একুশ শতকের সতেরোটি মাস পেরিয়ে রুহুল প্রামাণিক এখন অনেকটা অচেনা এই রেল বারান্দাটাতে শুধু ‘হা’ করে কাটানোর জন্যই অপেক্ষা করতে পারে। কারণ এখানে এক মুহূর্তও কাটানোর কোনো ইচ্ছে ওর ছিল না। অনির্ধারিত অপেক্ষার এই সময়টা হতে পারে একদুই ঘণ্টা, এক প্রহর, দুই প্রহর, কিংবা একটা দিনও পেরিয়ে যেতে পারে।
ক্লান্তিকর এই বসে থাকা থেকে নিষ্কৃতি পেতে নিজেকে নির্দেশ দেয় সে, ’উঠে দাঁড়াও ভাই প্রামাণিক, হাঁট, হাঁটতে থাক, অনবরত হাঁটো, যে পর্যন্ত না ক্লান্তি এসে তোমাকে লুটিয়ে ফেলে দেয় সটান কোনো ভূমিতে। হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো কাজ এ মুহূর্তে জরুরী নয় তোমার জন্য। হাঁটো সামনে থেকে পেছনে। আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে সামনে। যেভাবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ কেউ পায়চারী করে। কিন্তু তোমার কোনো দুশ্চিন্তা থাকতে পারে না।
এভাবে আদেশ দেবে নিজেকে। স্থির রেল বারান্দাটা যখন গতিশীল হয়ে উঠবে তখন ভাববে তোমার কাজের পেছনে নিশ্চয় কোনো যুক্তি ছিল। আহাম্মকের মতো খুঁজতে শুরু কর ওটা। সমান্তরাল রেল দুটো যেমন আমৃত্যু সমান্তরাল থেকে যায় তেমনি এগিয়ে নাও তোমার ভাবনা। যে দুর্ঘটনাটার জন্য তোমার এই ক্লান্তিকর অপেক্ষা ওটার জন্য খুব বেশি দুঃখ করো না। নিজেকে ভাগ্যবান মনে কর বরং। দুর্ঘটনাটা আগের ষ্টেশনে না হয়ে পরেরটাতে হলে তুমিও থাকতে ঐ গাড়িতে। আর তোমার উপরও নেমে আসতে পারত বিধাতার অকরুণ অভিশাপ। যদিও এমনই বলে অনেকে, কিন্তু বিধাতা যে কোনো অভিশাপই দেন না তা তুমি জান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমার এই নধর দেহ পরিণত হত বীভৎস একতাল মাংসপিণ্ডে। আর তুমি হয়ে যেতে এক লাওয়ারিশ। কেন না, তুমি তো জানোই ওরা কখনো মৃতের সঠিক সংখ্যা জীবিতদের জানতে দেয় না।’
যে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঘর ছেড়ে পথে পা বাড়িয়েছিল সে কতটুকু তার অর্জন করতে পেরেছে তা মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু একটা বিপরীত ভাবনা হতাশ করে ওকে। রঙিন যে কল্পনাগুলো লালন করতে ভালোবাসে সে তা এখন কদাকার এক বাস্তব হয়ে উঠে। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় সবই সৃষ্টি করেছেন, শুধু এই হতচ্ছাড়া ও কুশ্রী গ্রাম এবং এর মানুষগুলো ছাড়া। খামাকাই এরা এখন এই রেলবারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে লেগেছে। কোথাও যাবে না ওরা। সত্যি বলতে কি কোথাও যাবারই নেই ওদের। শহরে বাস করা ওদের আত্মীয়পরিজন মাঝেমধ্যে আসে এখানে ওদের সাদা পালক দেখাতে ও কিছু করুণা রেখে যেতে যাতে পরকালে আরো বেশি সুখে থাকতে পারে। প্রত্যেকে এরা ইবলিশের বংশধর। প্রভু আর যাই করুন, ইবলিশের জন্ম দেননি নিশ্চয়। ঈশ্বরের মতো ইবলিশও স্বয়ম্ভু।
