা মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে কখন বলটি এদিকে আসবে সেজন্য ওৎ পেতে থাকত। বলটি এলেই, যদি ফিল্ডারটি তখনও দূরে থাকে, তারা বলটি নিয়েই হাওয়া হয়ে যেত। তাড়া করলেই এমন সব গাল পাড়ত যে তারা বেশিক্ষণ পিছু নেবার সাহস পেত না। এসব কাজে সে সবসময় আসরাফ গাজির সাগরেদ।
এমন তো কতবার হয়েছে, বল মাঠের বাইরে এসেছে, সে আর আসরাফ গাজি বলের পেছনে, সে আসরাফ গাজিকে টপকে কর্ক ডিউসে হাত দিয়েছে – আর অমনি তার মুঠোর ভেতর ডিউসের ছেঁড়া ছেঁড়া সেলাই জ্যান্ত পোকার মত কিলবিল করে উঠেছে যেন।
আবার স্কুলে যীশুর জীবনি পড়তে গিয়ে আচমকা খেয়াল করেছে বেথলেহেমের সেই আশ্চর্য আস্তাবলে খড়ের গাদার আড়াল থেকে ইয়ান আব্রাহামই তো মেরীর প্রসব বেদনা ছুপিয়ে দেখেছিল। তা না হলে, যীশুর জন্মবৃত্তান্তের এমন ডিটেল আমরা জানলাম কী উপায়ে? তাছাড়া ‘বেথলেহেম’ আর ‘আব্রাহাম’ শব্দ দুটির মধ্যে মিলটাও কি এমনি এমনি!
আহা, তখন সে ক্লাস সিক্স। মুঠোর উপযুক্ত ব্যবহার শিখেছে সবে!
সূর্যের তলায় তার মা জন্ডিসে মরে গেল। সে মা-বাপের কার্ড নিয়ে তখন রেশনের লাইনে। ফলে আসরাফ খবর দিলে সে ঠিকঠাক বুঝেছিল, এই যে মাথাপিছু চালের বরাদ্দ আড়াই ছটাক বেড়ে গেছে, এর পেছনে শুধু খাদ্য আন্দোলন নয়; এর পেছনে রয়েছে একজন ভিনদেশী বালকের জীবনের বলিদান। একটা বুলেট যেন ছুটে এসে তার বুকেই ঘপাৎ করে বসে গেল, হুঁ।
ভিনদেশী! ইয়ান আব্রাহাম তবে ভিনদেশী?
ছলিমুল্লার খামোকা সিনেমায় দেখা একটা সাদাকালো যুদ্ধ জাহাজের কথা মনে পড়ে। এই তো, এই কাঠের সিঁড়িটার পেছনে দাঁড়িয়ে যারা মরণপন যুদ্ধে নেমেছে তাদের দেশটা কি ইয়ান আব্রাহামের না? তবে কোন দেশ ঐটা? ঐ দেশে সকলের চামড়া সাদা? সাদা সাদা মেয়েরা হাতে কাস্তে নিয়ে, লম্বা স্কার্ট পরে ওখানে ধান কাটতে নামে? ধান না গম? যবের ক্ষেত দেখতে কেমন? কোন ভাষা চলে ঐ দেশে? ছলিমুল্লা কোন বিদেশী ভাষা জানে না। সে নিজের মনেই কী-সব ভুলভাল উচ্চারণ করে যায়।
অবশেষে লেদার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়ে যখন সে পুরদস্তুর লেবার, একদিন চার নম্বর ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে সে চারদিকের রাস্তাঘাটকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। খিদিরপুর, পার্কস্ট্রীট, মৌলালি ও সোদপুর তার চোখের সামনে থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেল। কালিঘাট, বেহালা আর বরানগরকে মনে হল দোযখ। চামড়া আর চর্বি পচা গন্ধের মধ্যে কাজ করতে করতে সে এমন একটা রাস্তার সন্ধান চালাতে লাগল যার নাম হবে – আই এ এভিন্যু।
কিন্তু রাস্তার ভেতর রাস্তার ভেতর রাস্তা কোঁকড়ানো চুলের মত তার মাথার উপর জবুথবু হয়ে বসে থাকে। নুন আর ক্যামিকাল ঘাটতে ঘাটতে ডান হাতের আঙুলটা ক্ষয়ে যাচ্ছে। লাইফবয় দিয়ে হাত ধোবার পরও পচা গন্ধ আসে নাকে। সে আঙুলটাকে ঠোঁটের সামনে এনে ফিসফিসিয়ে ‘ইয়ান, আব্রাহাম, ইয়ান আব্রাহাম’ বলে ডেকে চলে। আঙুলটা সেই ডাকে সারা দেয়।
কারখানায় কম্পিউটার এল। ১টা মেশিন ১০ জন মানুষের কাজ করে দেবে। সুতরাং, ৯ জন মানুষের ছাটাই। এইসব নিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের বাতচিত তাকে তাতিয়ে তোলে। সে ১-লা মে’তে লাল ঝান্ডার নিচে দাঁড়িয়ে জানতে পারে, ১৮৮৬-র হে মার্কেটের ঘটনার ২৪ বছর আগে হাওড়াতে রেল শ্রমিকেরা ৮ ঘন্টার কাজের দাবীতে ধর্মঘট করেছিল। পতপত করে উড়তে থাকা পতাকার নিচে সে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়ায়। তখনি চোঙা থেকে নিঃসৃত কতসব শব্দ তার কানের ভেতর হুহু করে ঢুকে পড়ে। সে শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা করে চিনতে পারে না। তবু খেয়াল করলে বুঝতে পারে – ঐ তো মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে রইয়েছে রোগা কমরেড, ঐ তো লোকনায়ক মাইকের সামনে ঠোঁট নিয়ে আসছে, তার কাঁধে ঝুলছে চটের ব্যাগ, চোখে চশমা, সার্টের পকেট থেকে বেরিয়ে আছে কলম, আর তাই চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে – শ্রমদাসত্ব উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া শ্রমিকশ্রেণী এবং নিপীড়িত জনতার সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।
সত্যিই কি কোন পথ খোলা নেই?
ছলিমুল্লার ২ বছরের ছেলেটা মাসখানিকের সর্দিকাশিতে হোমিওপ্যাথি খেতে খেতে মরে গেল। ২ দিন কারখানায় গেল না ছলিমুল্লা। ছোলা পড়ানির পর মজদুর ইউনিয়নের নেতা রতনলাল তার পিঠে হাত রেখে বলল, আমরা হলাম শ্রমিকশ্রেণী। বাস্তববাদী। সত্যকে তো মেনে নিতেই হবে আমাদের, তাই না?
কিন্তু সত্য কাকে বলে?
রাতেরবেলা বউ-এর দিকে তাকিয়ে থাকে ছলিমুল্লা। মাইয়ের বোঁটা থেকে দুধ গড়িয়ে ব্লাউজ ভিজিয়ে দিয়েছে। সে চটচটে ব্লাউজের উপর মুখ ঘষে। ভোরের দিকে বউ উঠে পেচ্ছাব করতে গেলে সে কী আশ্লীল শব্দ শোনে। ছরছর করে সত্য যেন ধুয়ে চলে যাচ্ছে বাথরুমের নল দিয়ে।
ফার্স্ট ট্রেন চলে যায়। সে নির্দিষ্ট বাণী শোনবার জন্য কান পাতে। বউ এলে বলে, এইটাই সত্যি। আমরা কাঁদব। পাগলা হয়ে যাব। গুমড়ে মরে যাব। তবু মরব না। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর সব ঠিকও হয়ে গেল।
কারখানার ম্যানেজার তার ডান হাতের কড়ে আঙুল দেখে বলল, এত নখরানাজি দেখার টাইম কারোর নেই।
অতএব, হাতে ন্যাকড়া বেঁধে সে আবার কাজে নামল।
ততদিনে জার্মান থেকে নতুন মেশিন এসেছে। এই মেশিন কত সহজে চামড়া ট্যান করে পালিশ করে দেয়। কম্পিউটারের ভেতর ডিজাইন ফেলা আছে। সেই ডিজাইন অনুযায়ী অটোমেটিক ব্লেড পড়ছে চকচকে চামড়ার উপর। সে বুঝি এক বৃহৎ উদ্দ্যোগের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ক্রমাগত। তবু রতনলাল একদিন তাকে বলে, ফ্যাক্টরি এখানে আর বেশিদিন নেই।
- ফক্টরি উঠে যাবে?
