অনুবাদ : এমদাদ রহমান
ঝুম্পা লাহিড়ীর প্রথম উপন্যাস 'সমনামী'র প্রধান চরিত্র গোগোল স্পষ্টতই একটি মেটাফর; সে গোগোল গাঙ্গুলি, এক আমেরিকা অভিবাসীর প্রথম সন্তান। রুশ লেখক নিকোলাই গোগোলের নামে নাম। গোগোলের মা বাবা অসীমা ও অশোক এমন এক জীবনপ্রণালিতে অবদ্ধ যারা না পারছে জীবন থেকে ভারতীয় শিকড়টিকে উপড়ে ফেলতে, না পারছে স্থায়ীভাবে ভারতে ফিরে যেতে, না পারছে আমেরিকান জীবনে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে। তাদেরই সন্তান গোগোল আর সোনালি, যারা মা বাবার একেবারেই উল্টো।
অসীমার দিদা তাদের ছেলের নাম রেখেছিলেন, নাম লেখা চিঠিটি পোস্টও হয়েছিল কিন্তু কোনওদিনই আমেরিকা পৌঁছেনি। নামটি ছেলের ভাল লাগে না, তার কাছে এ নাম ভয় আর আতংকের। এ নিয়ে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। ছেলে নাম বদলায়, কিন্তু নাম বদলেও সে অপরাধে ভোগে। তার জীবন মা বাবা'র ভারতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে থাকা জীবন থেকে সে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও, জীবনের গভীরে কোথাও যেন ভারতীয় শিকড়টা থেকে গেছে। সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভারতীয় ও আমেরিকার জীবনধারার মধ্যকার ব্যবধান, অস্তিত্বের সংকট, বন্ধন, বিসর্জন ইত্যাদি 'সমনামী' উপন্যাসে তুলে ধরেছেন ঝুম্পা। উপন্যাসের বিস্তার ১৯৬৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যবর্তী বছরগুলো। ঝুম্পা লাহিড়ী 'ইন্টারপ্রেটার অফ মেলোডিস' বইটির জন্য বিশেষ পরিচিত। ২০০২ সালে পুলিৎজার পেয়েছে বইটি।
অসীমার দিদা তাদের ছেলের নাম রেখেছিলেন, নাম লেখা চিঠিটি পোস্টও হয়েছিল কিন্তু কোনওদিনই আমেরিকা পৌঁছেনি। নামটি ছেলের ভাল লাগে না, তার কাছে এ নাম ভয় আর আতংকের। এ নিয়ে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। ছেলে নাম বদলায়, কিন্তু নাম বদলেও সে অপরাধে ভোগে। তার জীবন মা বাবা'র ভারতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে থাকা জীবন থেকে সে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও, জীবনের গভীরে কোথাও যেন ভারতীয় শিকড়টা থেকে গেছে। সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভারতীয় ও আমেরিকার জীবনধারার মধ্যকার ব্যবধান, অস্তিত্বের সংকট, বন্ধন, বিসর্জন ইত্যাদি 'সমনামী' উপন্যাসে তুলে ধরেছেন ঝুম্পা। উপন্যাসের বিস্তার ১৯৬৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যবর্তী বছরগুলো। ঝুম্পা লাহিড়ী 'ইন্টারপ্রেটার অফ মেলোডিস' বইটির জন্য বিশেষ পরিচিত। ২০০২ সালে পুলিৎজার পেয়েছে বইটি।
আমার এখনও নিউইয়র্কারে পড়া 'একটি সাময়িক ব্যাপার' গল্পটির কথা মনে আছে, ভাগ্যিস গল্পটি ঝুম্পার পুলিৎজার পাওয়ার আগেই প্রকাশিত হয়েছিল; প্রায় প্রত্যেক রিভিউয়ার তার গল্পের ভারতীয় অভিবাসী চরিত্রদের নিয়ে কথা বলছিলেন। ‘একটি সাময়িক ব্যাপার’ উত্তর-পূর্ব আমেরিকায় বসবাসরত ভারতীয় বাঙালি দম্পতির গল্প, যাদের ক'দিন আগেই মৃত সন্তান হয়েছে। এ ঘটনার অভিঘাতে দু-জনই টালমাটাল, ঘটনাটির পর পরস্পর থেকে বহুদূর সরে গেছে তারা; একসঙ্গে থাকাটাও সম্ভব হচ্ছে না আর, কেউ কাউকে আগের বন্ধনে ধরে রাখতেও চাইছে না তারা। শোভা যাচ্ছে প্রুফ রিডারের কাছে, সুকুমার, বাড়িতে গবেষণাপত্র লেখার অভিনয় করছে, আসলে নিজেকে স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে রাখছে। এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ কোম্পানি চিঠি দিয়ে জানায় যে এই সাপ্তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা একঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে। সাপ্তাহের সেইসব আলোহীন দিনগুলোয় শোভা-সুকুমারের জীবনে খানিকটা পরিবর্তন আসে, আবার দু-জনের সম্পর্কের মধ্যে সুবাতাস বইতে শুরু করে। বিদ্যুৎহীন অন্ধকার তাদের কাছাকাছি নিয়ে আসে, তাতে শারীর-মনের দূরত্বও ঘুচে কিন্তু সাপ্তাহের শেষে আবারও বিদ্যুৎবাতি স্বাভাবিক নিয়মে জ্বলতে শুরু করলে তারা ফের নগ্ন বাস্তবের মুখোমুখি হয়। শোভা জানিয়ে দেয় সে আর এ বাড়িতে থাকছে না।
গল্পটি আমাদের বিদ্ধ করে। গল্পের ভিতরের বেদনা ও বাস্তবতা আমাদের মনে যন্ত্রণা জাগায়। আমরা বলি : আহা, জীবন।
-বলছিলেন ওয়াশিংটন পোস্টের নিউজ প্রডিউসার ও লেখক ক্যারল বার্নস, যিনি ঝুম্পা লাহিড়ীর সঙ্গে অনলাইনে এক লাইভ আড্ডার আয়োজন করেন, সে আড্ডায় যোগও দেন বেশ ক'জন পাঠক, পাঠকের প্রশ্ন আর লেখকের উত্তরে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আড্ডাটি; কথাগুলো ছাপা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের 'অফ দ্য পেইজ' বিভাগে, ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার। ক্যারল বার্নস আড্ডার সূচনা করেন এভাবে-
আমাদের 'অফ দ্য পেইজ'-এর দ্বিতীয় আয়োজনে আপনাদের স্বাগতম। আজ আমাদের সঙ্গে আছে লেখক ঝুম্পা লাহিড়ী। লাইভ আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ।আমরা একজন পাঠকের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি --
পাঠক :
আমি তোমার বইয়ের অপেক্ষায় থাকি সব সময়, কিন্তু বইয়ের যে রিভিউগুলো হয়, তা পড়ে আমি বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- তুমি কি তোমার বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মানুষকে ধরতে চাও? তোমার অভিপ্রায়টি কি ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ভিতরকার অনুরূপতা নির্দেশ করা? হতে পারে যে তোমার অভিপ্রায় উভয়ই। আমাদের মধ্যে বহু ভিন্নতা সত্ত্বেও বহুদিক থেকে মিলও আছে। কখনও মনে হয়, তুমি তোমার লেখার থিম এখনও খুঁজে পাওনি। সাংস্কৃতিক ভিন্নতা নিয়ে তুমি কি এমন কিছু বলবে, যা তোমার সাহিত্যকে বুঝতে সাহায্য করবে?
ঝুম্পা লাহিড়ী :
সবাইকে অভিবাদন। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি বলে আমি আনন্দিত। যে-প্রশ্নটি আমাকে করেছেন তাকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছি। হ্যাঁ, আমার অভিপ্রায় ছিল এমন একটি পরিবার নিয়ে গল্প লেখা যারা একটি নতুন দেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করছে। ফলে লেখাটিতে আমি ভিন্ন সংস্কৃতির অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলেছি। বলেছি কীভাবে দুই অচিন সংস্কৃতি পরস্পরের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ তৈরি করে, তাদের মিথষ্ক্রিয়া হয়, আর কেনই-বা মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে কোনও মিলন ঘটে না, বিনিময় হয় না। কিন্তু এসব মিলন বা বিরোধ নিয়ে আমি কোনও ভাষ্য কিংবা বিবরণী দেব না। আমি মনে করি এইসব বিষয় পাঠকের আবিষ্কারের জন্য লেখার ভিতর অপেক্ষা করে। আমি মনে করি, আমার লেখা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মধ্যে ব্যক্তির মূল্য ও তাৎপর্যকে উজ্জ্বল করে দেখায়, আর এক বৈশ্বিক অনুভূতি দেয় যেখানে আপনি নিজের ঘরেই পুরো বিশ্বকে অনুভব করছেন।
পাঠকের প্রশ্ন :
একজন লেখক এবং ভারতীয় উপমহাদেশের একজন নেটিভ হিসেবে, আমি তোমার লেখার ভক্ত। আমি যখন কিছু লিখতে চাই, হোক তা ফিকশন কিংবা বাস্তব অভিজ্ঞতার বয়ান, লিখবার সময়ই আমি সমস্ত উৎসাহ হারিয়ে ফেলি, মনে হতে থাকে যে আমি ছাড়া এই গল্পগুলো আর কেউ ধরতে পারছে না, গল্পগুলো কাউকে স্পর্শ করছে না। তোমারও কি এমন হয়েছে কখনও? হলে কিভাবে কাটিয়ে উঠেছ?
ঝুম্পা :
এ তো লেখালেখিরই একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন লেখককে নিরুৎসাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়, বাধার পাঁচিলগুলোয় বারবার আঘাত করতে হয় আর নিজেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষ মনে করতে হয়। এসব প্রতিকূলতা আর বৈপরীত্যের মুখোমুখি না হলে তো আপনার পক্ষে সত্যিকার সৃষ্টি সম্ভব হবে না। খুব চেষ্টা করুন যাবতীয় বাধাবিপত্তির মোকাবেলা করতে আর এসবের ভিতর থেকে লেখাটিকে বের করে আনতে। লেখালেখির পুরো ব্যাপারটিই পাজলের মতো। একেবারে ডুবে গিয়ে সমস্যাটির সমাধান করতে হয়।
পাঠক :
লেখালেখির ক্ষেত্রে তুমি কি কোনও উত্তরাধিকার বহন করে চলেছ? কখনও কি ভেবেছ এই উত্তরাধিকারটিই তোমাকে লেখক হতে পথ দেখিয়েছে?
ঝুম্পা :
সে উত্তরাধিকার তো আমার বাবা মা'র কাছ থেকেই আমার মধ্যে বাহিত হচ্ছে যারা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এসেছেন, এখানে কীভাবে বসবাস করতে হয় তা শিখেছেন। আমার জীবনে সব সময়ই দুটো প্রভাব কাজ করেছে, অত্যন্ত প্রবল সে প্রভাব। প্রতিদিনই আমি দুটো ভাষায় কথা বলি, দুই মহাদেশের খাবার খাই, আমি পৃথিবীর দুটি অঞ্চলকে জানি। সবই এক সঙ্গে। আমি মনে করি লেখালেখির দিকে যাওয়াটা ছিল আমার নিজের জন্য একটি জগৎ তৈরির সুযোগ। দেখুন, আমি কিন্তু আমার ভারতীয় এবং আমেরিকান- উভয় দিক থেকে অপর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমি সব সময়ই অনুভব করি যে, দিনে দিনে আমি ছোট গণ্ডির মধ্যে আটকে যাচ্ছি, কারণ আমি কোনওকিছুই ভালো করে জানতে পারছি না। লেখালেখিতে আমার নিজের চেয়ে অন্য কারোর প্রত্যাশা পূরণ করতে হয় না আমার।
ক্যারল বার্নস :
সাহিত্যে ছোট্ট একটি ঘটনা যেভাবে পুরো একটি চরিত্র কিংবা সম্পূর্ণ একটি গল্পে পরিণত হয়, সে ব্যাপারটি লেখালেখির এক আকর্ষণীয় দিক। তুমি কি হয়ে ওঠার এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলবে?
ঝুম্পা :
হ্যাঁ, হয়ে ওঠার এ প্রক্রিয়াটি একেক লেখায় একেক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ঘটে। জীবনের নানামুখি ঘাত, প্রতিঘাত, গড়ণ ও ভাঙচুরের ওপরও এই রূপান্তর নির্ভর করে। কখনও গল্পের চরিত্র হয় সম্পূর্ণ নির্মিত, লেখকের উদ্ভাবিত। চরিত্রটি লেখকের হাতে তৈরি হয়। কখনও চরিত্রটি একেবারে নিখাদ বাস্তব থেকে ওঠে আসে। আমার ‘তৃতীয় এবং অন্তিম মহাদেশ’ গল্পের ক্ষেত্রেও কথাগুলো প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে চরিত্রকে কিংবা একটি গল্পকে কতটুকু গড়া হবে আর কতটুকু আসবে সৃজনকল্পনা থেকে, সে সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়।
পাঠক :
ঝুম্পা, ভারতীয় অভিবাসীর সন্তান হিসেবে তোমার গল্পগুলো আমার ভিতর অনুরণিত হয়, যেন একটা গুঞ্জন শুনতে পাই। পড়তে গিয়ে কখনও মনে হয় আমি আমেরিকায় আছি, পরক্ষণেই মনে হয় যে, না, আমি এখানে নেই, ভারতবর্ষে। একসঙ্গে এই অদ্ভুত অনুভূতিটি আমার হয়। তোমার সন্তানরা যেভাবে তোমার সঙ্গে বেড়ে উঠছে, তোমার বাবা মা'র সঙ্গে তোমার বেড়ে ওঠা থেকে কি তা কিছুটা ভিন্ন? আমাদের পেছনে যে আরও একটি প্রান্তের সংযোগ, ভারতবর্ষের সঙ্গে, তা কি তারা বুঝতে পারছে? আর একটি কথা, তোমার সমনামী পড়বার অপেক্ষায় আছি।
ঝুম্পা :
হ্যাঁ, আমার ছেলে আমার চেয়েও ভিন্নভাবে বেড়ে উঠছে। আমার মা বাবা তো আর এতটা আমেরিকান ছিলেন না, আর আমাকে তারা এরকম করে বড়ও করেননি যেভাবে আমার ছেলে বেড়ে উঠছে। আমি তো এদেশেই বেড়ে উঠেছি, এদেশের জলহাওয়ায়। আমি ঢের বেশি আমেরিকান। আবার, আমি কিন্তু নিজেকে পুরোটা আমেরিকানও মনে করি না, তা ব্যাপারটিকে যে যেভাবে নিক না কেন; আর এ অনুভূতিটি বাবা মা'র সঙ্গেও মিলে যায়। তারাও নিজেদের এরকম মনে করেন। দেশ সম্পর্কিত অনুভবের সঙ্গ-নিঃসঙ্গতায় আমি আমার ছেলেটিকে ভিন্নভাবেই গড়ে তুলছি। বাবা মা এদেশে একেবারে একা ছিলেন, পরিবার বলতে যা বুঝি তা তো আর ছিল না। তো, সেভাবেই তারা আমাকে বড় করেছেন। এখন তারা আমার থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টা দূরত্বে থাকেন, আমার ছেলে তার ঠাকুরদা দিদিমাকে দেখতে যেতে পারে। কিন্তু আমি আমার দিদিমাদের দেখতে পেতাম কয়েক বছরের ব্যবধানে। তারা তো আর কাছে ছিলেন না। আমার চেয়ে আমার ছেলের যোগাযোগটা কিন্তু ভিন্ন, অন্তত আমাদের বেড়ে ওঠবার সময়ের চেয়ে তাদের বেড়ে ওঠাটা অনেকটা শিকড়ের কাছে যাওয়ার মতো। সে তো যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও তার দিদিমার ফেলে আসা দেশকে অনুভব করতে পারছে।
ক্যারল বার্নস :
একজন অসাধারণ লেখক হওয়ার পরও, ঝুম্পা, তুমি কিন্তু তোমার ভারতীয়-আমেরিকান চরিত্রগুলোর জন্যই আলোচিত হও, উল্লেখিত হও! এ নিয়ে কি নিজের মধ্যে কখনও হতাশা খুঁজে পেয়েছ?
ঝুম্পা :
না, আমি হতাশ হই না, কারণ- এসব তো আমার লেখালেখির সঙ্গে সম্পর্কিত, আমার লেখা সম্পর্কে এসবই সত্য। আমি এমন সব চরিত্র নিয়ে কাজ করি যাদের নির্দিষ্ট একটি পরিচিতি আছে। তারা কেউ কেউ ভারতীয় এবং কোনও না কোনওভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত। তা হোক কিন্তু আমি কখনও চরিত্রদের ভারতীয় বা আমেরিকান এমন পরিচয়ে দেখি না। কারণ তাদের মধ্যে আমি কোনও দূরত্ব খুঁজে পাই না, সেভাবে লিখিও না। অনেকে জানতে চান আমি ভারতীয় খাবার খেয়ে বড় হয়েছি কি না। কিন্তু আমি কোনও খাবারকেই ভারতীয় খাদ্য হিসেবে দেখি না, দেখি শুধু খাদ্য। আমার চরিত্রদের সম্পর্কেও ঠিক এই ব্যাপারটিই ঘটে থাকে। চরিত্রকে আমি চরিত্রই মনে করি, যেভাবে অন্যদের দেখি, স্রেফ সেভাবে। আমার মনে হয়, আমার ক্ষেত্রে এমন হওয়াটা অনিবার্য, অন্তত আমার লেখার ক্ষেত্রে তো অনিবার্যই, কেননা আমি এমন এক দেশে বাস করছি যেখানে ভারতীয়রা মেজরিটি নয়।
ক্যারল বার্নস :
0 মন্তব্যসমূহ