দেবতনু সান্যাল'এর গল্প : অলীক গল্প

অলীক গল্প
দেবতনু সান্যাল

অবনী গণচৌধুরী বাড়ির সামনের বাগানে একটা মোড়ায় বসে আছেন শীতকালে সকালের এই সময়টা তার বাগানে বসে থাকতে ভাল লাগে হাতে একটা খবরের কাগজ থাকে,পায়ের উপর নরম রোদ্দুর এসে পড়ে বাগানের পাশেই একটা পুকুর আছে মজা পুকুর হলেও সে দিকে তাকালে কি রকম যেন একটা ভাল লাগা কাজ করে মাঝে মাঝেই পুকুর থেকে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসে বাগানে কিছু ফুল গাছও আছে এমনি এমনিই হয়েছে পুকুরের দিক থেকে হাওয়া দিলে ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়
খবরের কাগজটা হাতে থাকলেও আজ কিছুতেই পড়া হচ্ছিল না একই খবর বারবার পড়ছেন কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেন না যারা খবরের কাগজ পড়তে ভালবাসেন তাদের অনেকেরই এই সমস্যা হয় আর এরকম ঘটলে বিরক্ত হয়ে কাগজটা ভাঁজ করে রাখতে হয় অবনীবাবুও তাই করলেন ছেলেটার কথা মনে পড়ছে টানা টানা চোখ, লম্বা পুরুষ্টু দুটো হাতএসব মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায় চোখের কোণা চিকচিক করে
পুরুষ মানুষের বেশিক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকতে নেই তার চেম্বারে যাওয়ার সময় হয়েছে সকাল এগারোটা থেকে একটা অবধি বাজারের একটা ওষুধের দোকানে বসেন রুগী তেমন একটা হয় না মাঝে মধ্যে হয়ত একজন দুজন আসে ওষুধের দোকানেও তেমন বিক্রি নেই কিন্তু দোকানের মালিকের এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই নির্মল মল্লিকের মত এরকম লোক অবনী কোনদিন দেখেন নি রুগী হোক না হোক,ওষুধ বিক্রি হল কি হল নাসারাক্ষণ তার মুখে হাসি লেগে আছে প্রায় বছর চারেক হল অবনীবাবু এই দোকানে বসছেন এতগুলো বছরে তিনি মল্লিকবাবুকে কোনদিন হতাশ হতে দেখেন নি পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের মধ্যে নির্মল মল্লিক পজিটিভ কিছু দেখতে পান এই দিনও অবনী দোকানে গিয়ে বসেই ছিলেন হাই ইস্কুলের মাঠে রাশিয়ান সার্কাস এসেছে নির্মলবাবু আগের রাতে নাইট শো দেখেছেন অন্য দিনের মতই রুগী ছিল না নির্মলবাবু সার্কাসের এক একটা ঘটনা বলছেন আর হো হো করে হাসছেন অবনী লক্ষ্য করে দেখেছেন পৃথিবীতে যারা খুব সুখী তারা খুব জোরে হাসে কিন্তু আজ নির্মল মল্লিকের গল্প শুনতে মোটেই ভাল লাগছে না তার মন রাখার জন্য তাকে নিজেকেও মাঝে মধ্যে হাসতে হচ্ছে কিন্তু গল্পের কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না মনটা সকাল থেকেই ভাল নেই হঠাৎ দোকানের সামনে একটা মোটর সাইকেল দাঁড়াল সিটে যিনি বসে তিনি বোধহয় মিলিটারি চেহারা,গোঁফ দেখে তাই মনে হয় সিট থেকে না নেমেই জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার এখানে ডাক্তার আছে’? নির্মলবাবু হাসি হাসি মুখ করে অবনীবাবুকে দেখিয়ে দিলেন আপনি কি এম.বি.বি.এস’?,সিটের উপর থেকেই পরের প্রশ্নটা এল অবনী একটু গলা খাঁকরি দিয়ে উত্তর দিলেন, ‘না আমি হোমিওপ্যাথবি.এইচ.এম.এস মোটরসাইকেলটা আবার স্টার্ট দিয়ে চলে গেল কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে থাকলেন নির্মল মল্লিক প্রথম কথা বললেন, ‘বুঝলেন ডাক্তারবাবু  আপনাকে দেখাক কি না দেখাক,এই যে একটা লোক এসে জেনে গেল এখানে ডাক্তার বসে,এটা তো প্রচার হলমুখের প্রচারের থেকে বড় প্রচার আর কিচ্ছু নাদেখবেন একদিন এই দোকানে আপনাকে দেখানোর জন্য লাইন পড়বে নির্মল মল্লিক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন অবনী ততক্ষণে বাড়ির রাস্তায় হাঁটা লাগিয়েছেন আজ এসব আর ভাল লাগছে না নির্মল বাবু দোকান থেকে রাস্তাটা দেখছেন অবাক হয়ে অবনী ডাক্তার আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে
সকালে যেদিন মন খারাপ হয় সারাদিনই মন খারাপ থাকে অবনীর মনও ভাল হয় নি সন্ধ্যে হয়েছে টিভিতে খবর দেখার চেষ্টা করেছেন সকালের রোগটা এখনও পিছন ছাড়ে নি খবরের কিছুই মাথায় ঢুকছে না টিভিটা অফ করে দিলেন নীচের তলা থেকে নীরার হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে নীরার ভাই আর ছোট বোন এসেছে নীরার বাপের বাড়ি কাছেই দুটো পাড়া পরে নীরার ভাই স্কুল টিচার ছোট বোনটার বিয়ে হয় নি ওরা প্রায় দিনই সন্ধ্যে বেলা নীরার কাছে চলে আসে রাত অবধি আড্ডা চলে নীরাও সপ্তাহে তিন চার দিন বাপের বাড়ি যায় নীরার বাবা অল্প বয়সে পার্টি করতেন ওনার চেষ্টাতেই নীরার অঙ্গনওয়ারির কাজটা হয়েছে কাজটা না হলে যে সংসার চালানো যেত না অবনী সেটা ভাল করেই জানেন বাড়িটাও নীরার বাবারই দেওয়া তাই অবনী রাত বিরেতে এসব হই হুল্লোড় সহ্য করেন কিন্তু আজ আর সহ্য হল না মাথাটা ধরে গেল ঘরের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে খাটে উঠে কম্বলের নীচে ঢুকে গেলেন ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়েছেন নীচ থেকে হাসির আওয়াজ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকছে দরজার ফাঁক ফোকর দিয়ে বাইরের ঠান্ডা হাওয়াও ঢুকে পড়ছে মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথাটা বাড়ছে অবনী চোখ বন্ধ করলেন
সেই ছোট বেলা থেকে অবনী চোখ বন্ধ করলেই ফেলে আসা দিনগুলোকে যেন স্পষ্ট দেখতে পান অবশ্য ঘরটা অন্ধকার হতে হবে আজও চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতেই পুরোন সব ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল যেন নাটক দেখছেন অবনী বিয়ে করেছেন বেশি বয়সে যদিও পুরুষ মানুষ মানেই আমৃত্যু বিবাহযোগ্য তবু আজকের দিনে চল্লিশে পৌঁছে বিয়ে করছে জন? পাত্রর বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাত্রী পাওয়াটাও সহজ ছিল না শেষে এক বন্ধুর মাধ্যমে নীরার বাবার সাথে আলাপ নীরা দেখতে শুনতে খুব একটা ভাল না হয়ত সেই কারণে তখনও তারও বিয়ে হয় নি কারণ যাই হোক বিয়ের পরে অবনী স্রীকে এনিয়ে একটা কথাও জিগ্যেস করেন নি অবনী এমনিতেই কথা কম বলেন প্রথম প্রথম নীরা নিজে একটানা কথা বলে যেত অবনী অনেকটা শোনার পর হয়ত একবার হ্যাঁ কিংবা না বলতেন শুরুতে নীরা রাগ করত দেখতে দেখতে নীরাও চুপ করে যায় বিশেষত চাকরিটা হওয়ার পর থেকে বিয়ের বছর তিন বাদে নীরা তখন মা হতে চলেছে অবনী শহরে ভাল ডাক্তার দেখান নিজের ডাক্তারি বই গুলো ধুলো ঝেড়ে রাত জেগে পড়েন মল্লিকের চেম্বারে যাওয়াটাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে নীরার এসময় রেস্ট দরকার অবনী হাতে হাতে কাজ করে দেন সব ভালই ছিল পাঁচ মাস কেটেও গেল দেখতে দেখতে অবনী,নীরা,নীরার বাড়ির সবাই দিন গুনছেন নীরার মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, ‘আর কয়েকটা মাস কষ্ট কর মা তারপর তোমার ঘরে ঠাকুর আসছে হঠাৎ একদিন সব গোলমাল হয়ে গেল ইউ.এস.জি রিপোর্টে দেখা গেল বাচ্চা আর বেঁচে নেই নার্সিং হোমে বাচ্চাটাকে নীরার পেট থেকে বের করা হল অবনী দেখলেন ছেলে হয়েছিল তার টানা টানা চোখ,লম্বা পুরুষ্টু দুটো হাত আজ মাস পরে এসব কথা আবার মনে পড়ছে ইচ্ছা হয় নীরাকে ডেকে বলতে পারেন না মাথা ব্যাথাটা কমছে না চোখের কোণা চিকচিক করছে

দিন দুয়েক যেতেই পুরোন মন খারাপটা উধাও হয়ে যায় মন খারাপেরা এরকমই হয় হঠাৎ আসে, হঠাৎ চলে যায় শীতটা আরও বেড়েছে সন্ধ্যে হলে পুকুরের দিক থেকে হাওয়া দেয় অবনী উপরের ঘরে টিভিতে খবর দেখছিলেন নীরা নীচ থেকে জোরে ডাক দেয়,একজন মহিলা তার বাচ্চাকে দেখাতে নিয়ে এসেছেন অবনীর বাড়িতে একটা চেম্বার আছে কিন্তু দোকানে যাওবা দুএক জন রুগী আসে বাড়িতে তাও আসে না এতদিন পরে বাড়িতে রুগী দেখে অবনীও অবাক হন নীরা চেম্বারের দরজা খুলে মহিলাটিকে বসিয়েছে অবনী চেম্বারে এসে বাচ্চাটাকে দেখেন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে গায়ে চাকা চাকা দাগ লাল হয়ে ফুটে উঠেছে বাচ্চাটার মাথাটা তোয়ালে দিয়ে জড়ানো অবনী বাচ্চাটার মুখের ভিতরটা দেখবেন বলে তোয়ালেটা সরান চোখদুটো আটকে যায় বাচ্চাটার মুখের দিকে সেই রকম টানা টানা চোখ অবনী বাচ্চাটার হাত তুলে দেখেন সেই একই লম্বা পুরুষ্টু হাত হাতের কব্জির কাছে ধরে বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন চোখের পলক পড়ে না যেন এক মনে নাড়ি দেখছেন নীরা সন্ধ্যের চা দিতে চেম্বারে ঢোকে নিজের স্বামীকে এত তন্ময় হয়ে রুগী দেখতে সে কখনো দেখে নি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নীরা চায়ের কথা বললে অবনীর ঘোর কাটে বাচ্চাটার হাতটা ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে এসে বসেন মুখটা গম্ভীর নীরা চলে যায় ভদ্রমহিলা জিগ্যেস করেন, ‘ডাক্তারবাবু কেমন দেখলেন’? অবনী চুপ করে থাকেন চোখদুটো বাচ্চারটার মুখে আটকে আছে আবার একই কথা জিগ্যেস করলে অবনী বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই ওষুধ দিচ্ছি,ঠিক হয়ে যাবে অবনী ওষুধ বানাতে কাঠের আলমারিটার কাছে উঠে যান আলমারিটা একটা সবুজ পর্দা দিয়ে আড়াল করা কাঁচের শিশি নিয়ে দুটো ওষুধের মিক্সচার বানিয়ে উপরে লেবেল সেঁটে দেন ইউস এন্ড থ্রো পেন দিয়ে লেবেলের উপর ওষুধের পাওয়ার লেখার সময় আড়চোখে বাচ্চাটাকে দেখেন বাচ্চাটা তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে বাচ্চা্রা অসুখ হলেও হাসে অবনী যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছেন তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বাচ্চাটার থেকে চোখ সরিয়ে নিতে,পারছেন না বাচ্চাটা তাকে ছোট ছোট হাত নেড়ে ডাকছে অবনীর চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছে বাচ্চাটা এখন আর তার মায়ের কোলে নেই নীরা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে বাচ্চাটা খিলখিল করে হাসছে অবনী মুগ্ধ হয়ে দেখছেন তার টানাটানা দুটো চোখ আর পুরুষ্টু দুই হাত বাচ্চার মায়ের কথায় সম্বিৎ ফেরে, ‘ওষুধটা দিন ডাক্তারবাবু অবনী লজ্জা পেয়ে যান ওষুধের পাওয়ার লেখার জায়গাটায় হাত কেঁপে গিয়েছিল লেবেলটা পালটাতে গিয়ে হঠাৎ মনে হয়, ‘এই ওষুধে যদি বাচ্চাটা তাড়াতাড়ি সেরে যায়!যদি আর না আসে চেম্বারে তিনি তো আর ওই চোখ,হাত দেখতে পাবেন না কোনদিন ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে দেখেন অবনী ডাক্তার নতুন একটা শিশিতে আবার নতুন ওষুধ বানাচ্ছেন নতুন শিশিতে ওষুধ থাকে তবে আগের মত পাওয়ার তত বেশি নয় এতে জ্বর কমবে তবে পুরোপুরি নয় বাচ্চাটাকে আবার আসতে হবে তার কাছে অবনী ওষুধটা ভদ্রমহিলার হাতে দিয়ে খাওয়ার নিয়ম বলে দেন, ‘তিন দিন খাওয়ান দিনে তিনবার হাফ কাপ জলে তিন ফোঁটা তিন দিনে পুরো না কমলে নিয়ে আসবেন আবার ভদ্রমহিলা ফিস দিয়ে বেরিয়ে যান অবনী পিছন থেকে ডাকেন, ‘তিনদিন পর আনবেন কিন্তু অবশ্যই বাচ্চাটা তার দিকে তাকিয়ে হাসে ভদ্রমহিলা মাথা নেড়ে বেরিয়ে যান

সেরাতে অবনীর ঘুম হয় না পরের দুই রাতেও না অবনী মনে মনে ভাবেন, ‘আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি’! ইচ্ছা হয় নীরাকে সব খুলে বলেন পারেন না নীরা এসব শুনলে হাসবে হয়ত তার ভাই,ছোট বোন মসকরা করবে তাকে নিয়ে কিন্তু কোন একজনকে না বললে তার পাগল হয়ে যাওয়ার ভয়টা চেপে ধরছে তাকে সেদিন সকালে নির্মল মল্লিককে সব খুলে বলেন কথা শেষ হলে লক্ষ্য করেন নির্মল মল্লিকের চোখে জল নির্মলবাবুর মত লোক কাঁদতে পারে অবনীর জানা ছিল না মনটা খারাপ হয়ে যায় নির্মল ধরা ধরা গলায় বলে, ‘চিন্তা করবেন না ডাক্তারবাবু, আজ সে নিশ্চয়ই আপনার কাছে আবার আসবে অবনীর চোখেও জল জমে মনে মনে ভাবেন, ‘নির্মলের মত এত ভাল লোক পৃথিবীতে কি করতে যে আসে’! সেদিন সন্ধ্যে বেলায় বাচ্চা আর তার মা সত্যি সত্যিই আসে বাচ্চাটার জ্বর কিছুটা কমেছে পুরোটা না গায়ের লাল দাগগুলো এখনও আছে অবনী স্টেথো দিয়ে বাচ্চার বুক পিঠ ভাল করে দেখেন বাচ্চার মুখের মিষ্টি গন্ধ তার নাকে লাগে বাচ্চাটার মুখ থেকে লাল ঝরছে একটা হাত মুখের ভিতর পুরে লালা মাখা হাতটা অবনীর গায়ে বুলিয়ে দেয় বাচ্চাটা অবনীর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল বাচ্চাটার বুকে পড়ে বাচ্চাটা হেসে ওঠে অবনী বাচ্চাটাকে মায়ের কোলে দিয়ে ওষুধ বানান নতুন শিশিতে নতুন লেবেল এঁটে খাওয়ার নিয়ম বলে দেন বাচ্চার মাকে ভদ্রমহিলা জানতেও পারেন না শিশির ভিতর আজ কোন ওষুধই নেই,আছে শুধু জল চার দিন পর দেখিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন আবার আজ কিছুটা জোর করেই ফি নেননি অবনী আজ কিছুটা হালকা লাগে চারদিন কাটতে না কাটতে বাচ্চাটাকে মায়ের সাথে আবার আসতে হবে তার বাড়ি

মাঝের চারটে দিন সারাক্ষণ মনে অশান্তি চারটে দিন যেন চার বছরের সমান নির্মল মল্লিক চেষ্টা করেও অবনীর সাথে গল্প জমাতে পারেন না বাগানে বসে সকালের রোদ পোহানো,খবরের কাগজ কিছুই ভাল লাগে না চার দিন কেটে গিয়ে পাঁচ দিন হয় অবনী সারাদিন ছটফট করেন,ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করেন না সেদিন সন্ধ্যে বেলা বাড়িতে নীরার ভাই বোনেরা এসেছে নীরা অবনীকে দোকানে পাঠান সন্ধ্যের মত কিছু খাবারদাবার কিনতে বাড়ি ফিরে এসে নীরার মুখে শোনেন বাচ্চাটার মা এসে এক হাঁড়ি মিষ্টি দিয়ে গেছে বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে গেছে একদম অবনীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নীরাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘অসম্ভব হতেই পারে না নীরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘অসম্ভবের কি আছে? ওষুধ দিয়েছ সেরে গেছে তোমার তো খুশি হওয়ার কথা অবনী শান্ত হতে পারেন না চোখ দুটো লাল হয়ে আসে অস্থির ভাবে পায়চারি করতে করতে নীরাকে জিগ্যেস করেন, ‘ভদ্রমহিলার বাড়ি কোথায় জেনেছ?’ নীরা অবনীকে দেখে অবাক হয় পাশের ঘর থেকে নীরার ভাই, ছোটবোন উঠে আসে অবনী বাচ্চাটার মায়ের রেখে যাওয়া মিষ্টির হাঁড়িটা মন দিয়ে দেখেন হাঁড়ির মুখের চারদিকে দোকানের নাম লেখা কাগজ গার্ডার দিয়ে আঁটা অবনী নীরার ভাইকে জিগ্যেস করেন এই দোকানটা কোথায় সে জানে কি না নীরার ভাই উত্তর দিতে পারে না অবনী হাঁড়িটা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নীরার ভাই আটকানোর চেষ্টা করে অবনী ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন নির্মলবাবুর দোকান তখনও খোলা নির্মলবাবুও মিষ্টির দোকানের ঠিকানা বলতে পারেন না অবনী একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে উঠে পরেন কিছুক্ষণ পরে নীরার ভাই এসে নির্মলবাবুকে সব ঘটনা বলে নীরার ভাইয়ের স্কুটার আছে দুজনে অবনীর খোঁজে বাজারের দিকে রওনা হন অনেক ঘুরে অবনীকে পাওয়া যায় বাসস্ট্যান্ডের কাছে এই জায়গাটায় পরপর অনেকগুলো মিষ্টির দোকান আছে অবনী মিষ্টির হাঁড়িটা হাতে নিয়ে এক একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকে হাতের হাঁড়ি দেখিয়ে সেই দোকানের ঠিকানা জানতে চাইছেন নীরার ভাই,নির্মল মল্লিক তাকে ডাকতে সাহস পায় না অবনীর চোখ লাল,চুল এলোমেলো,গাল বেয়ে জল পড়ছে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