- না না। উঠবে কেন? বানতলায় শিফ্ট হবে।
- আর আমরা?
- তোমরাও যাবে।
- ছাটাই করে দেবে না?
- ছাটাই করবে কেন?
- যদি করে দেয়? এত বড় বড় মেশিন আসছে!
- ধুর। যত বড় বড় মেশিন আসবে তত তোমাদের লাভ। মেশিন আসছে মানে প্রোডাকশন বাড়ছে।
- তার মানে ছাটাই করবে না?
- ছাটাই করলে অন্য কোথাও কাজ নেবে।
- এইসব ছাড়া তো আর কিছু জানি না।
- এখন আর কাজের অভাব কারোর হবে না।
- তালে আপনারা যে বলতেন মেশিন মানুষকে খেয়ে নেয়?
- এখন পার্টিলাইন চেঞ্জ হয়েছে। রতনলাল ক্রিকেটের ক্যাপ্টেনের মত হাসি ছেড়ে বলে, আমরা বাস্তববাদী।
কিন্তু আরও বছর খানেক পর, মেটারনিটি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ছলিমুল্লা বাস্তবের সঙ্গে গায়ে গা এলিয়ে থাকা অবাস্তবতার সমাচারকে ঠিক চিনতে পেরেছিল। তা না হলে, মেয়ে জন্মানোর খবর পেয়ে সে যখন শুকুর আদায় করতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল, ৩ দিন ধরে থমকে থাকা আকাশটা কিভাবে অমন গুমোট মেঘকে সরিয়ে দিতে পারল? ছলিমুল্লার এখনও মনে আছে, মেঘ সরে যেতেই আকাশে লাল চাঁদ উঠেছিল। চাঁদের পাশে দপদপ করে জ্বল ছিল তিন তিনটি তারা।
ফলে সে আরও ভেবেছিল, এই জ্বলে ওঠা তারার নিশানা তার মেয়েটির শরীরে কোথাও না কোথাও নিশ্চয় রয়ে গেছে। নিশানাটি কোথায় সে ঠিক জানেনা। তবু তার দৃঢ় বিশ্বাস, কেউ না কেউ, হয়তবা ইয়ান আব্রাহামই, সেই নিশানাটা পড়ে নিয়ে পরবর্তী সমাচার সম্পর্কে তাদের অবহিত করে দেবে ঠিক।
নাফিসার নাকের নিচে একটা ছোট্ট কালো তল আছে। এখন ফেসিয়াল করতে গিয়ে সেই তিলের উপর আঙ্গুল চালালে তার সারা শরীর সজাগ হয়ে ওঠে। গায়ের লোম গুলোয় কাঁটা দেয়। সে নিজের মনেই হাসে।
বিয়ের কথাবার্তা শুরু হবার পর থেকেই এইসব হচ্ছে নাফিসার। হয়ত কারোর সঙ্গে কথা বলছে, বা এমনিই, কিংবা বিকেলের হাওয়া লাগলে তার শরীর দিয়ে ঝনঝন করে বাজনা বাজে। এই বাজনা কেউ শুনতে পায় না। আবার কেউ কেউ তা শুনতেও পায়।
নাফিসার যত সন্দেহ এসে পড়ে রতনলালের ছেলে রবিলালের উপর। রবিলাল বাপের মত পলিটিক্স করে না। সে NGO-র কর্মী। প্রথমবার পোলিওর দিদিদের সঙ্গে তাদের ঘরে এসেছিল। কতসব প্রশ্ন রবিলালের। আবার তার দেওয়া উত্তর গুলো একটা খাতায় টুকে নিচ্ছে।
রবিলাল জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি ক্লাস নাইনের পর আর স্কুলে গেলে না কেন?
- এমনি।
- কোন কারণ তো নিশ্চয় থাকবে। পড়াশুনার খরচ চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল?
- তা হচ্ছিল।
- তবে সেটাই কারণ?
নাফিসা হাসে। হাসতে হাসতে বলে, আমি মাধ্যমিক পাশ দিলে আমার বর পাওয়া যেত না। মেয়েদের তো ছেলেদের থেকে কম জানতে হয়।
- কিন্তু তোমার বর যদি কোন গ্রাজুয়েট ছেলে হয়? তুমি তো জান না তোমার সঙ্গে কার বিয়ে হবে। তোমার বর তো গ্রাজুয়েট হতেই পারে।
- তা কেন হবে? নাফিসা মাথা নাবিয়ে বলেছিল, আমাদের ওরকম হবে না।
আর একবার রবিলাল ২ জন বিদেশীকে নিয়ে তাদের ঝোপড়াপট্টিতে হাজির। তার মত আরও কজনকে জড়ো করে মেয়ে গুলো ইংরাজিতে প্রশ্ন করছিল। রবিলাল সেগুলোকে বাংলায় তর্জমা করে দিচ্ছিল। প্রশ্নগুলির মধ্যে কতকগুলি এইরকম ঃ-
১। তোমাদের মধ্যে মাধ্যমিক পাশ করেছে কজন?
২। তোমাদের বাড়িতে খাবার জলের ফিল্টার আছে?
৩। শরীর খারাপ করলে তোমরা কোন ডাক্তারের কাছে যাও?
৪। পিরিয়ডের সময় স্যানিটরি ন্যাপকিন ব্যবহার করো?
শেষ প্রশ্নটা যে তাদেরকে হতে তা নাফিসার ধারনারও বাইরে ছিল। রবিলালের মুখ থেকে বের হওয়া ‘পিরিয়ড’ ও ‘ন্যাপকিন’ শব্দ দুটি তাকে এতটাই নাড়িয়ে দিছিল যে সে এরপর যতবার রবিলালের সঙ্গে দেখা করেছে, ততবার ভেবেছে রবিলাল কী-এক উপায়ে সে প্যান্টির তলায় ন্যাকড়া বেঁধেছে নাকি ন্যাপকিন পরেছে তা ঠিক জেনে ফেলতে পারে।
অবশেষে রবিলাল ছলিমুল্লার কাছে পারমিশান নিতে গেল, আমি নাফিসার জন্য এসেছি।
ছলিমুল্লা আহ্লাদে আটখানা, তুমি তো রতনলালের ছেলে?
- জী। আমি একটা NGO-তে চাকরি করি।
- হ্যা, তা তো জানি। কিন্তু নাফিসা?
রবিলাল গুছিয়ে বলে, আমরা এখানে একটা সেন্টার খুলেছি। এখানকার মেয়েদের ফ্রিতে কম্পিউটার আর স্পোকেন ইংলিশ শেখানো হবে। নাফিসাকে দরকার।
ছলিমুল্লা দমে যায়, তো ও কী করবে?
- ও শিখবে।
- ওর তো বিয়ের বয়েস হয়ে গেছে। এখন শিখে কী করবে!
