লতিফুন্নেছা একাত্তর শব্দের কোন মানে জানে না। তবে এ কথা ঠিক একাত্তরের কোন এক রাতে তার পেটে বাচ্চা দানা বেঁধেছিল। এক আঙুল পরিমান দানাবাঁধা বাচ্চাটা লতিফুন্নেছাকে স্বপ্নে দেখা দিলে ঘুমের ভেতর স্বামী আকরাম হোসেনের বুক খাঁমচে রাত তিন প্রহরে জাগিয়ে তোলে স্বামীকে। স্বামী আকরাম হোসেন ধন্ধে পড়ে। ভ্যাবাচেকা খায়। তারপর বৌয়ের মুখের কাছে মুখ নিয়া আস্তে কইরা কইবার থাকে, ও লতি! লতি, কী অইছে? ওরাম করতাছো ক্যান? খোয়াব দেখছো?
লতিফুন্নেছার ঘুম গভীর। অন্ধকার ঘন জলের মতো সেই ঘুম স্রোতময়। সেই স্রোতে ভেসে ওঠে চিত্রকল্প। ফুলপরী উড়ে এসে বকুলের ডালে বসে হাওয়া খায়। মায়াপরী মায়াচোখে তাকিয়ে থাকে লতির দিকে। লতি মন্ত্রমুগ্ধের মতো গুটি গুটি পায়ে বকুল গাছের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে সেই প্রাচীন অথচ ভয়ানক আলো ঝলমলে বকুল গাছের তরতাজা সবুজ বুকের বোটা থেকে একে একে ঝরে পড়ে একাত্তরটি শুভ্র মধুগন্ধমাখা ফুল। লতিফুন্নেছার আঁচল ভরে ওঠে সেই অলৌকিক শুভ্র ফুলের আয়োজনে। বুকের গভীর থেকে শ্বাস টেনে নেয় লতিফুন্নেছা। একাত্তরটি ফুলের মিহিস্পর্শে নাকের চারিধার ঘিরে, সমগ্র মুখমণ্ডল ঘিরে জেগে ওঠে সা রে গা মা পা ধা নি সা। কলিজার ভেতর থেকে হৃতপিণ্ডের ভেতর থেকে সেই বকুল ফুলের ঘ্রাণ টেনে নেয় লতিফুন্নেছার সমগ্র অন্তরাত্মা। লতিফুন্নেছার গর্ভ সঞ্চার হয়।
আলো ঝলমলে চোখে হেসে ওঠে লতি। বাতাসের সাথে ভেসে ওঠে ওর লতানো শরীর। ভাসতে ভাসতে মায়াপরীর শরীর ঘেঁষে স্থির ভেসে থাকে শূন্যে; বকুল গাছের ডালে; বকুল ফুলের ছোঁয়ায়। মায়াপরীর ঠোঁট এগিয়ে আসে লতির ডান কানের সাথে ঝুলতে থাকা সোনার গিল্টি বাঁধা ঝুমকার ডগায়। কানে কানে ফিসফিসিয়ে ওঠে মায়াপরী, তোর একটা পোয়া হবে, ছাওয়ার নাম রাখবি মুজিবুর; আজ থাইকা আমরা দুই বোন তোর জীবনসখি। এখন যা, উইড়া যা স্বামীর কাছে; কাছে গিয়া স্বামীকে সোহাগ কর, আদর কর; স্বামীরে ধইরা রাখ বুকের ভেতর; বাইন্ধা রাখ; নইলে উইড়া যাইবো; উইড়া যাইবো গিয়া আকাশে।
ঘুমের ভেতরই লতিফুন্নেছা হেসে ওঠে। নড়ে ওঠে ঠোঁট। যেন বা ঠোঁট ফুটে প্রকাশ পায় গান। স্বামী আকরাম হোসেন তাকিয়ে থাকে। মনের ভেতর এক ধরনের মায়া জেগে উঠতে শুরু করে। পরদিন লতির শরীর ভর্তি আগুন জেগে ওঠে; পুঁড়ে যেতে থাকে পায়ের নখ থেকে ক্রমশ চুলের ডগা। বুকের ভেতর জেগে ওঠে মরুভূমির বিভ্রম। জলপানের আকাক্সক্ষা ক্রমশ দীর্ঘ হয়। আকরাম হোসেন বৌয়ের পালঙ্কের কিনার ধইরা খাড়ায়া থাকে। লতিফুন্নেছা লতির মুখের চামড়ায় আঙুল ছোঁয়ায়। আঙুলের ডগায় আগুন। আকরামের চোখ থাইকা বোবা গরুর মতো গরম জল নামে।
সন্ধ্যার দিকে আকরামের দাদিআম্মা আকরামকে নিয়া বাইরে আসে। গালমন্দ করে। মাইয়া মানুষের লাহান স্বভাবের কারণে পুরুষ অহঙ্কারে আঘাত করে। তারপর যখন এগারো দিন পর লতির শরীরের আগুন ঘরের আড়কাঠ অতিক্রম কইরা টিনের চালে গিয়া চালের রঙ তাতাইয়া লাল কইরা দিবার লাগছে তখন আকরামের দাদি আকরামকে কয়, তুই কি নাতবৌয়ের শইলের আগুন নিজের ভিতর নিবার পারবি? যদি পারছ, তাইলে একখান কাজ করবার নাইগবো।
