নানীর ডেলিভারির পরে যে খবরটা ছড়িয়ে পড়ল তা হল বহুদিন পরে তার পুত্র সন্তান হয়েছে। এই খবর পাওয়া মাত্র নানা লাফিয়ে মৌলানা কে ডেকে আনল। বাচ্চাটি বড়ো ফুটফুটে , সুন্দর চেহারা,নাক কেমন হবে কিছু বলতে পারে না দায়মা। শুধু বলে ক্যা জানিরে তুর গুদাট মুনে হচ্ছে ন্মবা পারা হবে , লাক ট ক্যামন হবে বলতে লারছি ভাই , হেইলে তুর গুদাটকে কোলে লে।
দায়মা বাচ্চাটাকে স্নান করিয়ে গোলাপি চাদরে মুড়ে আমার নানার কোলে দেয় , নানা বাচ্চাটা কোলে নিয়ে দেখে তার মুখ, নাক চোখ, ঠোঁট কিছুই বঝা যায় না , তবুও মন বলে আমার মতন ই হবে।মাথায় খুব চুল । মৌলানা বারান্দায় এলে বাড়ির মেয়েরা কে কোথায় সরে যায় , মৌলানা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আযান দেয় , বাচ্চাটির কানের কাছে এসে বলে ,হায়ইয়ে আলাল ফালা --- বাচ্চাটি চোখ মুখ কিটমিট করে।
মৌলানা বাচ্চাটির একটি নাম দিলো আলআমিন ।
আমার নানা বার বার জিঙ্গাসা করল, মৌলানা সায়েব ছেলের নামের মানেট কি বটে?
মৌলানা দাড়ীতে হাত বুলিয়ে বললেন ,নামের মানে নিয়ে তোমার কুনু কাম নাই, এয়া হচ্ছে গা যিয়ে আমাদের রসুলেপাক সাল্লাল্লাওআলাইয়ে সাল্লামের একট নাম। বেশ তা-লে যায় আমি। মৌলানা চলে যাচ্ছিল এমন সময় আমার নানা একটা একশ টাকার নোট মৌলানার পকেটে ভরে দিয়ে বললে , গোস্তাফি মাপ কবেন মৌলানা সায়েব।
নানা শিক্ষিত মানুষ, তখনকার দিনে চাকরি পথে ঘাটে পড়ে থাকত। কতবার তাকে রেলের টিকিট চেক করবার জন্য ডেকে ছিল আমার নানার মা যেতে দেয় নি। যাবেই বা কেন? ঘরের চাষ বাস, জমি জমা অনেক ছিল , তাছাড়া নানা ব্যবসা করতে ভালোবাসত ও যেমন ভালো করতেও পারত ব্যবসাটা ।
আজ সে সব কথা একেবারে রূপ কথা হয়ে গেছে। নানার মা যেখানে যাবার চলে গেছে , নানার মেয়েরা ও সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
কতদিন পরে এই ছেলে ঘরে আসাতে সব ঝগড়া মিটেছে। না হলে বড় বিটি তো একেবারে ঘষেটি বেগোম হয়ে উঠছিল । নানা তাই সব লজ্জার মাথা খেয়ে এই বুড়ো বয়সে আবার বাপ হল। এর জন্য নানাকে কেউ কিছু বলেনি , যা বলার সেইনানীকে-ই বলছে মেয়েরা। হা গো ! ছি কর গা! এত গুলা জামায়ের এগুতে কি আবার পুয়াতি হতে হও ও য়???
কেউ কেউ বলল , হ্যাঁ হ্যাঁ সগুলি জানা আছে, ঘুমটার ভ্যেঁতরে খেমটা লাচ। জামায় রাও কুম লয় , শ্বাশুড়ির পাঁচুঠে নিয়ে দেখতে যেলছে যি টী !
সে সব কত নাটকের ভঙ্গিতে গ্রামের মেয়েরা বলছে । অবশ্য সামনে এসে ওই মেয়েরা নানীর ছেলের তারিফ করেছে খুব। সে যায় হোক সেই আদরের মামার নাম যে মৌলানা রাখল আল আমিন তার মানে সে মউলানা জানত হয়ত অথবা জানত না তাই আর নানাকে বলে নি। নানা অবশ্য তার আরাবি বাংলা অভিধান থেকে জেনে নিয়েছিল যে তার ছেলের নামের মানে বিশ্বাসী। আর এও জেনেছিল যে ওই মৌলানার বাংলা উচ্চারন বড়ো দোষে ভরা।
কি বলব মামার জন্মের বৃতান্ত!
কেবল জমি জমার মালিক হবার থাকলেও ইসলামিক আইনে মেয়েরা ভাগ পেতে পেতে মামার জন্য রইল আর মাত্র কুড়ি বিঘা। তাতে আর সেই জমিদারি সামলানো সম্ভব নয় । কারন জমি চাষ করার জল কোথায়?
আসলে যা বলতে চাইছি সেইটাই হচ্ছে না ,খালি অন্য দিকে কথা ঢলে যাছে। মামার নাম নিয়ে কিছু জানানোর ছিল আপনাদের , মামার নাম মৌলানা সাহেব, আল আমিন রাখলেও আসল নাম রেখেছিল মামার দাদি মানে নানার মা। সে বিখ্যাত নাম। ছেলের বেড়ে ওঠার গতি বিধি দেখে সেই নাম । বছর ঘুরে যায় তবু ও মামা দাঁড়াতে পারে না , ঘাড় লট লট করে মাঝে মাঝে। বাড়ে না , কুটুরেলাগা হয়েই আছে , এত খাওয়ায় এত মাখায় তবু এ ছেলে বাড়ে না যি-টি, কেঁটকুঁ হয়েই আছে। নানার মা তার পোতার নাম রাখল কেঁটকুঁ।
ব্যাস সেই থেকেই তিনি আমাদের বড় আদরের কেঁটকুঁ মামা। আমি আবশ্য আমার এই মামার থেকে অনেক বছরের ছোট আমি তাকে ভয় ও পায় মাঝা মাঝে। মামা আমাকে তার সাইকেলে চড়িয়ে নদী দেখিয়ে এনেছে অনেক বার । এই মামার নামের চারিদিকে এখন অনেক দুর্নাম আর অনেক সুনাম জড়িয়ে আছে।
নানা নানি মারা যাবার পর কেঁটকুঁ মামার উপরে অনেক রাজনৈতিক হামলা হয়েছে। জমি নিয়ে নিয়েছে অনেকেই, মামার অনেক বোন থাকলেও কেউই তার পাশে দাঁড়ায়নি। শেষে মামা রাজনিতিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। এই বার মামা দাওয়ায় বসে থাকে আর নিচের ঠোঁটটি উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে থাকে, মাঝে মাঝে ঘাড় নেড়ে শরীর দোলাতে থাকে , আর মনে মনে বলে, এই বার টেরটি পাবে লউতুন ধানে কত আগড়া। ফাঁদ তো পেতেই রেখেছি , সব খালা খালুদের এই বোনপোর কাছে আসতেই হবে। যাকে যা বলে মামা,তার কথা ভাবনা সব মিলে যায়।
রাজনিতির অদলবদল হয়। মামার হয় না , মামা তার ওই পার্টীতেই বিশ্বাসী যে পার্টি তার ক্ষতি করেছে। কারন মামা সেই খান থেকেই এই লড়ায়টা করতে শিখেছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে , হারা পার্টির কমরেড জেতা পার্টির গুণ্ডা সবাই কেঁটকুঁ মামার কাছে এসে বুদ্ধি নেয়।
মামার নানা দুঃসাধ্য সাধনের কথা বলার আগে মামার শরীর নিয়ে বলা দরকার। এই কথাটা বলা খুব দরকার যে তার দাদি যে ভেবে মামার নাম রেখেছিল তা কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপরওয়ালা পাল্টে দিয়েছে। মামা কিন্তু বেঁটে নয় মোটেও, প্রায় ছয় ফুট আট ইঞ্চি ,তবে বেশ রোগা। মামার মাথার চুল বাঁকা বাঁকা । আর একটি কথা বলছি তার চরিত্র নিয়ে,
এক-মামা, মামি ছাড়া কাউকে চেনে না ,
দুই – মামা – নিজের পার্টির কনো ক্ষতি করবে না ও মানুষ খুন করবে না ।
তিন- এই দুটির বাইরে যদি কোন কাজে মামা টাকা হাতে ধরে তাহলে সে কাজ করবেই গ্যারেণ্টী।
ব্যাস মানুষ শেষটির জন্য-ই মামার দাওয়ায় ভীড় জমায়। মামা কিন্তু কোথাও যায় না ,মামার কোন লোক বল ও নেই ,মামা কেবল দাওয়ায় বসে বসে মাঝে মাঝে ভ্রু নাচায় আর দাবার ঘুটি চালে । সত্যি মাইরি কি করে যে সে কাজ হাসিল করে কে জানে । যাদের কারো কারো কাজ হয়েছে অথচ মামাকে টাকা দেয়নি সম্পূর্ণ তারা মামার ভয়ে অন্য পথে গেলেও ঠিক মামার সঙ্গে কি করে যেন দেখা হয়ে যেত । মামা তার দাদির কাছে থেকে বাংলার নানা প্রবাদ ,বাকধারা শিখেছিলো আর কথায় কথায় ব্যবহার ও করত। মামার সঙ্গে দেখা হলেই বলত , কিহে বিহায় দেখা যে হয়েই গেল। বলি ভূতের ডরে চাপলাম গাছে আর ভূত বলে আমি পেলাম কাছে। কি করবে বলো , বাকি টাকাটা যে লাগবে ভাইয়া।
সপ্তাহ পেরুতে দিত না মামার পকেটে টাকা চলে আসত। পঞ্চায়েতে কেঁটকুঁ মামা গেলে প্রধান তড়াম করে লাফিয়ে উঠত, মামা হেসে বলত, কি যে লাফালাফি করো বাপু আমার ভালো লাগেনা। আমি কি তোমাদের ডেম নাকি(ডী-এম)? কইএকশ দিনের স্কিম কয়টা করেছো মোট? প্রধান দেখালে মামা হেসে বলত, তা হলে তুমি লিবে নাতো? হাজি হবে? বলি আশি হাজার চুঁহা গিল্লা/ বিল্লি এবার হজে চল্লা? বলিহারি রে বলিহারি। আমার টা কই?
প্রধান আবার স্কিম পাল্টে দিত। এমন ঘটনা বি ডি ও র সঙ্গে ও হয়ে ছিলো, সেবারে এক বিডিও এসেছিল খুব ঘুষ খোর। মামার তখন খুব সুবিধা, মামা বলতো , ওরে উজোনি বাগে পানি যেচ্ছে মাছ লাফাবে পলোয় নিয়ে তৈয়ার থাকিস। সে বারে এই এলাকায় হঠাৎ খুব শিলা বৃষ্টি , গাছের পাতা ঝরে গিয়েছিলো, তাল পাতা গুলো চিরে চিরে ঝুলছিল , চাষিদের মাঠে সমস্ত ফসল শেষ হয়ে গিয়েছিল। মুশকিল হল যখন দরকার তখন সরকারের ঘরে থেকে কিছু মেলে না মানুষের দুর্দিনে, ঠিক তাই হল। চেয়ে চেয়ে মানুষ যখন ক্লান্ত ,সব ভুলে গেলো ঠিক তখনি টাকাটা এলো , চাষিরা পেলো না, পেলো কে? যার হাতে এসেছে সে।
মামার কাছে সবার আগে খবর আসত। মামা সাইকেলটা নিয়ে টুক-টূক করে গিয়ে বিডিও বাবুর দেওয়ালে সাইকেলের হ্যান্ডেল্টা ঠেকিয়ে রেখে অফিসে ঢুকত। বিডিও বদলি হয়ে গেলেও নতুন বিডিওদের কাছে খবর থাকত কেঁটকুঁ মামার। সুতরাং সবাই কেন যে মামাকে নমোস্কার করতো মামা নিজেও জানত না। যায় হোক মামা বিডিওকে বলতো, তা সায়েবকে যে আমার গ্রামে পায়ের ধুলো দিতে হত তা যখন দিলেন না তখন আমি ই এলাম। ঘরের চারি দিকে মাটি অঢেল লেগেছে তা আপ নি কি মাটি একাই লাগিয়ে ডাঁটো হবেন ? না কি আমি ও কিছুটা ঘরে মাটী লাগাতে পারি সায়েব? মামা নিজেই হাসত আর বলত ,বাবার কালে নাইকো গাই/ চালুন নিয়ে দুয়ায়তে যায়।
ব্যাস বিডিও চটকরে বাইরে গিয়ে একটা খাম নিয়ে এসে বলতেন এটা আপনার গ্রামের জন্য। মামা খামটা নিয়ে বিডিওকে বলত , আসলে কি জানেন সায়েব গ্রামের চাষি ভাইদের বলি ,ওই যে ওই কথাটা মনরে কৃষি কাজ জানোনা/ আবাদ করলে ফলত সোনা।
মামা চলে আসত। বিডিও ভাবত এইবারে আর আরও অনেক কেঁটকুঁ হাজির হবে।
মামার সুনাম ও আছে চারিদিকে, এলাকার মানুষ মামাকে বিয়ের পাক্কা দেখায় নিয়ে যেত , সেখানেও মামা কি করে যে কামিয়ে নিত দুপক্ষের কাছে থেকে। যাদের পক্ষ থেকে যেত তাদের বলত ,যেতে তো বললি, এখন আমার কত কাজ ছিল , কম লুক্সান হবে। দেক বাপু তু ছেলের বিয়ে দিবি আর এই আইনের যামানা , পুন তো অনেক লিয়েছিস এখনু যদি কেউ পুলিসকে খুচিনে দেয় তো তুদের যা হবার হবে কিন্তু আমার সন্মান টর কথাকি একবাও র ভেবেছিস? কয় এক হাজারটাকা ফেল পুলিশকে দিয়ে আসি, ব্যাস কেঁটকুঁ বলেছে মানে দিতেই হবে, নাহলে পাঁচহাজার টাকাও যাবে জেলহাজত ও খাটতে হবে কারন সেই তার ব্যবস্থা করে দেবে।
এক বার এক মিলিটারির বাপ তার ছেলের বিয়ে দিয়ে নিয়ে গেছে মামদের পাশের গ্রামের মেয়েকে। আর ওই মেলেটারির বাবা প্রচুর পণ দেহেজ নিয়ে গেছে , এখন মুস্কিলে পড়েছে গ্রামের মানুষ । ওই গ্রামে বিয়েতে এত পণ ছিলো না , মামা দিল্লীতে ওই মেলেটারির বেটেলিয়ানের নাম্বার জেনে এমন চিঠি লিখল যে মিলিটারির বাপ চাচারা বাপ বাপ বলে সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দিয়ে গেলো।
মামার দিন কাল ভালোই চলে যাচ্ছে আর তার ভবিষ্যৎ একেবারে সোনাররোদে ভরা। মাঝে মাঝে চিন্তা হয় আমার মামা কোন ইউনিভারসিটি থেকে পড়েছে কে জানে! জিঙ্গাসা যে করিনি তা নয় ,মামার উত্তর, এ সব জেনে তোর কি লাভ ? এই কাজে পৃথিবীর মানুষ খুব কম পারদর্শী হয়, আর সেই বাপের রক্ত থাকতে হয় সে রক্ত ও খুব একটা দেখা যায় না এ সব খোদার দান।
মামার বিয়ের বৃত্তান্ত মাইয়ের কাছে শুনে ছিলাম , মা বলেছিল তোর মামি সঙ্গে তোর মামার প্রম হয়ে গেছিল। তোর মামি যখন তোর মামাকে বলল যে তার ভায়েরা কেঁটকুঁর সঙ্গে তার বিয়ে দেবে না , তখন তোর মামা তোর মামিকে বলল তুই বিয়ে করবি কি না বল , বাকি ট আমি দেখে লুব। তোর মামিকে বন্দী করে রেখেছে তার ভায়েরা , তার পর সাত ভাই এসে নদীর ও পাড়ে দাঁড়িয়ে বলল , “আয়রে কেঁটকুঁ কাকে বিয়ে বরবি আয়।’
ওদিকে তোর মামা সে মেয়েকে কি করেযে আর কাকে দিয়ে যে কুলুপ ভাঙিয়ে আনিয়েছে নদীর অন্য পাড়ে । বর্ষা কাল নদীতে এপার ওপার বান। তোর মামা সাঁতরে ওপারে উঠে তোর মামিকে নদীর বানে ছুঁড়ে দিয়ে বলে, “ যা উপারে সাঁতরে চলে যা বাকি ট দেকছি”। তোর মামি ও কম না সে সাঁতরে সোজা আমাদের বাড়ি। মামির সাতটা ভায় এতল্লাটে সকলেই ভয় পায় কিন্তু তাতে কিচ্ছু যায় আসেনি কেঁটকুঁর। ওই সাত ভায়ের মাঝে থেকে কেঁটকুঁ তোর মামিকে চিলের ছোঁ মারার মতো তুলে নিয়ে চলে এলো। ভায়েরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল, শুধু বলল ,”আমার বোন পাঁচটা ছেলের মা হয়ে গেলেও তুলে নিয়ে আসব।“ কেঁটকু বলে পাঠাল, “ তা লিয়েযাস তখন। তোর-ই ভাগ্নেরা যাবে মামার ঘরে তাতে কি আর ক্ষেতি?”
মামদের উত্তর পূর্ব দিকে যে পলসন্ডা গ্রামটী আছে তাতে হিন্দু মানুষের বসবাস। গ্রামটীর পশ্চিমে বিশাল এক দীঘি। আর উত্তরে দ্বারকা নদী বয়ে গেছে সোজা পূর্বদিকে। মাঝে মাঝে দু একটা পাগোল কোথা থেকে চলে আসে আবার কোথায় চলে যায় কেউ খবর রাখে না ,কিন্তু কেঁটকুঁ মামা সব খবর রাখে। এই পলসন্ডা গ্রামের মানুষ মাঝে মাঝে নানা ধরনের ভোজের আয়োজন করে আবার নানা ভজোকটো ঝামেলায় জড়িয়ে ও পড়ে , তখন এই কেঁটকুঁ মামা উদ্ধার করে।
একবার হয়েছে কি বছর পাঁচেক আগে হারাধন গুঁড় আর পাওয়াধন গুঁড় দুই ভাই পুকুরের মাছের ব্যবসা বাদ দিয়ে বিনা পয়সার মাছ ধরতে শুরু করে নদীতে নদীতে। ভালোই লাভ হয় , কোন পুঁজি লাগে না ,এমন বিনা পয়সার ব্যবসা আর একটি আছে তা ভিক্ষা করা। মামা অবশ্যই এ তল্লাটের ভিক্ষারিদের কাছে থেকে ও টাকা নেয় তবে সেটা সবসময় বিড়িতে ।মামা ওদের বলে একট বিড়ি দিবি তাতে আর কি আচে! ভিকের চাল কাঁড়া আর আঁকাঁড়ি। যা বলছিলাম সে দুইধনভায়েদের কথা। মামার কাছে খবর ছিল যে দু ভাই নদীতে মাছ ধরে ভালোই কামাচ্ছে। মামা মাঝে মাঝে অজয় নদী যেত ,কেন কি জানি মামা স্থানিয় ভূগোল স্থানিয় ইতিহাস খুব জানত আর জানার আগ্রহ ও ছিল খুব।
মামাকে স্থানিয় ভূগোল শেখানোর মাস্টাররা ছিলেন ওই গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো ফকিরেরা। মামা একবার আমাদের গল্প বলেছিলেন ,জানিস একটা মানুষ এই বোল পুরে থাকে , সে নাকি মাস্টারদার সঙ্গে বোমা বারূদ নিয়ে কাজ করেছিলো ,কিন্তু এখন লোকটা একটা অন্য কাজ করে , সেদিন ওইপাড়ারভোলার মটর বাইকে অজয় দেখতে গেইচিলাম ,কত লোক , সে বুড়ো হাঁড়ি হাঁড়ি মাছের ডিম মাছের বাচ্চা লদীতে ছেড়ে দিয়ে বলচে, জেলেরা ধরে খাবে। আচে বাপু কিচু মানুষ তা লয়লে লদীতে কি কেউ মাচ চাড়ে গো। মামা কয়েক বার বলে ছিলো বুড়লে আমুও ওই বুড়র মতন লদীতে মাচ চাড়ব
মামার কাছে খবর আছে নদীতে মাছ ধরার জন্য কেউ না কেউ মাছ ছাড়ে, সুতরাং একদিন গুড় ভাতৃদয় মাছ ধরে চলে যাচ্ছে কিন্তু পিছু ডাকল মামাশ্রী। ওরা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে , ও হো হো কেঁটকু ভাইয়া যে।
মামা হেসে বলল, ভাইয়া ভাইয়া করে তো আর বেশিদিন চলতে পারে না। তোমরা ভাবচ বিনি পুঞ্জির ব্যবসা? মুটেও তা লয়। লদীতে মাচ কেউখে না কেউখে চাড়তে হয়। বুজেচো দাদা? সামনের বচরে দ্বারকা লদীতে মিন চাড়তে হবে, টাকা জমা দাও দিকিনি আমার পকটে।
এই আদেশ পাওয়া মাত্র গুড় ভাতৃদয় মামার পকেটে কোরা দুশ টাকার দুটি নোট ভরে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায়। মামা বলে দেয় , দেকো যেন সামনের বারেভাঙা ভাঙি লোট যেন না হয়। মুরুব্বীরা বলে গেইচে ,গুঁড়কে গরু সয় না আর জুলাকে নামাঞ্জ সয় না । বুজে চল্যো বাপু জামানা খেরাপ।
যা বলছিলাম বছর পাঁচেক আগে দুই ভাইএর এক ভাই মানে হারাধন ঘোর বর্ষায় দ্বারকা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরে নি, কোথায় যে গেল কেউ জানে না। তার ভাই পাওয়াধন আর তার স্ত্রী কত ঘাটে ঘাটে যে খোঁজ করেছে হারাধনের তার ঠিক নেই। দাদা বুঝি চলেই গেলো আর বেঁচে নাই। বড়ো বৌদি ! তার কান্না থামায় কে। স্বামী বলে কথা , স্বামীর আহাল্লাদে আহাল্লাদিত মহিলা এখন স্বামী হারিয়ে একেবারে ভাঙা ডালের মতই লটকে গেছে। পাওয়াধন বউদিকে বলে , ওপাড়ার বামুনঠাকুরকে শুদিঁয়চি বরো বৈদি কি আর সেঁন্দুর, শাঁকা, ল পত্তে পাবে? বামুন বলে দিঁয়চে, এক বছর তো পরুক তার পর না হলে ছাদ্দো করে পিন্ডি দেএ , তর্পণ করে বেদোবার বেশ লিবে।
কি আর করা যায়! এক বছর অপেক্ষা করল ,কত জায়গা কত থান, থানার গাছে বাঁধা কাপড় ,রেলের থানায় টাঙানো রেলেকাঁটা যাওয়া ছবি দেখে এসেছে ,কোথাও পায় নি। তারাপিঠের আদ্যা মা লবিনের ছোট বউকে হর লক্ষ্মী বার সন্ধ্যায় ভর করে সে খবর পেয়ে হারাধনের বউ সেখানে ও গেছিল , এই মা বলে দিয়েছে , হারাধন কে সাপে কেটেছিল , তার পর হারাধন জলে ভেসে বেহুলার ঘাটে চলে গেছে, তার সঙ্গে দেখা হবে না আর এ জনমে।
হায়রে হায় সেকি তার কান্না হারাধনের হারিয়ে যাওয়া এক বছর আজ পূর্ণ হয়েছে, ঘরে বামন এসেছে। শ্রাদ্ধর মন্ত্র পাঠ হচ্ছে, খাবার দাবার বামনদের জন্য বাঁধাবাঁধি চলছে, পাওয়াধন মাথা নাড়াল, হারাধনের বউকে বিধবারা পুকুর ঘাটে নিয়ে গিয়ে সিঁথিতে সিঁদুর ঢাললো, হাতের লোহা খুলল শাঁখাভাঙল । এই সব দৃশ্য কেবল বিধবারাই ভোগ করতে পারে, তার পর সাদা থান পরা তারপর পিন্ডিদান করেছে ,এখন মহালয়া এসেছে তর্পণ করেছে পাওয়াধন। এখন হারাধনের বউ নিজেই কাঁধে ঘাট জালি নিয়ে মাছ ধরে বেড়ায়।
এখানে বলে রাখি হারাধনের তিনটি কন্যা সন্তান ছিল তারা অবশ্য পড়াশুনা করত , পাওয়াধন খুব সাবধানে বউদির সঙ্গে কথা বলত না হলে কি জানি কি হয়।
এখানে কেঁটকুঁ মামার কিছু করার নেই , তিনি তো আর বেহুলার ঘাট চেনেন না , তাছাড়া তারা তো কোন দিন কিছু বলেনি মামাকে। তবে মামা তাদের হিতাকাঙ্খি । শ্রাদ্ধর দিনে পাওয়াধন ,তার বউদিকে শাড়ি কাপড় দিয়েও যেমন এসেছে তেমনি ভোজ খেয়ে এসেছে। তার পর হারাধন কে সকলেই ভুলেগেলো ,নিজের নিজের কাজে মানুষ ব্যস্ত,শুধু মনে রাখে হারাধনের মেয়েরা আর তার বৌ।
এদিকে মামাদের এলাকাতে চোরেদের বাড়বাড়ন্ত ও খুব হয়েছে, রাত এলেই মানুষ এক সঙ্গে থাকার চেষ্টা করে , গরিবদের ঘরে কি ই বা আছে , চোরেরা কি বজ্জাত গো গরিবদের চালাতে বাঁধা ছাগোল,ভেঁড়া, গরু সব নিয়ে চলে যাছে। সেদিন মামদের -ই চালা থেকে দুধের গায়কে চোরেরা খুলে নিয়ে চলে গেছে। মামি খুব ঝগড়া করে চলেছে মামার সঙ্গে। লোকে তুমাকে কেনে যি বুব্ধিমান বলে কে জানে, তুমার বুব্ধি না ছাই আছে। হায় হায় গো আমার বারো মেশে দুধের কপিলা গায় গো । মামি কপাল চাপড়ায়। মামা থাকতে না পেরে বলল, তু যে কপাল চাপড়াচ্ছিস? মামা আবার বাংলা প্রবাদ বলে ।“চোর জানে কি বাঁন্ধোর গাই?” যে শালা লিয়ে গেইচে সে শালা ঠিক দিঁই যাবে। তু খালি বসে বসে তামাসা দেখে যাস। আমার বুদ্ধি নাই? ই তল্লাটে সুবাই জানে। দেকিস আবার আমার পায়ে ধরিস না।
মামা দাওয়াতে বসে থাকে আর ভাবে কেই বা তার গরু চুরি করবে ? অবাস্তব কথা , উঁহু হতেই পারে না, ই বুকা মেয়েছেলের জাতট কিচু একট ভুল করেচে।
মামাদের বাড়ি রাস্তার ধারে , সকাল বেলা মামার দাওয়া ঘেঁসে একটা ছাগল দাঁড়িয়ে আছে সে টাকে সে ডাকাতে যাবে এমন সময় কয়টা ভিক্ষারি চলে যাচ্ছিল , কেঁটকুঁ মামা ডাক দেয়,
আজ কে কুন বাগে যাবে গো ?
ওরা দাঁড়িয়ে যায় ,
কেনে বাপ ? আজ কি কুনু গাঁয়ের কেউরির মরা মা - বাপের নামে ভাত দিবে?
কেউরির চাল্লিসা চাহারুম আছে বাপ ?
কেউরির ছেলের আকিকা দিছে বাপ ?
মামা বলে, না না তা লয়খো । বলি চোরেরা আমার দুধের গায় খুলে লিয়ে যেলছে , তাই বলছিলাম তুমরা তো যেচো ,যদি খানিক খড়ো কত্তে পার ।
এক জন ফকির প্রশ্ন করল
কি রঙের গাই বাপ ? বাগাছাগা ? ম্যানা শিঙে ? লালি বাছুর আছে ?
তুমিতো ঠিকই বলচো ,কুতা দেকেচো বোলো দেকিনি ?
ফকির বেফাঁস বলে দিল – কেনে ধল্লাতে তুমার মাইথর শালার ঢেঁকি শালে , আমার তো ঘর লাই বাপ , ওই ঢেঁকি সালে শুয়েছিলাম আজ রেতে, তো বিয়োন বেলেতে দেকছি বান্ধা রইছে।
কেটকু মামা তার পায়ে বেশ করে ধুলো মাখায় এই বারে দেকছি শালার বুনকে। আমার বুদ্ধি নাই!
ফকিরটা সুগোগ বুঝে কেটকুকে বলে ফেলল, হা বাপ তুমিতো মেলা লুকের মেলা উদ্যোগর কচচ্ছো , তা বাপ আমাকে একট পুঞ্চায়েত থেকে ঘর দাও কেনে! পিদ্ধোন কে বললাম । ত বলছে ,তু ফকির তুর দ্যাশে দ্যাশে ঘর ,তুর কি আবাব আছে নাকি?
মামা হেসে বলে ঠিকই বলেছে তুমাকে ,আচ্চাগো ভোটের সুময় আসুক তো দেকা যাবে।
মামা পুলিশকে কয়েক বার বলে এসেছে , দেকুন বড়বাবু আপনার ছেলেদের খুব বাড়বাড়ন্ত হলচে। তা একটুকু আমাদের গাঁয়ের বাগে লজর দ্যেন? আমরা পাটি পলিটিক্স কচ্চি । আমরা আপনাদের দেকচি,তো আপ্নারাও তো আমার দিকে লজর দেবেন নাকি বলচেন বলুন?
নাক মোটা বড়বাবু সারা রাত কোথায় কোথায় ঘুরে কয়েকটা চোর ধরে এনেছে। তারা মোটেও চোর না, মাতাল মদ খেয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলো , এদেরমধ্যে দুটি সাঁওতাল,এক টি হিন্দু আর গোটা কয়েক মুসলমান, কে বলবে এরা আলাদা জাত, সংবিধান যদি মানে গনতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা করেছে তো এরাই। একেবারে এক চেহেরার ভারতীয়।
মামা পুলিশকে বলেছে তার গরু সে পেয়েছে কিন্তু ছাগল পায়নি গরিবেরা।
মামা নিজের গ্রামে নিজের পাড়াতে বসে আছে। সন্ধ্যা লাগবে লাগবে। কয়েকটি মসললি মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে চলে যায়, যেতে যেতে বলে হা গো আলামিন তুমার নামট কত সুন্দর তা তুমি মহজিদে নামাজ পড়তে যাবে না?
কেঁটকুঁ মামা সকলকেই সন্মান দেয় , বলে কি যে বল চাচা , আমার নামাঞ্জ ? আমিতো রাত দিন পড়চি বাপ। খুদার পাচক্ত নামাঞ্জ আমি পড়ে দিচি। আমার কাজা নাই বাপ, তুমাদেরট তুমরা ভাবো।
চারি দিকে ইলেক্সেনের হুলহুলি । মামার এখন আর পোরপোকারের সময় নেই ,শীরে সংক্রান্তি । মামা কোন দিন ই কোন পদে যাবে না তবুও মামা এই শ্লোগানটা দারুন ভালো বাসে। এই ঝান্ডাই তাকে শিখিয়েছিল বাঁচার লড়ায় কি করে করতে হয়। এইবারেও জিতে গেছে তাদের পাটি। মামা ভোট কয়টা দিন একটু ঝটকে যায়। খুব খাটাখাটনি। মামা মনে মনে বলে, গরিবদের কি কেউ বিশ্বাস করে? শালারা ভাতের ভুকো ! এক বস্তা চাল দিয়ে বলে দিতে হয় ,না জিতলে টেরটি পাবি!
এখন আর ভয় নেই পাঁচ বছর ।এই সময় ! তার বৌ বাচ্চাদের নিয়ে একটু রাজস্থান যাবে, জয়পুর যাবে খাজা বাবার মাঝার যাবে জিয়ারাতে। সেই সুযোগে একটু উঁট দেখে আসবে, মেয়েটী বড়ো ভালোবাসে উঁট। সুতরাং কেঁটকুঁ মামা এখন মাঝার জিয়ারাতের পথে । এক মাস বাড়ির বাইরে।
গল্প -২
------------
এদিকে পলসন্ডা গ্রামে এক আজব খবর রটেছে। নদীর মাছেরা নাকি উল্টো দিকে যাছে। নদীতে নাকি নতুন নতুন মাছ আসছে। কিছু মানুষ খুব খুশিতে নদীতে জ্বাল ফেলেছে। ওদিকে পাওয়াধন গুঁড় নদীর জল কে জলের মতই চেনে। নদীর বালি ,পাথর , নুড়িদের সঙ্গে ও তার কথা হয়।সে একটা কথা নদীর কাছে জানতে চায় , এই তো শুকনো নদী শুধু বর্ষা কালে তোর বাহাদুরি। আমার বড় দাদাকে তুই কোথায় দিলি বল? নদীর জল কেবল নিচের দিকেই গড়ে যায়।
হারাধনের বউ এর আর কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে থাকতে পায় না , নিয়ম নেই, সাদা থানকাপড় মাছ ধরতে ধরতে লালচে হয়ে গেছে নদীর ঘোলা জলে। সে তো আর জ্বাল খেয়াতে পারে না শুধু নদীর ধারে ধারে ঘাট জ্বাল টেনে যা পায়। নদীতে নামার সময় নদীকে প্রনাম করে নামে ,তার রোজগার খুব কমে গেছে , মেয়েরা পড়ছে । দেওয়র দেখে মেয়েদের , দেয়রানি ও ভালো ,কিন্তু তবুও কিছু কাজ করা দরকার , দেউরের সঙ্গে মাছ ধরতে যায় না । মানুষের মুখে ঢাকন নেই কে কখন কি বলে দেয়। তবুও একবার দেওরের সঙ্গে মাছ ধরতে এসে পা ফস্কে গিয়েছিলো , দেওর আর সে স্বামীর কথা বলতে বলতে কি করে যে শুধু একবার লটকে ছিলো তার পর থেকে ওরা দুজনেই খুব সাবধান।
হারাধনের বিধবা বৌ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আজ তার বুক ভেঙে কান্না পাচ্ছে। আজ সেই দিন যে দিনে তার স্বামী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি , দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কেটে গেলো। মাছ ধরা বাদ দিয়ে বাঁশ তলাতে বসে বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে। তার মনে পড়েছে মানুষকে দুঃখের কথা জানাতে নাই ,তাই কান্না থামিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা দেয়।
কিছুটা যাবার পর ই দেখতে পায় তার বড়ো মেয়ে দৌড়ে আসছে, কথা বলতে পারে না , হাঁপাচ্ছে। মা - মা গো একট তার এয়চে, পিওন দিঁয়য্যালো, ইয়াতে লিকাআচে বাবা মরে নি !!!!!!। বলে হাও মাও করে কাঁদতে থাকে , হারাধনের বৌ কিছু বুঝতে পারে না , হতভাগ্যি বেধবা মায়ের সংগে মস্কোরা কচ্চিস? কি বলচিস মুকপুরি ?
চোখের জল মুছে বলে, মা মা গো বাবা মরে নি , এই দেখ তারে লেকা আচে। দুজনেই বাড়ির দিকে দৌড়ে এলো । ওদিকে পাওয়াধন এই খবর শুনে বাড়ির দিকে দৌড় লাগিয়েছে, সবাই জেনে গেছে যে হারাধন গুঁড় নাকি মরে নি বেঁচে আছে।পলস্নডা গ্রামে কত যে গুজব রটে , বাড়ির সকলে বিশ্বাস করতে পারছে না। পাওয়াধন বলল তা কিকরে হয়, পাঁচ বছর একটা মানুষের খবর নাই ,তার ছাদ্দ ত্যোরপ্যোন সবই ক্যরে দিঁয়চি আবার সে বেঁচে থাকে নাকি !!! ক্ষ্যিপার গান বটে লয় হা?
হারাধনের বৌ মাঝে মাঝে কাঁপতে থাকে ,কি বলচো গো ঠাক্যুপ্পো , তুম্যার দাদা বেঁচে আচে থালি , আমি বেদবার ভেসে ঘুচ্চি গো ,ওগো আমার স্বামী গো। কান্না ধরছে ক্ষণে ক্ষণে , তার কান্নাতে পাওয়াধন গ্রামের শিক্ষিত মানুষের কাছে গিয়ে টেলিগ্রামটার মানে জেনে এলো, এ কথা সত্যি যে হারাধন বেঁচে আছে এবং সে দেশের বাইরে নিউজিল্যান্ডে আছে । তাকে বন্দী করে রেখেছে সে দেশে। ফোন নাম্বার ও দিয়েছে ।
ব্যাস ঘরে আর ঘর বাসনা নেই। কেবল ছুটে বেড়ায়, পরের দিন শহরে গিয়ে আই এস ডী কল করে কথা বলেছে পাওয়াধন, কিন্তু হারাধনের বৌ কান পেতে শুনেছে আর থথ থর করে কেঁপেছে, মরা মানুষের গলার আওয়াজ! ঠিক সেই তার স্বামীর কন্ঠ!
আর সন্দেহ নেই এইবার তাকে আনার পালা । এই কাজ খুব কঠিন! গ্রামের ভালো ভদ্দোর লোক নিয়ে এম এল এর কাছে গেলে তিনি বললেন, বা রে কি কথা বলছ হে ? নিয়জিল্যান্ড চলে গেছে ? তাও আবার পাঁচ বছর! যত সব বাজে কথা বলার লোক পাওনি , আমাকে এসেছো খেপার গান শোনাতে ,হে হে হে হে। যাও ও সব বাজে কথা ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজ করো গে, এম এল এ এইবার অন্যকে ডাক দেয় , কয় পরের জন কে পাঠাও।
হতাস হয়ে ফিরে এলো, একজন বলল প্রথমে থানায় যাও বল ,মামালাটা থানার-ই । যা করার পুলিস করবে। কেউ বলল হা গো নিউজিল্যান্ড এর নাম আমরা কিরকেট খেলায় শুনেছি, আর এই মরা দ্বারকা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে সে নিয়জিল্যান্ড যাবে কি করে বলতো? তোমাদের ভুল হচ্ছে! কেউ বলল উকিলের কাছে গিয়ে বোঝ।
উকিলের কাছে গেলো , উকিল সব কথা শুনে বলল , কত টাকা এনেছেন? এখন পাঁচশো টাকা দেন , পাঁচদিন পরে কোর্ট খুলবে তখন একটা কিছু লিখে দেব।
হারাধনের বৌ কেঁদে উকিলের পায়ে পড়ল, বাবা আমরা গরিব মানুষ, আজ পাঁচ বছর স্বামী ঘরে নাই টাকা কোথায় পাব , এত দূরের রাস্তা এয়েচি তাই চাট্টী মুড়ি তেনাতে বেঁন্দে এনেচি বাবা।
উকিল বললেন , ঠিক আচে আজ বাড়ি যান আর আসবেন না , এলে টাকা আনবেন।
পাওয়াধন আর তার বৌদি পুলিসের কাছে গেলে থানার বড়ো বাবুর তো হাসি থামে না এই গল্প শুনে , হাসি থামিয়ে ধমক দিয়ে বলল ,এই শোন পাগোল দেখেছি? যা ওই হাজত ঘরটাতে দেখে আয়। মেরে ভরে দেব, ক্ষেপা ছাড়িয়ে দেব। নিউজিল্যান্ড আমার বাবার বাবার চোদ্দো পুরুষ দেখেনি , আর আমি যাব নিউজিল্যান্ড হারাধনকে আনতে। আবার হাসত থাকে ,তার হাসি শুনে হাজতের পাগোল দুটিও হাসতে থাকে । ও সি বলল ,ওই দেখ ক্ষ্যাপারাও তোর কথা বুঝতে পারছে ।
পাওয়াধন আর তার বৌদি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর বড়ো বাবুর অপমান মাখছে। মুখে কথা নেই । শেষ মেশ বাড়ী ফিরে এলো , দুজনেই বড়ো ক্লান্ত । দেওরানি ভাত দিয়ে বলল, আর কত ঘুরবে ,আজ কত্তদিন হতে ঘরে কাজ কামাই হচে গো , মাটে ভাদুরে কলাই গুলা মাটেই মিটিনে য্যাল। আমি বলি কি তুমি তো লিজের কানে শুনেচ ভাসুরের কথা তাহলে আর বেধবা সেজে থেক্যো না । ভগমান একদিন না একদিন মুক তুলে চাবে।
পাওয়াধন ভাত খেতে খেতে বলে , দাদকে আনতেই হবে। কিচু একটা উপায় বার কর । আর ঊটো ঠিক হবে না , দাদা না আসা পযযন্ত বৈদিকে বেধবাই থাকতে হবে, না লে লুক হাসাহাসি হবে।
রাত অনেক হারাধনের বৌ তার দড়ির খাটীয়াতে শুয়ে আছে। মেয়েরা পড়ছে, বড়ো মেয়েতা সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে। বাকি দুটো ছোট। মাকে চুপচাপ থাকতে দেখে বড় মেয়েটি বলল, মা আমি কাল সকালে থানা যাব ?
হারাধনের বৌ ধমক দিয়ে বলল - না । থানাতে বাঘ আর সিঙ্গো আচে ছিঁড়ে খাবে।
মেয়েরা বোঝে না , হেসে বলে না মা পুলিশ আচে।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে । কোন স্বপ্ন দেখে না । সকাল হয়, সবাই কাজে চলে যায়। হারাধনের বৌ কাজে যায় না , শুধু বসে বসে ভাবে ,আর মেয়েটাকে বলে হারে খুকি তু যেতে পারবি?
মেয়েটি বলে ,কোতায় মা ?
কেনে অইযি তুর বাবা যে দ্যাশে আচে?
উরে বাবা রে সি-কি কাচে গো ,এ আমাদের দ্যাশ পেরিনে কোতায় তার ঠিকঠিকানা নাই।
ছোট মেয়েটা বলে আমি পারব বাবাকে নিয়ে আস তে।
পরেরদিন সকালে পাঠান পাড়ার মুসলমানদের কয়টা মেয়ে এসেছে দেখা করতে। ওদের দেখে হারাধনের বৌ কম্বল পেড়ে দিয়ে বসতে বলল,
ওরা বলে, হা গো তাহলে তুমার স্বামীকে চালুনে পাথরে নিয়ে যিয়ে সমুন্দরে ফেলে দিঁয়চিলো। তা না হলে কি আর কিরকেট খেলার দ্যাশে চলে যেতে পারে?
কেউ গালে হাত দিয়ে বলে , অ্যাঁ কি করে গেলো গো? খুদার সান দেকো তবু তো বাঁচিন রেখেচে। তা হা বুন বেদবা সেজে কেনে থাকবে? স্বামীর খবর পেলে তার সাঁতে কতাও হলছে তা লে আবার কেনে উয়া সেজে থাকবে? এই লাও দুগাছা কাঁচের চুড়ি পরো।
হারাধনের বৌ ছল ছল চোখে তাকিয়ে দেখে। চোখ মোছে। কি করব বোনটি ,ভালের ল্যাখ্যন তো আর খনডাবে না। খড়ো প্যল্যেম যতি বা তো সাত সুমুদুরুতের লদীর পারে। লাচার বোনটি আমার।কি করব বল?
ওদের মধ্য একজন বলল, হাগো তুমার মেয়েদের কাকার সঙ্গে যি আমার চাচাইতো ভাসুরের খুব সুখ। তো তাকে যিয়ে একবার বল কেনে ।
সঙ্গে সঙ্গে সব মেয়েরাই বলে উঠল ,হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস! হা গো যাও কেনে উয়ার কাচে? উ-যি খুব ভালো গো । যতই বা বলে করে দুব তো করবেই।
কথা বলতে বলতেই পাওয়াধন ঘরে ঢুকছে , মুখে হাসি কি গো দিদিভাইরা আমাদের ঘরে পা দিয়চো , তা খুব ভালো।
হারাধনের বৌ বলল , হাগো ঠাকুপ্পো আমাদের ঘরের লুক থাকতে আমরা দোড়ে বিড়ালাম। একবার চোলো কেনে কেঁটকুঁ ভায়ের কাচে।
পাওয়াধন বলে সেকি আমি খড়ো করী নি? সি তো হজ কত্তেতে যেলছে রে মরুভুমিতে।
মেয়েরা বলল ওগো না গো ভাসুর আমার কালকে রেতে চলে আলছে, দেখ গা , ঘরেই আছে । ঘুমুচ্চে।
মেয়েরা চলে গেলো নিজের নিজের ঘরে । পাওয়াধন বসে বসে ভাবছে কি করবে ? যাবে ? না কি যাবে না?
হারাধনের স্ত্রী তার দেওয়রকে খোঁচা মারে , চলো ঠাকুপ্পো চলো কেঁটকুঁকে বলে দেকি গো । মানুষটর আমার পথের পানে চেয়ে চেয়ে রাত দিন যেচ্চে। আর আমি হত ভাগ্যিনি কিচুই কত্তে পাচ্চিনা ।কিছু ক্ষণ চুপ থেকে হটাৎ রেগে ওঠে হারাধনের উপরে, হ্যাঁ মানুষটর কি দয়া ময়া কিচ্চু নাই । গেলি গেলি কাচে পিটে যা তা-লয়খো একে বারে কিরকেট খেলার দ্যাশে! হায় ভগোমান আমার লল্লাটের ল্যাকোন খন্ডাবে ক্যা?
পাওয়াধন রেগে বলে ,ধ্যুত্তেরি খালি নাকে কাঁদুনি। চূপ কর দেকিনি , কেঁটকুঁর কাছে যাবি তো ? টাকা আছে তো?
হ্যাঁ আছে ,আমার বে-তে দিঁয়চিল এক গাচা হার এইট দিঁয়দুব।
চল থা-লে। উ যাকুন এসে গেইচে ,কিচু ইক ট কবেই।
কেঁটকুঁ মামা সাইকেল নিয়ে বেরুচ্ছে ,কোথায় যাবে কে জানে। শধু মামিকে বলে গেল কেউ এলে বসতে বলিস দাওয়াতে , আমি যাব আর আসবো।
মামা সাইকেলে এক লাফে চাপে তার পর প্যাডেল টা পায়ের কাছে এলে ধীরে ধীরে চালাতে থাকে । এক প্যাডেল মারতে মারতে তার ভাব না অনেক গভীরে যায় ।এক মাসের বেশি বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকা, হাত খালি হয়ে গেইচে, প্রধান একশ দিনের কাজের মাস্টার রোল বিডিওকে জমা দিইয়চে। মানে টাকা পেঁয়চে। যায় দেকি । অঞ্চল অফিসে ঢোকা মাত্র প্রধান কেঁটকুঁকে দেকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে কি সব বলল ।তার পর তার পকেটে পাঁচ হাজার টাকা ভরে দিলে, মামা বলল, তা কেনে হবে ? দুকোটী টাকার কাজ করেচিস , কেউখে একটি নুক নুংতে দিস নি । আমার পচিশ হাজার লাগবে। বলে দিলাম। মানে মানে পেইঠে দিস।
কেঁটকুঁ মামা আবার তার সাইকেলটাতে চড়ে বাড়ী ফিরে এসে দেখে পাওয়াধন আর হারাধন এর বৌ মন মরা হয়ে বসে আছে। কেঁটকুঁকে দেখা মাত্র হাও-মাও করে কেঁদে উঠল।
কেঁটকুঁর কাছে এই খবর টা একেবারেই ছিল না । আরে তুদের কি হইছে কি ? বলবি তো?
ওরা সব কথা বলল , কেঁটকুঁ মামা শুনে বলে, আলহামদোলিল্লা ,উপুরওয়ালা আচেরে আচে। যাক থালে হারা বেঁচে আচে, তা উ শালা উ দ্যাশ গ্যালো কি করে! এ কথা তো ভাব বার আচে! এই দ্বারকার ঘাট । আর কুথা নিউজিল্যান্ড! সে যায় হোক উ সব নিয়ে ভাবিস না , এনে দুব লে? চুপ চুপ আর কাঁদিস না।
পাওয়াধন অবাক হয়ে তাকায় কেঁটকুঁ মামার মুখের দিকে । কি বলছিস ? যেন এই ধল্লাতে আচে ,জি যাবি আর সাইকেলে করে চাপিন লিয়ে আসবি! পুলিশ , মুন্ত্রী ,উকিল সুবাই বলেচে, উয়াখে আর চ্যাস না , হাত ধুয়ে দিগা। উ-কি পুদ্ধান মুন্ত্রি বটে যি দ্যাশের দামি মানুষ উয়াকে লিয়ে আনতে হবে?
মামা ডানহাতটা বা হাতের উপরে চাপড়িয়ে বলে, আলবৎ দামি মানুষ! তুদের কাচেতো দামি বটে। যদি না আনতে পারি তো কান কেটে ফেলেদুব বে! কয় টাকা এনেচিস ?
হারাধনের বৌ হার বিক্রি করা টাকা হাতে দিয়ে বলে , এই লাউ দাদা ঝা ছিলো সব দিল্যাম আর নাই ।আবার কাঁদতে থাকল।
কেঁটকুঁ গুনে দেখে সাত হাজার টাকা । সেখান থেকে দুই হাজার হারাধনের বউকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে, পাঁচ হাজারেই হবে। চল একুনি থানা চল।
কেঁটকুঁ মামা ,পাওয়াধন আর তার বৌদি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেলো থানার দিকে । এক ঘন্টা সাইকেল চালালে পৌঁছে যায় থানাতে । বড়োবাবু আছেন , রাস্তা অবরোধ ছিল , সেই সব মিটমাট করতে করতে দেরি তো হয়েছেই আজ কিচ্ছু উপার্জন ও হয় নি।
কেঁটকুঁ ওদের থানার বাইরে রেখে একাই ভিতরে গেলো ,বড়োবাবু কেঁটকুঁ মামাকে কে দেখে খুশি ই হয় বরাবর। কারন এই একটি ভদ্রো লোক যা বলেন তাই করেন , আমার জীবনে এই একটি লোক সাচ্চা দেখলাম। বড়ো বাবু থানার অন্যদের শোনাতে থাকেন। মামা সাইকেল্টা থানার পুরানো আমগাছের গদিতে ঠেস দিয়ে বড়োবাবুকে কপালে হাত দিয়ে সালাম জানালে বড়ো বাবু আসুন বলে ভিতরে নিয়ে গেলেন।
মামা বড়ো বাবুকে হারাধনের সব কথা বললে , বড়ো বাবু বললেন, না না না না ,এই কাজটা আমি করতে পারবো না কেঁটকুঁ সাহেব, পাগোল নাকি আমার পক্ষে সম্ভব না কিছুতেই সম্ভব না , আরে মশায় আমি সব জানি উনারা এসেছিলেন আমার কাছে, ব্যাপারটা যদি দেশের ভিতরে থাকত আমি এনে দিতাম, আমি আপনাকে কথা দিয়ে বলতে পারি এনে দিতাম , কিন্তু আপনি যা বলছেন ও আমি পারবো না ।
কেঁটকুঁ মামা এক ধমক দিয়ে বলল ,আপনা কে যা বলছি তাই করুন ওকে আপনাকে আনতে হবে না , এই নিন তিন হাজার টাকা , ব্যাস আর না । বড়ো বাবু মুখ কাচু মাচু করে বললেন, ঠিক আছে গরিব বলেই করছি বলুন বয়ান বলে যান।
কেঁটকুঁ বলে গেল আর বড়োবাবু লিখলেন ,শেষে বড়ো বাবু পড়ে শুনানলেন তার মানে ব্যাপারটা দাঁড়াল এই, যে বড়ো বউদিকে যৌন হেনস্থা করত ছোট ভাই পাওয়াধন , এই নিয়ে বচসা বাঁধে ,তার পর একদিন বড়োভাই এসে ছোট ভাইকে শাবল দিয়ে মাথায় বাড়ী মারে ,তাতে ছোটভাই পাওয়াধন মারা যায়। এখন সে খুন করে নিয়জিল্যান্ডে পালিয়ে গেছে, এই তার ঠিকানা ।
মামা হেসে বলে ঠিক লেখা হয়েছে, আপনারা হচ্ছেন মাস্টার মানুষ, এ কথা কি শেকাতে হয়। এই বারে আপনি আমার নাম দিয়েদিন সাক্ষী আর আপনার যাকে ইচ্ছা সাক্ষী রাখতে পারেন । মামলাটা এই সপ্তাহেই তুলে দেন কোর্টে। তাহলে মাসের শেষে ও বেটাকে হাজির করা যাবে।
বড়োবাবু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন কেঁটকুঁ মামার মুখের দিকে , মশায় তার পরের ব্যাপারটা ভেবে দেখেছেন ? ও বেটার ফাঁসি হয়ে যাবে!
মামা হেসে বলে , সে পরে দেখে যাবে । আগে দেশেতো আসুষে। সাক্ষী তো আমি আর পাওয়াধনের বৌ !
বড়োবাবু মামলা দায়ের করলেন, এতো নিখুঁত ভাবে সি ডি লেখা হয়েছে যে বিচারক কে কিছু ভাবতেই হয় না। মামলা সপ্তাতাহে সপ্তাহে ওঠে। কে বলবে যে সেই ঢিমে আদালত! একদিকে বড়ো জা আর অন্য দিকে ছোট জা উকিলের কথা মতো কোর্টে অভিনয় করে কাঁদে। সমন চলে যায় এম্বাসি থেকে এম্বাসি। ভারতের এম্বাসি নিউজিল্যান্ডের সেই ঠিকানা থেকে হারাধনকে বন্দী করল । তার পর আকাশ পথে হারাধন এসে একেবারে জেলার আদালতে হাজির ।
সরকার পক্ষের উকিল খুব জাঁদরেল শাস্তি দিয়ে ছাড়বে তাই কেঁটকুঁকে খুব পাকড়াও করে ধরেছে, কেঁটকুঁ এখন কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে চোখের জল মোছে পাওয়াধনের জন্য।
হাকিম বললেন, আসামিকে দেখুন আর চিনে বলুন ।
কেঁটকুঁ চোখের জল মুছে ভালো করে দেখে হারাধনকে --, কেঁটকুঁ মাথা নাড়ীয়ে বলে , হুজুর মাপ কবেন, এই মানুষটি খুন করেনি হুজুর ।
হারাধনের সে কি খুশি , কি গান গাবে ? কি কথা বলবে ? বাংলা বাংলা বাংলা করে চিৎকার করে , হারাধনের উকিল বলে হ্যাঁ স্যার বাংলা মদ খেয়েছিলো আমার মক্কেল , আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে হুজুর এ নির্দোষ।
0 মন্তব্যসমূহ