কুসুমকে আপনারা কে না চেনেন? বাংলা সাহিত্য-কল্লোল যুগ-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়- পুতুলনাচের ইতিকথা-শশী আর কুসুম। জগদীশ বসু থেকে হুমায়ুন আজাদ পর্যন্ত কত নক্ষত্রসরণি পেরিয়ে আপনাকে আসতে হবে ঝোপঝাড়ে আচ্ছন্ন গাঢ় সবুজ অন্ধকারের এই আস্তানায়। মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের লৌহজং উপজেলার গাওদিয়া গ্রাম। লোকে বলে মানিকের মামাবাড়ি এই গাওদিয়া গ্রামে। হোক বা নাই হোক গাওদিয়া অক্ষয় আছে পুতুলনাচ আর তার ইতিকথার পটভূমি হয়ে। এই গ্রামে ক্রমে গড়ে ওঠেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগার।
যদিও এই পাঠাগার গড়তে গিয়ে উদ্যোক্তা শাহাদাত আর তার বন্ধুদের হুজ্জত পোহাতে হয়েছে বেশ। রব উঠে-- এতকাল পরে কোন ব্যানার্জির নামে আবার জায়গা দখলের মতলব! তবু সেসব বাঁধা পেরুনো গেছে এক সময়। যক্ষ্মায় প্রাণ যাওয়া বাংলা কথাসাহিত্যের কালো রাজপুত্তুর জন্মের শতবছর পর যেন ভূত হয়ে জেগে ওঠেন পদ্মাভাঙা এই গাওদিয়া গ্রামে। আর কি আশ্চর্য! এই গ্রামেই কিনা এতকাল পরে কোন স্কুলমাস্টার তার মেয়ের নাম রাখে কুসুম! স্কুলমাস্টার পদ্মানদীর মাঝি পড়েছে হয়তো, একটু গভীর পড়াশোনা থাকলে হয়তো গাইড বইয়ে লেখা আপ্তবাক্যের মতো বিশ্বাসও করেন তিনি ‘মাকর্সীয় সমাজচেতনা ও ফ্রয়েডিয় মনোবিকলনের প্রভাবসফল লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ কিন্তু আমাদের কুসুমের বাবার সঙ্গে কথা বলে অনুমান করা কষ্টকর যে পুতুলনাচের ইতিকথা পড়ে, হৃদয়ঙ্গম করে তিনি মেয়ের নাম রেখেছেন কুসুম। হয়তো ‘কুসুমে কুসুমে চরণ চিহ্ন ...’, না না- নিশ্চয়ই ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা ...’ থেকেই মেয়ের নাম নির্বাচন করেছেন তিনি। আর এমন তো নয় যে কুসুম তার শশীর অপেক্ষায় দিন গুনছে বরং এমনটাই সত্য যে কুসুম আদৌ শশী নামে কাউকে চেনেই না। তার অস্তিত্বের অভিধানে এখন পর্যন্ত শশী বলে কারো উপস্থিতি টের পায়নি সে। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগারে পত্রিকা পড়তে গিয়ে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী কুসুম কোন সাহিত্যপাতায় জনৈক এলেবেলে কবির একটি কবিতার শেষ লাইনে গিয়ে থমকে গিয়ে ছিল একদিন--
সূর্যাস্ত দেখার ছলে
শশী ছুটে যায় মৃত্যুকুসুম টিলায়।
হায় হায় কে এই শশী! আমাকে এক্কেবারে মরা পাহাড়ের চূড়া বানিয়ে দিল!
অতঃপর শশী এলো কুসুমের জীবনে তবে গাওদিয়া গ্রামে নয়, ফেসবুক পেজে। ‘শশী’ নামে সার্চ দিয়ে ছেলেমেয়ে অনেকের একাউন্ট খুঁজে পেল কুসুম তবে একজনের ওয়ালে গিয়ে তার চোখ স্থির নিবদ্ধ-- ‘ইন এ রিলেশন শিপ উইথ কাল্পনিক কুসুম।’
কে এই কুসুম!
সে নিজে নাকি কোন অনাম্নী অঙ্গনা?
