গল্পপাঠ :
গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
জান্নাতুল :
ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ভালোবাসি। একসময় কিছু ব্লগ লেখা দেখে মনে হলো এরকম লেখা আমিও লিখতে পারব। সেখান থেকেই শুরু।
গল্পপাঠ :
শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
জান্নাতুল :
শুরুর লেখায় ফিনিশিং টানতে পারতাম না। শুরুটা ভালো হতো শেষটা গড়বড় হয়ে যেত। এভাবে অনেক লেখাই অপ্রকাশিত থেকে গেছে।
গল্পপাঠ :
গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
জান্নাতুল :
এখনো বড় গল্প বা বই লেখার জন্য প্রস্তুত নই। ছোটখাটো লেখা থেকেই একটু একটু করে বড় করা শিখছি।
গল্পপাঠ :
আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
জান্নাতুল :
ছোটখাটো যেকোনো অভিজ্ঞতা থেকেই প্লট পেয়ে যাই। সেখান থেকে লেখা শুরু করি।
গল্পপাঠ :
আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
জান্নাতুল :
একসময় আমি যা ছিলাম তার থেকে এখন উন্নত। যত দিন যাবে আরো উন্নতি হবে লেখার তখন এখনকার লেখাগুলোকেও হয়তো অসম্পূর্ণ লাগবে।
গল্পপাঠ ;
আপনার প্রিয় গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে প্রিয় মনে করেন?
জান্নাতুল :
গল্পপাঠ :
কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
জান্নাতুল :
বিশেষ কারোর জন্য না। নিজের ভালো লাগার জন্যই লিখি। আর পাঠকের কথা অবশ্যই মাথায় থাকে। মোটামুটি সবাই রম্য পছন্দ করে বলেই রম্য বেশী লিখি।
গল্পপাঠ :
এখন কি লিখছেন?
জান্নাতুল :
বিশেষ কিছু না। ছোটখাটো লেখা থেকেই শিখছি। বিভিন্ন পত্রিকায় লিখছি।


জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য
ঝালমুড়িওয়ালা
সালটা ২০১৩। মিলন নামের মানুষটি পার্কের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করত। সারাদিন ঝালমুড়ি বিক্রি শেষে মোটামুটি চারশ/পাঁচশ টাকা লাভ থাকত তার। বড় ছেলেটার পায়ে সমস্যা। বছরখানেক আগে এক্সিডেন্টের পর থেকে এক পা সম্পূর্ণ অচল তার। তার চিকিৎসার জন্য টাকা জমাতে হয়। তাই যত পারা যায় কম খরচ করেন তিনি। সারাদিন ঝালমুড়ি বিক্রি শেষে একমুঠো চাল-ডাল,মসলাপাতি কিনে নিয়ে গিয়ে বাসায় গিয়ে খিচুড়ি রান্না করেন। দিনে এই একবেলায়ই তারা শান্তি করে ভাত খায়।
মিলনের স্ত্রী সুলতানা একটা নামকরা টিভি সিরিয়ালে কাজের বুয়ার চরিত্র করছেন। সিরিয়ালটা আজ আড়াই বছর ধরে চলছে। এবং অন্যান্য মেইন চরিত্রদের থেকে সুলতানার গুরুত্ব সেখানে কোন অংশে কম না। কেননা কাজের বুয়া হিসেবে হলেও তাকে প্রতিদিন টিভিতে দেখানো লাগে। সেখান থেকে শিফট হিসাবে প্রতিদিন মোটামুটি দুই শিফটের কাজ করে সেও ভালোই ইনকাম করে। দুইজন মিলে খেয়ে না খেয়ে টাকা জমায় ছেলের চিকিৎসার জন্য।
একমেয়ে,একছেলে নিয়ে তাদের চারজনের সংসার। অর্থের অভাব থাকলেও সংসারে সুখ আছে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রান্নার সময় চারজন একসাথে হয়ে অনেক গল্প করে, ফাজলামি,ঠাট্টা। ছেলে রাকিবের বিয়ের ব্যাপারে মজা করে সুলতানা বলেন, বউ আসলে তোর দেখাশোনা করতে পারবে,বউয়ের ভালোবাসায়ই সুস্থ হয়ে যাবি। রাকিব লজ্জা পেয়ে যায়। ্যাব
আজ সুলতানা এগারো ঘন্টা কাজ করেছে। প্রথম শিফটের টাকাটায় শুধু দেয়া হচ্ছে। ষোল ঘন্টা পূর্ণ না হওয়ায় দ্বিতীয় শিফটের বেতন দেয়া হবে না। সুলতানা ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে গিয়েই বকা খেলা
"আইছে জমিদারনী,তোরজন্য আয়োজন করে বসে আছি তো! আসেন ম্যাডাম কয় লাখ টাকা লাগবে আপনার বলেন!"
সুলতানার চোখে পানি চলে এল। একবার ভাবল নাটকের নায়িকার কাছে বলে দেখে। ম্যাডাম অনেক ভালো। বিশেষ করে আচার ব্যবহারের দিক থেকে। তারপরেও কি মনে হলো সুলতানার মানে লাগল। কাউকে কিছু না বলে চলে গেল। এটা নতুন কিছু না,এরকম প্রায়ই হয়। শিফট পুরো না হলে অন্তত আধা শিফটের টাকা তো দেয়া উচিত!!
