অভিজিৎ চৌধুরীর গল্প: থানার রাত

সুরত হাল সেরে মেজ-বাবুর কাছে এসে বসলাম । চৈত্র মাসের সন্ধে । একটু আগেও বেশ ভালো ছিল । হঠাৎ কিছু কৃষ্ণ মেঘ হানাদারের মতোন ধেয়ে এসে অন্ধকারের কালো বুলিয়ে দিয়েছে ।

শাল ফুলের গন্ধ নাকে এলো ।

আমি বললাম ,

কৃষ্ণেন্দু , বেশ সুন্দর গন্ধ তো , শাল ফুল !

মেজবাবু অর্থাৎ কৃষ্ণেন্দু বলল , হ্যাঁ স্যার । বডিটা রাখা যাচ্ছিল না , আপনার খুব কষ্ট হলো ।

আমি বললাম – ভাগ্যিস একটু আগেও আলো ছিল , না হলে করতেই পারতাম না ।

চা খাবেন স্যার !

সুরত হাল করাটা এখন কেমন যন্ত্রের মতোন হয়ে গেছে । শুধু জিজ্জেস করি বিষ খেয়ে / গলায় দড়ি ! না-কি আগুনে পোড়া !

গ্রিন টি নিয়ে এলো কৃষ্ণেন্দু ।

ব-দ্বীপ অঞ্চলের এই থানাটায় ফুলের বাগান রয়েছে ।

আর সবচেয়ে ভালো লাগে আমার একটা টলটলে জলের পুকুর । ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে । নিয়নের হলুদ আলোর মাথায় সেই বৃষ্টির ফোঁটা লেগে রয়েছে । আলো পড়ে পুকুরের সবুজাভ জলকে মায়াময় লাগছে ।

গ্রিন-টি-এ চুমুক দিয়ে বললাম ,

থানার রাতের গল্প বলো কৃষ্ণেন্দু ।

সে হাসলো । সুভদ্র , মার্জিত চেহেরা । বেলুড় বিদ্যামন্দিরের ছাত্র ছিল একসময় ।

বলল , স্যার ~ সময় আছে ?

আমি বললাম – খানিকটা ।

রাত ২ টো সেইসময় । হঠাৎ দেখলাম একটা ছেলে পুকুর-ঘাটে বসে কাচাকাচি করছে । পুলিশি চোখ স্যার , সন্দেহ হলো । ডাকলাম থানায় । কালো মেঘ সরে গিয়ে তখন চাঁদ উঠেছে । এতোক্ষণে টের পেলাম । বৃষ্টি , কালো মেঘ ম্যাজিকের মতো সরে গিয়ে চরাচরে বিস্তৃত চাঁদের আলো । এমনকি এই থানায়ও চাঁদ ।

চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বললাম – তারপর ।

ছেলেটা প্রথম বললো – এমনি ।

তারপর একটু চাপ দিতেই কোমরে গোঁজা রক্তমাখা ছুরিটা আমার টেবিলে রাখলো ।

পুলিশ হলেও স্যার রাত দুপুরে রক্তমাখা ছুরি দেখে শিউরে উঠলাম ।

বললাম ~ কি করেছিস !

বউকে খুন করেছি ।

কেন ?

সন্দেহ । এবার কান্নায় ভেঙে পড়ল ।

মনে মনে ভাবলাম , রাত দুপুরে গপ্পো ফাঁদছে না তো !

ওকে নিয়ে ওর বাড়ি গেলাম । বাবা নেই , বৃদ্ধা ‘মা’ রয়েছেন । তিনি দৃঢ়ভাবে বললেন – ভালো মেয়েটাকে সন্দেহ করে খুন করেছে আমার ছেলে ।

তারপর 

কোর্টে তুললাম । কয়েকদিন পর ছেলেটির ‘মা’ এসে আদালতে বিচারকের সামনে একই কথা বললো। ফাঁসি হয়নি স্যার , যাবজ্জীবন ।

মা কি-ভাবে বেঁচে রয়েছেন !

দশ বছর পর জেলে ভালোভাবে কাটিয়ে ফিরে আসবে সন্তান – সেই অপেক্ষায় দিন কাটছে । নিয়নের আলোকে হার মানিয়ে পুকুরের জলে প্রতিবিম্বিত ভালোভাবে হচ্ছে চাঁদ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