এই সেই নানা কিছু ভেবেচিন্তে আমাদের বাস্তবের কুসুম কল্পকুসুমকামী শশীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। আর তারপর অপেক্ষা... রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে কোন ম্যাসেজ দেয় কি না শশী।
হ্যাঁ, এক সময় ফেবুফ্রেন্ড শশীর ম্যাসেজ আসে ‘সূর্যাস্ত দেখার ছলে/শশী ছুটে যায় মৃত্যুকুসুমটিলায়।’ আরে, এতো সেদিন পত্রিকায় পড়া কবিতা! সেই কবিই কি এই শশী! কিন্তু পত্রিকার পাতায় তার নাম তো ছিল অন্য কিছু। হয়তো নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা।
তবে ফিরতি ম্যাসেজে এই সব কিছু না বলে কুসুম লিখে ‘আপনি কি কবি?’
উত্তর এলো ‘না, ঠিক মতো বাঁচতেই জানি না, কবিতা লিখব! লিখতে লজ্জা করে।’
কী রকম উত্তর রে বাবা! ফেসবুক খুললেই তো এখন কবিতার ছড়াছড়ি আর ইনি কি না বলে কবিতা লিখতে লজ্জা করে!
পাল্টা ম্যাসেজ দেয় কুসুম ‘কবিতা লেখা লজ্জার বিষয় নাকি?’
উত্তর আসে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা পড়েছেন?’
না, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগারে বইটা কুসুম দেখেছে বটে কিন্তু পড়ে দেখা হয়নি। ভাবল বইটা পড়েই উত্তর দেবে শশীকে। পরদিন পুতুলনাচের ইতিকথা বইটি পড়তে শুরু করে আর কোন বিরতি দিল না কুসুম। উপন্যাসে আছে এই গাওদিয়া গ্রামের কথা, বাজিতপুর, যাত্রাপার্টি, গ্রামীণ জীবনচিত্র আর কি আশ্চর্য! পুতুলনাচের শশীর আক্ষেপ ছিল যে গাওদিয়া গণ্ডগ্রামে একটি লাইব্রেরি পর্যন্ত নেই কিন্তু না, এখন তো এই গ্রামে লাইব্রেরি আছে শশীর স্রষ্টা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই নামে আর কেমন আশ্চর্য কাকতাল যে এই লাইব্রেরিতে বসেই কুসুম পত্রিকার পাতায় খুঁজে পেলো শশী নামের কাউকে যে সূর্যাস্ত দেখার ছলে ছুটে চলে মৃত্যুকুসুমটিলায়। আর বইটা পড়ে লাভের লাভ এই যে জানা গেল-- শশীর লাস্ট ফেসবুক ম্যাসেজটা আসলে কুমুদের ডায়ালগ। কিন্তু শশী নিজেকে কেন কুমুদের মতো এতটা বিপন্ন ভাবে!
চ্যাট অনলাইনে নিজের পুতুলনাচের ইতিকথা পড়ে শেষ করার বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বেশ কনফিডেন্টলি মানিকের কুসুমের মতোই জিজ্ঞেস করে ‘আপনার সাথে কথা বলি ফেসবুকে কিন্তু এদিকে আমার মন কেমন করে কেন?’
কিছুক্ষণ পর শশীর হাড়-হিম করা উত্তর ‘মন মন, তোমার শরীর নাই কুসুম?’
কুসুম অবাক হয়ে অন্য কিছু ভাবার আগেই শশীর ম্যাসেজের পুরোটা ভেসে এলে স্ক্রিনে ‘ভয় পাবেন না কুসুম বেগম। আমি পুতুলনাচের ডায়ালগটা একটু উল্টে দিয়ে মজা করলাম আর কি।’
কুসুম একটুও অপ্রস্তুত না হবার ভান করে উত্তর দিল ‘ভয় পাব কেন? আমি ভয় পাই না কারণ আপনার মতো আমি এত কিছু বুঝি না, ভাবি না। জীবনকে যারা বুঝে, বিশে¬ষণ করে বাচতে চায় তাদের অনেক দুঃখ পেতে হয়।’
শশীর তাৎক্ষণিক উত্তর ‘বাহ, পুতুলনাচের ইতিকথা পড়া হয়ে গেছে তাহলে ... দারুণ ডায়ালগ মুখস্ত- করা কথা বলছেন দেখছি।’
কুসুম ফের পুতুলনাচের ভাষা কিছুটা বদলে দার্শনিক জবাব দেয় ‘আর কিছু না, ক্ষণিকের জীবনে আমরা তো আসলে অনন্ত পুতুল... কোন এক আড়ালের ছুঁড়ে দেয়া মুদ্রা ধার করে নেচে নেচে জীবনের ইতিকথা-পুরাকথা তৈরি করছি মাত্র।’
শশী এবার সত্যিই মুগ্ধ। এতদিন ভাবতো সে নিজেই যেন মানিকবাবুর পুতুলনাচের দর্শনকে নিজের মধ্যে আত্মভূতের মতো নিঃসঙ্গ উল্লাসে-বেদনায় বয়ে বেড়ায়। এখন দেখল যে এই ২০১৫’তে কুসুম নামে একটা মেয়ে গাওদিয়া গ্রামে বসে উপন্যাসের সেই কুসুমের মতোই ‘তার সযত্ন বজায় রাখা শিক্ষা-সভ্যতা, গরিমার খোলসে ফাটল ধরিয়ে দিয়ে গেল।’ সেই তো তবে নতুন শতকের কবি শশীর কবিতায় লেখা মৃত্যুকুসুমটিলা... যার অনির্দেশ্য সন্ধানে এতকাল একলা থাকা তার।
না, সমস্ত গরিমা ভুলে নিজেকে সমর্পণের উদ্দেশে কুসুমের ফেসবুকে ইনবক্স করতে গিয়ে দেখে উপন্যাসের সেই কটাক্ষকারী আকাশের দেবতার মতোই ফেসবুকের টাইমলাইন-দেবতা যেন তাকে কটাক্ষ করে দেখায় ‘কুসুম’ নামের ফেসবুক আইডিটি এক্কেবারে উধাও।
না এরপর আর কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া গেল না কুসুমকে। তবে শশী নামে এক এলেবেলে কবির জীবনে ‘কুসুম’ নামের মায়া রয়ে গেল।
লেখক পরিচিতি
পিয়াস মজিদ
মূলত কবি। প্রবন্ধ লিখেন। বেরিয়েছে গল্পের বইও। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মরত আছেন বাংলা একাডেমিতে।
প্রকাশিত গ্রন্থ, কবিতা: নাচপ্রতিমার লাশ ( ২০০৯), মারবেল ফলের মওসুম (২০১১), গোধূলিগুচ্ছ (২০১৩); প্রবন্ধ: করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২), কবিতাজীবনী (২০১৪), গল্প: ক্ষত আত্মার বিজ্ঞপ্তি (২০১০)। এছাড়া সম্পাদনাও করেছেন কয়েকটি বই। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন ‘এইচ এস বি সি কালি ও কলম পুরস্কার ২০১২’। piasmajid@yahoo.com
যদিও এই পাঠাগার গড়তে গিয়ে উদ্যোক্তা শাহাদাত আর তার বন্ধুদের হুজ্জত পোহাতে হয়েছে বেশ। রব উঠে-- এতকাল পরে কোন ব্যানার্জির নামে আবার জায়গা দখলের মতলব! তবু সেসব বাঁধা পেরুনো গেছে এক সময়। যক্ষ্মায় প্রাণ যাওয়া বাংলা কথাসাহিত্যের কালো রাজপুত্তুর জন্মের শতবছর পর যেন ভূত হয়ে জেগে ওঠেন পদ্মাভাঙা এই গাওদিয়া গ্রামে। আর কি আশ্চর্য! এই গ্রামেই কিনা এতকাল পরে কোন স্কুলমাস্টার তার মেয়ের নাম রাখে কুসুম! স্কুলমাস্টার পদ্মানদীর মাঝি পড়েছে হয়তো, একটু গভীর পড়াশোনা থাকলে হয়তো গাইড বইয়ে লেখা আপ্তবাক্যের মতো বিশ্বাসও করেন তিনি ‘মাকর্সীয় সমাজচেতনা ও ফ্রয়েডিয় মনোবিকলনের প্রভাবসফল লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ কিন্তু আমাদের কুসুমের বাবার সঙ্গে কথা বলে অনুমান করা কষ্টকর যে পুতুলনাচের ইতিকথা পড়ে, হৃদয়ঙ্গম করে তিনি মেয়ের নাম রেখেছেন কুসুম। হয়তো ‘কুসুমে কুসুমে চরণ চিহ্ন ...’, না না- নিশ্চয়ই ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা ...’ থেকেই মেয়ের নাম নির্বাচন করেছেন তিনি। আর এমন তো নয় যে কুসুম তার শশীর অপেক্ষায় দিন গুনছে বরং এমনটাই সত্য যে কুসুম আদৌ শশী নামে কাউকে চেনেই না। তার অস্তিত্বের অভিধানে এখন পর্যন্ত শশী বলে কারো উপস্থিতি টের পায়নি সে। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগারে পত্রিকা পড়তে গিয়ে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী কুসুম কোন সাহিত্যপাতায় জনৈক এলেবেলে কবির একটি কবিতার শেষ লাইনে গিয়ে থমকে গিয়ে ছিল একদিন--
সূর্যাস্ত দেখার ছলে
শশী ছুটে যায় মৃত্যুকুসুম টিলায়।
হায় হায় কে এই শশী! আমাকে এক্কেবারে মরা পাহাড়ের চূড়া বানিয়ে দিল!
অতঃপর শশী এলো কুসুমের জীবনে তবে গাওদিয়া গ্রামে নয়, ফেসবুক পেজে। ‘শশী’ নামে সার্চ দিয়ে ছেলেমেয়ে অনেকের একাউন্ট খুঁজে পেল কুসুম তবে একজনের ওয়ালে গিয়ে তার চোখ স্থির নিবদ্ধ-- ‘ইন এ রিলেশন শিপ উইথ কাল্পনিক কুসুম।’
কে এই কুসুম!
সে নিজে নাকি কোন অনাম্নী অঙ্গনা?
এই সেই নানা কিছু ভেবেচিন্তে আমাদের বাস্তবের কুসুম কল্পকুসুমকামী শশীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। আর তারপর অপেক্ষা... রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে কোন ম্যাসেজ দেয় কি না শশী।
হ্যাঁ, এক সময় ফেবুফ্রেন্ড শশীর ম্যাসেজ আসে ‘সূর্যাস্ত দেখার ছলে/শশী ছুটে যায় মৃত্যুকুসুমটিলায়।’ আরে, এতো সেদিন পত্রিকায় পড়া কবিতা! সেই কবিই কি এই শশী! কিন্তু পত্রিকার পাতায় তার নাম তো ছিল অন্য কিছু। হয়তো নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা।
তবে ফিরতি ম্যাসেজে এই সব কিছু না বলে কুসুম লিখে ‘আপনি কি কবি?’
উত্তর এলো ‘না, ঠিক মতো বাঁচতেই জানি না, কবিতা লিখব! লিখতে লজ্জা করে।’
কী রকম উত্তর রে বাবা! ফেসবুক খুললেই তো এখন কবিতার ছড়াছড়ি আর ইনি কি না বলে কবিতা লিখতে লজ্জা করে!
পাল্টা ম্যাসেজ দেয় কুসুম ‘কবিতা লেখা লজ্জার বিষয় নাকি?’
উত্তর আসে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা পড়েছেন?’
না, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পাঠাগারে বইটা কুসুম দেখেছে বটে কিন্তু পড়ে দেখা হয়নি। ভাবল বইটা পড়েই উত্তর দেবে শশীকে। পরদিন পুতুলনাচের ইতিকথা বইটি পড়তে শুরু করে আর কোন বিরতি দিল না কুসুম। উপন্যাসে আছে এই গাওদিয়া গ্রামের কথা, বাজিতপুর, যাত্রাপার্টি, গ্রামীণ জীবনচিত্র আর কি আশ্চর্য! পুতুলনাচের শশীর আক্ষেপ ছিল যে গাওদিয়া গণ্ডগ্রামে একটি লাইব্রেরি পর্যন্ত নেই কিন্তু না, এখন তো এই গ্রামে লাইব্রেরি আছে শশীর স্রষ্টা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই নামে আর কেমন আশ্চর্য কাকতাল যে এই লাইব্রেরিতে বসেই কুসুম পত্রিকার পাতায় খুঁজে পেলো শশী নামের কাউকে যে সূর্যাস্ত দেখার ছলে ছুটে চলে মৃত্যুকুসুমটিলায়। আর বইটা পড়ে লাভের লাভ এই যে জানা গেল-- শশীর লাস্ট ফেসবুক ম্যাসেজটা আসলে কুমুদের ডায়ালগ। কিন্তু শশী নিজেকে কেন কুমুদের মতো এতটা বিপন্ন ভাবে!
চ্যাট অনলাইনে নিজের পুতুলনাচের ইতিকথা পড়ে শেষ করার বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে বেশ কনফিডেন্টলি মানিকের কুসুমের মতোই জিজ্ঞেস করে ‘আপনার সাথে কথা বলি ফেসবুকে কিন্তু এদিকে আমার মন কেমন করে কেন?’
কিছুক্ষণ পর শশীর হাড়-হিম করা উত্তর ‘মন মন, তোমার শরীর নাই কুসুম?’
কুসুম অবাক হয়ে অন্য কিছু ভাবার আগেই শশীর ম্যাসেজের পুরোটা ভেসে এলে স্ক্রিনে ‘ভয় পাবেন না কুসুম বেগম। আমি পুতুলনাচের ডায়ালগটা একটু উল্টে দিয়ে মজা করলাম আর কি।’
কুসুম একটুও অপ্রস্তুত না হবার ভান করে উত্তর দিল ‘ভয় পাব কেন? আমি ভয় পাই না কারণ আপনার মতো আমি এত কিছু বুঝি না, ভাবি না। জীবনকে যারা বুঝে, বিশে¬ষণ করে বাচতে চায় তাদের অনেক দুঃখ পেতে হয়।’
শশীর তাৎক্ষণিক উত্তর ‘বাহ, পুতুলনাচের ইতিকথা পড়া হয়ে গেছে তাহলে ... দারুণ ডায়ালগ মুখস্ত- করা কথা বলছেন দেখছি।’
কুসুম ফের পুতুলনাচের ভাষা কিছুটা বদলে দার্শনিক জবাব দেয় ‘আর কিছু না, ক্ষণিকের জীবনে আমরা তো আসলে অনন্ত পুতুল... কোন এক আড়ালের ছুঁড়ে দেয়া মুদ্রা ধার করে নেচে নেচে জীবনের ইতিকথা-পুরাকথা তৈরি করছি মাত্র।’
শশী এবার সত্যিই মুগ্ধ। এতদিন ভাবতো সে নিজেই যেন মানিকবাবুর পুতুলনাচের দর্শনকে নিজের মধ্যে আত্মভূতের মতো নিঃসঙ্গ উল্লাসে-বেদনায় বয়ে বেড়ায়। এখন দেখল যে এই ২০১৫’তে কুসুম নামে একটা মেয়ে গাওদিয়া গ্রামে বসে উপন্যাসের সেই কুসুমের মতোই ‘তার সযত্ন বজায় রাখা শিক্ষা-সভ্যতা, গরিমার খোলসে ফাটল ধরিয়ে দিয়ে গেল।’ সেই তো তবে নতুন শতকের কবি শশীর কবিতায় লেখা মৃত্যুকুসুমটিলা... যার অনির্দেশ্য সন্ধানে এতকাল একলা থাকা তার।
না, সমস্ত গরিমা ভুলে নিজেকে সমর্পণের উদ্দেশে কুসুমের ফেসবুকে ইনবক্স করতে গিয়ে দেখে উপন্যাসের সেই কটাক্ষকারী আকাশের দেবতার মতোই ফেসবুকের টাইমলাইন-দেবতা যেন তাকে কটাক্ষ করে দেখায় ‘কুসুম’ নামের ফেসবুক আইডিটি এক্কেবারে উধাও।
না এরপর আর কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া গেল না কুসুমকে। তবে শশী নামে এক এলেবেলে কবির জীবনে ‘কুসুম’ নামের মায়া রয়ে গেল।
পিয়াস মজিদ
মূলত কবি। প্রবন্ধ লিখেন। বেরিয়েছে গল্পের বইও। জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মরত আছেন বাংলা একাডেমিতে।
প্রকাশিত গ্রন্থ, কবিতা: নাচপ্রতিমার লাশ ( ২০০৯), মারবেল ফলের মওসুম (২০১১), গোধূলিগুচ্ছ (২০১৩); প্রবন্ধ: করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২), কবিতাজীবনী (২০১৪), গল্প: ক্ষত আত্মার বিজ্ঞপ্তি (২০১০)। এছাড়া সম্পাদনাও করেছেন কয়েকটি বই। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন ‘এইচ এস বি সি কালি ও কলম পুরস্কার ২০১২’। piasmajid@yahoo.com
0 মন্তব্যসমূহ