বৌয়ের শইলের আগুন নিজের শইলের ভিতর নিবার লাইগা আকরাম উতলা হয়। দাদিকে চিক্কুর পাইরা কয়, দাদি গো, কও কী করবার লাগবো। লতিকে বাঁচাইয়া দাও। আমি ওর শইলের বেবাগ আগুন নিবার পারবো। কী কইরবার লাগবো কও।
আকরামের দাদি আকরামকে সাবিয়া খালার কাছে পাঠায়। সাবিয়া খালার কাছে তখন অপঘাতে মইরা যাওয়া একখান সাহেব ভূত আসে। সাবিয়া সাহেবের রাগী আত্মাটাকে তাড়াইবার লাইগা লাঠি নিয়া পিছন পিছন দৌড়ায়। ভূতটা চিক্কুর পাইড়া কান্দে আর সাবিয়া খালাকে অভিশাপ দেয়। আকরাম গিয়া সাবিয়া খালার হাত চাইপা ধরে। ও খালা, আমাক বাঁচাও, আমার বৌডাকে বাঁচাও, পেটের ছাওয়ালডাক বাঁচাও; ও খালা লতি তিন মাসের পোয়াতি; ওর একখান বিহিত করো; ওর শইলভর্তি আগুন; আইজ এগারো দিন হইলো সেই আগুন কিছুতেই নামবার চায় না; কুমার নদের জলে ওর শইল ধুইয়া দিছি, নামবার চায় না।
সাবিহা খালার কাছে আকরাম জানতে পারে লতির সাথে দুইজন পরী বাস করে। তেনারা দুইবোন। বড়বোনের নাম ফুলপরী; ছোটটার নাম মায়াপরী। ওরা লতির সখি লাগে। ওরা লতিকে ছাইড়া যাইবো না কোনোকালেই। পরীকইন্যার শইলের আগুন লতির শইলে দানা বাঁধছে। কিছু করার নাই। বাড়িত যাও গিয়া।
আকরাম চিক্কুর পাইরা সাবিয়া খালারে জড়াইয়া ধরে, ও খালা, বাঁচাও। আমি যামু না। আমার বৌডারে বাঁচাইয়া দাও, পেডের ছেলেডারে বাঁচাইয়া দাও। বিনিময়ে আমারে দিয়া যা খুশি করাও, আমি রাজি আছি।
এই ভাবে সেই একাত্তর সালের নিচে দাঁড়াইয়া আকরাম হোসেন শেষমেশ একটা বিহিত ব্যবস্থা কইরা অনেক রাইতে ঘরে ফিইরা আসে। সাবিয়া খালা জিন হাজির কইরা পরী কইন্যাদের হাজির কইরা শেষ পর্যন্ত বিস্তর দেনদরবারের পর একখান ফয়সালার বন্দোবস্ত করে। পরী কইন্যারা শেষ পর্যন্ত রাজি হইয়া যায়; লতির শরীর থাইকা আগুন তুইলা নিয়া আকরাম হোসেনের চওড়া বুকের পশমে আছড়াইরা ফালায়। ঘরে ফিইরা আকরাম হোসেন রাত্রি তিন প্রহরে বৌয়ের হাসিমুখের সামনে হাটু ভাইঙ্গা পইড়া যায়।
আকরাম হোসেন কালাজ্বরের ভিতরে কেবলি তলাইয়া যাইতে থাকে। একদিন দুইদিন তিনদিন চারদিন, এইভাবে একান্ন দিন, তারপর বায়ান্নোদিনের মাথায় সালাম বরকত রফিকের বিদেহী আত্মা আইসা আকরাম হোসেনের আত্মা আগুনের গোলা থাইকা, কালাজ্বরের কালো হইয়া পুইড়া ওঠা দেহ থাইকা খালাস কইরা আকাশে উড়াল দেয়। আর তখন লতিফুন্নেছা লতির মনে পড়ে সখি ফুলপরী আর মায়াপরীর কথা। সখি, স্বামীরে আলগাইয়া রাইখো।
লতিফুন্নেছা লতির পেটের ভিতর থাইকা মুজিবুর রহমান ফুলপরী আর মায়াপরীর দিকে রাগী চোখে তাকায়। পরীকন্যাদ্বয় ভয় পায় না। মুজিবুর রহমান ওর বাবা আকরাম হোসেনের বিদেহী আত্মার সাথে সালাম বরকত জব্বারের বিদেহী আত্মা দেখতে পায়; আঙুল নাইড়া ডাকবার চায়, ডাকতে পারে না।
কবি শেখ মুজিবুর রহমান একটা এতিম পেটের ভিতর একটা এতিম বাচ্চা হইয়া শুইয়া থাইকা আমাগের ভবিষ্যৎ দেখতেয়াছে।
২. একটি লাল রেলগাড়ির জীবনবৃত্তান্ত
