অনুবাদ : এমদাদ রহমান
আমি সকালের লেখক। নিজের হাতে, কাগজে-কলমে লিখি, লিখতে শুরু করি প্রতিদিন সকালে- সাড়ে আট'টায় শুরু করে বারোটা পর্যন্ত; তারপর যাই- সাঁতার কাটতে। ঘরে ফিরে খাবার খেয়ে পরের দিনের লেখার খোঁজে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়তে থাকি। উদ্দেশ্য থাকে একটাই- লেখার টেবিলে বসবার আগেই যাতে পুরো বইটা মাথার ভিতর লিখে ফেলতে পারি। এই যে আমি এখন যেখানে থাকি, নিউ জার্সির প্রিন্সটনের এই পুরোনো আবাসিক এলাকায়, এখানে হাঁটতে বের হলেই আমি একটা বিশেষ নিয়ম মেনে চলি। নিয়মটা একটা ত্রিভুজের মতো। প্রথমে যাই মার্সার স্ট্রিটে- আইনস্টাইনের বাড়ি, সেখান থেকে টমাস মানের বাড়ি- স্টকটন স্ট্রিট, তারপর, হারমান ব্রোচের বাড়ি- ইভলিন প্লেস। এই তিনটি বিশেষ জায়গা ঘুরে ঘরে ফিরতে ফিরতে, মনে মনে, আগামীকালের ছয় কি সাতটা পৃষ্ঠা আমার লেখা হয়ে যায়। সেই লেখাকে যখন কাগজে দৃশ্যমান দেখি, যখন একজন লেখক দৃশ্যটা দেখেন, আসলে তখনই লেখাটা সমাপ্ত হয়েছে। পরে আর কিছুই আর বলবার থাকে না- অধ্যায় কিংবা দৃশ্য। কিন্তু মার্সেল প্রুস্তের মতো কিছু জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তখন লেখককে। লেখক জানেন তিনি কী লিখতে চলেছেন আর বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছেন তাঁর কলম থেকে কী বের হয়ে আসছে- তা দেখে!
কথাগুলি- কার্লোস ফুয়েন্তেসের। প্যারিস রিভিউর পক্ষে, ১৯৮১-র ডিসেম্বরের তুষারপাতের দিনে, নিউ জার্সির প্রিন্সটনের বাড়িতে, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন- আলফ্রেড ম্যাক অ্যাডাম ও চার্লস রুয়াস।
ফুয়েন্তেসের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮, মেক্সিকোয়। তিনি বলেন- মেক্সিকো ছিল আমার কাছে একটি কল্পনার দেশ। বাবা এই দেশটি আমার জন্যই আবিষ্কার করেছিলেন, আর আমি একজন মেক্সিকান লেখক। পাঠকৃতিতে দেখা যায়- তাঁর লেখায় প্রতিভাত হচ্ছে নানামাত্রিক ও বৈচিত্র্যময় সমাজব্যবস্থাকে ভিতর ও বাইরে থেকে দেখার অনন্য দৃষ্টি ভঙ্গি, তিনি লেখায় তুলে ধরেন মেক্সিকোর ইতিহাস ও বর্তমানকালের অন্তর্দ্বন্দের জটিল সব উপলব্ধি। পৌরাণিকীর সঙ্গে বাস্তব জীবনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ভয়, প্রেম আর আত্মপরিচয়ের সংকটের অনন্যমাত্রিক উন্মোচন, মিশ্রণ- হচ্ছে তাঁর সমস্ত লেখালেখি। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা- দ্য ডেথ অব আর্টেমিও ক্রুজ, আউরা, ক্রিস্টোকার আনবর্ন, টেরা নস্ত্রা, ডিস্ট্যান্ট রিলেশনস, দ্য ওল্ড গ্রিঙ্গো, দ্য ক্যাম্পেইন, দ্য ইয়ার্স উইথ লরা দিয়াজ, দ্য ঈগলস থ্রোন এবং ডেসটিনি অ্যান্ড ডিজায়ার, ব্লাদ, মাইসেলফ অ্যান্ড আদারস ইত্যাদি। সমসাময়িক সাহিত্য, লেখক, নিজের পাঠ আর লেখালেখির কলাকৌশল নিয়ে অজস্র গদ্যও রেখে গেছেন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন ২০১২ সালের ১৫ মে। ফুয়েন্তেস বলেছেন- রাজনীতি ক্রমশ হতে থাকে মতাদর্শগত, রাজনীতির ঝোঁক আদর্শবাদ, আর- ধর্ম হচ্ছে মতবাদসংক্রান্ত, এক অন্ধবিশ্বাস, কিন্তু সাহিত্য সব সময় অনিশ্চিত অর্থ কিংবা অভিপ্রায় বিশিষ্ট। পাবলিশার্স উইকলি'র পক্ষে রবার্ট জেমস এই লেখকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিশেষ করে তাঁর 'ব্লাদ' উপন্যাসটি নিয়ে। এটাই ফুয়েন্তেসের শেষ সাক্ষাৎকার। এখানে পড়ুন ফুয়েন্তেসের অসাধারণ কিছু কথা, তাঁর শেষ সাক্ষাৎকার, বাংলা ভাষান্তরে-
জেমস :
আপনার উপন্যাস 'ব্লাদ' সম্পর্কে বলুন।
ফুয়েন্তেস :
ব্লাদ আসলে রক্তচোষার গল্প। পিচাশকাহিনি। ব্লাদ ইউরোপে রক্ত সরবরাহ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে, নিঃশেষ হয়ে মেক্সিকোয় ফিরে আসে। আমি আসলে উপন্যাসের প্লটকে খুব বেশি বিস্তৃত করতে চাইনি। ইতিহাসের সত্যটা হল, এই ব্লাদ ছিল বলকানদের এক বিশেষ রাজনৈতিক শক্তি- এক খুনি কিন্তু ভ্যাম্পায়ার নয়।
জেমস :
উপন্যাসটা কেন লিখলেন?
ফুয়েন্তেস :
পিচাশদের নিয়ে পুরনো সিনেমাগুলো আমার খুব প্রিয়। যখন ছোট ছিলাম, তখন বেলা লুগেসির ছবির সঙ্গে বরিস কারলের ছবি দেখতাম একসঙ্গে। যেন একসঙ্গে অতিকায় এক দানবকে দেখতাম। আপনি তো জানেন ড্রাকুলা কখনই তার পোশাক পালটায় না। কখনই না। ড্রাকুলা সন্ধ্যার পোশাকেই তার কফিনে ঘুমাতে যায়, পরের রাতে সেই একই পোশাকে কফিন থেকে বের হয়ে আসে।
জেমস :
এইসময়ে ড্রাকুলা নিয়ে লেখা সাহিত্য আর সিনেমাগুলি সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
ফুয়েন্তেস :
হ্যাঁ, এখনকার রক্তচোষারা বয়সে তরুণ, এমনকি তাদের বয়স তের থেকে উনিশ বছরের ভিতর। তবে আমি বয়স্ক অর্থাৎ পুরনোদের পছন্দ করি।
জেমস :
উপন্যাসের পটভূমি হিসাবে কেন মেক্সিকোকেই বেছে নিলেন?
ফুয়েন্তেস :
এখানে দশ মিলিয়ন মানুষ আছে যারা ব্লাদকে উপভোগ করতে পারবে, মানে ব্লাদের রক্তপানের উৎসবকে। আর এখানেই আছে অ্যাজটেকদের সঙ্গে মানুষের আত্মাহুতির একটি ঐতিহ্য। সব মিলিয়ে বলব যে আমি এই দেশটাকে বেশ ভালভাবেই জানি, আজ যদি আমি আরহেন্তিনার মানুষ হতাম, উপন্যাসটিকে সেখানেই স্থাপন করতাম।
জেমস :
লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনি কি খুব নিয়ম মেনে চলা লেখক? নিজের লেখালেখি নিয়ে কি কোনও পরিকল্পনা বা ছক তৈরি করেন?
ফুয়েন্তেস :
আমি আসলেই নিয়ম মেনে চলা লেখক। আমার দাদীমা ছিলেন জার্মান। অনেক হিস্পানিভাষী লেখক বলেন যে তারা অনুপ্রেরণা দ্বারা তাড়িত হন। আমার সব অনুপ্রেরণা আসে কাজ থেকে। আমার কাজ শুরু হয় সকাল সাত’টায়, কাজে কাজে চলে যায় পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টা। কাজ আমার কাজে অশেষ আনন্দের ব্যাপার। লেখালেখির কাজ আসলেই খুব নির্জনতার আর আনন্দের। কাজ আমাকে কাবু করতে পারে না। রাতে কাগজে আমি কিছু ভাবনা টুকে রাখি আর পরের দিন এগুলি দেখে আমি বিস্মিত হয়ে দেখি যে, কী আশ্চর্য সব কথাই না লিখেছি!
জেমস :
আপনি কি লেখার কাজে কম্পিউটার ব্যাবহার করেন?
ফুয়েন্তেস :
লেখালেখির ক্ষেত্রে আমি আসলে সারভেন্তেসের মত, কাগজ আর কলমই আমার সঙ্গী। যখনই অন্য কোথাও লিখতে যাই, চরমভাবেই ব্যর্থ হই।
জেমস :
আপনি আসলেই সারভেন্তেসের একজন বিশাল ভক্ত!
ফুয়েন্তেস :
হিস্পানি ভাষার তিনি একজন বড় মাপের আধুনিক লেখক। প্রতি দুই বছর অন্তর তার দন কিহোতে আমি পড়ি। দন কিহোতে হল উপন্যাসের উপন্যাস, উপন্যাসের ভিতরের উপন্যাস।
জেমস :
আপনি তো বেশ কিছু চিত্রনাট্য আর মঞ্চনাটকও লিখেছেন।
ফুয়েন্তেস :
এইসব কাজ এখন পুরোপুরিই ছেড়ে দিয়েছি। এই মাধ্যমগুলো আপনার কাছে দাবি করবে যে আপনি চারপাশের বস্তুজগতটাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন, দেখবেন। তারপর... কীভাবে আপনি একটি দরজার বর্ণনা দেবেন... এইসব। আপনি হবেন একজন লেখক কিংবা সিনেমা নির্মাতা। কিন্তু দুটো নয়। সাহিত্য হল সিনেমা তৈরির সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার।
আমি সকালের লেখক। নিজের হাতে, কাগজে-কলমে লিখি, লিখতে শুরু করি প্রতিদিন সকালে- সাড়ে আট'টায় শুরু করে বারোটা পর্যন্ত; তারপর যাই- সাঁতার কাটতে। ঘরে ফিরে খাবার খেয়ে পরের দিনের লেখার খোঁজে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত পড়তে থাকি। উদ্দেশ্য থাকে একটাই- লেখার টেবিলে বসবার আগেই যাতে পুরো বইটা মাথার ভিতর লিখে ফেলতে পারি। এই যে আমি এখন যেখানে থাকি, নিউ জার্সির প্রিন্সটনের এই পুরোনো আবাসিক এলাকায়, এখানে হাঁটতে বের হলেই আমি একটা বিশেষ নিয়ম মেনে চলি। নিয়মটা একটা ত্রিভুজের মতো। প্রথমে যাই মার্সার স্ট্রিটে- আইনস্টাইনের বাড়ি, সেখান থেকে টমাস মানের বাড়ি- স্টকটন স্ট্রিট, তারপর, হারমান ব্রোচের বাড়ি- ইভলিন প্লেস। এই তিনটি বিশেষ জায়গা ঘুরে ঘরে ফিরতে ফিরতে, মনে মনে, আগামীকালের ছয় কি সাতটা পৃষ্ঠা আমার লেখা হয়ে যায়। সেই লেখাকে যখন কাগজে দৃশ্যমান দেখি, যখন একজন লেখক দৃশ্যটা দেখেন, আসলে তখনই লেখাটা সমাপ্ত হয়েছে। পরে আর কিছুই আর বলবার থাকে না- অধ্যায় কিংবা দৃশ্য। কিন্তু মার্সেল প্রুস্তের মতো কিছু জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তখন লেখককে। লেখক জানেন তিনি কী লিখতে চলেছেন আর বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছেন তাঁর কলম থেকে কী বের হয়ে আসছে- তা দেখে!
