কণিষ্ক ভট্টাচার্যর গল্প: রঙের ইতিহাস


রবীন্দ্রনাথ বর্ণান্ধ ছিলেন কিনা এই নিয়ে ঢাউস বই লেখা হয়ে গেছে। বর্ণান্ধ মানুষেরা সবুজ রং আর নীল রঙের সঙ্গে অন্য কোনও কোনও রঙের পার্থক্য করতে পারেন না। কারও সবুজ গুলিয়ে যায় লালের সঙ্গে, কারও-বা নীল আলাদা হয় না হলুদের থেকে। আর রঙের ইতিহাস বলে, মানুষ সবচেয়ে দেরিতে ব্যবহার করতে শিখেছে যে-দুটো রং সেই দুটোই হল এই নীল আর সবুজ।

রঙের ইতিহাস কিংবা মানুষের ইতিহাসে রং আসলে এক বিস্তৃত ও জটিল আখ্যান। কিন্তু বাড়ি রং করানোর সময় মন্দিরা ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা গবেষণা করে নীল আর সবুজ রং বেছেছিল। সেই গবেষণার মধ্যে অবশ্য এইসব ছিল না। মন্দিরার বরং আগ্রহ ছিল বাড়িঘর রং করার আধুনিক রীতি-রেওয়াজ কীরকম, তাতে কেমন খরচ পড়ে, কীভাবে কম খরচে সেইসব করে ওঠা যায় -- এমন সব প্রশ্নোত্তরে। রঙের মিস্তিরিকে ডাকার আগে সিদ্ধান্ত যা দাঁড়িয়েছিল তা হল, ঘরগুলো এবার ঢালাও এক রং না করে ওদের ঘরে হালকা সবুজের আর পুপের ঘরে হালকা নীলের কম্বিনেশন কালার হবে। তাতে আবার গাঢ় রঙের টেক্সচার থাকবে।

পুরনো কলকাতার যখন নতুন সহস্রাব্দ আসছিল তখন আকাশের অনেক ওপর দিয়ে নতুন নতুন রঙিন পাখিরা উড়ে যেত। এতই ওপর দিয়ে যে পুরনো বাড়ির ছাদে এলে তাদের ডানার শনশন আওয়াজ হয়ে যেত ফিসফিস কথার মতো। বারান্দায় বসা লোক কানের পিছনে হাতের পাতা রেখেও সে কথার স্পষ্ট হদিশ পেত না। আকাশে উড়ন্ত রঙের ঝাপট তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিত। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই যখন সেই পাখিদের খসে যাওয়া পালকগুলো এসে পড়তে শুরু করেছে পটুয়াটোলা থেকে ছকু খানসামার গলিতে, সারপেন্টাইন লেন থেকে পিটার সুকিয়াসের রাস্তায়। তখন সেই জাদু পালকের ছোঁয়ায় কলকাতার পুরনো বাড়িগুলো আদিম কড়িকাঠের নিচেই স্যাতলা ঢেকে রঙিন হয়ে উঠছিল। 

সাম্যদের বাড়িতে পাখিরা আসার আগে নিয়ম করে ক’বছর অন্তর নীল আর আঠাগুলে কলি ফেরানো হত। সাম্যর বিয়ে উপলক্ষে সেই পালকখসার সময়ে ঘরের দেয়াল চটিয়ে প্লাস্টার অব প্যারিস করা হয়েছিল ওদের ঘরগুলো। দুটো শোয়ার ঘর আর একটা ছোটো খাওয়ার ঘরের রং বদলালেও সাম্যর বাবা নিজেদের ঘরে সেসব করতে দেয়নি। এমনিতেও এসব তার বাহুল্য মনে হত, তার ওপর কে যেন তখন তার মাথায় ঢুকিয়েছিল ওতে ঘর গরম হয়ে যায়।

পঁচিশ লক্ষ বছর আগে যে হিমযুগ শুরু হয়েছিল সাড়ে এগারো হাজার বছর আগে তা শেষ হয়। তার মধ্যেই চল্লিশ হাজার বছর আগের শীতল অন্ধকারের যে বিস্তৃত পৃথিবী, সেখানে মানুষ বাস করত সাকুল্যে তিরিশ হাজার, আর প্রায় সবাই নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তাই ফ্রান্সের ল্যাস্কো কিংবা স্পেনের আলতামিরা অথবা ভারতের ভীমবেঠকার গুহাঘরে যে মানুষ ছবি আঁকত তার পাত্রে রং ছিল মোট পাঁচটা। আদিম পৃথিবীর নানা রঙের খনিজে পূর্ণ, অকর্ষিত মাটির সঙ্গে মরা জন্তুর চর্বি মিশিয়ে সে মানুষ তৈরি করেছিল লাল, হলুদ আর খয়েরি রং। কালো আর সাদা বানিয়েছিল চর্বির সঙ্গে কাঠকয়লা আর খড়ি মিশিয়ে। পৃথিবীকে মাত্র পাঁচটা রঙেই আঁকা হত তখন। পাঁচটা রঙেই ধরা পড়ত আততায়ী পশু, প্রতিবেশী গাছ, যূথবদ্ধ শ্রম। পাঁচটা রঙেই সেই জীবন পরিপূর্ণ হয়ে উঠত।

পুপেকে বেশ ছোটবেলা থেকেই রাতে আলাদা ঘরে শোয়ার অভ্যেস করিয়েছিল মন্দিরা। যেদিন পুপের একা শুতে ইচ্ছে করত না, সেদিন এসে সাম্য-মন্দিরার মাঝখানে ঢুকত। কোনও দিন আবার ওর ঠাম্মি নিয়ে যেত নিজেদের ঘরে। দা আর ঠাম্মি মারা যাওয়ার পরে পুপে নিজের ঘরেই শোয়। বড়োও হয়েছে। ক্লাস সেভেন হল। 
এই তিনটে ঘরের দেয়াল জুড়েই পুপের বড়ো হয়ে ওঠা।

কোথাও পেন্সিনের দাগ। মেঝের সমান্তরালে বারবার টানা। রেখাগুলোও আঁকাবাঁকা। হাতের মুঠোয় শক্ত করে কিছু ধরতে শেখার আগে যেমন হয়। কোথাও উপহার পাওয়া ক্রেয়নের দাগ। গোল গোল। প্যাঁচানো। হিজিবিজি। কোথাও ছবির আভাস। গোল মুখের ভিতরে গোল গোল চোখ, সরলরেখার নাক, বক্ররেখার ঠোঁট। কান নেই। মাথায় সোজা সোজা দাগের খাড়া খাড়া চুল। কোথাও আশ্চর্য জন্তু – যার সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনও। তার পাশে একটা কাচের শববাহী গাড়ি। টপশটে দেখা। কলকাতার রাস্তায় পুলিশের হাতে এক ছাত্র খুনের পরে টিভিতে শোক মিছিল দেখেছিল পুপে। সবচেয়ে ওপরের শেষ দাগটা স্কেল দিয়ে টানা পেন্সিলের সোজা দাগ। এটাও সমান্তরালে। দুইঞ্চি দৈর্ঘ্য। ওপরে লেখা ফোর-এফ, নাইন-আইএন। নিচে তারিখ দেওয়া। পুপের জন্মদিনের তারিখ। গত বছরের। 

দেওয়াল জুড়ে মেয়েটার বড়ো হয়ে ওঠার রেখাগুলো মিস্তিরি ঘষে ঘষে তুলে দেওয়ার সময় সাম্যর খারাপ লাগছিল। আবার সন্তানের হাতের প্রথম কাঁপা কাঁপা অআকখ, এবিসিডি, একদুই বা ওয়ানটু দেখার যে টলটলে আবেগটুকু তা যেন এই ক’বছরে যেন শুকিয়ে গেছে। মুখে হয়ত এই কথাটা বলতে নেই বলেই বলে না। 

মন্দিরা অবশ্য বলে, -- ‘এখন ঘরদোর আর কেউ এমন অগোছালো রাখে না। দেখো না বন্ধুবান্ধবের বাড়ি!’ সাম্যরও মনে হয় কথাটা ভুল নয়। সময়ের সঙ্গে সবই বদলায়। বন্ধুবান্ধবের ফ্ল্যাটে গেলে দেখে অন্যরকম ব্যাপারস্যাপার সব। রঙিন পাখিরা উড়ে আসার পর থেকে সবকিছু টিপটপ। সাজানো গোছানো। নিখুঁত রং। ঘরের মাপসই সব আসবাব। ভালোই তো লাগে দেখতে। লোকজন ওদের বাড়ি এলে তারা মন্দিরার দেয়ালের দিকে কতটা চেয়ে দেখে সেটা সাম্য জানে না, তবে কেউ এলে মন্দিরার সচেতন চোখ পড়ত নিজের ঘরের দেয়ালে, তা সাম্য দেখেছে। কোথাও পুপের করা পুরনো রং ধেবড়ে গেছে। কোথাও খয়েরিটে ছোপ চোখ মেলেছে ঘরের দেওয়ালে। 

আদিম পৃথিবীর গাছের পাতা ছেঁচে যে সবুজ রং তৈরি হত তা কিছুদিনের মধ্যেই খয়েরিটে মেরে যেত। ক্লোরোফিলের অহংকারে প্রাচীন ছবিতে তাই সবুজ রং দেখা যায় না। মধ্যযুগের ইউরোপীয় ছবিতে সবুজ রঙের ব্যবহার শুরু হল কৃত্রিম সবুজ আবিষ্কারের পর থেকে। 

নিরক্ষীয় অগাধ সমুদ্রের পারে অনন্ত আকাশের নিচে বাস করেও নীল রংকে আয়ত্ত করতে পারেনি মানুষ। নীল তো এলো এই সেইদিন, চতুর্দশ শতকে -– মাত্র ছয়শো বছর আগে যখন ইতালীয় বণিকেরা সমুদ্র পেরিয়ে আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে ল্যাপিস লাজুলি নিয়ে গেল ইউরোপে। সমুদ্রের ওপার থেকে এলো বলে ইউরোপে সেই রঙের নাম হয়ে গেল আলট্রামেরিন। 

সাম্যর বাবা-মায়ের ঘরটায় দেয়াল চটিয়ে এবার প্যারিস করা হলেও রঙটা সাদাই বেছেছে মন্দিরা। সেটাই ওঁদের পছন্দ ছিল। সাম্যদের ঘরটা হয়েছে নীলের আর পুপের ঘর সবুজের টেক্সচারে কম্বিনেশন কালার।

বর্ণান্ধ মানুষ নাকি অন্য রঙের থেকে এই দুটো রংকেই আলাদা করতে পারে না। নীল আর সবুজ।


রঙের সঙ্গে মনস্তত্ত্বের গভীর যোগ। সভ্যতার আদিকাল থেকে একেকটা রংকে নির্দিষ্ট অনুষঙ্গে দেখতে দেখতে গোষ্ঠীর স্মৃতিতে সেই রং একেক রকম অনুভূতি তৈরি করে দিয়েছিল। বরফ ঢাকা দীর্ঘ শীতার্ত ইউরোপের শিল্পীরা তাই বারবার সবুজকে ব্যবহার করেছে স্বর্গের ছবি আঁকতে। সেই ছবিতে সবসময় রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন যা একবারেই আর্টিক আবহাওয়ার মতো নয়। 

অভুক্ত কবি যেমন স্বর্গকে লেখে খাবারে ভরা দেশ বলে।

নতুন রঙে একেবারে অন্যরকম লাগছে আজন্মের চেনা ঘরটা। সমুদ্রনীলের ওপরে ঢেউয়ের টেক্সচার করিয়েছে মন্দিরা। ঘুম থেকে উঠে সাম্যর মনে হল যেন এক নির্জন দ্বীপের বেলাভূমিতে বসে আছে। তিন দিকে অপার সমুদ্র। সামনে সাদা বালি। সাদা চাদরে গোলাপি রাতপোশাকে মন্দিরাকেও জলপরি গল্পের নায়িকা বলা যায় এখনও। বাইফোকাল চশমার বয়েসে এসে পনেরো বছরের বিবাহিতা বউকে দেখে এমন কৈশোর-প্রেম জেগে ওঠা যে এই রঙের গুণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 

নিজের মনেই হাসে সাম্য। বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে মনে হয় এই ভোরটাও যেন সুন্দর হয়ে উঠেছে ঘর রং করানোর পরে। অথচ ওর প্রথম দিকে তত উৎসাহ ছিল না। মেয়েটার হাতের প্রথম রেখার জন্যে দাগ-ধরা দেয়ালগুলোর প্রতি যেন একটা মমত্ব ছিল ওর। যেন দাগগুলো মুছে দিলে পুপের ছোটবেলাটাও অনেকটা হারিয়ে যাবে। শুধু পুপের কেন, মন্দিরারও। আঁকার হাতটা পুপে পেয়েছে মন্দিরার থেকে। পুপের ছোটবেলায় মন্দিরা ওকে আলাদা ঘরে শোয়ানোর আগে সেই ঘরের দেয়ালে দুটো রংচঙে পাখি এঁকেছিল। তার ওপর যে পুপে কত রং বুলিয়েছে। পুপে বড়ো হতে হতে সেই আসল পাখিদুটোকে আর দেখাই যেত না। 

তাই ঘর রঙের প্রস্তাবে সাম্য মেয়েকে কোলে বসিয়ে বলল, -- ‘হ্যাঁরে মা, তুই কি এখনও দেয়ালে আঁকবি?’


পুপে খানিক অভিমানী গলায় বলে উঠল, -- ‘মোটেই আমি আর এখন দেয়ালে আঁকি না!’ – তারপর মন্দিরাকে সাক্ষী মেনে বলল, -- ‘মাম্মাম বলো, আমি কি এখন আর দেয়ালে আঁকি? যখন ছোটো ছিলাম আঁকতাম।’


সাম্য বলল, -- ‘তুই বুঝি বড়ো হয়ে গেছিস?’


‘খুব বড়ো হইনি, কিন্তু দেয়ালে তো আর আঁকি না!’


মন্দিরা বলল, -- ‘আঁকিস না, তার বদলে পোস্টার লাগাস।’


পুপে হাসে।


দেয়াল জুড়ে ওর হিজিবিজি ছবি ঘষে তুলে দেওয়ার থেকে পুপে এখন বেশি কষ্ট পেয়েছিল পোস্টারগুলো তুলে দিতে গিয়ে। সাম্য মন্দিরা অনেক গান শুনলেও এখনকার ইউটিউবের ইংরেজি গানের রকস্টারদের চেনে না। তারাই ছিল দেয়ালে পুপের নিজস্ব শোভা। 


পুপের ঘরের টেক্সচার ফোলিয়েজের। সিঙ্গেল খাটটায় মেটে রঙের চাদরের মধ্যে মেয়েটা ঘুমচ্ছে বনদেবীর মতো। সবুজ ঘন বনের মধ্যে যেন একটুখানি ফাঁকা জায়গায় খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে রূপকথার বনকন্যা। তার ওপর মেয়েটা যত বড়ো হচ্ছে তত মেয়েটার চুলে কপালে চোখের মধ্যে মায়ের গড়ন দেখতে পায় সাম্য আজকাল। মায়ের সেই বিয়ের ছবির মতো। তখন মায়ের মাত্র আঠেরো বছর বয়েস ছিল। পুপে এইবার বারোতে পড়ল। সেই একই গড়ন যেন আসতে চলেছে। 

‘নাহ, রঙগুলো বড়ো ভালো বেছেছে মন্দিরা,’ – অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে ভাবে সাম্য। আজ সারাদিন ওর মনে ঘরের রংগুলোই ছড়িয়ে আছে। জলে ভেজা হ্যান্ড মেড পেপারে রং ছাড়লে যেমন হয়। ওর মনে তেমনই গোটা দিন আলতো করে ছড়াতে থাকে রংগুলো। পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পীদের বেশিরভাগটাই পুরুষ হলেও সাধারণভাবে মহিলাদের রঙের সেন্স পুরুষদের থেকে ভালো হয় বলে সাম্যর বিশ্বাস। যেমন যে বেগুনি রংকে ও নিজে হালকা আর ডার্ক দিয়ে বোঝায়, সে রংকে অন্তত তিন থেকে চারটে আলাদা নামে চেনে মন্দিরা। এ তো শুধু একা মন্দিরার গুণ নয়, মহিলারা অনেক রঙের নাম জানে। একই রঙের মধ্যে গাঢ়ত্ব অনুসারে আলাদা আলাদা নামে রূপে চেনে আলাদা ভাবে। মেয়েরা কি তবে রঙের ভিতরে আরও বেশি কিছু দেখতে পায়? 


সাম্যর ভাবনায় গাঢ় থেকে হালকা হতে হতে এক জায়গায় এসে ফের কাগজের শুভ্রতা ভেসে ওঠে। বাবামার ঘরটা কি ফ্যাকাসে লাগছে বাকি ঘরগুলো নতুন করে রং করানোর পরে। বাবামায়ের ঘরটায় সাদা রংটায় কেমন একটা শূন্যতা মনে হয় এই ঘরগুলোর পাশে। সেটা এই নতুন রঙে মানুষগুলোর অনুপস্থিতি কিনা বুঝতে পারে না সাম্য। বাবার পছন্দ ছিল সাদা। মায়ের হয়ত তেমন নয়। সাম্যর বিয়ের সময় মায়ের উৎসাহেই রঙিন হয়েছিল ঘরগুলো। মা কী রং ভালোবাসত আলাদা করে জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনও। তবে মায়ের সব শাড়িই ছিল সাদাও ওপর। 


রঙের ভিতরে নিশ্চয়ই অনেক কিছু দেখা যায়। অন্তত আরও অনেক কিছু দেখেছে মানুষ। একেকটা রঙের একেক রকম ভাষা। একেকটা রঙের সঙ্গে একেক রকম সংকেত যেন জুড়ে দিয়েছে। ব্রিটেনের রাজ পরিবারের রং যেমন বেগুনি। সেই রংকে সেদেশের মানুষ চেনে ক্ষমতার রং হিসেবে। রাজকীয়তার রং – গড সেভ দ্য কুইন। 


রঙের এই মানে আবার দেশে-দেশে আলাদা হয়। দুটো দেশের সভ্যতার কাছে একই অনুভূতি আলাদা আলাদা রঙে ফুটে ওঠে। প্রিয়জনের মৃত্যু বেদনার রং প্রাচ্যে সাদা আর পশ্চিমে কালো আবার আফ্রিকার কোথাও কোথাও লাল। পূর্বের বিবাহ রঙিন, পশ্চিমের সাদা। 

বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যের দিকে কাজের চাপে মাথা তুলতে পারছিল না সাম্য। এরই মাঝখানে মন্দিরার ফোন। সাম্যর শিরে সংক্রান্তি তখন। ফোন ধরেই সাম্য বলল, -- ‘একটু বাদে করছি।’ পরে আবার ভুলে গেছিল। অফিসে প্রতিদিন ‘মার্কেট রিসার্চ আর অ্যানালেটিকসের’ নতুন রিপোর্ট আর কীকরে নিজেদের আরও রঙিন করে ক্রেতার কাছে বিক্রয়যোগ্য করে তোলা যায় তার চাপ। সাম্যর মজাই লাগে, প্রত্যেকটা মানুষকে অফিসের ‘আর-অ্যান্ড-এ’ দেখে একেকজন পোটেনশিয়াল বায়ার হিসেবে। লোকগুলো নিজের বাঁচার জন্য যা-যা লাগে তা যেহেতু নিজেরা বানিয়ে নেয় না, তাদের কিছু না কিছু কিনতেই হয় তাই তাদের সবরকম কেনার ইচ্ছে কীকরে প্রভাবিত, বলা ভালো নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাই নিয়ে গবেষণা চলে সবসময়। যেন লোকগুলো শুধু কেনার জন্যই বেঁচে আছে। আরও ঘণ্টাখানেক বাদে অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্টপেজে আসার সময়ে পাশে দোকানগুলোর দিকে তাকিয়ে সাম্যর মনে হল সেই রঙিন পাখির পালকে এখন ভরে গেছে দোকানগুলো। আগুনের দিকের পোকার মতো রঙের দিকে ছুটে যাচ্ছে মানুষ।


অনেক দিন বাদে সেদিন পুপে মাঝরাতে উঠে এসে ওদের ডাকল। সাম্যর তখন সবে চোখ লেগে এসেছে। মন্দিরা ধড়মড় করে উঠে বসেছে, -- ‘কী হয়েছে রে?’


-- ‘আমি এ ঘরে শোব আজকে। আমার ঘরে রঙের গন্ধে দমবন্ধ হয়ে আসছে।’

-- ‘ও, বালিশ নিয়ে আয়। নতুন রং একটু গন্ধ হয়।’

সাম্য ফেরার পরে মন্দিরা অবশ্য বলেছিল, ঘরের রঙটায় বড়ো উগ্র গন্ধ। স্কুল থেকে ফিরে ওর নাকি দমবন্ধ হয়ে আসছিল। নতুন রং করা বন্ধ ঘরে গন্ধটা জমে ছিল। মন্দিরা ভেবেছিল ফিরে দরজা জানলা খুলে দেওয়ায় কমে যাবে। ফিরে যতটা গন্ধ লাগছিল রাতে ততটা ছিল না জানলা খুলে দেওয়ায়। কিন্তু পরে আবার যেন বাড়তে থাকে। 

গতকাল ঘুম থেকে উঠে নতুন রঙে মনটা যেমন ভালোলাগায় ভরে গিয়েছিল আজ যেন ততটাই দমে গেছে সাম্য। ঘরের সব দরজা জানলা খুলে ফুল স্পিডে পাখা চালিয়ে শুয়েছিল। তবু রঙের গন্ধটা যায়নি। রং নতুন করলে একটা গন্ধ হয়ই। কিন্তু সেই গন্ধ আস্তে আস্তে কমে আসে। আর মানুষের ইন্দ্রিয় তো কোনও একরকম গন্ধ বা শব্দের সঙ্গে থাকতে থাকতে আসলে সেটাকে ভুলে যায়। মাথায় আর সেটা নতুন অভিঘাত তৈরি করে না, ফলে সেটার অস্তিত্ব আস্তে আস্তে স্মরণে আসে না তার বাইরে না গেলে। কোনো নতুন পরিবেশে না পৌঁছলে। তখন নতুন পরিবেশের গন্ধ আবার নতুন রকমের অভিঘাত তৈরি করে। কিন্তু ঘরে কি তাহলে গন্ধের মাত্রাটা বাড়ছে। নয়তো অস্বস্তিটাকে ভুলতে পারছে না কেন! রং করার পরে এটা কি তাহলে একটা নতুন পরিবেশ -- এই রঙিন ঘর। যা স্থান না পালটিয়ে পরিবেশটাই পালটে দিয়েছে। 

বেলা একটু বাড়তেই সাম্য মিস্তিরিকে ফোন করে ডাকল। 

মিস্তিরিও প্রথমে, -- ‘নতুন রঙে একটু গন্ধ হয়’, ‘এসব এক নম্বর রং -- রং কিনতে তো আপনিও গেছিলেন দাদা!’ – এসব ধানাইপানাই করে বলল, -- ‘রঙেরই গন্ধ তবে গন্ধটা বেশি। এতোটা হয় না। ও দুদিন জানলা খুলে রাখুন এনিতেই চলে যাবে।’

সাম্যর কেমন একটা মনে হচ্ছে এই গন্ধটা যাবে না। যতক্ষণ এই রংটা থাকবে ততক্ষণ অন্তত যাবে না। মন্দিরাকে বলল আজকে ও অফিসে যাবে না। 

মন্দিরা বলল, -- ‘তার চেয়ে গেলেই পারতে। বাড়িতে থাকলে তো এই গন্ধটার মধ্যেই থাকতে হবে!’

সাম্য আজকে আসলে এই ঘরে, এই গন্ধের মধ্যেই থাকতে চায়। 

মন্দিরা আর পুপে স্কুলে বেরিয়ে গেলে সাম্য ওদের শোয়ার ঘরটা ভালো করে ঘুরে ঘুরে দেখল। দেয়ালে আঙুলের ভর দিয়ে দেয়ালের কাছে নাক নিয়ে গিয়ে দেখল গরম ভাপের মতো গন্ধটা উঠছে। এই গন্ধটা ঠিক রাসায়নিকের মতো নয় কিন্তু কীসের মতো বুঝে উঠতে পারল না সাম্য। ওর আঙুলের ডগায় পাউডারের মতো একটা হালকা রঙিন ধুলোর প্রলেপ। তাহলে কী এই রংটাই খারাপ নাকি মিস্তিরি ঠিকঠাক লাগায়নি! এখনই তো রং উঠে আসার কথা নয় সবে পরশু শেষ হয়েছে রং করা। সাম্য একটা শুকনো কাপড় এনে আলতো করে ধুলো মোছার মতো মোছে দেওয়ালের একটুখানি জায়গা। হ্যাঁ, কাপড়েও নীল পাউডার। খুব হালকা যেন একটা স্তর উঠে আসছে দেওয়াল থেকে। 

পুপের ঘরের সব জানলা দরজা খোলা। তবু ভালো করে দেখার জন্য ঘরের দুটো আলোই জ্বালিয়ে দেয় সাম্য। পুপের ঘরের সবুজ রঙটা ওর কেমন অন্য রকম লাগে। গাছের পাতা শুকিয়ে আসার আগে যেমন হলদেটে হয়ে আসে তেমন হয়ে গেছে রংটা। 

কেমন একটা আশঙ্কা নড়াচড়া করা ওর মাথায়। ‘থাকবে না, থাকবে না। এই রঙটাও থাকবে না।’


দেবাশিসকে ফোন করে সাম্য। দেবাশিস ওর স্কুল আমলের বন্ধু। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি পড়ায়। সাম্য উত্তেজনায় প্রশ্নটাও ঠিক করে করতে পারে না। বলে বসে, -- ‘হ্যাঁ রে রং কীকরে বদলায়?’

দেবাশিস ইয়ার্কি মারে, -- ‘লোকে বদলটাতে চায় বলে!’


-- ‘ইয়ার্কি মারিস না, ডিটেইলটা শোন আগে।’

গোটাটা শুনে দেবাশিস বলে, -- ‘রং নিয়ে আমার তেমন কাজ নেই, তবে নানা কারণে পিগমেন্ট বদলাতে পারে। ব্যাকটেরিয়া রং বদলের একটা কারণ। কোনও কোনও ব্যাকটেরিয়া নিজেই পিগমেন্ট তৈরি করে। তাছাড়া লাইট, পিএইচ ব্যালেন্স, টেম্পারেচার -- ভ্যারাইটিস ফ্যাক্টার। মোটকথা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে পিগমেন্টের ব্যাকটেরিয়াও বাড়ে। তোদের বাড়িটাও তো অনেক দিনের। একশো বছর হয়েছে?’

-- ‘নানা সেঞ্চুরি হয়নি, ছেচল্লিশ সালে আমার ঠাকুরদা বানায়। আর গন্ধটা?’


-- ‘তুই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ভাবছিস সাম্য। দেখি আমি এর মধ্যে যাব একদিন। চ।’

সাম্যরও এবার মনে হয় সত্যিই কি ও বেশি ভাবছে এটা নিয়ে? বেশি বাড়াবাড়ি করছে? মাথাটাকে শান্ত করার জন্য একটা বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় সাম্য। উইকডেতে পাড়াটা এই সময় দেখাই হয় না কতকাল। ওদের গলিটায় লোক চলাচল কমে গেছে এখন। আকাশে একটা ঘোলা মেঘ ভাসছে। সাদাও নয় আবার কালোও নয়। বারান্দার মেঝেতে কতগুলো ধুসর পাখির পালক পালক পড়ে আছে। সিগারেট শেষ করে দাড়ি কাটে সাম্য। ভালো করে মাথায় শ্যাম্পু করে স্নান করে। খাবার খেয়ে ল্যাপটপটা নিয়ে মা-বাবার ঘরে বিছানায় শুয়ে ইয়ারপ্লাগগুলো কানে গুঁজে একটা ওয়েবসিরিজ দেখতে শুরু করে। স্প্যানিশ ভাষার ওয়েব সিরিজ। সাবটাইটেল দেওয়া। এটা নাকি এখন খুব পপুলার।

৪ 


রঙের মানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেও যায়। পুত্র সন্তানের সঙ্গে যেমন নীল আর কন্যার জন্যে গোলাপি রং থিম করে বিজ্ঞাপন হয় এখন, পশ্চিম থেকে যেটা এখন আমাদের দেশের স্বচ্ছলদের নার্সিংহোমে ঢুকে পড়েছে। কয়েকশো বছর আগে সেটা ছিল ঠিক তার উলটো। ভার্জিন মেরির গায়ে ইউরোপ দিয়েছিল ঘননীল চাদর তাঁর মাতৃত্বের প্রতিরূপ হিসেবে আর যিশুর সমস্ত পোশাক ছিল গোলাপি। কারণ লাল ছিল সেকালের পৌরুষের রং, আর সেই পুরুষের শৈশবস্থাকে তারা ধরতে চাইত গোলাপি দিয়ে। যে হবে ভবিষ্যতের রক্তাভ লোহিত পুরুষ। বাজার এসে বিজ্ঞাপনে সেই নীল আর লাল রঙের জায়গা বদলিয়ে দিয়েছে। জীবনীশক্তির সবুজ বা ত্যাগের গেরুরার মানে যেমন পালটে যায়। তখন চেনা রং ভয় পেতে শুরু করে মানুষ। 

রং থেকে ভয়কে বলা হয় ক্রোমোফোবিয়া। সে ভয় কারও ব্যক্তি জীবনের আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতা থেকে যেমন হতে পারে তেমনই হতে পারে কোনও সামাজিক আতঙ্ক থেকে। হয়ত কোনও সমাজ তাঁর যৌথ অভিজ্ঞতায় কোনও রংকে চেনে ভয়ের কারণ হিসেবে। তখন সেই মানুষ কোনও নির্দিষ্ট রং বা কোনও কোনও রংকে ভয় পেতে শুরু করে। সেই রঙের সংস্পর্শে এলে সে উদ্বেগে ভোগে, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে অথবা হাঁপাতে থাকে। হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়, ঘামতে থাকে, মুখ শুকিয়ে যায়, বমি পায়, মাথা ঘোরায়। 


ওয়েবসিরিজে মন বসাতে পারছিল না সাম্য। চোখ কচলায়। একে সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির গল্প তার ওপর সাবটাইটেল দেখে দেখে বোঝা। সিরিজটা চলতে চলতেই কান থেকে ইয়ার প্লাগগুলো খুলে রাখে সাম্য। ওর মাথার মধ্যে কেবলই রং ঘুরছে। খেয়াল করে এই ঘরে গন্ধটা কম। বিছানা থেকে নেমে দেয়ালে হাত দেয়। সাদা মিহি পাউডারের মতো রঙের গুঁড়ো লাগে হাতে। নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শোঁকে সাম্য। গন্ধটা আছে এই ঘরেও তবে তেমন তীব্র নয়। 

ব্যাকটেরিয়া? ছেচল্লিশ সালের কলকাতার মাটির ব্যাকটেরিয়া! 

তেতাল্লিশ বছর বয়েসে চোখে বাইফোকাল চশমা পরে এই বাড়ির মেঝেতে আবার হামাগুড়ি দেয় সাম্য। দেয়ালের পাশ দিয়ে দিয়ে ওদের শোয়ার ঘরে যায়। হাঁটুতে ব্যথা লাগছে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে চশমা ঠেসে নেয় নাকের গোড়ায়। ওদের শোয়ার ঘরের দেওয়ালের যেখানটা মুছে এসেছিল সেখানে আবার পাউডার। এবার পাউডারের মধ্যে গন্ধটা একই রকম আছে। বাড়েনি, নাকি ওর নাক অভ্যস্ত হয়ে গেছে সেটা বুঝতে পারল না সাম্য। তবে পাউডার নিচের দিকেই বেশি। নিচের দিকের রংটাও যেন বদলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। নীলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে একটা বেগুনি আভা। হামাগুড়ি দিয়ে মেঝের কাছের দেওয়ালে চোখ রেখে পুপের ঘরে যায় সাম্য। 

পুপের ঘরে গিয়ে এবার প্রথম ভয় লাগতে শুরু করে। ওর আশঙ্কাই ঠিক। রং বদলে যাচ্ছে। পুপের ঘরের দেওয়ালের সবুজ রং হলদে পাতার থেকে ধীরে ধীরে খয়েরিটে হয়ে গেছে শুকনো পাতার মতো। দেওয়াল ঘেঁসে মেঝেতে পড়ে রয়েছে সবুজ আর হলুদ পাউডার। তাঁর ওপরে অল্প খয়েরির প্রলেপ। 

মেঝেটা যেন স্যাঁতস্যাঁত করছে। তার ওপর জমে যাচ্ছে ওই মিহি ধুলোর মতো রং।


সাম্য প্রায় পালিয়ে আসে ওই ঘর থেকে। ল্যাপটপের সামনে বসে একটা সিগারেট ধরায়। সিরিজটা চলছিল। ছবির সামনে সাদা সাবটাইটেল ভেসে উঠছে আবার চলে যাচ্ছে। কান থেকে খুলে রাখা ইয়ার প্লাগ থেকে যেমন ফিসফিস শব্দ আসে তেমনই শব্দ আসছে। সেই রঙিন পাখি উড়ে যাওয়ার সময়ে যেমন শব্দ হতো। শব্দটা আসছে ইয়ার প্লাগের স্পিকার থেকে কি! কিন্তু ভাষাটাও তো স্প্যানিশ নয়? ফিসফিস এই শব্দগুলো যেন সাম্যর চেনা।


‘ওরা...’


‘ওদের...’


‘এইবার...’


‘দখল...’


‘শত্রু...’


‘সীমান্ত...’


‘পাঠিয়ে দাও...’


এগুলো, এই শব্দগুলো শুনেছে সাম্য। চমকে ওঠে সাম্য এই শব্দগুলো ইয়ার প্লাগের স্পিকার থেকে আসছে না, আসছে ঘরের নতুন রং করা দেয়াল থেকে। ফিসফিস, ফিসফিস...


সাম্য লাফ দিয়ে উঠে ওদের শোবার ঘরে আর পুপের ঘরে যায় ওই ঘরেও একই রকম ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে। একই চেনা শব্দগুলো। রাস্তায় স্ট্রিট ল্যাম্প জ্বলে উঠল। পুপে আর মন্দিরা ফিরবে এখন। ল্যাপটপের পাশে রাখা ফোনটা নিয়ে মন্দিরাকে ফোন করতে যায় সাম্য। ওরা যেন আজ বাড়ি না ফেরে। যেন বাপের বাড়িতে বা অন্য কোথাও... 

ওর ইয়ার প্লাগের স্পিকার এবার চিৎকার করে ওঠে, -- ‘বোল, মাদারচোদ। বোল...’

তখনই দরজায় কলিং বেল বাজে দমকলের পাগলাঘণ্টির মতো। 

#

বিস্তর গবেষণায় জানা গেছে রবীন্দ্রনাথ নাকি বর্ণান্ধ ছিলেন না। আসলে তো বর্ণান্ধতা একটা অভাব। রং চিনতে পারার একটা জেনেটিক অপূর্ণতা। আর রং গুলিয়ে ফেলাও কোনও কাজের কথা নয়। আবার আলাদা আলাদা রঙের আলোতে আলাদা আলাদা মানুষকে দেখলে তাদের রং বদলিয়ে যায়। এমনকি বিশেষ বিশেষ রঙের আলো এসে পড়লে আবার কোনও কোনও নির্দিষ্ট রঙের মানুষ সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায় আমাদের চোখ থেকে। তার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ব্যাখ্যার পিছনে আমাদের চোখের সীমাবদ্ধতাও তো রয়েছে। 






--- --- ---


২৩ মে - ৩০ জুলাই, ২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