কবি শেখ মুজিবুর রহমান তখন সন্ধ্যার মুখোমুখিতে বসে। লেখতে ইচ্ছে করে না; ভাবতেও ইচ্ছে করে না। তারপরেও তার মাথায় সম্ভবত এমন কোন ছবি জেগে ওঠে যা সে ঠিক তার ভাষাবোধে খুঁজে পায় না। সেই ভাষাহীন বোধের ছায়াভাষায় লেখা হয়, আজকাল মানুষের মাঝেই আমি আমার মৌলরূপ খুঁজে পাই। বেঁচে থাকার নাম যদি জীবন হয়, তবে এতটুকু বলতে পারি, বেঁচে থাকা অথবা টিকে থাকার তাগিতে আমরা লড়াই করি; ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হই কর্মময় যন্ত্রের চাকায়। সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট। আমরা কি হাপিয়ে উঠতে শুরু করেছি? অথবা শুধুই স্বপ্ন?
আর তখন কবি অবচেতন থেকে জেগে ওঠে। চিঠি লেখে কোন এক শ্রমিকের কাছে। কোন এক শ্রমিক নয় বরং সেদিন ১৫ আগস্ট। ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণির কামরায়; তখন সাধারণ নাগরিকদের জন্য তৃতীয় শ্রেণি বলে একটা শ্রেণি ছিল; এখনকার মতো সুলভ শ্রেণি বলে কিছু ছিল না; তখনও বাংলাদেশের ট্রেনগুলোর দেহে সবুজ রং লাগানো হয়নি; সবই ছিল লাল; যেন বা লাল মানুষগাড়ি; অনেকটা লাল মালগাড়ির মতো; সেই লাল মানুষগাড়ির কোন এক কামরায়, তখন কামরায় কামরায় বেঢক দরজায়, লোহার লাল দরজার পাশে ট্রেনের বাহিরদেয়ালে, মেটাল দেয়ালে ক খ গ ঘ ... চ ছ ... ঞ এইভাবে চিহ্নিতকরণ কোন সূচকচিহ্ন দেয়া হতো না। কেননা তখন সামরিক জান্তার সামরিক মেজাজ; তখনও তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকিকরণ প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে আসার অবকাশ পাননি অথবা ঠিক ভেবে উঠতে পারেননি।
সেই ভাবনাবিহীন লাল রেলগাড়ির ভেতর সারিসারি খয়েরি কাঠের বেঞ্চের ওপর বসে কবি শেখ মুজিবুর রহমান সামনের লোকটিকে দেখছেন। লোকটি ডান হাতের নোখ দিয়ে নাক খুটছে, নাকের ময়লা বের করছে; চোখের সামনে নোখ উঁচিয়ে ময়লা পরখ করার পর থাইয়ের ওপর যেখানে ট্রেট্টনের ক্রসচেকওয়ালা প্যান্ট লেপটে আছে সেই প্যান্টের কাপড়ের ওপর নোখ ঘঁষে নাকের ময়লা পরিষ্কার করছে। অনেক সময় ধরে সে তার এই একান্ত প্রিয় নিবির এবং একান্ত ব্যক্তিগত কাজটি করে চলেছে; অথচ যেন বা লোকটি এই প্রচণ্ড ভিড়ের ভেতর থাকা সত্ত্বেও খানিকটা নিঃসঙ্গ হয়ে উঠলো। লোকটি সরাসরি সামনের বেঞ্চে বসে থাকা কবির দিকে তাকায়; অথচ লোকটির চোখে কোন ভাবাবেগ নেই; নেই কোন অর্থ অথবা ভাষা; যেন বা দৃষ্টিহীন অন্ধ; চোখজোড়া ধূসর; ওর লম্বাটে জুলফির মত ধূসর। আর তখন লোকটি তার ধূসর জুলফির নিচটায় চুলকাতে থাকলে, সেই জুলফি নেমে এসেছে কান ঘেঁষে কানের নিচে; অথচ সেই সময় এ রকম লম্বা জুলফি রাখার চল ছিল না; সেই ধূসর লম্বা জুলফির নিচটায় চুলকাতে গিয়ে লোকটি খক শব্দে ওর গলা থেকে কফ উঠিয়ে নেয় জিহ্বার তালুতে; নির্লিপ্ত, এবং তালুর ওপর যত্নে রাখা কফ যেন বা ঘন টকমিষ্টি কোন নিরাপদ অতি জরুরি বোতলের ছিপিখোলা দ্রবিভূত ধূসরঘন ঔষধ অথবা হতে পারে পোড়া থকথকে দুধের সর; লোকটি সেই গোপনীয় সরতুল্য কফ চালান করে