তৃপ্তি সান্ত্রা'র গল্প : বিপিএল রূপকথা

কুলের বিচির ঠ্যারে বুক, কত রং দেখ। ছোঁওয়া কাপড় লাগবে—উদোম যা হারামজাদি। তাড়াতাড়ি যা। তুই এসে ভাইয়ের কাছে বসলে—হামি যাব--

মায়ের গাল শুনে মুখ ব্যাজার করে হাঁটা দেয় পিয়াঙ্কা—অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কা। সোজা পথ, ঘরের দাওয়া থেকে নেমে খেত বরাবর গেলে কম রাস্তা। মকাই আর পাটখেত পেরিয়ে বুনো ঝোঁপ। ঝোঁপের আড়ালটুকুই গন্তব্য। খেত পেরিয়ে যাওয়ার হ্যাপা আছে। জায়গাটা চাপা। ঘন ফসল বোনা।
বাড়ি থেকে নেমে পাড়ার রাস্তার ধারে এই যেখানে জগু পরামানিকের নতুন ঘর তার পাশ দিয়ে মাঠে নামলে ঝোঁপে যাওয়া সহজ। মাঠটা অনেক ওসার ওখানে। তাই খেতের ভেতরে ঢুকে যাওয়াও সহজ। অবশ্য যেতে হয় ফসল বাঁচিয়ে। লক্ষ্য তো সেই দুরের ঝোঁপে। কিন্তু প্রকৃতির ডাক বড় উদলা। হাঁটতে হাঁটতে বেগ এলে সহ্য খায় কিন্তু বেগ নিয়ে হাঁটা মুশকিল। তখন চোখ মুখ বন্ধ করে ঝপ্‌ করে যেখানে সেখানে বসে যাওয়া। বিছানা থেকে ওঠা কষ্ট, তবু শীতকালই ভাল। ঢট্‌ করে সূর্য ওঠে না। কুয়াশা আড়াল করে ইস্‌ক্রিনের মতো। চমৎকার টাট্টির দরজা হয় কুয়াশা। অবশ্য হ্যাপাও আছে। জমিতে যাদের কাজ তারাও সক্কলে বিহানে ওঠে। কুয়াশা আড়াল ভেব বেশ নিশ্চিন্তে বসেছিল ভূলি বেওয়া। আর একটুক খালাস হতে না হতেই কুয়াশা ফুঁড়ে উঠে আসে দুই হুমদো মরদ। হাঁক পাড়ে—উঠ্যে আয় নবাবজাদি। মাথার জমি কিনছ, পাছার জমি-- পিচ্ছাব, হাগার জমি কিনতি পার না?

ভুলি উঠবে কি–পেট খোলসা হয়নি। আরও কিছুটা হবে। পর পুরুষ দেখে অভ্যাস মতো মাথার কাপড়ে হাত উঠেছিল তার। অ্যাতো বিহান, তবু এরা ঠিক তক্কে তক্কে চলে এল। অন্যের জমিতে হাগা নিয়ে রোজ কাজিয়া। কাল একরামের বউকে দূর থেকে ঢিলাইছিল। মাথায় খুব লেগেছিল, কানতে কানতে এসেছিল বউডা। আজ ভুলির পালা। ভুলি ডাকাবুকো।

খাড়া থাকবে। একটুও শরম থাকবে না? ভুলি ওঠে না। আসলে উঠতে পারে না। মরদ দুজন চ্যাঁচায়—কানে কি কথা যেছে না? শালি বেজন্মার ঝাড়–উঠে আয়—ভুলি এইবার মারাত্মক ভুল করে। বিনবিনিয়ে কেঁদে, হাত জোড় করে লরম বাক্য না বলে, গলা ওঠায়—যেছি। যেছি। সামনে খাড়াও ক্যানে। সরি দাঁড়াও। শরম নাই! 

ব্যাস আর যাবে কোথায়। ঢিল নয়। বাক্যির তোড় নেমে আসে

—আয়। শরম দেখাচ্ছি আয়। শাড়ি খোল। গাঁড়ে পাসনি ভরে দেব। আয়।

বেচারি ভুলিকে ঘুসকিটোলা অবধি দৌড় করিয়ে, গায়ে হাতও উঠিয়েছিল জমির মালিক আর তার লোকজন। সালিশি বসেছিল। অর্থাৎ সেই সকালে কুয়াশাই হয়েছিল ভুলির কাল। সুয্যি ঠাকুরের দাপট থাকলে—সে দেখতে পেত মরদদের। জমির আড়ালে পালাতে পারত। 