- যতদিন না বিয়ে হচ্ছে ততদিন শিখুক না চাচা। আপনাকে তো কোন খরচ দিতে হচ্ছে না।
ছলিমুল্লা রাজি হয়ে যায়।
আসলে ছলিমুল্লার তখনও আশা ছিল, রবিলাল এই মূহুর্তে মুখ ফেরালেও সে-ই হয়ত সেই সাংবাদিক যে তার মেয়ের শরীরের সমাচার ঠিকঠাক পড়ে নিতে পারবে। ফলে সে ডিউটি সেরে (এখন সে সিকিউরিটি গার্ড) ঘরে ফিরে যদি দেখে নাফিসা তখনও ফিরে আসেনি, সে ঝোপড়াপট্টি থেকে বেরিয়ে আসত, রাতের আকাশের দিকে তাকাত, কান পাততো যদি তার মেয়েকে নিয়ে কোন কানাঘুষো শোনা যায়, কখনও আকাশ মেঘলা থাকলে (আর কোথাও যাবার নেই, তাই) পার্কে বসে আসরাফ গাজির রফি-কন্ঠের গান শুনতো।
এমনিতে ইলেক্ট্রিকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যের পর থেকে ঘরে টিউবলাইট জ্বলত না। কোনক্রমে একটা জিরো জ্বেলে ভূতের মত বাসবাসই এখানে নিয়ম।
এরকম আধো অন্ধকারে, একদিন সে লক্ষ্য করে, নাফিসা ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদেই চলেছে।
- কী হয়েছে?
নাফিসা চুপ।
- রবি কিছু বলল?
নাফিসা দুদিকে মাথা নাড়ে। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বলে ফেলে, আমি আর সেন্টারে যাব না।
- কম্পিউটার শিখবি না?
- না, আমি কোথাও যাব না। বলেই সে কথা থামিয়ে দেয়। আর কিছুর জবাব দেয় না।
এমনকি কদিন পর গফুর খান কোথাকার এক বিহারি দোকানদারের জন্য তার মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে এলে নাফিসা লজ্জায় মুখ সরিয়ে নেয়।
ছলিমুল্লা বলে, কী রে?
নাফিসা বলে, আমি কি জানি।
গফুর খান এসব ব্যাপারে ওস্তাদ। সে জানিয়ে দেয়, তালে এটাই ফাইনাল।
বিয়ের আগের দিনকে বলা হয় ক্ষীর-পিঠে।
ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ দেওয়া হয়েছে। সেই হলুদ নাফিসাকে মাখানো হয়ে গেছে। হলুদ মেখে নাফিসা এখন চার-পাঁচ রকম খাবারের সামনে বসে রয়েছে। লোকজন তাকে গালে তুলে খাবার খাওয়াচ্ছে। খাওয়ানোর পর যে যার মত একটি থালায় টাকা দিচ্ছে। নাফিসা আড়চোখে দেখে নিচ্ছে কত টাকা জমলো।
ছলিমুল্লা যেন এইসব দেখে কীসের সংকেত পাবার আশায় তটস্থ হয়ে থাকে।
এই যে কসমেটিক্সের দোকানে সে অমন আলগা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তা তো নাফিসাকে পালাবার পথ করে দেবার জন্যই। কিংবা এমনও তো হতে পারত, সে বিউটি পার্লারের বাইরে মেয়ের জন্য ওয়েট করছে – আর ওদিকে ততক্ষণে মেয়েটি পেছনের দরজা দিয়ে গায়েব! পাড়াপ্রতিবেশী মায় গভর্মেন্টও তার আর কোন হদিশ দিতে পারছে না।
ছলিমুল্লা ভেবে পায় না, নাফিসা এতসব সুযোগ হাতছাড়া করে দিচ্ছে কেন? কী আছে নাফিসার মনে?
এখন গভীর রাত।
লোকজন খেয়েদেয়ে চলে গেছে। বিয়ে উপলক্ষে তার ঘরের সামনে টুনি বাল্ব লাগানো হয়েছিল। সেই গুলি থেকে সস্তার আলো বেরিয়ে আছে। কোথা থেকে যেন টিভি চলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। লাস্ট ট্রেনটাও চলে গেল।
নাফিসার ফোনে দুবার রিং বাজল। নাফিসা ফোনটা কেটে দিল।
এই তো সে বিছানা থেকে উঠে বসেছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখছে।
এখন সে দরজার সামনে গেল। একবার পেছনে তাকাল। তারপর বেরিয়ে পড়ল।
ছলিমুল্লা মেয়েকে ফলো করল।
সারা গায়ে হলুদ মেখে স্ট্রীটলাইটের আলোয় নাফিসা হাঁটছে।
ছলিমুল্লা চোরের মত অন্ধকারে মিশে আছে।
তাদের ঝোপড়াপট্টির পাশে একটা ডালডা কারখানা ছিল। কারখানাটি ভেঙে ফ্লাটবাড়ি উঠছে। নাফিসা সেই প্রকল্পের ভেতর ঢুকে গেল।
এধার-ওধার কতরকমের সরঞ্জাম। ইটপাথরের স্তূপ। ছলিমুল্লা স্তূপের ভেতর লুকিয়ে নাফিসাকে দেখছে।
একটি পুরুষ কন্ঠ, যাকে সে দেখতে পাচ্ছে না, ডাকল, এদিকে এসো।
- না।
- এসো?
- তুমি মিথ্যে।
- মিথ্যে কেন?
- জানো না বুঝি?
- কি জানি না?
- তুমি মিথ্যে।
- মিথ্যে নয়।
- তবে?
- সত্যির উল্টোটাও তো সত্যি।
নাফিসা চুপ।সে একবার লাল চোখে বুঝি এদিকে তাকাল। একটা হাত তার বুকের কাছে এগিয়ে আসছে। নাফিসা হাতটা সরিয়ে দিল।
- কিছু বুঝলে?
নাফিসা তবু কথা বলে না। মাটিতে তক্তা ফেলে শাড়িটা কোমড় অব্দি তুলে উপুর হয়ে শোয়। শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করে। আবার ঘাড় বেঁকিয়ে পুরুষটিকে বলে, তবে তাই।
পুরুষটি এগিয়ে আসে।
ছলিমুল্লা শুনতে পায়, তার মেয়েটি এতসবেও কী-রকম বলতে পারছে, এটাই সত্যিটার উল্টো?
ছেলের সঙ্গে বেশি লোক আসবে না। এই জনা পনের। এদিকে ছলিমুল্লার নিজের তরফের প্রায় ৩০ জনের মত আছে। তো ৫০ জনের রান্নাবান্না চলছে সকাল থেকেই। আসরাফ গাজি এই দিকটা দেখছে।
ছলিমুল্ললা খালি এদিক ওদিক ঘুরঘুর করে। কোন কাজে হাত দেবে বুঝে উঠতে পারে না। কারণে অকারণে নাফিসার খবর নেয়। নাফিসার কোমড়ে ভীষণ ব্যাথা।
ওদিকে কজন মেয়েছেলে সকাল সকাল এসে হাজির। তারা নাফিসাকে গোসল করাবে। নাফিসা বলে, না। তারা কিছুতেই তা শুনবে না। বিয়ের আগের স্নান একা একা করতে নেই।
নতুন সাবান-শ্যাম্পু নিয়ে নাফিসা তাদের সঙ্গে বাথরুমে চলে গেল।
দুপুরের দিকে নাফিসাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে খাটে বসানো হল। মেয়ে গুলো তাকে সাজাচ্ছে। একজন ঝাঁটার কাঠিতে চন্দন গুলে কপালে কল্কে আঁকছে। নাফিসা থাকতে থাকতে আয়নায় মুখ দেখছে।
তার চোখের কোণ কি চিকচিক করছে? মাথার ভেতর কোন সাজিশ লুকিয়ে রাখেনি তো মেয়েটা?
দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে তখনও বর আসেনি।
আসরাফ গাজি খবর দিল বর নাকি ঘোড়ায় চেপে আসছে।
ঘোড়া?
কে একজন, বুঝি সে সেন্টারে যায়, অমনি ফুট কাটলো, ঘোড়া না, ডঙ্কি। ডঙ্কি।
গাধা?
ছলিমুল্লা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বর যাত্রীদের বসবার জন্য তাদের ঘরের সামনে কটা চেয়ার ফেলা হয়েছে। সে চেয়ার গুলোর মাঝখানে চক্কর মারতে থাকে।
এই কোলকাতা, এই বাস-ট্রাম, এই পলিটিক্সের মাঝখান দিয়ে, এই লোকজন-ফ্লাটবাড়ি-ভিক্টোরিয়ার মাঝখান দিয়ে হেলেদুলে গাধার পিঠে চেপে কে আসছে?
কে?
ছলিমুল্লা কোন এক সুসমাচার জানবার জন্য শেষবারের মত কান পাতে।
ঠিক এই সময়, আসরাফ গাজি ৩ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনে ঘরে ফিরছিল। তরমুজটা আচমকা প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেঁসে রাস্তায় আছাড় খেলে সে অর্থাৎ ছলিমুল্লা এবং তার মেয়ে অর্থাৎ নাফিসা, দুজনে একসঙ্গে, বাপ-বেটিতে মিলে রাস্তার উপর থোকথোক, লাল লাল মাংসের মত অমন বেশরম ও রসালো ফলের ছ্যাতরানো কারুকার্য দেখে পরস্পরের দিকে তাকায়। ওদিকে আসরাফ গাজিও ততক্ষণে সাইকেল থেকে নেমে এসে প্রকৃত কালাকারের মত তরমুজটিকে মেধাবি আদাব জানাচ্ছিল। কিন্তু নাফিসা বা ছলিমুল্লার সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তারা তা খেয়ালও করেনি। উপরন্তু বিয়ের ২ দিন আগে মেয়েকে আরও একবার যখন সে চন্দনা বিউটি পার্লারে ফেসিয়াল করাতে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক এইখানটাতেই, নাফিসা হোঁচট খেয়ে চটির ফিতে ছিঁড়ে ফেলায় তারা ফ্লাইওভারের নিচে মুচির জন্য তালাশ চালিয়ে ছিল।
সেইদিনও আসরাফ গাজি ৩ কেজি ওজনের তরমুজ কিনে ঘরে ফিরছিল। বলাবাহুল্য, সেইদিন আসরাফ গাজি তরমুজটি নিয়েই ঘরে ফিরেছিল।
অবশেষে প্লাটফর্মের কাছে মুচির সন্ধান পাওয়া গেল। এখন নাফিসা চটিটা মুচিকে দিয়ে নিজে একখানা ১০ নং স্যান্ডেলে পা গলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছলিমুল্লা মাঝে মাঝেই মুচিকে তাগাদা দিচ্ছে। মুচি তাকে পাত্তা না দেওয়ায় সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে খুচরো পয়সার ঝুনঝুন আওয়াজ তুলছে।
আসুন পাঠক, আমরা নাফিসা আর ছলিমুল্লাকে আরও কিছুক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দিই। আর এই সুযোগে, খানিক আগে ব্যবহৃত ‘নখরাবাজি’ শব্দটার ভেতর সজ্ঞানে ঢুকে পড়ি।
যে-কোন গল্পে এমন কতকগুলি সূত্র থাকে যা-দিয়ে আমরা গল্পটির ভেতর ছানবিন চালাতে পারি। সূত্রগুলিকে আয়ত্তে আনতে পারলে পাঠক তখন ইস্ত্রিঅলার মতন গল্প মায় চরিত্রগুলিকে টেবিলে ফেলে প্রয়োজনীয় ভাঁজ তুলতে পারে। এখানে ‘নখরাবাজি’ শব্দটিও তেমনি। এই শব্দটির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু মানুষের লড়াই ও বলিদানের ইতিবৃত্ত।
অতএব, আর দেরী নয়, নখরাবাজি শুরু করা যাক।
তো, যতটুকু জানা যায়, ছলিমুল্লার বাপ নজিমুল্লা ১৯৬৬ সালের ১০ই মার্চ আগরপাড়ার তেঁতুলতলায় কী-এক কারণে, ধরা যাক, দোস্তের বাড়িতে দাওয়াত খেতে গেছিল। সেইদিনই সে বিটি রোডের উপর দাঁড়িয়ে থেকে, সফেদ সার্টের নিচে চোঙা প্যান্ট পরে, জীবনে প্রথমবার ব্যারিকেড দেখেছিল।
ঠ্যালা গাড়ি, ড্রাম আর লোহার পাইপ দিয়ে ব্যারিকেড বানানো হয়েছে।ব্যারিকেডের ওপাশে পুলিশ। পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। এপাশে যতসব পেটরোগা, লুম্পেন, বস্তিবাসি আধলা আর রড নিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে।
এইসবের মাঝখানে এসে পড়ে নজিমুল্লা প্রথমে ভিরমি খেয়ে যায়। কী করবে বুঝে উঠতে পারেনা। তার বুকের ভেতর থেকে ধ্বক ধ্বক শব্দ বের হয়। হাত-পায়ে যেন ঝিঁঝিঁ ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে। সে হাঁটতেও পারে না।
নজিমুল্লা রংচটা দেয়ালে ‘যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস’ লেখা দেখে। ফুটপাথে ইলেকট্রিকের ছেঁড়া তার ঝুলছে। তার নাকে টায়ার পোড়ার গন্ধ এল। আর কী আশ্চর্য, সে ততক্ষণে কীভাবে যেন গলির ভেতর সেঁধিয়ে যেতে পেরেছে।
আশপাশের কোন দোকানপাট খোলা নেই। গলির উল্টোদিকে দু-তিনজন বড় রাস্তার দিকে উঁকি দিচ্ছে। আচমকা কে চেঁচিয়ে উঠল। কারা সব স্লোগান দিচ্ছে, সে শুনতে পেল। সে চোখ কচলায়। দু-চোখ জ্বালাজ্বালা করছে। টিয়ার গ্যাস? সে চমকে উঠল। গলির শেষদিকে ক’জনকে টিউবওয়েলে মুখ ধুতে দেখে সে সেদিকেই দৌড় লাগাল।
তার ধবধবে সার্ট দেখে একজন জানতে চাইল, নতুন?
সে মাথা নাড়াল।
কোত্থেকে?
সে কি উত্তর দেবে বুঝতে পারেনা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে খালি।
তারা চলে গেলে সে যেন কিছুটা ধাতস্থ হল। এখন আর আগের মত চিৎকার শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-চারটে স্লোগান উঠছে। তারপর আবার সব চুপচাপ।
সে উপরে তাকায়। দুতলা-তিনতলা থেকে লোকজন রাস্তার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। যেন তারা টিকিট কেটে মরণকূপে মোটরবাইকের কেরামতি দেখতে এসেছে, শালা! সে কেমন রেগে ওঠে। আশপাশে কোথাও আধলা আছে কিনা খোঁজে। আবার খুঁজতে খুঁজতে এমনিই ভেবে ফেলে, এতসবে দোস্তের বাড়ি পৌঁছব কীভাবে?