দেয় গলায়; গলা থেকে বুকের খাদে। খানিক পর, লোকটি নাক খুটানোর কাজে বিরতি নিলে তার ডান হাতের কালো নোখওয়ালা আঙুল যেন বা নোতুন কাজ খুঁজে পায়; এবারে ডান হাতের মধ্যমা এবং বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে নাকের ডগা, ডগা থেকে ডগার নিচে নাকের গোড়ায় কালো নোখের চাপে বেশ কিছুটা যেন বা চেছে নিতে শুরু করেছে, যেন বা অতি গোপনীয় কিছু চিপে তোলা হচ্ছে উপরে; এভাবে একান্তে নাকের শাল, শাদা শাল, যা ছিল সুচের ডগার মতো ধারালো অথচ দুগ্ধধবল; আর এ অবস্থাতেই লোকটি সহসা কথা বলে ওঠে, যেন বা অনেক দূর থেকে পরিচিত কেউ, ছোটভাই কই যাইবেন?
মেজাজ নোংরা হবার পরিবর্তে কবি যেন বা খানিকটা মন্ত্রমুগ্ধ হয়। পাঁচবার শ্বাসপ্রশ্বাস প্রবাহিত হতে যেটুকু সময় লাগে ততটুকু পর কবি হেয়ালি করে, ঠিক জানি না, ঠিক কোথায় যেতে হবে আমাকে অথবা আপনার কোথায় যাওয়া উচিত। লোকটার ভেতর খানিক বিস্ময়। লোকটার জামা থেকে খানিক বিস্ময় ঝরে পড়ে। লোকটার নোংরা গোঁফজোড়া থেকে বিস্ময় গড়িয়ে নামে; লম্বা ধূসর জুলফি বেয়ে বিস্ময় গড়িয়ে নামে গলায়। আর তখন, বিস্ময়ের খাদ থেকে চিকন দুর্বল গলায় বোধ বিস্ফোরিত হয়, ছোটভাই কি কবি?
মুজিবের চুলে মমতা চিকচিক করে ওঠে। সেই মমতা, চুল বেয়ে কানের পিছন দিয়ে পিঠে নেমে যেতে থাকলে কবি শেখ মুজিবুর রহমান চোখ তোলে, আপনি কী কাজ করেন?
লোকটা নির্লিপ্ত, যেন বা একজন কবিকে এড়িয়ে চলা অথবা উপেক্ষা করা; লোকটি ট্রেনের ছাদের দিকে তাকায়; তারপর অতি ধীরে উঠে দাঁড়ায়। বাঙ্কারের ওপরে বসে থাকা একটা প্রাচীন ট্র্যাভেলিং ব্যাগ, রেক্সিনের গায়ে ধূসর ময়লা যেন বা একরাশ বিস্ময়ের মতো এক রাশ ধুলো ট্রেনের ভেতর বসে থাকা পেসেঞ্জারদের শরীরে উড়ে এসে সবাইকে ধুলোজনিত এলার্জিতে ক্লান্ত করে দেয়; আর তখন পেসেঞ্জারদের ভেতর থেকে কেউ কেউ অসহিষ্ণু বদরাগি মুখ ঝামটে উঠলে যেন বা কিছুই হয়নি এমন একখানা ভাব নিয়ে পুরোনো রং ওঠা চেইনছেড়া ব্যাগখানা নামিয়ে পায়ের থাইয়ের ওপর রাখে। ব্যাগ থেকে বেরিয়ে এলো সিমেন্টের কাগজ দিয়ে তৈরি খাকি রঙের ঠোঙা, ঠোঙার ভেতর থেকে রুটি, রুটির ভেতর আলুভাজি, আলু ভাজির পাশে ডিম সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধর পাশে মরিচ-লবনের মিহি মশলা আর তাজা দুটো কাচা মরিচের সাথে এক টুকরো ঘোলাটে কচকচে পেয়াজ।
বুঝলেন কবি ভাই, মা এখনও একটা একটা কইরা আমি যা যা পছন্দ করি সব গুছায়া দেয়; ট্রেনে খাওনের জন্য দেছে, আমি এখন যদি না খাই, মায়ে কষ্ট পাইবো; তারে ফাঁকি দিতে পারি না; এখনও আইবার কালে খুচরা টাকা পয়সা দিয়া দেয়, পারে না কিন্তু দিবই, আর কইবো রিক্সা ভাড়া, মায়ে জানে আমি রিক্সায় চাপি না, ওইটা একটা বাহানা, পারুক আর না পারুক টাকা দিবো, কিন্তুক আমি যদি রাইগা যাই, তাই নানান কথা আর তহন মায়ে আমারে কোন কথা কইতে না দিয়া আমার কপালটা বুকের মধ্যে টাইনা নিয়া চুমা খায় আর বিরবিরাইয়া কয়, ও গ্যাদা রাইতে বদ সপন দেখছি আইজ না গেলে চলবো না?