সন্ধ্যার আগ দিয়ে মাস্তানমতো এক ছেলে একটা মেয়ে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে পার্কের ভেতর ঢুকল। মিলনের কাছ থেকে তারা প্রায় সত্তুর টাকার ঝালমুড়ি নিয়েছে। ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। বন্ধুরা পাহারা দিচ্ছে সামনে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সুলতানার বাড়ি ফিরতে দেরী হয়। এতক্ষণে মিলন বাসায় পৌছে যায় অন্যদিন। ছেলেমেয়ে দুইটা বাসায় একা থাকে। তারা নিশ্চয়ই ভয় পাচ্ছে। মিলন সেই ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে ঝালমুড়ির টাকা চাইল। ছেলেগুলো চোখ লাল করে বললো, তুই জানিস আমরা কারা?
মিলন বললো,আপনারা কারা আমার জানার দরকার নাই, ঝালমুড়ি খেয়েছেন টাকা দেন।
দলের ভেতরে চ্যাংড়া একটা ছেলে এগিয়ে এসে মিলনকে একটা চড় মেরে দিল। সে সম্ভবত নেশাও করে আছে,কথা শুনে তাই মনে হচ্ছে। বললো, যা ভাগ, আমাদের কাছে কেউ টাকা চায় না বুঝলি!?
মিলন বললো, ভাই,আমার ছেলেটা অনেক অসুস্থ। ওর চিকিৎসার জন্য একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছি। একশ টাকাও এখন আমার কাছে অনেক মূল্যবান,টাকাটা দিয়ে দেন। টাকা না নিয়ে আমি যাবো না। সন্ধ্যার সময় মেয়ে মানুষ নিয়ে এসেছেন, পুলিশের কাছে যাবো আমি।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছেলেগুলো তাকে পেটাতে শুরু করলো। মারতে মারতে আধমরা করে দিল। মিলনের জ্ঞান ফিরল তখন সে হাসপাতালের বারান্দায়। পার্কের সামনের চায়ের দোকানের কয়জন বসে আছে। তারা এখানে নিয়ে এসেছে ওকে।
একজন বললো, ডাক্তার দেখেছে,কেবিন ভাড়া করতে হবে। টাকা দাও।
মিলনের কথা বলার ক্ষমতাও নেই। এক চোখ বন্ধ।এক কানেও কিছু শুনতে পাচ্ছে না। ক্রমাগত কানের পেছন দিয়ে রক্ত ঝরছে। তবুও টাকা ছাড়া হসপিটালের কেউ দেখতে রাজি হয়নি। মিলনের পকেট খুঁজে চারশর কিছু বেশী টাকা পাওয়া গেছে। চায়ের দোকানের সেই দোকানী আর লোকগুলোর কাছেও বেশী টাকা নেই।
রাত বারোটা, সুলতানা ছুটে গেছে তার নাটকের নায়িকার বাড়িতে। গেটে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নায়িকা বেরিয়ে এলো। সুলতানা তার স্বামীর অবস্থা বললো। নায়িকা বললেন, আমার এখানে কি করার আছে? সুলতানা বললো,নাটকে তো অভিনয় করেন যে আপনাদের গরীবদের জন্য অনেক মায়া, গরীবদের জন্য অনেক কিছু করেন। ক্যামেরার বাইরে কিছু করা যায় না? ভিক্ষা চাইছি না। অনেকবার আমি আট ঘন্টা শিফটের বাইরেও তিন-চার ঘন্টা করে কাজ করেছি। সেগুলো বাবদ কিছু টাকা অন্তত ম্যানেজাররে বলেন দিতে। ছেলের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা সব দিয়েও আমার স্বামীর চিকিৎসা হচ্ছে না। আরো টাকা চাইছে। নায়িকা বললেন, তোমরা আমাদের ভাবো কি? আমরা কি জমিদার? এই যে এতবড় বাড়িটা দেখছ তার ভাড়া জানো? আমাদের রোজ যে কস্টিউম নিতে হয় তারজন্য কত খরচ হয় জানো? সর্বোচ্চ আমি তোমাকে এক হাজার টাকা দিতে পারি। নিলে নিয়ে চলে যাও।
সুলতানা ছুটে গেল ম্যানেজারের বাড়ি। গেটের সিকিউরিটি গার্ড টপকিয়ে ম্যানেজারের সাথে দেখাই করতে পারল না। তিনি এলেন না।
ভোর পাঁচটার দিকে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মিলন মারা গেল। তাকে মারধোর কারা করেছে সেই বিষয়েও চায়ের দোকানের সেই দোকানী মুখ খুলল না। ওরা হর্তাকর্তা লেভেলের মানুষ। ওদের নাম নিলে দোকান চালানো যাবে না।
5 মন্তব্যসমূহ
একদিন অনেক বড় লেখিকা হবেন "ইনশাআল্লাহ্"
উত্তরমুছুনভালবাসা রইল 💙💙😍😍
উত্তরমুছুনভালবাসা😑😑💙😍
উত্তরমুছুনগল্পটি পড়তে ভালো লেগেছে। আরো লিখুন। গল্পপাঠে সাক্ষাতকার না নিলে আপনাকে আবিষ্কার করা হতো না। গল্পপাঠ অনেক আনকোড়া লেখককে তুলে আনছে, এটা শুভলক্ষণ। যারা গতকাল লিখতে শুরু করেছে তারা যেমন আছে, গত শতাব্দী থেকে লিখছে তেমন লেখকও এখানে আছে। গল্পপাঠ চায় নবীন প্রবীনের সাহিত্যে মেলবন্দন গড়ে উঠুক। সম্পাদকের প্রিয়পাত্র হতে পারলে গল্পপাঠে যে কোন মানের লেখা আসতে পারে। আপনাকে অভিনন্দন। শুভকামনা।
উত্তরমুছুনপ্রত্যেক টা গল্প সত্যি অনেক ভালো লাগে। শুভকামনা রইলো আপু :)
উত্তরমুছুন