তখনি তীক্ষ্ণ শব্দে তার কান-মাথা ঝাঁঝিয়ে উঠল। কানের ভেতর, মগজের ভেতর একটানা চিঁই-ই... শব্দ হচ্ছে। গলির মধ্যে একগাদা লোক ঢুকে পড়েছে। যে যেখানে পারে ছুট লাগিয়েছে। তার সামনেই একজন আছাড় খেল। সে তবু কোন শব্দ পেল না।
নজিমুল্লার পায়ে আবার ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে। সারা গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি সব মোচর দিয়ে উঠল। সে কিছুতেই বেগ থামাতে পারছে না। সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে নিল।
এখন, সিনেমার লাস্ট সিনের মত এই ক্লাইমেক্সে এসে তবে কি সে প্যান্টেই হেগে ফেলবে? নিজের জন্যই নিজে আফশোস করে নজিমুল্লা। এখনও তার কানে তালা লেগে রয়েছে। বাইরের কোন আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে না। তবু, বুঝি কোন দায়বদ্ধতা থেকেই, সে কোনরকমে রাস্তা থেকে দু-চারটে ঢিল কুড়িয়ে নিয়ে এই বন্ধ দোকানপাটের মাঝখানে, এই মানুষজনের পালিয়ে যাবার মাঝখানে একজন একস্ট্রা অভিনেতার মতই, তার আর কিছুই করার নেই, এইটুকু ভেবে, কোনক্রমে মাথা নিচু করে উবু হয়ে বসে পড়ে। বসে বসে কেঁদে যায় খালি।
১০ই মার্চ বন্ধের দিনে আগরপাড়ার তেঁতুলতলা অঞ্চলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল ৪ জন মানুষ। বাড়ির বারান্দায় বসে গুলিবিদ্ধ হল ইয়ান আব্রাহাম নামে ছ বছরের একটি বালকও।
পরের দিন এই খবর শুনে ঘরে ফিরেও নজিমুল্লা ভাবতে থাকে, সেই যে সে যখন উপরে তাকিয়ে ছিল, দুতলা তিনতলা থেকে ঝুঁকে পড়া মানুষজনের ভেতর সে কি একঝলকও ইয়ান আব্রাহামকে দেখতে পাইনি? সে নিজের অজান্তেই ইয়ান আব্রাহামের পিছু করতে শুরু করে। কিন্তু একজন মুর্দাকে সে ফলো করবে কোন উপায়ে? সঠিক উপায় নজিমুল্লার জানা ছিল না।
ফলে নজিমুল্লা নয়; ছলিমুল্লাই বাপকে ডিঙিয়ে ইয়ান আব্রাহামের হদিশে গোপণে বেরিয়ে পড়েছিল একদিন!
এমনও হয়েছে রেশনের চাল থলিতে ভরে থলির ভেতর ক্যালানের মত তাকিয়ে থেকেছে সে। তার মনে হয়েছে, চালের প্রতিটা দানার সঙ্গে ইয়ান আব্রাহামের গুলিবিদ্ধ বুক সংঘাত চালাচ্ছে। কখনও বাসনে সফেদ ভাত সরাতে গিয়ে থমকে থেকেছে কতক্ষণ। চীবতে গিয়ে ভেবেছে, সেই সাদা সাদা চামড়ার সোনালি চুলঅলা বালক তার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আঁটকে নেই তো? সে আর ঢোক গিলতে পারে না। তার কানে কানে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে, ‘সাবধান, ওই হোংকার আসছে।
- হোংকার কে?
নজিমুল্লা ছুটির দিনে সাইকেলের চেইনে ফোটা ফোটা মোবিল ঢালছিল। সে বলে, ‘ওই টা তো পুলিশ।’
- হোংকার মানে পুলিশ?
- শালারা আজরাইল। নজিমুল্লা উল্টোদিকে প্যাডেল ঘুরিয়ে বলে, ‘ওদের কাছে মানুষের লাইফের কোন দাম নেই।’
এবার ছলিমুল্লা পুণরায় গল্পটা শোনবার জন্য বাপের গা ঘেষে বসে। তখন নজিমুল্লা পরাজিত সৈনিকের মত আফসোসের ঢঙে চুকচুক শব্দ তোলে।
এইভাবে ইয়ান আব্রাহাম ছলিমুল্লার সঙ্গে শুধু যে বসবাস করে গেছে তাই নয়; তাকে কোন রাজনৈতিক মুখপাত্রের মতই সমাচারও প্রদান করে গেছে মাঝেমাঝে।
ছলিমুল্লাদের ঝোপড়াপট্টির পাশে একটি পার্ক ছিল। সেই পার্কের মাঠে বড় বাড়ির ছেলেরা রোজ বিকেলে ক্রিকেট খেলতে আসত। ছলিমুল্লারা তাদের সঙ্গে খেলতে পারত না। তারা মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে কখন বলটি এদিকে আসবে সেজন্য ওৎ পেতে থাকত। বলটি এলেই, যদি ফিল্ডারটি তখনও দূরে থাকে, তারা বলটি নিয়েই হাওয়া হয়ে যেত। তাড়া করলেই এমন সব গাল পাড়ত যে তারা বেশিক্ষণ পিছু নেবার সাহস পেত না। এসব কাজে সে সবসময় আসরাফ গাজির সাগরেদ।
এমন তো কতবার হয়েছে, বল মাঠের বাইরে এসেছে, সে আর আসরাফ গাজি বলের পেছনে, সে আসরাফ গাজিকে টপকে কর্ক ডিউসে হাত দিয়েছে – আর অমনি তার মুঠোর ভেতর ডিউসের ছেঁড়া ছেঁড়া সেলাই জ্যান্ত পোকার মত কিলবিল করে উঠেছে যেন।
আবার স্কুলে যীশুর জীবনি পড়তে গিয়ে আচমকা খেয়াল করেছে বেথলেহেমের সেই আশ্চর্য আস্তাবলে খড়ের গাদার আড়াল থেকে ইয়ান আব্রাহামই তো মেরীর প্রসব বেদনা ছুপিয়ে দেখেছিল। তা না হলে, যীশুর জন্মবৃত্তান্তের এমন ডিটেল আমরা জানলাম কী উপায়ে? তাছাড়া ‘বেথলেহেম’ আর ‘আব্রাহাম’ শব্দ দুটির মধ্যে মিলটাও কি এমনি এমনি!
আহা, তখন সে ক্লাস সিক্স। মুঠোর উপযুক্ত ব্যবহার শিখেছে সবে!
সূর্যের তলায় তার মা জন্ডিসে মরে গেল। সে মা-বাপের কার্ড নিয়ে তখন রেশনের লাইনে। ফলে আসরাফ খবর দিলে সে ঠিকঠাক বুঝেছিল, এই যে মাথাপিছু চালের বরাদ্দ আড়াই ছটাক বেড়ে গেছে, এর পেছনে শুধু খাদ্য আন্দোলন নয়; এর পেছনে রয়েছে একজন ভিনদেশী বালকের জীবনের বলিদান। একটা বুলেট যেন ছুটে এসে তার বুকেই ঘপাৎ করে বসে গেল, হুঁ।
ভিনদেশী! ইয়ান আব্রাহাম তবে ভিনদেশী?