প্রাচীন এই গ্রামে মানুষের তুলনায় মাটি কম। মাটি নিয়ে তাই খুন জখম হতে থাকে নিয়মিত। আর পাইক পেয়াদা আদালত বরকন্দাজের খতিয়ানে এটা একটা পয়মন্ত গ্রাম। মাটি কম থাকায় সব কিছুর খাঁটিত্বও কম এখানে। যার হাতে বেশি মাটির অধিকার ক্ষমতাও তার অনেক বেশি। একাধিক স্ত্রী রাখতে পারে সে। দাসীবাঁদীরাও বৈধ তার জন্য। কিন্তু বিত্তহীন যুবকেরা, যাদের না আছে স্ত্রী কিংবা বান্ধবী, না পরস্ত্রী, তারা কখনো অনেকে মিলে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ঐ বেচারা যদি কখনো টেঁসে যায় তাহলে চুনের ড্রামে ওকে হাপিশ করে ফেলে ওরা। ওসবের খোঁজ আর কেউ পায় না। যেমন কোনো এক সৈনিক তার পায়ের নিচের মাটি রক্ষা করতে যেয়ে অসংখ্য অধস্তনের শরীর চুনের হ্রদে ডুবিয়ে ক্যালসিনাইজ করে হিরো হয়ে যায় চিরকালের মতো।
অপেক্ষার যন্ত্রণা যখন ওর চরমে পৌঁছে তখন ক’জন অবিমৃশ্যকারীর উৎপাত ক্ষিপ্ত করে তোলে ওকে। ওদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পকেটের মানিব্যাগ বের করে দেয়ার বদলে কষে একটা লাথি ছুঁড়ে সে একজনের তলপেটে। আর অপরজনের নাকেমুখে লাগায় ঘুষি। কিন্তু তৃতীয়জনের হাতের চাকু ভেদ করে যায় ওর কঠিন পাঁজর। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে সকল উদ্যম হারিয়ে।
পরের বিষয়গুলো ওর চেতনাবিশ্বের সঞ্চয় হাতড়ে বেড়ানো এক অলৌকিক ভ্রমণ। ওর চেতনাকেন্দ্রটিকে সে স্থাপন করে একটা আলোর উৎস চিহ্নিত করতে। ভেবে বের করার চেষ্টা করে কি হতে পারে ঐ আলোর মালাটা। দূরের কোনো ট্রেনের উজ্জ্বল বাতি ওটা, না আলোর উৎসের চারদিক ঘিরে থাকা অনুজ্জ্বল বলয়, নাকি এসবের কোনোটাই না, প্রকৃতঅর্থে ওর অপূর্ণ চেতনাজনিত ভ্রান্তি এসব। অথবা ট্রেনের আলোই নয় ওটা। শুয়ে আছে সে একটা অপারেশন থিয়েটারে। চোখের উপর জ্বলছে অস্ত্রোপচার কক্ষের তীব্র আলোর বাতি। ধীরে ধীরে ওর চেতনা এগিয়ে যায় বিলুপ্তির দিকে। প্রাণপণে চোখ খোলার চেষ্টা করে আরেকবার। ব্যর্থ হয় সে। নিজেকে ছেড়ে দেয় অসংলগ্ন স্মৃতির আছড়ে পড়া ঢেউয়ের দোলায়। খুব আশ্চর্য হালকা মনে হয় তখন ওর শরীরটাকে।
রেল-বারান্দার এক নিভৃত কোণে আধো অন্ধকারে পড়ে থাকা প্রায় অচেতন এই মানুষটা, কিছুক্ষণ আগে যে নিজেকে মনে করেছিল ভাগ্যবান, কারণ দুর্ঘটনা কবলিত ঐ ট্রেনটাতে ছিল না সে, চেতনা থাকলে হয়তো সে এখন বিপরীতটাই ভাবত। কারণ ঐ ট্রেনটার অধিকাংশ মানুষ এখনো রয়েছে অক্ষত শরীরে।
অপরিকল্পিত জীবনবিলাসী মানুষের অযথাসৃষ্ট কোলাহলে ক্লান্ত হয়ে মনোময় একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আশায় ঘর ছেড়েছিল সে ক’দিন আগে। যে অভিজ্ঞতা হয়তো জীবনের অনেককিছু না পাওয়ার মনকষ্টগুলোকে দূর করে দেবে বলে ভেবেছে। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে স্বচ্ছ জলের আশ্চর্য সুন্দর নদীটাতে নিজের ছায়া ফেলে দেখেছে কত অপরূপ হতে পারে মানবিক অভিজ্ঞতাগুলো। যে কোনো সুন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছে, কি সুন্দর, আহা! কিন্তু ঐ সুন্দরকে দেখে ফেলার পর তা যেমন হয়ে পড়েছে একটা মানবীয় অভিজ্ঞতার সামান্য অংশ, তেমনি নতুন সুন্দরের জন্য আবার উতলা হয়ে উঠেছে ওর হৃদয়। সুন্দর টেনে নিয়ে গেছে আরো সুন্দরের দিকে। অনন্তর এই সৌন্দর্য-পিপাসা অন্তরে জন্ম নেয়ায় নিজেকে আর কোনো সীমাবদ্ধতার ভেতর ধরে রাখতে পারে না সে। নিজের মনোজগৎ তৈরি করে নিয়েছে পৃথিবীর সুন্দরতম শব্দগুলো দিয়ে সাজানো কবিতায়। কল্পনাবিলাসী কবিরা বলে শব্দ নাকি খুব তাৎপর্যপূর্ণ! অথচ কখনো কখনো ওর মনে হয়েছে, নৈঃশব্দ্যই বরং গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা শব্দকে নৈঃশব্দ্যের ভেতর সাজিয়ে দেখে সে।
