শামসুজ্জামান হীরা'র গল্প : লেভেলক্রসিং

থপথপ্ থপথপ্ — রেললাইনের স্লিপারে পুরনো চপ্পল-পরা লোকটা এক লয়ে পা ফেলে এগিয়ে চলেছে। কিছুদূর এগিয়ে আবার পিছিয়ে আসে। এখান থেকে সামনের লেভেলক্রসিং পর্যন্ত কতগুলো স্লিপার; গুনে দেখবার কেন জানি প্রবল ইচ্ছা জাগল তার মনে। এ-কাজটা এর আগে আর কেউ করেছে বলে তার জানা নেই। মুচকি হাসে লোকটা। যদিও হাসিটা তার এঁটে-থাকা আঠালো ঠোঁট দুটোতে ফাটল ধরাতে পারে না — বাঁকিয়ে দেয় শুধু খানিকটা। ওর এক বন্ধু, রেললাইনের পাশ ঘেঁষে যার বেশ বড়সড় এক রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুম, ওকে যদি জিজ্ঞেস করা যায়: ‘বল তো দেখি জারুলডাঙ্গার লেভেলক্রসিং থেকে আশানগর ক্রসিং পর্যন্ত রেলপথটুকুতে কয়টি স্লিপার আছে?’ পারবে বলতে? প্রশ্নই ওঠে না।
জবাব দেওয়ার বদলে ও হয়তো ওর ছ্যাঙার মত ভুরুজোড়া বাঁকাবে; পান খাওয়া মুখ থেকে পিচ্ করে পিক ফেলবে পাশে রাখা পিকদানিতে। কিন্তু লোকটি ভেবে দেখল, রেলওয়ে স্লিপার গনার সঙ্গে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত। যদিও বিষয়গুলো কী, সে-সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই তার। তবে নিজেকে সে এখনও যথেষ্ট সৎ বলে মনে করে। মনে করে সৎভাবে জীবনযাপনই সবকিছু — অন্য যা-কিছুকে লোকে গুরুত্ব দেয় তার থোড়াই কেয়ার করে সে।

বিড়বিড় করে স্লিপারগুলো গুনে চলল ও।

রেললাইন ধরে আশানগর লেভেলক্রসিংয়ে যাওয়া শর্টকাট হয়। আরে শর্টকাট কী! ওই জায়গায় পৌঁছনোর আর কোনও পথ থাকলে তো! তাছাড়া ওকে যে যেতেই হবে, কেননা মহিলা ওকে কথা দিয়েছেন, আশানগর ক্রসিং পেরিয়েই বামদিকে মোড় নিয়ে পাঁচ মিনিটের হাঁটা-পথ — বিশাল পাকুড়গাছটার নিচে ছোট্ট কিন্তু ছিমছাম একটি ঘর, সেখানে তিনি তার জন্য অপেক্ষা করবেন। কটা থেকে কটা পর্যন্ত যেন? মনে করতে পারছে না। এ এক জ্বালা! অনেকদিন হল কিচ্ছু মনে থাকে না ওর। এখন কটা বাজে? ক্যাসিও ডিজিটাল ঘড়িতে 2:03। মহিলাটি লাঞ্চের পর ওখানে আসবেন, সেকথা মনে আছে। তার জন্য অপেক্ষা করবেন। উনি চাইলে কিছু একটা গতি হলেও হতে পারে লোকটার। কাউকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখা সাজে না ওর। সাজে না কথাটার অর্থ কী দাঁড়ায়। কাদের সাজে! মন্ত্রীমিনিস্টার, বুদ্ধিজীবী, আমলা, — এদের? ও কখনো এ-জাতীয় কিছু ছিল বলে আমাদের জানা নেই। জানা যায়, বছর সাতেক আগেও একজন দাপুটে ব্যবসায়ী ছিল — তারও বহুকাল আগে কোনও এক প্রাগৈতিহাসিক (এই শব্দটা লোকটার মুখে শোনা যায় প্রায়ই) যুগে যুদ্ধ করেছিল এদেশে হানাদার শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে। এখন কর্মহীন, বদ্ধবেকার। বদ্ধবেকার — হা হা হা, বদ্ধউন্মাদের মত শোনাল কথাটা!

সকালে আজ নাস্তার টেবিলে কড়কড়ে দু-টুকরো পাউরুটি আর আলুভাজি রাখা ছিল। আর একদিন থাকলে রুটির টুকরো দুটোতে ছত্রাক ধরত নির্ঘাত। ডায়াবেটিক রোগী, খালিপেটে ওষুধ খাওয়ার পর কিছু তো খেতেই হয়। মিনমিনে সুরে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিল: ‘আর কিছু নাই?’

বাঁশচেরা গলায় স্ত্রীর জবাব: ‘বানাবে কে? বেশি খিদে লাগলে হোটেল থেকে নাস্তা এনে খেলেই হয় (রেগে থাকলে প্যাসিভ ভয়েসে কথা বলে স্ত্রী)। একপয়সা কামাইয়ের মুরাদ নাই, খাওয়ার খায়েশ তো ভালোই...।’

তা স্ত্রী যতই চিল্লাক, ও চুপ মেরে থাকে। উপায় কী! যা দু-পয়সা আয়-ইনকাম তা তো ওর দ্বারাই; সংসারটা চলছে তো ওই মহিলার কল্যাণেই। তার ওপর বেশ কদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী। বাসায় নেই কাজের বুয়া। মেজাজ খিটখিটে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তবে আশানগর গিয়ে পাকুড়তলায় পৌঁছোতে পারলে, আশা করা যায়, কিছু একটা হিল্লে হবে ওর। যদিও কী হবে তা আগেভাগে আঁচ করা শক্ত। আশা-আশঙ্কার টানাপোড়েনে উন্মনা লোকটা স্লিপারে পা ফেলে এগিয়ে চলে। ভাবে, ভদ্রমহিলা হয়ত বসে আছেন ওর অপেক্ষায়, কিংবা হয়ত কিছুক্ষণ পর আসবেন, অথবা হয়ত মোবাইলে জানাবেন আজ অমুক কারণে আসা সম্ভব হচ্ছে না, স্যরি—। কিন্তু তিনি সত্যি কি তাকে এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারবেন? কাল যে কথাগুলো বলেছিলেন, কেমন জানি লেগেছিল ওর কাছে — অস্পষ্ট, যেন আলো-আঁধারিতে মেশানো হেঁয়ালিপূর্ণ কিছু একটা! ওর বিবেকে বাধে এমন ধরনের কোনও প্রস্তাব যদি উনি রাখেন; ঠিক হবে কি তাতে সায় দেওয়া! কিন্তু না-দিয়েই বা উপায় কী! মন থেকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যা কিছুই হোক, তাকে করতেই হবে, কারণ না করে উপায় নেই। তারপরই মনে হয়, তিনি আদপেই কিছু করবেন তো তার জন্য! একবার মনে হয় করবেন, আবার মনে হয়, উহুঁ, কথা এরকম অনেকেই দেয় — যাকে বলে কথার কথা ! অতীতে অবশ্য এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে যা রীতিমতো অবাক করার মত। কোনও দিকে কোনও কূলকিনারা দেখা যাচ্ছে না, এমন সময় হঠাৎ কিছু ঘটে গেছে যাতে মুশকিল আসান!

সুতরাং আবার হাঁটা এবং স্লিপার গুনেগুনে। ডবল লাইনের ডানদিকের ট্র্যাক ধরে হাঁটছে লোকটা। আর এরও একটা কারণ নিশ্চয়ই আছে।

একশ একান্ন...বায়ান্ন...

‘এই যে সাহেব, অমন মাথা নিচা কইরা হাঁইট্যা যাইতাছেন কোন দিকে...?’

‘আশানগর...’

‘যা ঠাডাপড়া রইদ, চান্দি ফাইট্যা যাওনের জোগাড়...’

‘হুঁ...’

লোকটা কে? গায়ে পড়ে কথা বলল; মনে হয় ওদের মহল্লাতেই থাকে; চেনা চেনা লাগছে।

দিল ব্যাটা গনাটা মাটি করে। কটা জানি গুনেছিল, যাহ্, ভুলে গেল। এখন উপায়! বহুদিন ধরেই স্মৃতিস্বল্পতায় ভুগছে লোকটা — সাধারণ স্বল্পতা নয়, বলা যায় ভয়ানক স্মৃতিস্বল্পতা ¾ অ্যাকিউট ডিমেনশিয়া। এখন কী করা যায়? অনেকখানি পথ তো পেরিয়ে এসেছে। এখন পেছোনো ছাড়া তো উপায় নেই। অ্যাবাউট টার্ন! সেনাবাহিনীতে ছিল না কখনও, তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ওস্তাদরা ওদেরকে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিতে এ শব্দ দুটো বলে উচ্চস্বরে হাঁক দিত।

মুক্তিযুদ্ধ — আহা মুক্তিযুদ্ধ — তরতাজা যৌবনের সেই দিনগুলো, কী উন্মাদনা! কত আশা। দেশ স্বাধীন হলে কারও কোনও সমস্যা থাকবে না, থাকবে না কোনও টেনশন; সমাজতন্ত্র — যার যার সাধ্য অনুযায়ী কাজ — কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক; সোশ্যাল সিকিউরিটি, নো বেকারত্ব— । স্বপ্ন...স্বপ্ন একঝাক্...

ফাক্...

পেছনে হাঁটো।

হ্যাঁ, আবার এক দুই তিন...; ১৩৫ গুনতে যাবে, এমন সময় চোখ পড়ল রেললাইন ঘেঁষে গড়ে-ওঠা বস্তির সারির ওপর — এক ছাপরাতে। গুমরে গুমরে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে ওটা থেকে। ব্যাপারটা কী! চিন্তায় ছেদ পড়ল ওর। হেড়ে-গলার খিস্তি: ‘হালার প্-পুতেগর প্-পুটকি মারি...! ওই দেখা যায় ত্-তাল গাছ ওই আমাগের ঘা, ওইখানেতে ব্-বাস করে হালার পু-পু-পুতেরা...!’ ছিন্ন তবন মালকোঁচামারা তোতলা লোকটা বিশাল এক ভবনের দিকে তাকিয়ে শূন্যে হাত ছুঁড়ে সক্রোধে খেঁকিয়েই চলেছে অনবরত। সারা গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন — শ্বেতি না কি আগুনের ছ্যাঁকা-লাগা দাগ! ভবনটিকে ও চেনে; আশানগরের খুব কাছে শকুনতলিতে আকাশচুম্বি একটি অট্টালিকা; এখান থেকে স্পষ্ট নজরে আসছে। নামও মুখস্ত ওর, ‘পোশাক ভবন’। ছাপরার ভেতর আরেকজন গোঙানোরত নারী; বোধহয় নিজের কোনও অঙ্গ হারিয়েছে অথবা খুইয়েছে কোনও স্বজন। এই তো কিছুদিন আগে পোশাক-কারখানার ধসে-পড়া বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পড়ে মরল যে ১১৩৫জন, তাদেরই কেউ হবে হয়ত! তাদের কতই তো স্বজন!

গনায় ভুল হয়ে গেল আবার। টেকো মাথার ওপর অনবরত রৌদ্রের বর্শা এসে বিঁধছে। কিন্তু করার কী আছে। ফেরো আবার। মহিলাটি বলেছিলেন, লাঞ্চের পর — লাঞ্চের পর, মানে ধরে নেওয়া যায়, বিকেল তিনটে থেকে চারটের মধ্যে যেকোনও এক সময়। লাঞ্চের আগে আসতে বললে তো ভালোই হত। ভদ্রতার খাতিরে হলেও নিশ্চয়ই বলতেন: ‘একসঙ্গে লাঞ্চ সারা যাক, কি বলেন?’ জিভ একটু ভিজে আসে এবং তাতে করে ওর আঠালো ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক হয়, এবং সেই সুযোগে সে একচিলতে বক্রহাসি বলকানো বাতাসে মিশিয়ে দেয়!

এখন মোটে আড়াইটা। ধীরে ধীরে সময়ক্ষেপণ করে হাঁটলেও তিনটার আগেই গন্তব্যে পৌঁছা যাবে।

যে মহিলার কাছে যাচ্ছে লোকটা, তিনি কে?

বছর দশেক আগে ওদের ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকতেন তিনি। সুশ্রী এবং বুদ্ধিমতি। স্বামী বিদেশে চাকরি করতেন। ডাক্তার। দেশে এসেছিলেন দু’মাসের ছুটি নিয়ে। এসেই বিয়ে। বিয়ের পরে ছুটি শেষ হতেই আবার পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে, তাঁর চাকরির স্থলে। দীর্ঘদিন কেটে যায়, ফেরার কোনও নামগন্ধ নেই। দাম্পত্যজীবনের স্বাদ পাওয়ার পর ওই বয়সে কতদিন একা কাটাতে পারে কোনও যুবতী! একদিন শোনা গেল কোন এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর কালো মার্সিডিজ এসইউভি নাকি প্রায়ই সারারাত মহিলার গ্যারেজে ঘুমায়। বিষয়টা দেখতে দেখতে চাউর হয়ে পড়ে আশপাশে। কিছুদিন বাদে বিদেশ থেকে রেজিস্টার্ড ডাকে ডিভোর্স লেটার আসে। বাড়িঅলা নোটিশ দেয় বাসা ছাড়বার।

মহিলা এখন আগের চেয়েও ভালো আছেন। অভিজাত এলাকায় দামি অ্যাপার্টমেন্টে ভালোই কাটছে তাঁর দিনকাল। নিজেরই ওটা। সেই কালো মার্সিডিজ এসইউভি এখনও তাঁর গ্যারেজে সারারাত ঘুমায়। সমাজে সুন্দরী নারীদের কদর কখনই কমে না খুব একটা। তার ওপর মুক্তবাজার অর্থনীতি...