ছলিমুল্লার খামোকা সিনেমায় দেখা একটা সাদাকালো যুদ্ধ জাহাজের কথা মনে পড়ে। এই তো, এই কাঠের সিঁড়িটার পেছনে দাঁড়িয়ে যারা মরণপন যুদ্ধে নেমেছে তাদের দেশটা কি ইয়ান আব্রাহামের না? তবে কোন দেশ ঐটা? ঐ দেশে সকলের চামড়া সাদা? সাদা সাদা মেয়েরা হাতে কাস্তে নিয়ে, লম্বা স্কার্ট পরে ওখানে ধান কাটতে নামে? ধান না গম? যবের ক্ষেত দেখতে কেমন? কোন ভাষা চলে ঐ দেশে? ছলিমুল্লা কোন বিদেশী ভাষা জানে না। সে নিজের মনেই কী-সব ভুলভাল উচ্চারণ করে যায়।
অবশেষে লেদার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়ে যখন সে পুরদস্তুর লেবার, একদিন চার নম্বর ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে সে চারদিকের রাস্তাঘাটকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিল। খিদিরপুর, পার্কস্ট্রীট, মৌলালি ও সোদপুর তার চোখের সামনে থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেল। কালিঘাট, বেহালা আর বরানগরকে মনে হল দোযখ। চামড়া আর চর্বি পচা গন্ধের মধ্যে কাজ করতে করতে সে এমন একটা রাস্তার সন্ধান চালাতে লাগল যার নাম হবে – আই এ এভিন্যু।
কিন্তু রাস্তার ভেতর রাস্তার ভেতর রাস্তা কোঁকড়ানো চুলের মত তার মাথার উপর জবুথবু হয়ে বসে থাকে। নুন আর ক্যামিকাল ঘাটতে ঘাটতে ডান হাতের আঙুলটা ক্ষয়ে যাচ্ছে। লাইফবয় দিয়ে হাত ধোবার পরও পচা গন্ধ আসে নাকে। সে আঙুলটাকে ঠোঁটের সামনে এনে ফিসফিসিয়ে ‘ইয়ান, আব্রাহাম, ইয়ান আব্রাহাম’ বলে ডেকে চলে। আঙুলটা সেই ডাকে সারা দেয়।
কারখানায় কম্পিউটার এল। ১টা মেশিন ১০ জন মানুষের কাজ করে দেবে। সুতরাং, ৯ জন মানুষের ছাটাই। এইসব নিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের বাতচিত তাকে তাতিয়ে তোলে। সে ১-লা মে’তে লাল ঝান্ডার নিচে দাঁড়িয়ে জানতে পারে, ১৮৮৬-র হে মার্কেটের ঘটনার ২৪ বছর আগে হাওড়াতে রেল শ্রমিকেরা ৮ ঘন্টার কাজের দাবীতে ধর্মঘট করেছিল। পতপত করে উড়তে থাকা পতাকার নিচে সে উদগ্রীব হয়ে দাঁড়ায়। তখনি চোঙা থেকে নিঃসৃত কতসব শব্দ তার কানের ভেতর হুহু করে ঢুকে পড়ে। সে শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা করে চিনতে পারে না। তবু খেয়াল করলে বুঝতে পারে – ঐ তো মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে রইয়েছে রোগা কমরেড, ঐ তো লোকনায়ক মাইকের সামনে ঠোঁট নিয়ে আসছে, তার কাঁধে ঝুলছে চটের ব্যাগ, চোখে চশমা, সার্টের পকেট থেকে বেরিয়ে আছে কলম, আর তাই চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে – শ্রমদাসত্ব উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া শ্রমিকশ্রেণী এবং নিপীড়িত জনতার সামনে অন্য কোন পথ খোলা নেই।
সত্যিই কি কোন পথ খোলা নেই?
ছলিমুল্লার ২ বছরের ছেলেটা মাসখানিকের সর্দিকাশিতে হোমিওপ্যাথি খেতে খেতে মরে গেল। ২ দিন কারখানায় গেল না ছলিমুল্লা। ছোলা পড়ানির পর মজদুর ইউনিয়নের নেতা রতনলাল তার পিঠে হাত রেখে বলল, আমরা হলাম শ্রমিকশ্রেণী। বাস্তববাদী। সত্যকে তো মেনে নিতেই হবে আমাদের, তাই না?
কিন্তু সত্য কাকে বলে?
রাতেরবেলা বউ-এর দিকে তাকিয়ে থাকে ছলিমুল্লা। মাইয়ের বোঁটা থেকে দুধ গড়িয়ে ব্লাউজ ভিজিয়ে দিয়েছে। সে চটচটে ব্লাউজের উপর মুখ ঘষে। ভোরের দিকে বউ উঠে পেচ্ছাব করতে গেলে সে কী আশ্লীল শব্দ শোনে। ছরছর করে সত্য যেন ধুয়ে চলে যাচ্ছে বাথরুমের নল দিয়ে।
ফার্স্ট ট্রেন চলে যায়। সে নির্দিষ্ট বাণী শোনবার জন্য কান পাতে। বউ এলে বলে, এইটাই সত্যি। আমরা কাঁদব। পাগলা হয়ে যাব। গুমড়ে মরে যাব। তবু মরব না। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর সব ঠিকও হয়ে গেল।
কারখানার ম্যানেজার তার ডান হাতের কড়ে আঙুল দেখে বলল, এত নখরানাজি দেখার টাইম কারোর নেই।
অতএব, হাতে ন্যাকড়া বেঁধে সে আবার কাজে নামল।
ততদিনে জার্মান থেকে নতুন মেশিন এসেছে। এই মেশিন কত সহজে চামড়া ট্যান করে পালিশ করে দেয়। কম্পিউটারের ভেতর ডিজাইন ফেলা আছে। সেই ডিজাইন অনুযায়ী অটোমেটিক ব্লেড পড়ছে চকচকে চামড়ার উপর। সে বুঝি এক বৃহৎ উদ্দ্যোগের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে ক্রমাগত। তবু রতনলাল একদিন তাকে বলে, ফ্যাক্টরি এখানে আর বেশিদিন নেই।
- ফক্টরি উঠে যাবে?
- না না। উঠবে কেন? বানতলায় শিফ্ট হবে।
- আর আমরা?
- তোমরাও যাবে।
- ছাটাই করে দেবে না?
- ছাটাই করবে কেন?
- যদি করে দেয়? এত বড় বড় মেশিন আসছে!
- ধুর। যত বড় বড় মেশিন আসবে তত তোমাদের লাভ। মেশিন আসছে মানে প্রোডাকশন বাড়ছে।
- তার মানে ছাটাই করবে না?
- ছাটাই করলে অন্য কোথাও কাজ নেবে।
- এইসব ছাড়া তো আর কিছু জানি না।
- এখন আর কাজের অভাব কারোর হবে না।
- তালে আপনারা যে বলতেন মেশিন মানুষকে খেয়ে নেয়?
