লোকটা
আমার দিকে তাকিয়ে বসে রইল বেশ খানিক্ষণ। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পেহচান? কোই
পেহচান নেহি হ্যায়?’ লোকটা একটু বিরক্ত হল যেন। উঠে দাঁড়াল আস্তে আস্তে। কোটের
পকেট থেকে টেনে বার করল ওয়ালেটটা। রাখল টেবিলের উপর। ‘দেখ লিজিয়ে।’
ওয়ালেটটা
আগেই দেখে নেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট, প্যানকার্ড, আধার, ভোটার আই ডি, কিচ্ছু ছিল না।
টাকা ছিল কিছু। খুব বেশী নয়। প্রায় বারোশো মত। একটা পাঁচশো। দুটো দশ টাকার নোট।
বাকিগুলো একশো টাকায়। গত সাতদিন ধরে এই ডিস্ট্রিক্টে দাঙ্গা হচ্ছে। খুন, আগুন
লাগানো, ধর্ষণ। ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশান খুব খারাপ। আর্মি নেমেছে।
আমি
বললাম, ‘বহোত বার দেখা হ্যায়। কুছ নেহি।’
‘রিয়্যালি?’
আমি
ওয়ালেটটা তুলে নিলাম। টাকাগুলো বার করে রাখলাম টেবিলের উপর। ওয়ালেটটা নিয়ে
ঝাঁকালাম। একটা এক টাকার কয়েন টেবিলের উপর পড়ে গড়াতে গড়াতে নেমে গেল মাটির উপর।
আমি এইবার ওয়ালেটের পকেটগুলো নেড়ে চেড়ে দেখলাম। না এখানেও কিচ্ছু নেই। আমি
ওয়ালেটটা ছুঁড়ে ফেললাম টেবিলের উপর।
‘মজাক
সুঝ রহা হ্যায় তুমহে? মজাক লাগ রহা হ্যায় সব কুছ?’
‘জি
নেহি।’
‘ফির?’
লোকটা
আবার টুলের উপর বসে পড়ল।
‘নাম
কেয়া বতায়া থা?’
‘মনু।’
‘মনু...’
‘জ্বি
হাঁ।’
‘সির্ফ
মনু? সারনেম কেয়া তুমহারা?’
‘সারনেম?
মতলব নাম ঠিক লাগা আপকো।’
‘কেয়া!
মনু নাম নেহি হ্যায় তেরা?’
‘হ্যায়!
পর আভি কোই বুলাতা নেহি উস নাম সে।’
‘তো
আভি কেয়া বোলতা হ্যায়?’ আমি এইবার আর রাগটা চেপে রাখতে পারলাম না।
‘আভি
বোলতা হি নেহি। শায়েদ ভুল গয়া মুঝে।’
‘আব্বে!
তুঝে কেয়া লগ রহা হ্যায়? হাম লোগ ইধার তেরে সাথ মজাক কর রহে হ্যাঁয়, অ্যায়সা মারুঙ্গা
না।’ শিন্ডে এগিয়ে আসে। লোকটার কলারটা ধরে নাড়িয়ে দেয় বেশ করে। জোরে একটা থাপ্পড়
কষায় লোকটাকে।
‘শিন্ডে!’
আমি থামতে বলি।
থাপ্পড়টা
খেয়ে লোকটা একটু থমকে যায়। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠা। গালে হাত ঘষতে থাকে।
‘দেখ
ঠিক সে জবাব দে। নেহি তো...’
‘হম
মজাক করেঙ্গে তেরে সাথ। উলটা করকে ডাল দেঙ্গে উপর সে।’ শিন্ডে আবার বলে ওঠে।
‘মজাক
নেহি কর রহা হুঁ।’
‘নাম
বোল।’
‘মনু।’
‘সারনেম?’
লোকটা
শিন্ডের দিকে আড়চোখে তাকায়। ‘বলে সারনেম জরুরি হ্যায়?’
