রাজেশ কুমার'এর গল্প : দি প্রেসটিজ

অন্ধকারেরও একটা নিজস্ব আলো থাকে। সেই আলোয় চোখ জ্বালিয়ে বসেছিলাম। পেট্রোলভ্যানের মধ্যে। আসলে অপেক্ষা করছিলাম। কয়লা বোঝাই কিছু ট্রাক পার করাতে হবে। আমার থানা এলাকা পেরিয়েই চেকপোষ্ট। তারপরই শুরু হয়ে যাচ্ছে ঝাড়খন্ড। চেকপোষ্টের আগে অবধিই আমার ডিউটি। ওপরতলার আদেশ আছে তেমনই। 

বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। বারোটা বাজতে তখনও মিনিট দশেক বাকি। তার ওপর ডিসেম্বর মাস। ঠান্ডাটাও পড়েছে জাঁকিয়ে। চারদিক শুনশান। থেকে থেকেই ছুটে আসছে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া। জায়গাটা লোকালয়ের বাইরে। বাইপাসের একদম কাছাকাছি বলা যেতে পারে। এদিক ওদিক ছড়ানো ছেটানো গাছপালা। মাথার ওপর মরা চাঁদ। মাঝে মধ্যেই দূর থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে কিছু আওয়াজ। মালগাড়ি শান্টিং, বোমা চার্জ। কুকুরের একটানা কান্না। শিকারী পাখিদের তীক্ষ্ম চিৎকার। রাতের নীরবতায় অস্বস্তি ছড়িয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আবার। যেন অদৃশ্য কোনও জগৎ তার জেগে থাকার জানান দিচ্ছে। আমার ড্রাইভার আর কনস্টেবল গেছে রাস্তার ওপারে। গার্ড দিতে। আমি তাকিয়েছিলাম আকাশের দিকে। মনে মনে একটা ট্রিক ভাবছিলাম। ম্যাজিক ট্রিক। হারিয়ে যাওয়া কোনও মৃতদেহকে আবার ফিরিয়ে আনা। ম্যাজিকের ভাষায় ‘দি প্রেসটিজ’। লাস্ট স্টেপ অফ আ ট্রিক। ম্যাজিসিয়ান যখন নিজেরই ভ্যানিশ করা বস্তুকে পুনরায় ফিরিয়ে আনে। দর্শক হাততালি দিয়ে ওঠে আনন্দে। আমি শখের জাদুকর। যে কাউকে যখন তখন চমকে দিতে পারি। আমার কলিগরা অবশ্য অন্য কথা বলে। শুধু নেশা নয়, পেশাতেও আমি ম্যাজিসিয়ান। যে কোনও কেসের রং ইচ্ছা মতো পালটে দিতে পারি। তবে এখন অবশ্য শখ নয় ট্রিকটা দরকার নিজেকে বাঁচাতে। কখনও কখনও এমন হয়। নিজেরই গায়েব করা লাশ তাড়া করে ফেরে নিজেকে। থাক সেসব কথা। হঠাৎ কানের কাছে কে যেন বলে উঠল, আমার কেসটা কিন্তু ভুলবেন না স্যার! তাহলেই বিপদ। মনে রাখবেন আপনার হাতে আর দু’দিন মাত্র সময়। চমকে তাকালাম। যা অনুমান করছিলাম ঠিক তাই। দেখি সেই মেয়েটা। এই নিয়ে তিন তিন বার। কালো। মাঝারি গড়ন। দেখতে নিতান্তই সাধারণ। কিন্তু চোখদুটো অন্ধকারেও যেন হিংস্র প্রাণী। ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে যে কোনও সময়। তড়িঘড়ি হাত নিয়ে গেলাম কোমরে। বেল্টের সঙ্গে বাঁধা সার্ভিস রিভালবার। মেয়েটা ক্রূর হাসল। 

- আবারও ভুল করছেন স্যার। ওসব দিয়ে আর কাজ হবে না। অহেতুক একটা গুলির হিসাব দিতে হবে আপনাকে। নয়তো আপনার ওপরওয়ালা ছাড়বে না। 

কথা শেষ করেই অন্ধকারে মিলিয়ে যায় সে। আমি সার্ভিস রিভালবার হাতে ধরেই বসে ছিলাম। কতক্ষণ কে জানে! সম্বিৎ ফিরল ড্রাইভার আর কনসটেবলের ডাকাডাকিতে। 

- কী হয়েছে স্যার! শরীর খারাপ লাগছে! জল দেব। জল!

আমার গলা বুক শুকিয়ে গেছিল। তেষ্টা পেয়েছিল খুব। অনেকক্ষণ পর যেন অনুভূতিটা জাগল। খানিক জল খেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, না কিছু নয়। পর পর তিন দিন নাইট করছি। হয়তো গ্যাস অম্বল থেকে......। ওরা কী বুঝল কে জানে! কথা বাড়ালো না আর। আমি গাড়ি ঘুরিয়ে থানায় ফেরার নির্দেশ দিলাম। 

কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। আমি ম্যাজিসিয়ান। অলৌকিকে বিশ্বাস নেই। জানি সব ম্যাজিকই বিজ্ঞান। ট্রিকটা ধরতে পারছি না শুধু। তার ওপর পুলিশের চাকরি। একটা খুন হয়ে যাওয়া অজ্ঞাত পরিচয় মেয়ে কিছুদিন ধরে তার অধিকার দাবি করছে আমার কাছে। একথা মুখফুটে বলাও যায় না কাউকে। সাহেবের কানে গেলেই ডেকে পাঠিয়ে জিগ্যেস করবে, কী ব্যাপার চৌধুরী এসব কী শুনছি। আজকাল মাল-ঝোল টেনে নাইট ডিউটি মারাচ্ছো নাকি! পুলিশ ডিপার্টমেন্টে পনেরো বছর হয়ে গেল। সবাই জানে মদ আমি ছুঁই না। সিগারেটের মোড়কে গাঁজাও না। তাছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা বলে একটা বিষয় আছে। নিজেই এতদিন যা মানতাম না, গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতাম সেটা অন্যকে বিশ্বাস করানো......। অথচ মেয়েটা আছে। ওকে অস্বীকার করা যায় না কোনও ভাবেই। প্রমাণ আমি হাতেনাতে পেয়েছি। প্রথম দিন ওকে দেখেছিলাম থানায়। এফ আই আর লেখাতে এসেছিল। সেদিন একটা ডাকাতির কেসে পুরো ফোর্স বাইরে। থানায় আমি একা। একটু ব্যস্ততার মধ্যেই ছিলাম। জিগ্যেস করলাম, কী নাম! 

- তনিমা। 

- বাড়ি! 

- সিন্দ্রি। জেলা ধানবাদ। 

ওটা আমার এলাকা নয়, পাশের রাজ্য। ধানবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ কর, বলে একটা ফাইল টেনে নিয়ে বসলাম। টেবিলের ওপর কাগজের পাহাড়। বেশ ক’য়েক দিন ডিসপোস করা হয়নি। মেয়েটা কাতর গলায় বলল, বলাৎকার আর খুন স্যার। লাশ আপনাদের ওই পরিত্যক্ত পুলিশ কোয়ার্টারেই পাওয়া গেছিল। বিকাশ, মুর্তজা আর বলরাম তিনজনে মিলে...। পুলিশ কোয়ার্টার শুনেই তড়িঘড়ি ঘাড় তুলে তাকালাম। কল্যাণপুরে আমাদের একটা চারতলা বিল্ডিং আছে। কনডেমড্। অনেকটা জায়গা নিয়ে। সন্ধ্যের পর ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। তখন অ্যান্টি-সোসালদের আড্ডা। মদ, মাংস, মেয়েছেলে। রাতেরবেলা দুজন কনস্টেবল ডিউটিতে থাকে। কিন্তু তা দিয়ে ওসব ঠেকানো যায় না। ঘরগুলোর একটারও জানালা দরজা আস্ত নেই। ভেতরে বাদুড় চামচিকের বাসা। ভ্যাপসা গন্ধ। মাকড়সার জাল। যাকে বলে হন্টেড প্লেস। তা ওই বিল্ডিংয়েই কিছুদিন আগে একটা বডি পাওয়া গেছিল। পচা গলা। ডিকম্পোজড। অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলা। কিন্তু সে তো আনক্লেমড। কেস অলরেডি ক্লোজড। এ মক্কেল আবার উদয় হল কোথা থেকে! গম্ভীরভাবে জিগ্যেস করলাম, ভিক্টিম কে হয়! মিসিং ডায়রি করেছিলি! মেয়েটা মাথা নীচু করে বলেছিল, আমিই ভিক্টিম স্যার। বাবা নিরসা থানায় জানিয়েছিল। রোজই খোঁজ নিতে যায়। বড়বাবু ঢুকতে দেয় না। 

- তা সেখানে গিয়েই হাজিরা দাও না। 

সকাল সকাল দিমাক চাটা। ব্যস্ততার মধ্যে জাস্ট মাথা গরম হয়েগেছিল। ইয়ার্কি মারার জায়গা পায়নি! মার্ডার কেসের ভিক্টিম। নিজেই ওপর থেকে চলে এসেছে পারস্যু করতে। মনে হয়েছিল কানের বারান্দায় টেনে এক থাবড়া মারি। মেয়েটা এবার সোজা তাকায়। কেসটা তো আপনিই সলভ করেছিলেন। একবার দেখুন না যদি চিনতে পারেন! বলেই মুখটা বিকৃত করে সে। চমকে উঠেছিলাম আমি। চোখের সামনে সেই দৃশ্য। মেঝেয় পড়ে থাকা একটা লাশ। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আগের জন্মের খাবার দাবারও উঠে আসবে পেট থেকে। দেখেই বুঝেছিলাম চার পাঁচ দিন আগের। আইডেন্টিফাই করারও অবস্থা নেই। আশপাশের থানাগুলোতে খোঁজ নিয়েছিলাম। কোনও মিসিং ডাইরি আছে কিনা। সেরকম কিছু পাইনি। তখনই বুঝেছিলাম বাইরেকার মাল। খালাস করে ফেলে গেছে এখানে। একেই বর্ডার এরিয়া। তার ওপর কয়লা খনি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাটিতে কালো কালো গর্ত। কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। এখানে এধরণের ক্রাইম জলভাত। প্রায় সবসময়ই ঘটে থাকে। তাই অপরাধের ধরণ ধারণ সম্পর্কেও আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। সে যাইহোক, বেওয়ারিশ লাশ বুঝতে পেরেই মাথার মধ্যে খেলে গেছিল বুদ্ধিটা। এক ঢিলে দুই পাখি। ইনভেস্টিগেশানের ঝামেলাও খতম, পার্টিও খুশি। কিন্তু সবকিছু মিটে যাওয়ার পরেও যে মেয়েটা এইভাবে ফিরে আসবে তা কী আর আগে থেকে জানতাম! প্রথম দিনের ঘটনাটা মনের ভুল ভেবে সামলেই নিয়েছিলাম। কিন্তু ভুল ভাঙল দু-এক দিনের মধ্যেই। এবার ভরা বাজারে। ‘আর মাত্র পাঁচ দিন স্যার। দয়া করে কিছু করুন। বাড়িতে আপনার সুন্দরী বউ আর কিশোরী মেয়ে। দুজনেই বড় ভাল। ওদের কথা একটু ভাবুন স্যার’। কানের মধ্যে কথাগুলো গরম সীসার মতো ঢেলে দিয়েই ব্যস্ত মানুষজনের মধ্যে মিলিয়ে গেল মেয়েটা। যেতে যেতে পিছন ফিরে হাড় হিম করা হাসি দিয়ে গেল একটা। আমি প্রাথমিক ধাক্কাটা কোনরকমে সামলে নিয়েই নির্দেশ দিলাম সঙ্গে থাকা হাবিলদারটিকে, পাকড়াও উস লড়কি কো! 

- কৌন লড়কি স্যার! 

হাবিলদার রামপেয়ারে সিং অবাক গলায় জিগ্যেস করল। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কী উত্তর দেব। সেই মেয়েটা যাকে অপহরণ এবং হত্যার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সুবিমল মিশ্রকে নাকি সেই মেয়েটা যে এইমাত্র আমার ও আমার ফ্যামিলির অনিষ্ট সাধনের হুমকি দিয়ে গেল। 

চিন্তাটা মনের মধ্যে চেপে বসছিল ক্রমশ। ক্রিস্টোফার নোলানের একটা সিনেমা দেখেছিলাম। ম্যাজিসিয়ানের যমজ ভাই। একজন স্টেজের সামনে। আর একজন অন্তরালে। এক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই হতে পারে। কোনও অসতর্ক মুহূর্তে মেয়েটার আগমন। তারপর হঠাৎ প্রস্থান। কিন্তু নিজেই মানতে পারছিলাম না নিজের যুক্তি। একজন রক্তমাংসের মানুষের হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া আর যাইহোক ম্যাজিকে সম্ভব নয়। বুকের ভেতরটা শুকিয়ে যাচ্ছিল কেমন। বাড়িতে বউ আর মেয়ে। আমার সঙ্গে পুলিশ কমপাউন্ডেই থাকে। চারদিকে নিশ্ছিদ্র বলয়। উর্দিধারী সশস্ত্র পাহারা। সারারাত আলোর জোয়ার। তবুও ভাবলেই কাঁটা দিচ্ছিল গায়ে। বউ বলল, হ্যালুসিনেশান। চব্বিশ ঘন্টা খুন, জখম, রাহাজানি, ফেরেববাজি নিয়ে ভাবলে এমনটাই হয়। দু’দিন ছুটি নাও দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। মাথাটারও তো একটা বিশ্রাম দরকার নাকি! বউকে সবটুকু বলিনি। সুবিমল মিশ্র বড্ড বাড়াবাড়ি করছিল। রুলিং পার্টিরই লোক। কিন্তু গোঁজ। ভেতরে ভেতরে দল ভাঙানোর চেষ্টা করছিল। ওর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ। তোলাবাজি, প্রতারণা, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর। পার্টি হাঁফিয়ে উঠেছিল। চাইছিল গ্যারেজ করতে। এই নিয়ে চাপ ছিল আমার ওপরও। কিন্তু কিছুতেই ওঠাতে পারছিলাম না ব্যাটাকে। রিসেন্টলি একটা অ্যাবডাকসান কেসে নাম উঠে আসে সুবিমলের। এক মহিলা। ওরই দুঃসম্পর্কের রিলেটিভ। খবর ছিল খুন করে লাশ গুম করা হয়েছে। কিন্তু বডি না মেলায় গায়ে হাত দিতে পারছিলাম না। এই পরিচয়হীন দেহটা পেতেই হাতে চাঁদ পেলাম। লাশ তো লাশই হয়। নাম ধামের তফাতে তার কী বা আসে যায়! তাই দাড়ি চুলকে দার্শনিকের মতো ওটাকে চাপিয়ে দিলাম সুবিমলের ঘাড়ে। এখন সে বাকি জীবন প্রমাণ করে মরুক। এই মহিলা সেই মহিলা নয়। পার্টিও খুশি। আমিও। জানতে পেরেছি খুব শীঘ্রই এর দাম পাব। আর মাত্র কটা দিন। এই সময়টায় কেত দেখায় সবাই। অথচ আমি জড়িয়ে পড়ছিলাম। অদৃশ্য এক জালে। দুর্বোধ্য এক ষড়যন্ত্রে। ঠিক গেরিলা যুদ্ধের মতো। যে কোনও মুহূর্তে পিছন থেকে নেমে আসতে পারে একরাশ অন্ধকার। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছিল। এসব কী সত্যি! নাকি কোনও জটিল মানসিক ব্যাধি। জাল বুনছে আমার ভেতরে ভেতরে। সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধু শেখরকে খুলে বললাম সবটা। সে বলল, সিম্পলি অপরাধবোধ। ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে রক্ত মেখেছিস হাতে। যতই ধুস দাগ তো থাকবেই। তবে ভাবিস না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। কথা শেষ করে সে এক পাতা সিডেটিভ দেয়। বলে, রাতে খাওয়ার পর একটা। ভাল ঘুম হবে। খানিক নিশ্চিন্ত হয়েই ওর চেম্বার ছেড়ে বের হই। ভাবছিলাম দু -চার দিন ছুটি নিই। বউ আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরে আসি কোথাও থেকে। এই সাজেশানটাও শেখরই দিয়েছিল। তাতে নাকি মানসিক স্থিতি বাড়ে। আমি সেই মতো লিভ অ্যাপ্লিকেশানটা প্রায় ফেলেই দিয়েছিলাম। সাহেবের টেবিলে। কী মন গেল ধানবাদের ওই পুলিশ স্টেশানে ফোন লাগালাম। ওরা বলল, হাঁ স্যার। এক লড়কী। উসকী বাপ রোজ আতা হ্যায়। চুপচাপ বৈঠা রহেতা হ্যায় থানে কা বাহার। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। তাহলে কী সত্যিই অলৌ্কিক কোনও জগৎ! মানুষের জ্ঞানের পরিধির বাইরে। তার বিচার, বিশ্লেষণের ওপরে। মাথা কাজ করছিল না। বুঝতে পারছিলাম শেখর একটা ‘বকরম ফস্’। ডাক্তার সেজে সবজান্তার ভান করে। আমি ওর কাছে আর গেলাম না। সিডেটিভগুলোও ফেলে রাখলাম টেবিলের ওপর।

ঘটনাটা ঘটল ঠিক দিনেই। মাঝরাতে হঠাৎ উসখুস শুরু করল আমার স্ত্রী। ঘুমের ঘোরে কী সব বকছিল। তারপর গোঁ গোঁ একটা আওয়াজ। আমার ঘুম আসেনি তখনও। আমি ঝাঁকুনি দিলাম।

- কী হল শরীর খারাপ! নাকি স্বপ্ন দেখে...। 

ঠেলে তুলতে চেষ্টা করলাম ওকে। পারলাম না। কে যেন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আমায়। ছিটকে পড়লাম মেঝের ওপর। আমার স্ত্রী যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল। বিছানার চাদর লন্ডভন্ড। ভেসে যাচ্ছে রক্তে। মুখে গাঁজলা। তারপর আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ল এক সময়। আমি ডাক্তার ডাকলাম। লাভ হল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলল, রেপ। লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়েছ্বে সমস্ত কিছু। ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিল খাবারে। অবাক তাকালাম আমি। দুজনে ডিনার করেছিলাম একসঙ্গে। ছুটে গেলাম ঘরে। টেবিল হাতড়ে দেখি সবকটা সিডেটিভ উধাও। 

এখন আমি থানায়। সামনে ইনভেস্টিগেটিং অফিসার। দরজার বাইরে ভীত সন্ত্রস্ত তাকিয়ে আমার মেয়ে রাই। 

আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে রোদ উঠছিল মাথার ভেতর। বুঝতে পারছিলাম ট্রিকটা। ভ্যানিস হয়ে যাওয়া মৃতদেহ ফিরে এল ম্যাজিসিয়ানের টেবিলে। এবার একে একে আসবে বিকাশ, মুর্তজা আর বলরাম। থ্রী রেপিস্টস। আর সেই ফিরিয়ে আনার কাজটা করতে হবে আমাকেই। না পারলে পরের টার্গেট রাই! ওর এখন সবে বারো। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