লোকটার কি গলা ধরে এলো? নাকি আবারো কফের কারসাজি। লোকটা একটা রুটি পরিপাটি করে কবির দিকে এগিয়ে ধরে। কবি রুটির পরিবর্তে দেখতে পায় ময়লা নখ, যেখানে নাকের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ময়লা জমে আছে। কবি কীভাবে ফিরিয়ে দেবে বুঝতে পারে না; হাত গুটিয়ে রাখে। ভাইসাহেব আমার মা সারাটা জীবন শুধু কষ্টই পাইছে, নেন এই রুটিটায় মায়ের হাত লাইগা আছে। কবির হাত এগিয়ে আসে। ভাই, আপনের মা থাকে কোথায়?
থাকে না, বাড়ি নাই।
কবি বিরক্ত হয় না; লোকটির প্রতি মমতাবোধ করে। তা হলে কি লোকটির মা প্রাচীন আকাশের মতো কোন এক গোপন দূরত্বে বসে কবিকে দেখতে পাচ্ছে? কবি কি বিমর্ষ? কবি কি নিঃসঙ্গ? কবি কি তার নিঃসঙ্গতা এড়াতে লোকটির সাথে নিবিড় হয়ে উঠতে চাইছে?
বললেন না আপনার পেশা কী, আপনের নামও তো শোনা হয়নি এখনো?
লোকটা খায়, লোকটা চিবায়, লোকটা কফমাখানো নরম রুটির দলা গিলতে থাকে; লোকটা দাঁতের ভেতর আঙুল চালান করে দিয়ে দাঁতের গায়ে লেগে থাকা রুটির নরম কাদাকাদা আটা পরিষ্কার করে; পিতলের বদনা থেকে পানি ঢালে জিহ্বার নালিতে, কুলকুচা করে তারপর সেই পানি গিলে ফেলে। এক সময় এই দীর্ঘ রুটিগেলা পর্বের সমাপ্তি ঘটলে লোকটি স্থির হয়ে বসে থাকে।
তারপর, কবি ভাই সিগারেট চলবে?
কবি এই ভায়ানক আহ্বান উপেক্ষা করতে পারে না, চলেন, দরজার কাছে যাই।
ক্যান? এইখানে আরাম কইরা টানেন, ওই দিকে ভিড় বেশি।
তারপর পাঁচসিকা দামের টিনের একখানা লাইটার, যে লাইটারের ফ্রেম অনেকটা মালগাড়ির সামনে লাগানো কয়লার ইঞ্জিনের মতো গোল লম্বা, নাকের চতুরদিকে ছোট ছোট ছিদ্র, গোড়াটা মালগাড়ির ইঞ্জিনের মতো অপেক্ষাকৃত এক থাক চওড়া। স্টেশনের প্লাটফরমে বসে থেকে ফেরিওয়ালাদের বেচতে দেখা লাইটার দিয়ে ফিল্টারবিহীন ক্যাপিস্টান সিগারেট ধরায় লোকটা। এই ধরেন। কবি সিগারেট নেয়। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে, বুকপকেটে রাখে। আমি একটু পরে ধরাই, সামনের স্টেশনে নেমে চা খাওয়া যাবে, তখন ধরাবো; এখন বলেন আপনি কী কাজ করেন?