আর পিয়াঙ্কা কুয়াশাই চাইছে জ্যৈষ্ঠের ভোরে। কারণ কুয়াশা হতে পারে তার টাট্টির দরজা। কুয়াশা হতে পারে তার কুশি আসা শরীরের ত্যানা। উদোম হয়ে সে আকুন্দ ঝোঁপের আড়ালে বসেছে। অন্য ঝোঁপের আড়ালে হয়তো অন্য কেউ। সূর্যির চুলাখানা এখনও জ্বলেনি আকাশে। চারদিক কেমন সবুজ হিম। তার ছোট্ট পৃথিবী। মা, বাবা, জেঠি, কাকী, ভাই পড়শি—তাদের হাজার কাজের জগতে পিয়াঙ্কা আলাদা ভাবে চোখে পড়ার নয়। কিন্তু বিরাট সবুজ খেত আর মাঠের ওপর অনেক অনেক দূর অবধি ডানা মেলা আকাশের নিচে বসে কখনও সে একা হয়ে যায়। হাত পা কাঠিকাঠি, চিমসি। ডিগডিগে পিয়াঙ্কা—ক্লাস ফোর কেন ফাইভ অবধি খালি গায়ে ঘুরেছে। কিন্তু এখন একটু যেন কেমন কেমন লাগে প্রাইমারির ড্রেসটা তার একমাত্র ডিজাইনের ফ্রক—নীল ঘের, ওপরটা চেককাটা। এখন হাইস্কুলের ড্রেসের বাইরে ওটাই তার একমাত্র জামা। ক্লাস ফোরে পাওয়া জামাটা একটু বেঢপ ছিল তাই গায়ে এখনও হয়, ছেড়েওনি। সে চাইছিল মা, জেঠি, কাকী, কবিতাদির মতো ছোঁয়া কাপড়। বাতাসে গোঁজা থাকবে ছোঁয়া কাপড়। ওটা পরেই মাঠে যাবে, হেগে এসে বাড়িতে জ্বলখরচ করবে। তারপর সবার মতো সেটাকে বেড়ায় খুঁজে রাখবে। তো মা সকালে উঠেই যা মুখ ছুটাল। সে নাকি এখনও ছোট, কুলের বিচির মতো বুক। বছর দুই হল চেথরুটোলা থেকে এখানে আসা অবধি মায়ের মাথা খারাপ। প্রথমে তো প্রায় বছর খানেক প্লাস্টিকের তলায় বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার ধারে। তারপর এই ফিল্ডের জমিতে ঘর। বাপ মিস্ত্রির জোগানদার। কোলের ভাইটা বছর দেড়ের। মা কি নজর দেয় তার উপর আগের মতো? কোলে পিঠে হাত রাখে? কাছে বসলে, চোখ থাকলে বুঝতে পারত মোটেই ছোট নয় সে। রোগাটে গড়ন, চট করে মায়ের সামনে খালি গা হয় না —মাঠে যাবার সময় দুইহাতে বুক চেপে হনহনিয়ে মাঠে নামে। লোক তো যে কোনওসয়য় যে কোনও মাটি খুঁড়ে সামনে আসতে পারে। কাউকে দেখলেই দে ছুট–পালাবে পিয়াঙ্কা। চুরচুরিয়ে দৌড় লাগাবে। লোক নেই কিন্তু কীরকম বাতাস লাগে গায়। একটা ভারি নদীর বাতাস। গাঙের মতো। আর কেউ নেই তো কী, হাঁটার সময় খেতের ভুট্টা বা পাটের পাতাগুলো বুকে লাগে। ফড়িং আর পাখির ঝাঁক, দূরের আকাশ কখনও নীল, কখনও কালো। পিয়াঙ্কা কুঁকড়ে যায়। 

বাড়ির বাইরেও সে একটু একটু বড় হচ্ছে। প্রাইমারি ছাড়িয়ে এখন সে হাই ইস্কুলে। তিন চার মাইল হেঁটে ইস্কুলের পাকা ঘরে বসে। কোনওদিন পাখার তলায়, কখনও ডিহি কিনে যারা ঘর দিয়েছে তাদের বাড়ির মেয়ের পাশে। যাদের বাড়ি এখনও ভাঙনে যায়নি, কখনও তাদের পাশাপাশিও বসে। ক্লাসে কেউ কেউ তাদের মতোই বি.পি.এল.। আবার কেউ জানে বি.পি.এল. মানে রঙিন টিভি। বি.পি.এল. কথাটা এখন এই নতুন পাড়ায় খুব চালু। গরিব গরিব গরিবেরও নীচে যারা তাদের জন্য কার্ড হয়। সস্তায় চাল হয়। পায়খানা বানানোর জন্য ২২৫.০০ দেয় সরকার—বাকি ২২৫.০০ নিজেরা দিলে একটা ফিটকরা হাগার টয়লেট হয়। টয়লেট কথাটা পিয়াঙ্কা জানে। পিচ্ছাব করতে যাব বললে, দিদিমুনি শেখায় টয়লেট বলবে। পিয়াঙ্কা আর মানসী দুই বি.পি.এল. এই নিয়ে কথা বলছিল সেদিন। ২২৫.০০ জোগাড় করতে না পারায় তাদের দুজনেরই মা, বাপের চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করেছে সেদিন সকালে। তখনি ভব ঠাকুরের নাতনি জানিয়েছিল তাদের বি.পি.এল আছে-- কালার টিভি। সারাদিন নাচগান হাসি কান্না হয়—সবই রঙিন। ভব ঠাকুরের বাড়ির টিভিতে উৎসাহ পায়নি পিয়াঙ্কা, মানসী।