- এখন পার্টিলাইন চেঞ্জ হয়েছে। রতনলাল ক্রিকেটের ক্যাপ্টেনের মত হাসি ছেড়ে বলে, আমরা বাস্তববাদী।
কিন্তু আরও বছর খানেক পর, মেটারনিটি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ছলিমুল্লা বাস্তবের সঙ্গে গায়ে গা এলিয়ে থাকা অবাস্তবতার সমাচারকে ঠিক চিনতে পেরেছিল। তা না হলে, মেয়ে জন্মানোর খবর পেয়ে সে যখন শুকুর আদায় করতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল, ৩ দিন ধরে থমকে থাকা আকাশটা কিভাবে অমন গুমোট মেঘকে সরিয়ে দিতে পারল? ছলিমুল্লার এখনও মনে আছে, মেঘ সরে যেতেই আকাশে লাল চাঁদ উঠেছিল। চাঁদের পাশে দপদপ করে জ্বল ছিল তিন তিনটি তারা।
ফলে সে আরও ভেবেছিল, এই জ্বলে ওঠা তারার নিশানা তার মেয়েটির শরীরে কোথাও না কোথাও নিশ্চয় রয়ে গেছে। নিশানাটি কোথায় সে ঠিক জানেনা। তবু তার দৃঢ় বিশ্বাস, কেউ না কেউ, হয়তবা ইয়ান আব্রাহামই, সেই নিশানাটা পড়ে নিয়ে পরবর্তী সমাচার সম্পর্কে তাদের অবহিত করে দেবে ঠিক।
নাফিসার নাকের নিচে একটা ছোট্ট কালো তল আছে। এখন ফেসিয়াল করতে গিয়ে সেই তিলের উপর আঙ্গুল চালালে তার সারা শরীর সজাগ হয়ে ওঠে। গায়ের লোম গুলোয় কাঁটা দেয়। সে নিজের মনেই হাসে।
বিয়ের কথাবার্তা শুরু হবার পর থেকেই এইসব হচ্ছে নাফিসার। হয়ত কারোর সঙ্গে কথা বলছে, বা এমনিই, কিংবা বিকেলের হাওয়া লাগলে তার শরীর দিয়ে ঝনঝন করে বাজনা বাজে। এই বাজনা কেউ শুনতে পায় না। আবার কেউ কেউ তা শুনতেও পায়।
নাফিসার যত সন্দেহ এসে পড়ে রতনলালের ছেলে রবিলালের উপর। রবিলাল বাপের মত পলিটিক্স করে না। সে NGO-র কর্মী। প্রথমবার পোলিওর দিদিদের সঙ্গে তাদের ঘরে এসেছিল। কতসব প্রশ্ন রবিলালের। আবার তার দেওয়া উত্তর গুলো একটা খাতায় টুকে নিচ্ছে।
রবিলাল জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি ক্লাস নাইনের পর আর স্কুলে গেলে না কেন?
- এমনি।
- কোন কারণ তো নিশ্চয় থাকবে। পড়াশুনার খরচ চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল?
- তা হচ্ছিল।
- তবে সেটাই কারণ?
নাফিসা হাসে। হাসতে হাসতে বলে, আমি মাধ্যমিক পাশ দিলে আমার বর পাওয়া যেত না। মেয়েদের তো ছেলেদের থেকে কম জানতে হয়।
- কিন্তু তোমার বর যদি কোন গ্রাজুয়েট ছেলে হয়? তুমি তো জান না তোমার সঙ্গে কার বিয়ে হবে। তোমার বর তো গ্রাজুয়েট হতেই পারে।
- তা কেন হবে? নাফিসা মাথা নাবিয়ে বলেছিল, আমাদের ওরকম হবে না।
আর একবার রবিলাল ২ জন বিদেশীকে নিয়ে তাদের ঝোপড়াপট্টিতে হাজির। তার মত আরও কজনকে জড়ো করে মেয়ে গুলো ইংরাজিতে প্রশ্ন করছিল। রবিলাল সেগুলোকে বাংলায় তর্জমা করে দিচ্ছিল। প্রশ্নগুলির মধ্যে কতকগুলি এইরকম ঃ-
১। তোমাদের মধ্যে মাধ্যমিক পাশ করেছে কজন?
২। তোমাদের বাড়িতে খাবার জলের ফিল্টার আছে?
৩। শরীর খারাপ করলে তোমরা কোন ডাক্তারের কাছে যাও?
৪। পিরিয়ডের সময় স্যানিটরি ন্যাপকিন ব্যবহার করো?
শেষ প্রশ্নটা যে তাদেরকে হতে তা নাফিসার ধারনারও বাইরে ছিল। রবিলালের মুখ থেকে বের হওয়া ‘পিরিয়ড’ ও ‘ন্যাপকিন’ শব্দ দুটি তাকে এতটাই নাড়িয়ে দিছিল যে সে এরপর যতবার রবিলালের সঙ্গে দেখা করেছে, ততবার ভেবেছে রবিলাল কী-এক উপায়ে সে প্যান্টির তলায় ন্যাকড়া বেঁধেছে নাকি ন্যাপকিন পরেছে তা ঠিক জেনে ফেলতে পারে।
অবশেষে রবিলাল ছলিমুল্লার কাছে পারমিশান নিতে গেল, আমি নাফিসার জন্য এসেছি।
ছলিমুল্লা আহ্লাদে আটখানা, তুমি তো রতনলালের ছেলে?
- জী। আমি একটা NGO-তে চাকরি করি।
- হ্যা, তা তো জানি। কিন্তু নাফিসা?
রবিলাল গুছিয়ে বলে, আমরা এখানে একটা সেন্টার খুলেছি। এখানকার মেয়েদের ফ্রিতে কম্পিউটার আর স্পোকেন ইংলিশ শেখানো হবে। নাফিসাকে দরকার।
ছলিমুল্লা দমে যায়, তো ও কী করবে?
- ও শিখবে।
- ওর তো বিয়ের বয়েস হয়ে গেছে। এখন শিখে কী করবে!
- যতদিন না বিয়ে হচ্ছে ততদিন শিখুক না চাচা। আপনাকে তো কোন খরচ দিতে হচ্ছে না।
ছলিমুল্লা রাজি হয়ে যায়।
আসলে ছলিমুল্লার তখনও আশা ছিল, রবিলাল এই মূহুর্তে মুখ ফেরালেও সে-ই হয়ত সেই সাংবাদিক যে তার মেয়ের শরীরের সমাচার ঠিকঠাক পড়ে নিতে পারবে। ফলে সে ডিউটি সেরে (এখন সে সিকিউরিটি গার্ড) ঘরে ফিরে যদি দেখে নাফিসা তখনও ফিরে আসেনি, সে ঝোপড়াপট্টি থেকে বেরিয়ে আসত, রাতের আকাশের দিকে তাকাত, কান পাততো যদি তার মেয়েকে নিয়ে কোন কানাঘুষো শোনা যায়, কখনও আকাশ মেঘলা থাকলে (আর কোথাও যাবার নেই, তাই) পার্কে বসে আসরাফ গাজির রফি-কন্ঠের গান শুনতো।
এমনিতে ইলেক্ট্রিকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যের পর থেকে ঘরে টিউবলাইট জ্বলত না। কোনক্রমে একটা জিরো জ্বেলে ভূতের মত বাসবাসই এখানে নিয়ম।
এরকম আধো অন্ধকারে, একদিন সে লক্ষ্য করে, নাফিসা ইনিয়ে বিনিয়ে কেঁদেই চলেছে।
- কী হয়েছে?
নাফিসা চুপ।
- রবি কিছু বলল?
নাফিসা দুদিকে মাথা নাড়ে। তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বলে ফেলে, আমি আর সেন্টারে যাব না।
- কম্পিউটার শিখবি না?
- না, আমি কোথাও যাব না। বলেই সে কথা থামিয়ে দেয়। আর কিছুর জবাব দেয় না।
এমনকি কদিন পর গফুর খান কোথাকার এক বিহারি দোকানদারের জন্য তার মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে এলে নাফিসা লজ্জায় মুখ সরিয়ে নেয়।
ছলিমুল্লা বলে, কী রে?
নাফিসা বলে, আমি কি জানি।
গফুর খান এসব ব্যাপারে ওস্তাদ। সে জানিয়ে দেয়, তালে এটাই ফাইনাল।
বিয়ের আগের দিনকে বলা হয় ক্ষীর-পিঠে।
ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ দেওয়া হয়েছে। সেই হলুদ নাফিসাকে মাখানো হয়ে গেছে। হলুদ মেখে নাফিসা এখন চার-পাঁচ রকম খাবারের সামনে বসে রয়েছে। লোকজন তাকে গালে তুলে খাবার খাওয়াচ্ছে। খাওয়ানোর পর যে যার মত একটি থালায় টাকা দিচ্ছে। নাফিসা আড়চোখে দেখে নিচ্ছে কত টাকা জমলো।
ছলিমুল্লা যেন এইসব দেখে কীসের সংকেত পাবার আশায় তটস্থ হয়ে থাকে।
এই যে কসমেটিক্সের দোকানে সে অমন আলগা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তা তো নাফিসাকে পালাবার পথ করে দেবার জন্যই। কিংবা এমনও তো হতে পারত, সে বিউটি পার্লারের বাইরে মেয়ের জন্য ওয়েট করছে – আর ওদিকে ততক্ষণে মেয়েটি পেছনের দরজা দিয়ে গায়েব! পাড়াপ্রতিবেশী মায় গভর্মেন্টও তার আর কোন হদিশ দিতে পারছে না।
ছলিমুল্লা ভেবে পায় না, নাফিসা এতসব সুযোগ হাতছাড়া করে দিচ্ছে কেন? কী আছে নাফিসার মনে?
এখন গভীর রাত।
লোকজন খেয়েদেয়ে চলে গেছে। বিয়ে উপলক্ষে তার ঘরের সামনে টুনি বাল্ব লাগানো হয়েছিল। সেই গুলি থেকে সস্তার আলো বেরিয়ে আছে। কোথা থেকে যেন টিভি চলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। লাস্ট ট্রেনটাও চলে গেল।
নাফিসার ফোনে দুবার রিং বাজল। নাফিসা ফোনটা কেটে দিল।
এই তো সে বিছানা থেকে উঠে বসেছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখছে।
এখন সে দরজার সামনে গেল। একবার পেছনে তাকাল। তারপর বেরিয়ে পড়ল।
ছলিমুল্লা মেয়েকে ফলো করল।
সারা গায়ে হলুদ মেখে স্ট্রীটলাইটের আলোয় নাফিসা হাঁটছে।
ছলিমুল্লা চোরের মত অন্ধকারে মিশে আছে।
তাদের ঝোপড়াপট্টির পাশে একটা ডালডা কারখানা ছিল। কারখানাটি ভেঙে ফ্লাটবাড়ি উঠছে। নাফিসা সেই প্রকল্পের ভেতর ঢুকে গেল।
এধার-ওধার কতরকমের সরঞ্জাম। ইটপাথরের স্তূপ। ছলিমুল্লা স্তূপের ভেতর লুকিয়ে নাফিসাকে দেখছে।
একটি পুরুষ কন্ঠ, যাকে সে দেখতে পাচ্ছে না, ডাকল, এদিকে এসো।
- না।
- এসো?
- তুমি মিথ্যে।
- মিথ্যে কেন?
- জানো না বুঝি?
- কি জানি না?
- তুমি মিথ্যে।
- মিথ্যে নয়।
- তবে?
- সত্যির উল্টোটাও তো সত্যি।
নাফিসা চুপ।সে একবার লাল চোখে বুঝি এদিকে তাকাল। একটা হাত তার বুকের কাছে এগিয়ে আসছে। নাফিসা হাতটা সরিয়ে দিল।
- কিছু বুঝলে?
নাফিসা তবু কথা বলে না। মাটিতে তক্তা ফেলে শাড়িটা কোমড় অব্দি তুলে উপুর হয়ে শোয়। শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করে। আবার ঘাড় বেঁকিয়ে পুরুষটিকে বলে, তবে তাই।
পুরুষটি এগিয়ে আসে।
ছলিমুল্লা শুনতে পায়, তার মেয়েটি এতসবেও কী-রকম বলতে পারছে, এটাই সত্যিটার উল্টো?
ছেলের সঙ্গে বেশি লোক আসবে না। এই জনা পনের। এদিকে ছলিমুল্লার নিজের তরফের প্রায় ৩০ জনের মত আছে। তো ৫০ জনের রান্নাবান্না চলছে সকাল থেকেই। আসরাফ গাজি এই দিকটা দেখছে।
ছলিমুল্ললা খালি এদিক ওদিক ঘুরঘুর করে। কোন কাজে হাত দেবে বুঝে উঠতে পারে না। কারণে অকারণে নাফিসার খবর নেয়। নাফিসার কোমড়ে ভীষণ ব্যাথা।
ওদিকে কজন মেয়েছেলে সকাল সকাল এসে হাজির। তারা নাফিসাকে গোসল করাবে। নাফিসা বলে, না। তারা কিছুতেই তা শুনবে না। বিয়ের আগের স্নান একা একা করতে নেই।
নতুন সাবান-শ্যাম্পু নিয়ে নাফিসা তাদের সঙ্গে বাথরুমে চলে গেল।
দুপুরের দিকে নাফিসাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে খাটে বসানো হল। মেয়ে গুলো তাকে সাজাচ্ছে। একজন ঝাঁটার কাঠিতে চন্দন গুলে কপালে কল্কে আঁকছে। নাফিসা থাকতে থাকতে আয়নায় মুখ দেখছে।
তার চোখের কোণ কি চিকচিক করছে? মাথার ভেতর কোন সাজিশ লুকিয়ে রাখেনি তো মেয়েটা?
দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে তখনও বর আসেনি।
আসরাফ গাজি খবর দিল বর নাকি ঘোড়ায় চেপে আসছে।
ঘোড়া?
কে একজন, বুঝি সে সেন্টারে যায়, অমনি ফুট কাটলো, ঘোড়া না, ডঙ্কি। ডঙ্কি।
গাধা?
ছলিমুল্লা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বর যাত্রীদের বসবার জন্য তাদের ঘরের সামনে কটা চেয়ার ফেলা হয়েছে। সে চেয়ার গুলোর মাঝখানে চক্কর মারতে থাকে।
এই কোলকাতা, এই বাস-ট্রাম, এই পলিটিক্সের মাঝখান দিয়ে, এই লোকজন-ফ্লাটবাড়ি-ভিক্টোরিয়ার মাঝখান দিয়ে হেলেদুলে গাধার পিঠে চেপে কে আসছে?
কে?
ছলিমুল্লা কোন এক সুসমাচার জানবার জন্য শেষবারের মত কান পাতে।
লেখক পরিচিতি
সাদিক হোসেন
জন্ম ১৯৮১।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। পশ্চিমবঙ্গ। ভারত।
গল্পকার। ঔপন্যাসিক।
প্রকাশিত বই :
১. দেবতা ও পশুপাখ। প্রকাশকাল ২০০৭।
২. সম্মোহন। প্রকাশকাল ২০১০।
৩. মোমেন ও মোমেনা। উপন্যাস। প্রকাশকাল ২০১১।
৪. গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়, গল্প সংকলন। প্রকাশকাল ২০১৩।
সম্মোহন বইটির জন্য পেয়েছেন ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি যুবা পুরস্কার।
সাদিক হোসেন
জন্ম ১৯৮১।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। পশ্চিমবঙ্গ। ভারত।
গল্পকার। ঔপন্যাসিক।
প্রকাশিত বই :
১. দেবতা ও পশুপাখ। প্রকাশকাল ২০০৭।
২. সম্মোহন। প্রকাশকাল ২০১০।
৩. মোমেন ও মোমেনা। উপন্যাস। প্রকাশকাল ২০১১।
৪. গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়, গল্প সংকলন। প্রকাশকাল ২০১৩।
সম্মোহন বইটির জন্য পেয়েছেন ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি যুবা পুরস্কার।
0 মন্তব্যসমূহ