লোকটা চুপ করে থাকে; যেন বা জানা নেই এর কোন উত্তর। সিগারেটের ধোয়ায় জড়ানো ধূসর মুখ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসে, শক্ত চওড়া ইটা ইটা ঠোঁটজোড়া ফাঁক করে, হয়তো বা ওই ফাঁকের ভেতর সিগারেটের পাছা ঢুকানোর কথা ছিল; কিন্তু এই ঢুকানোর কথাটা সে ভুলে গিয়ে, ধোয়ার ভাবধরা ভাবটা ভুইলা গিয়া বিরবিরাইয়া কয়, কাজ নাই, মালিকের গোলামি করি; রাবার বাগানে। বুঝেন না, রাবার টানলে লম্বা হয়, দিঘলা হয়, বড় হয় কিন্তুক আমারে টানলে কিচ্ছু হইবো না; আমি যা আছি তাই থাকমু।
মুজিবর ওর কথা শুনে মজা পায়; লেখার খোরাক পায়; লোকটার তো হিউমার টনটনা; লোকটার ভেতরে কি পাহাড়ের সমান ক্ষোভ ঘাপটি মাইরা আছে? আমাদের দেশে কি রাবার চাষ হয়?
হইবো না ক্যান? মাইনষের চাষ হইবার পাড়লে, রবারের চাষ হইতে দোষ কোথায়? এই যেমন ধরেন আপনেকেও তো জনগণের পূঁজি দিয়া চাষবাস কইরা বানানো হইতেছে, যাতে আপনে টাকাওয়ালাগো গোলামী করবার পারেন।
কবি ভাই শোনেন, পলিটিক্স ও নৈতিকতা হচ্ছে পরস্পরের শত্রু। পলিটিক্সের মাত্রা বাইড়া গেলে নৈতিকতার পরিমাণ কইমা যায়। আপনাগের মতো কবি বহুত দেখছি, পলিটিক্সের বাড়ি থাইকা দাওয়াত পাইলে সুরসুর কইরা নৈতিকতার পাঞ্জাবি পিন্দা পলিটিক্সের বাড়িতে গিয়া হাজিরা দেবেন।
কবি হা কইরা তাকাইয়া থাকে, কিছু কইবার পারে না অথবা কোন যুতসই কথা কইবার মতো কোন কিছু খুঁইজা পায় না। লোকটা কবির দিকে তাকায়, কী যেন পরখ কইরা দেখে পরক্ষণেই হরবর কইরা কইতে শুরু করে, শোনেন মিয়াভাই, আপনে তো শিক্ষিত লোক, শিক্ষা মাইনে কী তা কি জানেন? না আপনে যেইটা জানেন সেইটা ঠিক না, আপনেও আসলে বেন জনসনের মতোই জানেন শিক্ষা মাইনে অন্তরাত্মার চোখ, দেখনের চোখ, আসলে অন্তরাত্মার চোখ না, ওইটা ভুয়া কথা, আসল কথা হইল শিক্ষা মাইনে আমাগের মতো সাধারণ মাইনষেরে উলঙ্গ কইরা উদলা কইরা দেখনের চোখ। শোনেন, হেরাক্লিসের মতো পণ্ডিতেরাও মনে করতেন, বিদ্যা মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন করে। আসলে কী জানেন? প্রকৃত বাস্তবতায় বিদ্যার্জন মানুষকে পশুত্ব থেকে দূরে সরাইয়া রাখনের জন্য এক ধরনের খেলা কিন্তুক ওই খেলাটা একটা পণ্ডশ্রম, বরং মাইনষের যেমন মনে চায় তেমনই থাকতে দেওন দরকার, তা তো দেবেন নানে; আপনারা জনসাধারণরে চুইসা খাওনের লাইগা গোলাম বানাইয়া রাখনের লাইগা আপনাগের মন মতো শিক্ষা দেবার লাগছেন, এই কথাগুলান কবিভাই একবার ভাইবা দেখনের দরকার, আসলে আপনাগের শিক্ষিতদের আসলে বিবেক বুইলতে কিচ্ছু নাই, আপনারা নিজেরটা বেঝেন ষোল আনা আর মুখে মুখে আদর্শেও কথা ঝাড়েন।
কবির ভেতরটা জেগে ওঠে। কবির মাথার চুলে জেগে ওঠা অথবা লেপটে থাকা মমতা পায়ের পাতায় গিয়ে চুলকাতে শুরু করে। মুজিব ঠিক বুঝে উঠতে পারে না এই রকম জাত আউলানো কথায় ওর কী বলা উচিত। লোকটা কি আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্সের সাথে যুক্ত? কবির কপালে তখন আগ্রহের স্বেদবিন্দু ট্রেনের ভেতরের ভারি বাতাসের চাপে জমাট বাঁধতে শুরু করে। তখন কবি অপ্রস্তুত অবস্থায় সিদ্ধান্তহীনভাবেই বলে ওঠে, আসুন আমরা পরিচিত হই, আমি শেখ মুজিবুর রহমান, কবিতা লিখি, আপনি কী কাজ করেন? আপনার নামটাও তো এখনও শোনা হয়নি?