ভাঙন, দুর্গতি, পায়খানা, জল বি.পি.এল, কার্ড এসব নিয়ে বাপ-মা, পাড়ার লোকের হা-হুতাশ আর হুজ্জোতির মধ্যে ভব ঠাকুরের নামটা বারবার উঠে আসে। তারও চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা হয়। চৌত্রিশ বছর ধরে হ্যান্টায় মেলা টাকা নদীতে ফেলার পর দুবছর আগে সরকার পুনর্বাসনের জন্য ৮০০ পরিবারকে দু-কাঠা করে যে জমি দিয়েছে, তার মালিক ছিল ভব। ৩০ হাজার টাকা বিঘা জমি সে দালালকে বিক্রি করেছে ৪০ হাজার করে। দালাল সরকারকে বিক্রি করেছে ৫০ হাজার করে। যারা জমি পাবে তারা জমি পছন্দ করবে নিজেদের মতো। জমি বিক্রির আগে ভবর কত লেকচার। রাস্তা, জল সব সমাধান সে করিয়ে দেবে পার্টিকে ধরে। বিক্রির পর তার কোনও ঠিকানা নাই। মেয়ে জামাই গাঁয়ে থাকে—চোদ্দ বিঘায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কামিয়ে সে ডুব মেরেছে শহরে। কুপির তেলে টিভির স্বপ্ন দেখা যায় না। কিন্তু উদোম গায়ে হাঁটতে হাঁটতে বা দৌড়তে দৌড়তে পিয়াঙ্কা যেন তার এই বন্ধুদের সামনেও চলে আসে বা দিদিমুনির সামনে—আর কুঁকড়ে যায়। সবার সামনে সোজা হয়ে মাথায় মাথায় দাঁড়াবার জন্য সে ছোঁওয়া কাপড় দাবি করেছিল। কিন্তু মা, এমন খেঁকিয়ে উঠল ছোঁওয়া কাপড়ের কথায় যেন সে দুবেলা পেটপুরে ভাত খাবার আব্দার করছে। ছোঁওয়া কাপড়ের আচার হেঁদুদের মদ্দেই, মুসলমানদের অত বালাই নাই। আচারে বিশেষ, লাভও হয় না। হেগো পাছায় মাঠ থেকে ঘরে ফিরতে হয়, জলের অভাবে ছোঁওয়া কাপড় কাচাও হয় না। কাপড় পরে পায়খানা করে আসলে অতটা অসুবিধা হয় না যতটা হয় ইজেরে। সায়া বা কাপড়ের মতো শুধু কোমর আটকানো গোল পোশাক নয়। দু-পায়ের মাঝখানে সেলাই থাকার জন্য জল খরচ না করে প্যান্ট পরে ঘরে ফেরা বেশ মুশকিল। সব সময় মনে হয় এই বোধহয় প্যান্টে লেগে গেল। সুতরাং শুধু ওপরের জন্য তার অস্বস্তি তা নয়। নীচও যথেষ্ট ভোগায় তাকে। ইজের খুলে লজ্জা স্থান ঢেকে সে ভো দৌড় মারে বাড়ির দিকে।

পিয়াঙ্কা ধলা। মাথায় কালো কালো বাবরি চুল কাঁধ অবধি। শাপলা ফুলের নাগাল চোখে বুদ্ধির ঝলক। ক্লাসে চটপট পড়া দেওয়া, নেওয়া পারে। টাউন থেকে আসা ফর্সা শাড়ি জামা পরা রংচঙা দিদিমুনি কাছে ডাকে। উৎসাহ দেয়। পড়া চালিয়ে যাবার কথা বলে। পিয়াঙ্কাকে বিশেষভাবে বলে কারণ তার নাকি মাথা ভাল, পড়লে হবে। নিয়ম করে দুবেলা পড়তে বসবে। কুপিতে তেল নাই, শুনে দিদিমুনি একবেলায় বসার কথাই বলেছেন। কত কী জানতে চান দিদিমুনি—সকালে উঠে কী কী কর? বাড়িতে দেখবে ছেলেদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় বাবা, মা। তাদের পড়তে সময় দেয়। তোমরাও সময়ে বের করে নিতে শিখবে। মাঠ থেকে ঘুরে এসেই বই নিয়ে বসা হয় না। ভাইকে ধরতে হয়। তার হাত পা হয়েছে, শুধুই বাইরে যেতে চায়। বই নিয়ে জোরে জোরে পড়লে–ভাই থাবড়া মেরে বই ছিড়বে। বই ছিড়লে নতুন বই হবে না। পিয়াঙ্কা তখন গোছ করা বিড়ি পাতা কাটে মেপে মেপে। মশলা ভরে না। পাতা কেটে কৌটায় রাখে। তখন ভাইটাও কেমন বোঝে—৫০০ বিড়ি বাঁধলে ১৫.০০, ভাই পাতা ছেড়ে না। একদিনে ৫০০ বাঁধা যায় না। বিকেল থেকে বসে পরের দিন ১১টার মধ্যে একভাবে কাজ করলে মা পারে। সেটা হয় না। মাকে সাহায্য করতে, মায়ের ছেলে ধরতে কি আতুর ওঠাতে, সংসার চালাতে বিড়ির কাজ হাতে নিয়ে লেখাপড়া ডকে ওঠে। ফাইভ এর পর ইস্কুলে ভাগা পার্টি প্রচুর। দিদিমুনি সত্যিই ভাবে তার জন্য বারবার বলে, কখনও পড়া ছাড়বে না। অসুবিধা হলে বলবে। মা, বাবাকে দেখা করতে বলবে। আমিও যাব একদিন। 

তাদের বাড়ি এলে পিয়াঙ্কা বসতে দেবে কোথা? বাড়ির পাশের আমগাছে একটা মৌচাক। বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিল, তোমাদের যেমন বসার ঘর, খাবার ঘর থাকে—মৌমাছিদেরও থাকে। তাদের বসার ঘর নাই। দিদিমুনি তবে কোথায় বসবে? উদোম হয়ে যখন সে সকালবেলায় ফিরছে। আসলে দৌড়চ্ছে। যেন সবাই জেগে উঠেছে—আকাশ, বাতাস, পাটের খেত, মকাই-এর সবুজ ফসল, বুলবুলি, সুয্যি ঠাকুরের সঙ্গে তার ক্লাসের মেয়েরা এমনকী দিদিমুনিও যেন তার অপেক্ষায়। পাটখেতের মাথায় কিছু হলুদ মৌমাছি। তাদের যে রানি ঘন হলুদ শাড়ি পরা দিদিমুনির মতো। পিয়াঙ্কা একবার ভাবে মৌমাছি যখন, তখন তো মৌচাকের সবচেয়ে ভাল ঘরে তাকে নিয়ে যাওয়াই যায়।

কিন্তু ততক্ষণে মৌমাছিটা হলুদ শাড়ি পরা দিদিমুনি হয়ে তাকে থামতে বলে। ডাকে—প্রিয়াঙ্কা 

দাঁড়াও তোমাদের বাড়িতেই যাচ্ছি। প্রিয়াঙ্কা ডাকটা তার কানে নতুন লাগে—সবাই পিয়াঙ্কা ডাকে। কিন্তু তবু সে ডাকে সাড়া দিতে চায় না। সে যেন তড়বড়িয়ে বলে—আমাদের বাড়ি যাবা কিন্তু কোথায় বসবা, কীভাবে বসাব। মৌমাছিদের ঘর খুব সুন্দর। সেখানে বসবা? কিন্তু দিদিমুনি কি মৌমাছি। সুতরাং পিয়াঙ্কা দিদিমুনিকে ফেলে ছুটতে থাকে। বসার ঘর নাই। তাছাড়া সে উদোম। শুধু দিদিমুনি নয়, যেন সারা ক্লাস দেখছে। পিয়াঙ্কা ছুট দেয়, গড়মুড় করে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে আছড়ে পড়ে জোরে। জল খরচ হয়নি, প্যান্ট পরেনি, মেয়ের মুখচোখ সাদা। কুন পাকে গেছিল-- কী হল? সে একবার বলে মৌমাছি, একবার বলে দিদিভাই। মায়েরও বেগ পেয়েছিল। একটু পরে ধাঁ ধাঁ করে সূয্যি উঠবে। মেয়ের মুখে মা কোনোরকমে দুই একবার জল ছিটায়। মগে জল রেখে জল খরচ করতে বলে, তারপর হাঁটা দেয়। যাবার আগে হাঁক দিয়ে যায় জায়ের ঘরে।

পিয়াঙ্কার জেঠি পাশাপাশি থাকে। কাঠি কাঠি পা নিয়ে জেঠির ধামড়া ছেলে রিদয় বসে থাকে দাওয়ায়। দাওয়ার চালে সারিসারি ভুট্টা ঝুলছে। চারব্যাটার মদ্যি দুইজন বিয়ে করে আলাদা, সেজটা উদয়। বিয়ে করলে আলাদা হবে। এখন মায়ের সঙ্গেই। দিন মজুরি খাটে (৫০ টাকা হিসাবে। ফসল কাটতে গেলে টাকা পায় না। ১০ মণে ২ মণ হিসাবে জিন পায়—ভুট্টাগুলো সে ভাবেই পাওয়া। পিয়াঙ্কা ততক্ষণে প্যান্ট পরে ফেলেছে, জামা পরেনি। জেঠি সুভদ্রা তার মুকুলিত বুক দেখে, শরীর খারাপ শুনে ভাবে মাসিক হয়েছে। প্যান্টে রক্ত লেগেছে কিনা জানতে চায়। ও সব কিছু না। তবে? পিয়াঙ্কা কি একটু বানিয়ে বলে? বলে আমগাছে নাকি ঘরের কোটায় বিরাট মৌচাক। বলে খোপে খোপে কত মধু। বলে কার যেন মধু ভাঙছে ধোঁওয়া দিয়ে। তারপর ফাঁকা কত ঘর। বলে, তারপর মৌমাছিদের রানি আমাদের থাকতে দেছে। চেথরুটোলায় পিয়াঙ্কাদের কোঠায় সত্যি বড় একটা মৌচাক ছিল। কত কী ছিল। তারা গরিব, তাদের নিজেদের যৎসামান্য ছিল। কিন্তু পাড়া ছিল। বসতি ছিল। গ্রাম ছিল ভিখিরি হয়ে, খ্যাদা খেয়ে লজ্জার জীবন নয় বরং জলের তলায়, পাতালপুরীতে মা গঙ্গার গড়ের ভেতর তারা আছে—এইরকম ভাবলে কি একটু স্বস্তি হয়! পিয়াঙ্কার দৌড়ে ছুটে আসা—মৌমাছি অথবা দিদিমুনির কথা বলা—ডাঙার দেশ হলে কত জিনপরী ভূতের গপ্পো চেপে বসত। ঝাঁড়ফুক হত। সেই সময়টুকু তারা পায়। অনেকেই পায়। যাদের ডিহি আছে। জমি আছে, ঘর আছে। ভিটেয় বাস করে, ক্ষিধার জ্বালায় মরতে মরতেও, শুধু জল খেয়েও মানুষ কত স্বপ্ন দেখে। গপ্প বানায়। ভগবানের পিথিবীতে কত জায়গা। মানুষ থাকে। পাখি, পশু, কীটপতঙ্গ কত কে থাকে। বড় মানুষের পাশে তাদের মতো গরিবেরা পোকার নাগাল। কিন্তু নিজে নিজে ডিহিতে সবাই নিজেই রাজা। আর ভিটে ডুবে গেলে তারা ভিখিরি হয়ে যায়। সরকার ভগবানের মতো দয়াবান। তাদের ২কাঠা করে জমি দেন। মাথা গোঁজার ছাদ বানাও নিজের নিজের মতো। বানাই কিন্তু জল যে নাই। জল বানাও। পারি না। পিসাব আর হাগার জায়গা নাই। পায়খানা বানাও। পারি না।

তো ছোট। সকাল থেকে শরীর ঝাড়তে ছোট। মাটির জলে বিষ--নলকূপ দিয়ে যে জল ওঠে তাতে আয়রন আর আর্সেনিক। তো সেই জল খাই না কিন্তু কাচাকাচি, ধোওয়া পাকলা করি। আর খাবার জল আনতে যাই ঘুসকিটোলায়। সাইকেলের হ্যান্ডেলে খুরা লাগিয়ে জল আনতে ছোট কখনও ১০০ মিটার কখনও ৫০০ মিটার বা এক হাজার মিটার। তাও ছুটি। তবে আর কী! এর মধ্যে তেনারা থাকতে পারেন? ভূত পেত্নী দত্যি দানোর গল্প পালায়। 

পিয়াঙ্কাও সামলে নেয় সব মৌমাছি আর পাতালপুরীর গজ্ঞদের। মা ফিরলেই, সে ঘুসকিটোলায় রওনা হয় জল আনার জন্য। বড় পারে না, নেয় মাঝারি দুটো জলের জ্যারিকেন। সবাইকেই যেতে হবে সুতরাং সঙ্গীর অভাব হয় না। আর্সেনিক মুক্ত জল যা লোকের মুখে সংক্ষেপে আর্সেনিক—জল তা দেওয়া হয় সকালে দু ঘণ্টা, আরও দু বার দুপুরে বিকেলে। প্রতিবারই লম্বা লাইন। বাড়ি যাদের কাছে বোতল বোতল, বালতি বালতি জল নেবে। তিন টাইম জল দিলে তিন টাইম নেবে। সকাল হতে না হতেই ঝাঁ ঝাঁ রোদ। শরীরের রক্ত শুষে নেওয়া তেজ। পিয়াঙ্কা, মানসী, কবিতাদি ঝটপট পা চালিয়ে এগোতে থাকে। আগে পিছে সুভদ্রা, অনিমার সঙ্গে হাসিবা আর রুকসানা বিবিও চলে। কোনও কারণে আর্সেনিক জল আসে না—তারা ঘণ্টা খানিক অপেক্ষা করে। আরও অপেক্ষা করতে চায়। কিন্তু জল কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। সুতরাং তারা ঘরের পথ ধরে। জলের লাইন দিয়ে কাজিয়ার উত্তেজনা না থাকায় তাদের শরীর-জ্যারিকেনটি ঢবঢব করতে থাকে। পাইপ নিয়ে যখন জল আসে আর শূন্য পাত্রটি ভরে ওঠে—দিন শুরুর কিছুটা মানে বোঝা যায়। জলের অপর নাম জীবন। জীবনটি ভরে ওঠে পাত্রে। জীবনটি গড়িয়ে যায়। জলভরা নয়, খালি পাত্র বয়ে আনতে প্রচুর ক্ষিধা পায়। ভাঙন মানুষদের কলোনি বরাবর দু-দুটো খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ঢিলাচ্ছে রাজু, খেতু আর মানিক। পিয়াঙ্কাও ঢিলায়। রাজু গাছে উঠে খেজুরের এক কাঁদ মাটিতে ফেললে হই হই করে ছুটে আসে কিলবিলে বাচ্চার দল। বাচ্চাদের সঙ্গে পিয়াঙ্কাও খেজুর খেতে থাকে। একটু কষা কষা তবু বেশ খেতে!



দুই


লাভের মদ্যি লাভ উঠোনের মাঝে ছোট্টখানি আমগাছ। ঝেঁপে আম আসে। ছায়া হয়। দুপুরে গাছের তলায় পাক করে উকলেমা বিবি। বৈশাখের ঝড়ে টালি ভেঙে উড়ে গেলে পাকঘরের মাথা বেবাক ফাঁকা। পলিথিন দিয়ে ঢাকা বাঁশের চালে বেশ বড়সড় একটা আচারের শিশি শুকোচ্ছে। ঝড়ে পড়া আম বেশ করে হলুদ নুন মাখিয়ে রোদে দিয়ে তেল, পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে জড়ানো। মশলা মাখানো বাকি। উকলেমা রাঁধে ভাল। বাড়ে ভাল। মুখও চলে ভাল। রান্না করা বা কুটনো কাটার সময় তার মুখ ও হাত সমান তালে চলে। 

এক একদিন এক একটা বিষয় নিয়ে পড়ে সে। দু দিন আগে শেষ রাতে প্যাট মোচড় দিয়ে দুইবার মাঠে ছুটেছে উকলেমা। ফেরার পথে গাড্ডায় পা পড়ে পায়ের পাতা ফুলে ঢোল। সেই রাত থেকেই সে তুলোধোনা করেছে ভাতার মন্টু আর ফিল্ডের ৮০০ ঘরের পুনোবাসন (পুনর্বাসন) কলোনির সব মরদদের। তাদের অপরাধ সরকারের কাছ থেকে মাগনা জমি পাবার কথায় তারা সব নাচতে নাচতে চলে এসেছে। উঁচা কি নিচা কেমন জমি তা দেখেনি। এটা একটা থাকার জায়গা—মানুষ থাকতে পারে। বর্ষায় বুক জল অথচ খাবার জলের জন্য ঢুঁরে মর। মা গঙ্গার গভ্‌ভে, কোলের কাছে তারা মাটিজলে খলবলিয়ে-ই ছিল। কিন্তু খাবার জল ছিল। পেটের খাবারের চিরদিনই টানাটানি। হাগামাতার জন্য ঝাড় ছিল, গত্তো ছিল। এখানে খাবার জল হাঁটা চলার রাস্তা এমনকী হাগামোতার জায়গাও নাই। এ কুন ফ্যাসাদ। ফুলে ঢোল পা ছড়িয়ে উকলেমা কড়াইয়ে চাপানো ডাঁটা নাড়ে। ঢিমে আঁচে হলুদ নুন মাখানো ডাঁটা তার বিলাপ প্রলাপে রসস্থ হয়। ডাঁটা নাড়তে নাড়তেই সে শিলনোড়ায় রসুন লঙ্কা আর সর্ষে ডলে। তার ঘর থেকে হেলথ সেন্টারের বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। কষ্টেসৃষ্টে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তা ধরে সেখানে যাওয়া যাবে না। রাস্তা নাই। পাগার দিয়ে তারা হাঁটতে পারে। কিন্তু মাঠের পরে একটা বুড়ি ডোবা। একটা কালভার্ট করে সেখানে দিয়েই রাস্তা ফোটানোর কথা ছিল। দুবছরেও হল না। ভোটের আগে বাবুরা বলে গেল হবে, হবে, ভোট দাও হবে। ভোট হল। জেতা হল। এখন রাস্তার অপেক্ষা। হেলথ সেন্টারের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ। লাল পতাকার মতো কৃষ্ণচূড়া দুলছে—উকলেমা পায়ের ব্যথায় অস্থির হয়ে ওঠে। হেলথ সেন্টারের ওষুধ খেলে হয়তো পা-টা তাড়াতাড়ি সারে—কিন্তু সিকি মাইলের রাস্তায় পৌঁছানর জন্য দুই মাইল রাস্তা ঘুরে যাওয়ার কথা মনে হতেই তার সর্বাঙ্গ জ্বলে।

বাপের ওপর রাগ হয়। ছোট বিটির জন্য আসমান থেকে কেমন জামাই ঢুঁরে এনেছে। দ্যাখো। কী? না শিক্ষিত! মাধ্যমিক ফেল! ঝাটা মারি অমন শিক্ষার মুখে! কত গববো। ছোট থেকেই আমার পড়ালিখার দিমাক—কী বাত ভাতার মন্টু সেখের। পড়ালিখায় দিমাক তাই বাপের কাজে ঘি। ছোট থেকে মিস্ত্রির কাজ কিছু শিখল না। তাতে কার ক্ষতি বাপের না মায়ের? ক্ষতি তো উকলেমার। লিখাপড়া জানা কাঠের মিস্ত্রির পরিবার সে কখনও গরিবের গরিব হয়ে ফুটাপ্লাস্টিকের ঘর থেকে মরতে এই ফিল্ডের জমিতে আসে? ছপ্পর খাটের কাম জানে না। ইংলিশ ডিজাইন জানে না—বেকম্মার বেকম্মা। আর কী ভালমানুষি ভরা মুখ। শুধু নিজের ভাতার নয় ফিল্ডের জমিতে থাকতে আসা যত সব আখাম্বা পুরুষ—তাদের উপরেও রাগ উকলেমার। ভবঠাকুর বললে যে এই জমি নাও--১৪ বিঘা জমি, সব এক ঠেরে থাকবে। অমনি ভিখিরির দল হাঁ করে রাজি। একবার দেখবি না জমি উঁচা না নীচা, বর্ষা এলে কী হবে? বর্ষার কথা মনে হতেই হুতাশ লাগে। ফোলা পা শিল থেকে মশলা উঠিয়ে কড়াতে ঢেলে জোরে জোরে নাড়তে থাকে। সমস্ত পিথিবীকে, অকম্মা মন্টুকে, গরিবের গরিব বুদ্ধর বুদ্ধ ফিল্ডের ব্যাটাছেলেদের আর নিজের ভাঙা কপালক নাড়তে থাকে জোরে। রান্না হয়ে গেলে তার রাগগুলো থিতিয়ে যায়। গাল শুনছে কে ? ঘরে মানুষ নাই। আমগাছের আমগুলো তার গালমন্দ শুনে শুনে রং ধরিয়ে ফেলল। উকলেমা বিড়িপাতা কাটতে থাকে দ্রুত। মন্টু ভোরে গেছে পাট খাটতে ফিরবে সাঁঝে। খাবার জল কে আনবে? আর হাগা পেলে মাঠে যাবার কথা মনে এলে সে পায়ের ব্যথায় কাঁদতে থাকে। তবু হাত চলে। হাজার বিড়ি বাঁধলে ৩০ টাকার লক্ষ্যে হাত চলে দ্রুত। পেটের আগুন, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, ডাক্তারবদ্যি কতরকম কারণে হাত চালাচ্ছে এই মৌজার বউবিটি। প্যান বসানোর ২২৫.০০ জোগাড় করতে হাত চালাচ্ছে কেউ কেউ। প্যান কেউ কেউ বসিয়েছে। পাঁঠা দেখানো করে ভালই কামায় হাকলু মণ্ডল। গাভীন করতে ছাগল প্রতি কুড়ি, তিরিশ, পঞ্চাশ নেয়। সে প্যান বসাল। মাটি নরম এখানকার। ছ'মাসেই ইঁদুর মাটি কেটে প্যান বসিয়ে দিয়েছে। ওসব চক্করে যাবে না উকলেমা। গাঁয়ের গরিব মানুষের বাড়ির পেছনে আগার পাগার কত গত্তো, বাঁশ ঝাড় থাকে। এখানে কিছু নাই। শহরের বাবুদের মতো শক্তপোক্ত টাট্টি দেবার পয়সা জীবনে হবে না। উকলেমা কিনবে হারিয়ে যাওয়া বাঁশঝাড় আর গত্তো। আল্লার দেওয়া ফেকা জায়গা পয়সা দিয়ে কিনতে হয়, এমন দিন আসবে যে রোদ বিষ্টি কেনার জন্যও তাকে খেটে মরতে হবে। খররোদে ব্যথা-পা মেলে উকলেমা খুব করে বিনি পয়সার রোদ খায়। ব্যথা পায়ের চুন হলুদ হয় রোদ।

বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ ধম্মে মাস, কত পুজো পাট ছিল এক সময়। কিন্তু রংচঙিয়ে ব্রতপুজো। হয় না এখন। বিহা হলে বাপেরবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি এলে যেমন, সেইরকম নতুন কন্যা আমরা-- নিজেদের বিপাকের কথা বোঝাতে এ কথাটা পিয়াঙ্কার মা শিউলি খুব ইনিয়ে বিনিয়ে বলে। ষষ্ঠী পুজো কি মঙ্গলচণ্ডীর একটা দুটো ঠ্যাকা দেওয়া উপোস করার দিন বলে। যেন বলতে চায়, ঘরডোবা মানুষদের পুজোর ঘটা রংচং কিছু নাই। মাগো, মনে নিও না কিছু। পুজো শেষে ঠাকুরের কাছে কি চায় শিউলি? নির্ধনের ধন, নিপুত্রের পুত্র, গোলাভরা ধান আর পুকুরভরা মাছের মতো চিরকালীন পুরেনো চাওয়াগুলো এই নতুন বাপের বাড়িতে পালটে যায়। এত যে ঘিন জীবন। মনে লাগে, বসুমতী ফেটে যাক্‌—ফেটে গেলে ভেতরে সাইন বো। কী লজ্জা কী লজ্জা! মাঠে বসি, ঢিল মারে। গালি পাড়ে। ছেলেমেয়ে নিয়ে হাঁড়ি চড়ে না, হাগার প্যান কিনার টাকা কুনঠে মিলবে। মেয়েটা ডাগর হচ্ছে, জামা চায়। মঙ্গলচণ্ডীর ঘটে মাথা ঠোকার সময় শিউলি বিড়বিড় করে একটা বি.পি.এল, প্যান আর পিয়াঙ্কার জন্য একটা ছোঁওয়া জামা চায়। যেখানে গেলে কাপড় ছোঁওয়া হয় সেইরকম একটা নিষিদ্ধ জায়গা চাওয়ার লজ্জায় মেয়ের জন্য একটা নতুন জামাও সে চাইতে পারে না ঠাকুরের কাছে। আগার পাগার চাইবার অপরাধে বার বার গড় করে। 

শুধু সে। সে পিয়াঙ্কা, খরা দেশে প্রথম বৃষ্টির তৃষ্ণায় চোখ তুলে দেখতে পায় তাদের বাবুই বাসা অথবা মৌচাকের নাগাল ভিটে। গুচ্ছেক কষা খেজুর আর কাঁচা ভুট্টার দানা খেয়ে তার পেট মোচড়ায়। আলো আঁধারি জমিতে বসে পেট খোলসা করতে করতে সে জোনাকি দেখে। বাবুই পাখিরা এই সব জোনাকি গোবরে গুঁজে, কেমন চমৎকার আলো জ্বালায় তাদের ঘরে। মৌমাছিদেরও কেমন বসার ঘর হয়। বসার ঘর যখন হয় তখন নিশ্চয়ই টয়লেটও হয়। পিয়াঙ্কা এইরকম একটা পাখি বা পতঙ্গের বাসা চেয়ে ফেলে। দেখে তলিয়ে যাওয়া বাড়ির আম গাছে বিরাট মৌচাক ঝুলে আছে। খোপে খোপে মধু। দেখে কুঁজোর মতো ওলটানো বাবুই বাসায় আলোর জোনাকি। যেন সেই প্রথম দেখে আর কেউ কখনও দেখেনি। আবিষ্কারের আনন্দে তার সব কিছু নতুন লাগে। তাদের বি.পি.এল. পৃথিবীর মানুষদের কোনও রং নাই। চোখও নাই। সে পালটে যাচ্ছে কেউ দেখে না। তার উদোম ডিগডিগে সাদা কালো শরীর কেমন রঙিন হয়ে উঠছে অজানা কুশির গন্ধে। মা-ও দেখে না। সবার চোখ ফোটে না দেখার। আর কিছুদিনের মধ্যে যার শরীর জুড়ে অলৌকিক মৌমাছি আর জোনাকির ভিড় হবে শুধু সেই, এইসব আশ্চর্য রূপকথা দেখতে পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