কথাগুলি- কার্লোস ফুয়েন্তেসের। প্যারিস রিভিউর পক্ষে, ১৯৮১-র ডিসেম্বরের তুষারপাতের দিনে, নিউ জার্সির প্রিন্সটনের বাড়িতে, তাঁর সঙ্গে কথা বলেন- আলফ্রেড ম্যাক অ্যাডাম ও চার্লস রুয়াস।
ফুয়েন্তেসের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯২৮, মেক্সিকোয়। তিনি বলেন- মেক্সিকো ছিল আমার কাছে একটি কল্পনার দেশ। বাবা এই দেশটি আমার জন্যই আবিষ্কার করেছিলেন, আর আমি একজন মেক্সিকান লেখক। পাঠকৃতিতে দেখা যায়- তাঁর লেখায় প্রতিভাত হচ্ছে নানামাত্রিক ও বৈচিত্র্যময় সমাজব্যবস্থাকে ভিতর ও বাইরে থেকে দেখার অনন্য দৃষ্টি ভঙ্গি, তিনি লেখায় তুলে ধরেন মেক্সিকোর ইতিহাস ও বর্তমানকালের অন্তর্দ্বন্দের জটিল সব উপলব্ধি। পৌরাণিকীর সঙ্গে বাস্তব জীবনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ভয়, প্রেম আর আত্মপরিচয়ের সংকটের অনন্যমাত্রিক উন্মোচন, মিশ্রণ- হচ্ছে তাঁর সমস্ত লেখালেখি। তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা- দ্য ডেথ অব আর্টেমিও ক্রুজ, আউরা, ক্রিস্টোকার আনবর্ন, টেরা নস্ত্রা, ডিস্ট্যান্ট রিলেশনস, দ্য ওল্ড গ্রিঙ্গো, দ্য ক্যাম্পেইন, দ্য ইয়ার্স উইথ লরা দিয়াজ, দ্য ঈগলস থ্রোন এবং ডেসটিনি অ্যান্ড ডিজায়ার, ব্লাদ, মাইসেলফ অ্যান্ড আদারস ইত্যাদি। সমসাময়িক সাহিত্য, লেখক, নিজের পাঠ আর লেখালেখির কলাকৌশল নিয়ে অজস্র গদ্যও রেখে গেছেন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন ২০১২ সালের ১৫ মে। ফুয়েন্তেস বলেছেন- রাজনীতি ক্রমশ হতে থাকে মতাদর্শগত, রাজনীতির ঝোঁক আদর্শবাদ, আর- ধর্ম হচ্ছে মতবাদসংক্রান্ত, এক অন্ধবিশ্বাস, কিন্তু সাহিত্য সব সময় অনিশ্চিত অর্থ কিংবা অভিপ্রায় বিশিষ্ট। পাবলিশার্স উইকলি'র পক্ষে রবার্ট জেমস এই লেখকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিশেষ করে তাঁর 'ব্লাদ' উপন্যাসটি নিয়ে। এটাই ফুয়েন্তেসের শেষ সাক্ষাৎকার। এখানে পড়ুন ফুয়েন্তেসের অসাধারণ কিছু কথা, তাঁর শেষ সাক্ষাৎকার, বাংলা ভাষান্তরে-
জেমস :
আপনার উপন্যাস 'ব্লাদ' সম্পর্কে বলুন।
ফুয়েন্তেস :
ব্লাদ আসলে রক্তচোষার গল্প। পিচাশকাহিনি। ব্লাদ ইউরোপে রক্ত সরবরাহ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে, নিঃশেষ হয়ে মেক্সিকোয় ফিরে আসে। আমি আসলে উপন্যাসের প্লটকে খুব বেশি বিস্তৃত করতে চাইনি। ইতিহাসের সত্যটা হল, এই ব্লাদ ছিল বলকানদের এক বিশেষ রাজনৈতিক শক্তি- এক খুনি কিন্তু ভ্যাম্পায়ার নয়।
জেমস :
উপন্যাসটা কেন লিখলেন?
ফুয়েন্তেস :
পিচাশদের নিয়ে পুরনো সিনেমাগুলো আমার খুব প্রিয়। যখন ছোট ছিলাম, তখন বেলা লুগেসির ছবির সঙ্গে বরিস কারলের ছবি দেখতাম একসঙ্গে। যেন একসঙ্গে অতিকায় এক দানবকে দেখতাম। আপনি তো জানেন ড্রাকুলা কখনই তার পোশাক পালটায় না। কখনই না। ড্রাকুলা সন্ধ্যার পোশাকেই তার কফিনে ঘুমাতে যায়, পরের রাতে সেই একই পোশাকে কফিন থেকে বের হয়ে আসে।
জেমস :
এইসময়ে ড্রাকুলা নিয়ে লেখা সাহিত্য আর সিনেমাগুলি সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?
ফুয়েন্তেস :
হ্যাঁ, এখনকার রক্তচোষারা বয়সে তরুণ, এমনকি তাদের বয়স তের থেকে উনিশ বছরের ভিতর। তবে আমি বয়স্ক অর্থাৎ পুরনোদের পছন্দ করি।
জেমস :
উপন্যাসের পটভূমি হিসাবে কেন মেক্সিকোকেই বেছে নিলেন?
ফুয়েন্তেস :
এখানে দশ মিলিয়ন মানুষ আছে যারা ব্লাদকে উপভোগ করতে পারবে, মানে ব্লাদের রক্তপানের উৎসবকে। আর এখানেই আছে অ্যাজটেকদের সঙ্গে মানুষের আত্মাহুতির একটি ঐতিহ্য। সব মিলিয়ে বলব যে আমি এই দেশটাকে বেশ ভালভাবেই জানি, আজ যদি আমি আরহেন্তিনার মানুষ হতাম, উপন্যাসটিকে সেখানেই স্থাপন করতাম।
জেমস :
লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনি কি খুব নিয়ম মেনে চলা লেখক? নিজের লেখালেখি নিয়ে কি কোনও পরিকল্পনা বা ছক তৈরি করেন?
ফুয়েন্তেস :
আমি আসলেই নিয়ম মেনে চলা লেখক। আমার দাদীমা ছিলেন জার্মান। অনেক হিস্পানিভাষী লেখক বলেন যে তারা অনুপ্রেরণা দ্বারা তাড়িত হন। আমার সব অনুপ্রেরণা আসে কাজ থেকে। আমার কাজ শুরু হয় সকাল সাত’টায়, কাজে কাজে চলে যায় পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টা। কাজ আমার কাজে অশেষ আনন্দের ব্যাপার। লেখালেখির কাজ আসলেই খুব নির্জনতার আর আনন্দের। কাজ আমাকে কাবু করতে পারে না। রাতে কাগজে আমি কিছু ভাবনা টুকে রাখি আর পরের দিন এগুলি দেখে আমি বিস্মিত হয়ে দেখি যে, কী আশ্চর্য সব কথাই না লিখেছি!
জেমস :
আপনি কি লেখার কাজে কম্পিউটার ব্যাবহার করেন?
ফুয়েন্তেস :
লেখালেখির ক্ষেত্রে আমি আসলে সারভেন্তেসের মত, কাগজ আর কলমই আমার সঙ্গী। যখনই অন্য কোথাও লিখতে যাই, চরমভাবেই ব্যর্থ হই।
জেমস :
আপনি আসলেই সারভেন্তেসের একজন বিশাল ভক্ত!
ফুয়েন্তেস :
হিস্পানি ভাষার তিনি একজন বড় মাপের আধুনিক লেখক। প্রতি দুই বছর অন্তর তার দন কিহোতে আমি পড়ি। দন কিহোতে হল উপন্যাসের উপন্যাস, উপন্যাসের ভিতরের উপন্যাস।
জেমস :
আপনি তো বেশ কিছু চিত্রনাট্য আর মঞ্চনাটকও লিখেছেন।
ফুয়েন্তেস :
এইসব কাজ এখন পুরোপুরিই ছেড়ে দিয়েছি। এই মাধ্যমগুলো আপনার কাছে দাবি করবে যে আপনি চারপাশের বস্তুজগতটাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন, দেখবেন। তারপর... কীভাবে আপনি একটি দরজার বর্ণনা দেবেন... এইসব। আপনি হবেন একজন লেখক কিংবা সিনেমা নির্মাতা। কিন্তু দুটো নয়। সাহিত্য হল সিনেমা তৈরির সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার।
0 মন্তব্যসমূহ