সংঘাতপূর্ণ জীবনের দীনতা ও সীমাবদ্ধতার তুলনায় অসীম জীবনের গ্রন্থকথিত কল্পনাও কম মধুর নয়। বিশেষ করে লোভাতুর মনের অধিকারী ঐ সব মহাত্মাদের কাছে। কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুচিন্তার ভেতর ডুবে যায় সে। এই মৃত্যুভয়টা দেখিয়ে মানুষকে কতই না অলীক ভাবনার ভেতর ঠেলে দিয়েছে কিছু উচ্চাশী মানুষ।
চেতনা আংশিক ফিরে এলে আনন্দ দেয়া একটা সফল স্মৃতি আপ্লুত করে ওকে। সমুদ্র-সম্ভোগের প্রথম অভিজ্ঞতা। বেশ ক’বছর আগে ক’জন রাখাইন বন্ধুর আমন্ত্রণে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিল সে। ওদের আসল নামগুলো একই রকম মনে হত ওর কাছে। ওদের ডাক নামগুলো বরং ভালো লাগে ওর। হোন্ডা, মহাজন, স্পীকার, , , । ঐ দিনটা ছিল রাখাইনদের বর্ষা উৎসবের। সমুদ্র-সৈকতে সারাদিন সামুদ্রিক খাবার খেয়েছে আর ঘরে বানানো পানীয় নিয়েছে ওরা।
‘হোন্ডা’ যতবারই সে ডেকেছে ওকে, জবাব পেয়েছে, ‘জ্বী স্যার?’
যদিও হোন্ডা ওর অন্তরঙ্গ বন্ধু, ওকে স্যার ডাকতেই পছন্দ করে সে।
‘পেট্রোল আছে?’
‘আছে স্যার’ বলেই ওর গ্লাস ভরে দিয়েছে প্রতিবার।
বিকেল হতে হতে ওর ভেতর আশ্রয় নিয়েছে এক সমুদ্র উন্মাদ জল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে জোয়ারে ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের ভেতর। বিপুল ঐ জলরাশি ওকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সীমিত পরিসর পেরিয়ে ওর মন চেয়েছে চিরদিনের জন্য মুক্ত হয়ে যেতে। কিন্তু বারবার বাঁধা দিয়েছে ওকে পেছনের দিগন্ত, আর ঐ রাখাইন বন্ধুরা। খুব অসহিষ্ণু মনে হয়েছে সবকিছু। কেন এই অপ্রত্যাশিত বাধা! অতীত ও ভবিষ্যৎ ছেড়ে যে বিলুপ্ত হতে চায় এই অপার্থিব বর্তমানে তাকে বাঁধা দেয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। হতে পারে তার দিগন্ত অন্যের চেয়ে অপরিসর, তবু এ মুহূর্তে তা চায় না সে। এসব বাস্তবতা সম্পর্কে ওর উপলব্ধি হয়তো যথেষ্ট না। কিন্তু এখন সে পরিপূর্ণ, তৃপ্ত। সে চায় এসবের সমাপ্তি। ঠিক এভাবেই। হতে পারে ওর চেতনা স্বচ্ছ নয় এ মুহূর্তে। সহজেই নিজেকে পূর্ণ করে তুলেছে সে। খুব সামান্য প্রাপ্তিও কখনো কখনো অসীমের আনন্দ দেয় ওকে। মনে হয় পেয়ে গেছে। এখন ওর চেতনা বলে যে সব পেয়ে গেছে সে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখা দেয় আকাশে। বিদ্রোহ করে ওর অন্তর। সমুদ্রের অশেষে মিশে যেতে চায় সে। কিন্তু ওর বন্ধুরা টেনে তুলে ওকে ঐ সব মুহূর্ত থেকে যখন সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের দোলা আর ওর চেতনাবিশ্ব দুলছিল একই সমতলে।
মনে পড়ে প্রথম সঙ্গলাভের অভিজ্ঞতা। জীবনের শত সহস্র অকৃতকার্যতার মধ্যে ওটা ছিল মধুরতম। মহৎ ও আজীবন উপভোগ্য। সেদিন কোনো লালসা ছিল না ওর ভেতর। ছিল প্রচণ্ড এক এডভেঞ্চারের উত্তেজনা। নতুন এক বিশ্বকে জানার প্রবল উন্মাদনা। সেদিন জানেই নি যে আজীবনের জন্য সুন্দর এক অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে পড়েছে সে। অন্য অনেক অকৃতকার্যতার দহন ওকে দগ্ধ করলেও ওখান থেকে সে শিখেছে কি করে না-পাওয়াগুলোকে মেনে নিতে হয়, কি করে নিজেকে কষ্ট পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
মুমূর্ষু মানুষটার চেতনা অন্যরূপে ধরা দেয় আবার। জীবনের একটা অন্য রকম প্রাপ্তির জন্য তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠা বানরের মতো অসফল প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে সে এখন মনে হয়। মনে পড়ে ঐ কঠিন অঙ্কটা। এবং সেই সঙ্গে তৈলাধারের ঐ গল্পটা।
‘অতঃপর ঐ সত্যটি যখন উচ্চারিত হল যে দেশটার স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল একটা তৈলপূর্ণ গোলাকার পাত্রের উপর দাঁড়িয়ে তখন স্বভাবত অনেকের বাল্যস্মৃতি জেগে ওঠে। তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে একটা বানরের উপরে ওঠার চিত্রটা কেমন হতে পারে তা একজন অঙ্কশাস্ত্রবিদ কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীদের মনে রোপণ করে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন কিনা এখন তা আর জানা যাবে না। তবে তিনি যে অঙ্ক শেখাতে চেয়েছিলেন সে-বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। আর ঐ অঙ্কশাস্ত্রবিদ মহাশয় যে ভেতরে ভেতরে একজন কবি ছিলেন তা নিশ্চিত বলা যায়। এত সুন্দর একটা চিত্রকল্প অনেক কবিও তাদের কবিতায় খুব কম ব্যবহার করতে পেরেছেন। যার মনের পর্দায় কল্পিত ঐ বানরের উপরে ওঠা আর পিছলে নিচে নামার দৃশ্য খোদিত রয়েছে তিনি মুক্তোর মালা কার গলায় পরাবেন তা বোঝার জন্য অঙ্ক শেখার প্রয়োজন নেই।’
এক সময় ঐ গল্পটাও ওর চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সব অন্ধকার হয়ে যায়। শেষবার যখন কিছুটা চেতনা ফিরে পায় সে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো থেকে নিজেকে নি®কৃতি দিতে চায়। বরং একটা বাজী ধরে সে। নিজের জীবন অথবা মৃত্যুর ওপর। আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে অনেক ক’টা জীবন কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে। আলো-পিপাসী মানুষেরা যেমন আকাশের সৌন্দর্যে ক্লান্ত হয় না কখনো। জীবন অথবা মৃত্যুর স্বপ্ন নিয়েও অপেক্ষমাণ থাকতে পারে সে। জীবন হচ্ছে এখন ওর শেষ আশা, আর মৃত্যু, শেষ হতাশা। মৃত্যুর অভিজ্ঞতাটা অর্জন করতে হয়তো সক্ষম হবে সে। অপ্রকাশিত থেকে যাবে ওটা। বরং বাজী ধরে সে ঐ আলোর বলয়টা নিয়ে। যদি ওটা হয়ে থাকে দূরাগত কোনো ট্রেনের তীব্র আলো, তাহলে সে দেখা পাবে অন্তিম হতাশার। আর যদি ঐ আলোটা হয় অপারেশন থিয়েটারের কৃত্রিম আলো, তাহলে সে বেঁচে থাকবে।