‘শালে।’ শিন্ডে এগিয়ে আসে।
আমি
থামাই শিন্ডেকে। ‘এস সি হো? সারনেম ইউজ নেহি করতে হো?’
লোকটা
মাথা নাড়ায়। না।
‘ফির?’
‘মোহন
দাস। নাম হ্যায় মেরা।’
‘মোহন
দাস? ফির মনু কিঁউ বোলা?’
‘মা
কহতি হ্যাঁয়।’
শিন্ডে
আবার এগিয়ে আসে। ‘হাম লোগ তুঝে মা লাগ রহে হ্যাঁয়?’ লোকটা এইবার হঠাৎ ঘুরে বসে
শিন্ডের দিকে। প্রায় উঠে দাঁড়ায়। ‘মার না মত, আপ মার নেহি সকতে হো।’
শিন্ডে
আবার ঠাস করে একটা চড় কষায়। ‘মার নেহি সকতা? কিঁউ নেহি?’ আবার মারে। ‘মার মারকে
তুঝে সিধা কর দুঙ্গা। শালে।’
আমি এইবার উঠে শিন্ডেকে আটকাই। শিন্ডে থামে। ‘মত
করো আভি।’
‘শালে
কা চর্বি বহোত হ্যায় স্যার।’
‘বাহার
যাও।’
‘পর
স্যার?’
‘বাহার
যাও শিন্ডে। ম্যায় বুলাউঙ্গা জরুরত পড়নে পে।’
শিন্ডে
লোকটার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
‘দেখো!
মুঝে সব ঠিক ঠিক সে বতাও। নেহি তো...’
‘বতা
রহেঁ হ্যাঁয় তো।’
‘কর
কেয়া রহে থে?’
লোকটা
আবার আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কর
কেয়া রহে থে? বর্ডার মে?’
‘যা
রহা থা।’
‘কাঁহা?’
‘উসপার।’
আমি
ভালো করে তাকিয়ে দেখি লোকটাকে। তিরিশের আশেপাশে
বয়স হবে। মুখে কয়েকদিনের না কাটা দাড়ি। সাদা শার্ট পরা। শার্টটা অদ্ভুত। হাতগুলো
সরু। কলারটাও চাপা। গোল। এইরকম কলার সচরাচর দেখা যায় না। নিচের প্যান্টটা খয়েরি
রঙের। প্যান্টটাও খুব ঢোলা। জামাকাপড়গুলো বেশ কয়েকদিন ধরে কাচা হয়নি। এখানে ওখানে
ধুলোর আস্তরণ। লোকটাকে সার্চ করা হয়েছে। সঙ্গেও কিছু ছিল না। শুধু ওয়ালেট রুমাল। আশসপাশের
পরিস্থিতি ভালো নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে দাঙ্গা হচ্ছে। আর্মি নামবে নাকি। এইসময় এইরকম
একটা লোক কিনা রাতের অন্ধকারে বর্ডারের দিকে যাচ্ছিল।
‘উসপার? কউন সি মডিউল মে হো?
‘মডিউল?’
‘কউন
সি টেরর মডিউল?’
লোকটা
হঠাৎ হেসে ওঠে হো হো করে। তারপর হঠাৎ বাংলা বলে ওঠে, ‘ওপারে গেলেই টেরর মডিউল হতে
হবে? আপনি তো বাঙালি তাই না।’
এর
মধ্যে বাঙালি কোথা থেকে এল। সবে খুলছিল নিজেকে। হঠাৎ কথা ঘুরিয়ে দিল। লোকটা
ধড়িবাজ। অবশ্য টেররিস্টের নিঁখুত ট্রেনিং থাকে কীভাবে ইন্টারোগেশানের সময়ে মিসলিড
করতে হবে।
‘বাত
মত ঘুমাও।’ আমি গর্জে উঠি। ‘কউন সি টেরর মডিউল। কনফেস করোগে তো ম্যায় হেল্প করনে
কী কোশিশ করুঙ্গা।’
‘কী
কনফেস করব? ওহ। হ্যাঁ ওপারেই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম যাওয়াটাই ঠিক। এখন যে সবাই বলছে
একমত না হলেই দেশ ছেড়ে চলে যাও।’
বলে
কী লোকটা! ‘দেখো তুম কো পতা নেহি শায়েদ। কল ভি হম নে দস আতংকবাদীকো মার ডালা।’
‘আপ
নে খুদ?’
‘বকোয়াস
মত করো। হম মতলব পোলিসওয়ালা।’
‘আপ
শিওর থে কী য়ো লোগ আতংকবাদী হি থা?’
‘কিউ
তুমকো ডাউট হ্যায়? ইয়া তুম উন লোগোঁ কো অউর কুছ সমঝতে হো?’
‘জি
নেহি। ম্যায় পুছ রহা থা কি কোর্ট মে প্রুভ হুয়া থা উয়ো লোগ সচমুচ আতংকবাদী হ্যায়?’
‘মাদারচোদ
এক দুঙ্গা কান কে নিচে। বাংলা শিখলি কোথায়? তুই বাঙালি?’
লোকটা
চোখ সরু করে তাকাল আমার দিকে। আমি কিছু বলার আগেই বলল, ‘না আমি বাঙালি নই। কিন্তু
বাংলা শিখেছি।’
‘বাঙালি
নোস না ইল্লিগালি ঢুকেছিস? তুই মুসলমান? বাড়ি কোথায় তোর?’
‘ইল্লিগ্যাল।
আমিও তাই বলছি। কাউকে ইচ্ছামত মেরে দেওয়াটাই ইল্লিগ্যাল।’
‘আর
বম্ব ব্লাস্ট? টেররিস্ট হামলাগুলো? সেইগুলো লিগ্যাল?’
‘নাহ।
আমি তো তা বলিনি। কিন্তু তারা তো আইন মেনে কাজ করে না। আইন মানার কথা তো আপনাদের,
তাই না।’
‘চোপ!
বল আসল নাম কী তোর? তুই হিন্দু না মুসলমান?’
‘আমি
হিন্দু। তবে আমি সব ধর্মই মানি।’
‘বাবা!
বাড়ি কোথায় তোর? কোথা থেকে এসেছিস?’
‘আমি
তো সেই কবে থেকে ঘুরছি।’
‘ঘুরছিস?
কোথায়? কেন? ঘুরছি না রেকে করছিস?’
‘রেকে?
টেরর স্ট্রাইকের রেকে?’
‘হ্যাঁ।
আলবাত টেরর স্ট্রাইকের রেকে।’
‘আসলে
কী জানেন। আমি যদি বলতাম আমার নাম মোহন নয়, মইন তাহলে বোধহয় এতক্ষণে গায়ে হাত দিয়ে
দিতেন।’
আমার
মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল। সাধারণত ইন্টারোগেশানের সময় লোকে ভয় পেয়ে যায়। আর এতো
মুখে মুখে চোপা করছে। আমি চিৎকার করে ডাকলাম, ‘শিন্ডে! শিন্ডে!’
শিন্ডে
বাইরেই ছিল চলে এল। ‘স্যার?’
‘বহোত
চর্বি হ্যায় সালে কো।’
‘কেয়া
রে?’ শিন্ডে তেড়ে গেল লোকটার দিকে। সপাটে লাথি মেরে সরিয়ে দিল লোকটার নিচের
টুলটাকে। তাল সামলাতে পারল না লোকটা। দড়াম করে পড়ল মাটির উপর। শিন্ডে সেই
অবস্থাতেই লাথি কষাতে লাগল লোকটার শরীরে। তারপর চুলের মুঠি ধরে বারবার ঠাটিয়ে
ঠাটিয়ে চড় মারতে লাগল লোকটাকে। খানিক পরে লোকটাকে ধরে এনে আবার বসিয়ে দিল টুলটার
উপর। লোকটার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। মুখের বাঁদিকটা কেটে গিয়ে রক্তের আভাস।
‘পানি
পিওগে?’
লোকটা
চুপ করে বসে রইল। কোন উত্তর দিল না। শিন্ডে আমার দিকে তাকাল। আমি চোখ টিপে আর মারতে বারণ করলাম।
‘ইস
কে পেহলে কাঁহা গয়ে থে?’
‘আমি
পুরো ভারতবর্ষে ঘুরেছি।’
‘কোথায়?’
‘কাশ্মীর...’
‘কাশ্মীর!’
‘কাশ্মীর
থেকে কন্যাকুমারী।’
‘এর
ঠিক আগে কোথায় গিয়েছিলি?’
‘গোটা
ভারতবর্ষেই এই এক অবস্থা।’
‘কী
অবস্থা?’
‘দেহশত।
ভয়। আতংক।’
‘হা
হা হা। য়ো তো তুমলোগ কর রহে হো।’
‘হামলোগ?
হম টেররিস্ট?’
‘তু
টেররিস্ট হ্যায়?’ আমার আগেই শিন্ডে বলে ওঠে।
‘নেহি।’
‘ফির
সে ঝুট?’
‘ম্যায়
নে কভি ঝুট নেহি বোলা।’
‘কিউ
তু যুধিষ্ঠির কা অওলাদ হ্যায়? শালে!’
আমি
আবার বলি, ‘বলে দাও তুমি কোন গ্রুপের। নইলে মেরে তোমার...’
‘আর
মারের চোটে আমি টেররিস্ট না হয়েও মেনে নিই আমি টেররিস্ট?’
‘আবার মুখে মুখে চোপা? মেরে তোর—।’
‘মেরে
তো ফেলেই।’
‘কী?’
‘মেরে
তো ফেলেই। কে কোন জানোয়ারের মাংস খেয়েছে তাই নিয়ে মেরে ফেলে। জানোয়ারের মাংস না
খেয়ে সেই নিয়ে কথা বললেও মেরে ফেলে।’
‘এই
ভুল ভাল কথা বলবে না খবরদার। আর... তোদের ওপারে বুঝি মারে না? সেইখানে সবাই খুব
ভালো না?’
‘আমি
ওপারের নই।’
‘তুই
কোন পারের সেইটাই তো বুঝতে পারছি না। আর যাচ্ছিলি কেন?’
‘আমি
এইখান থেকে চলে যেতে চাই। এখান থেকে দূরে।’
‘দূরে?’
‘সব
নর করহিঁ পরস্পর প্রীতি। চলহি স্বধর্ম নিরত শ্রুতি নীতি।’
‘কী
ফালতু বকছিস?’
‘চারিউ
চরণ ধর্ম জগ মাহীঁ। পুরি রহা সপনেহুঁ অধ নাহীঁ। রাম ভগতি রত নত অরূ নারী। সকল পরম গতি কে অধিকারী।।’
‘এই
খবরদার আমাকে মিসলিড করার চেষ্টা করবি না।’
‘কিন্তু
এইগুলোতো আমার কথা নয়। তুলসীদাসজির কথা। রামচরিতমানস।’
‘লোক
মরছে আর তুমি থানায় বসে রামচরিতমানস ঝাড়ছ! টেররস্ট্রাইকে।...’
‘আমি
দেখেছি...’
‘কী
দেখেছিস?’
‘আমি
অনেক ভেবেছি। কিন্তু উত্তর পাইনি কোনো?’
‘তুই
ওই টেররস্ট্রাইকের সময় ছিলি?’
‘ছিলাম
তো। কিন্তু কোন উত্তর পাইনি।’
আমি
শিন্ডের দিকে তাকালাম। ও কি বুঝতে পারছে লোকটা কী বলছে? শিন্ডে চুপ করে দাঁড়িয়ে
দেওয়ালের পাশে। বোঝার চেষ্টা করছে কথাগুলো।
‘কী
করছিলি ওখানে? তুই কী ওদের সঙ্গী ছিলি? পথ দেখাচ্ছিলি নাকি... তুই পালালি কী করে?’
‘সত্যি
অনেক ভেবেও উত্তর পাইনি।’
‘কী
বালের উত্তর?’
‘লোকটা
হাসছিল কী করে?’
‘কোন
লোকটা?’
‘যে
লোকটা মানুষ মারছিল। মারছিল আর হাসছিল।’
এই
লোকটা যে কী বলছে আমি মাথামুন্ডু বুঝতে পারছি না। টেররিস্টদের খুব ভালো ট্রেনিং
থাকে ইন্টারোগেশানের সময় মিসলিড করার। আর এতো প্রহেলিকা বকে চলেছে। খুব ঠান্ডা
মাথা।
‘আর
আজকে দেখলাম...’
‘দেখ
আবার মার খাবি। ওই হুকটা দেখেছিস? ওখানে...’
‘উলটো
করে ঝুলিয়ে মারবেন তো? কিন্তু আজকে চল্লিশ জন মারা গিয়েছে। শুধু এই ডিস্ট্রিক্টেই।
আমি মর্গে গিয়েছিলাম।’
‘মর্গে
?বডি
দেখতে! পাগল শালা! দাঙ্গা করতে এসেছিস তুই? তুই কাদের দলে?’
‘মর্গে
দেখলাম বাচ্চাটাকে। কত বয়স হবে তিন চার। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম বাচ্চাটার হাতে মায়ের লাগানো মাদুলি।
চোখের নিচে কাজল। আর কী আশ্চর্য সেই কাজলের একটা ফোঁটা দেওয়া রয়েছে বাচ্চাটার
মাথার এক পাশে। যাতে নজর না লাগে। কাজলটা একটুও লেপে যায়নি। অথচ যে খুন করল
বাচ্চাটাকে তার নিশ্চয় হাত কাঁপেনি!’
লোকটা
ভালো সাজছে। আসলে এইসব বলে আমার সিম্প্যাথি পাওয়ার চেষ্টা করছে।
‘এর
সাথে বর্ডার ক্রস করার কী সম্পর্ক?’
‘মেরা
দেশ খো গয়া।’
‘খো
গয়া!’ আমার কথায় ব্যঙ্গের সুরটা স্পষ্ট। ‘ইস লিয়ে ভাগ যাওগে, উসপার? যিস পার সে
আকে টেররিস্ট লোগ... বদলা লেনা চাহতে হো?’
‘বদলা?
দ্বেষ? দেশকে বদলে মে দ্বেষ? দেহশত?’
‘চাহতে
কেয়া হো?’
‘য়ো
লড়কা যো গুজর গয়া, গোলি খাকে। কিঁউ কী উয়ো কোই প্রোটেস্ট মে থা। যো লোগ অন্ধা হো
গয়া পেলেট গান ফায়ারিং মে... যিস নে উয়ো গোলি চালাই থি উসকো ভি তো আপনি আঁখ পেয়ারি
হ্যায়। পেয়ারা হায় আপনা লাডলা। পর... মুঝে সমঝ নেহি আতি হ্যায়।’
‘উয়ো
লোগ দেশ কা গদ্দার হ্যায়! তুম কো পতা হ্যায় হামারা সিকিউরিটি ফোর্স কা কিতনা লোগ
রোজ মারে যাতে হ্যাঁয় উস গদ্দারোঁকে লিয়ে?’
‘গদ্দার?’
লোকটা ঠান্ডা গলায় বলল। একটুও না রেগে। ‘অর সোতে হুয়ে যিস আদমিকো কুচল দিয়া কিসিনে
গাড়ি সে? উস কাতিল কো বচায়া যিন লোগ?’
‘দেখো
বাত মত ঘুমাও।’
‘মুঝে
সমঝ মে নেহি আতা হ্যায় ক্যায়সে লোগ সিরফ মতভেদকে লিয়ে খুন কর সকতে হ্যাঁয়। ম্যায়
ইস দেশ কী নেহি হুঁ। খো গয়া মেরা দেশ...’
‘বহোত
বাত কর রহে তু।’ শিন্ডে এগিয়ে আসে। লোকটার কলারটা চেপে ধরে। ‘আঁখ দিখা রহা হ্যায়
মুঝে?’ শিন্ডে লোকটাকে আবার মারতে শুরু করে।
‘কেয়া
নাম হ্যায় তেরা?’
‘মোহন
দাস।’
‘ফির
সে ঝুট।’
‘নাম
বোল মোহন দাস।’
‘বাপ
কা নাম?’
‘করমচাঁদ।’
‘তু
গাঁধী হ্যায়?’
‘হাঁ।’
‘শালে
হাম লোগকো চুতিয়া সমঝা হ্যায় কেয়া?’
আমি
উঠে দাঁড়াই। এই লোকটা অসম্ভব ঘোড়েল। কিংবা অসম্ভব বোকা। এই ভাবে কিছু হবে না। একে
অন্য দাওয়াই দিতে হবে। আমি বেরিয়ে আমার ঘরের দিকে যাই। দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট্রি
সেলাম ঠোকে। আমি আমার কেবিনে ঢুকি। টেবিলের পিছনে গাঁধীবাপুর বিরাট ছবিটা। মোটা
ফ্রেমে বাঁধানো। উপরে গাঁদার মালা শুকিয়ে গিয়েছে। ছবির একপাশে ঘড়িটা। পৌনে দুটো
বাজে। এত রাতে কম্যান্ডান্ট সাবকে ফোন করা ঠিক হবে?
আমি
বেলটা বাজাই। আর্দালির ডিউটিতে থাকা জার্নাল সিং এসে দাঁড়িয়ে সেলুট ঠোকে।
‘চায়ে
লাও।’
‘জ্বি
হুজুর।’
আমি
ফোনটা তুলে কম্যান্ডান্ট সাবের নাম্বার ঘোরাতে শুরু করি।
‘দেখুন
আমি চা খেতে আসিনি।’
ভদ্রমহিলা
খুব রোগা। চোখে মুখে বুদ্ধির ছাপ। কাঁচা পাকা চুল। সবুজ সরু পাড়ের সাদা শাড়ি। শাড়ির ভিতরেও হালকা
ডুরে সবুজ।
‘আপনি
বাঙালি, তাই আমি আপনার সঙ্গে দেখা করলাম।’
‘আমি
তো বলছি ম্যাডাম আপনার ভুল হচ্ছে।’
‘নাহ
সত্যি বলছি, মোহিউদ্দিন আনসারি বলে যার ছবি কাগজে ছাপা হয়েছে সেটা আমার ছেলে। ওর নাম মনোজিৎ রায়।’
‘ম্যাডাম।
আমাদের এনকাউন্টারে যে মারা গিয়েছে সে একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী। মোহিউদ্দিন আনসারি।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।’
‘আপনি
বুঝছেন না। হয়ত আপনাদের ভুল হয়েছে। আমার ছেলে পাগল হয়ে গিয়েছিল দিল্লি
ইউনিভার্সিটিতে পি এইচ ডি করতে করতে। অসম্ভব স্কলার ছিল। পলিটিক্যাল সায়েন্সে
টপার। কিন্তু... পাগল হয়ে গেল। নিজের পরিচয় দিত মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী। প্রথমে কেউ
বোঝেনি। অদ্ভুত কিছু পোষাক বানিয়েছিল যৌবন বয়সে গাঁধীজি যেমন পরতেন। বোধহয়
ইন্টারনেটে ছবি দেখে। তারপর ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বাড়ল। এমনিতে কথাবার্তা খুব
লজিকাল। কিন্তু নিজের নাম বললেই... আমি কী করে বুঝব বলুন ও রাত্রে বাড়ির দরজা খুলে
পালিয়ে যাবে... আমি যে সেদিন কেন ঘুমোলাম...’ ভদ্রমহিলা বলেই চলেন। একসময় ফুঁপিয়ে
কাঁদতে থাকেন।
আমি
চুপ করে থাকি। কম্যান্ডান্ট সাবকে করা ফোনটা আমার কানে বাজতে থাকে।
‘হি
ইজ ভেরি পলিটিক্যালি মোটিভেটেড। ফুল অফ অ্যান্টি এস্ট্যাব্লিশমেন্ট সেন্টিমেন্টস।’
‘আর
ইউ শিয়োর হি ইজ আ টেররিস্ট?
‘আই
অ্যাম শিওর স্যার। অ্যান্ড দ্য বাগার ক্লেমস টু বি মহাত্মা গাঁধী।’
‘হোলি
শিট! হি মাইট বি নাটস।’
‘অর
হি ওয়ান্টস টু মিসলিড। দ্য ওয়ে হি ইজ টকিং আই ডোন্ট থিংক...’
‘ওয়েট
আই অ্যাম কামিং টুমরো মর্নিং।’
তিনদিন
টানা জেরা করেছিলাম আমরা। শেষের দিকে ছেলেটা আর নড়তে পারছিল না মারের চোটে। অথচ প্রতিবার
সে একই উত্তর দিয়েছিল। তার নাম মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী। এই দেশটা নাকি আর তার দেশ
নেই। তার দেশ হারিয়ে গিয়েছে বিদ্বেষে। তাই সে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায় দূরে
কোথাও। কোথায় সে নিজেও জানেনা। ছেলেটা মরে যাওয়ার পর আমরাই ওকে মহিউদ্দিন আনসারি
বানিয়ে ফেলি। মহিউদ্দিন আনসারি জেহাদি। দাঙ্গা বাঁধিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল বর্ডার ক্রশ
করে। আমরা তাকে ইন্টার্সেপ্ট করে...
ভদ্রমহিলা
চলে যান একসময়। আমি চুপ করে বসে থাকি বেশ খানিকক্ষণ। তারপর অন্যমনস্ক হতে
কম্পিউটারটা খুলে বসি। ফেসবুকে কে পোস্ট করছে কোথায় নাকি আদিবাসীদের জোর করে উচ্ছেদ
করা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য। সেটা আবার আরেকজন শেয়ার করেছে একটা গ্রুপে।
বিরক্ত লাগে। এরা পারেও বটে। আমি গুগল নিউজ খুলি। কোন নেতা আবার অসহিষ্ণু কথা
বলেছে। অসহিষ্ণু কথা ধুর! আমি বেল বাজাই। আর্দালি আজকেও জার্নাল সিং।
‘চায়ে
লাও। কড়ক।’
জার্নাল
দাঁড়ায়।
‘ফটো
কাঁহা গয়ি স্যার?’
‘ফটো?
কোনসি ফটো?’
জার্নাল
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পিছনের দেওয়ালের দিকে। আমি ঘুরে তাকাই। আরে একি!
গাঁধীজির ছবিটা কই গেল? ফ্রেমটা যেমন ছিল তেমনি। শুধু ভিতরের ছবিটা নেই।
‘গির
গয়া কেয়া?’ আমি উঠে দাঁড়াই। না, নীচে পড়ে নেই তো। কোথায় গেল।
‘ঢুন্ডো
জার্নাল।’
4 মন্তব্যসমূহ
বহুত খুব!
উত্তরমুছুনTukhor chabuk!
উত্তরমুছুনHarold Pinterএর চরিত্রায়ন যে ত্রাসের সঞ্চার করে , অনুভবী পাঠকের শিরদাঁড়া বেয়ে নামতে পারে তার শীতল ধারা । তবে যে ঐতিহাসিক চরিত্র এই সংবিদের আলম্বন , বিদ্বেষময় দেশ নির্মাণে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা কি ছিলো প্রশ্নাতীত ?
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন