
সুন্দর নির্জনতা পথঘাটে । কেমন আবেশ জড়ানো ভালোলাগাও ছিল তার গাছপালাতে, পাখিদের ডাকে। আষ্টেপৃষ্টে কতরকম ফলের গন্ধ জড়িয়ে থাকত নাকে । কত রকমের বিচিত্র পাখির ডাক লেপটে থাকত দুকানে । মনে হত শহরের কোলাহল ছেড়ে দুদন্ড শান্তির আশ্রমে এসেছি । জনস্রোত নেই । ক্লান্তি নেই । হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতাম ফলন্ত আমগাছ । নিজের আলতো হাতে পেয়ারা তুলে নিতাম কত কত । বসন্তের বিদায়ে লেবুফুলের গন্ধে ম-ম করত আমার বেডরুম । দোলনচাঁপা, কুর্চি, কদম, গুলঞ্চ ভেসে থাকত আমাদের ড্রইংরুমের স্ফটিকপাত্রে ।
প্রকৃতির ঋতু বৈচিত্র্যের আস্বাদ বুঝি পেয়েছিল আমাদের যৌবন । বুনোফুলের যৌবনগন্ধ নিতে নিতে সকাল শুরু হত টগর বনে । তারপর পৃথার তুলসীতলায় জল ঢেলে প্রাতঃভ্রমণে । কত রকমের রাংচিতের বেড়া পেরিয়ে আমরা পথ হাঁটতাম ..খেয়ালী পথ ধরে হেঁটে যেতাম যেদিকে দুচোখ যায় । পাখী শিস্ দিত সেই পথে । চেনা চেনা রোদ্দুরকে অচেনা মনে হত যেন । ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাখতাম শ্রাবণে । শিশিরভেজা পথ হাঁটতাম খালি পায়ে ।
পলাশ কুড়োতে যেতাম বসন্তের বিকেলে । আমার বৌ পৃথা তো পলাশ ছুঁয়ে আহ্লাদে আটখানা ! সবুজটিয়ার সাথে কমলারঙের পলাশ আর বাদামী ভেলভেটের বোঁটায় টিয়ার লাল টুকটুকে ঠোঁট দেখে মনে হত পাগল হয়ে যাব ! এখানে না এলে বুঝি জীবনের অনেক কিছু অদেখা থেকে যেত । সূর্যমুখির বনে সবুজ টিয়ার ঝাঁক বন্দী হত ডিজিটাল এক ক্লিকে ।
আমাদের গাড়িঘরের পাশে ছিল মস্ত উইঢিপি । আর তার নীচে ছিল বিশাল এক ঢ্যামনা সরীসৃপের সংসার । বৃষ্টির জল ওর গর্তে ঢুকে গেলে সেই দাঁড়াশ সরীসৃপ বেরিয়ে আসত আর বাগানের টগর ফুলগাছের বেড়ার পাশ দিয়ে খেলা করে বেড়াত নিজের মনে । কখনো মুখে ব্যাঙ পুরে চুপচাপ গোল্ডেন হেজের মধ্যে বহুরূপী হয়ে আত্মগোপন করত । আমি চুপিচুপি দাঁড়িয়ে পড়তাম সেই দৃশ্য দেখে দুরুদুরু বুকে । ওর ভয়ে কচিকাঁচা ব্যাঙের গুষ্টি প্রায়শঃই দরজার নীচের ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ত ঘরের মধ্যে । কোণায় কোণায় ব্যাঙেদের ডানপিটেমির সাক্ষী হয়ে দুপুরগুলো পার করত পৃথা । কিন্তু এতকিছুর মধ্যে মনের কোণে থিতিয়ে ছিল এক অতৃপ্তি। এক ইচ্ছে পূরণের ঘাটতি ।
প্রতিদিনের মর্নিংওয়াকে প্রকৃতির সাথে আমার নতুন করে আলাপ হত যেন। শহরে থেকে এই প্রকৃতিকে পাইনি কখনো । সান্ধ্যভ্রমণেও সেই নির্জনতা, ধূলো-ধোঁয়া মুক্ত গাঢ় সবুজতা আর হাওয়ার সজীবতা ।
বসন্ত এসে গেল । ফাল্গুন মাসও শেষ । প্রতিবারের মত দখিনের হাওয়া, নীল আকাশের বুকে কুচোকুচো সাদা মেঘের ভেলা, অশোক, শিমূল , পারুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার রঙ মেখে বসে আছে বসন্ত । এক গাল হাসি তার মুখে । কেউ দেখুক না দেখুক সে সেজে গুজে বসেছে । কেউ সাজুক না সাজুক সে তৈরী তার রঙ মাখাবে বলে ... দোলের রঙ, ফাগুণের রঙ, বসন্তের রঙ । বসন্তের পাখিরাও আছে তার সাথে । কোকিল তো আছেই তার গান নিয়ে । আর আছে পিউকাঁহা, বৌ কথা কও, বসন্তবৌরি। এই একটা সময় যেন সব ঋতু দেখতে পাই । সাদা মেঘের মধ্যে কখনো একফালি কালো মেঘ ছুট্টে এসে বৃষ্টি দিয়ে যায় । কখনো খুব গরম লাগে কখনো বেশ ঠান্ডা হাওয়া । রাতের বেলায় একপশলা হিমও পড়ে, যেন চাঁদের সাদা জ্যোতস্না আরো ঠান্ডা বলে মনে হয় । যেন বসন্তে কোন্ হেমন্তেরই বাণী ! চারিদিকে সাজোসাজো রব । হৈ হৈ করে হাসছে আকাশ, লাল-কমলা ফুলের মেলা বসেছে । শীতের আলসেমিতে পাতাঝরে নিস্ব বাদাম গাছে লাল লাল কচি পাতা ফুটেছে । সদ্য মুকুলিত আমগাছে পাখিদের চাঁদের হাট বসেছে যেন । রঙ উড়ছে দোলের বাতাসে । কিন্তু এত রঙের পসরায় আমাদের দুজনের জীবনে কোথাও একটা অতৃপ্তি, না পাওয়ার টানাপোড়েন।
অনেকগুলো চৈতালী ভোর পেরিয়েও এমন সর্বনাশের ইশারা পাইনি । ছাইরঙা কুয়াশার ভোরে হাঁটতে হাঁটতে পিচের পাকা রাস্তায় চলেছি । দুপাশের শিমূল পলাশের সঙ্গী মহুয়া । মহুয়া সুখী ফুল । ফুল থেকে সবজে হলুদ ফলটুকুনিও ঝরে পড়ে মনের সুখে । সেই মহুয়া সরণী ধরে পথ চলায় যে মাদকতা, তা পেয়েছি সেই ভোরে । হলুদ ফরাস পাতা মহুয়া সরণী বেয়ে চলেছি আর পাশের গাঁয়ের আবালবৃদ্ধবণিতার কোঁচোড় ভরে সেই মহুয়া ফল কুড়িয়ে নেওয়া দেখে মন পৌঁছে গেল সেই লালপাহাড়ির দেশে...এতকিছুর মধ্যেও ছিল একটা ছোট্ট খচখচানি ।
আমি আর পৃথা খুব সুখী তবুও অসুখ একটি কারণে। আমাদের কোনো ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে কোনো সন্তান না আসা। এর ফলে আমরা মনে মনে খুব কাছাকাছি এসে গেছিলাম কিন্তু আমার শরীর তা মানতে অক্ষম।
এইভাবে ঋতুবৈচিত্র্যের টানাপোড়েনে বর্ষা এল হুড়মুড়িয়ে। নতুন জায়গায় বদলে গেল আমার জীবন। আমূল পরিবর্তন। আমি নতুন করে প্রেমে পড়লাম তার। বৃষ্টিধারার টুপটাপ আর তার দুলুনি। অচেনা নর্তকীর লাস্যময়তা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখল দিনকয়েক।
একতলা বাংলোবাড়িতে বিশাল বাগান আর গাছগাছালির মধ্যে মহানন্দে তার সংসার । কিন্তু শহরে এদ্দিন বাস করে আমার তো রক্ত হিম হবার উপক্রম হত মাঝেমাঝেই । ওকে রোজ দেখা যেতনা । যেদিনই ভাবতাম ওর কথা, ওর চালচলন, ওর সাজগোজ আর রূপের কথা সেদিনই ও আমাকে দেখা দিয়েই চলে যেত । ঠিক কেমন যেন আমার সাথে টেলিপ্যাথি ছিলা ওর । ওকে প্রথম দেখেছিলাম বসন্তের শেষে একটা অকাল বোশেখের বিকেলে । ঝিরঝির বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে দিয়ে ঢুকে গেছিল ঘরের মধ্যে । একটু দেখতে না দেখতেই সেই চলে যাওয়াটা আমাকে আরো যেন উদাস করে দিয়েছিল । আবার অপেক্ষা সেই থেকে । পরদিন বৃষ্টি ভোরের ভেজা সকালে আবার দেখতে পেয়েই মনের মধ্যে সেই পাগলা হাওয়ার উদ্দাম নাচ অনুভব করলাম । হৃদয় অলিন্দে ধুকপুকুনিতে বুঝে গেলাম আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি । ভোরের হলুদ রোদের আলো তখন চুঁইয়ে এসে পড়েছে গাছের ডালপালার মধ্যে দিয়ে । সোজা এসে সেই আলো পড়েছে ওর চিকনকাজের শিফনে। ভোরের আলোর লালিত্যে ওর লাবণ্য যেন আরো বেড়ে গেল মনে হল ।
আমার শরীরের গোপন রহস্যে তখন কিসের যেন আলোড়ন । চোখ মুখ ধুয়ে এসে আবার দাঁড়ালাম বারান্দায় ততক্ষণে ও চলে গেছে ঘরের মধ্যে । এবার ভাবলাম ওকে বলতেই হবে আমার মনের কথাগুলো। আর এমনটি মানায় না । অসহনীয় এই অপেক্ষা। আমার ইহকাল, পরকাল সবকিছু ওকে দিয়ে দেব একদিন। আর পারছিনা এই এড্রিনালিনের যন্ত্রণা বইতে । হয় আমি এখান থেকে চলে যাব যাতে আমার আর ওকে দেখতে না হয় । কারণ আমার সংসারে ওর কোনোদিনো আসা সম্ভব নয় । সেকথা যেমন ও জানত তেমনি আমিও জানতাম । কিন্তু বলা হল না । অ্যাড্রিনালিনের টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত এহেন আমি একদিন বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি অফিস ট্যুরে । সে এসে আমার পথে বাধা দিল । আবার ওর রূপ দেখলাম । যথারীতি ভালো লেগে গেল । ইচ্ছে হল আমার সবটুকুনি দিয়ে ওকে আমার করে নি। একটু আদর করে ঘরে তুলি । একসাথে থাকি আমরা দুটিতে । ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম । মনে হল ওর ঠান্ডা মসৃণ ঠোঁট দুটো আমাকে চায় । পরেই মনে হল নাঃ এ আমার ভুল । হয়ত ও অন্য কারোকে ভালবাসে । ছোঁয়া হয়ে উঠলনা ওকে। ঠোঁট রাখাও হলনা ওর শরীরে । ভাবতে ভাবতে দেখি ও অনেক দূর এগিয়ে চলে গেছে । কেমন যেন একটা আওয়াজ করতে করতে । ঠান্ডা ঠান্ডা শরীরটার লালিত্য বয়ে নিয়ে । কি জানি উষ্ণতা ছিলনা বলেই আর ওকে পাওয়া হল না আমার ।
এই অচেনা জীবটিকে মনে মনে আমি ভালবেসে ফেললেও আমার বৌ মানে পৃথার খুব আপত্তি ছিল এই ভালোবাসায়। বরং পৃথা তাকে কিছুটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যই করত সারাক্ষণ। বড়োই শহুরেপনা তার। কথায় বলে মেয়েদের যে পাত্রে রাখবে তারা সেইপাত্রের আকার ধারণ করে নেয় কিন্তু পৃথার এই খুঁতখুতানি এ বয়সেও গেলনা। একতলা বাড়ির দরজা জানলা এঁটে বসে থাকবে সর্বক্ষণ। বিকেল হলে একা কখনো বাগানের ধার মাড়াবেনা। আর সুযোগ পেলেই বাপেরবাড়ি। সে যাক্, আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে ঐ নিরীহ অচেনা সরীসৃপটির ওপর খামোকা রাগ করাটাও আমার পোষাত না।
বাবা হয়ে না উঠতে পারার দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলেছিলাম কর্মসূত্রে এই সবুজ প্রকৃতিতে এসে । মনমরা হয়ে থাকত আমার বৌ। কলকাতায় রেখে আসতাম তাকে। আবার আমার কাছেও নিয়ে চলে আসতাম মাঝেমাঝেই। একদিন বৃষ্টির ছুটির দুপুরে বৌয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে জানলায় চোখ রেখে দেখি সেই নাগকন্যাকে। অঢেল যৌবন, অফুরান প্রাণশক্তি আর তৈলাক্ত লাবণ্য নিয়ে আমাকে দেখাতে লাগল ওর রূপ। পৃথার ফোন কেটে দিয়ে দেখতে লাগলাম ওর রূপ। সেদিন রাতে ঘুম এলনা। নিজের সাথে মেতে উঠলাম । আত্ম তৃপ্তিতে তৃপ্ত হয়েও শান্তি পেলামনা যেন। পৃথা কাছে থাকলে ওকে ছুঁয়ে দেখতাম অন্তত। তারপর আবারো সেই নাগকন্যা এল আমার স্বপ্নে। মনে হল জাপটে ধরি সেই মেয়েকে। দরজা খুলে টগর গাছের কাছে গেলাম । হিসহিস করে শব্দ কানে এল।
তোমায় একটু ছুঁয়ে দেখব যৌবনা! শুধু একবার স্পর্শ করে দেখতে চাই তোমার লাবণ্য! নাহ্ঃ আবারো ঘরে এসে দরজায় খিল লাগিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে কফি বসালাম। ঘুমের আদ্যশ্রাদ্ধই হোক তবে !
আমার চাই নারীসুখ। পৃথাকে ফোন করলাম ভোরে উঠেই । বললাম, আজকের ট্রেনেই চলে এসো প্লিজ, তোমাকে খুব মিস করছি। পৃথা তো একলাফে পাঁচ-পা ! ভাবলাম, দিনকয়েক তাকে নিয়ে ফুর্তিতে থাকব। রান্নাবাড়াতো করে মেয়েটা আর আমাকে আনন্দ দিতে না পারলেও মানুষটা তো সাচ্চা! পৃথা রাজী হয়ে পরদিন লোকাল ধরেই আমার কাছে আসবে কথা দিল। সে গেছে পুজোর কেনাকাটি করতে। তাই এবার একটু বেশিদিন আমাকে ছাড়া ।
অফিসে যাবার পরেই কাজ আর তারপরেই বিকেলে বৌয়ের ফোন এল । "আমি এসে গেছি, দরজা খুলছি, তুমি শীগ্গির চলে এসো কিন্তু, বিকেলে একসাথে চা খাব'
বৌ এসে গেলে একটা খুব মজা..রান্নাঘর ইজ ওয়েল টেকন কেয়ার অফ। চায়ের সাথে মুখরোচক "টাও' জুটবে তবে, কলকাতার মিষ্টিপত্তরও জুটতে পারে...আনন্দে নেচে উঠল মন। বাড়ি ফিরলাম সন্ধ্যের আগেভাগেই। আজ দুজনে একসাথে বসে আয়েস করে চা খাব বলে। একতলা বাড়ির কাছাকাছি যেতেই রান্নাঘর থেকে ভাজা ডিমের সুঘ্রাণ পেয়ে চোখ চকচকিয়ে উঠল। সাইকেলটা ধীরেসুস্থে বাগানের এককোণে পার্ক করেই তালা খুলে বাড়ি ঢুকতেই মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। রান্নাঘরে ঢুকেই বৌকে জড়িয়ে ধরলাম পেছন থেকে। তারপর একরাশ খুশি নিয়ে ছোট্ট কাঠের একটা টিপয় আর দুটো বেতের চেয়ার নিয়ে বারান্দার বাইরে বাগানের মধ্যে চা খেতে বসলাম আমরা। সাধারণতঃ সন্ধ্যের ঝুলে বড় একটা বাগানের দিকে বারান্দার দরজাটা খুলে রাখা হয়না কারণ ব্যাঙের উতপাত। তবে বৃষ্টিদিনের শেষভাগে কি আর হবে! আর সেদিন দুজনের দুজনকে পাওয়ার আকুলতায় সব ভুল সেই মূহুর্তে। শাশুড়িমায়ের যত্নের চন্দ্রপুলি, ক্ষীরের চপ আর পৃথার হাতের বানানো ফ্রেঞ্চ টোষ্ট দিয়ে ধূমায়িত চা! গল্পে-আড্ডায় প্রাক্পুজো আড্ডা জমে গেল আমাদের। এই মূহুর্তগুলোয় মনে হত, না হোক গে আমাদের সন্তান, আমরা তো আমাদের নিয়ে খাসাই আছি!
সেদিন চাঁদের জ্যোত্স্না সরাসরি আমাদের বেডরুমে মানে খাটের ওপরে, বিছানার চাদরে আছড়ে পড়েছে। বাইরের দরজাটা বন্ধ করে ঘরে পা দিতেই ঠান্ডা ছোঁয়া। ভাবলাম বুঝি মনের ভুল। পৃথা তখনো রান্নাঘরে চায়ের বাসন রাখতে, গোছাতে ব্যস্ত। পাশাপাশি দুটো বেডরুম । মধ্যিখান দিয়ে দরজা , এঘর থেকে ওঘরে যাওয়া যায়। বেডরুমে আমাদের বিয়ের খাট আর গেষ্টরুমে আরেকটা খাট সোজাসুজি পাতা। মানে এঘরের খাটে বসে ওঘরের খাট সোজাসুজি দেখা যায়। আলো জ্বালতেই দেখি তেল চকচকে মসৃণ শরীরের অধিকারীণি সেই নাগকন্যা, আমার স্বপ্নসুন্দরীকে। আমাদের খাটে তার আদ্দেক শরীর আর গেষ্টরুমের খাটে বাকী শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে সে। পরক্ষণেই মনে হল আমরা যখন আলো আঁধারিতে বাগানে গল্পে মশগুল সে তখন বাগানের দিকের দরজা দিয়ে চুপি চুপি ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মনে মনে রক্ত হিম হবার উপক্রম আমার। চুপচাপ ঘরের দরজায় শেকল তুলে দিলাম বাইরে থেকে। এবার টাউন ডিপার্টমেন্টে তলব করে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। পৃথা জানতে পারলে বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে আবার কলকাতার ট্রেন ধরবে। মনে পড়ল তার ভীতির কথা। রান্নাঘরে ফিরে এসে দেখি পৃথা গান ধরেছে গুন গুন করে "নাচ ময়ূরী নাচরে...."
সন্ধ্যেবেলায় ভেবেছিলাম বোতল খুলে বসব দুজনে। পৃথার সাধের রেড ওয়াইন ছিল এক বোতল। আইডিয়া চম্পট। টাউন ডিপার্টমেন্টে ফোন ঘোরালাম। পৃথা জানতে পেরে গেছে এর মধ্যে। বলল, বাদাড়ে বাপু আর ভালো লাগেনা। ফালতু ঝামেলা যত্তসব! শহুরে সভ্যতায় এসব ঝামেলা নেই। তবে আমার কিন্তু বেশ লাগছিল। তাকে পাওয়া হয়নি কিন্তু আমার বিছানার চাদরে সে তার ছোঁয়াটুকুনি তো রেখেছে। অবশেষে টাউন বিভাগের লোকলস্কর এল। তাকে তাড়াতে গিয়ে সে রান্নাঘরে গ্যাসের পাশে কুন্ডলী পাকিয়ে বসে রইল। মানে যাবেনা সে! আমি দৌড়ে গিয়ে সেলফোনের ক্যামেরা জুম করে তার দু তিনটে ছবি তুলে নিলাম। সেদিনের ফেসবুক জিন্দাবাদ! লাইক আর কমেন্টে মাত হবে আমার পোষ্ট। আরো কিছু পর ওঝা এসে তাকে তুতিয়ে বাতিয়ে নিয়ে গেল। ওরা বলল, উহা বিষাক্ত লয় বাবু। ভালো বন্ধু বটে। বাবু সাপকে আপনারা এত্ত ডরান, আসলে ওরা খুব ভালো। পৃথা দরাজার আড়ালে থেকে বলল, সে ভালো হোক বাবা, তুমি একে নিয়ে আগে ভাগো তো !
ওঝা বলল, ম্যাডাম সাপ খুব শুভ জিনিষ বটে। কাল গিয়ে মা মনসার মন্দিরে একটু দুধ-বাতাসা দিয়ে আসবেন। এ সাপ কারো ক্ষতি করবেকলাই । আপানর বাগানে এর জোড়াটাকে কেউ খুন করেছিল। তাই উহা সবসময় বাগানে কিছু খোঁজ করে।
উহা মাদী সাপ বটে। মদ্দাটা মারা গেছে ।
রাতে পৃথা শুতে যাবার আগে বিছানার চাদর বদলাতে গেল। আমি নারাজ। পৃথাকে অবশেষে রাজী করিয়েই ছাড়লাম। পরিষ্কার শরীর তার। একটুখানি চাদরে গা এলিয়েছে বৈ তো আর কিছুই নয়। হাগা-মোতা তো দূরের কথা।
সেরাতে পূর্ণিমার রূপোলী আলোয় পৃথাকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম বিয়ের এতগুলো বছর পরে। শৃঙ্গার, ভৃঙ্গার, জ্যোত্স্না রজনী ছারখার। ওলটপালট সবকিছু। দেহরস নিম্নমুখী। আমি দিলাম ওকে। বহুবার চলেছে এ চেষ্টা মানে বৌকে ইমপ্রেগনেট করার চেষ্টা। পৃথাও যেন গ্রোনিং উইথ প্লেজার। এমন আগে দেখিনি কখনো ।
সেরাতে মৈথুন তৃপ্তির পরেও ঘুম এলনা। আকাশপাতাল ভাবতে লাগলাম সেই স্বপ্নসুন্দরী নাগকন্যাকে নিয়ে। তাহলে আমার মধ্যেই কি সে দেখতে পেয়েছিল তার বহু আকাঙ্খিত মৃত পুরুষটিকে? ফলপ্রসূ হল আমার স্বপ্ন। পরের মাসেই পৃথা আচমকা পিরিয়ড মিস করল। ইউরিন টেষ্ট টুলকিট হাতে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরলাম। ঐ বিছানায় বসেই পৃথার চোখে দেখলাম আমার সর্বনাশ। জড়িয়ে ধরে একের পর এক চুমু খেতে লাগলাম বৌ'কে।
1 মন্তব্যসমূহ
ভালো - অন্যরকম ।
উত্তরমুছুন