কাল অপ্রত্যাশিতভাবে এক শপিং মলে দেখা হয়ে গেল, চিনতে লোকটার কিছুসময় ব্যয় হলেও সপ্রতিভ মহিলা তার দিকে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন: ‘হাই, কেমন আছেন, ভাই? হাউ ইজ লাইফ?’

খুকখুক কেশে উত্তর দিয়েছিল লোকটা: ‘বেঁচে আছি...’

‘ব্যবসা?’

‘কবেই লাটে উঠেছে...’

‘টাকাপয়সা, ব্যাংক-ব্যালান্স...’

‘দু-হাজার দশে সব হাওয়া! হার্ডক্যাশ, ফিক্সড ডিপোজিট, সোনাদানা, সব গেছে শেয়ারের পেটে! দরবেশ! কী দেশ...! যেমন পারো লুটে নাও; লুটে নাও যত পারো...; ফ্রি মার্কেট ইকোনমি।

‘চাকরি করার ইচ্ছা আছে?’ ঠোঁটের কোনায় কেমন এক হাসির রেখা ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করেন মহিলাটি।

‘এই বয়সে!’

‘সব চাকরিতে বয়স লাগে নাকি! আপনি এখনও আগের মতই আছেন দেখছি।’

‘মানে বলছিলাম কী, মানে...’ কথার খেই পাচ্ছিল না যেন লোকটা।

‘আপনার মিসেস মিডিয়াতে আছেন না?’

‘হুঁ...’

‘অনেক হোমরা-চোমরা, সেলেব্রিটির সাথে ওনার জানাশোনা, ওঠাবসা থাকারই কথা; তাছাড়াও মডেল, নায়িকা-গায়িকা...। কাল লাঞ্চের পর, আশানগর রেলক্রসিংয়ের কাছে শকুনতলিতে যে পাকুড়গাছটা, তার নিচে ফরচুন অ্যাপারেলের যে ওয়েটিংরুম, ওখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করব। অনেক কথা হবে। আসবেন কিন্তু।’ তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, চাপা গলায় ভারিক্কি চালে বলেছিলেন, ‘জীবনের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা কঠিন বটে, তবে একবার ওঠার সঠিক কৌশলটা রপ্ত করতে পারলে একেবারে আকাশের ছাদে!’

স্লিপারে ঠিকঠাক পা ফেলে হেঁটে চলেছে লোকটা। রেললাইনের সম্মুখের প্রান্তটা শূন্যে তুলে ধরে ওটাকে ঠিক এই মুহূর্তে সীমাহীন একটা সিঁড়ি ভাবল সে এবং তাতে মনে মনে বেশ পুলক বোধ করল।

একটা স্লিপারের ওপর পা রেখে ও কী জানি কী মনে করে অযথাই ফিসফিসিয়ে ‘তিনশ’ এবং সশব্দে বলে উঠল ‘আটষট্টি...’

হঠাৎই চারদিক থেকে হৈচৈ, শোরগোল। কিছু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকাল লোকটা, আবার তার গনা ছুটে যাবে না তো!

কিন্তু বিকট ঝমঝম আওয়াজ ছাপিয়ে লোকটার কানে এসে ঝাপটা দিল তীক্ষ্ণ এক আর্তনাদ: ‘চাপা পড়ল রে-এ-এ-এ...।’

কিছু বুঝে উঠবার আগেই সবকিছু বোঝা হয়ে গেল তার! ডান ট্র্যাক ধরে কালবোশেখির বেগে ছুটে চলে গেল ‘আন্তঃনগর অনন্ত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি।

কিছুক্ষণের মধ্যে লোকজনের ভালোই ভিড় জমে উঠল তিনশ আটষট্টি নম্বর স্লিপারের কাছে। সেখানে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে কিছু মাংসপিণ্ড।

ভিড়ের মধ্য থেকে কে একজন জিজ্ঞেস করল: ‘কেউ চেনেন?’

উপস্থিত জনতা নীরবে কেবল ডানে-বামে মাথা দোলাতে থাকল।


এক যুবক বেশ কসরত করে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় মাংসপিণ্ডের ছবি তুলল। পাশে দাঁড়ানো বন্ধুকে গর্বের সঙ্গে বলল: ‘লেটেস্ট মডেলের মোবাইল ক্যামেরা। দ্যাখ, দ্যাখ, কী রেজল্যুশন, কী জীবন্ত ছবি; দেখছস্?’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