এই বাজীটাতে সে জয়ী হবে কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। এজন্য ১৮ মে তারিখের সংবাদপত্র দেখতে হবে। দুটো ঘটনাই ঘটেছিল। ট্রেনের দুর্ঘটনা আর ওর পাঁজরে উপর্যুপরি ছুরির আঘাত।
ক্লান্তিকর এই বসে থাকা থেকে নিষ্কৃতি পেতে নিজেকে নির্দেশ দেয় সে, ’উঠে দাঁড়াও ভাই প্রামাণিক, হাঁট, হাঁটতে থাক, অনবরত হাঁটো, যে পর্যন্ত না ক্লান্তি এসে তোমাকে লুটিয়ে ফেলে দেয় সটান কোনো ভূমিতে। হাঁটা ছাড়া অন্য কোনো কাজ এ মুহূর্তে জরুরী নয় তোমার জন্য। হাঁটো সামনে থেকে পেছনে। আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে সামনে। যেভাবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ কেউ পায়চারী করে। কিন্তু তোমার কোনো দুশ্চিন্তা থাকতে পারে না।
এভাবে আদেশ দেবে নিজেকে। স্থির রেল বারান্দাটা যখন গতিশীল হয়ে উঠবে তখন ভাববে তোমার কাজের পেছনে নিশ্চয় কোনো যুক্তি ছিল। আহাম্মকের মতো খুঁজতে শুরু কর ওটা। সমান্তরাল রেল দুটো যেমন আমৃত্যু সমান্তরাল থেকে যায় তেমনি এগিয়ে নাও তোমার ভাবনা। যে দুর্ঘটনাটার জন্য তোমার এই ক্লান্তিকর অপেক্ষা ওটার জন্য খুব বেশি দুঃখ করো না। নিজেকে ভাগ্যবান মনে কর বরং। দুর্ঘটনাটা আগের ষ্টেশনে না হয়ে পরেরটাতে হলে তুমিও থাকতে ঐ গাড়িতে। আর তোমার উপরও নেমে আসতে পারত বিধাতার অকরুণ অভিশাপ। যদিও এমনই বলে অনেকে, কিন্তু বিধাতা যে কোনো অভিশাপই দেন না তা তুমি জান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমার এই নধর দেহ পরিণত হত বীভৎস একতাল মাংসপিণ্ডে। আর তুমি হয়ে যেতে এক লাওয়ারিশ। কেন না, তুমি তো জানোই ওরা কখনো মৃতের সঠিক সংখ্যা জীবিতদের জানতে দেয় না।’
যে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঘর ছেড়ে পথে পা বাড়িয়েছিল সে কতটুকু তার অর্জন করতে পেরেছে তা মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু একটা বিপরীত ভাবনা হতাশ করে ওকে। রঙিন যে কল্পনাগুলো লালন করতে ভালোবাসে সে তা এখন কদাকার এক বাস্তব হয়ে উঠে। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় সবই সৃষ্টি করেছেন, শুধু এই হতচ্ছাড়া ও কুশ্রী গ্রাম এবং এর মানুষগুলো ছাড়া। খামাকাই এরা এখন এই রেলবারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে লেগেছে। কোথাও যাবে না ওরা। সত্যি বলতে কি কোথাও যাবারই নেই ওদের। শহরে বাস করা ওদের আত্মীয়পরিজন মাঝেমধ্যে আসে এখানে ওদের সাদা পালক দেখাতে ও কিছু করুণা রেখে যেতে যাতে পরকালে আরো বেশি সুখে থাকতে পারে। প্রত্যেকে এরা ইবলিশের বংশধর। প্রভু আর যাই করুন, ইবলিশের জন্ম দেননি নিশ্চয়। ঈশ্বরের মতো ইবলিশও স্বয়ম্ভু।
প্রাচীন এই গ্রামে মানুষের তুলনায় মাটি কম। মাটি নিয়ে তাই খুন জখম হতে থাকে নিয়মিত। আর পাইক পেয়াদা আদালত বরকন্দাজের খতিয়ানে এটা একটা পয়মন্ত গ্রাম। মাটি কম থাকায় সব কিছুর খাঁটিত্বও কম এখানে। যার হাতে বেশি মাটির অধিকার ক্ষমতাও তার অনেক বেশি। একাধিক স্ত্রী রাখতে পারে সে। দাসীবাঁদীরাও বৈধ তার জন্য। কিন্তু বিত্তহীন যুবকেরা, যাদের না আছে স্ত্রী কিংবা বান্ধবী, না পরস্ত্রী, তারা কখনো অনেকে মিলে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর ঐ বেচারা যদি কখনো টেঁসে যায় তাহলে চুনের ড্রামে ওকে হাপিশ করে ফেলে ওরা। ওসবের খোঁজ আর কেউ পায় না। যেমন কোনো এক সৈনিক তার পায়ের নিচের মাটি রক্ষা করতে যেয়ে অসংখ্য অধস্তনের শরীর চুনের হ্রদে ডুবিয়ে ক্যালসিনাইজ করে হিরো হয়ে যায় চিরকালের মতো।
অপেক্ষার যন্ত্রণা যখন ওর চরমে পৌঁছে তখন ক’জন অবিমৃশ্যকারীর উৎপাত ক্ষিপ্ত করে তোলে ওকে। ওদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পকেটের মানিব্যাগ বের করে দেয়ার বদলে কষে একটা লাথি ছুঁড়ে সে একজনের তলপেটে। আর অপরজনের নাকেমুখে লাগায় ঘুষি। কিন্তু তৃতীয়জনের হাতের চাকু ভেদ করে যায় ওর কঠিন পাঁজর। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে সকল উদ্যম হারিয়ে।
পরের বিষয়গুলো ওর চেতনাবিশ্বের সঞ্চয় হাতড়ে বেড়ানো এক অলৌকিক ভ্রমণ। ওর চেতনাকেন্দ্রটিকে সে স্থাপন করে একটা আলোর উৎস চিহ্নিত করতে। ভেবে বের করার চেষ্টা করে কি হতে পারে ঐ আলোর মালাটা। দূরের কোনো ট্রেনের উজ্জ্বল বাতি ওটা, না আলোর উৎসের চারদিক ঘিরে থাকা অনুজ্জ্বল বলয়, নাকি এসবের কোনোটাই না, প্রকৃতঅর্থে ওর অপূর্ণ চেতনাজনিত ভ্রান্তি এসব। অথবা ট্রেনের আলোই নয় ওটা। শুয়ে আছে সে একটা অপারেশন থিয়েটারে। চোখের উপর জ্বলছে অস্ত্রোপচার কক্ষের তীব্র আলোর বাতি। ধীরে ধীরে ওর চেতনা এগিয়ে যায় বিলুপ্তির দিকে। প্রাণপণে চোখ খোলার চেষ্টা করে আরেকবার। ব্যর্থ হয় সে। নিজেকে ছেড়ে দেয় অসংলগ্ন স্মৃতির আছড়ে পড়া ঢেউয়ের দোলায়। খুব আশ্চর্য হালকা মনে হয় তখন ওর শরীরটাকে।
রেল-বারান্দার এক নিভৃত কোণে আধো অন্ধকারে পড়ে থাকা প্রায় অচেতন এই মানুষটা, কিছুক্ষণ আগে যে নিজেকে মনে করেছিল ভাগ্যবান, কারণ দুর্ঘটনা কবলিত ঐ ট্রেনটাতে ছিল না সে, চেতনা থাকলে হয়তো সে এখন বিপরীতটাই ভাবত। কারণ ঐ ট্রেনটার অধিকাংশ মানুষ এখনো রয়েছে অক্ষত শরীরে।
অপরিকল্পিত জীবনবিলাসী মানুষের অযথাসৃষ্ট কোলাহলে ক্লান্ত হয়ে মনোময় একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের আশায় ঘর ছেড়েছিল সে ক’দিন আগে। যে অভিজ্ঞতা হয়তো জীবনের অনেককিছু না পাওয়ার মনকষ্টগুলোকে দূর করে দেবে বলে ভেবেছে। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে স্বচ্ছ জলের আশ্চর্য সুন্দর নদীটাতে নিজের ছায়া ফেলে দেখেছে কত অপরূপ হতে পারে মানবিক অভিজ্ঞতাগুলো। যে কোনো সুন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছে, কি সুন্দর, আহা! কিন্তু ঐ সুন্দরকে দেখে ফেলার পর তা যেমন হয়ে পড়েছে একটা মানবীয় অভিজ্ঞতার সামান্য অংশ, তেমনি নতুন সুন্দরের জন্য আবার উতলা হয়ে উঠেছে ওর হৃদয়। সুন্দর টেনে নিয়ে গেছে আরো সুন্দরের দিকে। অনন্তর এই সৌন্দর্য-পিপাসা অন্তরে জন্ম নেয়ায় নিজেকে আর কোনো সীমাবদ্ধতার ভেতর ধরে রাখতে পারে না সে। নিজের মনোজগৎ তৈরি করে নিয়েছে পৃথিবীর সুন্দরতম শব্দগুলো দিয়ে সাজানো কবিতায়। কল্পনাবিলাসী কবিরা বলে শব্দ নাকি খুব তাৎপর্যপূর্ণ! অথচ কখনো কখনো ওর মনে হয়েছে, নৈঃশব্দ্যই বরং গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা শব্দকে নৈঃশব্দ্যের ভেতর সাজিয়ে দেখে সে।
সংঘাতপূর্ণ জীবনের দীনতা ও সীমাবদ্ধতার তুলনায় অসীম জীবনের গ্রন্থকথিত কল্পনাও কম মধুর নয়। বিশেষ করে লোভাতুর মনের অধিকারী ঐ সব মহাত্মাদের কাছে। কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুচিন্তার ভেতর ডুবে যায় সে। এই মৃত্যুভয়টা দেখিয়ে মানুষকে কতই না অলীক ভাবনার ভেতর ঠেলে দিয়েছে কিছু উচ্চাশী মানুষ।
চেতনা আংশিক ফিরে এলে আনন্দ দেয়া একটা সফল স্মৃতি আপ্লুত করে ওকে। সমুদ্র-সম্ভোগের প্রথম অভিজ্ঞতা। বেশ ক’বছর আগে ক’জন রাখাইন বন্ধুর আমন্ত্রণে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিল সে। ওদের আসল নামগুলো একই রকম মনে হত ওর কাছে। ওদের ডাক নামগুলো বরং ভালো লাগে ওর। হোন্ডা, মহাজন, স্পীকার, , , । ঐ দিনটা ছিল রাখাইনদের বর্ষা উৎসবের। সমুদ্র-সৈকতে সারাদিন সামুদ্রিক খাবার খেয়েছে আর ঘরে বানানো পানীয় নিয়েছে ওরা।
‘হোন্ডা’ যতবারই সে ডেকেছে ওকে, জবাব পেয়েছে, ‘জ্বী স্যার?’
যদিও হোন্ডা ওর অন্তরঙ্গ বন্ধু, ওকে স্যার ডাকতেই পছন্দ করে সে।
‘পেট্রোল আছে?’
‘আছে স্যার’ বলেই ওর গ্লাস ভরে দিয়েছে প্রতিবার।
বিকেল হতে হতে ওর ভেতর আশ্রয় নিয়েছে এক সমুদ্র উন্মাদ জল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সে জোয়ারে ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের ভেতর। বিপুল ঐ জলরাশি ওকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সীমিত পরিসর পেরিয়ে ওর মন চেয়েছে চিরদিনের জন্য মুক্ত হয়ে যেতে। কিন্তু বারবার বাঁধা দিয়েছে ওকে পেছনের দিগন্ত, আর ঐ রাখাইন বন্ধুরা। খুব অসহিষ্ণু মনে হয়েছে সবকিছু। কেন এই অপ্রত্যাশিত বাধা! অতীত ও ভবিষ্যৎ ছেড়ে যে বিলুপ্ত হতে চায় এই অপার্থিব বর্তমানে তাকে বাঁধা দেয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। হতে পারে তার দিগন্ত অন্যের চেয়ে অপরিসর, তবু এ মুহূর্তে তা চায় না সে। এসব বাস্তবতা সম্পর্কে ওর উপলব্ধি হয়তো যথেষ্ট না। কিন্তু এখন সে পরিপূর্ণ, তৃপ্ত। সে চায় এসবের সমাপ্তি। ঠিক এভাবেই। হতে পারে ওর চেতনা স্বচ্ছ নয় এ মুহূর্তে। সহজেই নিজেকে পূর্ণ করে তুলেছে সে। খুব সামান্য প্রাপ্তিও কখনো কখনো অসীমের আনন্দ দেয় ওকে। মনে হয় পেয়ে গেছে। এখন ওর চেতনা বলে যে সব পেয়ে গেছে সে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখা দেয় আকাশে। বিদ্রোহ করে ওর অন্তর। সমুদ্রের অশেষে মিশে যেতে চায় সে। কিন্তু ওর বন্ধুরা টেনে তুলে ওকে ঐ সব মুহূর্ত থেকে যখন সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের দোলা আর ওর চেতনাবিশ্ব দুলছিল একই সমতলে।
মনে পড়ে প্রথম সঙ্গলাভের অভিজ্ঞতা। জীবনের শত সহস্র অকৃতকার্যতার মধ্যে ওটা ছিল মধুরতম। মহৎ ও আজীবন উপভোগ্য। সেদিন কোনো লালসা ছিল না ওর ভেতর। ছিল প্রচণ্ড এক এডভেঞ্চারের উত্তেজনা। নতুন এক বিশ্বকে জানার প্রবল উন্মাদনা। সেদিন জানেই নি যে আজীবনের জন্য সুন্দর এক অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে পড়েছে সে। অন্য অনেক অকৃতকার্যতার দহন ওকে দগ্ধ করলেও ওখান থেকে সে শিখেছে কি করে না-পাওয়াগুলোকে মেনে নিতে হয়, কি করে নিজেকে কষ্ট পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
মুমূর্ষু মানুষটার চেতনা অন্যরূপে ধরা দেয় আবার। জীবনের একটা অন্য রকম প্রাপ্তির জন্য তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠা বানরের মতো অসফল প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে সে এখন মনে হয়। মনে পড়ে ঐ কঠিন অঙ্কটা। এবং সেই সঙ্গে তৈলাধারের ঐ গল্পটা।
‘অতঃপর ঐ সত্যটি যখন উচ্চারিত হল যে দেশটার স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল একটা তৈলপূর্ণ গোলাকার পাত্রের উপর দাঁড়িয়ে তখন স্বভাবত অনেকের বাল্যস্মৃতি জেগে ওঠে। তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে একটা বানরের উপরে ওঠার চিত্রটা কেমন হতে পারে তা একজন অঙ্কশাস্ত্রবিদ কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীদের মনে রোপণ করে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন কিনা এখন তা আর জানা যাবে না। তবে তিনি যে অঙ্ক শেখাতে চেয়েছিলেন সে-বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। আর ঐ অঙ্কশাস্ত্রবিদ মহাশয় যে ভেতরে ভেতরে একজন কবি ছিলেন তা নিশ্চিত বলা যায়। এত সুন্দর একটা চিত্রকল্প অনেক কবিও তাদের কবিতায় খুব কম ব্যবহার করতে পেরেছেন। যার মনের পর্দায় কল্পিত ঐ বানরের উপরে ওঠা আর পিছলে নিচে নামার দৃশ্য খোদিত রয়েছে তিনি মুক্তোর মালা কার গলায় পরাবেন তা বোঝার জন্য অঙ্ক শেখার প্রয়োজন নেই।’
এক সময় ঐ গল্পটাও ওর চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সব অন্ধকার হয়ে যায়। শেষবার যখন কিছুটা চেতনা ফিরে পায় সে স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো থেকে নিজেকে নি®কৃতি দিতে চায়। বরং একটা বাজী ধরে সে। নিজের জীবন অথবা মৃত্যুর ওপর। আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে অনেক ক’টা জীবন কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে। আলো-পিপাসী মানুষেরা যেমন আকাশের সৌন্দর্যে ক্লান্ত হয় না কখনো। জীবন অথবা মৃত্যুর স্বপ্ন নিয়েও অপেক্ষমাণ থাকতে পারে সে। জীবন হচ্ছে এখন ওর শেষ আশা, আর মৃত্যু, শেষ হতাশা। মৃত্যুর অভিজ্ঞতাটা অর্জন করতে হয়তো সক্ষম হবে সে। অপ্রকাশিত থেকে যাবে ওটা। বরং বাজী ধরে সে ঐ আলোর বলয়টা নিয়ে। যদি ওটা হয়ে থাকে দূরাগত কোনো ট্রেনের তীব্র আলো, তাহলে সে দেখা পাবে অন্তিম হতাশার। আর যদি ঐ আলোটা হয় অপারেশন থিয়েটারের কৃত্রিম আলো, তাহলে সে বেঁচে থাকবে।
এই বাজীটাতে সে জয়ী হবে কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। এজন্য ১৮ মে তারিখের সংবাদপত্র দেখতে হবে। দুটো ঘটনাই ঘটেছিল। ট্রেনের দুর্ঘটনা আর ওর পাঁজরে উপর্যুপরি ছুরির আঘাত।
0 মন্তব্যসমূহ