এইটা কি কইলেন কবি, গোলামের আবার নাম থাহে নি? আপনে কবি, কবির নাম থাকনের দরকার আছে, নাইলে আপনারে আমরা চিনমু কেমনে? তাই বইলাতো দুইনার সবাইকে চিননের দরকার পড়বো না? ধইরা নেন আমার নাম ১৫ আগস্ট। ওইদিনই তো আপনেরে আপনার দেশের লোকগুলান মাইরা ফেললো। কি হাচা নি?
তারপর লোকটা থাইমা যায়। যেন বা খুব গোপনীয় কোন তথ্য ফাঁস কইরা লোকটা হঠাৎ সাবধান হইয়া গেছে। এরপর এক কি দেড় মিনিট পর ঘপ কইরা বইলা বসে, আমার কোন নাম নাই।
লোকটার মাথায় কি কোন ঝামেলা আছে? লোকটার মাথাটা কি এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে? লোকটার মাথায় কি এখনো কোন বায়ান্ন অথবা কোন একাত্তর ঘাপটি মাইরা বইসা থাইকা লোকটাকে ক্রমাগত আগস্টের আতঙ্কে ক্রমশ ট্রমা-তাড়িত করে তুলছে?
কবি ভাই আমার কথায় রাগ লইয়েন না, মনটা বিষাইয়া আছে; আসলে আমরা সব্বাই ভণ্ড।
লোকটা ‘সব্বাই’ শব্দটা এমনভাবে উচ্চারণ করলো যেন তাজা ভারি শব্দটা ওর ঠোঁট আকড়ে এখনো ঝুলে আছে। কবি শব্দটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে; ইচ্ছে করলে শব্দটাকে হাত বাড়িয়ে লোকটার ঠোঁট থেকে টেনে নিয়ে হাতের তালুর ওপর রেখে চোখের সামনে এনে নেড়েচেড়ে দেখতে পারে।
এই সময় ওদের প্রাচীন লাল রেলগাড়িটা গুয়াখাড়া স্টেশন অতিক্রম করতে থাকে। লোকটার পাশে বসে থাকা মহিলার নিতম্বদেশের গোপন গর্তে অসভ্য রকমের ফুলে ওঠা গুটিকয়েক পাইলস খোঁচাতে শুরু করলে অবমানবীর শ্যামলা রং ঘন হতে গিয়ে পক্ষান্তরে কালো হয়ে উঠলে মাতারি বেটির পান খাওয়া চামচিকার খয়েরি দাঁত জংলি বিড়ালের মতো হা হয়ে ওঠে। কবি শুনতে পাচ্ছে ওর নাকফোলানো পাইথন-আওয়াজ; যেন বা কবির চোখে-মুখে এসে হামলে পড়ছে পোয়াতি মহিলার প্রাচীন গন্ধে ঠাসা জংলি নিশ্বাস। মহিলার চোখ ফুলে ওঠে; তারপর গোল গোল মৌচাক হয়ে কবিকে তাচ্ছিল্য করে। তারপর দুর্বোধ্য চিৎকার করে উঠে ক্রমশ গড়িয়ে নামতে থাকে নিচে।
আর তখন কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহিলার পাশে কুঁজো হয়ে বসে থাকা এক প্রাচীন রূপকথার ডাইনি বুড়ি নিজের শরীরের সবুজ রঙের চাদরখানা দিয়ে এলোমেলো ঘিরে দিতে থাকে পোয়াতি মহিলার শরীর। আর তারপর ট্রেনের ঝাঁকুনিতে ট্রেনের মেঝে ক্রমশ লাল রঙে পিচ্ছিল হতে থাকলে কবি শেখ মুজিবুর রহমানের কানে প্রবেশ করতে শুরু করে তার দেশের আরও একটি নবজাতকের চিহি চিকন চিৎকার। সবুজ কাপড়ের ভিতর থেকে তীব্র লাল ক্রমশ জান্তব হয়ে উঠতে থাকলেও কবি শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক বুঝে উঠতে পারে না এই বিরামহীন লাল রেলগাড়িটিকে এখন থামিয়ে দেওয়া উচিত কিনা। কবি মুহূর্তের জন্য সময়ের সীমানা ডিঙিয়ে অসহায়; ঠিক বুঝে উঠতে পারে না রেলগাড়িটার ভিতর এইমাত্র জন্ম নেওয়া আরও একজন মুজিবকে নিয়ে লাল রেলগাড়িটা ঠিক কোন দিকে অথবা ঠিক কতদূর চলেছে।
কবির গলার ভেতর থুথু আটকে যায়। কবি থুথু আটকে রেখে জানালায় তাকায়; দেখতে পায় দুইটা অবমানবের বাচ্চা ট্রেনের দরজা ধরে ঝুলতে ঝুলতে ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টায় পক্ষান্তরে দ্রুত এগিয়ে চলা রেলপাতের অজস্র পাথরের শরীরে আছড়ে পড়ছে। এক দঙ্গল ট্রেনভর্তি অবমানবদের বানরমাথাগুলো থেকে অজস্র কালো বাদামি চিকন ফোলানো অথবা গর্তে ঢোকানো কুতকুতে বিস্ফোরিত তীরবিদ্ধ দৃষ্টি। চিৎকার। পকেটমার, হালায় মরছে, উচিত কাম হইছে। আর তখন চুলদাড়ির একটা ছোটোখাটো জবুথবু বোঝা ঘাড়ের ওপর নিয়ে, যেন বা নিজেরই মাথা নিজেকে বহন করার দায় ওর নেই; নিজের জামার বুকের ভেতরটা খামচে নিয়ে পকেট উদলা করে চেঁচায়, হালায় আমার সব নিয়া গেছে, হালায় আমার পকেট কাটছে। আর তখন ওকে যেন বা ঘিরে ধরে ভিড়ের চোদনে চেপটে ফেলবে এমন একটা জটলার ভেতর থেকে বেয়াক্কেল টিটি সাহেব চিল্লাইতে শুরু করে, এই এত্তগুলান মাইনষের মধ্যে বেয়াক্কেল বেটাছাওয়াল এই ১৫ আগস্টের রাতে তোমরার পকেট কাটলো, তুমি কি হালার বেহুশ, নেশা খাইছো?
ট্রেনটা তখন একটা প্রাচীন মরিচা ধরা এক দঙ্গল লোহার সাঁকোর উপর দিয়া পার হইয়া যায়; পার হইয়া যায়, আর আমাগের দেশটা রেলের চাক্কার নিচে রেপ হইবার লাগছে; আর তখন রেলগাড়ির প্রাচীন ইঞ্জিন পাত্থরের উপর দিয়া যাইবার লাগলে মনে লয়, মনে মনে পাত্থরগুলানকে গাইল পাড়ে, নটির ছাওয়াল, হোগা মারা দেওনের আর টাইম পাওনা? হোগা পাইতা বাঁশ খাইছো? খাল কাইটা কুমির আনছো?
কবি শেখ মুজিবুর রহমান হাপিয়ে ওঠে; পেছনে তাকায়। অনেক অনেক পেছনে কবরের ভেতর থেকে কবর ভেঙে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে ১৫ আগস্ট। সেই দিন রাতে কবি তার ট্রমা-আক্রান্ত মফস্বল শহরে ফিরে গিয়ে আবারও সেই শ্রমিকের কাছে চিঠি লেখে। চিঠি লেখে টুঙ্গিপাড়ার পল্লীতে লুকিয়ে থাকা রূপকথার পরীর কাছে; তারপর কোন এক রূপকথার দেশ থেকে চিঠিগুলোর জমে ওঠা উত্তর আসে, ‘‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ আমি আর রেণু দু’জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা।’’
৩. কবি শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা শেষ কবিতা
তোমার গৃহে প্রবেশ করেছিলাম। তারপর একদিন তুমি জানতে চেয়েছিলে, তোমার ঘরে কয়টি জানালা ছিল। আমি দ্বিধান্বিত, জানালার সঠিক সংখ্যা বলতে পারিনি।
ঘর বাজার বিদ্যালয় অফিস পার্লামেন্ট হাসপাতাল কবরখানা হাজতখানা স্টেশন রেলস্টেশন কত জায়গায় প্রবেশ করছি প্রতিদিন, অথচ কোন কিছুরই দরজা-জানালা-রঙ-পরিচয় বলতে পারছি না। তুমি এমন প্রাত্যহিক ভুলগুলোর কারণ নির্দেশ করে বলেছিলে, আমরা সবকিছুর ভেতর প্রবেশ করলেও আসলে কিছুই দেখতে পাই না; সহজাত চোখে তাকাই মাত্র-- ওইগুলাকে দেখা বলে না। বরং, ওইগুলা অর্থহীন তাকিয়ে থাকা মাত্র। দেখছো না ১৫ আগস্টের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষগুলো তাকিয়ে রয়েছে কীভাবে! দেখছে না কিছুই!! দলবাজি সবাইকে কেমন অন্ধ করে রেখেছে!!!
3 মন্তব্যসমূহ
কী এক বিভ্রমে পায়, এই কুহক থেকে বের হতে দেয় না। এই কুহক থেকে মুক্তির জন্য বারবার মগ্ন করার বিকল্প নাই।
উত্তরমুছুনআপনার একান্তপাঠ ও পাঠমন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন